Search

Friday, July 6, 2007

মুক্তিযুদ্ধ এবং গোলাম আযম

“৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ এক সরকারী ঘোষণায় অধুনালুপ্ত কতিপয় রাজনৈতিক দলের ১৫ জন নেতাকে ফেরার (পলাতক) ঘোষণা করে তাদেরকে ২২শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে স্ব স্ব এলাকার মহকুমা ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয় হয়। যাদের বিরুদ্ধে এই ঘোষণা দেয়া হলো তারা হলেন...
এর মধ্যে অধ্যাপক গোলাম আযম [১] ছিলেন ১২ নম্বরে।

ঘোষণায় বলা হয়েছে, এসব ব্যক্তিদের এবং সাবেক গভর্নর ডাঃ মালেকের মন্ত্রীসভার তিনজন সদস্যের নামে যে সব স্থাবর বিষয় সম্পত্তি আছে তা এবং তাদের বেনামী বিষয় সম্পত্তি ক্রোক করে নেয়া হয়েছে।”
(দৈনিক বাংলা/ ১০ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২)

“সরকারী অপর এক নোটিফিকেশনে বলা হয়ঃ
বাংলাদেশ সরকার ৩৯ ব্যক্তিকে বাংলাদেশে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘোষণা করেছেন। এই ৩৯ ব্যক্তি বাংলাদেশে নাগরিকত্ব পাবে না। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আদেশের (অস্থায়ী বিধান) তিন নম্বর ধারাবলে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

নোটিফিকেশনে এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছেঃ
এসব ব্যক্তি বাংলাদেশ মুক্তির আগে থেকে বিদেশে অবস্থান করছিলেন। এদের আচরণ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হতে পারে না এবং এরা পাকিস্তানেই অবস্থান করছেন।
বাংলাদেশে নাগরিকত্ব লাভের অযোগ্য ব্যক্তিরা হলেনঃ সর্বজনাব...। এদের মধ্যে গোলাম আযম হলেন ৮ নম্বর।”
(দৈনিক বাংলা/ ২২ এপ্রিল, ১৯৭৩)

“সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলেও সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল ১৮ ধরনের অপরাধী ক্ষমা পাবেন না।
(১) ১২১. বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো অথবা চালানোর চেষ্টা।
(২) ১২১ ক. বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র।
(৩) ১২৪ ক. রাষ্ট্রদ্রোহিতা।
(৪) ৩০২. হত্যা ।
(৫) ৩০৪. হত্যার চেষ্টা।
(৬) ৩৬৩. অপরহণ
(৭) ৩৬৪. হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ।
(৮) ৩৬৫. আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ ।
(৯) ৩৬৮. অপহৃত ব্যক্তিকে আটক বা গুম রাখা ।
(১০) ৩৭৬. ধর্ষণ।
(১১) ৩৯২. দস্যুবৃত্তি ।
(১২) ৩৯৪. দস্যুবৃত্তিকালে আঘাত ।
(১৩) ৩৯৫. ডাকাতি ।
(১৪) ৩৯৬. খুন সহ ডাকাতি ।
(১৫) ৩৯৭. হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি ।
(১৬) ৪৩৫. আগুন বা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন ।
(১৭) ৪৩৬. বাড়ীঘর ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যর ব্যবহার ।
(১৮) ফৌজদারী দন্ডবিধির ৪৩৬ আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে কোন জলযানের ক্ষতিসাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহদান।
*১৮ নম্বরের অনেকগুলো উপধারা আছে।

...এবং অভিযুক্ত শান্তি বাহিনীর নেতারা ক্ষমা পাবেন না।”
(দৈনিক বাংলা/ ১৭ মে, ১৯৭৩)

গোলাম আযম তার মায়ের অসুস্থতার অজুহাতে সাময়িকভাবে (৩ মাসের ভিসায়) বাংলাদেশে আসেন এবং আর ফিরে না গিয়ে অবৈধভাবে রাজনৈতিক তত্পরতায় লিপ্ত হন।

গোলাম আযমের নাগরিকত্ব প্রার্থনা:
১৯৭৬ সালে জিয়া সরকার কর্তৃক অনাকাঙ্খিত ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করা সম্পর্কে বিবেচনার আশ্বাস পেয়ে সকলেই দরখাস্ত করেন। অনেকেই বিশেষ বিবেচনায় নাগরিকত্ব ফিরে পান কিন্ত গোলাম আযমের বিষয়টি ঝুলে থাকে।

১৯৮৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মতিন আজ জাতীয় সংসদে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেনঃ
"ধন্যবাদ মানননীয় স্পীকার,
...জনাব, গোলাম আযম ১৯৭১ সালের ২১শে নভেম্বর পাকিস্তানে গমন করেন।
...বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তত্কালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ১৮-৪-৭৩ তারিখে (নং ৪০০/বহিঃ ৩) জারীকৃত একটি প্রজ্ঞাপন বলে তার বাংলাদেশে নাগরিকত্ব বাতিল ঘোষণা কর হয় এবং তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের অযোগ্য বলে চিহ্নিত করা হয়।
ইংরাজী ১৯৭৬ সনে তিনি লন্ডন থেকে তার নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিকট আবেদন করেন। উক্ত আবেদন নাকচ করা হয় এবং এ ব্যাপারে তাকে জানিয়েও দেয়া হয়।
১৯৭৮ সনের ১১ জুলাই জনাব গোলাম আযম পাকিস্তানী পাসপোর্টে বাংলাদেশের (৩ মাসের) ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং তখন থেকেই তিনি এ দেশে অবস্থান করছেন।
...মাননীয় স্পীকার, আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে এই পর্যায়ে এই মহান সংসদকে জানাতে চাই বর্তমানেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে নাগরিকত্ব ফেরত দেয়ার কোন ইচ্ছা বা সিদ্ধান্ত কিছুই নাই।”
(জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মতিনের বিবৃতি) 


এত প্রমাণ থাকার পরও একজন মানুষ নাগরিকত্ব পায় কেমন করে? কাউকে নাগরিকত্ব দিলে তিনি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন এ আর বিচিত্র কী! প্রফেসর ইউনুস এবং গোলাম আযমের মধ্যে মুলত কোন তফাত নাই, দু-জনই এদেশের নাগরিক! দেশের প্রচলিত সমস্ত সুযোগ-সুবিধা এঁদের দিতে রাষ্ট্র বাধ্য। আসলে মুক্তিযুদ্ধের আবেগ হয়ে গেছে এখন একটি বিক্রয়যোগ্য পণ্য [২]

**এই স্কেচ নামের জিনিসটা অন্য কিছু না, মনের অজান্তে কাগজে আঁকাজোঁকাকে সম্ভবত ‘ডুডল’ বলে- এটাকে সম্ভবত ডুডল বলা চলে। একদা কাঠ-পেন্সিলে ঘসাঘসির ফল।


সহায়ক সূত্র:
১. গোলাম আযম: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_29.html
২. বিক্রয়যোগ্য পণ্য: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_07.html
* মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অন্যান্য লেখা: http://tinyurl.com/37wksnh


1 comment:

Unknown said...

মনের অজান্তে আঁকাজোকা যদি 'পটুয়া'কে মনে করিয়ে দিতে পারে, তাহলে সজ্ঞানে আঁকলে সেটার অবস্থা কী হবে? 'পটুয়া' ক্যাপশন দিয়েছিলেন,"এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে!" আপনিও একটা ক্যাপশন জুড়ে দিলে ভালো হতো।
দরকারি একটা লেখা। তথ্যগুলো অতি প্রয়োজনীয়। পুরো লেখাটা আমি কপি করে রেখে দিয়েছি। তবে আপনার অনুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা হবে না।