অভাগা আমি, যে-সব বিষয় থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করি তার সঙ্গে জড়াজড়ি করে থাকতে হয় আমায়, সবিরাম। দিনের পর দিন অপছন্দের জীবন-যাপন করা কোন কাজের কাজ না! লাভের লাভ যা হয়, মেঘে মেঘে বেলা বয়ে যায়!
মানুষটা আমি নিরিবিলিতে থাকতে পছন্দ করি কিন্তু কেমন কেমন করে উটকো-সব ঝামেলা আমার কাঁধে এসে পড়ে!
কোত্থেকে যেন মৌমাছি হাতের নাগালের গাছটায় বাস গেড়েছে, আমার অনুমতির তোয়াক্কা না করেই। বেশ! থাকো বাপু মিলেমিশে, বিনা ভাড়ায়!
আমার বাসায় যিনিই আসেন তাদের লালায় নিজেদেরই পা ভিজে যায়। আমি অংকে কাঁচা- মেট্রিক, হালের এসএসসিতে অংকে ১৩ গ্রেস লেগেছিল! এরা দিব্যি অংক কষে বের করে ফেলেন, এই মৌমাছির চাকে কয় কেজি মধু হবে।
যাওয়ার সময় এটা জেনে নিতে ভুল করেন না কবে আসলে মধু পাওয়া যাবে। আমি উদাস হয়ে বলি, আচ্ছা আসেন, দেখি।
তখন এরা হড়বড় করে বলেন, আরে দেরি করলে মৌমাছি ব্যাটারা নিজেরাই মধু খেয়ে পগার পর হবে।
আসল কথাটা ফাঁস করি না। আমি তো এই অপেক্ষাতেই আছি মৌমাছি বাবাজিরা কবে প্রস্থান করবে, সেই শুভদিনের জন্য। আমার খুব বাজে স্মৃতি আছে, ছোটবেলায় দেখেছি, চাক থেকে মধু আহরণ করার সময় অসংখ্য মৌমাছিকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। অথচ খানিকটা সতর্ক হলে এই অহেতুক প্রানহানি না-ঘটালেও চলে, যারা মধু আহরণ করেন এই নিয়ে এদের মাথা ঘামাবার সময় কোথায়!
এখন যেটা হচ্ছে, আমি যেখানে বসে কী-বোর্ড নিয়ে কস্তাকস্তি করি এখানে এসে অসংখ্য মৌমাছি ভিড় জমায়, উড়াউড়ি করে, ঘুরপাক খায়। কসম, আমার লেখা পড়ার জন্য না- মানুষই পড়তে চায় না মৌমাছির কী দায় পড়েছে!
তবে, এতে আমার ছাতাফাতা লেখালেখির বড়ো ব্যাঘাত হয়। এখনও কামড়ায়নি, কামড়াতে কতক্ষণ। আর কামড়ালে কার কাছে বিচার চাইব?
'মড়ার উপর খাড়ার ঘা', নাকি 'খাড়ার উপর মড়ার ঘা' বলে একটা কথা আছে। হয়েছে তাই। মৌমাছির যন্ত্রণাই বাঁচি না পাশের গাছটায় ভিমরুল এসে বাসা বেঁধেছে, এরাও অনুমতির ধার ধারেনি!
বাসাটা ছোট্ট থাকতেই অনেকে বলেছিলেন এটা পুড়িয়ে ফেলতে। এরা মৌমাছির মত উড়ে চলে যায় না। সি.এস, আর.এস, ৩০ ধারা, ৩১ ধারা, বি.এস পর্যায়ক্রমে শেষ করে জায়গার আসল মালিক বনে বসে থাকে।
আমি গা করিনি।
কালে কালে বাসাটা বিশাল হয়েছে। অনুমান করি, হাজার-হাজার ভিমরুল এখানে নাতি-পুতি নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে। এখনও কাউকে কামড়ায়নি কিন্তু কামড়ে একটা মানুষকে মেরে ফেলা এদের কাছে নস্যি।
এটার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার গা হিম হয়ে আসে। দেশের গোয়েন্দা বিভাগের উপর আমার আস্থা নাই (সমগ্র দেশের ৬৪ জেলায় একই সঙ্গে বোমা ফাটানো হয়েছে। এদের গোপন কেশ দূরের কথা প্রকাশ্য কেশের হদিসও পাননি)! কিন্তু ভিমরুলদের গোয়েন্দা বিভাগের উপর আমার আস্থা অটুট। এরা নিশ্চয়ই আমার সম্বন্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট দাখিল করেছে, এই মানুষটার কলম চালানোর চেষ্টা ব্যতীত অন্য কিছুই করার যোগ্যতা নাই। একে নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নাই। এ একটা বাতিল মাল!
কী কষ্ট, সামান্য পোকারা পর্যন্ত আমাকে কেয়ার করে না!
সমস্যাটা অন্যখানে। এখন আমার কাছের মানুষরা কানের পাশে অনবরত বকে মরছেন, ভিমরুলের বাসাটা পুড়িয়ে ফেলার জন্য। সত্যি সত্যি পুড়িয়ে ফেলা ব্যতীত এদের তাড়াবার অন্য কোন উপায় নাই, থাকলে বেশ হতো।
বাহ, বললেই হলো। হাজার-হাজার প্রাণ হত্যা করি কেমন করে? এদের স্পষ্ট কথা, এই দেশে সব ভেজাল, মায় গাধাও। অরিজিনাল গাধা নাকি একটাই আছে, সে আমি। প্রতিবাদ করার যো নাই বলে আমি সে পথ মাড়াই না। উদাস হয়ে আকাশ দেখি।
এদের সোজা কথা, আমার পাগলামির কারণে আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রাণের ঝুঁকিতে রাখার কোন অধিকার আমার নাই। হক কথা।
কিন্তু এইসব প্রাণ হত্যার দায় আমি নেই কেমন করে! তাহলে অস্ট্রেলিয়ায় যে সাড়ে ছয় লক্ষ উট গুলি করে মেরে ফেলবে বা যাদের পেটের অসুখ হলেই নির্বিচারে মানব-সন্তান মেরে ফেলে এদের সঙ্গে আমার ফারাক কী!
এই আমার নিয়তি! ঘাড়-কাটা কুত্তা আমার ঘাড়ে এসে পড়বে, ভিমরুল আমার কাঁধে চেপে বসবে। সবই কপাল! এ থেকে আমার মুক্তি নাই!
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Tuesday, November 10, 2009
আমি কেন এইসব খুনের দায় নেব?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
3 comments:
ভিমরুলের বাসা পোড়ানো ? - ভুলেও ওকাজটা করতে যাবেন না ।বাংলাদেশে মানুষ মেরে পার পাওয়াটা ডাল-ভাত হলেও ভিমরুল মেরে পার পাবেন তা ভাববেন না। দেখবেন হয়তো আমাদের বুদ্ধিজীবিদের অনেকে মৌসুমী একটা দল নিয়ে আপনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে,হাইকোর্টে মামলা করে দিয়েছে ,কিংবা মানববন্ধন রচনা করেছে আপনার বাড়ীর সামনে।
কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ যে সম্ভাবনাটা আমি আশংকা করছি তাহলো- কয়েকদিন আগে হলিউডের ‘টোয়াইলাইট’(twilight) খ্যাত উনিশ বছরের অভিনেত্রী ক্রিশ্চিয়ান সেরাটোস (Christian Serratos)নগ্ন হয়ে পত্রিকার পাতায় পোজ দিয়েছেন বন্যপ্রানী হত্যার প্রতিবাদে।
আমরা হুজুগে বাঙ্গালী। আমাদের মধ্যে কার আগে কে হুজুগে সামিল হবো সে প্রতিযোগিতার অন্ত নেই। বিশেষ করে রাজনীতি এবং ফিল্মী জগতে। ঢাকাই ফিল্মে যা কিছু হয় তার অধিকাংশই বলিউড, হলিউডের ব্যর্থ অনুকরন।
এখন ঢাকাই ছবির কোন নায়িকা,হলিউডের অনুকরনে,ক্রিশ্চিয়ান সেরাটোস এর মতো ভিমরুল হত্যার প্রতিবাদে যদি কাপড়-চোপড় খুলে আপনার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে যায়,তখন কি কেলেন্কারীটাই না হবে একবার ভাবুনতো। এমনিতে মাশাল্লা উনাদের যা ফিগার!(এ ব্যাপারে আমার ধারনা আপনি সম্যক অবগত) তাতে কাপড়-চোপড় পরা অবস্থায় উনাদের সহ্য করতে যেখানে মেডিটেশনের সাহায্য নিতে হয়, সেখানে কাপড়-চোপড় ছাড়া.................................................।
হা হা হা। হাসতেই আছি। খানিকটা ধাক্কা লেগেছে সম্ভবত, সত্যি সত্যি মনিটর খানিকটা কেঁপে উঠল...হা হা হা।
Post a Comment