২০০৯। নড়বড়ে সাঁকোটা ধরে ধরে পেরিয়ে গেল। পানি চলে যায় থেকে যায় দাগ, বছরটা চলে গেছে রেখে গেছে ক্ষত!
এ বছরটায় কি করেছি? কিছুই করিনি! বলতে গেলে শুয়ে-বসে কাটিয়েছি। একজন ব্যর্থ মানুষ। এটা একাধারে আনন্দের-কষ্টের। অনুভূতিটা মিশ্র। কখনও মনে হয়েছে এমন জীবন দেখছি মন্দ না, কখনও মনে হতো কেন এই জীবন? চন্দ্রগ্রস্ত কিছু-কিছু মানুষ আমার হাত ধরে রেখেছিল বলে নিজেকে খানিকটা মানুষ-মানুষ মনে হতো, নইলে নিজেকে শব বলে ভ্রম হতো। কখনও কখনও এমন ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হয় আমায়, এড়াতে থাকি আপ্রাণ।
কিছুই করিনি কথাটা ঠিক না। আমার এই সাইটে লিখে গেছি, সবিরাম। অবশ্য প্রায়শ মনে হতো এইসব ছাতাফাতা লিখে লাভ কি? কিন্তু এও মনে হতো একদিন আমি থাকব না লেখাগুলো থেকে যাবে। পরের প্রজন্মের কেউ না কেউ পড়বে। আমার অদেখা স্বপ্নগুলো বাস্তবায়িত করে দেখাবে। হতে পারে না এমন, বেশ পারে? অন্তত এমন একটা স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নাই!
ডিজিটাল তথ্য ভান্ডারে আমার এইসব আবর্জনা না-বাড়ালে কি চলত না? কী জানি! কার কি উপকার হয়েছে জানি না কিন্তু এই লেখার কারণেই প্রকারান্তরে আমি বেঁচে ছিলাম। নইলে হয়তো কোন একটা ভয়ংকার কান্ড করে ফেলতাম। আমি এই লেখার কাছে কৃতজ্ঞ, আমায় বাঁচিয়ে রেখেছে বলে। ক্রদ্ধও, এর আদৌ কোন প্রয়োজন ছিল না।
আর লিখিই কী ছাই! লিখতেও যন্ত্রণা, যে বানান হাজারবার লিখেছি এটা লেখার আগে মনে হয় এটা কি হ্রস্ব উ-কার দিয়ে হবে, না দীর্ঘ উ-কার? আমাদের মহান বাংলা একাডেমি স্যাররা এখনও প্রমিত বাংলায় একটা ডিজিটাল অভিধান বের করতে পারলেন না। ইংরাজি শব্দগুলো সব নাকি হ্রস্ব-ই কার দিয়ে কিন্তু নিজেরা একাডেমি লিখেন দীর্ঘ-ই কার দিয়ে।
তার উপর আমার দরজা-জরদা, চিকেন-কিচেন এইসব অহেতুক গুলিয়ে যায়। ওই দিন একজনকে ফোনে বলছিলাম, মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেছেন, টেনটপ দেশের মধ্যে...। আসলে আমার বলা প্রয়োজন ছিল টপটেন- কপালের ফের। ভাগ্যিস, ফোনে মানুষের হাসি দেখা যায় না নইলে ঠিক আমার মন খারাপ হতো।
একজন ডাক্তার সাহেব, ইনি আবার বিচিত্র কারণে আমার লেখালেখি পছন্দ করেন। একদিন বলছিলেন, আচ্ছা, 'শেষের কবিতা' আপনার কেমন লাগে? আমি বললাম, আমি তো কবিতা ভাল বুঝি না। মানুষটার চোখ কপালে দেখে আমার মনে পড়ল, অমিত, লাবণ্যর কথা। এখন আর এইসব নিয়ে মন খারাপ করি না, এই-ই নিয়তি; আমৃত্যু আমার পিছু ছাড়বে না।
এখন উপন্যাস টাইপের বড়ো লেখা লিখতে বড়ো আলস্য লাগে। আমার মস্তিষ্ক জমে গেছে। তাছাড়া ব্লগিং-এর নামে এইসব ছোট-ছোট লেখা লিখে বড়ো লেখা আর হয়ে উঠে না, নাকি ক্ষমতাটা নষ্ট হয়ে গেছে, জানি না! ভোরের কাগজে (৯২-৯৩) 'একালের রূপকথা' যখন লিখছিলাম তখনও এই সমস্যাটা হতো। যে থিমটা নিয়ে একটা আস্ত উপন্যাস লেখা যায় সেটা গিয়ে দাঁড়ায় গিয়ে কৃশকায় একটা লেখায়। একালের রূপকথায় লেখা কিটি মাস্ট ডাই, ভূত দিবস, লাইফ-এচিভমেন্ট-সেক্রিফাইস এই লেখাগুলো নিয়ে বড়ো আকারের লেখার ইচ্ছা ছিল কিন্তু আর হলো কই!
যখন পা ছড়িয়ে আমার বাসার সিড়িতে বসে এলোমেলো ভাবি, 'মঙ্গলের পানি দিয়া আমরা কি করিব' তখন মাথার উপর দিয়ে দ্রুতগামি যান চলে যায়। চারপাশের গতির সঙ্গে নিজেকে তুলনা করলে নিজেকে বড়ো হীন, ম্রিয়মান মনে হয়।
অসভ্য আমি সভ্যতার সন্তান আর হতে পারলাম না। তখন কি মনটা বিষণ্ণ হয়?
হয়। এই দ্রুত গতির যুগে ভিমরুল মৌমাছি এদের নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করার অবকাশ কোথায়? আমার মতো অকাজের একজন মানুষের অকাজের এইসব ভাবনার কি মূল্য? বটে। ভিমরুল, মৌমাছি, গরু এরা কি প্রকৃতির সন্তান না? গরুর একটা চোখ কি একজন মানুষকে বদলে দেয়? কাউকে না দিক আমাকে দেয়। কুত্তার প্রতি মমতা দেখালে সে কুত্তা জহির হয়ে যায়, আজিব! আমার যে কুত্তা জহিরের হাত ধরতে বড়ো ইচ্ছা করে।
প্রকৃতি ব্যত্যয় পছন্দ করে না, সে ঠিকই তার শোধ নিয়ে নেয়। আমার বাড়ির সিড়ির সামনে ছড়ানো উঠোন হাতছাড়া হয়ে যায়। আমার উত্তরাধিকারের দৌড়-ঝাঁপ করার আর জায়গা থাকল না। আমি নিজের নির্বোধ ভাবনা ঢাকার জন্য এমন খোড়া অজুহাত খুঁজে নেই, সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে না-চলার ফল।
কিন্তু এটা আমি বিনয়ের সঙ্গে কাকে কাকে বোঝাবো ৯টা ৫টা অফিস করা আমার কাজ না। সেই যোগ্যতাও আমার নাই, সেই মনও নাই। আগেও বলেছি, এ এক বিচিত্র, এই দেশে একজন মেথরও গু সাফ করে এটা দিয়ে রুটিরজির ব্যবস্থা করতে পারবে কিন্তু একজন লেখালেখি করে পারবে না। ফল হয় ভয়াবহ, একজন আল মাহমুদের আজকের এই নগ্নতার জন্য এটাও কি অনেকখানি দায়ি না?
আমি মানুষের ভালবাসা পেয়েছি এটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না। কিন্তু আমার প্রতি এদের ভালবাসায় কোন খাদ ছিল না। হাস্যকর মনে হবে কিন্তু এটা সত্য শত-শত মৌমাছি আমার মাথার উপর ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি বসে কীবোর্ডে ঝড় তুলছি অথচ একটা কামড়ও আমায় দেয়নি। অথচ শুনতে পেতাম কার কার উপর নাকি ঝাপিয়ে পড়েছে। ভিমরুলের বাসার অতি নিকটে আমি মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করতাম, এরা কেউ কিচ্ছু বলত না। অথচ ভিমরুলের কামড়ে একটা মানুষ অনায়াসে মারা যায়।
প্লাসিবো-তীব্র সুইচ্ছা কি আসলেই সত্য? আমার মৌমাছির বাসা এবং ভিমরুলের বাসা সংগ্রহে রাখার সুতীব্য ইচ্ছা ছিল। এরা বাসাগুলো আমায় উপহার দিয়ে গেল!
আমাকে সবাই এতদিন বলে এসেছে ভিমরুলের বাসা
মাটির মত কিছু একটা হয়।
ওরিআল্লা, এ যে দেখছি একেবারেই ঠুনকো, মলাট কাগজের মত অনেকটা! ভেতরে থাক থাক অসংখ্য খোপ। এটায় যে হাজার-হাজার ভিমরুল নাতি-পুতি নিয়ে বসবাস করত এতে কোন সন্দেহ নাই। আমি অন্য কারণেও আনন্দিত এরা আমাকে খুনি হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছে।
বাবুই পাখির একটা বাসা পাওয়ার কী ইচ্ছা! কত লোকজনকে কেজিখানেক তেল দিয়েছি কেউ যোগাড় করে দিতে পারেনি, আছে বলে ফাজিলের দল তালগাছের নিচে নিয়ে আমাকে দাঁড় করিয়ে দিত। অথচ দেখো দিকি কান্ড, আমার এখানেই টুপ টুপ করে আসমান (আসলে ডাবগাছ) থেকে একটার পর একটা পড়তে থাকে!
যেখানে সাপের একটা খোলস পেলেই বর্তে যাই সেখানে সাপ ৩টা খোলস আমায় দান করে দিয়ে যায়। থ্যাংকু, সাপ ভাইয়া।
একজন আমায় পাকিস্তানি বলে গালি দিল। আমাদের বড়ো ঢং হয়েছে, চুতিয়াগিরি হয়েছে; ইচ্ছা হলো তো কাউকে পাকিস্তানি বলে দিলাম কাউকে রাজাকার ভাবাপন্ন বলে দিলাম। ইচ্ছা হলেই কাউকে রাজাকার, রাজাকার ভাবাপন্ন বলা যায় না এটা এই নির্বোধদের কে বোঝাবে!
কেউ কেউ বলেন, আপনি ওমুক সাইটে লেখেন না কেন? তমুক সাইটে একটা লেখা দিলেই ন্যূনতম ১০০ হিট। অন্য সাইটে এখন আর লিখতে ইচ্ছা করে না, অনেকে এটাকে আমার দুর্বিনীত আচরণ ভাবেন। বিনয়ের সঙ্গে বলি, এখানে লিখেই আরাম পাই, হাত খুলে লিখতে পারি। বাড়তি চাপ নেই। অনেকে হাসি চাপেন তবুও বলি, বাড়তি চাপ আমি নিতে পারি না। একটা লেখা লিখে জনে জনে ব্যাখ্যা দেয়াটা আমার জন্য সুকঠিন। তাও না-হয় দেয়া গেল কিন্তু কেউ চাবুক নিয়ে ব্যাখ্যার জন্য তাড়া করলে তো সমস্যা। এমনিতে প্লাস-মাইনাসের খেলা, অন্যের পিঠ চুলকে দেয়া, পান্ডিত্যের ছটা এসব ভাল লাগে না। আরে বাবা, আমার লেখায় কোন ভুল থাকলে ধরিয়ে দিলেই হয়। ভুল স্বীকার করতে আমার কোন লাজ নাই, আছে কৃতজ্ঞতা। পারলে ভুল ধরিয়ে দেয়া মানুষটার গা ছুঁয়ে বলি, ভাইরে, আপনার এই ঋণ আমি শোধ করি কেমন করে?
মন খারাপ, বাড়িতে মুখ খারাপ করতে পারি না তো চলো ব্লগে গিয়ে গালি দেই। তাছাড়া আমরা এটা কবে শিখব ওপেন ফোরামে যা খুশি বলা যায় না, লেখা যায় না। একজন কমার্শিয়াল সেক্স ভলান্টিয়ার-বেশ্যারও কিছু অধিকার থাকে। ভীম যখন যুদ্ধের নিয়ম ভঙ্গ করে দুর্যোধনের কোমরের নিচে আঘাত করেন তখন এটা শ্রীকৃষ্ণ-এর কাছে যথাযথ মনে হলেও আমার কাছে ঘোর অন্যায় মনে হয়। বলদেব নামের মানুষটা, যে অন্যায় যুদ্ধ থেকে পালিয়ে গেলেন তাঁকে সবাই ধিক্কার দিলেও আমার কাছে মানুষটাকে ন্যায়বান মনে হয়। কি আর করা!
আর দলবাজি কথা এখানে উল্লেখ না-করলেই ভাল হতো, এদের দোষ দেই কেমন করে স্যাররা দলবাজি শেখান আমরা শিখব না? আমরা কি বেয়াদব ছাত্র?
একেবারে বুশ স্টাইল, হয় তুমি আমার দলে নইলে খেলা থেকে বাদ। আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করি, যে সাইটে আমরা অনেকটা সময় লিখেছি (প্রায় বছর দেড়েক) সেখানে যখন তিনি পুরনো ব্লগারদের কথা বলেন তখন আমার কথা বেমালুম ভুলে যান। বিষয় আর কিচ্ছু না, ওই যে বললাম দলবাজি। আমি ওনার দলে ছিলাম না এই অপরাধ।
দলবাজি ভাল লাগে না। অসাধারণ একজন মানুষ ড. জাফর ইকবাল যখন এমন লেখা লেখেন ভাল লাগে না! দাঁড়াবার আর জায়গা থাকে না।
আর এটাও আমরা বুঝতে চাই না, এখানে কেউ লেখালেখি করে যেমন মাথা কিনে নেয় না, তেমনি কেউ পড়েও। এখানে জাস্ট ভাবনা চালাচালি। মুক্তিযুদ্ধ+আস্তিক, নাস্তিক=গালিবাজি। ভাল লাগে না একদম। ক্রমশ দলছুট হয়ে যাই, বেচারা অভাগা!
মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিষয় নিয়েও অনেকের সঙ্গে আমার মতের মিল নাই। সমস্তটা বছর ঝিম মেরে থেকে ডিসেম্বরে জেগে উঠব এই অশ্লীলতায় আমি নাই। ডিসেম্বরে মিডিয়ার কান্নায় টেলিভিশন সেট থেকে পানি চুঁইয়ে ডুবে মরার অবস্থা হয়, পত্রিকার পাতাগুলো চোখের জলে লেপ্টে থাকে, পড়া যায় না।
আমার স্পষ্ট কথা, রাজাকারকে রাজাকার বলব, ঘুষখোরকে ঘুষখোর, খুনিকে খুনি। আমি সমস্ত অন্যায়ের বিচার চাইব, অন্যায় মৃত্যুরও। ৩৮ বছর গেল নাকি ৩৮০ তাতে কী আসে যায়, রক্তের দাগ মুছে ফেলা যায় না। কেউ অন্যায় করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। কোন মুক্তিযোদ্ধাও যদি অন্যায় করে থাকেন, তাঁকেও।
দলছুট আমার জন্য এইই ভাল, নিজের সাইটে আরাম করে লিখে যাওয়া। দু-চারজন পাঠক পড়লেই আমি খুশি। আর কেউ না-পড়লে মনিটরে পা তুলে আয়েশ করে নিজের লেখা নিজেই পড়া...। মন্দ কী!
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Thursday, December 31, 2009
২০০৯: সালতামামি এবং
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
2 comments:
নতুন বছরের শুভেচ্ছা !
আনন্দময় হোক সবকিছু...
আপনিও ভাল থাকুন। অনেক...।
Post a Comment