লেখক: সাইফুল বাতেন টিটো (https://saifulbaten.blogspot.com/?m=1), https://www.facebook.com/share/1LJjnqmFwJ/
"সম্ভবত ২০১৪ সালের কথা। চ্যানেল আই আমাকে দিয়ে দ্বিতীয় নাটক
বানাবে এই জন্য আমি ইবনে হাসান খানের সঙ্গে মিটিং শেষ করে কবি নির্মলেন্দু
গুণদা'র মেয়ে প্রডিউসার মৃত্তিকা গুণের সামনে বাজেট নিয়ে কথা বলছি আর চা
খাচ্ছি। সঙ্গে সম্ভবত Hassan Shantonu ছিলেন। কবিকন্যা মৃত্তিকা বললেন:
'টিটো ভাই আপনে অনেক ভালো লেখেন সন্দেহ নাই কিন্তু এই গল্পটা আমার কাছে একটু কেমন যেন লাগছে'!
আমি বলি, 'কোনটা বলেন তো...'?
'ওই যে জুতা চোর! নায়ক একজোড়া জুতা কেনার টাকা ম্যানেজ করতে পারে না'!
'কেন, কী হয়েছে, একটু বলেন তো, শুনি...'?
'মানে এই যুগেও একজন একজোড়া জুতা কেনার টাকা ম্যানেজ করতে পারে না। এমনটা হয় নাকি? আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে। এটা এখন কী আদৌ সম্ভব!
বুঝলাম, মৃত্তিকা গুণ আসলে আমার এই গল্পটা একটা গাঁজাখুরি গল্প বলতে চাচ্ছে। আমি ওয়াসরুমে যাওয়ার কথা
বলে আমার টিম নিয়ে চলে এলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, চ্যানেল আইয়ের সাথে আর কাজ
করব না। পরে অবশ্য জানলাম, আমার ওই গল্প থেকে শহিদুল আলম সাচ্চু ভাই নাটক
বানিয়ে নিজের নামে 'চ্যানেল আই'-এ চালিয়ে দিয়েছেন। যাক সে কথা।
গতকাল
(লেখাটি ২০১৭ সালের লেখা, তখন আব্বু বেঁচে ছিলেন) আমি আব্বু আম্মুকে
মহাখালী বক্ষব্যধি হাসপাতালে খাবার পৌঁছে দিয়ে 'এই রোদে হাঁটলে কেমন লাগে'
বোঝার জন্য টি.বি গেট থেকে কারওয়ান বাজারের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলাম। উফ-ফ, রোদের কী তেজ! যখন ফার্মগেট আসলাম তখন মনে হলো এখন এক গ্লাস পানি
না-খেলে পড়ে যাব। আমি রাস্তার পাশের দোকান থেকে পরপর দুই গ্লাস হিম শীতল
পানি খেয়ে পকেট থেকে একটা দুই টাকার নোট বের করে দিতেই দোকানদার বলল:
'আরো দুই টাকা দেন'।
'কেন'?
'হ, এহন থিক্যা দুই ট্যাকা কইরা দিতে হইবো'।
ঠিক
এমন সময় আমার মতো আরেকজন এসে আমার মতোই পরপর দুই গ্লাস পানি খেয়ে ফেললেন। তিনিও একটা দুই টাকার কয়েন বের করে দিতেই দোকানদান তার সঙ্গেও একই আর্গুমেন্ট
করল। আমি দুই গ্লাস পানি খেয়ে চার টাকা দিতে পারলেও ওই মানুষটা দিতে পারলেন না।
সরল ভাবে বললেন: 'ভাই আমার কাছে তো আর কোন টাকাই নাই'।
আমি
একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বয়সে আমার মতোই। এলোমেলো চুল। পায়ে একজোড়া
চপ্পল, জিন্সের প্যান্টের সাথে একটা ঢলঢলে রংচঙে শার্ট গায়ে। তবে তিনি যে কাজ
করে খান এটা বিলক্ষণ বুঝতে পারলাম।
দোকানদার তার সাথে তর্ক শুরু করে দিলো। ওই মানুষটা বিব্রত হয়ে বলছেন, 'ভাই আমার কাছে আর টাকা নেই। আমি জানতাম না যে এক গ্লাস পানির দাম
দুই টাকা হইয়া গেছে। তাহলে আমি এক গ্লাস পানিই খেতাম। আমার কাছে সত্যিই আর
টাকা নেই'।
আমি লোকটিকে বললাম:
'ধরেন, আপনি আমার বাসায় বেড়াতে গেছেন। পানি চাইলেন, আমি আপনাকে পানি খাওয়ালাম। আমি দুটাকা দিচ্ছি। কেমন'?
লোকটা একটু লজ্জা পেলেন। আমি আবার হাঁটা শুরু করলাম।
মনে
মনে ভাবছি, এই দৃশ্যটি দেখলে কবি নির্মলেন্দু গুণের মেয়ে মৃত্তিকা গুণ কী
বলত? এক গ্লাস পানি কিনে না-খেতে পারার মতো মানুষও আছে? জুতা তো পরের গল্প!
আচ্ছা, এই যে গরমকে পুঁজি করে এক গ্লাস পানির দাম দু'টাকা নিচ্ছে যে লোকটা, তার
মুখ ভর্তি বুক পর্যন্ত দাড়ি, মোচ কামানো, মাথায় আবার গোল টুপি। উনি কি মহা পাপ
করছেন না? ওর তো পাপবোধ আমার চেয়ে বেশী থাকার কথা, কারণ আমি ধর্মকর্ম করি
না। উনি শুক্রবার মসজিদে যান, বয়ান শোনেন। তারপরও পাপবোধ তৈরি হয়নি।
আহারে....!
ফিল্টারের পানি
বলতে রাস্তার পাশে নীলচে বোতলে করে যে পানি বিক্রি হয় তা কি আসলে আদৌ
পিউরিফায়েড? মোটেই না। এই পানিগুলো আসলে সরাসরি ওয়াসারই পানি। আমাকে আমার
এক পরিচিত পানি-ব্যবসায়ি নিজেই বলেছিলেন। এই নীল বোতলের পানির বিজনেসের
মূলধন আসলে আধিপত্য। যার ক্ষমতা যত বেশী সে ততটা ভালো বিজনেস ম্যান হবে।
এলাকার দোকান, অফিস আদালতে তার বোতল যাবে। লোকাল পাওয়ার না-থাকলে এ ব্যাবসার
অযোগ্য আপনি। অনেকটা ঝুট ব্যবসার মতো।
এই পানি একেক বোতল দোকানদার কেনে
ত্রিশ থেকে চল্লিশ টাকায়। এই সিজনে সেই একই নীল বোতলের পানি দোকানদার
বিক্রি করছে ২০০ টাকায়। এটা নিয়ে কেউ কখনও কোথাও কোন কথা বলেছে তা আমার
চোখে পড়েনি! যে যার মতো করে ব্যবসা করে যাচ্ছে। কোন নীতিমালা আছে বলে মনে
হয় না।
যে কারণে লেখাটা
লিখছি, সেটা হলো, আমার একটা প্রস্তাব আছে। বাজারে নানা কোম্পানী আছে যারা
বোতলজাত পানি বিক্রি করে। পারটেক্স গ্রুপ, আফতাব গ্রুপ, প্রান আরএফএল,
ফ্রেস এমনকি ওয়াসাও বোতলজাত পানি বিক্রি করে।
সেই সাথে গাজী, সেরা, দেশ,
মদিনা এরা বিক্রি করে পানির ট্যাঙ্ক। ইউনিলিভার বিক্রি করে পানির ফিল্টার।
এরা প্রতিদিন টিভিতে, রেডিওতে, পেপারে, ইন্টারনেটে কোটি-কোটি টাকার
বিজ্ঞাপন দেয়। আচ্ছা, এরা সবাই মিলে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে পথচারীকে
ঠান্ডা পানি খাওয়াতে পারে না? তাতে কি এদের বিজ্ঞাপন হবে না?
আমি
আমার কোন লেখা কখনও পাঠককে শেয়ারের অনুরোধ করিনি। আজ এই লেখাটা পড়ে আপনার
যদি মনে হয় এতে এই গরমে মানুষের উপকার হতে পারে তাহলে লেখাটি শেয়ার করুন
যাতে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষেরর নজরে আসে। হয়তো তারা পজেটিভলি ভাবলেও ভাবতে
পারে।
... ... ...
* সংযুক্তি: নির্মলেন্দু গুণ