`মিশন পসিবল'- বন্যা নিয়ে একটা লিখেছিলাম। আসলে মিশন পসিবলের স্বপ্ন দেখে আমার মত এমন একজন নপুংসক- যার স্বপ্ন দেখা ব্যতীত আর কিছুই করার নাই!
আজকাল নিজের জাগতিক যন্ত্রণার সংগে যোগ হয় অনাকাংখিত যন্ত্রণা। মস্তিষ্কে সব কেমন জট পাকিয়ে যায়- কে জানে, জট পাকাতে পাকাতেই কী মানুষ উম্মাদ হয়ে যায়! আফসোস, মস্তিষ্কের কিছু স্মৃতি টান মেরে ফেলে দেয়া যেত যদি! হয় না এমন, না!
এই সরকারের কাজ অনেকখানি গোছানো কিন্তু মিশন পসিবলের স্বপ্ন কই! সিডরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কই!
এবার নাগরিক, আধা-নাগরিক লোকজনের মাঝে কষ্টের ছাপটা বেশি। অনুমান করি, বিভিন্ন মিডিয়ার লোকজনের অবদান আছে এতে- নিরলস পরিশ্রম করে বিভিন্ন রিপোর্ট করেছেন এরা। গভীর কৃতজ্ঞতা আমাদের।
হায় সিডর, একটা ঝড়। দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একটা ঝড় লন্ডভন্ড করে দিল সব। এ দেশের অভাগা মানুষরা বন্যার পর যখন মাত্র উঠে দাড়াচ্ছিল, ঠিক তখনই। পত্রিকা পড়তে এখন ইচ্ছা করে না। আজকাল বাড়তি চাপ নিতে পারি না- বড় ভংকুর হয়ে গেছি।
কী পড়ব?
পরিবারের সবাই মরে গেছে, একজন বেচে আছে। কার কাছে এই প্রশ্ন করব সে কেন বেচে আছে?
যে মা মিছামিছি ডেগ বসিয়ে রেখেছেন নিবানো চুলায়- তার সন্তানকে প্রবোধ দেয়ার জন্য, রান্না হচ্ছে, খাবার মিলবে। এই মিথ্যাচারের জন্য এই মাকে কোন আইনে বিচার করা হবে, কোন আইনে?
যে শিশুটির জানাজা পড়ছে অল্প কজন লেংটিপড়া মানুষ। লেংটি পড়ে জানাজা পড়ার ধর্মীয় নিয়ম আছে কী? এই নিয়মের ব্যত্যয় করায়, এই মানুষদের ধর্মীয় অনুশাসন ভংগ করার জন্য সহীহ হাদিস-জয়ীফ হাদিসের কেতাবটা খোলা হবে না বুঝি?
৫টা বিস্কুট ত্রাণ নেয়ার জন্য উঠেছে শত কাতর হাত- এই নিবোর্ধ আচরণের জন্য কী এদের কোন শাস্তি হবে না?
প্রথম আলোকে দেখছি ত্রাণভর্তি জাহাজ নিয়ে বেরিয়ে পড়তে। কার মাথা থেকে এই আইডিয়া বেরিয়েছে জানি না কিন্তু আমি ওই আইডিয়াবাজ মানুষটাকে স্যালুট করি! এক্ষণ এটার বড় প্রয়োজন।
ত্রাণ আসছে, ত্রাণ আসবে- জীবন্মৃত মানুষদের এতে কী কাজ!
আমাদের কারাবন্দী রাজনীতিবিদরা ছটফট করছেন, কেন তাদের ত্রাণ বিতরণ করতে দেয়া হচ্ছে না। কারামুক্ত থাকতে দেখেছি এরা নিজেরাই নিজেদের সামলাতে পারেন না- সামলাতে চারপাশে লোক না হলে চলে না। এরা নাকি দেবেন ত্রাণ- বছরের সেরা রসিকতা বটে!
ফি বছর আমরা এমনসব দৃশ্য আমরা দেখেই যাব। কলমের কালি খরচ করার তো এখন রীতি নাই, হালের কী বোর্ড টেপাটেপি করে আমার মত সস্তা কলমবাজ ছাতাফাতা একটা লেখা লেখার চেষ্টা করা। তারপর যথারীতি ভুলে যাওয়া, আগামী একটা বিপযর্য়ের জন্য অপেক্ষা...।
*এই লেখাটার বক্তব্য বোঝার জন্য মিশন পসিবল লেখাটিতে চোখ বুলানো আবশ্যক।
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Friday, November 23, 2007
মিশন পসিবল বলে কোন শব্দ নেই...
বিভাগ
স্বপ্নভংগ
Wednesday, November 21, 2007
সঞ্জীব চৌধুরী, একজন লেখক বানাবার মেশিন!
সঞ্জীব চৌধুরীকে কেউ বলেন গায়ক, কেউ বলেন লেখক, কেউ বা বলেন পত্রিকার বিভাগীয় সম্পাদক- আমি বলি, লেখক বানাবার মেশিন!
এঁরা নিজেরা কতটা লেখালেখি করেন, লেখার মান কেমন এসব কুতর্কে আমি যাবো না। অল্প কথায় বলব, আমাদের দেশে এমন লেখক বানাবার মেশিনের বড়ো প্রয়োজন। আফসোস, এদেশে লেখক বানাবার মেশিনের বড্ডো আকাল!
আপনাদের অনেকের হয়তো মনে আছে, এ দেশে টানা ২২ দিন পরিবহন ধর্মঘট ছিল। সব ধরনের মুভমেন্ট বন্ধ! কল্পনা করুন, এক দুই দিন না, ২২ দিন! মধ্যে শুধু একদিন ২৬ শে মার্চ ধর্মঘটের আওতার বাইরে ছিল। রপ্তানীযোগ্য চিংড়ি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল, গার্মেন্টেসের মেশিনে এক ইঞ্চি সুতা খরচ হয়নি, একের পর এক রপ্তানীর অর্ডার বাতিল। গোটা দেশ অচল। কেউ টুঁ-শব্দও করছেন না, গণতন্ত্রের জন্য এর নাকি প্রয়োজন আছে। হায় গণতন্ত্র, হায়!
এ দেশের সেরা সন্তানরা হাঁ করে আকাশের দিকে চেয়ে ছিলেন, যেন বৃষ্টির মতো সমাধান ঝরে পড়বে! আর আমার মতো নপুংসকের তো করার কিছু ছিল না। তিন টাকা দামের কলমবাজ, এই-ই তো লোটাকম্বল!
`পরিবহন ধর্মঘট' নামে একটা লেখা লিখে 'ভোরের কাগজ'-এ পাঠিয়েছিলাম। তখন প্রথম আলোর জন্ম হয়নি। সম্পাদক মতিউর রহমান। ভোরের কাগজে কি বিচিত্র কারণে এই লেখাটা ছাপা হয়েছিল জানি না। অনুমান করি, এর পেছনে নিশ্চিত সঞ্জীব চৌধুরীর হাত ছিল, নইলে মুক্তচিন্তার দৈনিক আমার মতো অগাবগার লেখা ছাপাবে কেন!
তখনও আমি মানুষটাকে চিনি না।
ক-দিন বাদে কোন এক কাজে ওই পত্রিকা অফিসে গিয়েছিলাম, সম্ভবত কারও খোঁজে! কোত্থেকে এসেছি শুনে আড্ডা ছেড়ে ঝাকড়া চুলের, টিংটিং, হাসিমুখের যে মানুষটা এগিয়ে এলেন তিনিই সঞ্জীব চৌধুরী। সঞ্জীব দা।
তিনি এগিয়ে এসে হাসিমুখে বললেন, 'আচ্ছা, আপনিই কি ওই লেখাটা পাঠিয়েছিলেন? আরে বসেন-বসেন। বেশ আড্ডা দেয়া যাবে'।
আমি মনে মনে বললাম, বাহ বেশ তো, আমি দেখি বেশ আড্ডাবাজ টাইপের লোক! আমার মত একজন লোক যার সঙ্গে নিজের মানুষরাই অল্পক্ষণেই বিরক্ত হয়ে উঠে অথচ এই মানুষটা আমার সঙ্গে আড্ডা দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন।
মানুষটা চা-সিগারেট আনালেন। আমি চুকচুক করে চা খাই, আয়েস করে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ি। অ্যাসট্রে নাই। সিগারেটের ছাই কোথায় ফেলব বললে তিনি হা হা করে হেসে বললেন, গোটা ফ্লোরটাই অ্যাসট্রে। ফেলে দেন যেখানে খুশি।
তিনি বললেন, 'এ ধরনের লেখা আরো লিখেন, আমি ছাপাবো'।
আমি বিনীতভাবে বলেছিলাম, 'আসলে আমি তো ঠিক এ ধরনের লেখা লিখি না, আমি অপন্যাস লেখার অপচেষ্টা করি'।
তিনি টেবিলে আঙ্গুল ঠুকে বললেন, 'আপনি আপনার মতো করে যে প্রসঙ্গ নিয়ে ভালো লাগে লেখেন, সমস্যা নাই'।
আমার এই স্বাধীনতাটা ভাল লাগল। পরে কখনই তিনি বিষয় নির্দিষ্ট করে দিতেন না এবং লেখা কাটাছেঁড়া করতেন না। কদাচিৎ কোন প্রসঙ্গ গুরুতর সমস্যা মনে হলে অমায়িক ভঙ্গিতে বলতেন, আচ্ছা এই জায়গাটায় কি এভাবে করা যায়? মানুষটার এইসব সহৃদয়তার কথা আমি ভুলব না।
পরেও যখন বিভিন্ন সময় গিয়েছি, কখনো শত ব্যস্ততায়ও আমি তাঁকে বিরক্ত হতে দেখিনি, সদা হাস্যময়। এই লেখা দেখছেন, এই গুনগুন করে গান গাইছেন, এই টেবিলে তবলা ঠুকছেন।
আমাকে যেটা আকৃষ্ট করত, তাঁর মধ্যে ভান জিনিসটার বড়ো অভাব; সহজিয়া একটা ভাব! অনেক সময় তুমুল আড্ডা ছেড়ে উঠে এসেছেন আমাকে সময় দেয়ার জন্য, অফিসের আঁতেল টাইপের অন্যদের কপালের ভাঁজ উপেক্ষা করে। আমি সলাজে বিব্রত হতাম।
আসলে ঢাকার নাগরিক মানুষদের আমার মত মফঃস্বলের মানুষদের প্রতি দারুণ অবজ্ঞা, সম্ভবত ভক করে আমার শরীর থেকে সরষে তেলের গন্ধ লাগত! এদের দোষ দেই না, এঁরা কী মননশীল মানুষ একেকজন, কপাকপ সাহিত্য চিবিয়ে খান! হাঁটেন পা ফাঁক করে।
`একালের রুপকথা' নামে ওখানে প্রায় টানা দেড় বছর লিখলাম। উপভোগ্য একটা সময়- বিচিত্রসব বিষয় নিয়ে লেখা ফি হপ্তায়। একবার সঞ্জীব চৌধুরী নামের মানুষটা লজ্জায় নুয়ে পড়েছিলেন।
হয়েছিল এমন, এই দেড় বছরে সব লেখাই ছাপা হলো কেবল একটা লেখা আটকে দেয়া হলো। 'শিশু কাঠগড়ায় দাড়াও' নামের একটি লেখা। লেখাটার মূল উপজীব্য ছিল, ১৪ দিন বয়সী এক শিশুর, যার জানাজা পড়া নিয়ে সমস্যা হয়েছিল, তার বাবা নামাজ পড়েন না এই অজুহাতে।
ঘটনাটা আমার নিজের চোখে দেখা। এটা নিয়েই লেখাটা লিখেছিলাম। সব লেখা ছাপা হলো কেবল হলো না এটা!
সঞ্জীব চৌধুরী নামের মানুষটা অসম্ভব বিব্রত হয়ে বলেছিলেন, 'আপনার লেখাটা ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করে বলে লেখাটা ছাপানো যাচ্ছে না। সম্পাদকের আপত্তি আছে'।
আমি রাগ গোপন করে বলেছিলাম, 'এটা কি আপনিও বিশ্বাস করেন'?
তিনি কাতর হয়ে বললেন, 'না-না। অমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি মতি ভাইকে বোঝাতে, লাভ হয়নি। কিন্তু তাতে কী আসে যায়! আপনি সম্পাদকের সংগে দেখা করে কথা বলেন।
মতি ভাই নামের সম্পাদক মানুষটার সংগে দেখা করা বা কথা বলার আমার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। আমি এ দেশের এমন কোন 'কলমচী-কলমবাজ' না যে পাঠকরা হাঁ করে বসে থাকেন আমার লেখা পড়ার জন্য। এই সর্বনাশ থেকে বাঁচার জন্য সম্পাদকের সংগে দহরম-মহরম থাকাটা আবশ্যক! আমি সঞ্জীবদাকে কঠিন কিছু কথা বলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম, তাহলে ইনকিলাব পত্রিকা কী দোষ করল! কিন্তু সঞ্জীবদার বিমর্ষ মুখ দেখে কথাগুলো বলা হলো না। আমি মানুষটাকে বইয়ের খোলা পাতার মতো পড়তে পারছিলাম। চাকরির শেকলে বাঁধা একজন প্রবলপুরুষ!
এরিমধ্যে এই পত্রিকার ইন-হাউজে কি কি যেন ভজকট হল, কেউ-কেউ কি-কি যেন কলকাঠিতে ঘুটা দিচ্ছিলেন। সঞ্জীব চৌধুরী আর ওই পাতার দায়িত্বে নাই। পরে এই পত্রিকা তাঁকে ছাড়তে হয়েছিল। সত্যটা হচ্ছে কিছু চালবাজ মানুষ চাল করে এই পত্রিকা থেকে তাঁকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। সেইসব চালবাজ মানুষরাই আজ বেশ্যার মত নগ্ন ভঙ্গিতে, নিজেদের বইয়ের বিজ্ঞাপন নিজেরাই দেন, প্রথম মুদ্রণ শ্যাষ দ্বিতীয় মুদ্রণ চলিতেছে লিখে দেন।
আমারও আর ওখানে লিখতে ইচ্ছা করল না, চালবাজদের সংগে তাল মেলাতে পারছিলাম না। এক চোট্টা-চালবাজ তো এই পত্রিকাতেই আমার একটা লেখার থিম অন্য নামে আমার অনুমতি ছাড়াই ছাপিয়ে দিলেন । আজ ওই চালবাজের নাম বললে অনেকে রে-রে করে তেড়ে আসবেন। ওই অন্ধকার দিক নিয়ে এখন আর বলতে ইচ্ছা করছে না।
`পরিবহন ধর্মঘট' নামে একটা লেখা লিখে 'ভোরের কাগজ'-এ পাঠিয়েছিলাম। তখন প্রথম আলোর জন্ম হয়নি। সম্পাদক মতিউর রহমান। ভোরের কাগজে কি বিচিত্র কারণে এই লেখাটা ছাপা হয়েছিল জানি না। অনুমান করি, এর পেছনে নিশ্চিত সঞ্জীব চৌধুরীর হাত ছিল, নইলে মুক্তচিন্তার দৈনিক আমার মতো অগাবগার লেখা ছাপাবে কেন!
তখনও আমি মানুষটাকে চিনি না।
ক-দিন বাদে কোন এক কাজে ওই পত্রিকা অফিসে গিয়েছিলাম, সম্ভবত কারও খোঁজে! কোত্থেকে এসেছি শুনে আড্ডা ছেড়ে ঝাকড়া চুলের, টিংটিং, হাসিমুখের যে মানুষটা এগিয়ে এলেন তিনিই সঞ্জীব চৌধুরী। সঞ্জীব দা।
তিনি এগিয়ে এসে হাসিমুখে বললেন, 'আচ্ছা, আপনিই কি ওই লেখাটা পাঠিয়েছিলেন? আরে বসেন-বসেন। বেশ আড্ডা দেয়া যাবে'।
আমি মনে মনে বললাম, বাহ বেশ তো, আমি দেখি বেশ আড্ডাবাজ টাইপের লোক! আমার মত একজন লোক যার সঙ্গে নিজের মানুষরাই অল্পক্ষণেই বিরক্ত হয়ে উঠে অথচ এই মানুষটা আমার সঙ্গে আড্ডা দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন।
মানুষটা চা-সিগারেট আনালেন। আমি চুকচুক করে চা খাই, আয়েস করে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ি। অ্যাসট্রে নাই। সিগারেটের ছাই কোথায় ফেলব বললে তিনি হা হা করে হেসে বললেন, গোটা ফ্লোরটাই অ্যাসট্রে। ফেলে দেন যেখানে খুশি।
তিনি বললেন, 'এ ধরনের লেখা আরো লিখেন, আমি ছাপাবো'।
আমি বিনীতভাবে বলেছিলাম, 'আসলে আমি তো ঠিক এ ধরনের লেখা লিখি না, আমি অপন্যাস লেখার অপচেষ্টা করি'।
তিনি টেবিলে আঙ্গুল ঠুকে বললেন, 'আপনি আপনার মতো করে যে প্রসঙ্গ নিয়ে ভালো লাগে লেখেন, সমস্যা নাই'।
আমার এই স্বাধীনতাটা ভাল লাগল। পরে কখনই তিনি বিষয় নির্দিষ্ট করে দিতেন না এবং লেখা কাটাছেঁড়া করতেন না। কদাচিৎ কোন প্রসঙ্গ গুরুতর সমস্যা মনে হলে অমায়িক ভঙ্গিতে বলতেন, আচ্ছা এই জায়গাটায় কি এভাবে করা যায়? মানুষটার এইসব সহৃদয়তার কথা আমি ভুলব না।
পরেও যখন বিভিন্ন সময় গিয়েছি, কখনো শত ব্যস্ততায়ও আমি তাঁকে বিরক্ত হতে দেখিনি, সদা হাস্যময়। এই লেখা দেখছেন, এই গুনগুন করে গান গাইছেন, এই টেবিলে তবলা ঠুকছেন।
আমাকে যেটা আকৃষ্ট করত, তাঁর মধ্যে ভান জিনিসটার বড়ো অভাব; সহজিয়া একটা ভাব! অনেক সময় তুমুল আড্ডা ছেড়ে উঠে এসেছেন আমাকে সময় দেয়ার জন্য, অফিসের আঁতেল টাইপের অন্যদের কপালের ভাঁজ উপেক্ষা করে। আমি সলাজে বিব্রত হতাম।
আসলে ঢাকার নাগরিক মানুষদের আমার মত মফঃস্বলের মানুষদের প্রতি দারুণ অবজ্ঞা, সম্ভবত ভক করে আমার শরীর থেকে সরষে তেলের গন্ধ লাগত! এদের দোষ দেই না, এঁরা কী মননশীল মানুষ একেকজন, কপাকপ সাহিত্য চিবিয়ে খান! হাঁটেন পা ফাঁক করে।
`একালের রুপকথা' নামে ওখানে প্রায় টানা দেড় বছর লিখলাম। উপভোগ্য একটা সময়- বিচিত্রসব বিষয় নিয়ে লেখা ফি হপ্তায়। একবার সঞ্জীব চৌধুরী নামের মানুষটা লজ্জায় নুয়ে পড়েছিলেন।
হয়েছিল এমন, এই দেড় বছরে সব লেখাই ছাপা হলো কেবল একটা লেখা আটকে দেয়া হলো। 'শিশু কাঠগড়ায় দাড়াও' নামের একটি লেখা। লেখাটার মূল উপজীব্য ছিল, ১৪ দিন বয়সী এক শিশুর, যার জানাজা পড়া নিয়ে সমস্যা হয়েছিল, তার বাবা নামাজ পড়েন না এই অজুহাতে।
ঘটনাটা আমার নিজের চোখে দেখা। এটা নিয়েই লেখাটা লিখেছিলাম। সব লেখা ছাপা হলো কেবল হলো না এটা!
সঞ্জীব চৌধুরী নামের মানুষটা অসম্ভব বিব্রত হয়ে বলেছিলেন, 'আপনার লেখাটা ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করে বলে লেখাটা ছাপানো যাচ্ছে না। সম্পাদকের আপত্তি আছে'।
আমি রাগ গোপন করে বলেছিলাম, 'এটা কি আপনিও বিশ্বাস করেন'?
তিনি কাতর হয়ে বললেন, 'না-না। অমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি মতি ভাইকে বোঝাতে, লাভ হয়নি। কিন্তু তাতে কী আসে যায়! আপনি সম্পাদকের সংগে দেখা করে কথা বলেন।
মতি ভাই নামের সম্পাদক মানুষটার সংগে দেখা করা বা কথা বলার আমার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। আমি এ দেশের এমন কোন 'কলমচী-কলমবাজ' না যে পাঠকরা হাঁ করে বসে থাকেন আমার লেখা পড়ার জন্য। এই সর্বনাশ থেকে বাঁচার জন্য সম্পাদকের সংগে দহরম-মহরম থাকাটা আবশ্যক! আমি সঞ্জীবদাকে কঠিন কিছু কথা বলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম, তাহলে ইনকিলাব পত্রিকা কী দোষ করল! কিন্তু সঞ্জীবদার বিমর্ষ মুখ দেখে কথাগুলো বলা হলো না। আমি মানুষটাকে বইয়ের খোলা পাতার মতো পড়তে পারছিলাম। চাকরির শেকলে বাঁধা একজন প্রবলপুরুষ!
এরিমধ্যে এই পত্রিকার ইন-হাউজে কি কি যেন ভজকট হল, কেউ-কেউ কি-কি যেন কলকাঠিতে ঘুটা দিচ্ছিলেন। সঞ্জীব চৌধুরী আর ওই পাতার দায়িত্বে নাই। পরে এই পত্রিকা তাঁকে ছাড়তে হয়েছিল। সত্যটা হচ্ছে কিছু চালবাজ মানুষ চাল করে এই পত্রিকা থেকে তাঁকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। সেইসব চালবাজ মানুষরাই আজ বেশ্যার মত নগ্ন ভঙ্গিতে, নিজেদের বইয়ের বিজ্ঞাপন নিজেরাই দেন, প্রথম মুদ্রণ শ্যাষ দ্বিতীয় মুদ্রণ চলিতেছে লিখে দেন।
আমারও আর ওখানে লিখতে ইচ্ছা করল না, চালবাজদের সংগে তাল মেলাতে পারছিলাম না। এক চোট্টা-চালবাজ তো এই পত্রিকাতেই আমার একটা লেখার থিম অন্য নামে আমার অনুমতি ছাড়াই ছাপিয়ে দিলেন । আজ ওই চালবাজের নাম বললে অনেকে রে-রে করে তেড়ে আসবেন। ওই অন্ধকার দিক নিয়ে এখন আর বলতে ইচ্ছা করছে না।
বারবার যেটা বলতে ইচ্ছা করছে, সঞ্জীব চৌধুরী, এদেশে আপনার মত লেখক বানাবার মেশিনের বড্ডো আকাল! কাজটা আপনি ঠিক করলেন না! এভাবে চলে যাওয়া কোন কাজের কাজ না!
সহায়ক সূত্র:
১. পরিবহন ধর্মঘট: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_02.html
বিভাগ
কষ্ট
Monday, August 6, 2007
খুন করা আর ১৪৯ টুকরা করা- যোজন তফাত
Rangs ভবন ভেংগে ফেলা হচ্ছে। এ নিয়ে আমার বলার কিছু নাই। অবৈধ হলে ভেংগে ফেলা হবে, এ নিয়ে দ্বিমতের কী আছে! কিন্তু বাংলাদেশে সব অবৈধ স্থাপনা ভেংগে ফেলার কোমরের জোর কী আছে? পাকিস্তানে অনেকগুলো অবৈধ মসজিদ ভেংগে ফেলা হয়েছে, তথাকথিত মুসলিম দেশে! বাংলাদেশে কী এমন উদাহরণ সৃষ্টি করা সম্ভব? গণতন্ত্র- বড্ডো গুরুপাক! যাই হোক, কুতর্কে যাই না।
তো, উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, বেশ!
কিন্তু আদালতের রায় বের হতে দেরি হয়নি, কপিও প্রতিপক্ষকে হাতে পাওয়ার সময় দেয়া হয়নি, বৃহস্পতিবার (০৩.০৮.০৭) বিকেলে এই রায় হওয়ার পরই বিকেলেই রাজউক-এর পক্ষ থেকে মাইকিং করে ৮ ঘন্টার নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে, ১৬টি তলার খালি করে দেয়ার জন্য। অনুমান করি, এই হিংস্র প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এরা আগেভাগেই সমস্ত প্রস্ততি নিয়ে রেখেছিলেন।
রাত ১২টার পরই বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় সব ধরনের সুবিধা- গ্যাস, বিদ্যুত ইত্যাদি। বন্ধ হয়ে যায় লিফট। কেবলমাত্র ১টি সিড়ি দিয়ে সব কিছু নামাবার চেষ্টা করা হয়।
আমি খানিকক্ষণ চোখ বন্ধ করে ভাবার চেষ্টা করছি, কী অসহনীয়, অবণর্নীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।
পরেরদিন শুক্রবার, অফিসিয়াল ছুটি শুক্র, শনি- তবুও ৮ ঘন্টার নোটিশ না দিয়ে সোমবার থেকে ভাংগা হলে কি ইস্রাফিল শিংগায় ফু দিতেন!
ভবনের এই তলাগুলোতে ছিল ব্যাংক, মোবাইল অপারেটরদের স্থাপনা, সুইচরুম। যে সুইচগুলো তাক্ষণিকভাবে সরিয়ে নেয়ায়, সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষদের। যারা এই ভবনের অবৈধ কাযর্ক্রমের সংগে মোটেই সম্পৃক্ত নন। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে হাজার হাজার নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে। শুনতে পাই, এটা ভেংগে ফেলার জন্য নাকি ১ কোটি টাকা খরচ করা হবে। ইশ, আজ সমস্ত সরকারী কর্মকর্তরা সাধু হয়ে গেছেন।
আমি শিউরে উঠি, ঠান্ডা মাথায় কেমন করে এই বিপুল জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য মাত্র ৮ ঘন্টা সময় দেয়া হয়েছে, একটা সভ্য দেশে এই অসভ্য কান্ড কেমন করে সম্ভব!
আমার কাছে বিষয়টা মনে হয়েছে এমন, আইনের প্রয়োজনে একটা মানুষকে প্রাণ নস্ট করার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছিল কিন্তু খুব ঠান্ডা মাথায় রসিয়ে রসিয়ে একটা মানুষকে কুপিয়ে ১৪৯ টুকরা করা হয়েছে।
(সত্যি সত্যি একজন মানুষকে ১৪৯ টুকরা করার ঘটনা এই দেশেই ঘটেছে। যে মানুষটা এই কান্ডটা করেছিল সেই মানুষটা ধরা পড়েছিল কি না আমি জানি না। ওই মানুষটাকে নিয়ে আমাদের দেশের মনোবিদরা মাথা ঘামিয়েছিলেন কিনা এও জানি না, যে কোন পযার্য়ে গেলে একজন মানুষ এমনটা করতে পারে! ওই মানুষটার মধ্যে খুব বড় ধরণের সমস্যা আছে যার আদ্যপান্ত জানাটা আমাদের জন্য খুব জরুরী ছিল। আমি নিশ্চিত, এ নিয়ে কোন কাজ হয়নি, আমাদের এতো সময় কোথায়!)
তো, ওই ভয়ংকর মানুষটার সমস্যা কী আমাদের অনেকের মাঝেই ছড়িয়ে গেছে? ওই মানুষটাকে নিয়ে মাথা না ঘামাবার পাপ কি আমরা বহন করছি?
আমি আমার সবর্স্ব বাজি রাখতে আগ্রহী, পৃথিবীর চৌকস বাহিনীকেও যদি লাগিয়ে দেয়া হয় এই সময়ের মধ্যে এই ভবন খালি করার জন্য, এরা ব্যর্থ হবে।
আমি খানিকটা বুঝি, আমার ভাড়ার অফিস ভেংগে দেয়া হয়েছিল। পুরো ২৪ ঘন্টা সময় পেয়েছিলাম, তারপরও সব কিছু সরিয়ে আনতে পারিনি। হারিয়ে গিয়েছিল, আমার তিলতিল করে জমানো মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র, জরুরী কাগজ। নতুন করে এই বিষয়ে বলে বিরক্তি বাড়াবার অপচেষ্টা করি না। ওই পোস্টের লিংক দিয়ে দিচ্ছি:কফিনের শক্ত পেরেকটা
তো, কে জানে, Rangs অফিসের ড্রয়ারে ছিল কারও প্রিয়মানুষ, মার চিঠি, যেটা হারিয়ে যাবে অবলীলায়। এই চিঠির কীই বা মূল্য!
কারণ, আমরা এটা শিখেছি, বস্তি ভেংগে। দুম করে বস্তি ভেংগে দিলাম, খুব উল্লসিত হলাম, ঢাকা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করলাম ভেবে।
ভাল, যে গার্মেন্টস কর্মীরা এই দেশের চাকা ঘুরাচ্ছেন, এরা তো ১৫০০-১৮০০ টাকায় বেতনে গুলশানে থাকবেন, কি বলেন?
যে গার্মেন্টস কর্মী, বাবা-মা, শিশুটিকে রেখে কাজে গিয়েছিলেন, তাদের যে শিশুটি হারিয়ে গেল, ওই শিশুটিকে কি পাওয়া গিয়েছিল? আমরা জানি না, কেননা, এটা আমাদের জানার প্রয়োজন নাই। তো, মানবসন্তান হারিয়ে যায় আর একটা চিঠির কথা বলে লাভ আছে, বালখিল্য কথা!
ওয়েল, এতক্ষণ অন্ধকার জগত নিয়ে খুব হাতি-ঘোড়া মারা হল, এবার আলোকিত ভুবন নিয়ে খানিকটা আলোচনা করা যাক। এখানে কিন্ত অনেক আলোর খেলা- খেয়াল রাখবেন, চোখ যেন ঝলসে না যায়!
এই প্রসংগ নিয়ে সবাধির্ক প্রচারিত দৈনিক (এদের দাবীমতে) প্রথম আলো (০৫.০৮.০৭)সম্পাদকীয় লেখে। অনুমান করি, এই প্রধান সম্পাদকীয় সম্পাদক সাহেবই লিখেছেন। শিরোনাম হচ্ছে: `Rangs ভবন, চুড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি সংযোগ সড়ক।'
ভেতরে বিতং করে হাবিজাবি আরও অনেক কিছু লেখা কিন্তু এমন একটা অমানবিক বিষয় নিয়ে কোথাও আলোচনা নেই। এমন একটা অসভ্য কান্ড এই সভ্য দেশে ঘটে গেল, এটা আমাদের আলোকিত মহোদয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়নি! কেন হয়নি, এ নিয়ে সম্ভবত তর্ক করার অবকাশ নেই। ইনারা সম্ভবত এইসব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে আগ্রহী নন।
জ্ঞানী মানুষরা হয়তো বা এমনই হন। খামাখা আমাদের মতো ঈর্ষাম্বিত মানুষরা বলি, এইসব জ্ঞানপাপীরা আছেন বলেই না আমরা এমন অসভ্য কান্ড আরও দেখার জন্য মানষিক ভাবে তৈরি হই। জয়তু, জ্ঞানপাপীরা, আমাদের মতো অগাবগাদের সালাম গ্রহন করুন এবং বেচে বর্তে থাকুন। আমীন- সুম্মা আমীন!
তো, উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, বেশ!
কিন্তু আদালতের রায় বের হতে দেরি হয়নি, কপিও প্রতিপক্ষকে হাতে পাওয়ার সময় দেয়া হয়নি, বৃহস্পতিবার (০৩.০৮.০৭) বিকেলে এই রায় হওয়ার পরই বিকেলেই রাজউক-এর পক্ষ থেকে মাইকিং করে ৮ ঘন্টার নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে, ১৬টি তলার খালি করে দেয়ার জন্য। অনুমান করি, এই হিংস্র প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এরা আগেভাগেই সমস্ত প্রস্ততি নিয়ে রেখেছিলেন।
রাত ১২টার পরই বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় সব ধরনের সুবিধা- গ্যাস, বিদ্যুত ইত্যাদি। বন্ধ হয়ে যায় লিফট। কেবলমাত্র ১টি সিড়ি দিয়ে সব কিছু নামাবার চেষ্টা করা হয়।
আমি খানিকক্ষণ চোখ বন্ধ করে ভাবার চেষ্টা করছি, কী অসহনীয়, অবণর্নীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।
পরেরদিন শুক্রবার, অফিসিয়াল ছুটি শুক্র, শনি- তবুও ৮ ঘন্টার নোটিশ না দিয়ে সোমবার থেকে ভাংগা হলে কি ইস্রাফিল শিংগায় ফু দিতেন!
ভবনের এই তলাগুলোতে ছিল ব্যাংক, মোবাইল অপারেটরদের স্থাপনা, সুইচরুম। যে সুইচগুলো তাক্ষণিকভাবে সরিয়ে নেয়ায়, সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষদের। যারা এই ভবনের অবৈধ কাযর্ক্রমের সংগে মোটেই সম্পৃক্ত নন। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে হাজার হাজার নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে। শুনতে পাই, এটা ভেংগে ফেলার জন্য নাকি ১ কোটি টাকা খরচ করা হবে। ইশ, আজ সমস্ত সরকারী কর্মকর্তরা সাধু হয়ে গেছেন।
আমি শিউরে উঠি, ঠান্ডা মাথায় কেমন করে এই বিপুল জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য মাত্র ৮ ঘন্টা সময় দেয়া হয়েছে, একটা সভ্য দেশে এই অসভ্য কান্ড কেমন করে সম্ভব!
আমার কাছে বিষয়টা মনে হয়েছে এমন, আইনের প্রয়োজনে একটা মানুষকে প্রাণ নস্ট করার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছিল কিন্তু খুব ঠান্ডা মাথায় রসিয়ে রসিয়ে একটা মানুষকে কুপিয়ে ১৪৯ টুকরা করা হয়েছে।
(সত্যি সত্যি একজন মানুষকে ১৪৯ টুকরা করার ঘটনা এই দেশেই ঘটেছে। যে মানুষটা এই কান্ডটা করেছিল সেই মানুষটা ধরা পড়েছিল কি না আমি জানি না। ওই মানুষটাকে নিয়ে আমাদের দেশের মনোবিদরা মাথা ঘামিয়েছিলেন কিনা এও জানি না, যে কোন পযার্য়ে গেলে একজন মানুষ এমনটা করতে পারে! ওই মানুষটার মধ্যে খুব বড় ধরণের সমস্যা আছে যার আদ্যপান্ত জানাটা আমাদের জন্য খুব জরুরী ছিল। আমি নিশ্চিত, এ নিয়ে কোন কাজ হয়নি, আমাদের এতো সময় কোথায়!)
তো, ওই ভয়ংকর মানুষটার সমস্যা কী আমাদের অনেকের মাঝেই ছড়িয়ে গেছে? ওই মানুষটাকে নিয়ে মাথা না ঘামাবার পাপ কি আমরা বহন করছি?
আমি আমার সবর্স্ব বাজি রাখতে আগ্রহী, পৃথিবীর চৌকস বাহিনীকেও যদি লাগিয়ে দেয়া হয় এই সময়ের মধ্যে এই ভবন খালি করার জন্য, এরা ব্যর্থ হবে।
আমি খানিকটা বুঝি, আমার ভাড়ার অফিস ভেংগে দেয়া হয়েছিল। পুরো ২৪ ঘন্টা সময় পেয়েছিলাম, তারপরও সব কিছু সরিয়ে আনতে পারিনি। হারিয়ে গিয়েছিল, আমার তিলতিল করে জমানো মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র, জরুরী কাগজ। নতুন করে এই বিষয়ে বলে বিরক্তি বাড়াবার অপচেষ্টা করি না। ওই পোস্টের লিংক দিয়ে দিচ্ছি:কফিনের শক্ত পেরেকটা
তো, কে জানে, Rangs অফিসের ড্রয়ারে ছিল কারও প্রিয়মানুষ, মার চিঠি, যেটা হারিয়ে যাবে অবলীলায়। এই চিঠির কীই বা মূল্য!
কারণ, আমরা এটা শিখেছি, বস্তি ভেংগে। দুম করে বস্তি ভেংগে দিলাম, খুব উল্লসিত হলাম, ঢাকা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করলাম ভেবে।
ভাল, যে গার্মেন্টস কর্মীরা এই দেশের চাকা ঘুরাচ্ছেন, এরা তো ১৫০০-১৮০০ টাকায় বেতনে গুলশানে থাকবেন, কি বলেন?
যে গার্মেন্টস কর্মী, বাবা-মা, শিশুটিকে রেখে কাজে গিয়েছিলেন, তাদের যে শিশুটি হারিয়ে গেল, ওই শিশুটিকে কি পাওয়া গিয়েছিল? আমরা জানি না, কেননা, এটা আমাদের জানার প্রয়োজন নাই। তো, মানবসন্তান হারিয়ে যায় আর একটা চিঠির কথা বলে লাভ আছে, বালখিল্য কথা!
ওয়েল, এতক্ষণ অন্ধকার জগত নিয়ে খুব হাতি-ঘোড়া মারা হল, এবার আলোকিত ভুবন নিয়ে খানিকটা আলোচনা করা যাক। এখানে কিন্ত অনেক আলোর খেলা- খেয়াল রাখবেন, চোখ যেন ঝলসে না যায়!
এই প্রসংগ নিয়ে সবাধির্ক প্রচারিত দৈনিক (এদের দাবীমতে) প্রথম আলো (০৫.০৮.০৭)সম্পাদকীয় লেখে। অনুমান করি, এই প্রধান সম্পাদকীয় সম্পাদক সাহেবই লিখেছেন। শিরোনাম হচ্ছে: `Rangs ভবন, চুড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি সংযোগ সড়ক।'
ভেতরে বিতং করে হাবিজাবি আরও অনেক কিছু লেখা কিন্তু এমন একটা অমানবিক বিষয় নিয়ে কোথাও আলোচনা নেই। এমন একটা অসভ্য কান্ড এই সভ্য দেশে ঘটে গেল, এটা আমাদের আলোকিত মহোদয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়নি! কেন হয়নি, এ নিয়ে সম্ভবত তর্ক করার অবকাশ নেই। ইনারা সম্ভবত এইসব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে আগ্রহী নন।
জ্ঞানী মানুষরা হয়তো বা এমনই হন। খামাখা আমাদের মতো ঈর্ষাম্বিত মানুষরা বলি, এইসব জ্ঞানপাপীরা আছেন বলেই না আমরা এমন অসভ্য কান্ড আরও দেখার জন্য মানষিক ভাবে তৈরি হই। জয়তু, জ্ঞানপাপীরা, আমাদের মতো অগাবগাদের সালাম গ্রহন করুন এবং বেচে বর্তে থাকুন। আমীন- সুম্মা আমীন!
বিভাগ
প্রথম আলো
Friday, July 6, 2007
মুক্তিযুদ্ধ এবং গোলাম আযম
“৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ এক সরকারী ঘোষণায় অধুনালুপ্ত কতিপয় রাজনৈতিক দলের ১৫ জন নেতাকে ফেরার (পলাতক) ঘোষণা করে তাদেরকে ২২শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে স্ব স্ব এলাকার মহকুমা ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয় হয়। যাদের বিরুদ্ধে এই ঘোষণা দেয়া হলো তারা হলেন...
এর মধ্যে অধ্যাপক গোলাম আযম [১] ছিলেন ১২ নম্বরে।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, এসব ব্যক্তিদের এবং সাবেক গভর্নর ডাঃ মালেকের মন্ত্রীসভার তিনজন সদস্যের নামে যে সব স্থাবর বিষয় সম্পত্তি আছে তা এবং তাদের বেনামী বিষয় সম্পত্তি ক্রোক করে নেয়া হয়েছে।”
(দৈনিক বাংলা/ ১০ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২)
“সরকারী অপর এক নোটিফিকেশনে বলা হয়ঃ
বাংলাদেশ সরকার ৩৯ ব্যক্তিকে বাংলাদেশে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘোষণা করেছেন। এই ৩৯ ব্যক্তি বাংলাদেশে নাগরিকত্ব পাবে না। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আদেশের (অস্থায়ী বিধান) তিন নম্বর ধারাবলে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
নোটিফিকেশনে এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছেঃ
এসব ব্যক্তি বাংলাদেশ মুক্তির আগে থেকে বিদেশে অবস্থান করছিলেন। এদের আচরণ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হতে পারে না এবং এরা পাকিস্তানেই অবস্থান করছেন।
বাংলাদেশে নাগরিকত্ব লাভের অযোগ্য ব্যক্তিরা হলেনঃ সর্বজনাব...। এদের মধ্যে গোলাম আযম হলেন ৮ নম্বর।”
(দৈনিক বাংলা/ ২২ এপ্রিল, ১৯৭৩)
“সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলেও সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল ১৮ ধরনের অপরাধী ক্ষমা পাবেন না।
(১) ১২১. বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো অথবা চালানোর চেষ্টা।
(২) ১২১ ক. বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র।
(৩) ১২৪ ক. রাষ্ট্রদ্রোহিতা।
(৪) ৩০২. হত্যা ।
(৫) ৩০৪. হত্যার চেষ্টা।
(৬) ৩৬৩. অপরহণ
(৭) ৩৬৪. হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ।
(৮) ৩৬৫. আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ ।
(৯) ৩৬৮. অপহৃত ব্যক্তিকে আটক বা গুম রাখা ।
(১০) ৩৭৬. ধর্ষণ।
(১১) ৩৯২. দস্যুবৃত্তি ।
(১২) ৩৯৪. দস্যুবৃত্তিকালে আঘাত ।
(১৩) ৩৯৫. ডাকাতি ।
(১৪) ৩৯৬. খুন সহ ডাকাতি ।
(১৫) ৩৯৭. হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি ।
(১৬) ৪৩৫. আগুন বা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন ।
(১৭) ৪৩৬. বাড়ীঘর ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যর ব্যবহার ।
(১৮) ফৌজদারী দন্ডবিধির ৪৩৬ আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে কোন জলযানের ক্ষতিসাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহদান।
*১৮ নম্বরের অনেকগুলো উপধারা আছে।
...এবং অভিযুক্ত শান্তি বাহিনীর নেতারা ক্ষমা পাবেন না।”
(দৈনিক বাংলা/ ১৭ মে, ১৯৭৩)
গোলাম আযম তার মায়ের অসুস্থতার অজুহাতে সাময়িকভাবে (৩ মাসের ভিসায়) বাংলাদেশে আসেন এবং আর ফিরে না গিয়ে অবৈধভাবে রাজনৈতিক তত্পরতায় লিপ্ত হন।
গোলাম আযমের নাগরিকত্ব প্রার্থনা:
১৯৭৬ সালে জিয়া সরকার কর্তৃক অনাকাঙ্খিত ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করা সম্পর্কে বিবেচনার আশ্বাস পেয়ে সকলেই দরখাস্ত করেন। অনেকেই বিশেষ বিবেচনায় নাগরিকত্ব ফিরে পান কিন্ত গোলাম আযমের বিষয়টি ঝুলে থাকে।
১৯৮৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মতিন আজ জাতীয় সংসদে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেনঃ
"ধন্যবাদ মানননীয় স্পীকার,
...জনাব, গোলাম আযম ১৯৭১ সালের ২১শে নভেম্বর পাকিস্তানে গমন করেন।
...বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তত্কালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ১৮-৪-৭৩ তারিখে (নং ৪০০/বহিঃ ৩) জারীকৃত একটি প্রজ্ঞাপন বলে তার বাংলাদেশে নাগরিকত্ব বাতিল ঘোষণা কর হয় এবং তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের অযোগ্য বলে চিহ্নিত করা হয়।
ইংরাজী ১৯৭৬ সনে তিনি লন্ডন থেকে তার নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিকট আবেদন করেন। উক্ত আবেদন নাকচ করা হয় এবং এ ব্যাপারে তাকে জানিয়েও দেয়া হয়।
১৯৭৮ সনের ১১ জুলাই জনাব গোলাম আযম পাকিস্তানী পাসপোর্টে বাংলাদেশের (৩ মাসের) ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং তখন থেকেই তিনি এ দেশে অবস্থান করছেন।
...মাননীয় স্পীকার, আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে এই পর্যায়ে এই মহান সংসদকে জানাতে চাই বর্তমানেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে নাগরিকত্ব ফেরত দেয়ার কোন ইচ্ছা বা সিদ্ধান্ত কিছুই নাই।”
(জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মতিনের বিবৃতি)
এত প্রমাণ থাকার পরও একজন মানুষ নাগরিকত্ব পায় কেমন করে? কাউকে নাগরিকত্ব দিলে তিনি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন এ আর বিচিত্র কী! প্রফেসর ইউনুস এবং গোলাম আযমের মধ্যে মুলত কোন তফাত নাই, দু-জনই এদেশের নাগরিক! দেশের প্রচলিত সমস্ত সুযোগ-সুবিধা এঁদের দিতে রাষ্ট্র বাধ্য। আসলে মুক্তিযুদ্ধের আবেগ হয়ে গেছে এখন একটি বিক্রয়যোগ্য পণ্য [২]।
**এই স্কেচ নামের জিনিসটা অন্য কিছু না, মনের অজান্তে কাগজে আঁকাজোঁকাকে সম্ভবত ‘ডুডল’ বলে- এটাকে সম্ভবত ডুডল বলা চলে। একদা কাঠ-পেন্সিলে ঘসাঘসির ফল।
সহায়ক সূত্র:
১. গোলাম আযম: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_29.html
২. বিক্রয়যোগ্য পণ্য: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_07.html
* মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অন্যান্য লেখা: http://tinyurl.com/37wksnh
এর মধ্যে অধ্যাপক গোলাম আযম [১] ছিলেন ১২ নম্বরে।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, এসব ব্যক্তিদের এবং সাবেক গভর্নর ডাঃ মালেকের মন্ত্রীসভার তিনজন সদস্যের নামে যে সব স্থাবর বিষয় সম্পত্তি আছে তা এবং তাদের বেনামী বিষয় সম্পত্তি ক্রোক করে নেয়া হয়েছে।”
(দৈনিক বাংলা/ ১০ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২)
“সরকারী অপর এক নোটিফিকেশনে বলা হয়ঃ
বাংলাদেশ সরকার ৩৯ ব্যক্তিকে বাংলাদেশে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘোষণা করেছেন। এই ৩৯ ব্যক্তি বাংলাদেশে নাগরিকত্ব পাবে না। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আদেশের (অস্থায়ী বিধান) তিন নম্বর ধারাবলে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
নোটিফিকেশনে এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছেঃ
এসব ব্যক্তি বাংলাদেশ মুক্তির আগে থেকে বিদেশে অবস্থান করছিলেন। এদের আচরণ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হতে পারে না এবং এরা পাকিস্তানেই অবস্থান করছেন।
বাংলাদেশে নাগরিকত্ব লাভের অযোগ্য ব্যক্তিরা হলেনঃ সর্বজনাব...। এদের মধ্যে গোলাম আযম হলেন ৮ নম্বর।”
(দৈনিক বাংলা/ ২২ এপ্রিল, ১৯৭৩)
“সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলেও সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল ১৮ ধরনের অপরাধী ক্ষমা পাবেন না।
(১) ১২১. বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো অথবা চালানোর চেষ্টা।
(২) ১২১ ক. বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র।
(৩) ১২৪ ক. রাষ্ট্রদ্রোহিতা।
(৪) ৩০২. হত্যা ।
(৫) ৩০৪. হত্যার চেষ্টা।
(৬) ৩৬৩. অপরহণ
(৭) ৩৬৪. হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ।
(৮) ৩৬৫. আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ ।
(৯) ৩৬৮. অপহৃত ব্যক্তিকে আটক বা গুম রাখা ।
(১০) ৩৭৬. ধর্ষণ।
(১১) ৩৯২. দস্যুবৃত্তি ।
(১২) ৩৯৪. দস্যুবৃত্তিকালে আঘাত ।
(১৩) ৩৯৫. ডাকাতি ।
(১৪) ৩৯৬. খুন সহ ডাকাতি ।
(১৫) ৩৯৭. হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি ।
(১৬) ৪৩৫. আগুন বা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন ।
(১৭) ৪৩৬. বাড়ীঘর ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যর ব্যবহার ।
(১৮) ফৌজদারী দন্ডবিধির ৪৩৬ আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে কোন জলযানের ক্ষতিসাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহদান।
*১৮ নম্বরের অনেকগুলো উপধারা আছে।
...এবং অভিযুক্ত শান্তি বাহিনীর নেতারা ক্ষমা পাবেন না।”
(দৈনিক বাংলা/ ১৭ মে, ১৯৭৩)
গোলাম আযম তার মায়ের অসুস্থতার অজুহাতে সাময়িকভাবে (৩ মাসের ভিসায়) বাংলাদেশে আসেন এবং আর ফিরে না গিয়ে অবৈধভাবে রাজনৈতিক তত্পরতায় লিপ্ত হন।
গোলাম আযমের নাগরিকত্ব প্রার্থনা:
১৯৭৬ সালে জিয়া সরকার কর্তৃক অনাকাঙ্খিত ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করা সম্পর্কে বিবেচনার আশ্বাস পেয়ে সকলেই দরখাস্ত করেন। অনেকেই বিশেষ বিবেচনায় নাগরিকত্ব ফিরে পান কিন্ত গোলাম আযমের বিষয়টি ঝুলে থাকে।
১৯৮৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মতিন আজ জাতীয় সংসদে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেনঃ
"ধন্যবাদ মানননীয় স্পীকার,
...জনাব, গোলাম আযম ১৯৭১ সালের ২১শে নভেম্বর পাকিস্তানে গমন করেন।
...বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তত্কালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ১৮-৪-৭৩ তারিখে (নং ৪০০/বহিঃ ৩) জারীকৃত একটি প্রজ্ঞাপন বলে তার বাংলাদেশে নাগরিকত্ব বাতিল ঘোষণা কর হয় এবং তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের অযোগ্য বলে চিহ্নিত করা হয়।
ইংরাজী ১৯৭৬ সনে তিনি লন্ডন থেকে তার নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিকট আবেদন করেন। উক্ত আবেদন নাকচ করা হয় এবং এ ব্যাপারে তাকে জানিয়েও দেয়া হয়।
১৯৭৮ সনের ১১ জুলাই জনাব গোলাম আযম পাকিস্তানী পাসপোর্টে বাংলাদেশের (৩ মাসের) ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং তখন থেকেই তিনি এ দেশে অবস্থান করছেন।
...মাননীয় স্পীকার, আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে এই পর্যায়ে এই মহান সংসদকে জানাতে চাই বর্তমানেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে নাগরিকত্ব ফেরত দেয়ার কোন ইচ্ছা বা সিদ্ধান্ত কিছুই নাই।”
(জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মতিনের বিবৃতি)
এত প্রমাণ থাকার পরও একজন মানুষ নাগরিকত্ব পায় কেমন করে? কাউকে নাগরিকত্ব দিলে তিনি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন এ আর বিচিত্র কী! প্রফেসর ইউনুস এবং গোলাম আযমের মধ্যে মুলত কোন তফাত নাই, দু-জনই এদেশের নাগরিক! দেশের প্রচলিত সমস্ত সুযোগ-সুবিধা এঁদের দিতে রাষ্ট্র বাধ্য। আসলে মুক্তিযুদ্ধের আবেগ হয়ে গেছে এখন একটি বিক্রয়যোগ্য পণ্য [২]।
**এই স্কেচ নামের জিনিসটা অন্য কিছু না, মনের অজান্তে কাগজে আঁকাজোঁকাকে সম্ভবত ‘ডুডল’ বলে- এটাকে সম্ভবত ডুডল বলা চলে। একদা কাঠ-পেন্সিলে ঘসাঘসির ফল।
সহায়ক সূত্র:
১. গোলাম আযম: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_29.html
২. বিক্রয়যোগ্য পণ্য: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_07.html
* মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অন্যান্য লেখা: http://tinyurl.com/37wksnh
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
শুধু একবার আমার মাথায় হাত রেখে দিলে
মাহবুব ভাই। অন্যদের চোখে আপনি খুব সাধারণ (!) একজন মানুষ। আমার যে বছরে জন্ম সে বছরে আপনি এয়ারফোর্সে জয়েন করেন। আপনার সময়কার কৃতি একজন ফুটবলার। আজাদ স্পোর্টিংয়ে জাতীয় দলে খেলে আপনি মাঠ কাঁপিয়েছেন।
আমার জীবনে যতো সব সু বা ভাল প্রত্যেকটার সঙ্গে আপনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন-না-কোন একটা সংযোগ আছেই! আমি বারবার গর্তে পড়েছি, আপনি আমাকে টেনে তুলেছেন। আমার প্রতি অপার্থিব মমতা দেখাতে গিয়ে আপনি অন্যায় করেছেন আপনার পরিবারের প্রতি, নিজের প্রতি।
আমার মরে যেতে ইচ্ছা করে, যখন ভাবি আপনি এই বয়সেও প্রবাসে পড়ে থাকতে হয়! কয়েকটা নোংরা কাগজের জন্য আপনাকে দেশে আনতে পারি না। অথচ দেখেন, আমি যখন ধোঁয়া ওঠা গরম-গরম ভাত খাই, নিজের বিছানায় শুই, প্রিয় মানুষদের সঙ্গে ঝগড়া করি- তখন, আপনি প্রবাসে একাকী, নিঃসঙ্গ।
আমার বুঝি ইচ্ছে করে না, ঈদে এক চামচ সেমাই আপনাকে খাওয়াই...। প্রায়শ ভাবি, আপনার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা আসলে কি? পিতা পুত্রের, বড়ো ভাইয়ের, বন্ধুত্বের? আমি কনফিউজড-বিভ্রান্ত! এমনিতে আপনার সামনে ধুমসে সিগারেট খাই, যা তা রসিকতা করি, পরষ্পরের সব ভাবনা শেয়ার করি!
এমন কি আমি যে টুকটাক লেখালেখি করেছি এর পেছনেও আপনার অবদানই প্রবল। ভুলে গেছেন বুঝি, কানের পাশে সেই যে অনবরত ঘেনঘেন করতেন,কিছু একটা লেখেন, কিছু একটা লেখেন। । আপনার যন্ত্রণায় এক সময় লিখতে শুরু করলাম। অথচ, আপনি আমার লেখার এক লাইনও কখনো পড়ে দেখেছেন বলে আমার ঘোর সন্দেহ আছে! অনেক লেখা আমি আপনাকে উৎসর্গ করেছি- এসবে কি আসলেই আপনার কিছু যায় আসে?
কিন্তু কী একটা জীবনে আপনি আমাকে আটকে দিলেন- কী ক্ষতিটাই না করে দিলেন- আমার জীবনটা এলোমেলো করে দিলেন! আমার প্রিয় মানুষ হাসপাতালে অথচ আমি আমার লেখার বানান সংশোধন করছি, উপায় ছিল না তখন। বইমেলায় বই বেরুবে প্রকাশকের তাড়া- দ্য শো মাস্ট গো অন! ছি, এটা একটা জীবন হলো! অথচ এই সুতীব্র বেদনার কথাগুলো আমার সেই সময়কার লেখাগুলো যিনি পড়বেন, তাঁরা কখনোই জানবেন না- তাঁর জানার প্রয়োজন নেই!
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওই লেখাগুলো ছিল ফানি টাইপ লেখা। পরে অনেকেই বলেছেন, আপনি যে একটা ভাঁড়, এতে আমাদের আর কোন সন্দেহ নাই।
হাসপাতালে ভর্তি ওই প্রিয় মানুষটার সঙ্গে চোখ মেলাবার ক্ষমতা আমার কই? অথচ তিনি রাগারাগি করলে ভাল হতো- বড়ো বড়ো চোখের নির্বাক সেই ভঙ্গি আমি ষ্পষ্ট পড়তে পারছিলাম, আমার প্রাণের চেয়ে তোমার লেখালেখি বড়ো হলো কোন যুক্তিতে...!
ইশ্বর, ওই সময় নিরুপায় আমি, যখন বানানগুলো সংশোধন করছিলাম, আমার চোখের জলে অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে আসছিল- এটা বললেও আজ আর কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না...।
সেই যে আপনি আমার ঘাড়ে লেখালেখির সিন্দবাদের ভূতটাকে আয়েশ করে বসিয়ে আলগোছে সরে পড়েছিলেন- এই সিন্দবাদের ভূতটাকে আমি তীব্র অনীহায়, অনিচ্ছায় দিনের পর দিন বয়ে বেড়াচ্ছি। কতোবার চেষ্টা করেছি লেখালেখির এই ভূতটাকে ঝেড়ে ফেলতে। মাহবুব ভাই, আপনি আমার বড় ক্ষতি করে দিলেন, জীবনটাকে এলোমেলো করে দিলেন।
তবুও আমাকে যদি অপশন দেয়া হয়, আমি কি এই গ্রহের সবচে পবিত্র স্থান স্পর্শ করতে চাইবো, নাকি আপনাকে...? মাহবুব ভাই, দ্বিতীয়বার চিন্তা না-করে আমি আপনাকে স্পর্শ করার সুযোগ বেছে নেব, বারবার।
এ কেবল আমার বিশ্বাস না, আমি জানি, আপনি শুধু একবার আমার মাথায় হাত রেখে দিলে, আমি পরম নিশ্চিন্তে মরতে পারবো, আই বেট...।
আমার জীবনে যতো সব সু বা ভাল প্রত্যেকটার সঙ্গে আপনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন-না-কোন একটা সংযোগ আছেই! আমি বারবার গর্তে পড়েছি, আপনি আমাকে টেনে তুলেছেন। আমার প্রতি অপার্থিব মমতা দেখাতে গিয়ে আপনি অন্যায় করেছেন আপনার পরিবারের প্রতি, নিজের প্রতি।
আমার মরে যেতে ইচ্ছা করে, যখন ভাবি আপনি এই বয়সেও প্রবাসে পড়ে থাকতে হয়! কয়েকটা নোংরা কাগজের জন্য আপনাকে দেশে আনতে পারি না। অথচ দেখেন, আমি যখন ধোঁয়া ওঠা গরম-গরম ভাত খাই, নিজের বিছানায় শুই, প্রিয় মানুষদের সঙ্গে ঝগড়া করি- তখন, আপনি প্রবাসে একাকী, নিঃসঙ্গ।
আমার বুঝি ইচ্ছে করে না, ঈদে এক চামচ সেমাই আপনাকে খাওয়াই...। প্রায়শ ভাবি, আপনার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা আসলে কি? পিতা পুত্রের, বড়ো ভাইয়ের, বন্ধুত্বের? আমি কনফিউজড-বিভ্রান্ত! এমনিতে আপনার সামনে ধুমসে সিগারেট খাই, যা তা রসিকতা করি, পরষ্পরের সব ভাবনা শেয়ার করি!
এমন কি আমি যে টুকটাক লেখালেখি করেছি এর পেছনেও আপনার অবদানই প্রবল। ভুলে গেছেন বুঝি, কানের পাশে সেই যে অনবরত ঘেনঘেন করতেন,কিছু একটা লেখেন, কিছু একটা লেখেন। । আপনার যন্ত্রণায় এক সময় লিখতে শুরু করলাম। অথচ, আপনি আমার লেখার এক লাইনও কখনো পড়ে দেখেছেন বলে আমার ঘোর সন্দেহ আছে! অনেক লেখা আমি আপনাকে উৎসর্গ করেছি- এসবে কি আসলেই আপনার কিছু যায় আসে?
কিন্তু কী একটা জীবনে আপনি আমাকে আটকে দিলেন- কী ক্ষতিটাই না করে দিলেন- আমার জীবনটা এলোমেলো করে দিলেন! আমার প্রিয় মানুষ হাসপাতালে অথচ আমি আমার লেখার বানান সংশোধন করছি, উপায় ছিল না তখন। বইমেলায় বই বেরুবে প্রকাশকের তাড়া- দ্য শো মাস্ট গো অন! ছি, এটা একটা জীবন হলো! অথচ এই সুতীব্র বেদনার কথাগুলো আমার সেই সময়কার লেখাগুলো যিনি পড়বেন, তাঁরা কখনোই জানবেন না- তাঁর জানার প্রয়োজন নেই!
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওই লেখাগুলো ছিল ফানি টাইপ লেখা। পরে অনেকেই বলেছেন, আপনি যে একটা ভাঁড়, এতে আমাদের আর কোন সন্দেহ নাই।
হাসপাতালে ভর্তি ওই প্রিয় মানুষটার সঙ্গে চোখ মেলাবার ক্ষমতা আমার কই? অথচ তিনি রাগারাগি করলে ভাল হতো- বড়ো বড়ো চোখের নির্বাক সেই ভঙ্গি আমি ষ্পষ্ট পড়তে পারছিলাম, আমার প্রাণের চেয়ে তোমার লেখালেখি বড়ো হলো কোন যুক্তিতে...!
ইশ্বর, ওই সময় নিরুপায় আমি, যখন বানানগুলো সংশোধন করছিলাম, আমার চোখের জলে অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে আসছিল- এটা বললেও আজ আর কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না...।
সেই যে আপনি আমার ঘাড়ে লেখালেখির সিন্দবাদের ভূতটাকে আয়েশ করে বসিয়ে আলগোছে সরে পড়েছিলেন- এই সিন্দবাদের ভূতটাকে আমি তীব্র অনীহায়, অনিচ্ছায় দিনের পর দিন বয়ে বেড়াচ্ছি। কতোবার চেষ্টা করেছি লেখালেখির এই ভূতটাকে ঝেড়ে ফেলতে। মাহবুব ভাই, আপনি আমার বড় ক্ষতি করে দিলেন, জীবনটাকে এলোমেলো করে দিলেন।
তবুও আমাকে যদি অপশন দেয়া হয়, আমি কি এই গ্রহের সবচে পবিত্র স্থান স্পর্শ করতে চাইবো, নাকি আপনাকে...? মাহবুব ভাই, দ্বিতীয়বার চিন্তা না-করে আমি আপনাকে স্পর্শ করার সুযোগ বেছে নেব, বারবার।
এ কেবল আমার বিশ্বাস না, আমি জানি, আপনি শুধু একবার আমার মাথায় হাত রেখে দিলে, আমি পরম নিশ্চিন্তে মরতে পারবো, আই বেট...।
বিভাগ
নিজস্ব ভাবনা
Thursday, July 5, 2007
কেন অন্য রকম?
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···? আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
একই শব্দ বারবার আউড়ে যাওয়া তো ভাল কাজ নয়- পাগলের কাজকারবার। আচ্ছা, এটা কি মনোবিদদের আগ্রহের বিষয়? কে জানে, হবে হয়তো বা!
আচ্ছা, ওই মানুষটা কি প্রভাব ফেলেছে কোনো ভাবে? যে মানুষটা বারবার আউড়ে যাচ্ছিল, ‘গন্দম খায়া জোলাপ নাইমা গেছে’। সামান্য একজন হকার টাইপের মানুষের মুখে, আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ অথচ তখন মনে হচ্ছিল, উঁচুমার্গের কথা। কোনভাবে কি এটা মস্তিষ্কে প্রবল ছাপ ফেলেছে?
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
কই, যথারীতি সূর্যের উদয় হয়েছে, অস্তও গেছে- এমন দিনে তো বিশেষ কোন বিশেষত্ব নাই!
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
মনে হয় না এমন, ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুরে হনহনিয়ে হেঁটে গেলে বেশ হতো? কই, রোদ্দুরে হাঁটা তো আমোদময় কিছু নয়!
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
হয় কী ভ্রম, গাছের পাতাগুলো কী চকচকে, না? কই, শীতে তো পাতা নিষ্প্রভ, ধুসর; হায়, গেল-গেল পাতাটা যে ঝরে!
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
যে আজ কোথাও যাওয়া যাবে না? আহা, যেতে তো হবে কোথাও না কোথাও- নইলে শেকড় বেরিয়ে যাবে যে!
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
জীবনের কাছ থেকে আজ কোথাও পালানো যাবে না? হায়, দুর্বল একজন মানুষের না-পালিয়ে তো বাঁচার উপায় নেই!
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
শীতার্তের জন্য সুর্য কি নেমে আসবে আধ হাত? পাগল, সুর্য বেচারার কী দায় পড়েছে! আরশের নীচ থেকে উকি না-মারলে নিভে যাবে যে!
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
চরম শত্রুকেও ভালবাসতে ইচ্ছা করবে? ধ্যাত, তাই কি হয় কখনো- একটাই মাত্র জীবন যে! জীবনটাকে বটি দিয়ে চাক চাক করবে কে!
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
একই শব্দ বারবার আউড়ে যাওয়া তো ভাল কাজ নয়- পাগলের কাজকারবার। আচ্ছা, এটা কি মনোবিদদের আগ্রহের বিষয়? কে জানে, হবে হয়তো বা!
আচ্ছা, ওই মানুষটা কি প্রভাব ফেলেছে কোনো ভাবে? যে মানুষটা বারবার আউড়ে যাচ্ছিল, ‘গন্দম খায়া জোলাপ নাইমা গেছে’। সামান্য একজন হকার টাইপের মানুষের মুখে, আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ অথচ তখন মনে হচ্ছিল, উঁচুমার্গের কথা। কোনভাবে কি এটা মস্তিষ্কে প্রবল ছাপ ফেলেছে?
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
কই, যথারীতি সূর্যের উদয় হয়েছে, অস্তও গেছে- এমন দিনে তো বিশেষ কোন বিশেষত্ব নাই!
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
মনে হয় না এমন, ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুরে হনহনিয়ে হেঁটে গেলে বেশ হতো? কই, রোদ্দুরে হাঁটা তো আমোদময় কিছু নয়!
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
হয় কী ভ্রম, গাছের পাতাগুলো কী চকচকে, না? কই, শীতে তো পাতা নিষ্প্রভ, ধুসর; হায়, গেল-গেল পাতাটা যে ঝরে!
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
যে আজ কোথাও যাওয়া যাবে না? আহা, যেতে তো হবে কোথাও না কোথাও- নইলে শেকড় বেরিয়ে যাবে যে!
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
জীবনের কাছ থেকে আজ কোথাও পালানো যাবে না? হায়, দুর্বল একজন মানুষের না-পালিয়ে তো বাঁচার উপায় নেই!
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
শীতার্তের জন্য সুর্য কি নেমে আসবে আধ হাত? পাগল, সুর্য বেচারার কী দায় পড়েছে! আরশের নীচ থেকে উকি না-মারলে নিভে যাবে যে!
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
চরম শত্রুকেও ভালবাসতে ইচ্ছা করবে? ধ্যাত, তাই কি হয় কখনো- একটাই মাত্র জীবন যে! জীবনটাকে বটি দিয়ে চাক চাক করবে কে!
আজকের এই দিনটা কি খানিকটা অন্য রকম···?
হয়তো, হয়তো না···
(৩১·০১·০৭/ ১২.০১/ এলোমেলো ভাবনা।)
বিভাগ
হুদাহুদি
সত্যের মত পাজি আর নাই
আমার স্পষ্ট মনে আছে, তখন হুমায়ূন আহমেদের তুমুল জনপ্রিয় এইসব দিনরাত্রি দেখাচ্ছিল। হুমায়ূন আহমেদ এক সাক্ষাৎকারে বললেন, আমার একটা কালার টিভি দরকার- এই টাকা হয়ে গেলেই...।
মোদ্দা কথা, ধারাবাহিকটা লিখছেন কালার টিভির প্রয়োজনে। এটা পড়ে নিমিষেই আমার বুকটা ফাঁকা হয়ে গেল। কেবল মনে হচ্ছিল, মানুষটা কী মানুষ, না পিশাচ!
আজ বুঝি লেখকদের কেবল কপকপ করে জ্যোৎস্না খেয়েই দিন যায় না। এবং লেখকদের কোন অধিকার নাই তার প্রিয় মানুষদের সামান্য সাধ-আহ্লাদগুলোর জলাঞ্জলি দেয়ার।
আজ তাই আমার জানতে বাকি নাই লেখকের তুচ্ছ চাওয়া-পাওয়ার কথাটা চলে এলে একজন পাঠক কেমনটা বোধ করেন। লেখকের ধপধপে ইমেজে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে যায়। মনে হয় মানুষটা কী লালচি-লোভী!
কি বলেন বাহে, হয় না, হয়?
আমাদের দেশে লেখকদের তার পাওনা-প্রাপ্যটুকু দেয়ার মনোভাব এখনও গড়ে উঠেনি। এমনকি ন্যূনতম সম্মানও। কোন পত্রিকায় লিখলে পত্রিকাওয়ালাদের ভাবখানা এমন, বাহে, এখানে যে লিখতে দিচ্ছি এই তো ঢের।
এটা আমরা মনে রাখার চেষ্টা করি না, কখনও পত্রিকার কারণে একজন লেখক দাঁড়িয়ে যান, তেমনি একটি পত্রিকাও লেখককে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
সালটা ৯২/ ৯৩। আমি তখন লিখছিলাম, এক্ষণ বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত (এদের দাবীমতে) একটি দৈনিকে। ‘একালের রূপকথা’ নামে লিখেছিলাম প্রায় দেড় বছর। ফি হপ্তা, প্রতি সপ্তাতে ১টা করে লেখা। প্রত্যেক লেখার জন্য পেতাম ৫০ টাকা করে। মাসে কত হতো, ২০০?
মজার ব্যাপার হচ্ছে টাকাটা আমাকে পাঠিয়ে দিলেই হয়। উহুঁ, সশরীরে নেয়ে আসতে হবে। হায়রে সশরীর! বডিটাকে ঢাকা পর্যন্ত নেয়াটা কী কম ঝক্কির, কম খরুচে ব্যাপার! তো, দুই তিন মাসের টাকা জমিয়ে গেলাম।
আবার সুকঠিন নিয়ম ছিল, মাসের ২১ তারিখ থেকে ২৪ তারিখে যেতে হবে। ২০ তারিখে গেলেও হবে না, আবার ২৫ আরিখ গেলেও হবে না। তো, গেলাম নির্দিষ্ট তারিখেই। হায়, তখন যদি বলা হয় ফান্ড নাই, কেমন লাগে? কি জানি কার কার কাছে ভাল লাগে- আমার নিজেকে ভিক্ষুক-ভিক্ষুক মনে হত!
আমার একবার মেজাজ খুব খারাপ হলো, রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিল। ফকিরের আবার রাগ!
ওই পত্রিকার জন্যই একটা লেখা লিখলাম, ‘সহনশীল প্রাণী’ নামে। পত্রিকাওয়ালারা খুব রাগ করলেন। বিভাগীয় সম্পাদক বললেন, এইটা কি লিখেছেন? সম্পাদক সাহেব খুব রাগ করেছেন।
বিভাগীয় সম্পাদক নামের মানুষটাকে আমি পছন্দ করতাম, কথা হত খোলাখুলি। আমি বললাম, যা লিখেছি তা কি অসত্য?
বিভাগীয় সম্পাদক মিনমিন করে বললেন, তা না, কিন্তু ভাইরে সব সত্য কি আমরা বলতে পারি! আর আপনি এইসব লিখলে আপনার লেখা কি আর ছাপা হবে? ক্ষতিটা কার হবে, আপনার হবে না? তাছাড়া আপনার সমস্যাটা কি, আপনি কী টাকার জন্য চাল কিনতে পারছেন না?
আমি মনে মনে বললাম, আমার ক্ষতি হবে, কচু- আমার মতো অগাবগা না লেখলে ঘেঁচু হবে! মুখে বললাম, চাল কেনার কথা আসছে কোত্থেকে- এটা তো আলোচ্য বিষয় না! আমার প্রাপ্যটা দেয়া হবে না কেন? আচ্ছা, আপনি কি এটা বলবেন আমায়, একজন ফটো সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছবি উঠান অথচ আপনারা তাঁর নামটা পর্যন্ত দেন না; পত্রিকার নাম দেন কেন, এর কোন উত্তর আপনাদের কাছে নাই। আছে?
সুখের বিষয়, দীর্ঘ ১ মাস পর লেখাটা ছাপা হয়েছিল। ওই সময়কার তীব্র আনন্দ আমার স্মৃতিতে এখনও স্পষ্ট। কেবল মনে হচ্ছিল মফঃস্বলের অখ্যাত একজন অলেখকের বিশাল এক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিজয়।
একালের প্রলাপ থেকে ‘সহনশীল প্রাণী’ লেখাটি এখানে যোগ করছি।
"সহনশীল প্রাণী...
ভূত অপ্রার্থিব গলায় বলল, ‘এই আবর্জনা লেখক, তোকে মৃত্যুদণ্ড দিলাম। ফাঁসি-টাসি না, জাস্ট একটানে মুণ্ডুটা ছিঁড়ে ফেলব।’
একজন লেখক অখ্যাত কুখ্যাত পরের কথা, কী সীমাহীন তার ক্ষমতা। ইচ্ছে হলেই একটা চরিত্র সৃষ্টি করে হাসান, কাঁদান- বিষণবোধ করলে মেরে ফেলেন। কাল্পনিক সৃষ্টির মিছে স্রষ্টার এ সম্বোধন ভালো না লাগারই কথা।
লেখক রাগ চেপে বলল, ‘ভাই ভূত, আপনি সভ্য না অসভ্য দেশের ভূত?’
ভূত দাঁতে দাঁত ঘষে বলল, ‘পেটা গাইল্যা ফালামু (এটার অর্থ হবে সম্ভবত এরকম, অমানুষিক শক্তি প্রয়োগে নাড়ী ভুঁড়ি ভর্তা করে ফেলা হবে)। রাস্কেল, ইউ নো, আমার গায়ে নীল রক্ত বইছে।’
লেখক: আ বেগ য়্যু’ পার্ডন স্যার। নীল রক্ত আপনি দেখি অতি সভ্য ভূত! তা আপনি স্যার একটু ভুল বললেন এখন আপনার ধমনীতে নীল রক্ত দূরের কথা, লাল-সবুজ-সাদা কোনো রক্তই এক ফোঁটা বইছে না।
ভূত (জাঁক করে): ইয়েস, সভ্য দেশের অতি সভ্য ভূত আমি।
লেখক: সভ্য দেশে মৃত্যুদণ্ড উঠিয়ে দেয়া হয়েছে অথচ আপনি দিচ্ছেন, এটা কি ঠিক হচ্ছে? তুই-তোকারি করছেন এটাই বা কেমন!
অতি সভ্য ভূত: তুই-তাই না করলে ভূতদের বাজার পড়ে যায়। তাছাড়া মানুষ নামধারী অমানুষদের বিচার করে মেরে ফেলতে হবে না, আশ্চর্য! পৃথিবীটাকে চমৎকার বানাতে গিয়ে মানুষকে নিষ্ঠুর হতে হয় যে।
লেখক: স্যার, আপনি বোঝাতে চাচ্ছেন মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করা। সৌদির মতো কিছু বর্বর দেশ অবশ্য এ বিষয়ে বহু এগিয়ে আছে। এরা স্টেডিয়ামের মতো বিশাল জায়গায় উন্মুক্ত শিরচ্ছেদের ব্যবস্থা করে। রেডিও টেলির্ভিশনে আগাম ঘোষণা দিয়ে টেলির্ভিশনে ঘটা করে দেখানো হয়। অবশ্য এরা দয়ার সাগর ঘোষণা করে দেয়, শিশু এবং অসুস্থ লোকজনকে যেন এ অনুষ্ঠান দেখতে না দেয়া হয়। দলে দলে লোকজন শিরচ্ছেদ দেখে। অপার আনন্দ লাভ করে।
অ. স. ভূত: ভালোই তো, অপরাধীদের জন্যে উদাহরণ সৃষ্টি হবে।
লেখক: ‘অপরাধীর পায়ের চেয়ে আইনের হাত লম্বা’ এটা অন্যভাবেও বোঝানো যায়। ভারতে অসংখ্য প্রাণ হরণকারী একজন ডাকাতকে ধরার জন্যে এক হাজার সামরিক, আধা-সামরিক কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে। একে ধরতে গিয়ে এ পর্যন্ত পঁচিশ কোটি রুপী খরচ হয়েছে। ডাকাতের মাথার দাম ধরা হয়েছে চল্লিশ লাখ রুপী। একে আটকে মেরে ফেললে কি হবে? মৃত্যুর পর সবাই আনন্দ-বেদনার ঊর্ধ্বে? হেনরী শ্যারিয়ারের ‘প্যাপিলন’-এর প্যাপীকে ‘আইলস ডু স্যালুট’-এর নির্জন সেলে যে রকম আটকে রাখা হয়েছিল ওরকম অন্ধকূপে চরম অপরাধীদের আজীবন আটকে রাখা উচিত। মাঝে মধ্যে এদের সাক্ষাৎকার নিয়ে ফলাও করে জানানো যেতে পারে। প্যাপীলনের মতো এদেরও সময় থেমে যাবে মনে হবে এ কষ্ট পৃথিবীর কষ্ট না ।
অ. স. ভূত: দরিদ্র দেশগুলোর টাকা কই, ফটাফট মেরে ফেললেই তো সুবিধা?
লেখক: যে মানুষ তার মতো কাউকে সৃষ্টি করতে পারে না সে কোন অধিকারে একটা প্রাণ নষ্ট করবে। এসব থাক, এখন বলেন, আমাকে কেন মৃত্যুদণ্ড দিলেন।
অ. স. ভূত: তুই না কি আমাদের নিয়ে যা-তা লিখিস, লোকজন হাসি-ঠাট্টা করে। জন নামের একজন ভূতকে বলেছিস ‘রাম ছাগল ভূত’। এসব কি, অন্তত ‘জন ছাগল ভূত’ বললেও তো হতো। এসব ছাই ভস্ম লিখে মাল কামিয়ে লাল হচ্ছিস।
লেখক (বেদনাহত হয়ে): স্যার-স্যার, এমন কুৎসিত ভঙ্গিতে বলবেন না। লাল-নীল জানি না এরকম একটা লেখা লিখে পাই পঞ্চাশ টাকা।
অ. স. ভূত: পঞ্চাশ টাকা দিয়ে কি করিস?
লেখক: এটা তো সম্মানী এ দিয়ে আবার কি করবো, বাঁধিয়ে রাখি। এটা সম্মানী তো তাই বিশেষ দিনে গিয়ে নিয়ে আসতে হয়। লেখককে সৌজন্য কপি দেয়ার নিয়ম নাই বিধায় ‘অসৌজন্য কপি’ কিনে নিজের লেখা নিজেই পড়ি।
এরা অন্য ভুবন থেকে এসে আলো দেখান- এতো আলো দেখিয়ে ফেলেন, আলোর ছটায় নিরূপায় হয়ে জানালা বন্ধ রাখতে হয়। প্রিয় মানুষদের ন্যূনতম সাধ-আহ্লাদের জলাঞ্জলি দিয়ে, ভরপেট খাবার খেতে, চকচকে পোশাক পরতে এদের কখনোই ইচ্ছা করে না- নিয়ম নেই। লেখক থাকবেন অপরিচ্ছন্ন, চুলে পাখি না হোক অন্তত তেলাপোকা ডিম দেবে, মদ্যপান করে ল্যাম্পপোস্ট রাস্তার মাঝখানে কেন এ নিয়ে তুমুল ঝগড়া করবেন, বড় বড় নোখ দিয়ে বেশ্যাকে খামচাবেন। এরা কপাকপ জ্যোৎস্না খান, সরষে তেলের মতো গায়ে জ্যোৎস্না মাখেন, জ্যোৎস্না রাত না হলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান না।
তবে হ্যাঁ, পাঠকের ভালোবাসার কথা যদি বলেন, তখন পৃথিবীর সব বেদনা তুচ্ছ মনে হয়। তখন মনে হয় জীবনটা এত ছোট কেন!
মোদ্দা কথা, ধারাবাহিকটা লিখছেন কালার টিভির প্রয়োজনে। এটা পড়ে নিমিষেই আমার বুকটা ফাঁকা হয়ে গেল। কেবল মনে হচ্ছিল, মানুষটা কী মানুষ, না পিশাচ!
আজ বুঝি লেখকদের কেবল কপকপ করে জ্যোৎস্না খেয়েই দিন যায় না। এবং লেখকদের কোন অধিকার নাই তার প্রিয় মানুষদের সামান্য সাধ-আহ্লাদগুলোর জলাঞ্জলি দেয়ার।
আজ তাই আমার জানতে বাকি নাই লেখকের তুচ্ছ চাওয়া-পাওয়ার কথাটা চলে এলে একজন পাঠক কেমনটা বোধ করেন। লেখকের ধপধপে ইমেজে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে যায়। মনে হয় মানুষটা কী লালচি-লোভী!
কি বলেন বাহে, হয় না, হয়?
আমাদের দেশে লেখকদের তার পাওনা-প্রাপ্যটুকু দেয়ার মনোভাব এখনও গড়ে উঠেনি। এমনকি ন্যূনতম সম্মানও। কোন পত্রিকায় লিখলে পত্রিকাওয়ালাদের ভাবখানা এমন, বাহে, এখানে যে লিখতে দিচ্ছি এই তো ঢের।
এটা আমরা মনে রাখার চেষ্টা করি না, কখনও পত্রিকার কারণে একজন লেখক দাঁড়িয়ে যান, তেমনি একটি পত্রিকাও লেখককে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
সালটা ৯২/ ৯৩। আমি তখন লিখছিলাম, এক্ষণ বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত (এদের দাবীমতে) একটি দৈনিকে। ‘একালের রূপকথা’ নামে লিখেছিলাম প্রায় দেড় বছর। ফি হপ্তা, প্রতি সপ্তাতে ১টা করে লেখা। প্রত্যেক লেখার জন্য পেতাম ৫০ টাকা করে। মাসে কত হতো, ২০০?
মজার ব্যাপার হচ্ছে টাকাটা আমাকে পাঠিয়ে দিলেই হয়। উহুঁ, সশরীরে নেয়ে আসতে হবে। হায়রে সশরীর! বডিটাকে ঢাকা পর্যন্ত নেয়াটা কী কম ঝক্কির, কম খরুচে ব্যাপার! তো, দুই তিন মাসের টাকা জমিয়ে গেলাম।
আবার সুকঠিন নিয়ম ছিল, মাসের ২১ তারিখ থেকে ২৪ তারিখে যেতে হবে। ২০ তারিখে গেলেও হবে না, আবার ২৫ আরিখ গেলেও হবে না। তো, গেলাম নির্দিষ্ট তারিখেই। হায়, তখন যদি বলা হয় ফান্ড নাই, কেমন লাগে? কি জানি কার কার কাছে ভাল লাগে- আমার নিজেকে ভিক্ষুক-ভিক্ষুক মনে হত!
আমার একবার মেজাজ খুব খারাপ হলো, রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিল। ফকিরের আবার রাগ!
ওই পত্রিকার জন্যই একটা লেখা লিখলাম, ‘সহনশীল প্রাণী’ নামে। পত্রিকাওয়ালারা খুব রাগ করলেন। বিভাগীয় সম্পাদক বললেন, এইটা কি লিখেছেন? সম্পাদক সাহেব খুব রাগ করেছেন।
বিভাগীয় সম্পাদক নামের মানুষটাকে আমি পছন্দ করতাম, কথা হত খোলাখুলি। আমি বললাম, যা লিখেছি তা কি অসত্য?
বিভাগীয় সম্পাদক মিনমিন করে বললেন, তা না, কিন্তু ভাইরে সব সত্য কি আমরা বলতে পারি! আর আপনি এইসব লিখলে আপনার লেখা কি আর ছাপা হবে? ক্ষতিটা কার হবে, আপনার হবে না? তাছাড়া আপনার সমস্যাটা কি, আপনি কী টাকার জন্য চাল কিনতে পারছেন না?
আমি মনে মনে বললাম, আমার ক্ষতি হবে, কচু- আমার মতো অগাবগা না লেখলে ঘেঁচু হবে! মুখে বললাম, চাল কেনার কথা আসছে কোত্থেকে- এটা তো আলোচ্য বিষয় না! আমার প্রাপ্যটা দেয়া হবে না কেন? আচ্ছা, আপনি কি এটা বলবেন আমায়, একজন ফটো সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছবি উঠান অথচ আপনারা তাঁর নামটা পর্যন্ত দেন না; পত্রিকার নাম দেন কেন, এর কোন উত্তর আপনাদের কাছে নাই। আছে?
সুখের বিষয়, দীর্ঘ ১ মাস পর লেখাটা ছাপা হয়েছিল। ওই সময়কার তীব্র আনন্দ আমার স্মৃতিতে এখনও স্পষ্ট। কেবল মনে হচ্ছিল মফঃস্বলের অখ্যাত একজন অলেখকের বিশাল এক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিজয়।
একালের প্রলাপ থেকে ‘সহনশীল প্রাণী’ লেখাটি এখানে যোগ করছি।
"সহনশীল প্রাণী...
ভূত অপ্রার্থিব গলায় বলল, ‘এই আবর্জনা লেখক, তোকে মৃত্যুদণ্ড দিলাম। ফাঁসি-টাসি না, জাস্ট একটানে মুণ্ডুটা ছিঁড়ে ফেলব।’
একজন লেখক অখ্যাত কুখ্যাত পরের কথা, কী সীমাহীন তার ক্ষমতা। ইচ্ছে হলেই একটা চরিত্র সৃষ্টি করে হাসান, কাঁদান- বিষণবোধ করলে মেরে ফেলেন। কাল্পনিক সৃষ্টির মিছে স্রষ্টার এ সম্বোধন ভালো না লাগারই কথা।
লেখক রাগ চেপে বলল, ‘ভাই ভূত, আপনি সভ্য না অসভ্য দেশের ভূত?’
ভূত দাঁতে দাঁত ঘষে বলল, ‘পেটা গাইল্যা ফালামু (এটার অর্থ হবে সম্ভবত এরকম, অমানুষিক শক্তি প্রয়োগে নাড়ী ভুঁড়ি ভর্তা করে ফেলা হবে)। রাস্কেল, ইউ নো, আমার গায়ে নীল রক্ত বইছে।’
লেখক: আ বেগ য়্যু’ পার্ডন স্যার। নীল রক্ত আপনি দেখি অতি সভ্য ভূত! তা আপনি স্যার একটু ভুল বললেন এখন আপনার ধমনীতে নীল রক্ত দূরের কথা, লাল-সবুজ-সাদা কোনো রক্তই এক ফোঁটা বইছে না।
ভূত (জাঁক করে): ইয়েস, সভ্য দেশের অতি সভ্য ভূত আমি।
লেখক: সভ্য দেশে মৃত্যুদণ্ড উঠিয়ে দেয়া হয়েছে অথচ আপনি দিচ্ছেন, এটা কি ঠিক হচ্ছে? তুই-তোকারি করছেন এটাই বা কেমন!
অতি সভ্য ভূত: তুই-তাই না করলে ভূতদের বাজার পড়ে যায়। তাছাড়া মানুষ নামধারী অমানুষদের বিচার করে মেরে ফেলতে হবে না, আশ্চর্য! পৃথিবীটাকে চমৎকার বানাতে গিয়ে মানুষকে নিষ্ঠুর হতে হয় যে।
লেখক: স্যার, আপনি বোঝাতে চাচ্ছেন মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করা। সৌদির মতো কিছু বর্বর দেশ অবশ্য এ বিষয়ে বহু এগিয়ে আছে। এরা স্টেডিয়ামের মতো বিশাল জায়গায় উন্মুক্ত শিরচ্ছেদের ব্যবস্থা করে। রেডিও টেলির্ভিশনে আগাম ঘোষণা দিয়ে টেলির্ভিশনে ঘটা করে দেখানো হয়। অবশ্য এরা দয়ার সাগর ঘোষণা করে দেয়, শিশু এবং অসুস্থ লোকজনকে যেন এ অনুষ্ঠান দেখতে না দেয়া হয়। দলে দলে লোকজন শিরচ্ছেদ দেখে। অপার আনন্দ লাভ করে।
অ. স. ভূত: ভালোই তো, অপরাধীদের জন্যে উদাহরণ সৃষ্টি হবে।
লেখক: ‘অপরাধীর পায়ের চেয়ে আইনের হাত লম্বা’ এটা অন্যভাবেও বোঝানো যায়। ভারতে অসংখ্য প্রাণ হরণকারী একজন ডাকাতকে ধরার জন্যে এক হাজার সামরিক, আধা-সামরিক কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে। একে ধরতে গিয়ে এ পর্যন্ত পঁচিশ কোটি রুপী খরচ হয়েছে। ডাকাতের মাথার দাম ধরা হয়েছে চল্লিশ লাখ রুপী। একে আটকে মেরে ফেললে কি হবে? মৃত্যুর পর সবাই আনন্দ-বেদনার ঊর্ধ্বে? হেনরী শ্যারিয়ারের ‘প্যাপিলন’-এর প্যাপীকে ‘আইলস ডু স্যালুট’-এর নির্জন সেলে যে রকম আটকে রাখা হয়েছিল ওরকম অন্ধকূপে চরম অপরাধীদের আজীবন আটকে রাখা উচিত। মাঝে মধ্যে এদের সাক্ষাৎকার নিয়ে ফলাও করে জানানো যেতে পারে। প্যাপীলনের মতো এদেরও সময় থেমে যাবে মনে হবে এ কষ্ট পৃথিবীর কষ্ট না ।
অ. স. ভূত: দরিদ্র দেশগুলোর টাকা কই, ফটাফট মেরে ফেললেই তো সুবিধা?
লেখক: যে মানুষ তার মতো কাউকে সৃষ্টি করতে পারে না সে কোন অধিকারে একটা প্রাণ নষ্ট করবে। এসব থাক, এখন বলেন, আমাকে কেন মৃত্যুদণ্ড দিলেন।
অ. স. ভূত: তুই না কি আমাদের নিয়ে যা-তা লিখিস, লোকজন হাসি-ঠাট্টা করে। জন নামের একজন ভূতকে বলেছিস ‘রাম ছাগল ভূত’। এসব কি, অন্তত ‘জন ছাগল ভূত’ বললেও তো হতো। এসব ছাই ভস্ম লিখে মাল কামিয়ে লাল হচ্ছিস।
লেখক (বেদনাহত হয়ে): স্যার-স্যার, এমন কুৎসিত ভঙ্গিতে বলবেন না। লাল-নীল জানি না এরকম একটা লেখা লিখে পাই পঞ্চাশ টাকা।
অ. স. ভূত: পঞ্চাশ টাকা দিয়ে কি করিস?
লেখক: এটা তো সম্মানী এ দিয়ে আবার কি করবো, বাঁধিয়ে রাখি। এটা সম্মানী তো তাই বিশেষ দিনে গিয়ে নিয়ে আসতে হয়। লেখককে সৌজন্য কপি দেয়ার নিয়ম নাই বিধায় ‘অসৌজন্য কপি’ কিনে নিজের লেখা নিজেই পড়ি।
এরা অন্য ভুবন থেকে এসে আলো দেখান- এতো আলো দেখিয়ে ফেলেন, আলোর ছটায় নিরূপায় হয়ে জানালা বন্ধ রাখতে হয়। প্রিয় মানুষদের ন্যূনতম সাধ-আহ্লাদের জলাঞ্জলি দিয়ে, ভরপেট খাবার খেতে, চকচকে পোশাক পরতে এদের কখনোই ইচ্ছা করে না- নিয়ম নেই। লেখক থাকবেন অপরিচ্ছন্ন, চুলে পাখি না হোক অন্তত তেলাপোকা ডিম দেবে, মদ্যপান করে ল্যাম্পপোস্ট রাস্তার মাঝখানে কেন এ নিয়ে তুমুল ঝগড়া করবেন, বড় বড় নোখ দিয়ে বেশ্যাকে খামচাবেন। এরা কপাকপ জ্যোৎস্না খান, সরষে তেলের মতো গায়ে জ্যোৎস্না মাখেন, জ্যোৎস্না রাত না হলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান না।
তবে হ্যাঁ, পাঠকের ভালোবাসার কথা যদি বলেন, তখন পৃথিবীর সব বেদনা তুচ্ছ মনে হয়। তখন মনে হয় জীবনটা এত ছোট কেন!
বিভাগ
নিজস্ব ভাবনা
Monday, July 2, 2007
লেজার গান দিয়ে পাখি শিকার!
যমুনা গুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের মাতা আলহাজ জমিলা খাতুনের ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি···রাজেউন)। যুগান্তর, ০৩·০৫·০৬
প্রত্যেকটা মৃত্যুই কষ্টের, আমরা বাবুল সাহেবের মা’র রূহের মাগফেরাত কামনা করি।
এই খবরটা বাবুল সাহেব তার নিজ পত্রিকা যুগান্তরে বিশাল করে প্রথম পৃষ্ঠায় দুই কলামে ছবিসহ ছাপান। শোভন হতো যদি এ খবরটা অন্য পত্রিকা এভাবে ফলাও করে ছাপাত। এটা করে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করলেন। কারণ পত্রিকাটি ছাপিয়ে তিনি নিজে, একা একা বাসায় বসে দু-পা উপরে তুলে পড়লে সমস্যা ছিল না। কিন্ত পড়েন পাঠক। পাঠকের বাবুল সাহেবের মা’র মৃত্যুর চেয়ে অন্য জরুরী খবরের প্রয়োজন বেশী।
এটিএন বাংলা নামের ইলেকট্রনিক মিডিয়ার চেয়ারম্যান সাহেবের বউ নাকি বিরাট মহিলা গাতক (রিমেম্বার, ঘাতক না)। তো এই মহিলা গাতকের গান ননস্টপ এটিএন পর্দায় দেখাচ্ছেই! এর শেষ নেই, তাও আবার কয়টা জানি দেশের অসংখ্য লোকেশনে চিত্রায়িত! 'মন মানে না' গানটা হয়ে গেছে, শরম মানে না!
হুমায়ূন আহমেদ শাওনকে বিয়ে করার কারণ হিসাবে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'শাওনের গান শুনে আমি মুগ্ধ'।
অতি উত্তম, গান ভাল জিনিস। মন উৎফুল্ল রাখে। মুশকিল হচ্ছে, গানকে বিবাহ করার সিস্টেম এখনও চালু হয়নি!
তা এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান সাহেব এবং হুমায়ূন সাহেব আপনার এতো যন্ত্রণা না করে গান রেকর্ড করার যন্ত্র দিয়ে আপনাদের বিবি সাহেবাদের গান রেকর্ড করে রাত দিন শোনেন না, এ নিয়ে তো কারো কোন দ্বিমত নাই। আপনারাও বেঁচে যেতেন আমরাও বেঁচে যেতাম!
ড· মুহম্মদ জাফর ইকবাল একটি অনুষ্ঠানে বিচারক হতে অসম্মত হন কারণ তাঁর সন্তানরা সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছিল। বড় মাপের মানুষদের কাছে আমরা তো এমনটাই আশা করব! কিন্তু বাবুল, হুমায়ূন সাহেবা বুঝতে চান না, এসব কান্ড অভব্যতার পর্যায়ে পড়ে। লেজার গান দিয়ে পাখি শিকার!
প্রত্যেকটা মৃত্যুই কষ্টের, আমরা বাবুল সাহেবের মা’র রূহের মাগফেরাত কামনা করি।
এই খবরটা বাবুল সাহেব তার নিজ পত্রিকা যুগান্তরে বিশাল করে প্রথম পৃষ্ঠায় দুই কলামে ছবিসহ ছাপান। শোভন হতো যদি এ খবরটা অন্য পত্রিকা এভাবে ফলাও করে ছাপাত। এটা করে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করলেন। কারণ পত্রিকাটি ছাপিয়ে তিনি নিজে, একা একা বাসায় বসে দু-পা উপরে তুলে পড়লে সমস্যা ছিল না। কিন্ত পড়েন পাঠক। পাঠকের বাবুল সাহেবের মা’র মৃত্যুর চেয়ে অন্য জরুরী খবরের প্রয়োজন বেশী।
এটিএন বাংলা নামের ইলেকট্রনিক মিডিয়ার চেয়ারম্যান সাহেবের বউ নাকি বিরাট মহিলা গাতক (রিমেম্বার, ঘাতক না)। তো এই মহিলা গাতকের গান ননস্টপ এটিএন পর্দায় দেখাচ্ছেই! এর শেষ নেই, তাও আবার কয়টা জানি দেশের অসংখ্য লোকেশনে চিত্রায়িত! 'মন মানে না' গানটা হয়ে গেছে, শরম মানে না!
হুমায়ূন আহমেদ শাওনকে বিয়ে করার কারণ হিসাবে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'শাওনের গান শুনে আমি মুগ্ধ'।
অতি উত্তম, গান ভাল জিনিস। মন উৎফুল্ল রাখে। মুশকিল হচ্ছে, গানকে বিবাহ করার সিস্টেম এখনও চালু হয়নি!
তা এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান সাহেব এবং হুমায়ূন সাহেব আপনার এতো যন্ত্রণা না করে গান রেকর্ড করার যন্ত্র দিয়ে আপনাদের বিবি সাহেবাদের গান রেকর্ড করে রাত দিন শোনেন না, এ নিয়ে তো কারো কোন দ্বিমত নাই। আপনারাও বেঁচে যেতেন আমরাও বেঁচে যেতাম!
ড· মুহম্মদ জাফর ইকবাল একটি অনুষ্ঠানে বিচারক হতে অসম্মত হন কারণ তাঁর সন্তানরা সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছিল। বড় মাপের মানুষদের কাছে আমরা তো এমনটাই আশা করব! কিন্তু বাবুল, হুমায়ূন সাহেবা বুঝতে চান না, এসব কান্ড অভব্যতার পর্যায়ে পড়ে। লেজার গান দিয়ে পাখি শিকার!
বিভাগ
অসভ্য কান্ড
কনক পুরুষ: ১
(আমার ইচ্ছা ছিল চালবাজি করার জন্য। অনেক পুরনো উপন্যাস ছিল এটা। আমার ধারণা ছিল, এটা ধারাবাহিকভাবে পোস্ট করব। আফসোস, ধরা খেয়ে গেলাম। হা ঈশ্বর, এমন মানুষও আছেন। ‘কনক পুরুষ’ উপন্যাসটার কথা এখনও মনে রেখেছেন!
যাই হোক, এই পোস্টটা আমি উৎসর্গ করছি মোসতাকিম রাহী এবং তাঁর মেজদা মোরসালিনকে। কেন?
লেখকরা গল্প বলেন, এই তাঁদের কাজ। আমার মতো অগাবগা লেখকও লেখকদের অনুকরণ করে চেষ্টা করেন গল্প বলতে।
কিন্তু মোসতাকিম রাহী এবং তাঁর মেজদা মোরসালিন গল্প সৃষ্টি করেন, উপাদান যোগান। আমার মতো মানুষকে বিভ্রান্ত, হতবাক করে দেন তাঁদের ভালবাসায়-মমতায়...)।
...
"জয় যথাসম্ভব নিঃশব্দে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে, সশব্দে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, উফ-ফ, কি ধকলটাই না গেল আজ!
ঘুরে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে গেল। মেয়েটা বড় বড় চোখ মেলে তাকিয়ে আছে সেই চোখে আছে রাজ্যের ভয়। এর মানে কী! আজ ওর বাসর রাত। বিয়েটা হঠাৎ করেই হয়ে গেল। এর আগে মা বেশ কয়েকটা মেয়ে দেখে কোন না কোন খুঁত খুঁজে বের করেছেন।
এ বিয়েতেও মা গররাজি ছিলেন। জয়ের এককথা, এ বিয়ে না হলে আর বিয়ে করব না। কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়! তাছাড়া এ মেয়েকে দেখতে গিয়ে সব কেমন ওলটপালট হয়ে গেল, চোখের দৃষ্টিতে এমন কিছু একটা ছিল ওর সব কেমন জট পাকিয়ে গেল।
ফুলের তীব্র গন্ধে ওর কেমন দমবন্ধ ভাব হচ্ছে। ফ্যানের রেগুলেটর এক থেকে পাঁচে নিয়ে এল। চরম বিরক্তি নিয়ে গা থেকে আচকানটা খুলল। এসব পরার কোন মানে হয়, নিজেকে কেমন ক্লাউন ক্লাউন মনে হচ্ছিল!
আড়চোখে তাকিয়ে বিস্ময়ের সীমা রইল না। মেয়েটা কেমন বিবর্ণ হয়ে গেছে, ভয়ে মনে হচ্ছে চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসবে! এসব কী, ও বাঘ না ভালুক! যথেষ্ট দূরত্ব রেখে খাটে বসে কোমল গলায় বলল, ইভা এমন করছ কেন, কি হয়েছে!
ইভা চোখের জলে ভাসতে ভাসতে বলল, আপনার পায়ে পড়ি, আমাকে ছোঁবেন না। ইভা সত্যি সত্যি জয়ের পা ধরতে গেল।
জয় বিদ্যুৎগতিতে সরে যেতে গিয়ে মশারীর একটা স্ট্যান্ড ফেলে দিল। মশারীর স্ট্যান্ডটা একপাশে দাঁড় করাতে করাতে ভাবছে , আরে, এ এমন রকম করছে কেন!
জয় সামলে নিয়ে হাসিমুখে বলল, নিষেধ করে তুমিই দেখি আমাকে ছুঁয়ে ফেলছ, শান্ত হও, আমি তোমার গায়ে হাত দেব না। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? ইভার গা ভয়ে কাঁপছে। খুব ইচ্ছা করছে কথাগুলো বিশ্বাস করতে- বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায় দুলছে?
জয় হাঁই চেপে বলল, তোমার নিশ্চই ঘুম পাচ্ছে, শুয়ে পড়ো। আমার মনে হয় আমি অন্য ঘরে শুলে তুমি আরামে ঘুমাতে পারতে। কিন্তু সেটা ঠিক হবে না, এ নিয়ে ভারী গোলমাল হবে। সবাই তোমাকেই দুষবে। তুমি খাটে শোও, আমি শোফায় শুচ্ছি। প্লিজ আমার উপর বিশ্বাস রাখো। কি রাখা যায় বিশ্বাস?
ইভা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কৃতজ্ঞ চোখে তাকাল। নতুন জীবনের শুরুটা তো ভালই মনে হচ্ছে- সামনে কি আছে কে জানে! সব কথা জানলে এরা কি অনর্থই না করবে! আচ্ছা, তাইলে কি এরা সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলবে?
জয় সোফায় একটা বালিশ আর কোল বালিশ ফেলল। ওর এই একটা বদভ্যাস। কিছু আঁকড়ে না শুলে ঘুম হয় না। সিগারেট ধরিয়ে অপ্রসন্ন হয়ে বলল, সরি, তোমার কথা মনে ছিল না, সিগারেটের ধোঁয়ায় নিশ্চই তোমার সমস্যা হচ্ছে। ইয়ে, জাস্ট এক টান দিয়ে নিবিয়ে ফেলব, প্রমিজ। মনে মনে ভাবছে, ধ্যাত, নিজের ঘরে আরাম করে সিগারেট টানা না গেলে বেঁচে থেকে সুখ কী!
ইভা হাসি গোপন করে শংকিত চোখে তাকিয়ে আছে, এর এক টানের নমুনা ভয়াবহ। ভাব দেখে মনে হচ্ছে এক টানে পুরো সিগারেটটা শেষ করে ফেলবে। চোখ কেমন বড়ো হয়ে গেছে! জয় তাড়াহুড়ো করে অ্যাশট্রেতে সিগারেট নিভিয়ে খকখক করে কাশতে লাগল। অসতর্কতায় পানি খেতে গিয়ে টেবিলের কিনারায় রাখা কাঁচের জগ ফেলে দিয়েছে। কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ সুনসান রাতে কানে তালা লাগার উপক্রম। ইভার কেমন মায়া হচ্ছে, আহা, বেচারা ধীরে-সুস্থে শেষ করলে কি হত। ও তো আর নিষেধ করেনি।
মা দমাদম দরজা পেটাচ্ছেন। খোকা-খোকা, কি হইল, দরজা খোল।জয় লাফিয়ে দরজা খোলার চেষ্টায় পায়ে জড়িয়ে গেছে আচকানটা, আচকানসহ পা টেনে টেনে হাঁটতে চেষ্টা করছে- ঘন ঘন পা ঝাঁকিয়ে ছাড়াবার চেষ্টা করছে। একহাতে হেলমেটের মতো ধরে রেখেছে বিয়ের পাগড়ি, অন্য হাতে ছিটকিনি খোলার আপ্রাণ চেষ্টা। অনেক কসরৎ করে অবশেষে আটকে যাওয়া দরজাটা খুলতে পারল। ইভার মজা লাগছে মানুষটা উদ্ভটসব কান্ড দেখে!
জয় বিব্রত ভঙ্গিতে বলল, তুমিও মা, এমন করে কেউ দরজা পেটায়! জয়ের মা ভেতরে না ঢুকে, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আগুন গলায় বললেন, থাপড়াইয়া কানপট্টি ফাটায়া ফেলব। গোটা ফ্লাটের লোক জেগে গেছে। অপদার্থ, হইছেটা কী! তোর পায়ে এইটা কি, ব্যান্ডেজ! অরি আল্লা, পাও কাটছে!
জয়ের লাজুক ভঙ্গি, কিছু না মা, পানির জগ ভেঙ্গেছে। জয়ের মা হাহাকার করে উঠলেন, কাঁচ দিয়ে পা কেটেছিস?
আরে না মা, তুমিও! আর এইসব কি কথা, আচকানটা তোমার কাছে ব্যান্ডেজ মনে হচ্ছে, আশ্চর্য।
জয়ের মা এইবার কাশি দিয়ে ঘরে ঢুকে চোখে বুলিয়ে ধোঁয়া দেখে আঁচ করে নিলেন। তীব্র কন্ঠে বললেন, এই বান্দর, অন্য একজন মানুষ ঘরে আছে সেই খেয়াল নাই। আবার নতুন জগটাও ভেঙ্গে ফেলেছিস দেখি! জয় বিব্রত হল, সরি মা।
জয়ের মা এইবার ইভার দিকে ফিরে বললেন, ইভা মা, তুমি একটু কানে আঙ্গুল দাও তো। এই বান্দরটার সাথে আমি বান্দরের ভাষায় একটু কথা বলি। না-না, সত্যি সত্যি কানে আঙ্গুল দাও।
ইভা বিভ্রান্ত হয়ে কানে আঙ্গুল দিয়ে মা-ছেলের কান্ডকারখানা দেখছে। আল্লা জানে, সামনের দিনগুলো কেমন যাবে জয়ের মা কাঁচের টুকরোগুলো কুড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ইভাকে কোমল গলায় বলে গেলেন, ইভা মা, ওর দিকে একটু খেয়াল রেখ, মাঝেমাঝে ওর শ্বাসকষ্টের মত হয়।
জয়ের মা বেরিয়ে গেলে জয় মাথা নীচু করে হাসল। ইভা, মার কথায় কিছু মনে করো না। দেখবে, তোমার সঙ্গে ভাব হতে সময় লাগবে না।
জয়ের দু-চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসছে। সোফায় লম্বা হলো। কিছুটা সময় চশমা পরেই নাক বরাবর ছাদের দিকে তাকিয়ে রইল, উসখুস করে চশমা সোফার হাতলে ঝুলিয়ে দিল। ঘুমে তলিয়ে যেতে যেতে ভাবল, এই মেয়েটি তাইলে সারা জীবন এখানে থাকবে। ওর, ওর পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে নেবে! আজন্ম পরিবেশ ছেড়ে সম্পূর্ণ নতুন এ পরিবেশে মানিয়ে চলতে হবে। আগে হয়তো সকাল দশটা পর্যন্ত ঘুমাত। এখন এ পরিবারের সকাল ছ-টায় হলে ওকেও কি ছ-টায় উঠতে হবে?"...
*পরের পর্ব: http://www.ali-mahmed.com/2010/08/blog-post_17.html
বিভাগ
কনক পুরুষ
আমার আনন্দ বেদনার অপকিচ্ছাঃ ৩
লেখালেখির জগতে আমার দেখা অল্প ক’জন অসাধারণ মানুষদের একজন, কাজী আনোয়ার হোসেন। মাসুক নানার(!) সৃষ্টা এ দেশে বইয়ের জগতে বিপ্লব নিয়ে আসা একজন মানুষ!
শেখ আবদুল হাকিমের উপর আমি খুব বিরক্ত হয়েছিলাম। সেই যে বললেন ঢাকা আসলে যোগাযোগ করবেন, অনেক যন্ত্রণা করে একবার ঢাকা গেলাম। গিয়ে শুনলাম, উনি প্রত্যেকদিন অফিসে আসেন না। বারটা ঠিক মনে নাই, সম্ভবত এ রকম ছিল, তিনি শনি এবং মঙ্গলবারে অফিসে বসেন।
আমার খুব অস্থির লাগছিল, মেজাজ খারাপ হচ্ছিল! হায়, আবর্জনা লেখকের মেজাজ, পক্ষীর বিষ্টা! কেন রে বাবা, কোন বারে বসেন, এটা আমাকে আগে বললে আপনি কি ক্রমশ বড়োমাপের মানুষ থেকে ছোটমাপের মানুষের দিকে ধাবিত হতেন?
আমার মতো আবর্জনা লেখকের এইসব রাগ মানায় না, কিন্তু আমরা কি সব সময় মস্তিষ্ক দিয়ে বিচার করি, বিশেষ করে আমার মতো দুর্বল মানুষ! প্রস্থান করার পর আর ওমুখো হইনি! পরে আর এই ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।
কি জানি কেন এটা করেছিলাম, এই স্ক্রিপ্টটাই (কনক পুরুষ) বাই পোস্টে কাজী আনোয়ার হোসেনকে পাঠিয়েছিলাম। ক’দিন পর তিনি আমাকে একটা চিঠি লিখলেন, চিঠিতে তিনি কিছু সদাশয় মন্তব্য করেছিলেন। আমার ধারণা, এমন মন্তব্য তিনি অহরহই করে থাকেন। কিন্তু তখন আমার মনে হয়েছিল, মৃত্যুর পরও এঁরা অমর হয়ে থাকবেন, এ কারণে, এঁরা লেখক বানাবার মেশিন। এঁরা আমাদেরকে স্বপ্ন দেখান, আলোর ভূবনের!
চিঠিতে আরো লেখা ছিল, ঢাকা আসলে দেখা করবেন। আপনার মতো...একজন লেখকের সঙ্গে দেখা হলে সুখি হবো।
হা ঈশ্বর, এও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে, আমার মতো তিন টাকা দামের একজন কলমবাজের জন্যে তিনি কাজকাম ফেলে দেখা করার জন্যে মুখিয়ে আছেন... ওই যে বললাম, এঁরা স্বপ্ন দেখান!
ফোন করলে তিনি বললেন, আপনি কি বিকালে আসতে পারেন, সকালে তো খুব ঝামেলা থাকে, বেশীক্ষণ কথা বলতে পারবো না?
আমি মনে মনে বলি, এটা একটা কথা হলো, বিকাল কেন, রাত বারোটা হলে আমার অসুবিধা কি!
আমি আগেভাগেই পৌঁছে গেলাম, যদি দেরী হয়ে যায়।
অফিসের চৌবাচ্চায় কি-সব মাছ; ধুর ব্যাটা মাছ, তোদের সার্কাস দেখে কে! অফিসে এন্ট্রির ঝামেলা শেষ হলে আমাকে বলা হলো তিনি এখন মেডিটেশন করছেন, নির্দিষ্ট সময়ে দেখা করবেন।
এই ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করা খুব জটিল। একজন বডিগার্ডের মতো মানুষ আমাকে তাঁর রুমে এগিয়ে দিয়ে আসলেন। একপাশের পুরোটা দেয়াল জুড়ে বিশাল এক্যুরিয়াম, নাম না জানা সব মাছ, ভদ্রলোকের দেখি মাছের ভারী শখ!
জিন্সের প্যান্টপরা সপ্রতিভ এই মানুষটার যে দিকটা আমাকে সবচেয়ে মুগ্ধ করেছিল, অখ্যাত কুখ্যাত পরের কথা কিন্তু একজন মানুষের সঙ্গে অন্য একজন মানুষের যেমনটা আচরণ হওয়া উচিৎ, তাঁর আচরণে এর একরত্তি কমতি নেই!
এমন একজন লেখক, যার লেখা পড়ে কতো রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি। কতো দুঃসময়ই না পার করেছি অথচ তিনি আমার মতো আবর্জনা লেখকের সঙ্গে এমন আচরণ করছিলেন যেন উল্টো আমি তাঁকে সাক্ষাত দিয়ে কৃতার্থ করছি! আহারে, লেখা ছাপা না হলেই বা কী আসে যায়!
সবই ঠিক ছিল কিন্তু ফেরার সময় গুলিয়ে ফেললাম কারণ তখন বডিগার্ডের মত কেউ ছিল না। কাজীদার অন্য রুমে ঢুকে পড়ে ওঁদের বিব্রত হওয়ার চেয়ে নিজে বিব্রত হয়েছিলাম বেশী। কী লজ্জা-কী লজ্জা!
* কাজীদা, একজন লেখক বানাবার মেশিন: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_13.html
শেখ আবদুল হাকিমের উপর আমি খুব বিরক্ত হয়েছিলাম। সেই যে বললেন ঢাকা আসলে যোগাযোগ করবেন, অনেক যন্ত্রণা করে একবার ঢাকা গেলাম। গিয়ে শুনলাম, উনি প্রত্যেকদিন অফিসে আসেন না। বারটা ঠিক মনে নাই, সম্ভবত এ রকম ছিল, তিনি শনি এবং মঙ্গলবারে অফিসে বসেন।
আমার খুব অস্থির লাগছিল, মেজাজ খারাপ হচ্ছিল! হায়, আবর্জনা লেখকের মেজাজ, পক্ষীর বিষ্টা! কেন রে বাবা, কোন বারে বসেন, এটা আমাকে আগে বললে আপনি কি ক্রমশ বড়োমাপের মানুষ থেকে ছোটমাপের মানুষের দিকে ধাবিত হতেন?
আমার মতো আবর্জনা লেখকের এইসব রাগ মানায় না, কিন্তু আমরা কি সব সময় মস্তিষ্ক দিয়ে বিচার করি, বিশেষ করে আমার মতো দুর্বল মানুষ! প্রস্থান করার পর আর ওমুখো হইনি! পরে আর এই ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।
কি জানি কেন এটা করেছিলাম, এই স্ক্রিপ্টটাই (কনক পুরুষ) বাই পোস্টে কাজী আনোয়ার হোসেনকে পাঠিয়েছিলাম। ক’দিন পর তিনি আমাকে একটা চিঠি লিখলেন, চিঠিতে তিনি কিছু সদাশয় মন্তব্য করেছিলেন। আমার ধারণা, এমন মন্তব্য তিনি অহরহই করে থাকেন। কিন্তু তখন আমার মনে হয়েছিল, মৃত্যুর পরও এঁরা অমর হয়ে থাকবেন, এ কারণে, এঁরা লেখক বানাবার মেশিন। এঁরা আমাদেরকে স্বপ্ন দেখান, আলোর ভূবনের!
চিঠিতে আরো লেখা ছিল, ঢাকা আসলে দেখা করবেন। আপনার মতো...একজন লেখকের সঙ্গে দেখা হলে সুখি হবো।
হা ঈশ্বর, এও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে, আমার মতো তিন টাকা দামের একজন কলমবাজের জন্যে তিনি কাজকাম ফেলে দেখা করার জন্যে মুখিয়ে আছেন... ওই যে বললাম, এঁরা স্বপ্ন দেখান!
ফোন করলে তিনি বললেন, আপনি কি বিকালে আসতে পারেন, সকালে তো খুব ঝামেলা থাকে, বেশীক্ষণ কথা বলতে পারবো না?
আমি মনে মনে বলি, এটা একটা কথা হলো, বিকাল কেন, রাত বারোটা হলে আমার অসুবিধা কি!
আমি আগেভাগেই পৌঁছে গেলাম, যদি দেরী হয়ে যায়।
অফিসের চৌবাচ্চায় কি-সব মাছ; ধুর ব্যাটা মাছ, তোদের সার্কাস দেখে কে! অফিসে এন্ট্রির ঝামেলা শেষ হলে আমাকে বলা হলো তিনি এখন মেডিটেশন করছেন, নির্দিষ্ট সময়ে দেখা করবেন।
এই ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করা খুব জটিল। একজন বডিগার্ডের মতো মানুষ আমাকে তাঁর রুমে এগিয়ে দিয়ে আসলেন। একপাশের পুরোটা দেয়াল জুড়ে বিশাল এক্যুরিয়াম, নাম না জানা সব মাছ, ভদ্রলোকের দেখি মাছের ভারী শখ!
জিন্সের প্যান্টপরা সপ্রতিভ এই মানুষটার যে দিকটা আমাকে সবচেয়ে মুগ্ধ করেছিল, অখ্যাত কুখ্যাত পরের কথা কিন্তু একজন মানুষের সঙ্গে অন্য একজন মানুষের যেমনটা আচরণ হওয়া উচিৎ, তাঁর আচরণে এর একরত্তি কমতি নেই!
এমন একজন লেখক, যার লেখা পড়ে কতো রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি। কতো দুঃসময়ই না পার করেছি অথচ তিনি আমার মতো আবর্জনা লেখকের সঙ্গে এমন আচরণ করছিলেন যেন উল্টো আমি তাঁকে সাক্ষাত দিয়ে কৃতার্থ করছি! আহারে, লেখা ছাপা না হলেই বা কী আসে যায়!
সবই ঠিক ছিল কিন্তু ফেরার সময় গুলিয়ে ফেললাম কারণ তখন বডিগার্ডের মত কেউ ছিল না। কাজীদার অন্য রুমে ঢুকে পড়ে ওঁদের বিব্রত হওয়ার চেয়ে নিজে বিব্রত হয়েছিলাম বেশী। কী লজ্জা-কী লজ্জা!
* কাজীদা, একজন লেখক বানাবার মেশিন: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_13.html
বিভাগ
শুভ'র ব্লগিং
Friday, June 29, 2007
গণতন্ত্র- বড্ডো গুরুপাক!
গণতন্ত্র ভাল জিনিস নিঃসন্দেহে, ভারী স্বাদু! সমস্যাটা হচ্ছে, স্টমাক ঘি-মাখন হজম করার শক্তি রাখে কি না? দীর্ঘ অনেক কটা বছর ধরে গণতন্ত্রের অর্থ দাড়িয়েছে ক্রমাগত নিয়ম করে হরতাল। এটা নাকি অতীব জরুরি। হরতাল ব্যতীত গণতন্ত্র নাকি নিঃশ্বাস নিতে পারে না। শাসক দল ৫ বছর শাসন করে। বিরোধী দল দিনের পর দিন হরতাল নামের হরতালের চাবুকটা সাঁই সাঁই করে চালাতে থাকে। কিন্তু শাসক দলকে ১ সেকেন্ড আগেও হঠাতে পারে না। নমুনা দেখে মনে হয়, এটা কেয়ামতের আগ পযর্ন্ত চলতে থাকবে।
কী সীমাহীন লুটপাট। ৩ কোটি টাকার গাড়ি যিনি হাঁকান তিনি কিন্তু এ দেশের সবচেয়ে বেশি করদাতা নন! দেশের সবচেয়ে বেশি করদাতা, তিনি হলেন সাধারণ ব্যবসায়ী মি. অসিত সাহা। একজন আমলা কোটি কোটি টাকা খরচ করে এম. পি হন, ওনার নাকি দেশ সেবা না করলে চলছে না। এ দেশে নাকি ঘুসের টাকা পেলে কাঠের পুতুলও হাঁ করে। সততা নামের জিনিসটা ক্রমান্বয়ে জাদুঘরে স্থানান্তরিত হচ্ছিল। রাবারের মতো প্রসারিত হচ্ছিল ধর্মবাজরা।
একটা পরিবর্তন না এসে উপায় ছিল কি আদৌ? অনেককেই দেখি মুখ অন্ধকার করে রাখেন। তাঁরা নিবাচির্ত সরকার ব্যতীত অন্য কিছু মেনে নিতে চান না। মেনে নেয়াটা তীব্র কষ্টের, এতে আমার কোন অমত নাই। আমি একমত, এটা মেনে নেয়া কঠিন। কিন্তু বিকল্পটা কি, বলেন? ঘুরেফিরে তো ওই গুটিকয়েক দলই এই দেশ শাসন করবে। এরা তো দেশটাকে ১০০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। দিচ্ছে।
বলা হচ্ছে, এরা (কেয়ারটেকার সরকার) যে অল্প সময়ের জন্য এসেছেন এই সময়ে নির্বাচন নিয়ে মাথা না-ঘামিয়ে অন্য কিছুর চিন্তা করার অবকাশ নাই। আমার কাছে মনে হয় এমন, তাদের কাছ থেকে যেন আমরা আশা করি; গরু কিনে, ঘাস খাইয়ে, গরুর কাছ থেকে দুধ কালেক্ট করে, গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে, দুধটা খাইয়ে দেবেন, দুধের সর দিয়ে তাদের মুখে লেপে ত্বকের জৌলুশ বৃদ্ধি করবেন। ব্যস। চক্রাকারে এই কাজটা চলতেই থাকবে। আমি তো দেখছি, এই অল্প কয় জন মানুষ দেশটা তো ভালই চালান। এখন যাদের ধরা হচ্ছে বা চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে, এদের টিকিটিও স্পর্শ করার সাধ্য কার ছিল? তবে এদের মধ্যে আমলা গামলাদের খুব একটা দেখছি না। এরা সবাই এখন সাধু হয়ে গেছেন!
আমার চোখে দেখা একটা ঘটনা এখানে শেয়ার করি। যে এডিএম সাহেব অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দিচ্ছেন, অনেকটা গায়ের জোরে, তিনি সাধারণ একজন জেলের কাছ থেকেও ঘুস খেয়েছিলেন। এখন তার কী দবদবা!
আল্লা মালুম, এখনই এই ভাঙ্গাভাঙ্গি করার আইডিয়াটা কার মাথা থেকে বেরিয়েছে? আমি মনে করি, যাদের মাথা থেকে এটা বেরিয়েছে, এরা তাঁদের নিজেদের কফিনে পেরেক ঠুকলেন।
আমাদের জায়গা বড়ো অপ্রতুল, এটা করা প্রয়োজন ছিল অনেক পরে। সব বিগ শটদের কাবু করে, দেশের অধিকাংশ টাকা অন্যায় করে যে সব অল্প মানুষরা দখল করে রেখেছেন, সে সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে, এবং দ্রুত শ্রম বাজার সৃষ্টি করে। তারপর সরকার যদি বলতেন, প্রিয় দেশবাসী, আমরা আমাদের কাজ করেছি এবার আপনারা আমাদের জন্য কিছু কাজ করুন। দখলকারীরা সরকারী জায়গা ছেড়ে দিন। আমার মনে হয় গরীব দেশবাসীরা তখন হাসিমুখেই এই নির্দেশ মেনে নিতে বাধ্য হতেন।
ছলিম মিয়ার টং, বস্তী যে ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে, এর শেষ কোথায়! এরা কি আসলেই এর পরিণাম জানেন? এইসব ডিসিশন মেকারদের পেছনে থাকা প্রয়োজন ছিল মানবিক একজন মানুষের। যিনি একজন মানবিক মানুষের পাশাপাশি একজন মনোবিদও বটে। একেকটা পেশার লোকজনদের জন্য ভাবতে হবে একেক রকম করে। অসংখ্য পেশা থেকে একটার কথা বলি: আমরা খুব আমোদ পাই যখন শুনি বস্তি উচ্ছেদ করা হলো। একটা কাজের কাজ হলো যা হোক। শহরটা বড় সাফ সুতরো হলো।
বিশ্বাস করেন, আমি গার্মেন্টস কর্মীদের পায়ের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকি। এরা যখন হেঁটে যান, আমার কেবল মনে হয় এই দ্রুত হেঁটে যাওয়া পা আমাদের দেশটাকে সচল রাখার পেছনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের স্যারদের যে বাবুগিরি এতে এঁদের অবদান যে কী প্রবল এটা আপনারা আমার চেয়ে ভাল জানেন। এরা থাকবেনটা কোথায়, ফ্ল্যাটে? কয় টাকাই বা এঁদের বেতন? এঁদের ঘরটা ভেঙ্গে দিয়ে উল্লসিত হওয়ার অবকাশ কোথায়? ফিরে এসে যখন কেউ ওই ভেঙ্গে দেয়া বস্তীতে তাঁর প্রিয় মানুষ খুঁজে পাবেন না, যে শিশু সন্তানটি হারিয়ে গেল! এ অন্যায়ের দায় কে নেবে? যেটা করা প্রয়োজন ছিল: সমস্ত দেশে শ্রম বাজার সৃষ্টি হয়, এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো ছড়িয়ে দেয়া। নিয়ম করে দেয়া, যারা এই ধরনের প্রতিষ্ঠান করবে তাদেরকে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, বাধ্যতামুলক। যে টাকা এঁরা বস্তীতে থাকার জন্য দিতেন এমন একটা অংক এদের থাকার জন্য নেয়া।
বাংলাদেশের লোকসংখ্যা কত এখন? অথচ ঢাকায় সম্ভবত দেড় কোটি! আমরা সব লাটিমকে বনবন করে ঘুরাচ্ছি ঢাকাকে কেন্দ্র করে, এটা ক্রমশ বন্ধ করতে হবে। যারা রংপুর, খুলনায় শিল্প প্রতিষ্ঠান বসাবেন তাদের জন্য ট্যাক্সসহ অন্যান্য কর আদায়ের বেলায় ছাড় দেয়া হলে অনেকেই আগ্রহী হবেন বলেই আমার ধারণা। এবং রাষ্ট্রীয় বিশেষ সম্মান থাকুন এদের জন্য, কত উপায়েই না এঁদের সম্মান জানানো যেতে পারে। বাহে, আইডিয়া কেউ চাইলে গাদাগাদা আইডিয়া দেয়া যাবে নে।
আসলে এই দেশের জন্য টাকা কোন সমস্যা না। বিদেশী লালমুখোদের কাছে শিঁরদাড়া বাঁকা করে কাতর হাত বাড়াবার কোন প্রয়োজনই নেই। আর আমরা এটাও জানি, জানার আর বাকি নাই এরা ১০০ টাকা দিলে ২০০টা উপদেশ দেয়। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে এদের কাছ থেকেই হেনতেন কত কিছু কিনতে আমাদেরকে বাধ্য করে। দেখুন না, হাজার হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স যে সব প্রবাসীরা দেশটায় পাঠাচ্ছেন। আমরা এদেরকে কি সম্মান দিচ্ছি, কচু! এদের ভোট দেয়ার অধিকারই নাই। চোরচোট্টা ভোট দিতে পারবে, এঁরা পারবেন না! প্রবাসী অনেকেই দেশে ইনভেস্ট করার জন্য মুখিয়ে আছেন, শুধু প্রয়োজন সদিচ্ছার।
যে ভদ্রলোক সবচেয়ে বেশি টাকা ট্যাক্স দেবেন তাঁদের জন্য আমরা কি করি, ঘেচু! আমার সাধ্য থাকলে তাঁকে গার্ড অভ অনার দিতাম। তাঁকে গার্ড অভ অর্ডার দেয়ার প্রস্তাব শুনে কি আপনারা ঠা ঠা করে হাসছেন? বেশ, যখন ফিফার ব্লটারকে আমাদের দেশে গার্ড অভ অনার দেয়া হলো, তখন আমরা বড়ো আমোদ পাই, না? কোন দেশ দেয়নি, ব্লটারকে দিলাম, আমরা দিয়ে দেখিয়ে দিলাম! যেন ব্লটারের ব্লাডার আমরা গার্ড অভ অনার দিয়ে দিয়ে ফাটিয়ে ফেলব! দেশের ট্যাক্স যদি যথার্থ ভাবে আদায় করা হয়, ভিক্ষা করতে হবে না, আমি নিশ্চিত।
অনেক হাজী সাহেবকে দেখেছি, যাকাত দেন কিন্তু ট্যাক্স দেন না। কিছুটা ভয়ে, অনেকটা অসচেতনার কারণে। যাকাতের মতোই ট্যাক্স হচ্ছে সরকারী যাকাত। একজন কখনোই নিজেকে ভালমানুষ বলে দাবী করতে পারেন না, ট্যাক্স না দিলে। সরকার এই ট্যাক্সের টাকায় রাস্তা করেন, হাসপাতাল গড়েন। ওই রাস্তায় চোর হাঁটে, সাধুও হাঁটে। চুতিয়ারা বলে, এই রাস্তা ওমুক মন্ত্রী বাহাদুর করেছেন, তমুক হাসপাতাল তমুক মন্ত্রী- যেন এই মন্ত্রী টন্ত্রীদের বাপের তালুক বিক্রির টাকা। যদি এখুনি আমার মতো সাধারন মানুষের জরুরী নিরাময়ের প্রয়োজন হলে, আমি কোথায় ছুটব, অ্যাপোলো হাসপাতালে? বিলের ধাক্কায় মৃত্যু এগিয়ে আসবে গলাগলি করার জন্য। আরও কতো ভাবে টাকার উপায় করা যায়।
আমাদের মাথাপিছু জাতীয় ঋণ কতো? অনুমান করি হাজার দশেক টাকা। আচ্ছা, আমাকে সরকার সার্টিফিকেট দিতে পারবেন, 'আলী মাহমেদ, জাতীয় ঋনমুক্ত ব্যক্তি'? তাহলে আমি টাকাটা দিয়ে দিতে চাই। কেন আমি ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াব? আমার মতো হয়তো আরও পাগল পাওয়া যাবে।
কোরবানীর সময় দেশে কতো টাকার কোরবানী হয়? অনুমান করি নিদেনপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা। বেশ, অপশন রাখুন, যিনি কোরবানীর নিয়ত করেছেন তিনি ইচ্ছা করলে দেশের জাতীয় ফান্ডে টাকাটা জমা দেবেন। তাঁকে সমুহ টাকা বুঝে রসিদ দেয়া হবে। যিনি মনে করবেন পশুর গলায় ছুরি না চালানো পর্যন্ত ধর্ম টিকে থাকবে না তিনি ধর্ম পালন করুন না, কে তাকে বাঁধা দিচ্ছে।
কিন্তু, একটা কঠিন কিন্তু রয়ে যায়। আমরা সাধারণ মানুষরা চাইব আমাদের প্রতিটা পয়সার পাই পাই হিসাব যেন থাকে। নইলে যা হবে, এক কাপ চায়ে দুই কাপ চিনি!
কী সীমাহীন লুটপাট। ৩ কোটি টাকার গাড়ি যিনি হাঁকান তিনি কিন্তু এ দেশের সবচেয়ে বেশি করদাতা নন! দেশের সবচেয়ে বেশি করদাতা, তিনি হলেন সাধারণ ব্যবসায়ী মি. অসিত সাহা। একজন আমলা কোটি কোটি টাকা খরচ করে এম. পি হন, ওনার নাকি দেশ সেবা না করলে চলছে না। এ দেশে নাকি ঘুসের টাকা পেলে কাঠের পুতুলও হাঁ করে। সততা নামের জিনিসটা ক্রমান্বয়ে জাদুঘরে স্থানান্তরিত হচ্ছিল। রাবারের মতো প্রসারিত হচ্ছিল ধর্মবাজরা।
একটা পরিবর্তন না এসে উপায় ছিল কি আদৌ? অনেককেই দেখি মুখ অন্ধকার করে রাখেন। তাঁরা নিবাচির্ত সরকার ব্যতীত অন্য কিছু মেনে নিতে চান না। মেনে নেয়াটা তীব্র কষ্টের, এতে আমার কোন অমত নাই। আমি একমত, এটা মেনে নেয়া কঠিন। কিন্তু বিকল্পটা কি, বলেন? ঘুরেফিরে তো ওই গুটিকয়েক দলই এই দেশ শাসন করবে। এরা তো দেশটাকে ১০০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। দিচ্ছে।
বলা হচ্ছে, এরা (কেয়ারটেকার সরকার) যে অল্প সময়ের জন্য এসেছেন এই সময়ে নির্বাচন নিয়ে মাথা না-ঘামিয়ে অন্য কিছুর চিন্তা করার অবকাশ নাই। আমার কাছে মনে হয় এমন, তাদের কাছ থেকে যেন আমরা আশা করি; গরু কিনে, ঘাস খাইয়ে, গরুর কাছ থেকে দুধ কালেক্ট করে, গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে, দুধটা খাইয়ে দেবেন, দুধের সর দিয়ে তাদের মুখে লেপে ত্বকের জৌলুশ বৃদ্ধি করবেন। ব্যস। চক্রাকারে এই কাজটা চলতেই থাকবে। আমি তো দেখছি, এই অল্প কয় জন মানুষ দেশটা তো ভালই চালান। এখন যাদের ধরা হচ্ছে বা চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে, এদের টিকিটিও স্পর্শ করার সাধ্য কার ছিল? তবে এদের মধ্যে আমলা গামলাদের খুব একটা দেখছি না। এরা সবাই এখন সাধু হয়ে গেছেন!
আমার চোখে দেখা একটা ঘটনা এখানে শেয়ার করি। যে এডিএম সাহেব অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দিচ্ছেন, অনেকটা গায়ের জোরে, তিনি সাধারণ একজন জেলের কাছ থেকেও ঘুস খেয়েছিলেন। এখন তার কী দবদবা!
আল্লা মালুম, এখনই এই ভাঙ্গাভাঙ্গি করার আইডিয়াটা কার মাথা থেকে বেরিয়েছে? আমি মনে করি, যাদের মাথা থেকে এটা বেরিয়েছে, এরা তাঁদের নিজেদের কফিনে পেরেক ঠুকলেন।
আমাদের জায়গা বড়ো অপ্রতুল, এটা করা প্রয়োজন ছিল অনেক পরে। সব বিগ শটদের কাবু করে, দেশের অধিকাংশ টাকা অন্যায় করে যে সব অল্প মানুষরা দখল করে রেখেছেন, সে সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে, এবং দ্রুত শ্রম বাজার সৃষ্টি করে। তারপর সরকার যদি বলতেন, প্রিয় দেশবাসী, আমরা আমাদের কাজ করেছি এবার আপনারা আমাদের জন্য কিছু কাজ করুন। দখলকারীরা সরকারী জায়গা ছেড়ে দিন। আমার মনে হয় গরীব দেশবাসীরা তখন হাসিমুখেই এই নির্দেশ মেনে নিতে বাধ্য হতেন।
ছলিম মিয়ার টং, বস্তী যে ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে, এর শেষ কোথায়! এরা কি আসলেই এর পরিণাম জানেন? এইসব ডিসিশন মেকারদের পেছনে থাকা প্রয়োজন ছিল মানবিক একজন মানুষের। যিনি একজন মানবিক মানুষের পাশাপাশি একজন মনোবিদও বটে। একেকটা পেশার লোকজনদের জন্য ভাবতে হবে একেক রকম করে। অসংখ্য পেশা থেকে একটার কথা বলি: আমরা খুব আমোদ পাই যখন শুনি বস্তি উচ্ছেদ করা হলো। একটা কাজের কাজ হলো যা হোক। শহরটা বড় সাফ সুতরো হলো।
বিশ্বাস করেন, আমি গার্মেন্টস কর্মীদের পায়ের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকি। এরা যখন হেঁটে যান, আমার কেবল মনে হয় এই দ্রুত হেঁটে যাওয়া পা আমাদের দেশটাকে সচল রাখার পেছনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের স্যারদের যে বাবুগিরি এতে এঁদের অবদান যে কী প্রবল এটা আপনারা আমার চেয়ে ভাল জানেন। এরা থাকবেনটা কোথায়, ফ্ল্যাটে? কয় টাকাই বা এঁদের বেতন? এঁদের ঘরটা ভেঙ্গে দিয়ে উল্লসিত হওয়ার অবকাশ কোথায়? ফিরে এসে যখন কেউ ওই ভেঙ্গে দেয়া বস্তীতে তাঁর প্রিয় মানুষ খুঁজে পাবেন না, যে শিশু সন্তানটি হারিয়ে গেল! এ অন্যায়ের দায় কে নেবে? যেটা করা প্রয়োজন ছিল: সমস্ত দেশে শ্রম বাজার সৃষ্টি হয়, এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো ছড়িয়ে দেয়া। নিয়ম করে দেয়া, যারা এই ধরনের প্রতিষ্ঠান করবে তাদেরকে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, বাধ্যতামুলক। যে টাকা এঁরা বস্তীতে থাকার জন্য দিতেন এমন একটা অংক এদের থাকার জন্য নেয়া।
বাংলাদেশের লোকসংখ্যা কত এখন? অথচ ঢাকায় সম্ভবত দেড় কোটি! আমরা সব লাটিমকে বনবন করে ঘুরাচ্ছি ঢাকাকে কেন্দ্র করে, এটা ক্রমশ বন্ধ করতে হবে। যারা রংপুর, খুলনায় শিল্প প্রতিষ্ঠান বসাবেন তাদের জন্য ট্যাক্সসহ অন্যান্য কর আদায়ের বেলায় ছাড় দেয়া হলে অনেকেই আগ্রহী হবেন বলেই আমার ধারণা। এবং রাষ্ট্রীয় বিশেষ সম্মান থাকুন এদের জন্য, কত উপায়েই না এঁদের সম্মান জানানো যেতে পারে। বাহে, আইডিয়া কেউ চাইলে গাদাগাদা আইডিয়া দেয়া যাবে নে।
আসলে এই দেশের জন্য টাকা কোন সমস্যা না। বিদেশী লালমুখোদের কাছে শিঁরদাড়া বাঁকা করে কাতর হাত বাড়াবার কোন প্রয়োজনই নেই। আর আমরা এটাও জানি, জানার আর বাকি নাই এরা ১০০ টাকা দিলে ২০০টা উপদেশ দেয়। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে এদের কাছ থেকেই হেনতেন কত কিছু কিনতে আমাদেরকে বাধ্য করে। দেখুন না, হাজার হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স যে সব প্রবাসীরা দেশটায় পাঠাচ্ছেন। আমরা এদেরকে কি সম্মান দিচ্ছি, কচু! এদের ভোট দেয়ার অধিকারই নাই। চোরচোট্টা ভোট দিতে পারবে, এঁরা পারবেন না! প্রবাসী অনেকেই দেশে ইনভেস্ট করার জন্য মুখিয়ে আছেন, শুধু প্রয়োজন সদিচ্ছার।
যে ভদ্রলোক সবচেয়ে বেশি টাকা ট্যাক্স দেবেন তাঁদের জন্য আমরা কি করি, ঘেচু! আমার সাধ্য থাকলে তাঁকে গার্ড অভ অনার দিতাম। তাঁকে গার্ড অভ অর্ডার দেয়ার প্রস্তাব শুনে কি আপনারা ঠা ঠা করে হাসছেন? বেশ, যখন ফিফার ব্লটারকে আমাদের দেশে গার্ড অভ অনার দেয়া হলো, তখন আমরা বড়ো আমোদ পাই, না? কোন দেশ দেয়নি, ব্লটারকে দিলাম, আমরা দিয়ে দেখিয়ে দিলাম! যেন ব্লটারের ব্লাডার আমরা গার্ড অভ অনার দিয়ে দিয়ে ফাটিয়ে ফেলব! দেশের ট্যাক্স যদি যথার্থ ভাবে আদায় করা হয়, ভিক্ষা করতে হবে না, আমি নিশ্চিত।
অনেক হাজী সাহেবকে দেখেছি, যাকাত দেন কিন্তু ট্যাক্স দেন না। কিছুটা ভয়ে, অনেকটা অসচেতনার কারণে। যাকাতের মতোই ট্যাক্স হচ্ছে সরকারী যাকাত। একজন কখনোই নিজেকে ভালমানুষ বলে দাবী করতে পারেন না, ট্যাক্স না দিলে। সরকার এই ট্যাক্সের টাকায় রাস্তা করেন, হাসপাতাল গড়েন। ওই রাস্তায় চোর হাঁটে, সাধুও হাঁটে। চুতিয়ারা বলে, এই রাস্তা ওমুক মন্ত্রী বাহাদুর করেছেন, তমুক হাসপাতাল তমুক মন্ত্রী- যেন এই মন্ত্রী টন্ত্রীদের বাপের তালুক বিক্রির টাকা। যদি এখুনি আমার মতো সাধারন মানুষের জরুরী নিরাময়ের প্রয়োজন হলে, আমি কোথায় ছুটব, অ্যাপোলো হাসপাতালে? বিলের ধাক্কায় মৃত্যু এগিয়ে আসবে গলাগলি করার জন্য। আরও কতো ভাবে টাকার উপায় করা যায়।
আমাদের মাথাপিছু জাতীয় ঋণ কতো? অনুমান করি হাজার দশেক টাকা। আচ্ছা, আমাকে সরকার সার্টিফিকেট দিতে পারবেন, 'আলী মাহমেদ, জাতীয় ঋনমুক্ত ব্যক্তি'? তাহলে আমি টাকাটা দিয়ে দিতে চাই। কেন আমি ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াব? আমার মতো হয়তো আরও পাগল পাওয়া যাবে।
কোরবানীর সময় দেশে কতো টাকার কোরবানী হয়? অনুমান করি নিদেনপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা। বেশ, অপশন রাখুন, যিনি কোরবানীর নিয়ত করেছেন তিনি ইচ্ছা করলে দেশের জাতীয় ফান্ডে টাকাটা জমা দেবেন। তাঁকে সমুহ টাকা বুঝে রসিদ দেয়া হবে। যিনি মনে করবেন পশুর গলায় ছুরি না চালানো পর্যন্ত ধর্ম টিকে থাকবে না তিনি ধর্ম পালন করুন না, কে তাকে বাঁধা দিচ্ছে।
কিন্তু, একটা কঠিন কিন্তু রয়ে যায়। আমরা সাধারণ মানুষরা চাইব আমাদের প্রতিটা পয়সার পাই পাই হিসাব যেন থাকে। নইলে যা হবে, এক কাপ চায়ে দুই কাপ চিনি!
বিভাগ
নিজস্ব ভাবনা
প্রফেসর ইউনূসকে আমার খোলা চিঠি
(প্রফেসর ইউনূসকে যে মেইলটা করেছি, হুবহু এখানে তুলে দিচ্ছি)।
জনাব, প্রফেসর ইউনূস:
সালাম। আপনি এ দেশের মানুষের কাছে খোলা চিঠি লিখে মতামত জানতে চেয়েছেন। এই যে মতামত জানতে চাওয়া, আপনার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ দেই।
কিন্ত একটা বিষয় আমার বোধগম্য হচ্ছে না, এ দেশের কত ভাগ মানুষ আপনার কাছে তাঁদের মতামত নিয়ে পৌছতে পারবেন? একজন কৃষক, একজন রিকশা চালক, একজন দিনমজুর, একজন গার্মেন্টস কর্মী- এঁরা কিভাবে আপনার কাছে তাঁদের মতামত জানাবেন? এঁরাই তো এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ, না কি? এঁরাই তো এ দেশের চাকা ঘুরাচ্ছেন, অবিরাম।
যাই হোক, এটা আপনার সমস্যা, আমার না।
আমি আমার বক্তব্য বলি: প্রথমেই আপনার নোবেল প্রাপ্তির যথার্থতা তর্ক বিতকের বাইরে রাখি। তদুপরি আপনার নোবেল প্রাপ্তি বাংলাদেশকে পৃথিবীর কাছে আবার নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সবুজ পাসপোর্টের প্রতি তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি অনেকখানি নমনীয় করেছে। স্বাধীনতা পর এটা একটা অভূতপূর্ব ঘটনা।
আমি মনে করি, জনাব, শেখ মুজিবর রহমান যে ভুলটা করেছিলেন, আপনিও ওই ভুলটা করতে যাচ্ছেন। তিনি যদি সরকারি দায়িত্ব না নিতেন তাইলে এই দেশের প্রত্যেক বাড়িতে একটা করে তাঁর ছবি থাকত, সশ্রদ্ধায়।
যে ভুলটা সোনিয়া গান্ধি করেননি, শত চাপেও। এমন কি তাঁর জন্য আত্মহত্যা করারও নজির আছে- কিন্ত তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন। সিদ্ধান্ত আপনার।
ভাল থাকবেন।
শুভেচ্ছান্তে
-আলী মাহমেদ
জনাব, প্রফেসর ইউনূস:
সালাম। আপনি এ দেশের মানুষের কাছে খোলা চিঠি লিখে মতামত জানতে চেয়েছেন। এই যে মতামত জানতে চাওয়া, আপনার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ দেই।
কিন্ত একটা বিষয় আমার বোধগম্য হচ্ছে না, এ দেশের কত ভাগ মানুষ আপনার কাছে তাঁদের মতামত নিয়ে পৌছতে পারবেন? একজন কৃষক, একজন রিকশা চালক, একজন দিনমজুর, একজন গার্মেন্টস কর্মী- এঁরা কিভাবে আপনার কাছে তাঁদের মতামত জানাবেন? এঁরাই তো এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ, না কি? এঁরাই তো এ দেশের চাকা ঘুরাচ্ছেন, অবিরাম।
যাই হোক, এটা আপনার সমস্যা, আমার না।
আমি আমার বক্তব্য বলি: প্রথমেই আপনার নোবেল প্রাপ্তির যথার্থতা তর্ক বিতকের বাইরে রাখি। তদুপরি আপনার নোবেল প্রাপ্তি বাংলাদেশকে পৃথিবীর কাছে আবার নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সবুজ পাসপোর্টের প্রতি তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি অনেকখানি নমনীয় করেছে। স্বাধীনতা পর এটা একটা অভূতপূর্ব ঘটনা।
আমি মনে করি, জনাব, শেখ মুজিবর রহমান যে ভুলটা করেছিলেন, আপনিও ওই ভুলটা করতে যাচ্ছেন। তিনি যদি সরকারি দায়িত্ব না নিতেন তাইলে এই দেশের প্রত্যেক বাড়িতে একটা করে তাঁর ছবি থাকত, সশ্রদ্ধায়।
যে ভুলটা সোনিয়া গান্ধি করেননি, শত চাপেও। এমন কি তাঁর জন্য আত্মহত্যা করারও নজির আছে- কিন্ত তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন। সিদ্ধান্ত আপনার।
ভাল থাকবেন।
শুভেচ্ছান্তে
-আলী মাহমেদ
বিভাগ
নিজস্ব ভাবনা
মি. অসিত সাহা- আমি দুঃখিত!
মি. অসিত কুমার সাহা- আপনি সেই মানুষদের একজন, যাকে আমার মতো মানুষ সেলাম ঠুকে। ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে আপনি সবচাইতে বেশী ট্যাক্স দিয়েছেন।
আমার সাধ্য থাকলে আপনাকে গার্ড অভ অনার দিতাম। সে উপায় তো আমার নেই।
শুভর ব্লগিং নামের আমার একটা বই আপনার উৎসর্গ করেছি।
অনেকেই জানতে চেয়েছেন, আপনার সঙ্গে আমার পরিচয় আছে কি না? বা আপনাকে এই বইটা পাঠাবার কোন ব্যবস্থা করা যায় কি না। আসলে আপনার মতো মানুষদের জন্য এর আদৌ প্রয়োজন আছে কি?
আপনার সঙ্গে পরিচয় থাকা অতীব সৌভাগ্য- কিন্ত না হলে এতে আপনার কিছু যায় আসে কী! কিন্ত আমার মতো সাধারণ মানুষ আপনাকে বই উৎসর্গ করে সম্মানিত হই- খানিকটা ভারমুক্ত হই।
আমি দুঃখ প্রকাশ করি, উৎসর্গে আপনার নামটা আমি ভুল করেছি অসিত কুমার সাহার জায়গায় হয়েছে অসিত কুমার পাল। এখন তো আর আমার এটা সংশোধন করার কোন উপায় নাই। এবং এও আশা নাই, বইটা রিপ্রিন্ট হবে আর আমি এ ভুল সংশোধন করতে পারব।
অতএব, হে প্রিয় মানুষ, তাই নতজানু হয়ে বলি, ক্ষমা করুন মোরে···।
বিভাগ
নিজস্ব ভাবনা
অনুবাদ এবং মৌলিক সাহিত্য
আমি মনে করি, অনুবাদ হচ্ছে অন্যের সন্তানকে দুধে ভাতে বড়ো করা। অন্যের সন্তান দেবশিশু হোক তাতে আমার কি; আমার কালো, লিকলিকে, দুবলা সন্তানের সঙ্গে তার কিসের তুলনা, ছাই!
তাছাড়া অনুবাদক মানেই বিশ্বাসঘাতক- এ্যাদুত্তোর এ্যাদিতর। একটা অনুবাদ পড়ার আগে এই ব্যাপারটা আমরা মাথায় রাখি না, এটা কে অনুবাদ করছেন। তিনি অনুবাদ করার বিষয়ে কতটুকু যোগ্যতা রাখেন বা কতটা বিশ্বস্ত।
৯৫ সালে একজন অনুবাদকের সঙ্গে আমার এ বিষয়ে চিঠি চালাচালি হয়েছিল।
আমি তাকে যা লিখেছিলাম, 'আপনার অনুবাদ জ্যক ফিনের 'হারানো লোকগুলো' পড়লাম। আপনার লেখায় একটা আলাদা কাঠিন্য থাকায় আমার বুঝতে খানিকটা সমস্যা হয়েছে। আগে জ্যাক ফিনের এই গল্পটা আমার পড়া ছিল বিধায় বুঝতে সুবিধা হয়েছে। কাজি আনোয়ার হোসেন জ্যাক ফিনের 'অফ মিসিং পার্সন' অবলম্বনে লিখেছিলেন, অন্য কোনখানে। পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম।
আগেও যেটা বলেছি, আপনাকে আবারও বলি, অন্যের ছেলেকে গভীর মমতায় মানুষ করার অর্থ কী? যেখানে নিজের ছেলেকে নিয়ে মাথা ঘামাবার সীমাহীন সুযোগ রয়ে গেছে। আপনার অনুবাদ করা জ্যাক ফিনের লেখা পাঠকদের ভাল লাগল, ফিন ব্যাটা মরে গিয়েও নাম কামালো, তাতে আপনার কী!
আমার মতে, অনুবাদে আপনি আপনার মেধার অপচয় করছেন। এই আমার মত। বাকিটা আপনার বিবেচনা...।
তাছাড়া অনুবাদক মানেই বিশ্বাসঘাতক- এ্যাদুত্তোর এ্যাদিতর। একটা অনুবাদ পড়ার আগে এই ব্যাপারটা আমরা মাথায় রাখি না, এটা কে অনুবাদ করছেন। তিনি অনুবাদ করার বিষয়ে কতটুকু যোগ্যতা রাখেন বা কতটা বিশ্বস্ত।
৯৫ সালে একজন অনুবাদকের সঙ্গে আমার এ বিষয়ে চিঠি চালাচালি হয়েছিল।
আমি তাকে যা লিখেছিলাম, 'আপনার অনুবাদ জ্যক ফিনের 'হারানো লোকগুলো' পড়লাম। আপনার লেখায় একটা আলাদা কাঠিন্য থাকায় আমার বুঝতে খানিকটা সমস্যা হয়েছে। আগে জ্যাক ফিনের এই গল্পটা আমার পড়া ছিল বিধায় বুঝতে সুবিধা হয়েছে। কাজি আনোয়ার হোসেন জ্যাক ফিনের 'অফ মিসিং পার্সন' অবলম্বনে লিখেছিলেন, অন্য কোনখানে। পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম।
আগেও যেটা বলেছি, আপনাকে আবারও বলি, অন্যের ছেলেকে গভীর মমতায় মানুষ করার অর্থ কী? যেখানে নিজের ছেলেকে নিয়ে মাথা ঘামাবার সীমাহীন সুযোগ রয়ে গেছে। আপনার অনুবাদ করা জ্যাক ফিনের লেখা পাঠকদের ভাল লাগল, ফিন ব্যাটা মরে গিয়েও নাম কামালো, তাতে আপনার কী!
আমার মতে, অনুবাদে আপনি আপনার মেধার অপচয় করছেন। এই আমার মত। বাকিটা আপনার বিবেচনা...।
বিভাগ
নিজস্ব ভাবনা
আহমদ ছফা, দুম করে মরে গেলেন যে!
আহমেদ ছফাকে আমার মনে হয়, চলমান একটা জ্ঞানের ভান্ডার। তাঁর পরিচয় নির্দিষ্ট গন্ডিতে নিয়ে আসা বাতুলতা মাত্র। এই মানুষটাকে বাংলাদেশের এবং কলকাতার বুদ্ধিজীবীরা যমের মতো ভয় করতেন। তিনি কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলতেন না! শেখ মুজিবর রহমানের বিশাল অফার তিনি অবলীলায় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি মানুষটা ছিলেন ভারী অহংকারী। কিন্তু ছফা নোবেল পুরষ্কার পেলেন না কেন- এ ক্ষোভ কার কাছে বলি?
এর চেয়ে অনেক কম অহংকারী মানুষকে আমি বিভিন্ন লেখায় তুলাধোনা করেছি। এ কারণে অনেকেই আমার প্রতি রুষ্ট হন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, আমার মতো অখ্যাত কলমচীর এই অধিকার নাই। আমি স্বীকার করি, আমার যোগ্যতা নাই- কিন্ত আমি ‘ধুনকর’ এর ভূমিকা থেকে পিছপা হইনি।
কিন্ত, ছফার বেলায় তাঁর অহংকার ছাপিয়ে আমার চোখ জলে ছাপাছাপি হয়ে যায়। এই ঘটনাটা যখন আমি পড়ি, আমার চোখের পানি আটকাতে পারিনি। গলা ছেড়ে আমার বলতে ইচ্ছা করছিল, আহমেদ ছফা, আপনি কেন মরে গেলেন? এ ভাবে দুম করে মরে যাওয়াটা কি কাজের একটা কাজ হলো! তাঁর অজস্র কান্ড থেকে একটা তুলে দিচ্ছি:
(উপাত্তটা নেয়া হয়েছে: আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী/ মোহাম্মদ আমীন।)
“স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর হুমায়ূন আহমেদ তাঁর মায়ের সাথে বাবর রোডের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে উঠেছিলেন। বাংলাদেশ সরকার শহীদ পরিবারের সম্মানার্থে হুমায়ূন আহমেদের মায়ের নামে ওই পরিত্যক্ত বাড়িটি বরাদ্দ করেছিলেন। কিন্ত অল্প কয়েক দিন পর গভীর রাতে রী বাহিনীর একটি সশস্ত্র দল হুমায়ূন পরিবারকে বাড়ি থেকে বের করে দরোজায় তালা লাগিয়ে দেয়। চারিদিকে ঘোর অন্ধকার, কোথায় যাবেন তাঁরা?
সকাল হল, কেউ নেই, কেউ আসার কোনো আশা নেই। চর্তুদিকে গিজগিজ করছে রক্ষী বাহিনী। কার বুকে এত পাটা যে এগিয়ে আসবে। আহমদ ছফা এসে হাজির। ছফার হাতে একটি টিন, কেরোসিনে ভর্তি, কাঁধে মোটা চাদর। এ নিয়ে আমীন এবং ছফার কথোপথন:
মোহাম্মদ আমীন: আপনি কি হুমায়ূনের কাছে একাই গিয়েছিলেন?
আহমদ ছফা: হাঁ, একাই। তবে হাতে একটা কন্টেনার ছিল, তাতে পাঁচ লিটার কেরোসিন, কিনেছিলাম।
আমীন: কেরোসিন কেন?
ছফা: জ্বলব এবং জ্বালাবো বলে।
আমীন: কাকে?
ছফা: নিজেকে এবং গণভবনকে। আমি হুমায়ূনকে বললাম, হুমায়ূন আমার সাথে রিক্সায় উঠুন, আমরা গণভবন যাব। একটি রিনাউন শহীদ পরিবারকে বাড়ি হতে উচ্ছেদ করে জ্ঞানীর কলমের চেয়েও পবিত্র রক্তকে অবমাননা করা হয়েছে। অপমান করা হয়েছে স্বাধীনতা ও জাতির আত্মদানের গৌরবমন্ডিত ঐশ্বর্যকে। আমি কেরোসিনঢেলে আত্মহুতি দেবার সংকল্পে উম্মাদ হয়ে উঠেছিলাম সে দিন।
আমীন: কেন?
ছফা: যে দেশের সরকার স্বাধীনতায় জীবন বিসর্জনকারী একজন প্যাট্রিয়ট পরিবারকে বাসা হতে গভীর রাতে উচ্ছেদ করে দেয়ার মত জঘন্য ঘটনা ঘটাতে পারে সে দেশে আর যাই থাকুক, আমি নেই। এমন ঘৃণ্য দেশে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভাল, অনেক। তো, আমি হুমায়ূনকে বললাম, আপনি তাড়াতাড়ি রিক্সায় উঠুন।
হুমায়ূন বললেন, কোথায় যাব?
আমি বললাম (ছফা): গনভবনে যাব। নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেব। একটি শহীদ পরিবারের প্রতি যে অপমান করা হয়েছে- তার প্রতিবাদে এ কাজটা করব। আত্মহুতি।
হুমায়ূন: কি বলছেন ছফা ভাই?
ছফা: কথা বলে সময় নষ্ট করবেন না। উঠে আসুন। সঙ্গে ভারী চাদরও নিয়ে এসেছি। আপনি আমার গায়ে ভালোমত চাদরটা জড়িয়ে দেবেন। যেন আগুনটা ঠিকমত লাগে।
আহমদ ছফার গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহুতি দেয়ার সংবাদ দাবানলের মত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। সবাই আস্তে আস্তে জড়ো হতে লাগলেন। বন্ধুরা ছফাকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন। কিন্ত ছফা অনঢ়, তিনি আত্মহুতি দেবেনই। অন্য কেউ হলে ভাবা যেত আত্মহুতি নয়, কেবল হুমকি, কথার কথা। কিন্ত সবাই জানে ছফা অন্য রকম, সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছেন প্রতিকার না পাওয়া পর্যন্ত একচুলও এদিক সেদিক করবেন না, যাই হোক কিংবা যাই ঘটুক।
কবি সিন্দাকার আবু জাফর ব্যস্ত হয়ে ছফার কাছে এলেন। জোর গলায় বললেন, আমি ব্যবস্থা করছি। কথা দিচ্ছি, এই শহীদ পরিবারের জন্য থাকার একটা ব্যবস্থা করব। তুমি কেরোসিন টিন আমার বাসায় দিয়ে এসো।
ছফা বললেন, হুমায়ূন পরিবারকে আবার সস্থানে তুলে না দেয়া পর্যন্ত আমি আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাবো না এবং আপনার হাতে সময় মাত্র ১ ঘন্টা।
পরিশেষ: ছফার জবানীতে শুনুন:
মুজিব সরকার হুমায়ূন আহমেদের পরিবারকে পুনরায় উচ্ছেদকৃত বাসায় তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিল। অন্তত আমি এই একটি ব্যপারে শেখ মুজিবের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে মরে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন।
এর চেয়ে অনেক কম অহংকারী মানুষকে আমি বিভিন্ন লেখায় তুলাধোনা করেছি। এ কারণে অনেকেই আমার প্রতি রুষ্ট হন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, আমার মতো অখ্যাত কলমচীর এই অধিকার নাই। আমি স্বীকার করি, আমার যোগ্যতা নাই- কিন্ত আমি ‘ধুনকর’ এর ভূমিকা থেকে পিছপা হইনি।
কিন্ত, ছফার বেলায় তাঁর অহংকার ছাপিয়ে আমার চোখ জলে ছাপাছাপি হয়ে যায়। এই ঘটনাটা যখন আমি পড়ি, আমার চোখের পানি আটকাতে পারিনি। গলা ছেড়ে আমার বলতে ইচ্ছা করছিল, আহমেদ ছফা, আপনি কেন মরে গেলেন? এ ভাবে দুম করে মরে যাওয়াটা কি কাজের একটা কাজ হলো! তাঁর অজস্র কান্ড থেকে একটা তুলে দিচ্ছি:
(উপাত্তটা নেয়া হয়েছে: আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী/ মোহাম্মদ আমীন।)
“স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর হুমায়ূন আহমেদ তাঁর মায়ের সাথে বাবর রোডের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে উঠেছিলেন। বাংলাদেশ সরকার শহীদ পরিবারের সম্মানার্থে হুমায়ূন আহমেদের মায়ের নামে ওই পরিত্যক্ত বাড়িটি বরাদ্দ করেছিলেন। কিন্ত অল্প কয়েক দিন পর গভীর রাতে রী বাহিনীর একটি সশস্ত্র দল হুমায়ূন পরিবারকে বাড়ি থেকে বের করে দরোজায় তালা লাগিয়ে দেয়। চারিদিকে ঘোর অন্ধকার, কোথায় যাবেন তাঁরা?
সকাল হল, কেউ নেই, কেউ আসার কোনো আশা নেই। চর্তুদিকে গিজগিজ করছে রক্ষী বাহিনী। কার বুকে এত পাটা যে এগিয়ে আসবে। আহমদ ছফা এসে হাজির। ছফার হাতে একটি টিন, কেরোসিনে ভর্তি, কাঁধে মোটা চাদর। এ নিয়ে আমীন এবং ছফার কথোপথন:
মোহাম্মদ আমীন: আপনি কি হুমায়ূনের কাছে একাই গিয়েছিলেন?
আহমদ ছফা: হাঁ, একাই। তবে হাতে একটা কন্টেনার ছিল, তাতে পাঁচ লিটার কেরোসিন, কিনেছিলাম।
আমীন: কেরোসিন কেন?
ছফা: জ্বলব এবং জ্বালাবো বলে।
আমীন: কাকে?
ছফা: নিজেকে এবং গণভবনকে। আমি হুমায়ূনকে বললাম, হুমায়ূন আমার সাথে রিক্সায় উঠুন, আমরা গণভবন যাব। একটি রিনাউন শহীদ পরিবারকে বাড়ি হতে উচ্ছেদ করে জ্ঞানীর কলমের চেয়েও পবিত্র রক্তকে অবমাননা করা হয়েছে। অপমান করা হয়েছে স্বাধীনতা ও জাতির আত্মদানের গৌরবমন্ডিত ঐশ্বর্যকে। আমি কেরোসিনঢেলে আত্মহুতি দেবার সংকল্পে উম্মাদ হয়ে উঠেছিলাম সে দিন।
আমীন: কেন?
ছফা: যে দেশের সরকার স্বাধীনতায় জীবন বিসর্জনকারী একজন প্যাট্রিয়ট পরিবারকে বাসা হতে গভীর রাতে উচ্ছেদ করে দেয়ার মত জঘন্য ঘটনা ঘটাতে পারে সে দেশে আর যাই থাকুক, আমি নেই। এমন ঘৃণ্য দেশে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভাল, অনেক। তো, আমি হুমায়ূনকে বললাম, আপনি তাড়াতাড়ি রিক্সায় উঠুন।
হুমায়ূন বললেন, কোথায় যাব?
আমি বললাম (ছফা): গনভবনে যাব। নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেব। একটি শহীদ পরিবারের প্রতি যে অপমান করা হয়েছে- তার প্রতিবাদে এ কাজটা করব। আত্মহুতি।
হুমায়ূন: কি বলছেন ছফা ভাই?
ছফা: কথা বলে সময় নষ্ট করবেন না। উঠে আসুন। সঙ্গে ভারী চাদরও নিয়ে এসেছি। আপনি আমার গায়ে ভালোমত চাদরটা জড়িয়ে দেবেন। যেন আগুনটা ঠিকমত লাগে।
আহমদ ছফার গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহুতি দেয়ার সংবাদ দাবানলের মত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। সবাই আস্তে আস্তে জড়ো হতে লাগলেন। বন্ধুরা ছফাকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন। কিন্ত ছফা অনঢ়, তিনি আত্মহুতি দেবেনই। অন্য কেউ হলে ভাবা যেত আত্মহুতি নয়, কেবল হুমকি, কথার কথা। কিন্ত সবাই জানে ছফা অন্য রকম, সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছেন প্রতিকার না পাওয়া পর্যন্ত একচুলও এদিক সেদিক করবেন না, যাই হোক কিংবা যাই ঘটুক।
কবি সিন্দাকার আবু জাফর ব্যস্ত হয়ে ছফার কাছে এলেন। জোর গলায় বললেন, আমি ব্যবস্থা করছি। কথা দিচ্ছি, এই শহীদ পরিবারের জন্য থাকার একটা ব্যবস্থা করব। তুমি কেরোসিন টিন আমার বাসায় দিয়ে এসো।
ছফা বললেন, হুমায়ূন পরিবারকে আবার সস্থানে তুলে না দেয়া পর্যন্ত আমি আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাবো না এবং আপনার হাতে সময় মাত্র ১ ঘন্টা।
পরিশেষ: ছফার জবানীতে শুনুন:
মুজিব সরকার হুমায়ূন আহমেদের পরিবারকে পুনরায় উচ্ছেদকৃত বাসায় তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিল। অন্তত আমি এই একটি ব্যপারে শেখ মুজিবের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে মরে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন।
বিভাগ
ছফা
ছফার খেসারত!
ছফার জবানীতে শুনুন: (এটা ছফার নিজস্ব মত):
"শেখ মুজিবর রহমান প্রথমে আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, রাষ্ট্রদূত হওয়ার জন্য। কিন্ত তিনি যখন বললেন, শর্ত আছে।
আমি (ছফা) বলেছিলাম, শর্ত ছফার জন্য নয়, আপনি অন্য কাউকে দেখুন।
শেখ মুজিবর রহমান আমার উপর প্রচন্ড রুষ্ট হয়েছিলেন। কিন্ত জেলে দেয়ার সাহস পাননি। পরে শেখ মুজিবর রহমান আমাকে অনুরোধ করেছিলেন, শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা হওয়ার জন্য জন্য।
আমি (ছফা): বলেছিলাম সম্ভব নয়। আমাকে ধারণ করার মতো শক্তি আপনার সরকার বা আপনার প্রশাসনের নেই।
এরপর আবুল ফজলকে এই অফার দিলে তিনি আনন্দের সঙ্গে রাজি হন। আবুল ফজল শেখ সাহেবের কেনা গোলাম হয়ে যান। উপদেষ্টা হওয়ার পর শেখ সাহেবকে খুশী করা ছাড়া তাঁর আর কোন পথ অবশিষ্ট ছিল না।
এরপর আমীন জানতে চান: আচ্ছা, আপনি শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু বলেন না কেন?
ছফা: আমি তোমার বাবাকে বাবা ডাকতে যাব কোন দুঃখে? তোমার বাবাকে পৃথিবীর সমস্ত লোক বাবা ডাকলেও আমি ডাকবো না, তাঁকে অনেকে জাতির পিতা বলে থাকেন, আমি বলি না, একই কারণ। মুক্তিযুদ্ধ আমার মা।
আমীন: তা হলে পিতা কে?
ছফা: সময়। সময়ের দাবি এবং পাকিস্তানীদের কার্যকলাপ। ৪৭ এর পর হতে দেশের উদরে জন্ম যন্ত্রণা শুরু হয়েছে, যা ১৯৭১ এর মার্চে প্রসব বেদনায় প্রদীপ্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটিয়েছে।"
*লেখাটা নেয়া হয়েছে 'আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী', লেখক: মোহাম্মদ আমীন থেকে। মোহাম্মদ আমীন দীর্ঘ ১১ বছর ছফার সহচর্যে ছিলেন। অনেক ক-টা বছর একই বাড়িতে ছফার সঙ্গে থাকতেন।)
**ছফার ঠোঁটকাটা স্বভাবের জন্য অনেক দাম দিতে হয়েছিল। তাঁকে বড় অবহেলায় দাফন করা হয়েছিল!
অনুমান করলে দোষ হবে না, এতে তাঁর কিছুই যায় আসেনি। ভাগ্যিস, তিনি বেঁচে নেই, নইলে ঠোঁট গোল করে বলতেন, বুদ্ধিজীবীদের...-এ আমি মুতিও না! হায়, আমরা এ প্রজন্ম জানিই না বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা বের করেছিলেন আহমদ ছফা!
বাংলা একাডেমির পুরষ্কার পাওয়ার জন্য যেখানে লেখকদের লালা ঝরে পা ভিজে যায় সেখানে তাঁকে যেন পুরস্কারটা না-দেয়া হয় এই নিয়ে হইচই বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন!
আফসোস, ছফার মত মানুষ যে দেশে জন্মান সেই দেশ ধন্য হয়, নাকি মানুষটা, এটা বলা মুশকিল! উন্নত দেশে জন্মালে তিনি যে নোবেল পেতেন এতে আমার কোন সন্দেহ নাই!
"শেখ মুজিবর রহমান প্রথমে আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, রাষ্ট্রদূত হওয়ার জন্য। কিন্ত তিনি যখন বললেন, শর্ত আছে।
আমি (ছফা) বলেছিলাম, শর্ত ছফার জন্য নয়, আপনি অন্য কাউকে দেখুন।
শেখ মুজিবর রহমান আমার উপর প্রচন্ড রুষ্ট হয়েছিলেন। কিন্ত জেলে দেয়ার সাহস পাননি। পরে শেখ মুজিবর রহমান আমাকে অনুরোধ করেছিলেন, শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা হওয়ার জন্য জন্য।
আমি (ছফা): বলেছিলাম সম্ভব নয়। আমাকে ধারণ করার মতো শক্তি আপনার সরকার বা আপনার প্রশাসনের নেই।
এরপর আবুল ফজলকে এই অফার দিলে তিনি আনন্দের সঙ্গে রাজি হন। আবুল ফজল শেখ সাহেবের কেনা গোলাম হয়ে যান। উপদেষ্টা হওয়ার পর শেখ সাহেবকে খুশী করা ছাড়া তাঁর আর কোন পথ অবশিষ্ট ছিল না।
এরপর আমীন জানতে চান: আচ্ছা, আপনি শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু বলেন না কেন?
ছফা: আমি তোমার বাবাকে বাবা ডাকতে যাব কোন দুঃখে? তোমার বাবাকে পৃথিবীর সমস্ত লোক বাবা ডাকলেও আমি ডাকবো না, তাঁকে অনেকে জাতির পিতা বলে থাকেন, আমি বলি না, একই কারণ। মুক্তিযুদ্ধ আমার মা।
আমীন: তা হলে পিতা কে?
ছফা: সময়। সময়ের দাবি এবং পাকিস্তানীদের কার্যকলাপ। ৪৭ এর পর হতে দেশের উদরে জন্ম যন্ত্রণা শুরু হয়েছে, যা ১৯৭১ এর মার্চে প্রসব বেদনায় প্রদীপ্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটিয়েছে।"
*লেখাটা নেয়া হয়েছে 'আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী', লেখক: মোহাম্মদ আমীন থেকে। মোহাম্মদ আমীন দীর্ঘ ১১ বছর ছফার সহচর্যে ছিলেন। অনেক ক-টা বছর একই বাড়িতে ছফার সঙ্গে থাকতেন।)
**ছফার ঠোঁটকাটা স্বভাবের জন্য অনেক দাম দিতে হয়েছিল। তাঁকে বড় অবহেলায় দাফন করা হয়েছিল!
অনুমান করলে দোষ হবে না, এতে তাঁর কিছুই যায় আসেনি। ভাগ্যিস, তিনি বেঁচে নেই, নইলে ঠোঁট গোল করে বলতেন, বুদ্ধিজীবীদের...-এ আমি মুতিও না! হায়, আমরা এ প্রজন্ম জানিই না বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা বের করেছিলেন আহমদ ছফা!
বাংলা একাডেমির পুরষ্কার পাওয়ার জন্য যেখানে লেখকদের লালা ঝরে পা ভিজে যায় সেখানে তাঁকে যেন পুরস্কারটা না-দেয়া হয় এই নিয়ে হইচই বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন!
আফসোস, ছফার মত মানুষ যে দেশে জন্মান সেই দেশ ধন্য হয়, নাকি মানুষটা, এটা বলা মুশকিল! উন্নত দেশে জন্মালে তিনি যে নোবেল পেতেন এতে আমার কোন সন্দেহ নাই!
বিভাগ
ছফা
আজিজ- যেন একপেট আবর্জনা!
আজিজ সুপার মার্কেট। সুরুচির চর্চা হয় এখানে। এ দেশের সুরুচি-চর্চার অনেক স্তম্ভের একটি।
আমার মনে হয়, অন্তত যারা লেখালেখির সঙ্গে জড়িত তাঁরা কখনই আজিজে যাননি এর উদাহরণ সম্ভবত অপ্রতুল। লেখালেখির জগতে আমি দুঁদে কেউ নই, ছদুমদু টাইপের মানুষ। তবুও আমাকেও অজস্রবার এখানে যেতে হয়েছে।
কিন্ত একটা বিষয় মেনে নিতে আমার বড়ো কষ্ট হতো, হয়। এই বিল্ডিংটাই নোংরা দাঁত বের করা একটা কাঠামো। লেখকদের যেমন চুলের সঙ্গে চিরুনির কি সম্পর্ক তেমনি চুনকামের সঙ্গে এই বিল্ডিং-এর কি সম্পর্ক এই টাইপের! ট্রাশ ক্যান নামের জিনিসটার কোন অস্তিত্ব আছে বলে তো মনে হয় না। যত্রতত্র ময়লা ফেলাই যেন ভারী একটা কাজের কাজ! ওয়াশরুমে সামান্য একটা আয়না নাই!
একটা মজার জিনিস আমি দেখেছি সেটা হচ্ছে, অসংখ্য ব্যবহৃত টি ব্যাগ ছাদে ঝুলছে। অনেকের কাছে এইসব ব্যাপারে জানতে চেয়েছি এ নিয়ে কারও বিকার আছে বলে তো আমার মনে হয়নি।
অবাক লাগে আমার কাছে। যেখানে সাহিত্য কপকপ করে গিলে খান আমাদের এ দেশের কলমবাজরা তাঁদের এ নিয়ে বিকার না-থাকার কারণটা কি? হবে হয়তো বা কোন মারফতি বিষয়, যা আমাদের জানতে নেই।
বিভাগ
নিজস্ব ভাবনা
বৃত্ত এবং সরলরেখা!
জ্ঞান বলতে আমি মোটাদাগে যা বুঝি, জ্ঞান হচ্ছে একটা সরলরেখার মতো। ক্রমাগত এগুতে থাকবে, থামাথামি নাই, আমৃত্যু।
অ-জ্ঞান হচ্ছে একটা বৃত্ত এই বৃত্তে একজন ঘুরপাক খেতে থাকবেন, তিনি যত দুর্ধর্ষ জ্ঞানধারীই হন না কেন!
আমার অসম্ভব পছন্দের একজন মানুষ, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন জ্ঞানী, অকপট, বিনয়ী, অকুতোভয়! তাঁর বিভিন্ন দিক আমাকে আমাকে বড়ো টানে। প্রায়শ ঠান্ডা শ্বাস ফেলি, তাঁর মতো মানুষের এ দেশে বড্ডো অভাব।
তিনি এটা অজস্রবার বলেছেন, সম্প্রতী আবারও বলেছেন বাচ্চাদের উপদেশ দিতে গিয়ে, 'খবরদার টিভি দেখবে না, বই পড়বে'। ভালো উপদেশ সন্দেহ নেই।
তিনি টিভি দেখার ঘোর বিরোধী- অসংখ্যবার এটা জাঁক করে বলেছেন, 'আমার প্রচারিত নাটকগুলো দেখতে পারিনি, আমার তো টিভি নাই কারণ আমি টিভি জিনিসটাকে দু-চোখে দেখতে পারি না'। ইত্যাদি ইত্যাদি।
আফসোস, এই অসাধারণ মানুষটা যখন বৃত্তে আটকা পড়েন দীর্ঘশ্বাস ফেলতেও কষ্ট হয়।
অ-জ্ঞান হচ্ছে একটা বৃত্ত এই বৃত্তে একজন ঘুরপাক খেতে থাকবেন, তিনি যত দুর্ধর্ষ জ্ঞানধারীই হন না কেন!
আমার অসম্ভব পছন্দের একজন মানুষ, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন জ্ঞানী, অকপট, বিনয়ী, অকুতোভয়! তাঁর বিভিন্ন দিক আমাকে আমাকে বড়ো টানে। প্রায়শ ঠান্ডা শ্বাস ফেলি, তাঁর মতো মানুষের এ দেশে বড্ডো অভাব।
তিনি এটা অজস্রবার বলেছেন, সম্প্রতী আবারও বলেছেন বাচ্চাদের উপদেশ দিতে গিয়ে, 'খবরদার টিভি দেখবে না, বই পড়বে'। ভালো উপদেশ সন্দেহ নেই।
তিনি টিভি দেখার ঘোর বিরোধী- অসংখ্যবার এটা জাঁক করে বলেছেন, 'আমার প্রচারিত নাটকগুলো দেখতে পারিনি, আমার তো টিভি নাই কারণ আমি টিভি জিনিসটাকে দু-চোখে দেখতে পারি না'। ইত্যাদি ইত্যাদি।
আফসোস, এই অসাধারণ মানুষটা যখন বৃত্তে আটকা পড়েন দীর্ঘশ্বাস ফেলতেও কষ্ট হয়।
বিভাগ
নিজস্ব ভাবনা
একজন দুর্বল মানুষের দুর্বল মস্তিষ্ক!
আজ খুব ভোরে ঘুমটা ভাঙ্গল। বড়ো অস্থির অস্থির লাগছিল।
কখনও কখনও মানুষ নিজেকে সহ্য করতে পারে না- তাকাতে পারে না নিজের চোখের দিকে।
আমার আস্ত একটা বই বের হলো অথচ আমি ১ বছর যাদের সঙ্গে কাটিয়েছি, তাদের একটা লেখা ছাপা হবে না! নিজেকে বড়ো অপরাধী মনে হচ্ছিল। মায়া বড়ো বাজে জিনিস, কাঠের টেবিলে বসে দীর্ঘ সময কাজ করলে সেই টেবিলটার প্রতি মায়া পড়ে যায়। ১০০জন ব্লগারের পছন্দসই লেখার একটা বই বের করতে পারলে আমার চেয়ে সুখি কেউ হতো না।
অন্যরা চেষ্টা করেছিলেন, ব্লগারদের নিয়ে বই বের করা হয়েছিল কিন্তু ভঙ্গিটা আমার পছন্দ হয়নি। কাহিনীর ভেতর গল্প চলে এসেছিল, নাকি রাজনীতির ভেতর পলিটিক্স ঢুকে পড়েছিল সে এক গবেষণার বিষয়। আমার মনে আছে ওই সাইটেই ওইসব নিয়ে আমি একটা কঠিন পোস্ট দিয়েছিলাম।
যাই হোক, আমি নিশ্চিত, আমার বইয়ের প্রকাশককে বলে লাভ হবে না। বেচারার দোষ দেই কিভাবে? আমার মতো অখ্যাত লেখকের কয়টাই বা বই বিক্রি হয়? প্রকাশকের বিমর্ষ মুখ দেখে দেখে আমি ক্লান্ত। জোর করে একটা দাবী করব সেই শক্তি আমার কই!
আমি যা কখনও করিনি, আজ করলাম, লজ্জার মাথা খেয়ে। কাতর হয়ে তাঁকে বললাম, ১টা বই বের করে দিতে পারেন?
তিনি বললেন, আপনার কি মাথা খারাপ! আপনি জানেন আজ কতো তারিখ?
আমি বললাম, জানি। ১৯ ফেব্রুয়ারি।
মেলার আছে আর ক-দিন? এটা ২৮ শে মাস। কীসব পাগলামীর কথা বলেন...!
তিনি সাফ সাফ বলে দিলেন, আপনার বই হলে আমি ভেবে দেখতে পারি, কিন্ত এটা সম্ভব না।
আমি নাছোড়বান্দা, আপনি একটু ভেবে দেখেন।
তিনি গররাজী হলেন, এই শর্তে, ১০০জন ব্লগারের লেখা নিয়ে বই বের হলে প্রত্যেকে কি ৫টা করে বই কিনবে?
আমি থমকে গেলাম, এটা কি করে বলি!
তিনি বললেন, তাইলে আপনি কি ক্ষতির দায়িত্ব নেবেন?
এই মুহূর্তে এই বিপুল দায়িত্ব নেয়ার অবস্থা আমার নাই। শালার মস্তিষ্ক কি সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। আমি দুম করে বললাম, নেব।
তিনি বললেন, আপনার ম্যাটার কি রেডি আছে?
আমি আবারও থমকালাম, না। কিন্ত এরা লিংক দিলে ওয়ার্ডে কপি করে কোয়ের্কে কম্পোজ, পেজ মেকআপ করে দেব। রাতদিন কাজ করলে ২ দিনে আমি এটা করতে পারব।
তিনি বললেন, উহুঁ, ব্যাপারটা এত সোজা না। একেকজন একেক ভাষারীতি ব্যবহার করেছেন, অজস্র বানান ভুল থাকবে। আপনাকে এডিট করার প্রয়োজ হবে। ভেবে দেখেন।
আমি অটল, আমি পারবো।
তিনি হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গিতে বললেন, বেশ, এখন বাজে দুপুর ১টা। আপনার হাতে ২ ঘন্টা সময় আছে। আপনাকে প্রচ্ছদের নামটা আমাকে কনফার্ম করতে হবে। কারণ, ৩ টার সময় আমি আমার বাকি বইয়ের প্রচ্ছদ ছাপাতে পাঠাবো। পরে শুধু আপনার এই বইয়ের প্রচ্ছদ আলাদাভাবে পাঠানো সম্ভব না। আপনি কি বইয়ের প্রচ্ছদের নাম ঠিক করেছেন?
একটা নাম আমার মাথায় ছিল: ভার্চুয়াল দেশমা। সঙ্গতিপূর্ণ একটা স্কেচও করা আছে। কিন্ত এই নাম সবাই চাইবে কিনা এটাও তো জানি না। ব্লগে এখনও কিছুই শেয়ার করা হয়নি। প্রকাশকের সঙ্গে কথা না বলে শেয়ার করি কি করে?
প্রকাশক এবার বললেন, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনি ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেন। আমার ধারণা, আপনি খুব বড়ো ধরনের সমস্যায় পড়তে যাচ্ছেন। দেদারসে গালি খাবেন, এতে আমার সন্দেহ নাই। অনেকেই আপনার এই উদ্যোগকে ভাল ভাবে নেবে না। ভাল হয়, আপনি আপনার সুহৃদদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। আর আমার পরামর্শ, আপনার মাথা এখন গরম, ভাত খেয়ে লম্বা একটা ঘুম দেন। মাথা থেকে এটা ঝেড়ে ফেলেন।
তারপরও আমি বলি, নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে লেখা ছাপালে কেন সমস্যা হবে!
ব্লগের ক-জনের সঙ্গে কথা বললাম। আজ আর তাদের নাম বলে বিব্রত করি না কিন্তু হায়রে মিটিং, হায়রে দলবাজি! মিটিং কল দিতে হবে, ওমুককে ডাকা যাবে তমুককে ডাকা যাবে না, এইসব!
অনেকে কঠিন নিষেধও করলেন। তুমি এই সময়ে সব কিছু মিলিয়ে ম্যানেজ করতে পারবে না। খামাখা একটা নাটক হবে ইত্যাদি, ইত্যাদি। তখন কেউ খানিকটা সাহস দিল না, পাশে এসে দাঁড়ালো না।
আমি, একজন হেরে যাওয়া মানুষের মতো বহু দিন পর দুপুরে ঘুম দিলাম। কিন্ত একজন দুর্বল মানুষের দুর্বল মস্তিষ্ক এই হেরে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না। আমার আবেগটা একটা স্বপ্ন হয়েই রইল...। তবুও ক্ষীণ আশা, কেউ-না-কেউ এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করে দেখাবে।
কখনও কখনও মানুষ নিজেকে সহ্য করতে পারে না- তাকাতে পারে না নিজের চোখের দিকে।
আমার আস্ত একটা বই বের হলো অথচ আমি ১ বছর যাদের সঙ্গে কাটিয়েছি, তাদের একটা লেখা ছাপা হবে না! নিজেকে বড়ো অপরাধী মনে হচ্ছিল। মায়া বড়ো বাজে জিনিস, কাঠের টেবিলে বসে দীর্ঘ সময কাজ করলে সেই টেবিলটার প্রতি মায়া পড়ে যায়। ১০০জন ব্লগারের পছন্দসই লেখার একটা বই বের করতে পারলে আমার চেয়ে সুখি কেউ হতো না।
অন্যরা চেষ্টা করেছিলেন, ব্লগারদের নিয়ে বই বের করা হয়েছিল কিন্তু ভঙ্গিটা আমার পছন্দ হয়নি। কাহিনীর ভেতর গল্প চলে এসেছিল, নাকি রাজনীতির ভেতর পলিটিক্স ঢুকে পড়েছিল সে এক গবেষণার বিষয়। আমার মনে আছে ওই সাইটেই ওইসব নিয়ে আমি একটা কঠিন পোস্ট দিয়েছিলাম।
যাই হোক, আমি নিশ্চিত, আমার বইয়ের প্রকাশককে বলে লাভ হবে না। বেচারার দোষ দেই কিভাবে? আমার মতো অখ্যাত লেখকের কয়টাই বা বই বিক্রি হয়? প্রকাশকের বিমর্ষ মুখ দেখে দেখে আমি ক্লান্ত। জোর করে একটা দাবী করব সেই শক্তি আমার কই!
আমি যা কখনও করিনি, আজ করলাম, লজ্জার মাথা খেয়ে। কাতর হয়ে তাঁকে বললাম, ১টা বই বের করে দিতে পারেন?
তিনি বললেন, আপনার কি মাথা খারাপ! আপনি জানেন আজ কতো তারিখ?
আমি বললাম, জানি। ১৯ ফেব্রুয়ারি।
মেলার আছে আর ক-দিন? এটা ২৮ শে মাস। কীসব পাগলামীর কথা বলেন...!
তিনি সাফ সাফ বলে দিলেন, আপনার বই হলে আমি ভেবে দেখতে পারি, কিন্ত এটা সম্ভব না।
আমি নাছোড়বান্দা, আপনি একটু ভেবে দেখেন।
তিনি গররাজী হলেন, এই শর্তে, ১০০জন ব্লগারের লেখা নিয়ে বই বের হলে প্রত্যেকে কি ৫টা করে বই কিনবে?
আমি থমকে গেলাম, এটা কি করে বলি!
তিনি বললেন, তাইলে আপনি কি ক্ষতির দায়িত্ব নেবেন?
এই মুহূর্তে এই বিপুল দায়িত্ব নেয়ার অবস্থা আমার নাই। শালার মস্তিষ্ক কি সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। আমি দুম করে বললাম, নেব।
তিনি বললেন, আপনার ম্যাটার কি রেডি আছে?
আমি আবারও থমকালাম, না। কিন্ত এরা লিংক দিলে ওয়ার্ডে কপি করে কোয়ের্কে কম্পোজ, পেজ মেকআপ করে দেব। রাতদিন কাজ করলে ২ দিনে আমি এটা করতে পারব।
তিনি বললেন, উহুঁ, ব্যাপারটা এত সোজা না। একেকজন একেক ভাষারীতি ব্যবহার করেছেন, অজস্র বানান ভুল থাকবে। আপনাকে এডিট করার প্রয়োজ হবে। ভেবে দেখেন।
আমি অটল, আমি পারবো।
তিনি হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গিতে বললেন, বেশ, এখন বাজে দুপুর ১টা। আপনার হাতে ২ ঘন্টা সময় আছে। আপনাকে প্রচ্ছদের নামটা আমাকে কনফার্ম করতে হবে। কারণ, ৩ টার সময় আমি আমার বাকি বইয়ের প্রচ্ছদ ছাপাতে পাঠাবো। পরে শুধু আপনার এই বইয়ের প্রচ্ছদ আলাদাভাবে পাঠানো সম্ভব না। আপনি কি বইয়ের প্রচ্ছদের নাম ঠিক করেছেন?
একটা নাম আমার মাথায় ছিল: ভার্চুয়াল দেশমা। সঙ্গতিপূর্ণ একটা স্কেচও করা আছে। কিন্ত এই নাম সবাই চাইবে কিনা এটাও তো জানি না। ব্লগে এখনও কিছুই শেয়ার করা হয়নি। প্রকাশকের সঙ্গে কথা না বলে শেয়ার করি কি করে?
প্রকাশক এবার বললেন, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনি ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেন। আমার ধারণা, আপনি খুব বড়ো ধরনের সমস্যায় পড়তে যাচ্ছেন। দেদারসে গালি খাবেন, এতে আমার সন্দেহ নাই। অনেকেই আপনার এই উদ্যোগকে ভাল ভাবে নেবে না। ভাল হয়, আপনি আপনার সুহৃদদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। আর আমার পরামর্শ, আপনার মাথা এখন গরম, ভাত খেয়ে লম্বা একটা ঘুম দেন। মাথা থেকে এটা ঝেড়ে ফেলেন।
তারপরও আমি বলি, নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে লেখা ছাপালে কেন সমস্যা হবে!
ব্লগের ক-জনের সঙ্গে কথা বললাম। আজ আর তাদের নাম বলে বিব্রত করি না কিন্তু হায়রে মিটিং, হায়রে দলবাজি! মিটিং কল দিতে হবে, ওমুককে ডাকা যাবে তমুককে ডাকা যাবে না, এইসব!
অনেকে কঠিন নিষেধও করলেন। তুমি এই সময়ে সব কিছু মিলিয়ে ম্যানেজ করতে পারবে না। খামাখা একটা নাটক হবে ইত্যাদি, ইত্যাদি। তখন কেউ খানিকটা সাহস দিল না, পাশে এসে দাঁড়ালো না।
আমি, একজন হেরে যাওয়া মানুষের মতো বহু দিন পর দুপুরে ঘুম দিলাম। কিন্ত একজন দুর্বল মানুষের দুর্বল মস্তিষ্ক এই হেরে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না। আমার আবেগটা একটা স্বপ্ন হয়েই রইল...। তবুও ক্ষীণ আশা, কেউ-না-কেউ এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করে দেখাবে।
বিভাগ
নিজস্ব ভাবনা
হুজুরেআলা সাইদাবাদী, যখন পালিয়ে বাঁচলেন!
না-না, হুজুরেআলা সাইদাবাদী পৃথিবী থেকে পালিয়ে গেছেন এটা বলা হচ্ছে না যে, তিনি দেহ ত্যাগ করে রুহ আমাদের জন্যে রেখে গেছেন। তিনি কলকাতা থেকে পালিয়ে এসেছিলেন!
এমনিতে সাইদাবাদী খুব সাধারণ জীবন-যাপন (!)করতেন, একটা নমুনা এই রকম-
তোপখানা রোডের ‘ক্রিসেন্ট’-এ এসে থামল টিনটেড গ্লাসের একটা সাদা মাইক্রোবাস। গাড়ি দিয়ে থেকে নেমে এলেন জেল্লাদার পোশাকে এক লোক। সঙ্গে চেলচামুন্ডা। একটা ঝাড় বাতি কিনলেন । দাম ৭৫,০০০ টাকা!
এটা ৯০ সালের কথা। এই জেল্লাদার লোকটি হচ্ছেন সায়েদাবাদী। আর ঝাড় বাতিটা কেনা হয়েছিল তাঁর আলিশান বসবার ঘরের জন্য, যার দেয়ালে সাঁটানো চকচকে ডামি পিস্তল, শান দেয়া নকল তলোয়ার, শো কেসে ক্রিস্টালের সামগ্রী, পা চুবানো কার্পেট, গলা ডুবানো সোফা!
হুজুরের আবিষ্কৃত জ্যোতি হিমেল আধ্যাত্মিক পাউডারের কথা আপনাদের মনে আছে? ওই সময় বাঘা-বাঘা মানুষ এই পাউডারের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছিলেন!
বারো জন মন্ত্রী, এবং একজন ডক্টর কাম সম্পাদক মডেল হয়েছিলেন! পরে এটা নিম্নমানের ভুয়া পাউডার প্রমাণ হলে, এ নিয়ে তুমুল হট্টগোল বাঁধলে পীর সায়দাবাদী পত্রিকান্তরে বিবৃতি দিয়ে মাফও চেয়েছিলেন।
’৯১-এর দিকে ইত্তেফাকসহ প্রচুর পত্রিকায় অজস্র বিজ্ঞাপন ছাপা হতো-বিষয় আর কিছু না, অনেক ভূতপূর্ব পাগলের বক্তব্য, হুজুর নাকি বেত মেরে মেরে এদেরকে ভালো করে ফেলেছেন। এদের মধ্যে দশ বছরের পুরনো পাগলও আছেন!সাইদাবাদীর কাছে এরা পত্রিকার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন!
হুজুর সাইদাবাদীর কল্যাণে প্রচুর মহিলা নাকি গর্ভবতী হয়েছেন (কোন এক বিচিত্র কারণে হুজুরের নুরানী চেহারার সঙ্গে ওই বাচ্চাগুলোর চেহারায় নুরানী ভাব থাকলে বা কেউ মিল খুঁজে পেলে এই বিষয়ে লেখককে দায়ী করা যাবে না)।
কলকাতার প্রবীর ঘোষ। ১৯৯০ সালে ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ বই প্রকাশ করে তিনি উম্মুক্ত চ্যালেঞ্জ দিয়ে রেখেছিলেন, বিশ্বের যে কোন দেশের যে কেউ যদি অলৌকিক কিছু প্রদর্শন করতে পারেন- তাকে ইন্ডিয়ান রুপি ৫০ হাজার টাকা দেয়া হবে এবং তিনি পরাজয় স্বীকার করে নেবেন। অসংখ্য পীর-সাধু তার চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে হেরেছেন।
প্রবীর ঘোষের প্রতিবেদন অনুসারে, সাইদাবাদী যখন কোলকাতায় তখন একজন দম্পত্তিকে পাঠানো হয়, হুজুর সাইদাবাদীর কাছে। হুজুর সাইদাবাদী নাকি ডিম পড়া দেন। দম্পত্তির হাত থেকে ডিম নিয়ে হুজুর বোতল থেকে পানি ঢাললেন তারপর তোয়ালে দিয়ে মুছে একটি স্টিলের চামচ দিয়ে আঘাত করলে দেখা গেল ডিমটি সিদ্ধ হয়ে গেছে।
প্রবীর ঘোষ যে ডিমটিতে আগেই দাগ দিয়ে রেখেছিলেন, এটা সেই ডিম না।
দ্বিতীয় ঘটনাটি আরও মজার। প্রবীর ঘোষ বললেন, আমার কাছ থেকে সাইদাবাদী একটা রিক্সার লোহার বিয়ারিং বল চাইলেন। তারপর সেটা নিয়ে লাল কালি দিয়ে একটা কাগজে উর্দু বা আরবিতে কিছু লিখে, একটা কবচে ঢুকিয়ে মোম দিয়ে বন্ধ করলেন। কালো সুতা দিয়ে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে সাইদাবাদী বললেন, এখন বাজে দশটি পঁচিশ। ঠিক একটা পঁচিশে কবচ খুলে দেখবেন আল্লার রহমতে বিয়ারিং বল সোনার বল হয়ে গেছে, আর না হলে বুঝবেন, আল্লার রহমত আপনার উপর হয়নি, লোহা লোহাই থেকে যাবে।
প্রবীর ঘোষ ওখান থেকে বেরিয়ে একটা চায়ের দোকানে ঢুকলেন এবং কবচটা খুলে দেখলেন, এর ভেতর একটা সোনার বল । তিন ঘন্টা লাগেনি, পনের মিনিটের মধ্যেই লোহা সোনা হয়ে গেছে!
এরপর রবিবার (২১ এপ্রিল ) যুক্তিবাদী সমিতির থেকে কয়েকজন গিয়ে সাইদাবাদীর কাছে চিঠি হস্তান্তর করেন। ওই চিঠিতে প্রকাশ্যে অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয় কিন্তু সাইদাবাদী সেই চ্যালেজ্ঞ গ্রহন করেননি। বরং পরের দিন প্রবীর ঘোষকে টেলিফোন করে ‘বিশেষ সহযোগিতা’ চান। সাইদাবাদী আরও বলেন, প্রবীর ঘোষ সহযোগিতা করতে চাইলে তার সঙ্গে হিরা হোটের অথবা এয়ারপোর্টে দেখা করলে বিশেষ ব্যবস্থা হতে পারে। প্রবীর ঘোষ অনিহা প্রকাশ করলে সাইদাবাদী তার আধ্যাত্মিক সফর সংক্ষিপ্ত করে ২৩ এপ্রিল ঢাকা ফিরে আসেন!
এমনিতে সাইদাবাদী খুব সাধারণ জীবন-যাপন (!)করতেন, একটা নমুনা এই রকম-
তোপখানা রোডের ‘ক্রিসেন্ট’-এ এসে থামল টিনটেড গ্লাসের একটা সাদা মাইক্রোবাস। গাড়ি দিয়ে থেকে নেমে এলেন জেল্লাদার পোশাকে এক লোক। সঙ্গে চেলচামুন্ডা। একটা ঝাড় বাতি কিনলেন । দাম ৭৫,০০০ টাকা!
এটা ৯০ সালের কথা। এই জেল্লাদার লোকটি হচ্ছেন সায়েদাবাদী। আর ঝাড় বাতিটা কেনা হয়েছিল তাঁর আলিশান বসবার ঘরের জন্য, যার দেয়ালে সাঁটানো চকচকে ডামি পিস্তল, শান দেয়া নকল তলোয়ার, শো কেসে ক্রিস্টালের সামগ্রী, পা চুবানো কার্পেট, গলা ডুবানো সোফা!
হুজুরের আবিষ্কৃত জ্যোতি হিমেল আধ্যাত্মিক পাউডারের কথা আপনাদের মনে আছে? ওই সময় বাঘা-বাঘা মানুষ এই পাউডারের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছিলেন!
বারো জন মন্ত্রী, এবং একজন ডক্টর কাম সম্পাদক মডেল হয়েছিলেন! পরে এটা নিম্নমানের ভুয়া পাউডার প্রমাণ হলে, এ নিয়ে তুমুল হট্টগোল বাঁধলে পীর সায়দাবাদী পত্রিকান্তরে বিবৃতি দিয়ে মাফও চেয়েছিলেন।
’৯১-এর দিকে ইত্তেফাকসহ প্রচুর পত্রিকায় অজস্র বিজ্ঞাপন ছাপা হতো-বিষয় আর কিছু না, অনেক ভূতপূর্ব পাগলের বক্তব্য, হুজুর নাকি বেত মেরে মেরে এদেরকে ভালো করে ফেলেছেন। এদের মধ্যে দশ বছরের পুরনো পাগলও আছেন!সাইদাবাদীর কাছে এরা পত্রিকার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন!
হুজুর সাইদাবাদীর কল্যাণে প্রচুর মহিলা নাকি গর্ভবতী হয়েছেন (কোন এক বিচিত্র কারণে হুজুরের নুরানী চেহারার সঙ্গে ওই বাচ্চাগুলোর চেহারায় নুরানী ভাব থাকলে বা কেউ মিল খুঁজে পেলে এই বিষয়ে লেখককে দায়ী করা যাবে না)।
কলকাতার প্রবীর ঘোষ। ১৯৯০ সালে ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ বই প্রকাশ করে তিনি উম্মুক্ত চ্যালেঞ্জ দিয়ে রেখেছিলেন, বিশ্বের যে কোন দেশের যে কেউ যদি অলৌকিক কিছু প্রদর্শন করতে পারেন- তাকে ইন্ডিয়ান রুপি ৫০ হাজার টাকা দেয়া হবে এবং তিনি পরাজয় স্বীকার করে নেবেন। অসংখ্য পীর-সাধু তার চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে হেরেছেন।
প্রবীর ঘোষের প্রতিবেদন অনুসারে, সাইদাবাদী যখন কোলকাতায় তখন একজন দম্পত্তিকে পাঠানো হয়, হুজুর সাইদাবাদীর কাছে। হুজুর সাইদাবাদী নাকি ডিম পড়া দেন। দম্পত্তির হাত থেকে ডিম নিয়ে হুজুর বোতল থেকে পানি ঢাললেন তারপর তোয়ালে দিয়ে মুছে একটি স্টিলের চামচ দিয়ে আঘাত করলে দেখা গেল ডিমটি সিদ্ধ হয়ে গেছে।
প্রবীর ঘোষ যে ডিমটিতে আগেই দাগ দিয়ে রেখেছিলেন, এটা সেই ডিম না।
দ্বিতীয় ঘটনাটি আরও মজার। প্রবীর ঘোষ বললেন, আমার কাছ থেকে সাইদাবাদী একটা রিক্সার লোহার বিয়ারিং বল চাইলেন। তারপর সেটা নিয়ে লাল কালি দিয়ে একটা কাগজে উর্দু বা আরবিতে কিছু লিখে, একটা কবচে ঢুকিয়ে মোম দিয়ে বন্ধ করলেন। কালো সুতা দিয়ে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে সাইদাবাদী বললেন, এখন বাজে দশটি পঁচিশ। ঠিক একটা পঁচিশে কবচ খুলে দেখবেন আল্লার রহমতে বিয়ারিং বল সোনার বল হয়ে গেছে, আর না হলে বুঝবেন, আল্লার রহমত আপনার উপর হয়নি, লোহা লোহাই থেকে যাবে।
প্রবীর ঘোষ ওখান থেকে বেরিয়ে একটা চায়ের দোকানে ঢুকলেন এবং কবচটা খুলে দেখলেন, এর ভেতর একটা সোনার বল । তিন ঘন্টা লাগেনি, পনের মিনিটের মধ্যেই লোহা সোনা হয়ে গেছে!
এরপর রবিবার (২১ এপ্রিল ) যুক্তিবাদী সমিতির থেকে কয়েকজন গিয়ে সাইদাবাদীর কাছে চিঠি হস্তান্তর করেন। ওই চিঠিতে প্রকাশ্যে অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয় কিন্তু সাইদাবাদী সেই চ্যালেজ্ঞ গ্রহন করেননি। বরং পরের দিন প্রবীর ঘোষকে টেলিফোন করে ‘বিশেষ সহযোগিতা’ চান। সাইদাবাদী আরও বলেন, প্রবীর ঘোষ সহযোগিতা করতে চাইলে তার সঙ্গে হিরা হোটের অথবা এয়ারপোর্টে দেখা করলে বিশেষ ব্যবস্থা হতে পারে। প্রবীর ঘোষ অনিহা প্রকাশ করলে সাইদাবাদী তার আধ্যাত্মিক সফর সংক্ষিপ্ত করে ২৩ এপ্রিল ঢাকা ফিরে আসেন!
বিভাগ
চুতিয়া
সাইদাবাদী- একজন মহাপুরুষের জীবনী!
১. মাত্র ১০০ পয়সা, ১ টাকার বিনিময়ে প্রায় ৮ কোটি টাকার জমির মালিক হয়েছিলেন হুজুর সাইদাবাদী, ইসলামের সেবা করবেন এ অজুহাতে। ঢাকার প্রাক্তন মেয়র কর্নেল (অবঃ) মালেকের সহায়তায় এবং এরশাদের সম্মতি ছিল এ কাজে।
২. এরশাদ আমলে যখন আলু বীজের অভাব তখন গরীব চাষীদের মাঝে বিতরনের নামে সাইদাবাদী প্রায় ৬০০০ কার্টুন আলু বীজে আমদানির অনুমতি পান মন্ত্রী রুহুল আমীন হাওলাদারের সহযোগীতায়! পরে এই আলু বীজ মুন্সিগঞ্জে ৮০০ টাকা লাভে সাইদাবাদী বিক্রি করেন, এতে তার লাভ হয় ৫০ লাখ টাকা!
৩. ষ্টীল ইঃ কর্পেরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান নেফাউর রহমানের সহায়তায় সাইদাবাদী ঢেউটিন এবং স্ক্র্যাপ-এর বেশ কিছু কৌটা আদায় করেন এবং তার সহযোগীদের মাধ্যমে বাইরে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করেন।
৪. সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজান চৌধুরীর জামাতা ইসলাম সাহেবকে ব্যবহার করে সাইদাবাদী চিনির পারমিট যোগাড় করেন। ইদের সময় সেই চিনি বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করেন।
৫. ঢাকার মেয়র কর্নেল (অবঃ) মালেকের সহায়তায় সাইদাবাদী অবৈধ পদ্ধতিতে প্রচুর টেন্ডার লাভ করেন বলে ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছিলেন। পরে এইসব টেন্ডার দয়াগঞ্জের জনৈক নাজিম কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে লভ্যাংশ পকেটস্ত করেন।
৬. এরশাদ আমলে সাইদাবাদী তার মাথা ও কানের চিকিৎসার অজুহাতে ব্যাংকক যান। মূলত এটা ছিল বিজনেস ট্রিপ! ফেরার সময় নিয়ে এসেছিলেন আটটি ঢাউস সাইজের সুটকেস- প্রচুর বিদেশী পণ্য ছাড়াও ছিল দুইটি বিদেশী রিভলভার। কোন রকম কাস্টমস চেকিং এবং ডিক্লারেশন ছাড়াই প্রভাব খাটিয়ে তিনি এসব পণ্য দেশে নিয়ে প্রবেশ করেন!
৭. থাইল্যান্ডের একটি নিম্নমানের প্রসাধনীর পেটেন্ট নকল করে সাইদাবাদী বাজারে আধ্যাত্মিক জ্যোতি পাউডার ছাড়েন। নব্বই এর দিকে এই পাউডারের বিজ্ঞাপনে মডেল হন বারো জন মন্ত্রী এবং একজন ডক্টর সম্পাদক! কেমিক্যাল টেস্টে দেখা গেছে, নিষিদ্ধ উপাদান কর্পুর এবং অন্য এমন সব উপাদানে এই পাউডার তৈরী হয়েছে, যে সব উপাদান উন্নত দেশে নিষিদ্ধ। বিপুল টাকা মুনাফা করেন এই পাউডার দিয়ে, ড্রাগ কন্ট্রোল অথরিটির কোন অনুমতি না নিয়ে। পরে পত্রিকার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করেন!
৮. মুন্সিগঞ্জের রামপাল, ধলা এবং শনির আখড়ায় অর্থ এবং পেশীর প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ২০০ বিঘা জমি কেনেন। এইসব জমির অনেকেই নায্য মূল্য পায়নি বলে অভিযোগ করেন।
৯. সাইদাবাদীর আরেকটি ব্যবসা ভক্তদের দেয়া নজরানা। প্রতি দর্শনার্থীর কাছে দশ টাকার টিকেট বিক্রি করে মাসে প্রায় এক লাখ টাকা আয় করেন বলে দরবার শরীফের কর্মচারী সূত্রে জানা যায়।
১০. প্রতি বছর ওরস উপলে দরবার শরীফে আলাদাভাবে বিপুল অংকের নজরানা জমা পড়ে। জনশ্রুতি আছে, অনেক ব্যবসার ডিল সাইদাবাদীর মাধ্যমে এখানে হয়ে থাকে।
১০. বিভিন্ন পত্রিকায় সাইদাবাদীর যে সব আধ্যাত্মিক বিজ্ঞাপন দেখা যায় তার অধিকাংশ বিলই তিনি পরিশোধ করেন না। বিল চাইলে সাইদাবাদী কখনো হুমকীর সুরে, কখনো বা নরম সুরে বলেন, ভাইজান বিল আর কি দিব, যান আপনার জন্যে দোয়া করব।
২. এরশাদ আমলে যখন আলু বীজের অভাব তখন গরীব চাষীদের মাঝে বিতরনের নামে সাইদাবাদী প্রায় ৬০০০ কার্টুন আলু বীজে আমদানির অনুমতি পান মন্ত্রী রুহুল আমীন হাওলাদারের সহযোগীতায়! পরে এই আলু বীজ মুন্সিগঞ্জে ৮০০ টাকা লাভে সাইদাবাদী বিক্রি করেন, এতে তার লাভ হয় ৫০ লাখ টাকা!
৩. ষ্টীল ইঃ কর্পেরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান নেফাউর রহমানের সহায়তায় সাইদাবাদী ঢেউটিন এবং স্ক্র্যাপ-এর বেশ কিছু কৌটা আদায় করেন এবং তার সহযোগীদের মাধ্যমে বাইরে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করেন।
৪. সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজান চৌধুরীর জামাতা ইসলাম সাহেবকে ব্যবহার করে সাইদাবাদী চিনির পারমিট যোগাড় করেন। ইদের সময় সেই চিনি বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করেন।
৫. ঢাকার মেয়র কর্নেল (অবঃ) মালেকের সহায়তায় সাইদাবাদী অবৈধ পদ্ধতিতে প্রচুর টেন্ডার লাভ করেন বলে ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছিলেন। পরে এইসব টেন্ডার দয়াগঞ্জের জনৈক নাজিম কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে লভ্যাংশ পকেটস্ত করেন।
৬. এরশাদ আমলে সাইদাবাদী তার মাথা ও কানের চিকিৎসার অজুহাতে ব্যাংকক যান। মূলত এটা ছিল বিজনেস ট্রিপ! ফেরার সময় নিয়ে এসেছিলেন আটটি ঢাউস সাইজের সুটকেস- প্রচুর বিদেশী পণ্য ছাড়াও ছিল দুইটি বিদেশী রিভলভার। কোন রকম কাস্টমস চেকিং এবং ডিক্লারেশন ছাড়াই প্রভাব খাটিয়ে তিনি এসব পণ্য দেশে নিয়ে প্রবেশ করেন!
৭. থাইল্যান্ডের একটি নিম্নমানের প্রসাধনীর পেটেন্ট নকল করে সাইদাবাদী বাজারে আধ্যাত্মিক জ্যোতি পাউডার ছাড়েন। নব্বই এর দিকে এই পাউডারের বিজ্ঞাপনে মডেল হন বারো জন মন্ত্রী এবং একজন ডক্টর সম্পাদক! কেমিক্যাল টেস্টে দেখা গেছে, নিষিদ্ধ উপাদান কর্পুর এবং অন্য এমন সব উপাদানে এই পাউডার তৈরী হয়েছে, যে সব উপাদান উন্নত দেশে নিষিদ্ধ। বিপুল টাকা মুনাফা করেন এই পাউডার দিয়ে, ড্রাগ কন্ট্রোল অথরিটির কোন অনুমতি না নিয়ে। পরে পত্রিকার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করেন!
৮. মুন্সিগঞ্জের রামপাল, ধলা এবং শনির আখড়ায় অর্থ এবং পেশীর প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ২০০ বিঘা জমি কেনেন। এইসব জমির অনেকেই নায্য মূল্য পায়নি বলে অভিযোগ করেন।
৯. সাইদাবাদীর আরেকটি ব্যবসা ভক্তদের দেয়া নজরানা। প্রতি দর্শনার্থীর কাছে দশ টাকার টিকেট বিক্রি করে মাসে প্রায় এক লাখ টাকা আয় করেন বলে দরবার শরীফের কর্মচারী সূত্রে জানা যায়।
১০. প্রতি বছর ওরস উপলে দরবার শরীফে আলাদাভাবে বিপুল অংকের নজরানা জমা পড়ে। জনশ্রুতি আছে, অনেক ব্যবসার ডিল সাইদাবাদীর মাধ্যমে এখানে হয়ে থাকে।
১০. বিভিন্ন পত্রিকায় সাইদাবাদীর যে সব আধ্যাত্মিক বিজ্ঞাপন দেখা যায় তার অধিকাংশ বিলই তিনি পরিশোধ করেন না। বিল চাইলে সাইদাবাদী কখনো হুমকীর সুরে, কখনো বা নরম সুরে বলেন, ভাইজান বিল আর কি দিব, যান আপনার জন্যে দোয়া করব।
বিভাগ
ক্ষোভ
আমাদের স্ক্রিপ্টের বড্ড অভাব
মার্কিন ৭ম নৌ বহরের টাস্ক ফোর্স ইতিমধ্যে মালাক্কা প্রণালী অতিক্রম করে দ্রুত বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো। মার্কিন এই বহরে ছিল পারমানবিক শক্তি চালিত বিশাল বিমান জাহাজ এন্টারপ্রাইজ এবং আরও ৬টি যুদ্ধজাহাজ! এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অজুহাত ছিলো: বাংলাদেশে মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার জন্যই ৭ম নৌ বহরকে এই এলাকায় (চট্টগ্রামে) আনা হচ্ছে। এই যুক্তি মার্কিন জনসাধারণের কাছেও গ্রহনযোগ্য ছিল না। কারণ আমাদের যৌথ কমান্ড ১১ ডিসেম্বর থেকে বিমান হামলা সাময়িকভাবে স্থগিত রেখে ঢাকা বিমানবন্দর মেরামত করার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু মার্কিন নাগরিকদের এই সময় ঢাকা ত্যাগ করার কোন লণ দেখা যায়নি!
…নিয়াজী অবশ্য তখনো নিরাপদে ঢাকায় বসে হুংকার দিচ্ছিল: প্রতি ইঞ্চি জায়গার জন্য একটি প্রাণ বেঁচে থাকা পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবো।
…রাও ফরমান আলী কিন্তু ঠিকই বুঝেছিল, খেলা শেষ! অপারেশন জেনোসাইড এর অন্যতম কারিগর ঠিকই বুঝতে পেরেছিল, পরাজয় অবশ্যম্ভাবী! মুক্তিবাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাবার উদ্দেশ্যে ১১ ডিসেম্বর তিনি যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘ সদর দফতরে এক আবেদন জানান। ফরমান আলী এখানকার সকল পাকিস্তানীকে অপসারণের ব্যবস্তা করার অনুরোধও করেন।
…ইয়াহিয়ার তখনো আশা, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন তাঁকে উদ্ধার করতে নিশ্চয়ই এগিয়ে আসবে। নিয়াজীকে তিনি আরেকটু অপেক্ষা করার জন্য নির্দেশ দেন।
…চট্টগ্রাম সেক্টরে আমাদের (রফিক-উল-ইসলাম বীর উত্তম) সকল সৈন্য ৯ই ডিসেম্বর বিকেলের মধ্যে শুভপুর সেতু বরাবর ফেনী নদী পার হয়ে যায়। সামনে শত্রুরা কোথায় কি অবস্তায় আছে পর্যবেণের জন্য আমরা যথারীতি টহল দল আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। পাকিস্তানীরা মিরেশ্বরাই ছেড়ে যাচ্ছে বলে ১০ই ডিসেম্বর একজন গেরিলা বেস কমান্ডার আমাকে খবর দেন।
…আমি সাথে সাথেই মিরেশ্বরাই দখল করার জন্য একটি ব্যাটেলিয়ান পাঠিয়ে দেই।
…আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
…পথে এক বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, তোমরা জানো না, কিছুদিন আগে ঈদের সময় চাঁটগায়ে একটা লোকাল ট্রেন থামিয়ে ওরা সকল বাঙ্গালী যাত্রীকে খুন করেছে। প্রায় এক হাজার হবে। আমার মেয়ে, নাতী, নাতনী ওরাও ছিল- আর বলতে পারবো না
…তোমরা এগিয়ে যাও, তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাও।
…বঙ্গোপসাগরে ৭ম নৌবহরের অনুপ্রবেশে পরিস্তিতি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।
…তাই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা চট্টগ্রাম মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেই। সেই উদ্দেশ্যে ভারতের ২৩ ডিভিশনের ৮৩ ব্রিগেড লাকসাম থেকে দ্রুত যাত্রা শুরু করে এবং কুমিরার কাছে আমাদের সাথে যোগ দেয়। অন্যদিকে ভারতের বিমান বাহিনী ও ইস্টার্ন ফিট পাকিস্তানি অবস্তানগুলোর উপর অবিরাম বোমা বর্ষন করে চলছিলো।
…পোর্ট অচল করে দেয়ার জন্যই এই আক্রমণ চলছিল। পোর্টের চ্যানের প্রায় পুরোপুরি বন্ধ!
…মুক্তিযোদ্ধারা খবর নিয়ে এলো যে প্রচুর পাকিস্তানী অফিসার ও সৈন্য কক্সবাজার হয়ে স্থলপথে বার্মায় পালাবার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ আবার জাহাজে করে কেটে পড়বার চেষ্টা করছে। কয়েকটি পাকিস্তানী জাহাজেকে বিদেশী জাহাজের মতো রং লাগিয়ে এবং বিদেশী পতাকা উড়িয়ে ছদ্মবেশে পালাবার জন্য প্রস্তত রাখা হয়েছে।
…এই খবর মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের ইস্টার্ন ফিটকে পাঠালে ইস্টার্ন ফিট সতর্ক হয়ে যায়। ছদ্মবেশে পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি পাকিস্তানী জাহাজ ভীক্রান্ত এর গোলায় তিগ্রস্ত হয়। পাকিস্তানীদের তখন মনে হচ্ছিল পালিয়ে যায়া ইদুরের মতো!
(সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ/ দলিলপত্র: দশম খন্ড/ সশস্ত্র সংগ্রাম/ পৃষ্ঠা নং: ৪৮-৫১)
…নিয়াজী অবশ্য তখনো নিরাপদে ঢাকায় বসে হুংকার দিচ্ছিল: প্রতি ইঞ্চি জায়গার জন্য একটি প্রাণ বেঁচে থাকা পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবো।
…রাও ফরমান আলী কিন্তু ঠিকই বুঝেছিল, খেলা শেষ! অপারেশন জেনোসাইড এর অন্যতম কারিগর ঠিকই বুঝতে পেরেছিল, পরাজয় অবশ্যম্ভাবী! মুক্তিবাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাবার উদ্দেশ্যে ১১ ডিসেম্বর তিনি যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘ সদর দফতরে এক আবেদন জানান। ফরমান আলী এখানকার সকল পাকিস্তানীকে অপসারণের ব্যবস্তা করার অনুরোধও করেন।
…ইয়াহিয়ার তখনো আশা, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন তাঁকে উদ্ধার করতে নিশ্চয়ই এগিয়ে আসবে। নিয়াজীকে তিনি আরেকটু অপেক্ষা করার জন্য নির্দেশ দেন।
…চট্টগ্রাম সেক্টরে আমাদের (রফিক-উল-ইসলাম বীর উত্তম) সকল সৈন্য ৯ই ডিসেম্বর বিকেলের মধ্যে শুভপুর সেতু বরাবর ফেনী নদী পার হয়ে যায়। সামনে শত্রুরা কোথায় কি অবস্তায় আছে পর্যবেণের জন্য আমরা যথারীতি টহল দল আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। পাকিস্তানীরা মিরেশ্বরাই ছেড়ে যাচ্ছে বলে ১০ই ডিসেম্বর একজন গেরিলা বেস কমান্ডার আমাকে খবর দেন।
…আমি সাথে সাথেই মিরেশ্বরাই দখল করার জন্য একটি ব্যাটেলিয়ান পাঠিয়ে দেই।
…আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
…পথে এক বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, তোমরা জানো না, কিছুদিন আগে ঈদের সময় চাঁটগায়ে একটা লোকাল ট্রেন থামিয়ে ওরা সকল বাঙ্গালী যাত্রীকে খুন করেছে। প্রায় এক হাজার হবে। আমার মেয়ে, নাতী, নাতনী ওরাও ছিল- আর বলতে পারবো না
…তোমরা এগিয়ে যাও, তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাও।
…বঙ্গোপসাগরে ৭ম নৌবহরের অনুপ্রবেশে পরিস্তিতি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।
…তাই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা চট্টগ্রাম মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেই। সেই উদ্দেশ্যে ভারতের ২৩ ডিভিশনের ৮৩ ব্রিগেড লাকসাম থেকে দ্রুত যাত্রা শুরু করে এবং কুমিরার কাছে আমাদের সাথে যোগ দেয়। অন্যদিকে ভারতের বিমান বাহিনী ও ইস্টার্ন ফিট পাকিস্তানি অবস্তানগুলোর উপর অবিরাম বোমা বর্ষন করে চলছিলো।
…পোর্ট অচল করে দেয়ার জন্যই এই আক্রমণ চলছিল। পোর্টের চ্যানের প্রায় পুরোপুরি বন্ধ!
…মুক্তিযোদ্ধারা খবর নিয়ে এলো যে প্রচুর পাকিস্তানী অফিসার ও সৈন্য কক্সবাজার হয়ে স্থলপথে বার্মায় পালাবার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ আবার জাহাজে করে কেটে পড়বার চেষ্টা করছে। কয়েকটি পাকিস্তানী জাহাজেকে বিদেশী জাহাজের মতো রং লাগিয়ে এবং বিদেশী পতাকা উড়িয়ে ছদ্মবেশে পালাবার জন্য প্রস্তত রাখা হয়েছে।
…এই খবর মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের ইস্টার্ন ফিটকে পাঠালে ইস্টার্ন ফিট সতর্ক হয়ে যায়। ছদ্মবেশে পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি পাকিস্তানী জাহাজ ভীক্রান্ত এর গোলায় তিগ্রস্ত হয়। পাকিস্তানীদের তখন মনে হচ্ছিল পালিয়ে যায়া ইদুরের মতো!
(সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ/ দলিলপত্র: দশম খন্ড/ সশস্ত্র সংগ্রাম/ পৃষ্ঠা নং: ৪৮-৫১)
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
মুক্তিযুদ্ধে, তাহের- স্যালুট ম্যান
তখনকার পাকিস্তান আর্মির এক বিস্ময়কর কমান্ডো মেজর আবু তাহের। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে, তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
বাংলা একাডেমীর দলিলপত্রের সূত্রমতে, লেঃ কর্নেল (অবঃ) আবু তাহের বলেন: জুলাই মাসের ২৫ তারিখ বাংলাদেশের পথে ভারতে রওয়ানা হই। আমার সঙ্গে ছিলেন মেজর জিয়াউদ্দিন, ক্যাপ্টেন পাটোয়ারী, মেজর মঞ্ছুর ও তার স্ত্রী ছেলেমেয়ে এবং ব্যাটম্যান।
২৭শে জুলাই দিল্লী এবং আগস্ট মাসের মাসের প্রথম সপ্তাহে মুজিবনগর পৌঁছাই। আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এম, এ, জি ওসমানী আমাকে ১১ নং সেক্টরের দায়িত্ব দেন।
১৫ আগস্ট আমি মাত্র ১৫০জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সন্ধ্যার দিকে কামালপুরে পাক আর্মির শক্ত ঘাটি আক্রমণ করি। আমাদের অস্ত্র বলতে তখন ছিল কেবলমাত্র কয়েকটা এল এম জি, রাইফেল এবং কিছু স্টেনগান! যুদ্ধ চলে ২ ঘন্টা। আমাদের আক্রমণে পাক আর্মির ১৫/১৬ জন নিহত হয়, আর আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আহত হয় ১৫ জন।
১১ নং সেক্টরের কমান্ড এবং দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি লক্ষ করলাম, মুক্তিযোদ্ধারা বিশৃঙ্খল এবং বিপর্যস্ত , হতাশ। আমি দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের জন্য বাহিনীকে পুনর্গঠিত করা শুরু করলাম। সম্মুখসমর বাদ দিয়ে গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ চালাবার নির্দেশ দিলাম।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমার সেক্টরে প্রায় ২০ হাজারের মত মুক্তিযোদ্ধা কাজ করছিলেন। …এখানে একটি মুক্তিবাহিনী ট্রেনিং ক্যাম্প খুলি এবং ট্রেনিং দেয়া শুরু করি। নভেম্বর মাস পর্যন্ত সবার হাতে অস্ত্র না গেলেও ১০ হাজারের মতো মুক্তিযোদ্ধা প্রশিকক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
…আমার হেডকোয়ার্টারে কেবলমাত্র সাধারণ কৃষকদের নিয়ে আলাদা ট্রেনিং ক্যাম্প খুলি। এইসব সাধারণ কৃষক পরবর্তীতে যুদ্ধেক্ষেত্রে যে কোন সামরিক ট্রেইন্ড সৈনিকের চাইতেও বেশী দক্ষতা প্রদর্শন করেছিলেন। এর কারণ সম্ভবত এই জন্য- ওইসব অধিকাংশ কৃষক ছিলেন পাক আর্মির দ্বারা অত্যাচারিত। তাঁরা পুড়ছিলেন প্রতিহিংসার আগুনে।
…১৩ নভেম্বর, ৫টি কোম্পানী নিয়ে ভোর ৩টায় কামালপুরে আমাদের তীব্র আক্রমনে পাকসেনাদের ১ জন মেজরসহ ২টি কোম্পানী আমরা পুরাপুরি নিচিহৃ করে দেই।
আমরা জয়ের আনন্দে অধীর। তখন সকাল ৯টা। গুলির আঘাতে আমি গুরুতররূপে আহত হই। আমার ১টি পা নষ্ট হয়ে যায় ।
আমার অনুপস্থিতিতে স্কোয়াড্রন লীডার হামিদুল্লাহ সেক্টরের দায়িত্ব হাতে নেন।
(সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ১০ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৬৪০-৬৫৭)
*কর্নেল তাহের সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা যাবে এই সাইটে: http://www.col-taher.com/
**তাহেরকে নিয়ে আরও কিছু লেখা। কর্ণেল তাহের তোমাকে কি স্পর্শ করতে পারি: http://www.ali-mahmed.com/2009/01/blog-post_8805.html
বাংলা একাডেমীর দলিলপত্রের সূত্রমতে, লেঃ কর্নেল (অবঃ) আবু তাহের বলেন: জুলাই মাসের ২৫ তারিখ বাংলাদেশের পথে ভারতে রওয়ানা হই। আমার সঙ্গে ছিলেন মেজর জিয়াউদ্দিন, ক্যাপ্টেন পাটোয়ারী, মেজর মঞ্ছুর ও তার স্ত্রী ছেলেমেয়ে এবং ব্যাটম্যান।
২৭শে জুলাই দিল্লী এবং আগস্ট মাসের মাসের প্রথম সপ্তাহে মুজিবনগর পৌঁছাই। আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এম, এ, জি ওসমানী আমাকে ১১ নং সেক্টরের দায়িত্ব দেন।
১৫ আগস্ট আমি মাত্র ১৫০জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সন্ধ্যার দিকে কামালপুরে পাক আর্মির শক্ত ঘাটি আক্রমণ করি। আমাদের অস্ত্র বলতে তখন ছিল কেবলমাত্র কয়েকটা এল এম জি, রাইফেল এবং কিছু স্টেনগান! যুদ্ধ চলে ২ ঘন্টা। আমাদের আক্রমণে পাক আর্মির ১৫/১৬ জন নিহত হয়, আর আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আহত হয় ১৫ জন।
১১ নং সেক্টরের কমান্ড এবং দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি লক্ষ করলাম, মুক্তিযোদ্ধারা বিশৃঙ্খল এবং বিপর্যস্ত , হতাশ। আমি দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের জন্য বাহিনীকে পুনর্গঠিত করা শুরু করলাম। সম্মুখসমর বাদ দিয়ে গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ চালাবার নির্দেশ দিলাম।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমার সেক্টরে প্রায় ২০ হাজারের মত মুক্তিযোদ্ধা কাজ করছিলেন। …এখানে একটি মুক্তিবাহিনী ট্রেনিং ক্যাম্প খুলি এবং ট্রেনিং দেয়া শুরু করি। নভেম্বর মাস পর্যন্ত সবার হাতে অস্ত্র না গেলেও ১০ হাজারের মতো মুক্তিযোদ্ধা প্রশিকক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
…আমার হেডকোয়ার্টারে কেবলমাত্র সাধারণ কৃষকদের নিয়ে আলাদা ট্রেনিং ক্যাম্প খুলি। এইসব সাধারণ কৃষক পরবর্তীতে যুদ্ধেক্ষেত্রে যে কোন সামরিক ট্রেইন্ড সৈনিকের চাইতেও বেশী দক্ষতা প্রদর্শন করেছিলেন। এর কারণ সম্ভবত এই জন্য- ওইসব অধিকাংশ কৃষক ছিলেন পাক আর্মির দ্বারা অত্যাচারিত। তাঁরা পুড়ছিলেন প্রতিহিংসার আগুনে।
…১৩ নভেম্বর, ৫টি কোম্পানী নিয়ে ভোর ৩টায় কামালপুরে আমাদের তীব্র আক্রমনে পাকসেনাদের ১ জন মেজরসহ ২টি কোম্পানী আমরা পুরাপুরি নিচিহৃ করে দেই।
আমরা জয়ের আনন্দে অধীর। তখন সকাল ৯টা। গুলির আঘাতে আমি গুরুতররূপে আহত হই। আমার ১টি পা নষ্ট হয়ে যায় ।
আমার অনুপস্থিতিতে স্কোয়াড্রন লীডার হামিদুল্লাহ সেক্টরের দায়িত্ব হাতে নেন।
(সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ১০ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৬৪০-৬৫৭)
*কর্নেল তাহের সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা যাবে এই সাইটে: http://www.col-taher.com/
**তাহেরকে নিয়ে আরও কিছু লেখা। কর্ণেল তাহের তোমাকে কি স্পর্শ করতে পারি: http://www.ali-mahmed.com/2009/01/blog-post_8805.html
বিভাগ
কর্নেল তাহের
৭১ এ হত্যা, চীফ কর্নেল রহমান
ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ। চীফ কর্নেল মনজুরুর রহমান। এই কলেজের অসম্ভব প্রিয় একটি মুখ।
যুদ্ধের সময় ক্যাডেট কলেজ থেকে সবাই পালিয়ে যান কিন্তু কর্নেল রহমান কয়েকজনের সঙ্গে থেকে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার পাশাপাশি তিল তিল করে গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যেতে তাঁর মন সায় দিচ্ছিল না।
পাক আর্মি ঘিরে ফেলে একদিন এই কলেজ। নেতৃত্ব দিচ্ছিল ১২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন ইকবাল। সঙ্গে ঝিনাইদহের অল্প কয়েকজন স্থানীয় মানুষ। টমেটো নামের একজন মিথ্যা অভিযোগ করে, কর্নেল রহমান তার পরিবারের লোকজনকে মেরে ফেলেছেন।
পাক আর্মিরা একেক করে মারা শুরু করে।
পাক আর্মির ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কর্নেল রহমানের কথা কাটাকাটি হয়। কর্নেল রহমান বলেন, 'আমি একজন সামরিক অফিসার। আমাকে এভাবে মারা অন্যায়। আমার অপরাধের বিচার একমাত্র সামরিক আদালতেই হতে পারে। একজন আর্মি কর্নেল একজন ক্যাপ্টেনের কাছে যে আচরণ পেতে পারে- আমাকে সেটা দেয়া হচ্ছে না কেন'?
কর্নেল রহমানের কোন যুক্তিই এদেরকে প্রভাবিত করলো না। কর্নেল রহমান মৃত্যুর জন্য প্রস্তত হলেন। হাত থেকে খুলে দিলেন ঘড়ি, পকেট থেকে বের করে দিলেন কলেজের চাবি, যা ছিল তাঁর কাছে। একজন সিপাই তাঁর ঘড়ি উঠিয়ে নিজের হাতে দিয়ে দেখলো কেমন মানাচ্ছে তাকে আর হ্যা হ্যা করে হাসতে থাকলো।
কর্নেল রহমান প্রাণ ভিক্ষা চাইতে রাজী হলেন না। শুধু ৫ মিনিট সময় চাইলেন।
ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন নিজ হাতে লাগানো গোলাপ গাছটার দিকে। হাঁটু গেড়ে বসলেন। কি যেন বিড়বিড় করে বলছিলেন। দূর থেকে শুধু ঠোঁট নড়া দেখা গেল। তারপর হাত তুলে মোনাজাত করলেন। মোনাজাত শেষ করে বললেন, আয়্যাম রেডী, তাকিয়ে রইলেন ক্যাপ্টেনের চোখে চোখ রেখে।
ক্যাপ্টেন ইকবাল পরপর ৩টা গুলি করলো।
লুটিয়ে পড়লেন কর্নেল রহমান। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে প্রায় শোনা যায় না একটা স্বর শোনা গিয়েছিল, 'মা আয়েশা, তোকে দেখে যেতে পারলাম না'।
(সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, অষ্টম খন্ড, পৃষ্টা: ৬০৫-৬০৮)
যুদ্ধের সময় ক্যাডেট কলেজ থেকে সবাই পালিয়ে যান কিন্তু কর্নেল রহমান কয়েকজনের সঙ্গে থেকে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার পাশাপাশি তিল তিল করে গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যেতে তাঁর মন সায় দিচ্ছিল না।
পাক আর্মি ঘিরে ফেলে একদিন এই কলেজ। নেতৃত্ব দিচ্ছিল ১২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন ইকবাল। সঙ্গে ঝিনাইদহের অল্প কয়েকজন স্থানীয় মানুষ। টমেটো নামের একজন মিথ্যা অভিযোগ করে, কর্নেল রহমান তার পরিবারের লোকজনকে মেরে ফেলেছেন।
পাক আর্মিরা একেক করে মারা শুরু করে।
পাক আর্মির ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কর্নেল রহমানের কথা কাটাকাটি হয়। কর্নেল রহমান বলেন, 'আমি একজন সামরিক অফিসার। আমাকে এভাবে মারা অন্যায়। আমার অপরাধের বিচার একমাত্র সামরিক আদালতেই হতে পারে। একজন আর্মি কর্নেল একজন ক্যাপ্টেনের কাছে যে আচরণ পেতে পারে- আমাকে সেটা দেয়া হচ্ছে না কেন'?
কর্নেল রহমানের কোন যুক্তিই এদেরকে প্রভাবিত করলো না। কর্নেল রহমান মৃত্যুর জন্য প্রস্তত হলেন। হাত থেকে খুলে দিলেন ঘড়ি, পকেট থেকে বের করে দিলেন কলেজের চাবি, যা ছিল তাঁর কাছে। একজন সিপাই তাঁর ঘড়ি উঠিয়ে নিজের হাতে দিয়ে দেখলো কেমন মানাচ্ছে তাকে আর হ্যা হ্যা করে হাসতে থাকলো।
কর্নেল রহমান প্রাণ ভিক্ষা চাইতে রাজী হলেন না। শুধু ৫ মিনিট সময় চাইলেন।
ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন নিজ হাতে লাগানো গোলাপ গাছটার দিকে। হাঁটু গেড়ে বসলেন। কি যেন বিড়বিড় করে বলছিলেন। দূর থেকে শুধু ঠোঁট নড়া দেখা গেল। তারপর হাত তুলে মোনাজাত করলেন। মোনাজাত শেষ করে বললেন, আয়্যাম রেডী, তাকিয়ে রইলেন ক্যাপ্টেনের চোখে চোখ রেখে।
ক্যাপ্টেন ইকবাল পরপর ৩টা গুলি করলো।
লুটিয়ে পড়লেন কর্নেল রহমান। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে প্রায় শোনা যায় না একটা স্বর শোনা গিয়েছিল, 'মা আয়েশা, তোকে দেখে যেতে পারলাম না'।
(সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, অষ্টম খন্ড, পৃষ্টা: ৬০৫-৬০৮)
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
সাকা চৌ, রাজকোষে কত টাকা দিলেন?
আমাদের দেশের মহান একজন মানুষ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তার মেয়ের বিবাহ দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ- ফরয কাজ!
তথ্যমতে, তিনি মেয়ের বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানে ৮ লাখ দাওয়াতীকে খাইয়েছেন! বেশ, ৮ লাখ কেন, তিনি যদি ১৪ কোটি মানুষকেও দাওয়াত করে খাওয়ান, কার কি বলার আছে! মেয়ে ওনার, টাকা ওনার- আমরা বলার কে?
ভারী দিলখোলা মানুষ! নিজের আপন ভাইরা বিয়েতে উপস্তিত ছিলেন না। যাযাদিনে, সাকা চৌ নির্বিকার ভঙ্গিতে, লাখ লাখ দাওয়াতিদের দেখিয়ে বললেন, 'আমার কয়েকজন ভাই আসে নাই তো কি হয়েছে? এই যে লাখ লাখ ভাই এসেছে- এরাই তো আমাকে কফিন কাঁধে করে কবরে নিয়ে যাবে'! বেশ-বেশ!
সব তথ্যই আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জেনে মুগ্ধ হচ্ছি। কিন্তু আমি প্রয়োজনীয় একটা তথ্য খুঁজে পাচ্ছি না। সেটা হচ্ছে: বাংলাদেশে অতিথি নিয়ন্ত্রণ আইন নামে একটা আইন চালু আছে। আমার জানামতে, এই আইন এখনো বহাল আছে, বাতিল করা হয়েছে বলে তো শুনিনি! অতিথি নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ১০০ জনের বেশী অতিথিকে দাওয়াত দিলে, প্রত্যেক অতিথির জন্য নির্দিষ্ট অংকের ফী সরকারী কোষাগারে জমা দিতে হয়। ফীর অংকটা সম্ভবত, প্রতি জনের জন্য ১০ টাকা করে।
ওই হিসাবে মহান সাকা চৌধুরীর ৮০ লাখ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হওয়ার কথা! হয়েছে কি? সাকাচৌ এই দেশের জন্য বাজে একটা উদাহরণ সৃষ্টি করলেন।
তথ্যমতে, তিনি মেয়ের বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানে ৮ লাখ দাওয়াতীকে খাইয়েছেন! বেশ, ৮ লাখ কেন, তিনি যদি ১৪ কোটি মানুষকেও দাওয়াত করে খাওয়ান, কার কি বলার আছে! মেয়ে ওনার, টাকা ওনার- আমরা বলার কে?
ভারী দিলখোলা মানুষ! নিজের আপন ভাইরা বিয়েতে উপস্তিত ছিলেন না। যাযাদিনে, সাকা চৌ নির্বিকার ভঙ্গিতে, লাখ লাখ দাওয়াতিদের দেখিয়ে বললেন, 'আমার কয়েকজন ভাই আসে নাই তো কি হয়েছে? এই যে লাখ লাখ ভাই এসেছে- এরাই তো আমাকে কফিন কাঁধে করে কবরে নিয়ে যাবে'! বেশ-বেশ!
সব তথ্যই আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জেনে মুগ্ধ হচ্ছি। কিন্তু আমি প্রয়োজনীয় একটা তথ্য খুঁজে পাচ্ছি না। সেটা হচ্ছে: বাংলাদেশে অতিথি নিয়ন্ত্রণ আইন নামে একটা আইন চালু আছে। আমার জানামতে, এই আইন এখনো বহাল আছে, বাতিল করা হয়েছে বলে তো শুনিনি! অতিথি নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ১০০ জনের বেশী অতিথিকে দাওয়াত দিলে, প্রত্যেক অতিথির জন্য নির্দিষ্ট অংকের ফী সরকারী কোষাগারে জমা দিতে হয়। ফীর অংকটা সম্ভবত, প্রতি জনের জন্য ১০ টাকা করে।
ওই হিসাবে মহান সাকা চৌধুরীর ৮০ লাখ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হওয়ার কথা! হয়েছে কি? সাকাচৌ এই দেশের জন্য বাজে একটা উদাহরণ সৃষ্টি করলেন।
বিভাগ
নিজস্ব ভাবনা
সবই পণ্য, বিক্রির জন্য
আলকাতরা থেকে উড়োজাহাজ- মায় তথ্য, সবই আসলে পন্য, বিক্রির জন্য।
আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, কে কিভাবে বিক্রি করেন, তার উপর! যিনি যতো ভালভাবে সুগার কোটেড মোড়কে মুড়িয়ে, চকচকে করে বিক্রি করতে পারেন- তিনি ততোটাই সফল! তাঁর গুনগানের শেষ নেই! কে মরলো কে বাঁচলো, কে বিরক্ত হলো, তাতে কি আসে যায়!
হকারকে দেখেছি, বাস, রেলগাড়ীতে কান পাকার ওষুধ বিক্রি করতে সবাইকে চরম বিরক্ত করে- কিছু বললে বলে, ভাত খামু কি আপনের ঘরে গিয়া! হক কথা!
কে জানে, কোন একদিন, কেউ হয়তো বিচিত্র কায়দা কানুন করে, নরকে যাওয়ার টিকেট বিক্রি করবেন। পাবলিক হাসিমুখে দেদারসে কিনবে। বেহেশত যাওয়ার টিকেট বিক্রি তো অলরেডি অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে!! পাক্কা মুসলিমরা (তাঁদের দাবী মোতাবেক) দেদারসে বিক্রি করছেন, বাদামের খোসার মতো!
১০.০৯.০৬ যায় যায় দিন প্রথম পাতায় বিপুলায়তনে ৬ কন্যার ছবি ছাপে- তিন কন্যার দাঁতসহ, দুই কন্যার দাঁতছাড়া (স্মর্তব্য: আমি ছবির কথা বলছি)! ক্যাপসনে অবশ্য বলা হয়েছে ৬ জন কিন্ত ছবিতে ৫জনের চেহারা মোবারক দেখা যাচ্ছে। একজন মিসিং- ওই কন্যা অদৃশ্য মানবী হয়তো বা! মিসিং ওই কন্যার দাঁত আছে কিনা এটা অবশ্য বোঝা গেল না!
এই কন্যারা দারুচিনি দ্বীপে চারুচিনির বানিজ্য করবে- এই সিনেমার নায়িকা হবে। তা করুক, বানিজ্য ভাল জিনিস। স্টার হতে হতে ম্যাগা স্টার হয়ে যাক! এখানেই শেষ না, এই ৬ কন্যার মধ্যে থেকে মাত্র একজন নির্বাচিত হবে। কে হবেন এটা আপাতত রহস্য!
ব্রাভো ব্রাভো! জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় এমন পৃথুল আকৃতির ছবি, এমন জাতীয় সংকটের ছবি না এসে উপায় কি!
আমরা নির্বোধ পাঠকরা কেন যে বুঝতে চাই না, প্রথম পাতায় জায়গা কী অপ্রতুল! মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ মিয়া না খেতে পেয়ে দড়িতে ঝুলে পড়বে- বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের খালি বাক্স দেশে আসবে, এগুলো ভেতরের পাতায় ছোট করে অদৃশ্য অদৃশ্য ভঙ্গিতে না ছাপিয়ে উপায় নেই? ওখানে জায়গার সমস্যা হলে, না হয়, এন্টারটেইনমেন্ট পাতা বরাদ্দ থাকবে এইসব ছাইপাশ খবর ছাপাবার জন্য।
এক দফা এক দাবী- যে দিন ৬ কন্যার ১ কন্যা নির্বাচিত হবে, সেই দিন প্রথম পাতায় পুরোটা জুড়ে তার ছবি ছাপতে হবে। প্রথম পাতায় আর কোন খবর থাকবে না, এই দাবী করা কি খুব অন্যায় একটি জাতীয় দৈনিকের (দাবীমতে) কাছে ?
আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, কে কিভাবে বিক্রি করেন, তার উপর! যিনি যতো ভালভাবে সুগার কোটেড মোড়কে মুড়িয়ে, চকচকে করে বিক্রি করতে পারেন- তিনি ততোটাই সফল! তাঁর গুনগানের শেষ নেই! কে মরলো কে বাঁচলো, কে বিরক্ত হলো, তাতে কি আসে যায়!
হকারকে দেখেছি, বাস, রেলগাড়ীতে কান পাকার ওষুধ বিক্রি করতে সবাইকে চরম বিরক্ত করে- কিছু বললে বলে, ভাত খামু কি আপনের ঘরে গিয়া! হক কথা!
কে জানে, কোন একদিন, কেউ হয়তো বিচিত্র কায়দা কানুন করে, নরকে যাওয়ার টিকেট বিক্রি করবেন। পাবলিক হাসিমুখে দেদারসে কিনবে। বেহেশত যাওয়ার টিকেট বিক্রি তো অলরেডি অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে!! পাক্কা মুসলিমরা (তাঁদের দাবী মোতাবেক) দেদারসে বিক্রি করছেন, বাদামের খোসার মতো!
১০.০৯.০৬ যায় যায় দিন প্রথম পাতায় বিপুলায়তনে ৬ কন্যার ছবি ছাপে- তিন কন্যার দাঁতসহ, দুই কন্যার দাঁতছাড়া (স্মর্তব্য: আমি ছবির কথা বলছি)! ক্যাপসনে অবশ্য বলা হয়েছে ৬ জন কিন্ত ছবিতে ৫জনের চেহারা মোবারক দেখা যাচ্ছে। একজন মিসিং- ওই কন্যা অদৃশ্য মানবী হয়তো বা! মিসিং ওই কন্যার দাঁত আছে কিনা এটা অবশ্য বোঝা গেল না!
এই কন্যারা দারুচিনি দ্বীপে চারুচিনির বানিজ্য করবে- এই সিনেমার নায়িকা হবে। তা করুক, বানিজ্য ভাল জিনিস। স্টার হতে হতে ম্যাগা স্টার হয়ে যাক! এখানেই শেষ না, এই ৬ কন্যার মধ্যে থেকে মাত্র একজন নির্বাচিত হবে। কে হবেন এটা আপাতত রহস্য!
ব্রাভো ব্রাভো! জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় এমন পৃথুল আকৃতির ছবি, এমন জাতীয় সংকটের ছবি না এসে উপায় কি!
আমরা নির্বোধ পাঠকরা কেন যে বুঝতে চাই না, প্রথম পাতায় জায়গা কী অপ্রতুল! মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ মিয়া না খেতে পেয়ে দড়িতে ঝুলে পড়বে- বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের খালি বাক্স দেশে আসবে, এগুলো ভেতরের পাতায় ছোট করে অদৃশ্য অদৃশ্য ভঙ্গিতে না ছাপিয়ে উপায় নেই? ওখানে জায়গার সমস্যা হলে, না হয়, এন্টারটেইনমেন্ট পাতা বরাদ্দ থাকবে এইসব ছাইপাশ খবর ছাপাবার জন্য।
এক দফা এক দাবী- যে দিন ৬ কন্যার ১ কন্যা নির্বাচিত হবে, সেই দিন প্রথম পাতায় পুরোটা জুড়ে তার ছবি ছাপতে হবে। প্রথম পাতায় আর কোন খবর থাকবে না, এই দাবী করা কি খুব অন্যায় একটি জাতীয় দৈনিকের (দাবীমতে) কাছে ?
বিভাগ
নিজস্ব ভাবনা
সব যুদ্ধ স্টেনগান দিয়ে হয় না!
মুক্তিযুদ্ধের তেমন বিশেষ ছবি আমাদের নাই!
ওই সময় আধুনিক তো দূর অস্ত - ক্যামেরাই বা আমাদের দেশের কয়জনের কাছে ছিল! নাইব উদ্দিন আহমেদ। যে অল্প ক-জন মানুষ সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দূর্লভ কিছু ছবি আমাদের উপহার দিয়েছেন তাঁদের একজন!
একজন মুক্তিপাগল মানুষের সবটুকু শক্তি নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন, সামান্য একটা ক্যামেরা নিয়ে! স্টেনগানের চেয়েও ঝলসে উঠেছে তাঁর হাতের ক্যামেরা!
একাত্তরের সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে তিনি পাক আর্মি এবং এ দেশে তাদের সহযোগী রেজাকার, আল বদর, আল শামসদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বর্হিবিশ্বে পাঠিয়েছেন তাঁর দূর্লভ ছবিগুলো। সমস্ত পৃথিবীর মানুষ জানতে পেরেছে পাক আর্মির নৃশংসতা, বর্বরতা! গঠিত হয়েছে জনমত, বেড়েছে আন্তর্জাতিক ধিক্কার! সব বিশ্ববিদ্যালয় তখন পাক আর্মির টর্চার ক্যাম্প।
একদিন নাইব উদ্দিন আহমেদকে আটকানো হয়। ফটোগ্রাফারের পরিচয়পত্র দেখে পাক আর্মির মেজর কাইয়ুম নাইব উদ্দিনকে বললেন, তুমি কি ক্যামেরা ঠিক করতে পারো, আমার ক্যামেরাটায় সমস্যা হচ্ছে?
নাইবউদ্দিন ক্যামেরাটা দেখেই বুঝলেন, ক্যামেরা ঠিক আছে। শুধু লক করা অবস্থায় আছে, লকটা খুলে দিলেই হয়ে যাবে। ক্যামেরার লক ওপেন করে দেখলেন, আসলেই ঠিক আছে এবং ক্যামেরায় ফিল্ম ভরা। এ সময় তিনি দেখতে পেলেন, এখানে কিছু লোককে বেঁধে রাখা হয়েছে। খুঁটির সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় এলিয়ে পড়ে আছে একজন ধর্ষিতা। কাছেই কিছু বাড়ি পুড়ছে দাউ দাউ করে।
তিনি ক্যামেরা ঠিক করার ছলে, খুব দ্রুত কিছু ছবি তুলে নিলেন পাক মেজরের ক্যামেরা দিয়েই! তারপর আবার লক করে মেজরের হাতে ক্যামেরা ফেরত দিয়ে বললেন, এখানে তো ঠিক করা সম্ভব না, ময়মনসিংহে তার অফিসে আসলে ক্যামেরা ঠিক হয়ে যাবে। পরদিন মেজর নাইব উদ্দিনের অফিসে এলে, নতুন একটা ফিল্ম কিনে আগের ফিল্মটা মিছে ছল করে রেখে দিলেন।
সেই দূর্লভ ছবির অনেকগুলো মুক্তিযুদ্ধের ১৬ খন্ডে ছাপা হয়! একাত্তরের সেপ্টেম্বর মাসে নাইব উদ্দিন খবর পেলেন ধর্ষিতা এক তরুণী ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে রয়েছে। কিন্তু ডাক্তাররা তাঁর পরিচয় জানালে চাচ্ছিল না!
খেয়াল করলেন, ওয়ার্ডের এক কোনে এক তরুণী বুক ফাটা শব্দ করছে, আধ জবাই পশুর মতো। হাত দিয়ে মাথার চুল ছিঁড়ছে। কোন হুঁশ নেই। বদ্ধ পাগল। নাইবউদ্দিন বুঝতে পারলেন, এই সেই তরুণী!
ওই অবস্থায় তিনি সেই তরুণীর কিছু ছবি তুললেন। তখন তরুণীটির অমানুষিক, জান্তব চিত্কারে নাইব উদ্দিনের মাথা খারাপের মতো হয়ে গিয়েছিল, তাঁর হাত থেকে ক্যামেরা পড়ে গিয়েছিল। তিনি সেই জ্বলন্ত চোখের কথা ভুলতে পারছিলেন না! অন্যরা ছবি তুলতে নিষেধ করছিল কিন্তু সেই কুমারী তরুণীটির মা ছবি তোলার জন্য বলেন এবং নাইব উদ্দিনের হাত ধরে বলেছিলেন, বাবা, ওর ছবি তুলে বিদেশে পাঠাও। সবাই দেখুক পাকিস্তানীরা আমাদের উপর কী অত্যাচার করছে!
নাইব উদ্দিন সে রাতে ঘুমাতে পারেননি। সেই জ্বলন্ত চোখ, সেই অপার্থিব দৃশ্য! তাঁর এক পর্যায়ে হার্ট এ্যাটাক হয়ে গেল। পরেরদিন তিনি চিকিত্সার জন্য ইসলামাবাদ চলে যান। সঙ্গে নিয়ে যান তাঁর তোলা ছবিগুলো!
*পাক আর্মিরা যে কোরআন শরীফ পুড়িয়েছিল এ ছবিও তিনি তুলেছিলেন। কিন্তু এখন ছবিটা আমি খুজেঁ পাচ্ছি না।
**এখানে জনাব, নাইব উদ্দিন আহমেদের ২টা ছবি দেয়া হলো।
***নাইব উদ্দিন আহমেদের এই সাক্ষাত্কারটি নিয়েছিলেন: আনন্দ রোজারিও/ ভোরের কাগজ, ১৫.১২.৯৩
ওই সময় আধুনিক তো দূর অস্ত - ক্যামেরাই বা আমাদের দেশের কয়জনের কাছে ছিল! নাইব উদ্দিন আহমেদ। যে অল্প ক-জন মানুষ সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দূর্লভ কিছু ছবি আমাদের উপহার দিয়েছেন তাঁদের একজন!
একজন মুক্তিপাগল মানুষের সবটুকু শক্তি নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন, সামান্য একটা ক্যামেরা নিয়ে! স্টেনগানের চেয়েও ঝলসে উঠেছে তাঁর হাতের ক্যামেরা!
একাত্তরের সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে তিনি পাক আর্মি এবং এ দেশে তাদের সহযোগী রেজাকার, আল বদর, আল শামসদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বর্হিবিশ্বে পাঠিয়েছেন তাঁর দূর্লভ ছবিগুলো। সমস্ত পৃথিবীর মানুষ জানতে পেরেছে পাক আর্মির নৃশংসতা, বর্বরতা! গঠিত হয়েছে জনমত, বেড়েছে আন্তর্জাতিক ধিক্কার! সব বিশ্ববিদ্যালয় তখন পাক আর্মির টর্চার ক্যাম্প।
একদিন নাইব উদ্দিন আহমেদকে আটকানো হয়। ফটোগ্রাফারের পরিচয়পত্র দেখে পাক আর্মির মেজর কাইয়ুম নাইব উদ্দিনকে বললেন, তুমি কি ক্যামেরা ঠিক করতে পারো, আমার ক্যামেরাটায় সমস্যা হচ্ছে?
নাইবউদ্দিন ক্যামেরাটা দেখেই বুঝলেন, ক্যামেরা ঠিক আছে। শুধু লক করা অবস্থায় আছে, লকটা খুলে দিলেই হয়ে যাবে। ক্যামেরার লক ওপেন করে দেখলেন, আসলেই ঠিক আছে এবং ক্যামেরায় ফিল্ম ভরা। এ সময় তিনি দেখতে পেলেন, এখানে কিছু লোককে বেঁধে রাখা হয়েছে। খুঁটির সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় এলিয়ে পড়ে আছে একজন ধর্ষিতা। কাছেই কিছু বাড়ি পুড়ছে দাউ দাউ করে।
তিনি ক্যামেরা ঠিক করার ছলে, খুব দ্রুত কিছু ছবি তুলে নিলেন পাক মেজরের ক্যামেরা দিয়েই! তারপর আবার লক করে মেজরের হাতে ক্যামেরা ফেরত দিয়ে বললেন, এখানে তো ঠিক করা সম্ভব না, ময়মনসিংহে তার অফিসে আসলে ক্যামেরা ঠিক হয়ে যাবে। পরদিন মেজর নাইব উদ্দিনের অফিসে এলে, নতুন একটা ফিল্ম কিনে আগের ফিল্মটা মিছে ছল করে রেখে দিলেন।
সেই দূর্লভ ছবির অনেকগুলো মুক্তিযুদ্ধের ১৬ খন্ডে ছাপা হয়! একাত্তরের সেপ্টেম্বর মাসে নাইব উদ্দিন খবর পেলেন ধর্ষিতা এক তরুণী ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে রয়েছে। কিন্তু ডাক্তাররা তাঁর পরিচয় জানালে চাচ্ছিল না!
খেয়াল করলেন, ওয়ার্ডের এক কোনে এক তরুণী বুক ফাটা শব্দ করছে, আধ জবাই পশুর মতো। হাত দিয়ে মাথার চুল ছিঁড়ছে। কোন হুঁশ নেই। বদ্ধ পাগল। নাইবউদ্দিন বুঝতে পারলেন, এই সেই তরুণী!
ওই অবস্থায় তিনি সেই তরুণীর কিছু ছবি তুললেন। তখন তরুণীটির অমানুষিক, জান্তব চিত্কারে নাইব উদ্দিনের মাথা খারাপের মতো হয়ে গিয়েছিল, তাঁর হাত থেকে ক্যামেরা পড়ে গিয়েছিল। তিনি সেই জ্বলন্ত চোখের কথা ভুলতে পারছিলেন না! অন্যরা ছবি তুলতে নিষেধ করছিল কিন্তু সেই কুমারী তরুণীটির মা ছবি তোলার জন্য বলেন এবং নাইব উদ্দিনের হাত ধরে বলেছিলেন, বাবা, ওর ছবি তুলে বিদেশে পাঠাও। সবাই দেখুক পাকিস্তানীরা আমাদের উপর কী অত্যাচার করছে!
নাইব উদ্দিন সে রাতে ঘুমাতে পারেননি। সেই জ্বলন্ত চোখ, সেই অপার্থিব দৃশ্য! তাঁর এক পর্যায়ে হার্ট এ্যাটাক হয়ে গেল। পরেরদিন তিনি চিকিত্সার জন্য ইসলামাবাদ চলে যান। সঙ্গে নিয়ে যান তাঁর তোলা ছবিগুলো!
*পাক আর্মিরা যে কোরআন শরীফ পুড়িয়েছিল এ ছবিও তিনি তুলেছিলেন। কিন্তু এখন ছবিটা আমি খুজেঁ পাচ্ছি না।
**এখানে জনাব, নাইব উদ্দিন আহমেদের ২টা ছবি দেয়া হলো।
***নাইব উদ্দিন আহমেদের এই সাক্ষাত্কারটি নিয়েছিলেন: আনন্দ রোজারিও/ ভোরের কাগজ, ১৫.১২.৯৩
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
অপারেশন জ্যাকপট
…আমার ক্যাম্পে আগত অফিসার বললেন, আমি কয়েকজন নিপুন সাতারু বাছাই করতে চাই, তাদেরকে তরুণ এবং ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। (পাক সৈন্যদের) নৌ পথে সৈন্য অন্যান্য সমর সরঞ্জাম পরিবহনের ব্যবস্থা বানচাল করা এবং নৌযানগুলে কে ধ্বংস করা।
অভিযানের সাংকেতিক নাম দেয়া হয় অপারেশন জ্যাকপট!
…২৮ জুলাই আমি ডেল্টা সেক্টরের কমান্ডিং অফিসার ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সাবেগ সিং এর সঙ্গে বসে চুড়ান্ত পরিকল্পনা তৈরী করছিলাম।
…চট্টগ্রাম বন্দর ও কর্নফুলি নদীর ম্যাপ ও চার্ট পর্যালোচনা করি। চন্দ্রতিথি, আবহাওয়ার অবস্থা, জোয়ার ভাটার সময় বাতাসের গতি প্রকৃতি, স্রোতের গতি এবং আরো অসংখ্য তথ্য আমাদের আলোচনায় প্রাধান্য লাভ করে।
…অপারেশনে আমাদের নৌ মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় কোন ধরনের সমস্যার মোকাবেলা করবে অখবা পাক আর্মীদের অবস্থান ইত্যাদি। ১০ আগস্ট অপারেশন জ্যাকপট শুরু হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ৬০ জন তরুণকে তিন ভাগে ভাগ করি। তিনটি গ্রুপেই সার্বিক কমান্ডে থাকবেন একজন কমান্ডার। তাদের সকলের কাছে থাকবে লিমপেট মাইন, এক জোড়া ফিন (সাতারের সময় পায়ে লাগানো হয়) এবং শুকনো খাবার। প্রতি তিনজনের কাছে থাকবে একটা করে স্টেনগান। গ্রুপ কমান্ডারকে দেয়া হলো হালকা অথচ শক্তিশালী ট্রানজিস্টার।
…তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, অল ইন্ডিয়া রেডিও কলকাতা কেন্দ্র থেকে প্রতিটি সঙ্গীত অনুষ্ঠান শুনতে হবে খুব মন দিয়ে। ওই সঙ্গীত অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই জানানো হবে কখন অপারেশন শুরু করতে হবে!
…১৩ আগস্ট কলকাতা রেডিও থেকে প্রচারিত হলো বাংলা গান আমার পুতুর আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ী। এই গানটির মাধ্যমেই কমান্ডার প্রথম সংকেত লাভ করেন। তিনি জানেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে দ্বিতীয় গান প্রচারিত হবে, ওই গান শোনার সঙ্গে সঙ্গে ট্রানজিস্টার ফেলে দিতে হবে, শুরু হয়ে যাবে অপারেশন জ্যাকপট!
…১৪ আগস্ট প্রচারিত হলো, দ্বিতীয় গান, আমি তোমায় যতো শুনিয়েছিলাম গান, তার বদলে চাইনি কোন দান। শুরু হয়ে গেল অপারেশন জ্যাকপট! গেঁয়ো পোশাক পরা একদল লোক ফলমুল মাছ, শব্জীর ঝুড়ি নিয়ে ফেরী নৌকায় উঠলো। পাক আর্মিও সন্দেহও করতে পারেনি, ওইসব ঝুড়ির নীচে আছে লিমপেট মাইন, ফিন, স্টেনগান!
…কিন্তু দূর্ভাগ্য, এই দলের অভিযান একদিন পিছিয়ে গেল- ৩ নং গ্রুপ ছাড়া সকলেই রাতের মধ্যেই চরলায় পৌঁছে গিয়েছিল। জেটিতে নোংগর করা পাক আর্মিদের এমভি আব্বাসে আছে ১০৪১০ টন সামরিক সরঞ্জাম। এমভি হরমুজ এ আছে ৯৯১০ টন সামরিক সরজ্ঞাম। …মাথাটা পানির উপর রেখে আমাদের ছেলেরা পৌঁছে গেছে। তারা পাক আর্মির জাহাজগুলোতে লিমপেট মাইন লাগিয়ে দিয়েই নিঃশব্দে নদীর ভাটিতে ভেসে যায়।
…রাত ১টা ৪০ মিনিট। কান ফাটানো আওযাজে বন্দর নগরী কেঁপে ওঠে।
…১টা ৪৫। আরেকটি বিস্ফোরণ। তারপর তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম। একটির পর একটি বিস্ফোরনে চট্টগ্রাম তখন থরথর করে কাঁপছে।
…পাক আর্মির আল আব্বাস, হরমুজ দ্রুত ডুবতে থাকে! আশেপাশের জাহাজগুলো প্রচন্ড রকম তিগ্রস্থ হয়। একদিকে যেমন শত্রুর বিপুল সম্পত্তির, সমরাস্ত্রের ক্ষতি হয় তেমনি পাক আর্মিদের মিথ্যা দম্ভ এবং অহংকার, অহমিকা হয় চুর্ণ!
(একাত্তরের মার্চে রফিক-উল-ইসলাম সাবেক ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্র্টার, চট্টগ্রামে ক্যাপ্টেন পদে সেক্টর এ্যাডজুটেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।)
সূত্র: বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ (১০ম খন্ড)। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে-মেজর (অবঃ)রফিক-উল ইসলাম, বীর উত্তম।
*আফসোস, এইসব দুর্ধর্ষ নৌকমান্ডোদের প্রতি সুবিচার, যথার্থ সম্মান দেয়া হয়নি।
অভিযানের সাংকেতিক নাম দেয়া হয় অপারেশন জ্যাকপট!
…২৮ জুলাই আমি ডেল্টা সেক্টরের কমান্ডিং অফিসার ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সাবেগ সিং এর সঙ্গে বসে চুড়ান্ত পরিকল্পনা তৈরী করছিলাম।
…চট্টগ্রাম বন্দর ও কর্নফুলি নদীর ম্যাপ ও চার্ট পর্যালোচনা করি। চন্দ্রতিথি, আবহাওয়ার অবস্থা, জোয়ার ভাটার সময় বাতাসের গতি প্রকৃতি, স্রোতের গতি এবং আরো অসংখ্য তথ্য আমাদের আলোচনায় প্রাধান্য লাভ করে।
…অপারেশনে আমাদের নৌ মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় কোন ধরনের সমস্যার মোকাবেলা করবে অখবা পাক আর্মীদের অবস্থান ইত্যাদি। ১০ আগস্ট অপারেশন জ্যাকপট শুরু হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ৬০ জন তরুণকে তিন ভাগে ভাগ করি। তিনটি গ্রুপেই সার্বিক কমান্ডে থাকবেন একজন কমান্ডার। তাদের সকলের কাছে থাকবে লিমপেট মাইন, এক জোড়া ফিন (সাতারের সময় পায়ে লাগানো হয়) এবং শুকনো খাবার। প্রতি তিনজনের কাছে থাকবে একটা করে স্টেনগান। গ্রুপ কমান্ডারকে দেয়া হলো হালকা অথচ শক্তিশালী ট্রানজিস্টার।
…তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, অল ইন্ডিয়া রেডিও কলকাতা কেন্দ্র থেকে প্রতিটি সঙ্গীত অনুষ্ঠান শুনতে হবে খুব মন দিয়ে। ওই সঙ্গীত অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই জানানো হবে কখন অপারেশন শুরু করতে হবে!
…১৩ আগস্ট কলকাতা রেডিও থেকে প্রচারিত হলো বাংলা গান আমার পুতুর আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ী। এই গানটির মাধ্যমেই কমান্ডার প্রথম সংকেত লাভ করেন। তিনি জানেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে দ্বিতীয় গান প্রচারিত হবে, ওই গান শোনার সঙ্গে সঙ্গে ট্রানজিস্টার ফেলে দিতে হবে, শুরু হয়ে যাবে অপারেশন জ্যাকপট!
…১৪ আগস্ট প্রচারিত হলো, দ্বিতীয় গান, আমি তোমায় যতো শুনিয়েছিলাম গান, তার বদলে চাইনি কোন দান। শুরু হয়ে গেল অপারেশন জ্যাকপট! গেঁয়ো পোশাক পরা একদল লোক ফলমুল মাছ, শব্জীর ঝুড়ি নিয়ে ফেরী নৌকায় উঠলো। পাক আর্মিও সন্দেহও করতে পারেনি, ওইসব ঝুড়ির নীচে আছে লিমপেট মাইন, ফিন, স্টেনগান!
…কিন্তু দূর্ভাগ্য, এই দলের অভিযান একদিন পিছিয়ে গেল- ৩ নং গ্রুপ ছাড়া সকলেই রাতের মধ্যেই চরলায় পৌঁছে গিয়েছিল। জেটিতে নোংগর করা পাক আর্মিদের এমভি আব্বাসে আছে ১০৪১০ টন সামরিক সরঞ্জাম। এমভি হরমুজ এ আছে ৯৯১০ টন সামরিক সরজ্ঞাম। …মাথাটা পানির উপর রেখে আমাদের ছেলেরা পৌঁছে গেছে। তারা পাক আর্মির জাহাজগুলোতে লিমপেট মাইন লাগিয়ে দিয়েই নিঃশব্দে নদীর ভাটিতে ভেসে যায়।
…রাত ১টা ৪০ মিনিট। কান ফাটানো আওযাজে বন্দর নগরী কেঁপে ওঠে।
…১টা ৪৫। আরেকটি বিস্ফোরণ। তারপর তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম। একটির পর একটি বিস্ফোরনে চট্টগ্রাম তখন থরথর করে কাঁপছে।
…পাক আর্মির আল আব্বাস, হরমুজ দ্রুত ডুবতে থাকে! আশেপাশের জাহাজগুলো প্রচন্ড রকম তিগ্রস্থ হয়। একদিকে যেমন শত্রুর বিপুল সম্পত্তির, সমরাস্ত্রের ক্ষতি হয় তেমনি পাক আর্মিদের মিথ্যা দম্ভ এবং অহংকার, অহমিকা হয় চুর্ণ!
(একাত্তরের মার্চে রফিক-উল-ইসলাম সাবেক ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্র্টার, চট্টগ্রামে ক্যাপ্টেন পদে সেক্টর এ্যাডজুটেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।)
সূত্র: বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ (১০ম খন্ড)। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে-মেজর (অবঃ)রফিক-উল ইসলাম, বীর উত্তম।
*আফসোস, এইসব দুর্ধর্ষ নৌকমান্ডোদের প্রতি সুবিচার, যথার্থ সম্মান দেয়া হয়নি।
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
Subscribe to:
Posts (Atom)