Search

Tuesday, December 15, 2015

একজন ফয়সল আরেফিন দীপন…!

সালটা ২০০৩। তখন কেবল মাত্র আমার ২টা উপন্যাস বেরিয়েছে- ৯২ সালে অনন্যা থেকে আর ৯৫ সালে কাজী আনোয়ার হোসেনের প্রকাশনী থেকে। ৯৩ সালে বাংলা একাডেমির (এঁরা আমাদেরকে পরামর্শ দেন একাডেমি লিখতে কিন্তু নিজেরা লেখেন একাডেমী) ’উত্তরাধিকার’-এ আমার যে উপন্যাসটা ছাপা হলো [১] সেটা নিয়ে আমি বিপদে পড়ে গেলাম কারণ তখন বাংলা একাডেমি ব্যতীত অন্য কোথাও ‘উত্তরাধিকার’ পাওয়া যেত না যা ছিল একেবারেই পাঠকের নাগালের বাইরে। আর পাঠক না-পড়লে লিখে কী হয়? লেখার প্রয়োজনটা কী!
আহা, আমি তো সেইসব মহান লেখক না যে আলাদা একটা ভঙ্গি করে বলব, ওরে, আমি তো কেবল আমার নিজের জন্য লিখি, রে পাগলা। শোনো কথা, লেখালেখি নামের বাড়িটা পড়ার নাম করে পাঠক ছুঁয়ে না-দিলে সে যে এক নিষ্প্রাণ ভুতুড়ে বাড়ি! এমন একটা বাড়িতে আমার কী কাজ- ওখানে তো বাস করবে ‘ভুতলেখক’? ভুতলেখক হওয়ার গোপন কোনও ইচ্ছা আমার ছিল না, আজও নাই।
আরেকটা মধুর বিপদের কথা না-বললেই নয়। সেটা হচ্ছে বাংলা একাডেমি আমাকে সম্মানী দিয়েছিল ২০০১ টাকা। এই ১ টাকার মরতবা বুঝিনি। কাকে জিজ্ঞেস করব? এই ১ টাকা কেন, বাদাম খাওয়ার জন্য []! 

যাই হোক, তখন সুতীব্র ইচ্ছা বাংলা একাডেমির সেই উপন্যাসটা বই আকারে বের হোক কিন্তু কোনও প্রকাশক এটা ছাপাতে চাচ্ছিলেন না, কারণ…? ইতিমধ্যে বিচিত্রসব অভিজ্ঞতা হলো। কোনও প্রকাশক 'দুধেল লেখক'-এর ওরফে হুমায়ূন আহমেদের জন্য মোষের দইয়ের নিমিত্তে মোষ কিনতে বাজারে গেছেন তো কেউ বলছেন, টংকা ওরফে ট্যাকাটুকা দেন। শ্লা, মনে হচ্ছিল এটা বাংলা বাজার না, ঠাঠারি বাজার! একেকটা মাংসের কারবারি!
এমনকি 'দিব্য প্রকাশের' মইনুল আহসান সাবের পর্যন্ত বলে বসলেন, 'আমরা অথরের ফিন্যান্স ছাড়া বই প্রকাশ করি না’। 
বটে রে, তাহলে মননশীন-সৃজনশীল-‘চলনশীল’ বুলি কপচাবার প্রয়োজন কী, হে? যাই হোক, এরপর আর লেখালেখি নিয়ে কথা চলে না!

এভাবে বছরের-পর-বছর গেল। দাপুটে একজন লেখক, যিনি আবার প্রিন্টমিডিয়ার মা-বাপ তিনি কোনও এক প্রকাশনীকে বলে-কয়ে বইটা ছাপাবার ব্যবস্থা করবেন বলে আমাকে দিনের-পর-দিন ধরে আশ্বাস দিয়ে গেলেন। হায়, সরকারি প্রেসনোটের মতই মিথ্যা তার আশ্বাস। পরে বুঝেছি তার আশ্বাস আর ব্যবহৃত টিস্যুপেপারের মধ্যে আদৌ কোনও পার্থক্য নাই।
এমনিতেও আমার জেদ চেপে গেল, দেব না, কোনও প্রকাশককে একটা অচল আধুলিও দেব না। কেন দেব, রে পাপিষ্ঠ! এমন অমর্যাদা মাথায় নিয়ে পাঠকের কাঠগড়ায় দাঁড়াবার প্রয়োজন কী আদৌ! তাহলে কী হয় লেখালেখি না করলে…!
এই আলোকিত ভুবনের অন্ধকার দিকগুলো আমার ভাল লাগছিল না। নিতল অন্ধকারের শেষ মাথায় কোথাও-না-কোথাও এক চিলতে আলো থাকে, থাকেই…।

এতক্ষণ এই ভনিতার কারণটা বলি। একজন প্রকাশক ২০০৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ওই লেখাটা নিয়েই 'নিশিগন্ধা' বইটা বের করলেন। সেই মানুষটাই 'জাগৃতি প্রকাশনীর' ফয়সাল আরেফিন দীপন।
আমি অতি আনন্দের সঙ্গে বইটা উৎসর্গ করলাম সেই চালবাজ লেখককে। বইয়ের ভূমিকায় লিখলাম:
"মি. এক্স। সেই লেখক, যিনি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এক বছর আমাকে লাটিমের মত বনবন করে ঘুরিয়েছেন। আপনি হয়তো একজন ভাল লেখক- আই বেট, ভাল মানুষ নন। গড ব্লেস ইউ!"
এই লেখককে গড ভালই ব্লেস করলেন, করেন। হয়তো গড থাকেন এই সব মেকি মানুষদের 'ভদ্দরনোকপল্লীতে' ওরফে কারওয়ান বাজারে। কালে-কালে তিনি প্রিন্টমিডিয়ার ঢালের আড়ালে কাউকে এভারেস্টে কোলে করে তুলে নিয়ে গেলেন তো কাউকে পাতালে। মিডিয়ার চাকরিরসূত্রে যে কোনও প্রকারে নিজের লেখা-বইয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে আসেন সেটা কোনও অভিনেতা হোক বা কোনও নেতার মুখে। বিশ্ববেহায়া এরশাদকেকে ছাড়িয়ে গেলেন- নিজের বইয়ের বিজ্ঞাপন নিজেই দেওয়া শুরু করলেন। নিজেই লিখে দেন প্রথম মুদ্রণ শ্যাষ দ্বিতীয় মুদ্রণ অন দ্য ওয়ে, আসিতেছে...।

যাই হোক, কেবল যে আমার বই প্রকাশ করার কারণেই দীপনকে খুব পছন্দ করতাম এমন না, এই মানুষটা আমাকে খানিকটা বোঝার চেষ্টা করতেন। এমন উদাহরণের অভাব নেই।
আমার কাছের লোকজনেরা আমার ব্রেন নাই এটা নিয়ে বিস্তর রসিকতা করেন, এখনও!  কিন্তু এতে আমার প্রাণ যায়! আমি লোকেশন একেবারেই মনে রাখতে পারি না যেমনটা মনে রাখতে পারি না মানুষের মুখ। ঢাকায় কেউ-যদি বলে এই ঠিকানায় চলে আসবেন তাহলে ধরে নিন আমার মাথায় মাসুদ রানার প্রিয় ওয়েলথার পিপিকে তাক করা হলো। অবশ্যই গুলিভর্তি। কখন দুম করে গুলি বেরিয়ে পড়ে এর ঠিক নেই!
এমনিতে সঙ্গে কেউ থাকলে আমার আনন্দের শেষ নেই। তখন আমার একটাই কাজ মানুষটার পেছন পেছন ঘুরে বেড়ানো! কিন্তু একা হলেই সর্বনাশ- ঢাকার মত যান্ত্রিক শহরে হারিয়ে যাই, স্রেফ হারিয়ে যাই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য- আমার লেখালেখির শপথ! কিন্তু সেই সব মানুষগুলোও এক সময় আমাকে নিয়ে তিতিবিরক্ত হয়ে পড়েন। রাগী গলায় সাফ ঘোষণা দেন: আমি লিখে সই করে দিচ্ছি, আপনি ঢাকা শহরে চলাচলের জন্য অনুপযুক্ত বা অচল [৩]

যতটুকু মনে পড়ে তখন প্রকাশক দীপনের অফিস ছিল দোতলায়। লেখার কাজে, প্রুফ দেখতে দীর্ঘ সময় ওখানে থাকা লাগত। কখনও ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হলে আমার মুখ শুকিয়ে যেত কারণ আজিজ সুপার মার্কেটের এই ভবনটা আমার কাছে গোলকধাঁধাঁর মত মনে হতো। দীপনের অফিসের এমাথা থেকে ওমাথা কোনও প্রকারে যেতে পারলেও ঠিক-ঠিক চিনে ফিরে আসতে পারতাম না। তাই ওঠার জন্য আমি আমার পরিচিত এইটাই সিঁড়ি ব্যবহার করতাম নইলে আমার জন্য দীপনের অফিস চেনাটা মুশকিল হয়ে যেত। পরে একটা বুদ্ধি বের করলাম! ওয়শরুমের কাজ সেরে হাতের নাগালের সিঁড়িটা দিয়ে সোজা নীচে নেমে যেতাম এবং যথারীতি আমার পরিচিত সেই সিঁড়ি দিয়ে শিস বাজাতে-বাজাতে উঠে আসতাম।

একদিন বিষয়টা দীপন ধরে ফেললেন, হাসি লুকিয়ে বললেন, ’ঘটনা কী, বলেন তো- আপনি ওয়শরুমের নাম করে নীচে কোথায় যান’?
আমি বিব্রত হয়ে বললাম, ‘না, মানে, ইয়ে, নীচে আমার একটা মানে একটা ইয়ে কেনার ছিল’।
এবার দীপন নামের সদাশয় মানুষটা মুখ ভরে হেসে বললেন, ‘হুম, আমি কিন্তু এই নিয়ে বেশ ক-দিন আপনাকে এমনটা করতে দেখেছি’।
চোখাচোখি বাঁচিয়ে আমি ছাদে লটকে থাকা পরিত্যাক্ত টি-ব্যাগ দেখি []। পরে দীপন যেটা করতেন আমার ওয়শরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হলে সঙ্গে অফিসের কাউকে দিয়ে দিতেন। হে মাবুদ, একজন মার্চ করে আমার সঙ্গে যাচ্ছেন আবার ফিরে আসার সময়ও...মার্চ। কী লজ্জা-কী লজ্জা, এই দিনও দেখার ছিল, মরণ! দীপনকে বলেকয়ে আগের নিয়মটাই চালু রাখলাম।

দীপন নামের সহৃদয় এই মানুষটা বিদায় দেওয়ার বেলায় কেবল যে নীচেই নেমে আসতেন এমন না রিকশা ঠিক করে রিকশাওয়ালা কাছে আগেই জেনে নিতেন: মামা, আপনি ওই জায়গা চেনেন তো, শোনেন কোন দিক দিয়া যাবেন...?
কারণ এই মানুষটা বিলক্ষণ জানেন রিকশাওয়াওয়ালা যখন মুখ ঘুরিয়ে আমার কাছে জানতে চাইবে 'কোন দিক দিয়া যাইতাম', তখন আমি কেবল অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকব।

৩১ অক্টোবর ফয়সল আরেফিন দীপন খুন হন নিজের অফিসে, নৃশংস ভাবে। কেন খুন হলেন এটা নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত রইলাম কারণ আজও খুনি ধরা পড়েনি। যেমনটা আমরা এখনও জানি না সাগর-রুনির খুনি কে, কেন তাঁরা খুন হলেন? এই সব জানার চল এই দেশে নাই!
অবশ্য দীপনের বাবা স্পষ্ট করে বলেছেন অভিজিত রায়ের বই প্রকাশ করার কারণেই এই খুন। দীপন বিভিন্ন লেখকের আনুমানিক ১৬০০ বই প্রকাশ করেছেন যার মধ্যে আছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রমাণ্য গ্রন্থ নীলিমা ইব্রাহিমের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’র মত কালজয়ী অসংখ্য বই। কেবল একজন লেখকের বই প্রকাশ করার কারণে এই খুন হয়ে থাকলে, কাল যে কেউ অভিজিৎ রায়ের বই পড়ার সময় কোপ খাবেন বা কেউ ওকে নিয়ে লিখলে! বটে রে, একজন অভিজিৎ রায়ের এমন বিপুল ক্ষমতা!
আচ্ছা, দেওয়ানবাগির পির সাহেব যে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কেবল অশ্লীল, আপত্তিকরই না [৫] ধর্ম অবমাননার আওতায় জঘন্য অপরাধ করে যাচ্ছেন দিনের-পর-দিন! তখন দেখি কেউ রা কাড়েন না? বিষয়টা কী, বাহে? তার গোপন অঙ্গে কোপ দূরের কথা আজ পর্যন্ত তার নামে একটা মামলা পর্যন্ত হয়নি! তার গোপন চুলও আপনারা  কেউ স্পর্শ করতে পারেননি!

বেশ-বেশ, তা আপনারা কী ধর্মের কারকুন-তত্ত্ববধায়ক? আপনাদের কারফরমা-আদেশে আমাদেরকে চলতে হবে? এই প্রসঙ্গে পূর্বে বিস্তর লেখা লিখেছি [৫] আপাতত এই প্রসঙ্গ থাকুক। কেবল আমার অন্য এক লেখা থেকে ধার করে বলি:
 “আমার যা ইচ্ছা তা পড়ব- অভিজিতকে পড়ব অভিজিতের বাপকে পড়ব, বা..., তোমাদের সমস্যা? ভুলেও অন্তত আমাকে কখনও এই সব জুজু, মৃত্যুর ভয় দেখাতে আসবা না। আর কাপুরুষের মত পেছন থেকে না সাহস থাকলে সামনাসামনি। শোন, নর্দমার কীটরা, কেউ থুত্থুড়ে বুড়া হয়ে গু-মুতে মাখামাখি হয়ে মারা যায়, কেউ ব্যাটলফিল্ড-যুদ্ধক্ষেত্রে, কেউবা তোমাদের মত নরকের কীট-কাপুরুষদের হাতে। কাউকে-কাউকে মেরে ফেলা যায় এ সত্য কিন্তু তার আদর্শ, তাঁর ভাবনাকে মেরে ফেলা যায় না। আমাকে মেরে ফেললে আমার ভাবনাগুলো থেকে যাবে। সেই ভাবনার রেশ ধরে আমার গলিত শব থেকে জন্ম নেবে, নেবেই অন্য একজন। সেই মানুষটা হাতে থাকবে জ্ঞানের এমন এক তরবারি যেটা দিয়ে সে ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে তোমাদের মত সমস্ত অন্ধকার, তোমাদের মত কাপুরুষদেরকে...। তোমাদের মুখে একগাদা থুতু, শুয়োরের ছা!”
দীপন খুন হওয়ার পরই দীপনের বাবা আবুল কাশেম ফজলুল হক বললেন, ‘আমি আমার সন্তানের খুনের বিচার চাই না’।
একমাত্র সন্তানের শব কাঁধে নিয়ে একজন বাবা কেন এমনটা বলেন সেটা বোঝার মত মগজের বড় অভাব আমাদের দেশে। সরকারের দায়িত্বশীল একজন মানুষ যখন জনাব কাশেমের এই কথার রেশ ধরে অতি কুৎসিত কথাটা বললেন, এমন কুৎসিত অমানবিক কথা আমি আমার সমস্ত জীবনে কখনও শুনেছি এমনটা মনে করতে পারছি না। পারলে এই মানুষটাকেই খুনি বানিয়ে দেন!
দীপনের বাবা নামের এই মানুষটাকে বেশ ক-বার দীপনের অফিসে আমি দেখেছি। আপাতত দৃষ্টিতে অতি সাধারণ এই মানুষের ব্যক্তিত্বের এমন ছটা যে তাঁর সামনে নিজেকে দেখেছি কাঠ হয়ে থাকতে।

কিন্তু এই মানুষটারই ব্লগ-ব্লগিং নিয়ে [] খুব ভাল একটা ধারণা নেই এটা বোঝা যায় তাঁর এই মন্তব্য থেকে।
হয়তো কোনও সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেছিল: আপনার ছেলে কি ব্লগ লিখতেন?
তিনি সোজাসাপটা বলেছেন, ও ব্লগে ঢোকেনি।
কিন্তু বিষয়টা এমন আকারে এসেছে যে মনে হচ্ছে তিনি আগ বাড়িয়ে এটা বলতে চাইছেন। কারও সাক্ষাৎকার-বক্তব্য মিডিয়ার কল্যাণে কেমনতরো হয় তার নমুনা এখানে পাওয়া যাবে []। দীপনের বাবার এই মন্তব্য নিয়েও পানি কম ঘোলা হয়নি। এখন দেশে পাঠকের চেয়ে লেখকের আধিক্য এবং এই এই সমস্ত লেখক মহোদয়গণ এই গ্রহের এমন কোনও বিষয় নাই যেটা নিয়ে কাটাকুটি খেলা খেলেন না।

আর মিডিয়া, আহ, আমাদের চুতিয়া মিডিয়া! খুনিরা কেবল দীপনকে কুপিয়েছে আর মিডিয়া কুপিয়েছে দীপনের পরিবারের লোকজনকে, সবিরাম। এমনিতে এরা অবলীলায় মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের মুখে বুম ধরে বলতে পারে: আপনি এখন কেমন বোধ করছেন?
এরা অবিকল একটা হায়েনার মত! শকুনের চোখ নিয়ে (যার চালু নাম ক্যামেরা) অপেক্ষায় থাকে কোন এঙ্গেলে হাহাকার-করা বুক ভেঙ্গে কাঁদার ছবিটা ভাল আসবে। এই অপেক্ষায় এদের কোনও ক্লান্তি নেই। এদের জন্য প্রিয়মানুষের শব ধরে কেঁদে বুক হালকা করারও উপায় নেই। দীপনের স্ত্রী ডা. রাজিয়া প্রিয়মানুষটার নিথর দেহ ধরে যেসব আবেগঘন কথা বলেন: 'তুমি না বলছিলা...'।
তা আমরা দাঁড়ি-কমাসহ প্রথম আলোর কল্যাণে জেনে যাই। বদলে দাও, এরাই বদলে দিচ্ছে আমাদের ভাবনা। নোংরা ভাবনা! ওহে, মতিউর রহমান, ব্যক্তিগত কর্মকান্ড করার সময় আপনার ওয়শরুমে গিয়ে আপনার মুখে বুম ধরলে আপনার অনুভূতিটা কেমন হবে?

যেদিন দীপনকে খুন করা হলো এর পরদিনই দীপনের ছেলে রিদাতের জেএসসি পরীক্ষা। ছেলে বড়োসড়ো হয়ে গেছে বাপের জুতো পায়ে দিব্যি এঁটে যায় তবুও আগে হয়তো বাপ ছেলের হাত ধরে পরীক্ষা হলে নিয়ে গেছেন। পরীক্ষা হলে ছেলে ঢুকছে আর বাপ বিড়বিড় করে বলছেন: ব্যাটা, মাথা ঠান্ডা রাখবি, একদম ঠান্ডা। প্রশ্ন হাতে পেয়ে কিন্তু …।
এইবার এমনতরো বলার কেউ ছিল না তবুও বাবার শীতল শব রেখে 'রিদাত' গেছে পরীক্ষা দিতে। ‘শকুনক্যামেরা’ সেখানেও তার পিছু ছাড়েনি। কালেরকন্ঠ ঠিকই রিদাতের পরীক্ষাকক্ষের ছবিটা ছাপিয়েছে। এই হচ্ছে আমাদের দেশে চালু পত্রিকাগুলোর নমুনা! আহ, কালের কন্ঠ! মিডিয়া-পত্রিকার নাম করে একজন পরোক্ষ খুনি কেমন করে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের কিনে নেয় কয়েকটা নোংরা কাগজের বিনিময়ে []!

বিচিত্র এই দেশের রাজনীতিবিদদের ন্যায় সবজান্তা-সর্বজ্ঞ এই গ্রহের অন্য কোথাও আর নাই! এদের কেউ হয়তো কৃষিবিভাগের সঙ্গে জড়িত কেউ বা সড়ক বিভাগের সঙ্গে, তাতে কী আসে যায়। একটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এরা অপরাধীকে চিহ্নিত করে ফেলেন, গণহারে একের-পর-এক বক্তব্য দিতে থাকেন। ফল যা হওয়ার তাই হয়, অস্ত্র-চাপাতির খোঁজ আমরা পাই কিন্তু চাপাতির পেছনের মানুষটা অদৃশ্যই থেকে যায়। নিশ্চিন্তে এরা ঘুরে বেড়ায় আমাদের আশেপাশেই। আপনি টেরটিও পাবেন না আপনার পাশে বসেই চুকচুক করে চা খাচ্ছে।

আহারে-আহারে, বাবার গায়ের গন্ধ মিশে যায় সন্তানের চোখের জলে সেটা দেখার সময় কোথায় আমাদের! পরে রিদাতের পরীক্ষার খাতা যিনি দেখবেন তিনি ভারী বিরক্ত হবেন এটা দেখে এই ছেলেটা পরীক্ষার খাতার জায়গায় জায়গায় কালি লেপ্টে আছে, কেন! ওই শিক্ষকের মাথায় আসবে না এই কালি সঙ্গে লেপ্টে আছে এই ছাত্রের চোখের জল। শিক্ষক বিড়বিড় করবেন: কী অমনোযোগী ছেলে রে বাবা- পরীক্ষা মনে হয় এর কাছে খেলা, হাহ।

ফাঁকতালে দীপন নামটা হারিয়ে যাবে। যাবে না কেবল দীপনের সন্তানদের নাকে আটকে থাকা তাদের বাবার গায়ের গন্ধটা। আর দীপনের প্রচন্ড রাশভারী বাবাটার চশমার কাঁচ কখনও-কখনও ঝাপসা হয়ে আসবে, আহা-আহারে, আমার বাবুটার সঙ্গে সময়ে সময়ে এতো কঠিন হওয়ার কী-ই বা দরকার ছিল। দীপনের অজস্র স্মৃতি তাড়া করবে এই পরিবারটিকে, আজীবন...।  

সহায়ক সূত্র:
১. আমার আনন্দ-বেদনার অপকিচ্ছা: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post.html
২. ১ টাকার মরতবা: https://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_01.html
৩. বন ভয়েজ, বইমেলা: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_27.html
৪. টি-ব্যাগ, শিল্পকর্ম: https://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_5091.html 
৫. ধারা ৫৭: http://www.ali-mahmed.com/2015/10/blog-post_7.html
৬. কয়েদখানার মেহমান: http://www.ali-mahmed.com/2015/09/blog-post_23.html
৭. একটি আদর্শ সাক্ষাৎকার: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_05.html 
 ৮. কালের কন্ঠ-মুড়ির ঘন্ট: https://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_16.html

 

Thursday, October 29, 2015

ডাকাতচুঞ্চু!

কারও গাছ থেকে যখন কেউ না-বলে লুকিয়ে ফল নিয়ে যায় তখন আমরা কেউ-কেউ উদাস দৃষ্টিতে দেখি, দেখি না? আহা-আহা, খাক, খাক না। ফলবান গাছের ফল তো কেবল গাছের মালিকই খাবে না চোর-চোট্টা, পশু-পাখিও খায়। কিন্তু ওই মানুষটাই যখন এসে নীতির কথা শোনায় তখন তাকে ডাকাতচুঞ্চু বা বিশিষ্ট ডাকাত না-বলে উপায় থাকে না।

‘কনক পুরুষ’ নামে একটা উপন্যাস আছে আমার- এটাকে নভেল বলা হবে নাকি নভেলা সেই তর্ক এখন থাক। বইটা ছাপিয়ে ছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন, আমার দেখা অসাধারণ একজন মানুষ [১]!
বইটা ছাপা হয়েছিল ৯৫ সালে। রিপ্রিন্ট আর হয়নি। পরের বছর থেকেই বইটা বাজারে নেই। সহৃদয় পাঠক বইটার খোঁজ করলে দুইটা কারণে আমি ভারী বিব্রত হতাম। এক, এটার প্রচ্ছদ। প্রচ্ছদটা দেখে ইচ্ছা করত উঁচু কোনও দালান থেকে দেই একটা লাফ। আফসোস, প্রচ্ছদের উপর আমার কোনও হাত ছিল না। প্রচ্ছদটা আমি দেখেছিলাম ছাপা হওয়ার পর। ভূমিষ্ট সন্তান দর্শনীয় না-হলে তাকে তো আর ফেলে দেওয়া চলে না, কপাল!
দুই, বইটার কোনও খোঁজ কাউকে দিতে পারি না। একবার ভেবেছিলাম পিডিএফ ফরম্যাটে আমার সাইটে যুক্ত করে দেব। কিন্তু আমার ‘অকাজেই’ যে সমস্ত দিন যায়- সময় কোথায়!

একজন পাঠকের অযাচিত উল্লাসভরা একটা মেইল পেলাম লিংকসহ, ‘...জিনিস পাইছি’। এই লিংক [২] ধরে গিয়ে দেখি ওয়াল্লা, এখানে যে বাজার জমে গেছে। আর আস্ত বইটা এরা পিডিএফ করে ফেলেছে। ওখান থেকে লোকজনরা ডাউনলোড করে পড়ছেও। পূর্বেই উল্লেখ করেছি অনেক বছর ধরে বইটা বাজারে নেই তাই ভাবলাম লোকজনরা পড়ছে যখন তা পড়ুক না। কিন্তু ডাউনলেোড করার পদ্ধতি দেখে আমি বিরক্ত হলাম। ‘হিডেন কনটেন্ট’ তখনই দৃশ্যমান হবে যখন ‘লাইক’ দেওয়া হবে নইলে কোনও প্রকারেই ডাউনলোড করা যাবে না। যেন গান পয়েন্টে রেখে- এক ধরনের বাধ্য করা। এই বাধ্যতামুলক লাইক দেওয়ার বিষয়টা আমার মোটেও ভাল লাগল না।

এই এক চুতিয়াগিরি শুরু হয়েছে এখন, লাইক ভিক্ষা। আমাদের দেশের প্রথম শ্রেণির দৈনিকগুলো যখন লাইক-ভিক্ষা [৩] করে তা এরা কোন ছার! যাই হোক, মন্তব্য করতে গিয়ে দেখা গেল এদের এখানে ‘সাইন আপ’ করতে হয়। কী যন্ত্রণা! এই ঝামেলা চুকিয়ে আমি ওখানে মন্তব্য করলাম,
পরে আর ছাপা না-হওয়ার কারণে প্রজাপতির এই বইটি অনেক বছর ধরেই পাঠকের নাগালে নেই! বইটি এখনও পাঠকের ভাল লাগে জেনে মনটা অন্য রকম হয়ে। সলাজে বলি, এই ভাল লাগার তীব্রতা আমাকে স্পর্শ করে...। তবে বিষাদের সঙ্গে এ-ও বলি, বই ডাউনলোড করার জন্য 'লাইক' বাধ্যতামূলক করাটা ভাল লাগল না!”

'আপনার মন্তব্যটি বিবেচনার অপেক্ষায় আছে'। বেশ, আমি অপেক্ষায় থাকলাম। কিন্তু মন্তব্যটা পাবলিশ করা হলো না। আমার মনে হলো এই সব ভূমিকুষ্মান্ডদের সত্য শোনার বিন্দুমাত্র সহনশীলতা নেই। তাই এদের এই সমস্ত হালকামি অনেকটা ‘হালকা দেহের জন্য বলকা দুধ’। আমি আবারও মন্তব্যে লিখলাম,
"প্রিয় মহোদয়, গতকালের এই মন্তব্য পাবলিশ করেন নাই কেন দয়া করে এটা কি একটু জানাবেন?" এরপর মন্তব্যে লিখলাম, "লেখকের অনুমতি ব্যতীত আস্ত বইটা যে পাবলিশ করে দিলেন বিষয়টা কী অনৈতিক না?! "

‘মুর্দা বলে না, বলে তো কাফান ফাড়কে বলে’, প্রিয় মহোদয় ওরফে এডমিন একেবারে কাঁপিয়ে দিলেন। তিনি লিখলেন,
নৈতিক অনৈতিকতার কাদা ছুড়াছুড়ি না করে, মুল কথায় আসুন। আপনি কি চান না বইটি সাইটে থাকুক? আপনি যদি কোনভাবে লেখক বা প্রকাশনার সাথে জড়িত থাকেন, তাহলে উপযুক্ত প্রমানসহ আমাকে মেসেজ করুন, সাথে সাথে লিঙ্ক রিমুভ করা হবে। পূর্বেও এমন বহু লিঙ্ক রিমুভ করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে।
### একটা কথা না বলে পারছি না, আপনার এই বই নীলখেতে সেকেন্ডহ্যন্ড পাওয়া যাচ্ছে। যার বিক্রির ১ পয়সাও আপনি পাবেন না। আশা করি এই বিষয়ে কোন একটা ব্যাবস্থা নিবেন। যদিও কিছু করতে পারবেন কিনা বা করবেন কিনা সেই বিষয়ে সন্দেহ আছে। আজ পর্যন্ত কাউকে তো করতে দেখলাম না। সবাই খালি অনলাইন সাইট গুলার পিছনেই লেগে থাকতে ব্যস্ত।

ওরে ‘সূর্যের চেয়ে যে বালির উত্তাপ বেশি’ কথাটা শুনেছিলাম, শুনেছিলাম ‘দারোগার নায়ের (নৌকার) মাঝির শালা'র কথা। ‘চোরের মার বড়ো গলা’, এটা আমাদের ভাষায় বহুল ব্যবহারে জীর্ণ বিধায় এর কথা এখানে উল্লেখ করলাম না। এমনিতে আমি এদের জন্য একটা কথা ব্যবহার করি, ‘এক কাপ চায়ে দু-কাপ চিনি'।
জাকারিয়া স্বপনের মত প্রতিভাবান মানুষ যখন ‘দিন দাহাড়ে’ লেখা চুরি-চামারি করেন [৪] তখন এই সমস্ত ‘জুম্মা জুম্মা সাতদিন’ টাইপের লোকজনকে অল্প কথাই বলি…।

নৈতিক অনৈতিকতার কাদা ছুড়াছুড়ি না করে, মুল কথায় আসুন…’
জ্বী, মূল কথাতেই আসছি। আমার অনুমতি ব্যতীত বইটা পাবলিশ করে আপনি অপরাধ করেছেন তাই আপনি একজন অপরাধী। 

‘আপনি যদি কোনভাবে লেখক বা প্রকাশনার সাথে জড়িত থাকেন…’
প্রকাশনার বিষয়টা আমার কাছে গুরুত্বহীন কারণ বই-এ পরিষ্কার করে লেখা আছে, ‘গ্রন্থস্বত্ব লেখকের’।

'তাহলে উপযুক্ত প্রমানসহ আমাকে মেসেজ করুন, সাথে সাথে লিঙ্ক রিমুভ করা হবে...’
আপনি একজন অপরাধী- একজন অপরাধীর কাছে প্রমাণ দিতে আমার বয়েই গেছে।

‘পূর্বেও এমন বহু লিঙ্ক রিমুভ করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে...’। বাহ, কী-সোন্দর কথা! পূর্বেও চুরি করে বমাল ধরা পড়ার পর মাল ফেরত দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও চুরি করা হবে ধরা পড়লে তখনও মাল ফেরত দেওয়া হবে।

### একটা কথা না বলে পারছি না...’
আমিও একটা কথা না-বলে পারছি না সেটা হচ্ছে একজন অপরাধীর সঙ্গে আর বাতচিত করাটা আমার কাছে কেবল ক্লান্তিকরই না শব্দের অপচয়ও বটে।

সহায়ক সূত্র:
১. কাজীদা: একজন লেখক বানাবার মেশিন!: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_13.html
২. http://banglapdf.net/threads/kanok-purush%E0%A5%A4%E0%A5%A4ali-mahmed-sheba-uponyas.2771/
৩. জাতীয় ফকির: আল্লার ওয়াস্তে একটা পইসা...: http://www.ali-mahmed.com/2014/07/blog-post_22.html
৪. priyo.com: ডিয়ার, তোমাকে কি ডাকাত বলতে পারি?: http://www.ali-mahmed.com/2015_02_16_archive.html






Thursday, October 22, 2015

ভুলে-ভরা জীবন এবং গুছিয়ে রাখা ব্যাগ।

রাজুর [১, ২] বয়স পাঁচ এবং মৌসুমির বয়স চার [৩, ৪], এরা ভাই-বোন। এদেরকে আমি চিনতাম ‘আমাদের ইশকুলে’ পড়ার সুবাদে। এদের বাবা মারা যাওয়ার পর আক্ষরিক অর্থেই এরা ভেসে গেল কারণ অপ্রকৃতিস্থ মা থেকেও নেই। যেদিন এদের মা একেবারেই উধাও হয়ে গেল সেদিন আমিও ভেসে গেলাম কারণ এই দুইটা বাচ্চার স্রোতে ভেসে যাওয়া তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার জন্য যে কঠিন হৃদয়ের প্রয়োজন তা আমার ছিল না।

একদা মৌসুমি মেয়েটার একটা গতি হয়। সহৃদয় একটি পরিবার এই বাচ্চাটির দায়িত্ব নিলে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু ওর ভাই রাজু নামের এই পাজিটার কোনো গতি হবে এমনটা আমি কল্পনাও করিনি কারণ ৫/৬ বছরের এই শিশুটির খোঁজ নিতে গিয়ে সকালে যদি শুনতাম চট্টগ্রামে তো বিকালে জানা যেত পাজিটা ঢাকায়। বেশ কিছুদিন ধরে রাজু উধাও ফিরে আসার পর জানা গেল একা-একা এ ভারতের আগরতলাতে চলে গিয়েছিল। রাজু নামের এই ছেলেটি যে একালের রাম এতে শরৎবাবুর সন্দেহ থাকলেও আমার মোটেও সন্দেহ ছিল না। 
আমি নিশ্চিত,‘রামের সুমতি’ হলেও রাজুর সুমতি হবে না। কালে-কালে এ যে ‘বাইট্টা ছগির’ পেটকাটা রমজানের স্থলে ‘কাইল্যা রাজু’ হয়ে উঠবে না এটা কে বলতে পারে।

আমি হাল ছেড়ে দিলেও আমাদের ইশকুলের শিক্ষক আলী আজ্জম অপু হাল ছাড়ে না।
যে পরিবারের সঙ্গে এখন রাজু আছে সেই পরিবারের লোকজনের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই এঁরা কেবল যে রাজুকে পরম মমতায় নিজের করে নিয়েছেন এমনই না এরা আমার দীর্ঘ সময় ধরে কষ্ট করে চেপে রাখা শ্বাস ফেলার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমাকে পোকামানব হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছেন।
ছবি ঋণ: আলী আজ্জম অপু
রাজুর মাঝে যে পরিবর্তন আমি দেখেছি তা আমার চিন্তারও বাইরে! কখনও কখনও এ এই পরিবারের লোকজনকে হুমকি দেয়, ‘আমি কিন্তুক চইলা যামু’। ওরা হাসি গোপন করে বলে, ‘চইলা যা’, তখন রাজু মনখারাপ করা শ্বাস ফেলে বলে, ‘তাইলে আমারে আদর করব কেডা’? আমার কেবল মনে হয় যেন এটা নিয়ে একটা গল্প, একটা উপন্যাস একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা চলে।

ভুল! এখন হচ্ছে অগল্প-অপন্যাস-অপকাব্য-অন্ধকারের যুগ। ‘মজার স্কুল’-এর সঙ্গে জড়িত আরিফুর রহমান, জাকিয়া সুলতানা, ফিরোজ আলম খান এবং হাসিবুল হাসানকে পুলিশ মানবপাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করল, রিমান্ডে নেওয়া হলো। এই নিয়ে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র নিন্দা-ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ল। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দেওয়া হলো। প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের লোকজনের অবগতির বিষয়টা নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা উল্লসিতও হলাম- যাক, এবার তাহলে একটা সুরাহা হচ্ছে।
আমরা পত্রিকায় পড়লাম,‘অবশেষে মুক্তি পেলেন অদম্য বাংলাদেশের চার তরুণ-তরুণী’। বাহ, এই দেশের সমস্ত বিষয়ে যদি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয় তাহলে গুচ্ছের টাকা খরচ করে বিপুল বাহিনীর প্রয়োজন কী!

বেশ, কিন্তু আমাদের এটা জানা হলো না সরকার বাহাদুরের চৌকশ গোয়ান্দা এদেরকে গ্রেফতারের পূর্বে এদের বিরুদ্ধে মানবপাচারের কোনো প্রকারের গন্ধ-দুর্গন্ধও পেল না। মানব তো আর বাদাম না যে পকেটে লুকিয়ে পাচার হয়ে গেল। এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড়ো ম্যাজিশিয়ানও তো চোখের পলকে একজন মানবকে উধাও করে ফেলার পদ্ধতি রাখেননি! একটা লাশ পচে-গলে যেতেও তো বছর দুয়েক সময় লাগে। তারপরও কোনও-না-কোনও ছাপ থেকেই যায়।
আমাদের এটাও জানা হলো না এক শিশুর চাচা যিনি এই অভিযোগ এনেছিলেন তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো বা যেসমস্ত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এর সঙ্গে জড়িত তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হলো কিনা?

পত্রিকায় আমরা এটাও পড়লাম, পুলিশ দীর্ঘ এক মাস তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে পাচারের অভিযোগের কোনো প্রমাণ পায়নি। …এরপর আদালত তাদের জামিন দেন। এর পূর্বে পুলিশ বলেছিল, এদের কোনো নিবন্ধন নেই, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোনো সনদও তারা নেয়নি।
খারাপ, খুব খারাপ কথা। ‘আমাদের ইশকুল’ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। তা বছর পাঁচেক তো হয়েই গেল। এই সুদীর্ঘ বছরেও সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোনো প্রকার অনুমতি নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আচ্ছা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুমতি পাওয়ার জন্য যে-সমস্ত কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় তার কোনো প্রকার ধারণা কি আছে কারও? দয়া করে কেউ ফরমটা যোগাড় করে খানিকটা চোখ বুলিয়ে নিলে ভাল করবেন। চার পাতার আবেদনপত্রে যে অসংখ্য চাহিদার কথা উল্লেখ আছে তা সাধারণ কোনো মানুষের পক্ষে যোগাড় করা অসম্ভব! এটা তাদের পক্ষেই সম্ভব যাদের হাতি-ঘোড়া, লাওলস্কর আছে। যারা বৈদেশ থেকে মোটা অংকের ডোনেশন বাগিয়ে চকচকে গাড়ি হাঁকিয়ে এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়িয়ে সমাজ উদ্ধার করেন।

একটি শিশুর লেখাপড়া,নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করার জন্য সরকার বাধ্য। এর অন্যথা হলে এর দায়ভাগ সরকার নিজের কাঁধে নিয়ে লজ্জিত হবেন। সরকার যেখানে ব্যর্থ সেখানে সাধারণ লোকজন এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল। এখন রাস্তায় পড়ে থাকা কলার খোসা সরাবার জন্যও যদি মেয়র মহোদয়ের বরাবর পিটিশন লিখতে হয়, স্যার, হাম্বল রিকোয়েস্ট… তাহলে তো ভারী মুশকিল।
সব মিলিয়ে এখন মনে হচ্ছে একটি শিশুকে পড়াবার, আশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করাটা ভুল। যেদিন এদেরকে পুলিশ হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল সেদিনই আমি ছোট্ট একটা ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি, মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। কোনো একদিন শিশু পাচারের অভিযোগে কোমড়ে দড়ি বেঁধে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে গেলে কেউ-কেউ অবাক হলেও আমি হবো না। ভুল করলে খেসারত দিতে হবে এ আর বিচিত্র কী! আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে সমস্যা তো নেই।
তবুও আমি এমন ভুল করব, বারবার। কপাল আমার, ভুলে-ভরা যে এ জীবন…!

সহায়ক সূত্র:
১. দু-পেয়ে পশু: http://www.ali-mahmed.com/2015/03/blog-post_27.html
২. পশুর জন্য কেবল জঙ্গলের আইন: http://www.ali-mahmed.com/2015/05/blog-post_28.html
৩. একজন দুর্বল মানুষ: http://www.ali-mahmed.com/2015/09/blog-post.htmls
৪. হর্ষ-বিষাদ, বিষাদ-হর্ষ: http://www.ali-mahmed.com/2015/09/blog-post_20.html

Wednesday, October 7, 2015

ধারা ৫৭।

হালের খবর হচ্ছে, ‘ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে স্কুলছাত্র গ্রেফতার’! [] ছাত্রটি নবম শ্রেণির এক বালক। এ দেশের আইনমতে শিশু। অবশ্য ড. জাফর ইকবালের মতে এ নিশ্চিত দুগ্ধপোষ্য শিশু। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ইয়া ধামড়া-ধামড়া যুবকরা যদি জাফর ইকবালের দৃষ্টিতে ‘বাচ্চা ছেলে’ হয়ে থাকে তাহলে নবম শ্রেণি পড়ুয়াকে আমরা অবলীলায় দুগ্ধপোষ্য শিশু বলতে পারি।

যাই হোক, এর বয়স বিবেচনা করে একে এবং এর পরিবারকে সতর্ক করে ছাড় দিলে মঙ্গল গ্রহের পানি শুকিয়ে যেত বলে আমি মনে করি না। কিন্তু আইন সম্বন্ধে আমার ভাল জ্ঞান নেই বিধায় এই বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত রইলাম। বিষয়টা আইনজ্ঞদের জন্য তোলা রইল।

(ভিডিও সূত্র: ইউটিউব: https://www.youtube.com/watch?v=5str8--rVyQ
)
দেওয়ানবাগির এই ভিডিও ক্লিপটি বছর দুয়েক পুরনো কিন্তু সম্প্রতি আমার দেখার দূর্ভাগ্য হয়েছে। দেখার পর আমি অনেকটা সময় বাকরুদ্ধ হয়ে ভাবছিলাম এই দেশেরই একজন মানুষ এমনসব ভয়ংকর কথা প্রকাশ্যে বলে পার পেয়ে যেতে পারে এ তো অকল্পনীয়, অসম্ভব, অবাস্তব। এমন না যে অপরিচিত কেউ-একজন যা-তা বলে গা ঢাকা দিল। এই মানুষটা তার অসংখ্য মুরিদের কাছে এমনতরো ভয়াবহ বক্তব্য প্রকাশ্যে বলে আসছে, দিনের-পর-দিন ধরে! এবং এই কারণে এই মানুষটাকে বিন্দুমাত্রও কোনও প্রকারের জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে এমনটা আমরা জানি না। বরং আমরা ৩০০ পাউন্ডের কেক কেটে মানুষটার জন্মদিন পালন করতে দেখেছি। ঠিক ৩০০ পাউন্ড কেক কেন কে জানে এই মানুষটার ওজন কী ৩০০ পাউন্ড!

আচ্ছা, এই মানুষটা-এই মানুষটা বলছি কেন?! একে কী বলব? পরমপুরুষ? পরম ক্ষমতাধর! অসীম ক্ষমতাবান? দূর-দূর, আমার মত মানুষের পক্ষে এটা নির্ধারণ করা কী সম্ভব! আহা, কী পরম ক্ষমতাধর রে আমার! নিজের চোখের দৃষ্টি ঠিক করার মত সামান্য ব্যবস্থা যার সাধ্যের বাইরে, চশমাই ভরসা! বেলুনের মত ফুলে যাওয়া রোধ করার ক্ষমতা নাই যার- আফসোস, ফেটে যাওয়া আটকাচ্ছে কে!

তথ্যপ্রযুক্তির এই ধারা ৫৭ একটি কালো আইন। কিন্তু যেহেতু এখন পর্যন্ত এটা বহাল আছে তাহলে এই মানুষটার বক্তব্যগুলো কী ধর্মীয় অবমাননার পর্যায়ে পড়ে না? নাকি দেওয়ানবাগির মত লোকজনেরা দেশের প্রচলিত আইনের উর্ধ্বে?
এই গ্রহে তো ঈশ্বরের বিরুদ্ধেও মামলা হয়। রুমানিয়ার পাভেল মির্চা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। কেন করেছিলেন সে এক লম্বা কাহিনী। আদালত এই মামলা গ্রহনও করেছিলেন। মামলা শুরু করার পূর্বে বিবাদীকে সমন জারী করতে হয়। উকিল বিবাদী ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে পারছিলেন না কারণ...। কারণ ঈশ্বরের আবাসিক ঠিকানার খোঁজ কারও জানা নেই! ঈশ্বর পার পেয়ে যান কেবল এই কারণে যে তাঁর আবাসিক ঠিকানা নেই। অতএব মামলা ডিসমিস।
কিন্তু দেওয়ানবাগির আবাসিক ঠিকানা আছে বলেই জানি...।

সহায়ক সূত্র:
১. ফেইসবুকে ধর্মাবমাননার অভিযোগে স্কুলছাত্র গ্রেপ্তার, মামলা: http://m.bdnews24.com/bn/detail/bangladesh/1033133
*ভিডিওটি Jun 23, 2013 সালে ইউটিউবে আপলোড করেছিলেন thinkbd. তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।

Wednesday, September 23, 2015

কয়েদখানার মেহমান!

সবই পণ্য বিক্রয়ের জন্য- চকচকে মোড়কে আলকাতরা কোন ছাড় বাচ্চাদের ইয়েও অবলীলায় বিক্রি হয়! ধর্মকে কাঠ-মোল্লারা বেচে শস্তায় মিডিয়া বেচে চড়া দামে। যেটা আমরা মাহমুমুদর রহমানের বেলায় দেখেছি।

ডয়চে ভেলের মত আন্তর্জাতিক একটি মিডিয়া এক ব্লগারের কেবল সাক্ষাৎকার নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি সাক্ষাৎকারের নীচে আমাদের মত পাঠকদের উদ্দেশ্যে এটাও জুড়ে দিয়েছে, ‘আপনি কি এর সঙ্গে একমত পোষণ করেন?’
‘এর’ মানে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছে সেই মহান দুঁদে ব্লগার। সাক্ষাৎকারের সঙ্গে ছবিও ছাপা হয়েছে। আমরা বেকুব পাঠক যদি বুঝতে না-পারি তাই নাম লিখে আমাদেরকে অবগত করা হয়েছে। এটা দোষের কিছু না কিন্তু ওখানে লেখা হয়েছে ‘নাস্তিক ব্লগার’।

বাহ, চমৎকার তো! কানকাটা রমজান, মুরগী মিলন, বাইট্টা দবীরের মত এটাও এখন অচিরেই চালু হয়ে যাবে দেড়-চোখ ট্যারা ব্লগার, চশমাচোখা (চোষা না) ব্লগার, এক ঠ্যাংওয়ালা ব্লগার, ‘বেলুন ব্লগার’!
পেটফাঁপা ব্লগার না-বলে ‘বেলুন ব্লগার’ বলা হবে সম্ভবত এই কারণে যে ওই ব্লগার আস্ত একটা গ্যাসের খনি! সঙ্গে ব্লগারের ‘স্বহস্তে’(!) গাওয়া গান,‘বড় সাধ আকাশে উড়াই তিন কুড়ি বেলুন’, (গ্যাসের যেহেতু অভাব নেই হাজার-কুড়ি বেলুন উড়াতে দোষ কোথায়) এটাও ওখানে জুড়ে দেওয়া যেতে পারে।

তো, এই ব্লগার মহতরমা সাক্ষাৎকারে জানাল [১],…‘ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে নবীকে সমালোচনা করার সপ্তাহ পালন দোষের কিছু না’।
বটে রে! পূর্বে ‘নবী …সপ্তাহ’ নামের ইভেন্টগুলো যখন দেখতাম সেখানে এমনসব অশ্লীল, কুৎসিত, গা শিরশিরে গালাগালি লেখা থাকত তা দেখে আমি কেবল হতবাক হয়ে ভাবতাম এমনতরো কথা তো চটুল আড্ডায় বলতেও আমাদের রুচিতে আসে না। অথচ এরা জনসমক্ষে এই কাজটাই করছে। বড়ো বাথরুম সারার কাজটাও কী এরা গিজগিজে লোকজনের মাঝেই সেরে থাকে? এই মহতরমা থার্ড রেটেড মুক্তমনা শিক্ষিত দূরের কথা এ তো দেখি চুতিয়ারও অধম!

আহ, শিক্ষিত! আমার এখন মনে পড়ছে উচ্চশিক্ষিত এক কুলাঙ্গারের কথা; কোটি-কোটি মানুষের কাছে অতি শ্রদ্ধার একজনকে নিয়ে যে নোংরা ভাষায় এন্তার আবর্জনা উৎপন্ন করে গেছে এমন ভাষা অশিক্ষিত উগ্র বেশ্যারাও ব্যবহার করে কিনা এতে আমার ঘোর সন্দেহ আছে। এ নাকি একজন মুক্তচিন্তার মানুষ ছিল! এটার নাম যদি মুক্তচিন্তা হয় এমন মুক্তচিন্তার মুখে আমি থুথু ফেলতেও আলস্য বোধ করব। কালে-কালে সবাই মিলে ব্লগিং-ব্লগার নামটাকে স্রেফ একটা শবে পরিণত করছে [২]

আমাদের দেশে আরজ আলী মাতব্বুরের চেয়ে বড় নাস্তিক কমই আছে। তাঁর অধিকাংশ লেখা আমার পড়া। কিন্তু কোথাও তিনি কোনও ধর্মকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছেন এমনটা আমার জানা নাই। কিন্তু তিনি বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে কঠিন কঠিনসব যুক্তি দিয়ে লিখে গেছেন। এই লেখাগুলো পড়লে বোঝা যায় কী অগাধ পড়াশোনা তাঁর! ধর্ম নিয়ে ‘ভবঘুরে’ নামের একজনের সিরিজ আকারে লেখা আছে কিন্তু কোথাও নোংরা কথা চোখে পড়েনি। বরং তথ্য-উপাত্ত দেখে মনে হয়েছে ধর্ম নিয়ে তার প্রচুর পড়াশোনা। আলি দস্তির লেখা পড়লেও একই কথা বলা চলে। তো, এরা বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করেছেন কিন্তু মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করেননি।

ইভেন্ট খুলে…এই চুতিয়ারা বুঝতে চায় না সব কিছু নিয়ে খেলা করা চলে না যেমনটা চলে না কারও আবেগ নিয়ে। কিছু ক্ষেত্রে যুক্তি অচল। কেউ তার মৃত মার সম্ভ্রম রক্ষার জন্য লড়াই করে হিংস্র কুকুরের ন্যায়। কেন করে? কী আছে মা নামের মৃতদেহের পুরনো ক-খানা হাড়ে? উত্তর নেই! সব প্রশ্নের উত্তর হয় না।

আর আমরা নাস্তিক এবং ধর্মবিদ্বেষীকে গুলিয়ে ফেলছি। পূর্বের এক লেখায় যেটা আমি লিখেছিলাম:
“এমন অনেকেই আছেন যাদের ১০০টা লেখার মধ্যে দেখা যাবে ৯৯-টাই ধর্মসংক্রান্ত অতি জঘন্য কথা লেখা। যুক্তি, তথ্যের বালাই নেই। এদের এই কাজটা ইচ্ছাকৃত। লোকজনকে উত্তেজিত করার অপচেষ্টা! এই সমস্ত শিক্ষিত মানুষগুলো কেন এমনটা করে, 'জাস্ট এটেনশন সিকার'? কোন-এক পাহাড়ির কাছে একটা নিরেট পাথর ঈশ্বরতুল্য- অন্য একজনের কি কাজ এটায় লাথি মারার। এই গ্রহে কী লাথি মারার পাথরের অভাব পড়েছে! এরা নাস্তিক কিনা সেটা জরুরি না কিন্তু এরা নাস্তিক-মুক্তমনা(!) নামের আড়ালে একেকজন চলমান ইতরবিশেষ। অন্যের মত-বিশ্বাস-আবেগকে পদদলিত করে কেমন করে মুক্তমনা হওয়া যায় এটা আমার বোধগম্য হয় না!” [৩] 
আরেক দল আছে এরা ধর্ম উদ্ধারের নামে অবলীলায় অন্যের প্রাণ নষ্ট করছে [৪]। যেগুলো স্রেফ জঘন্য খুন! এই দুই দলই অতি উগ্র জন্তুবিশেষ। এদেরকে যত দ্রুত সম্ভব আইনের আওতায় আনাটা জরুরি। কয়েদখানার মেহমান না-হলে এরা যে বড়ো বেমানান…।

সহায়ক সূত্র:
১. ডয়চে ভেলে: http:/dw.com/p/1GTBW
২: ব্লগিং-বোলোগিং, আস্তিক-নাস্তিক! : http://www.ali-mahmed.com/2013/03/blog-post_15.html
৩. একটি খুন, অতঃপর: দুই। :http://www.ali-mahmed.com/2015_03_23_archive.html
৪. পাজি-অসভ্য-ইতর-দানব-খুনি!: http://www.ali-mahmed.com/2015_04_09_archive.html

Sunday, September 20, 2015

হর্ষ-বিষাদ, বিষাদ-হর্ষ!

এই শিশুটির [১] কোনও গতি করতে পারছিলাম না। দিন গড়ায় কিন্তু কোন গতি হয় না। গতির চাকা যে চারকোনা। না-হওয়ার তো কোনও কারণ নেই অল্প কয়েকটা উদাহরণ দেই।
উদাহরণ এক: এই দেশের অসম্ভব প্রভাবশালী পত্রিকার এক সাংবাদিক ভাইজানকে শিশুটির বিষদ জানিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, জেলা শহরে শিশুদের রাখা হয় এমন কোনও সরকারী ব্যবস্থার খোঁজ দিতে পারেন? আমাকে বিস্মিত করে দিয়ে তিনি বললেন, আমার জানা নাই। আহা-আহা, সাংবাদিক সাহেবের স্কন্ধে কত্তো-কত্তো ‘লিউজ’ এই অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় কোথায়?
উদাহরণ দুই: এক ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দুঁদে সাংবাদিক মহোদয়কে এমন কোনও খোঁজের কথা বলার পর তিনি বললেন, আচ্ছা জেনে জানাব। আজও আমি অপেক্ষায় আছি।

শোনো কথা, অপেক্ষায় অপেক্ষায় এভাবে কী চলে? আমার তো আবার অকাজের শেষ নেই। বাহে, আমি তো আর অন্য গ্রহ থেকে আসিনি। রাত তিনটায় যখন কোনও শিশু বলে, ‘আমার হাগা ধরছে, হাগুম’ তখন সকালের অপেক্ষায় কোনও শিশুর হাগা-মুতা থামিয়ে রাখা চলে না। আর খানিকটা সাহস সঞ্চয় করতে পারলেই আমার পক্ষে শিশুটিকে ফেলে দেওয়াটা কোনও বিষয় ছিল না।

সবই অন্ধকার বিষাদের গল্প- কোথাও কী কোনও আলো নেই! আলো থাকে, থাকতে হয়; না-থেকে আলো বেচারার কোনও উপায় নেই। খুব একটা স্বচ্ছল নন এমনই এক পরিবারের দু-সন্তানের জননী গভীর মমতায় শিশুটির হাত ধরে আমাকে বলেন, ‘এই বাচ্চাটার দায়িত্ব আমাকে দেবেন? কোনও সমস্যা হবে না আমার দুই বাচ্চার সাথে এও বড়ো হবে’।
ঝাপসা হয়ে আসা অতি সাদামাটা এই মহিলার দিকে আমি তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলাম এটা কী কোনও রসিকতা নাকি এটা একটা খেলা মনে করছেন। ২৪ ঘন্টা না-পেরুতেই এসে বলবেন, জল্লা-জল্লা, এই খেলা আর খেলব না!

আহা, কেমন করেই বা ভরসা হবে? ইনি তো আর আমাদের মত দু-পাতা ‘ন্যাকাপড়া’ জানা মানুষ না যে পাতার-পর-পাতা দস্তয়োভস্কি মায়াকভস্কি পড়ে উচু-উচু ভাবনা ধার করে তলতলে হয়ে আছেন। বা নিদেনপক্ষে এঁর একটা এফবি একাউন্টও নেই যে আমাদের মত ‘দেশ-দশউদ্ধার’ করে গণতন্ত্র-মায়াতন্ত্রে হাবুডুবু খেয়ে ভুস করে ভেসে উঠে এমন একটা কান্ড করে ফেলবেন!

শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার পর এঁর বাসায় গিয়ে শিশুটির ঢলঢলে মুখ দেখে চোখ জুড়ায়। কিন্তু কোনও অনুরোধেই ছবি উঠাবার অনুমতি পাওয়া গেল না। আমি যতই বোঝাই এটা আমাদের সবারই জানা প্রয়োজন। এঁর এক রা, এটা আর এমন কী! আমি খানিকটা ঘুরিয়ে বলি শিশুটির একটা স্মৃতির জন্য নাহয়…। তিনি সদয় শর্ত জুড়ে দেন, আচ্ছা কিন্তু কোথাও ছবিটি দেওয়া যাবে না। হায়, নি-মোরাদ আমি দুর্দান্ত লোভ সামলাই কেমন করে? বড়ো অনিচ্ছায় ছবিটি এখানে জুড়ে দিলাম কিন্তু সঙ্গত কারণেই অচেনা আকারে।

সহায়ক সূত্র: ১. একজন দুর্বল মানুষ: http://www.ali-mahmed.com/2015/09/blog-post.html 


Tuesday, September 15, 2015

একজন দুর্বল মানুষ।

মৃত্যুদন্ড নিয়ে আমার একটা বক্তব্য ছিল, একটা মানুষের প্রাণ নষ্ট করার অধিকার কোনও মানুষের থাকাটা সমীচীন না। রাষ্ট্রেরও না। কিন্তু এমন বক্তব্য আসলে মানুষের জন্য, দানবের জন্য না। যেমন রাষ্ট্র যদি জাহাঙ্গির নামের এই মানুষটাকে মেরে ফেলে তাহলে আমি বিন্দুমাত্র কাতর হব না। এই দানবের দেহাত্যয়ই একমাত্র সমাধান।

হালে নিজের জাগতিক সমস্যার কারণে এখন আমি আর বাড়তি চাপ নিতে চাই না। ‘অকাজের’ পাল্লা ভারী হয়ে গেছে মনে হয় এমনটা। চারপাশে এতো এতো কেজো লোকের সঙ্গে দলছুট হয়ে থাকাটা কোনও কাজের কাজ না। তাই এখন নির্ভার সময়- যাক, এতো দিনে তাহলে আমার একটা গতি হচ্ছে। কালে কালে কাজের লোক হচ্ছি বলে…। শান্তিতেই ছিলাম। কিন্তু ঝামেলা আমার পিছু ছাড়বে কেন। কপাল!
মৌসুমি এবং রাজু
পূর্বে জাহাঙ্গির নামের এক দানবকে নিয়ে লিখেছিলাম। আমাদের ইশকুলে রাজু নামের চার-পাঁচ বছরের যে শিশুটি পড়ত এ সেই রাজু শিশুটির দুই হাত ভেঙ্গে দিয়েছিল [১]। এই রাজুরই একটা বোন আছে মৌসুমী নামে। এ-ও এই স্কুলে পড়ত। এই স্কুলের শিক্ষক আমাকে জানিয়েছিল মৌসুমী অনেক দিন ধরেই স্কুলে আসছে না। আমি শুনেও না-শোনার ভান করেছি কারণ এরা এমনই। স্কুলে এদের-কেউ নিয়মিত আসবে এমনটা আশা করাটাই বোকামী।

ফি-রোজ স্কুলে যাওয়া হয় না আমার। এই স্কুলের যে শিক্ষক, আজম- এ কেবল পড়াবার জন্যই পড়ায় না স্কুলের বাচ্চাদের জন্য এর আছে প্রগাঢ় মমতা। খুব সমস্যা না-হলে আমাকে বিরক্ত করে না। ফোন করে আমাকে যখন জানালো মৌসুমি ফিরে এসেছে কিন্তু সেই জাহাঙ্গির এরও দুই হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। নরসিংদী না কোথায় যেন সে এই বাচ্চা সমেত ধরা পড়ার পর ওখানে লোকজনেরা খাতিরযত্ম করে জাহাঙ্গিরের পা ভেঙ্গে দিয়েছে। ওখানকারই কোনও সহৃদয় মানুষ মৌসুমির মুখে এখানকার কথা শুনে মৌসুমিকে এখানে পৌঁছে দিয়ে গেছে।
তখন আক্ষরিক অর্থেই আমি বিরক্তি গোপন করলাম। আমার শান্তিতে থাকার দিন শেষ। এবং এর পরের অংশটুকু চোখ বন্ধ করে আমি আগাম বলে দিতে পারি। এখন জনে জনে ঝামেলা হবে।
মৌসুমি এবং শিক্ষক আজম
কপাল, যা ভেবেছিলাম তাই! দুই হাত ভাঙ্গার পাশাপাশি মৌসুমির শরীরে অসংখ্য কামড়ের দাগ ছিল, হাতের একটা নোখ উপড়ানো। আমার মনে হয়েছিল একজন গাইনিকে দেখানোটা অতি জরুরি। পরদিন একে নিয়ে যখন হাসপাতালে গেলাম কোনও গাইনিকে পাওয়া গেল না। শ্লা, কপাল আমার, ড্রেন রাস্তার মাঝখানে চলে আসে! এই হাসপাতালের প্রধান যিনি, এখন আমাকে তার কাছে যেতে হবে। এই ভদ্রলোককে নিয়ে একদা একটা লেখা লিখেছিলাম,‘সম্ভাব্য মৃত্যু’ [২]। তাই এর কাছে আমি বিশেষ প্রিয় পাত্র নই! কী আর করা।
তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানালেন গাইনি ভদ্রমহিলা ট্রেনিং-এ আছেন। আমি জানতে চাইলাম, এই হাসপাতালে গাইনি ক-জন? তিনি জানালেন, তিন জন। আমার পাল্টা প্রশ্ন ছিল, তিন জন হলে এক জন ট্রেনিং-এ, অন্যরা? তিনি হড়বড় করে বললেন, এই তো চলে আসবে। ট্রেনে আছে।
বেলা বাজে তখন বারোটা। আমি রাগ চেপে বললাম, বাচ্চাকে তো আর ট্রেনে নিয়ে গিয়ে দেখাতে পারব না।

যাই হোক, পরদিন গিয়ে একজনকে পাওয়া গেল। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আশার বাণী শোনালেন যে এই সংক্রান্ত জটিলতা থেকে এই শিশুটি মুক্ত। এবার অর্থোপেডিকস ডাক্তার মহোদয়ের কাছে যাওয়া। ইনি আবার কেবল বিশেষ বিশেষ দিনেই হাসপাতালে আসেন। ভাগ্যক্রমে এই দিনটাই বিশেষ দিন। এক্সরে দেখে তিনি জানালেন, শিশুটির হাত ভাঙ্গা হয়েছিল বেশ ক-দিন পূর্বেই এখন জোড়া লাগা শুরু হয়ে গেছে বিধায় আপাতত করণীয় কিছু নেই।
বেশ! হোয়াট নেক্সট, এরপর? এই শিশুটির বাবা নেই মা-ও খানিকটা অপ্রকৃতিস্থ, স্থির হয়ে দাঁড়াতেই পারেন না। তার উপর ভয়ংকর যে খবর সেটা হচ্ছে এই মহিলা বেশ কিছুদিন ধরে উধাও। ফিরে আসবেন এমনটা ধারণা করি না।
এখন এই শিশুটির গতি কী। স্টেশনে রেখে এলে ঝামেলা চুকে যায়? এটাই সহজ সমাধান কিন্তু এর জন্য যে সাহস প্রয়োজন তা আমার নাই। একজন দুর্বল মানুষের এমন সাহস কোথায়...।

সহায়ক সূত্র:
১. পশুর জন্য কেবল জঙ্গলের আইন!: http://www.ali-mahmed.com/2015/05/blog-post_28.html
২. সম্ভাব্য মৃত্যু: http://www.ali-mahmed.com/2013_10_16_archive.html

Tuesday, August 18, 2015

প্রবীর সিকদার এবং শ্মশান...!

প্রবীর সিকদারের অসাধারণ একটা লেখা আছে, “বাংলাদেশ শুধুই আমার বাবার কবরস্থান![১]। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবীর সিকদারের পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। তাঁর বাবাকে খুন করে ঠিক কোথায় ফেলে রাখা হয়েছিল এটা তাঁর জানা নেই বিধায় তিনি সমগ্র বাংলাদেশকেই বাবার কবরস্থান হিসাবে সশ্রদ্ধচিত্তে কল্পনা করে থাকেন। তাঁর সন্তানকেও তিনি বলেও দিয়েছিলেন, 'তোমার চারপাশে যতো বড় বাংলাদেশ তার পুরোটাই তোমারই দাদুর কবরস্থান; কখনোই যেন দাদুর কবরস্থানের অমর্যাদা না হয়...।"

সম্ভবত প্রবীর সিকদার শেষ শয্যাকে বিভক্ত করতে চাননি বিধায় শ্মশানের স্থলে কবরস্থান লিখেছিলেন। পরম মমতায়, তীব্র আবেগে যে বাংলাদেশকে তিনি তাঁর বাবার কবরস্থান হিসাবে দেখে আসছিলেন সেই বাংলাদেশ যে কালে কালে সত্যি সত্যি শ্মশান হয়ে উঠবে এটা সম্ভবত তাঁর কল্পনাতেও ছিল না।

আফসোস, এই দেশে এখন কেবলই ‘পাইপমানুষ’! ‘পাইপমানুষ’ হতে পারলে কোনও সমস্যা নেই। পাইপের একদিকে (যাকে মুখ নামে আমরা চিনি) সুস্বাদু বর্জ্য (যার চালু নাম খাবার) ঢালো পাইপের অন্যপাশে দিয়ে বেরুবে দুর্গন্ধময় বর্জ্য। আহা, পাইপের আবার মস্তিষ্ক কী! অবশ্য যাদের এখনও মস্তিষ্ক রেকটামের সঙ্গে জড়াজড়ি হয়নি তারা কালের প্রভাবে এখন পুরোপুরি ‘জম্বি’। এরা বিচিত্র এক প্রাণী, না জীবিত না মৃত!

তো, প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আলোকিত একজন মানুষ (!) সহকারী সরকারী কৌঁসুলি স্বপন পাল। প্রবীর সিকদারের একটা স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে তিনি মনে করছেন একজন মন্ত্রী বাহাদুরের বিরুদ্ধে উক্ত স্ট্যাটাসখানায় মাননীয় মন্ত্রী বাহাদুরের মানহানি ঘটেছে তাই সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছেন ফরিদপুরের বিচারিক আদালতে। এবং ফরিদপুরের কোনও আইনজীবী প্রবীর সিকদারে পক্ষে দাঁড়াবেন না কারণ এই বারের গঠনতন্ত্রে বলা আছে (ভাগ্যিস, গঠনতন্ত্রে এটা বলা নেই যে কেউ ঋণ পরিশোধ করতে না-পারলে তার শরীরের মাংস কেটে নেওয়া যাবে। তাহলে সর্বনাশ হয়ে যেত) কোনও আইনজীবী মামলা করলে অন্য আইনজীবীরা ওই মামলার আসামীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না।

একজন দাগী আসামীও তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার অধিকার রাখেন। এটা তার নাগরিক অধিকার। একটা রাষ্ট্রের এই ক্ষমতা থাকা সমীচীন না যে তার কোনও নাগরিককে আইনি সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা হবে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ এই গ্রহের নিকৃষ্টতম মানুষটারও আছে।
আদালতের কাছে প্রবীর সিকদারের এটা জানাবার সুযোগ হলো না তিনি কেন স্ট্যাটাসের মাধ্যমে প্রাণনাশের শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন! অবশ্য “...ফরিদপুরের সন্তান প্রবীরের পক্ষে আগের দিন আদালতে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ালেও রিমান্ডের বিরোধিতা করে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী নান্নু। তিনি বলেন, “প্রবীর সিকদার একজন খ্যাতিমান সাংবাদিকই নন, তিনি শহীদ পরিবারের সন্তান। আমরা আদালতকে বলেছি একজন পঙ্গু মানুষকে রিমান্ড না দিয়ে জামিন মঞ্জুর করার। কিন্তু আদালত না তা নাকচ করেছে। ..."  
(http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1012756.bdnews
ছবি ঋণ: http://www.dailyfaridpurkantho.com/?p=24538
এদিকে বিচারিক হাকিম প্রবীর সিকদারকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দিয়েছেন পুলিশ আবার ১০ দিনের রিমান্ডও চেয়েছিল কিন্তু দয়াবান বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আলবত-আলবত, রিমান্ডটা অতি জরুরি যে। আদালতে মামলা শুরু হওয়ার পূর্বেই প্রবীর সিকদারের ক্রাচের সঙ্গে আমরা হাতকড়া দেখেছি কিন্তু তাঁর ক্রাচের ফাঁপা অংশের ভেতরটা দেখার সুযোগ পাইনি। ক্রাচ নামের তাঁর এই ভয়ংকর অস্ত্রটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা আবশ্যক।
মাত্র একটা পা নিয়ে দেশ কাঁপিয়ে দেয় লিমন নামের ছেলেটি। যেখানে গোটা রাষ্ট্রের সমস্ত শক্তি তার একটা পাকে থামাতে হিমশিম খেয়ে যায় সেখানে এখন এসে যোগ দিয়েছেন প্রবীর সিকদার এক পা নিয়ে! যুদ্ধাপরাধিরা তার এক পা উড়িয়ে দিয়েছে তাতে কী তাঁর অন্য পাটা তো অবশিষ্ট আছে।

বড় বিচিত্র এই দেশ, এখানে লেখার জন্য কেউ কল্লা উড়িয়ে দিয়ে আবার ঘটা করে লেখেও, “আলহামদুলিল্লাহ, আজ একটাকে জাহান্নামে পাঠানো হলো”। এরা কাউকে জাহান্নামে পাঠালো নাকি নিজেরাই জাহান্নামে গেল এর উত্তর আমাদের মত সাধারণ মানুষের জানা নেই। কিন্তু এদের জানা আছে! এরা তুচ্ছ, সামান্য সৃষ্টি থেকে অসামান্য অসীম ক্ষমতাধর স্রষ্টা হয়ে উঠে যে। তো, এই দেশেই কেউ আবার লেখার জন্য হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে কয়েদখানায় আটকে রাখে।

প্রবীর সিকদার যে লেখাটা লিখেছিলেন, "...চারটা পায়ে একটা কুত্তা আমার আছে দুই আর দুইটা পা থাকতো যদি আমিও কুকুর হই।" আহা, দুইটা পা তো আমাদের জন্য, আর দুইটা পা থাকতো যদি আমরাও কুকুর হই। প্রবীর সিকদার কী লেখাটা খানিকটা সংশোধন করে লিখবেন, আর তিনটা পা থাকতো যদি...।

সূত্র:
১. বাংলাদেশ শুধুই আমার বাবার কবরস্থান!: http://www.ali-mahmed.com/2013/07/blog-post_4.html

Thursday, July 9, 2015

‘সিরিয়াল কিলার এবং গোরখোদক’!

কোন এক বিচিত্র কারণে এ বছর প্রচুর পাখি ধরা পড়তে লাগল। হয়তো-বা খাবারের অভাবে এরা লোকালয়ে চলে আসা শুরু করল, লোকজনের কাছাকাছি। ছোট-ছোট বাচ্চারা কম পাজি না- বিচ্ছু একেকটা। আসলে এদেরকে কেবল পাজি না-বলে ‘প্রতিভাবান পাজি’ বলাটাই সমীচীন। এদের কারও-কারও প্রতিভা দেখলে হাঁ করে থাকতে হয়। চিকন সুতার ফাঁদ পেতে কী অবলীলায়ই না এরা পাখিকে আটকে ফেলে। এটা যেন ‘বাচ্চো কা খেল’!

এই বাচ্চাদের অনেকেই আবার ‘আমাদের ইশকুল’ [১] নামের কারখানায় কখনও-না-কখনও পড়েছে। আমাদের ইশকুলে হাবিজাবি অনেক কিছুর সঙ্গে এটাও শেখানো হতো, হয় জীব-জন্তুকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। দিলে...ইত্যাদি ইত্যাদি। কেউ-কেউ মনে রাখে, কেউ মনে রাখে না বা মনে রাখতে পারে না- বিচ্ছু বলে কথা!

তো, কেউ-কেউ চাইলে এমনিতেই আমাকে পাখি দিয়ে দিত কেউ-বা টাকা-পয়সার বিনিময়ে। কারও-কারও আবার বায়নাক্কা থাকত ফুটবল কিনে দিতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাখিগুলোকে আকাশে ছেড়ে দিত এই বাচ্চারাই। এগুলো সমস্যা না, সমস্যাটা গিয়ে দাঁড়াল...।
যেখানে চাহিদা সেখানেই চালবাজি! কিছু বাচ্চারা গাছ থেকে পাখি পেড়ে আনা শুরু করল। ‌আমি পড়লাম বিপদে, ‘সমাজ রাখি? না নমাজ’! খানিকটা জেনেও না-জানার ভান করলে কেমনে- একটা পাখিরও যদি এতে করে প্রাণ বাঁচে। যাই হোক, তখন কখনও-বা খানিকটা শক্ত আচরণও করতে হয়। ভয়-ভীতি না-দেখালে তো মুশকিল।

দুর্বল, অসুস্থ পাখিগুলোর স্থান হতো যথারীতি বাসায়। কেউ-কেউ জানতে চাইত এটা কি পাখি? আমি কী পাখির নাম জানি, ছাই! আমি তো আর পাখি চিনি না, চিনি কেবল আকাশ। গায়ের জোরে ওদের যে আকাশটা আমরা নিজের বলে দাবী করি। আমার আকাশ, আমার চাঁদ! বা...!
একদিন একজনের কথায় খুব চমকে ছিলাম। মানুষটা জানতে চাইল, আমি পাখি খাই কি না? আমার চেহারায় কোনও বিশেষত্ব নেই এটা আমি বিলক্ষণ জানি কিন্তু আমাকে দেখলে যে পাখি-খাদক বলে ভ্রম হয় এটা আমার জানা ছিল না। জেনে মনটা অনেকখানি উদাস হলো!

যাই হোক, সবগুলো পাখিকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। বাঁচাবার আপ্রাণ চেষ্টায় এর-ওর কাছ থেকে বুদ্ধি ধার করতাম। কিছু পাখিকে নাকি পোকামাকড় খাওয়াতে হয়।
যেমন এই পাখিটা কাঠ-শালিক। একে পোকামাকড় না-খাওয়ালে বাঁচানো মুশকিল। তখন এটা উড়তে পারছিল না। উড়তে না-পারলে তো কাক ঠুকরে মেরে ফেলবে। উপায়? বিরাট হাঁ- পেটে একপেট আগুন!
এমন করে বাসায় একের-পর-এক অতিথির আগমণ। যার কাছ থেকে পাখিটা কিনেছিলাম তার কাছে জানতে চাইলাম তুমি এটাকে কি খাওয়াতে? পুরো কথাটা শেষ করতে পারলাম না! ‘লয়া আইতাছি’, বলে সেই যে উধাও হলো ফিরল একগাদা ঘাস-ফড়িং নিয়ে। কিছু মৃত বাকীগুলো অর্ধমৃত।
লে বাবা, এখন একটা প্রাণকে বাঁচাতে কী অসংখ্য প্রাণ নেব, অন্যের প্রাণ। কালে-কালে আমি কি একজন সিরিয়াল কিলার হয়ে যাব? কপাল! জানি-জানি, অনেকে বলবেন, মিয়া তুমি নিজে তো আর এইগুলারে মারতেছ না...। বাহে, সেই বিখ্যাত উক্তিটা ধার করে বলি, নিজ হাতে হত্যা করা বা হত্যার করার জন্য নির্দেশ দেওয়ার মধ্যে বিশেষ পার্থক্য নেই।

এই প্রকৃতির অমোঘ বিধান। খাদ্য এবং খাদকের অটুট সম্পর্ক- সব কিছুই এই নিয়মে বৃত্তে বনবন করে ঘুরছে। ঘাস-ফড়িং খাবে পাখি, পাখিকে খাবে কাক এভাবেই চলবে। এই গ্রহে দেও-দানো থাকলে ধরে ধরে মানুষকেও খাওয়া শুরু করত। বাচোঁয়া, আমার গতর টিপেটুপে অবহেলা ভরে ছুড়ে ফেলত, ওয়াক, এইটারে শইলে খালি হাড্ডি, খাইয়া আরাম নাই।
এই পাখিটা হচ্ছে, টুনটুনি। টুনটুনি পাখি এমনিতেই ছোট্ট তার উপর এটা টুনটুনির বাচ্চা। অবিকল পুতুলের মত, পাখি-পুতুল! একে নিয়ে পড়লাম বিপদে। এক রাতের কথা বলি। আজকাল তেমন লিখতে ইচ্ছা করে না। কেবল মনে হয় অল্প জ্ঞান নিয়ে লেখালেখি করাটা কোনও কাজের কাজ না। মেঘে মেঘে বেলা বয়ে যায়- তেমন কিছুই তো পড়া হয়নি। কতশত বই দেখে বুকের ভেতর গভীর বেদনা পাক খেয়ে উঠে। আহারে, কখন পড়ব এগুলো? তো, পড়ার চেষ্টা করি- পড়তে পড়তে রাত গড়ায়।
পাখিটার আলোতে যেন সমস্যা না হয় তার থাকার জায়গাটা ভারী পর্দা দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলাম। কোন ফাঁকে এ ঠিক-ঠিক চলে আসত আমার কাছে। এর বসার পছন্দের জায়গা হচ্ছে আমার আঙ্গুল! আঙ্গুলে বসে থাকে, বসেই থাকে, নড়াচড়ার নাম নেই। কখনও-কখনও ঘুমিয়ে পড়ত।
ওদিন রাত বাজে তিনটা। ওরে পাখি, আমি তো আর তোর মত নিশাচর ড্রাকুলা না যে রাতভর জেগে বসে থাকব। ওর জায়গায় ওকে রেখে দেই। পাখির উড়াউড়ির সুবিধার জন্য এই জায়গাটা খোলা হলেও সুরক্ষিত। ইদুর-চিকা বা বেড়াল এদের নাগাল পাবে না।

এক ভোরে একেও পাই, মৃত। সকাল-সকাল মৃতদেহ দেখতে কার ভাল লাগে! কারই-বা ভাল লাগে গর্ত খুঁড়তে? কিন্তু কী আর করা! চাইলেই তো আর শীতল কাঠ-কাঠ শরীরটা ছুড়ে ফেলা যায় না। মায়া...অসহ্য মায়া! ক্রিসমাস-ট্রি নামের গাছটার নীচে একেক করে গর্ত বাড়ে। খুব কাছের লোকজনেরা এটার নাম দিয়েছেন, ‘বার্ড সিমেট্রি’। ফাজিল একেকটা!
আমাকে নীচু দেখাবার জন্য এরা লোকজনকে বলে বেড়ান, এই তোমরা এসে বেড়িয়ে যাও এর বার্ড সিমেট্রিটা দেখে যাও। আমি নিশ্চিত লোকজনেরা আমাকে ‘পাখি-খাদক’ বলেই ছেড়ে দেবে না কালে কালে এটা ছড়িয়ে গেলে আমি মোটেও বিস্মিত হবো না যে, কারা-কারা যেন এটা নিজের চোখে দেখেছে আমি পশু-পাখির সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছি। এদের সঙ্গে নাকি বিভিন্ন বিষয়ে আমার জোর তর্কও হয়। দেশের অবস্থা নিয়েও এদের সঙ্গে আলোচনা চলে- দেশটা ঠিক চলছে না এটা বলামাত্রই পশুপাখিরা হতাশায় মাথা নাড়ে। এবং মানবসমাজে লেখালেখিতে সুবিধা করতে না-পেরে পশু-পাখিদের জন্য অচিরেই লেখালেখি শুরু করব...।

সহায়ক সূত্র:
১. আমাদের ইশকুল...। : http://www.ali-mahmed.com/2014/12/blog-post_17.html

Saturday, July 4, 2015

সেকাল-একাল।

আজকের অতিথি লেখক, শামস
"২০০৭ সাল। জীবনে প্রথম বাড়ির বাহিরে। মেডিকেল কলেজের প্রথম বছর। মায়ের হাতের রান্না বাদ দিয়া ডাইনিং-এ খাওয়া শুরু করিলাম। ১২ টাকার মিল। লাঞ্চ ডিনার মিলিইয়া ২৫ টাকা। ১ টাকা জমা থাকিত। চার পাঁচ মাসের জমানো টাকা দিয়া ইমপ্রুভ ডিনার হইত।

খাবারের মেনু ছিল নিতান্তই সাধারণ। আনলিনিটেড ভাত, একটা ভাজিভুজি বা ভর্তা অথবা মাছ বা মাংস। একটা মুরগিকে আমার ধারণা ৩২ পিস করা হইত। বিশাল বাটিতে ঝোলে ডুব দিয়া মাংস আহরণ করা হইত। আর মাছের পিসগুলো যিনি ফালাফালা করিতেন তিনি সম্ভবত বিশাল সার্জন হইবার প্রতিভা রাখেন। এহেন স্কিন গ্রাফটিং সাইজের পিস আমি জীবনে আর কোথাও দেখি নাই। গভীরতা যাহাই হউক না কেন ডালের গামলার তলা স্পষ্ট দেখা যাইত। আমরা প্লেট ভর্তি করিয়া ভাত লইয়া ডাল দিয়া ভাসাইয়া দিতাম। ভাত খাওয়া শেষে প্লেটে চুমুক দিয়া সুড়ুৎ সুড়ুৎ করিয়া অসভ্যের মত ডাল খাইতাম! কেহ ভ্রু পর্যন্ত কুঁচকাইত না!

সকালের নাস্তা খুবই সস্তায় করা যাইত। দুই টাকা করিয়া পরোটা, দুই টাকার ডাল, খিচুড়ি মাত্র পাঁচ টাকা প্লেট! আমরা অনেকেই টাকা-পয়সা বাঁচাইবার জন্য হাফপ্লেট খিচুড়ি আর একটা ডাল; মোট পাঁচটাকায় নাস্তা সারিয়া ফেলিতাম। হাউকাউয়ের সহিত নাস্তা শেষ করিয়া আনন্দ সহকারে লেকচার হইতে ফিরিয়া ঘুম দিতাম! ঘুম শেষে চারুমামার ক্যান্টিনের একটা সিংগাড়া, বাইরের দুই টাকার লাল চা খাইয়া ঘুম তাড়ইয়া আবার লেকচার বা ক্লাসে ফিরিতাম।

ইফতারে তাবলিগী খাওয়া বড়ই সাশ্রয়ী প্রমাণিত হওয়ায় তাহাই নিয়মিত চালু ছিল। মুড়ি ছোলা পিয়াজু বেগুনি জিলাপি সব একসাথে মাখাইয়া মাটিতে পেপার বিছাইয়া দিয়া আনন্দ সহকারে খাওয়া হইত। জিলাপি বা বেগুনির টুকরা একটু বেশি পাইবার জন্য হাতাহাতি পর্যন্ত হইয়া যাইত। কোন পার্টিতে দাওয়াত পাইলে আগে আগে পৌঁছাইয়া হাঁ করিয়া বসিয়া থাকিতাম প্যাকেটের আশায়। একটুও লজ্জা করিত না। আমাদের সময় সবাই একটু বেশিবেশিই বেহায়া ছিলাম যে!

ছাত্রজীবনে খুব একটা খানাপিনার সুযোগ পাই নাই। মফস্বল শহরে থাকায় বার্গার পিজ্জা এইগুলা খাইতে গিয়া চেকইন মারা হয় নাই। আফসোস, বড়ই আফসোস। আজকালের পোলাপাইন বাফেলো উইং, স্টেক খাইয়া পড়াশোনা করিতেছে। অবশ্যই উহাদের মেধা আমাদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি হইবে ইহা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাফেলোর মাথায় যে অনেক ঘিলু থাকে! আনন্দ মাপিবার কি কোন মেশিন আছে?

এয়ারকন্ডিশনে বসিয়া কেলাশ করিয়া, গ্লোরিয়া জিন্সের ইশপিশাল প্ল্যাটার খাইয়া ঢেকুর তুলিবার আনন্দ আর ধার-ধুরের বই জোগাড় করিয়া কেলাশ, তেলাপোকা ঘোরা ডাইনিং-এর ডাল-ভাত খাইয়া অসভ্যের মত ঘোঁৎ করিয়া ঢেকুর তোলার আনন্দটা মাপিয়া দেখতাম! আহা, বেশি সুখী হইতে কে না চায়?"

Friday, June 26, 2015

নিতান্তই গৃহপালিত...!

একজন ‘কায়কাউসের ছেলে’ নামে একটা জিনিস প্রসব করেছিল। কে পুরীষ প্রসব করবে কে করীষ এটা যার যার অভিরূচি! এই নিয়ে আমার আগ্রহ ছিল না কিন্তু তবুও তখন লিখেছিলাম [১], কেন?
কেবল একটা উদাহরণ এখানে দেই- অহেতুক রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যে ভঙ্গিতে লেখা হয়েছে এই লেখার পেছনের মানুষটাকে আমার মনে হয়েছিল ইতরবিশেষ! আর এই ইতরকে প্রথম আলো ‘জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার’-এর নামে যেভাবে জন্তু থেকে মানুষের ভুবনে নিয়ে এসেছিল এটাকে আমার কাছে মনে হয়েছিল স্রেফ ইতরামি।
আচ্ছা, এই ইতর যেভাবে রবীন্দ্রনাথের নাম ব্যবহার করেছে সেই নামের স্থলে প্রথম আলোর সর্দারদের কারও নাম বসিয়ে দিলে কেমন হয়?

আসলে প্রথম আলোর যে শ্লোগান “...চোখ খুলে দেয় প্রথম আলো”, আমার ধারণা ছিল প্রথম আলো এটা রূপক অর্থে ব্যবহার করে। ওরে, আমি কী জানি ছাই এটা বলে সত্যি-সত্যি আমাদের চোখ খুলে ফেলার কথা বলা হচ্ছে। চোখ উপড়ে ফেলে আমরা অন্ধ- তখন প্রথম আলো আমাদেরকে হাতে ধরে ধরে শেখাবে এটা, এটা একটা ‘করীষের ছেলে’!

ওরে কত রঙ্গ রে! এরপর আমরা প্রথম আলোর বিজ্ঞপ্তি থেকে জানলাম, “সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা প্রথমা প্রকাশন ঘোষিত এ বছরের ‘জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার ১৪২১’ বাতিল করা হয়েছে। ... পুরস্কারের শর্ত ছিল, পাণ্ডুলিপিটি প্রথমা থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে।... বই প্রকাশের আগেই পাণ্ডুলিপিটির উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকাশিত হয়ে যাওয়ায় এ পুরস্কার বাতিল করা হয়েছে বলে প্রথমা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। শিগগিরই ‘জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার ১৪২২’-এর জন্য নতুন করে পাণ্ডুলিপি আহ্বান করা হবে।...”।
(প্রথম আলো ১৬ জুন ২০১৫)

শর্ত ছিল? কী আজব শর্ত রে, বাবা! আমার তো ক্যামেরুনের বাফুট প্রদেশের রাজাটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এই রাজার ১০০ বউ ৫০০ বাচ্চা! মজার ব্যাপার হচ্ছে রাজা হওয়ার আগে তার ছিল মাত্র ২ বউ। ওই দেশের নিয়ম হচ্ছে রাজা হতে হলে আগের রাজার সবগুলো বউ-বাচ্চাকে নিজের বউ-বাচ্চা বলে স্বীকার করে নিতে হয়।
শর্ত বলে কথা!
তো, কী আর করা দ্য কাউ- গৃহপালিত সাহিত্যিকগণ কলম দিয়ে যখন পশ্চাদদেশই চুলকাবেন তাহলে সানন্দে মেনে নিন এই শর্ত।

এমনিতে কাউকে পুরস্কার দিয়ে সেটা ফিরিয়ে নেওয়ার এই ভঙ্গিটা অদ্ভুতুড়ে নাকি কুতকুতে সে প্রসঙ্গ নাহয় থাকুক তবে...। ‘পুরস্কারের শর্ত ছিল, পাণ্ডুলিপিটি প্রথমা থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে’। তা শর্ত ভঙ্গ হয়েছে? বেশ তো, শর্ত ভঙ্গ করায় প্রথমা থেকে প্রকাশিত হবে না এটা বলাটাই যে সমীচীন ছিল।
প্রথম আলো বিভিন্ন পেশার লোকজশনকে পোষে এটা আমরা জানতাম কিন্তু সাহিত্যিক পোষার শখ যে এমন তীব্র এটা আমাদের জানা ছিল না।

সহায়ক সূত্র:
১. কুতুয়া রে: http://www.ali-mahmed.com/2015/01/blog-post_27.html

Thursday, June 25, 2015

সৈয়দ মহসীন আলী, মন্ত্রীমহোদয়, করকমলেষু।

আমাদের মন্ত্রীমহোদয় একে-ওকে এন্তার কথা বলেন আমাদের জানার উপায় নেই কিন্তু সাংবাদিক মহোদয়কে 'চরিত্রহীন, লম্পট' বলেছিলেন, সাংবাদিক মহোদয়গণ চটে গেলেন।

ফাঁকতালে আমরাও জেনে গেলুম।



হালে সংসদভবনে মন্ত্রীমহোদয় গান গাইলেন। এমনিতে এই সরকারী ভবনটার তো ভাড়া-টাড়ার বালাই নেই! সরকারীভবনে বিদ্যুতবিল দেওয়া লাগে না, ক্যান্টিন ফ্রি- খরচ তেমন আর কীই-বা! তো, এখানে কেউ গান গাইলে সমস্যা কোথায়?
এমনিতে আমি বিভিন্ন সময় লিখে থাকি, প্রত্যেক জায়গার একটা নিজস্ব ভাষা আছে। গুরুগম্ভীর কোনও আলোচনায় কেউ টেবিলে উঠে ‘ধুম মাচা দে’ গেয়ে উঠলে ভাল দেখায় না ...। এখন আর এটা লেখার যো রইল না, বুঝলেন? কেবল ভালই দেখায় না, অতি উত্তম দেখায়। কেন বলছি।
স্পিকার মহোদয়কে দেখলাম সমাজকল্যাণমন্ত্রী অন্য মন্ত্রীদেরকে ভাই বলায় এই ‘ভাই’ শব্দটা এক্সপাঞ্জ করেছেন অথচ গান এক্সপাঞ্জ করেননি কারণ এটা এক্সপাঞ্জ করার মত বিষয় না। আমাদের দূর্ভাগ্য, সংসদসদস্যদের মধ্যে কোনও নৃত্যশিল্পী নেই!

অল্প দিন পূর্বে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নাকি এক সভায় বলছিলেন তাঁর ‘সিগারেট খাওয়া’ প্রসঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘তাঁর পোয়া’ পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে কিন্তু মুখ খুলেনি বলে তিনিসহ প্রচুর মুক্তিযোদ্ধা প্রাণে বেঁচে যান। পরে সেই পোয়াটাকে পাকবাহিনী মেরে ফেলে। এই বেদনায় সেই যে তিনি সিগারেট খাওয়া ধরলেন আজও স্টিম ইঞ্জিনের মত ভকভক করে ধোঁয়া ছাড়ছেন যত্রতত্র।
এখন আজেবাজে নিউজপোর্টালে এই ভুবনটা ভরে গেছে। তাই এমনই এক পোর্টাল থেকে আগত এই খবরটা নিয়ে গা করার কিছু ছিল না। এরিমধ্যে কেউ-কেউ বিস্তর আঁক কষে দেখিয়ে দিলেন যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল তখন আমাদের সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর বয়স ছিল তেইশ বছর! অতএব...।

এদিকে এই তথ্যে আবার অনেক স্থানে কান্নার রোল পড়ে গেল। আহা-আহা, মানুষটা বুকে পাথর বেঁধে সিগারেটের উপরই বেঁচে আছেন। একজন তো এমন একটা লেখা লিখলেন তিনি মন্ত্রী মহোদয়ের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে পূর্বে যেসমস্ত লেখাগুলো লিখেছেন তা লিখে ভারী অন্যায় করেছেন ভবিষ্যতে আর এমন অন্যায় করবেন না। ওই ভদ্রলোকের লেখা পড়ে মনে হচ্ছিল পারলে তিনি উড়োজাহাজের চাকার নীচে হাত রেখে বিচ্ছিন্ন করে ফেললে খানিকটা আরাম পাবেন।
পরে অবশ্য মন্ত্রীমহোদয়ের বিষয়টা ‘কিলিয়ার’ হলো! তিনি তাঁর পোয়া বলতে সহযোদ্ধার কথা বলেছেন। যে সহযোদ্ধাকে তিনি বড়ো ‘ছেনেহ’ করতেন।

যাই হোক, মন্ত্রীমহোদয়ের প্রসঙ্গ থাকুক। এবার অন্য প্রসঙ্গ-‘একালের কলম মুক্তিযোদ্ধাদের’ সঙ্গে আমার খানিকটা দ্বিমত আছে। আমার বক্তব্য ১৯৭১ এবং ২০১৫ এক না- যেটা আমি এক লেখায় লিখেছি, '১৯৭১ সাল এবং ২০১৪ এক না' [১]
আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করি, এই দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা কী অবলীলায়ই-না অন্যের জমি অন্যায় ভাবে নিজ দখলে রাখেন।
এখন এই নিরেট সত্যটা কি আমরা চেপে যাব? কোনও মুক্তিযোদ্ধা অন্যায়-অপরাধ করলে সেটা কি আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ বলে গণ্য হবে না? আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ফ্যাক্ট, ফ্যাক্টের সঙ্গে ফ্যান্টাসি মেশাব কেন আমরা?

সালটা সম্ভবত ২০০৬ হবে। ব্লগস্ফিয়ারে তখন মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে লিখি। মুক্তিযুদ্ধে একজনের কথা লিখতে গিয়ে সব লিখলাম কেবল এই জায়গাটা চেপে গেলাম, পাকবাহিনীর ভয়ে তিনি বাথরুমে লুকিয়েছিলেন। কিন্তু অরূপ কামাল ঠিকই চেপে যাওয়া অংশটা তুলে দিলেন। সেই দিনই এটা শিখলাম সত্যকে সত্যের মতই থাকতে দিতে হয়, এটাই সত্যের জোর- প্রকারান্তরে সত্যকে গোপন করাটাও এক প্রকারের অন্যায়। সত্যের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করলে সত্যের জোরটা নড়বড়ে হয়ে যায়।

* আজ পত্রিকা থেকে জানলাম (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৬ জুন ২০১৫, পৃ: ১১), "...সর্বশেষ ১০ জুন জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে সম্বোধন না করায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন...।" 

সহায়ক সূত্র:
১. ১৯৭১ সাল এবং ২০১৪ এক না: http://www.ali-mahmed.com/2014/03/blog-post_7.html 

Thursday, June 18, 2015

লাখের বাতি- লাখ টাকার প্রিন্স!

আগেকার সময়ে লোকজন লাখপতি হলে নাকি লাখের বাতি জ্বালাতো। এখন তো আর সেই দিন নাই রে, বাপু। এখন লাখপতি হলে লোকজন প্রিন্স হয়ে যায়। বাংলাদেশের ব্যাংকে নাকি প্রিন্স মুসার লাখ টাকা আছে! আজকাল ছিনতাইয়ের যে ভয় লোকজন ভয়ে অন্তর্বাসের ভাঁজে ‘ট্যাকাটুকা’ রাখে। মুসা সেই ঝুঁকি নেননি, তিনি ব্যাংকে রেখেছেন। মুসার বুদ্ধির আমি তারিফ করি।

এই মুসার কথা আমি জেনেছিলাম, সালটা ঠিক মনে নেই। তখন সবেধন নীলমনি ইলেকট্রনিক মিডিয়া বলতে বিটিভি। বিটিভিতে মুসার একটা সাক্ষাৎকারের মত নিচ্ছিল। ফাঁকে ফাঁকে মুসার এটা-সেটা দেখাতে দেখাতে তার জুতার কালেকশন দেখানো শুরু করল। তখন তো আর লেখালেখি করি না যে লিখে রাগ কমাবো। সাদাকালো ফিলিপস ২০ ইঞ্চি টিভির স্ত্রিণে টিস্যু ছুড়ে মেরেছিলাম মনে আছে। টিস্যুর সঙ্গে ‘থুক’ ছিল এটা এখানে উল্লেখ করাটা জরুরি না। শক্ত কিছুই হয়তো ছুড়তাম কিন্তু টিভিটা আমার ছিল না, ছিল আমার বাপের। সাহস হয়নি!

যাই হোক, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ক্ষেপে চটে গেলেন। চটে গিয়ে চটি নিয়ে এলেন। হুবহু মনে নেই অনেকটা এমন; গুছিয়ে যেটা বলছিলেন যেটা হচ্ছে, ‘বিটিভি কি আমার ছেঁড়া চটিটা দেখাবে টাকা যা লাগে দেব’।
সেই প্রথম মুসা স্যারের সঙ্গে আমার ‘চিনপরিচয়’। এরপর ‘চিত্রবাংলা’ নামের আউলা-ঝাউলা টাইপের একটা পত্রিকায় মুসা মহোদয়ের বিশদ কাহিনী এই আছে-সেই আছে পড়লাম। সেখানে এটাও পড়েছিলাম প্রিন্সেস ডায়না নাকি মুসার জন্য পাগল ছিলেন। পাগল না হয়ে উপায় আছে যা একখান ‘পিগার’ রে মাইরি! তখন মুসাকে নিয়ে লিখেছিলাম [১]
মুসা একটা আবদার করেছিলেন তার পরিবারকে ‘সেভেন স্টার ফ্যামেলি’ আখ্যা দেওয়া হোক [২]

হালে মুসার সাহেবের একটা ভিডিও দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সেই ভিডিওটার শুরু হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। তারপরই বলা হচ্ছে দেশ স্বাধীন হলো, মুসা মিয়া দেশের হাল ধরলেন বৈদেশে লোক পাঠিয়ে [৩]
থাকুক সেসব পুরনো কথা। নতুন কথা হচ্ছে ফেসবুকে একটা ইভেন্ট খোলা হয়েছে মুসা লোকজনের সঙ্গে দেখা করবেন। দেখা করবেন ৭ আগস্ট অথচ এখন পর্যন্ত ২৩৪০১ জন দেখা করার জন্য অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। আমি যখন লেখাটা লিখছি এই সংখ্যাটা আরও বেড়েছে বলেই অনুমান করি। আগস্ট মাস আসতে আসতে সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বঙ্গাল বলে কথা! মুসার অনুরক্ত লোকজনেরা মুসাকে ১ টাকা করে দিয়ে আসলেও মুসা অনায়াসে ‘ক্রোড়পতি’ বনে যাবেন। তখন মুসাকে আমরা ‘কুটিপতি’ বলে সম্বোধন করব। ‘মুসা বান গিয়া ক্রোড়পতি’...।

সহায়ক সূত্র:
১. যাত্রার প্রিন্স: http://www.ali-mahmed.com/2013/07/blog-post_2395.html
২. সেভেন স্টার ভাঁড়: http://www.ali-mahmed.com/2011/01/blog-post_08.html
৩. একজন নুলা মুসা এবং আমাদের মিডিয়া: http://www.ali-mahmed.com/2014/12/blog-post_19.html

Wednesday, June 17, 2015

পতাকা, তোমায় দিলাম মুক্তি!

আলবদর সম্পর্কে দৈনিক সংগ্রাম, ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ এ লিখেছিল, “আলবদর একটি নাম। একটি বিস্ময়! আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী আলবদর সেখানেই। যেখানেই দুস্কৃতিকারী, আলবদর সেখানেই। ভারতীয় চর কিংবা দুস্কৃতিকারীদের কাছে আলবদর সাক্ষাৎ আজরাইল!

মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ জানান, “আলবদররা যখন পালিয়ে যায় তাদের হেডকোয়ার্টার থেকে পাওয়া যায় বস্তা বোঝাই মানুষের চোখ- এই চোখগুলো যে বাঙ্গালীদের এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই”।
( দৈনিক পূর্বদেশ, ১৯ জানুযারী, ১৯৭২)

এই আলবদরপ্রধান মুজাহিদ। দেশ স্বাধীন হলো। কেউ বুকে হাত দিয়ে বলুক, কেউ কী কল্পনাও করতে পেরেছিল, এই বদরপ্রধানের গাড়িতে পতপত করে এই স্বাধীন দেশের পতাকা উড়বে? আমার কাছে তো মনে হয় এটাই এক অলীক, এটাই এক বিস্ময়- যেটা আজগুবি কোনও মুভিতেও অবাস্তব মনে হবে। অথচ এটাই বাস্তব।
হায় পতাকা, হায়!

যাও পতাকা, আজ তোমায় দিলাম মুক্তি...। 

মুক্তিযুদ্ধে আমাদের দেশের সেরা সন্তানদের খুন হওয়ার পেছনে আল বদরের নাম সরাসরি জড়িয়ে আছে। কয়টা কথা বলা যাবে এখানে?
১.  নিধন: শহীদুল্লাহ কায়সার: http://www.ali-mahmed.com/2010/10/blog-post.html
২. নিধন:অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী: http://www.ali-mahmed.com/2010/10/blog-post_03.html
. নিধন: ডাক্তার আলীম: http://www.ali-mahmed.com/2010/10/blog-post_02.html
. নিধন: ড. আবুল খায়ের: http://www.ali-mahmed.com/2010/10/blog-post_06.html
. আনোয়ার পাশা, রাশীদুল হাসান: http://tinyurl.com/pech3ad

*আর যারা এটা পূর্বে দেখেননি তাদের জন্য মওদুদির ছেলের ভিডিওটা এখানে দিয়ে রাখছি। যেখানে সে স্পষ্ট করে বলেছে আল বদর, আল শামস ১৯৭১ সালে কেমন নৃশংসতা চালিয়েছিল! ভিডিও ১ [*]:
এখানে সাক্ষাৎকারে মওদুদীর ছেলে হায়দার ফারুক মওদুদি বলছেন, "...আমরা নয় ভাই-বোন। কিন্তু আমার বাবা (মওদুদি) কখনই চাননি আমরা কেউ জামাতে ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত হই। একজন ড্রাগ ডিলার যেমন তার ড্রাগের প্যাকেট বাড়ির বাইরে রেখে আসে তেমনি আমার বাপও জামাতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগসূত্র বাসায় ভেতরে আসতে দিতেন না।..." ...ভিডিও ২ [*]:
জামাতে ইসলামীর জনক মওদুদীর ছেলের সাক্ষাৎকার থেকে আমরা আরও জানতে পারি, "...এবং কেমন করে আইএসআই এর সহায়তায় এই দেশে আল-বদর আল-শামস সৃষ্টি করা হয়েছিল। ওরা কেমন হিংস্র ছিল! খুররম মুরাদের প্ররোচনায় একেক লাইনে ১৫জন করে বাঙালিকে দাঁড় করিয়ে কেমন করে পাখির মত গুলি করে মারা হয়েছিল! লিংক: http://www.ali-mahmed.com/2013/07/blog-post_5646.html
... 
(ভাল কথা, মুজাহিদের গাড়িতে পতাকা উড়ছে এমন ছবি কারও কাছে থাকলে দয়া করে কি শেয়ার করবেন। এখন খুঁজে পাচ্ছি না, ছবিটা প্রয়োজন। )