না-না, হুজুরেআলা সাইদাবাদী পৃথিবী থেকে পালিয়ে গেছেন এটা বলা হচ্ছে না যে, তিনি দেহ ত্যাগ করে রুহ আমাদের জন্যে রেখে গেছেন। তিনি কলকাতা থেকে পালিয়ে এসেছিলেন!
এমনিতে সাইদাবাদী খুব সাধারণ জীবন-যাপন (!)করতেন, একটা নমুনা এই রকম-
তোপখানা রোডের ‘ক্রিসেন্ট’-এ এসে থামল টিনটেড গ্লাসের একটা সাদা মাইক্রোবাস। গাড়ি দিয়ে থেকে নেমে এলেন জেল্লাদার পোশাকে এক লোক। সঙ্গে চেলচামুন্ডা। একটা ঝাড় বাতি কিনলেন । দাম ৭৫,০০০ টাকা!
এটা ৯০ সালের কথা। এই জেল্লাদার লোকটি হচ্ছেন সায়েদাবাদী। আর ঝাড় বাতিটা কেনা হয়েছিল তাঁর আলিশান বসবার ঘরের জন্য, যার দেয়ালে সাঁটানো চকচকে ডামি পিস্তল, শান দেয়া নকল তলোয়ার, শো কেসে ক্রিস্টালের সামগ্রী, পা চুবানো কার্পেট, গলা ডুবানো সোফা!
হুজুরের আবিষ্কৃত জ্যোতি হিমেল আধ্যাত্মিক পাউডারের কথা আপনাদের মনে আছে? ওই সময় বাঘা-বাঘা মানুষ এই পাউডারের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছিলেন!
বারো জন মন্ত্রী, এবং একজন ডক্টর কাম সম্পাদক মডেল হয়েছিলেন! পরে এটা নিম্নমানের ভুয়া পাউডার প্রমাণ হলে, এ নিয়ে তুমুল হট্টগোল বাঁধলে পীর সায়দাবাদী পত্রিকান্তরে বিবৃতি দিয়ে মাফও চেয়েছিলেন।
’৯১-এর দিকে ইত্তেফাকসহ প্রচুর পত্রিকায় অজস্র বিজ্ঞাপন ছাপা হতো-বিষয় আর কিছু না, অনেক ভূতপূর্ব পাগলের বক্তব্য, হুজুর নাকি বেত মেরে মেরে এদেরকে ভালো করে ফেলেছেন। এদের মধ্যে দশ বছরের পুরনো পাগলও আছেন!সাইদাবাদীর কাছে এরা পত্রিকার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন!
হুজুর সাইদাবাদীর কল্যাণে প্রচুর মহিলা নাকি গর্ভবতী হয়েছেন (কোন এক বিচিত্র কারণে হুজুরের নুরানী চেহারার সঙ্গে ওই বাচ্চাগুলোর চেহারায় নুরানী ভাব থাকলে বা কেউ মিল খুঁজে পেলে এই বিষয়ে লেখককে দায়ী করা যাবে না)।
কলকাতার প্রবীর ঘোষ। ১৯৯০ সালে ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ বই প্রকাশ করে তিনি উম্মুক্ত চ্যালেঞ্জ দিয়ে রেখেছিলেন, বিশ্বের যে কোন দেশের যে কেউ যদি অলৌকিক কিছু প্রদর্শন করতে পারেন- তাকে ইন্ডিয়ান রুপি ৫০ হাজার টাকা দেয়া হবে এবং তিনি পরাজয় স্বীকার করে নেবেন। অসংখ্য পীর-সাধু তার চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে হেরেছেন।
প্রবীর ঘোষের প্রতিবেদন অনুসারে, সাইদাবাদী যখন কোলকাতায় তখন একজন দম্পত্তিকে পাঠানো হয়, হুজুর সাইদাবাদীর কাছে। হুজুর সাইদাবাদী নাকি ডিম পড়া দেন। দম্পত্তির হাত থেকে ডিম নিয়ে হুজুর বোতল থেকে পানি ঢাললেন তারপর তোয়ালে দিয়ে মুছে একটি স্টিলের চামচ দিয়ে আঘাত করলে দেখা গেল ডিমটি সিদ্ধ হয়ে গেছে।
প্রবীর ঘোষ যে ডিমটিতে আগেই দাগ দিয়ে রেখেছিলেন, এটা সেই ডিম না।
দ্বিতীয় ঘটনাটি আরও মজার। প্রবীর ঘোষ বললেন, আমার কাছ থেকে সাইদাবাদী একটা রিক্সার লোহার বিয়ারিং বল চাইলেন। তারপর সেটা নিয়ে লাল কালি দিয়ে একটা কাগজে উর্দু বা আরবিতে কিছু লিখে, একটা কবচে ঢুকিয়ে মোম দিয়ে বন্ধ করলেন। কালো সুতা দিয়ে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে সাইদাবাদী বললেন, এখন বাজে দশটি পঁচিশ। ঠিক একটা পঁচিশে কবচ খুলে দেখবেন আল্লার রহমতে বিয়ারিং বল সোনার বল হয়ে গেছে, আর না হলে বুঝবেন, আল্লার রহমত আপনার উপর হয়নি, লোহা লোহাই থেকে যাবে।
প্রবীর ঘোষ ওখান থেকে বেরিয়ে একটা চায়ের দোকানে ঢুকলেন এবং কবচটা খুলে দেখলেন, এর ভেতর একটা সোনার বল । তিন ঘন্টা লাগেনি, পনের মিনিটের মধ্যেই লোহা সোনা হয়ে গেছে!
এরপর রবিবার (২১ এপ্রিল ) যুক্তিবাদী সমিতির থেকে কয়েকজন গিয়ে সাইদাবাদীর কাছে চিঠি হস্তান্তর করেন। ওই চিঠিতে প্রকাশ্যে অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয় কিন্তু সাইদাবাদী সেই চ্যালেজ্ঞ গ্রহন করেননি। বরং পরের দিন প্রবীর ঘোষকে টেলিফোন করে ‘বিশেষ সহযোগিতা’ চান। সাইদাবাদী আরও বলেন, প্রবীর ঘোষ সহযোগিতা করতে চাইলে তার সঙ্গে হিরা হোটের অথবা এয়ারপোর্টে দেখা করলে বিশেষ ব্যবস্থা হতে পারে। প্রবীর ঘোষ অনিহা প্রকাশ করলে সাইদাবাদী তার আধ্যাত্মিক সফর সংক্ষিপ্ত করে ২৩ এপ্রিল ঢাকা ফিরে আসেন!
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Friday, June 29, 2007
হুজুরেআলা সাইদাবাদী, যখন পালিয়ে বাঁচলেন!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 comment:
Post a Comment