Search

Tuesday, November 30, 2010

ক্রাচের রাজনীতিবিদ!

ছবি ঋণ: যুগান্তর
হরতাল বিষয়টা আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে বলেই সম্ভবত কথায় কথায় একজন বলছিলেন, আরে, হরতাল মান্ধাতার আমল থেকেই চলে আসছে।

মান্ধাতার আমল? আচ্ছা, মান্ধাতাটা কে আর এর আমলটা আবার কবে থেকে শুরু হলো?
খোঁজ করতে গিয়ে মজার তথ্য পাওয়া গেল। হিন্দু পুরাণ মতে, মান্ধাতা ছিলেন ভারতবর্ষের সূর্যবংশের রাজা, রাজা যুবনাশ্বের পুত্র। যুবনাশ্বের বাচ্চাকাচ্চা হচ্ছিল না। অনেক তপস্যার পর সাধুরা যুবনাশ্বরের স্ত্রীর জন্য বিশেষ পানি দেন, যা পান করলে বাচ্চা হবে। কিন্তু মন্ত্রপূত পানিটা ভুলে রানীর বদলে রাজা খেয়ে ফেললে রাজা নিজেই গর্ভধারণ করেন এবং তার সন্তানও হয়! কিন্তু এই শিশুর জন্য মায়ের দুধের কোন ব্যবস্থা ছিল না বলে দেবরাজ ইন্দ্র এর সমাধান দেন; 'ধাস্যতি মাময়'- এখান থেকেই এই শিশুর নাম, মান্ধাতার উৎপত্তি।

যাই হোক, আমি পূর্বের একটা লেখায় লিখেছিলাম, হরতাল মেনে নিতে আমার কোন আপত্তি নাই যদি আমাদের রাজনীতিবিদরা ছবির ওই মহিলার মত খানিকটা কষ্ট করে দেখান [১]। এই বক্তব্যটা ছিল দেলোয়ার সাহেবের প্রতি।
এখন দেখছি সৈয়দ আশরাফ সাহেবের বেলায়ও এটা প্রযোজ্য। আশরাফুল ইসলাম মানুষটা ভারী সজ্জন কিন্তু আমাদের দেশে দেশের চেয়ে দল বড়ো! মিডিয়ায় আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, "...হরতাল আমাদের সংবিধানের একটা অংশ।...আইন করে হরতাল বন্ধের ইচ্ছা সরকারের নেই। শান্তিপূর্ণ হরতাল...।" 

একজন দুর্বল পায়ের মানুষ যেমন ক্রাচ জিনিসটায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তেমনি আমাদের রাজনীতিবিদরা হরতাল নামের ক্রাচ ব্যতীত ভাবতেই পারেন না। এমনকি আগাম ক্রাচ কিনে রাখেন কখন কাজে লাগবে বলে। তাই এঁরা আইন করে এটা বন্ধ করবেন না কারণ এঁরা জানেন অতীতে এই ক্রাচটা এঁরা অবলীলায় ব্যবহার করেছেন, ভবিষ্যতেও লাগার সমূহ সম্ভাবনা। তাই অতি প্রয়োজনীয় অস্ত্রটা, হরতাল নামের ক্রাচ হাতছাড়া করা যাবে না।

সৈয়দ আশরাফের এটা অজানা থাকার কথা না। 'শান্তিপূর্ণ হরতাল' এটা কেবল আপনাদের সু-বচন, শুনতে ভাল শোনায়। বাস্তবে কি হয় এটা জানার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হতে হয় না। হরতালের নামে একটা মানুষকে খুন করে ফেললে তাকে কেউ খুনি বলবে না, একটা গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে ফেললে, আগুন ধরিয়ে দিলে কোন জবাবদিহি করতে হবে না। উল্টো পুলিশ আরও ধমকাবে, মিয়া, জানেন না হরতাল; আবার গাড়ি নিয়ে বের হইছেন।
এমন সময়ে পুলিশও অপরাধ করলে তাকেও জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয় না বরং 'সাবাসি' পাওয়া যায়। হরতালের পূর্বে যে ধড়পাকড় শুরু হয়, কোমরে দড়ি বেঁধে দলে দলে লোকজনকে সিএমএম কোর্টে হাজির করা হয়, এরা সবাই কি অপরাধি?

এঁদের মধ্যে থেকে নিরপরাধ কাউকে কি পাওয়া যাবে না যে নিরীহ মানুষটা মাত্র গ্রাম থেকে ঢাকা এসেছেন, পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আহা, পুলিশের বুঝি লক্ষ্যমাত্রা নেই? দেখা গেল, প্রতি থানার ভাগে পড়েছে ৫০ জন অথচ থানার লোকজনরা ধরতে পেরেছেন মাত্র বিশ-পঁচিশ জন। ওসি সাহেবের চেয়ার থাকবে বুঝি! হয়তো এদের নিজেদের মধ্যে কথা চালাচালি হয়, বস, অবস্থা কেরোসিন। ১০টা শর্ট আছে। পারলে এদিকে চালান কইরা দিয়েন।

তো, মান্ধাতার আমল থেকে কিনা জানি না তবে হরতাল ছিল, আছে, থাকবে। নতুন মাত্র যোগ হলো, 'শান্তিপূর্ণ হরতাল'।
হরতালে যখন গুলি করা হবে তখন আমাদের বলতে হবে, ভাই, আস্তে গুলি কইরেন। বা গাড়ির কাঁচ গুড়িয়ে দেয়ার সময় আগেভাগে জানিয়ে দিতে হবে, কারণ নইলে চুলে কাঁচের গুড়ো আটকে থাকবে যে

*জনাব আশরাফ, আপনাকে কি মনে করিয়ে দেব আপনার নেত্রী হরতাল প্রসঙ্গে কি বলেছিলেন? "I am giving announcement to shun the politics of hartal both as prime Minister and the president of Awami League in the greater interest of the country," the Prime Minister declared while exchanging views with editors of different national dailies and news agencies at her office. (The Bangladesh Observer, November 16, 1998)

ফিরোজ গাজী, কালের কন্ঠ
হরতাল নামের দানব কেমন করে সমস্ত বিবেচনা বোধ খেয়ে ফেলে তার একটা নমুনা।

হা ইশ্বর, এরা নাকি আমাদের পুলিশ বাহিনীর লোকজন!  

সহায়ক লিংক:
১. হরতাল...: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_23.html

Sunday, November 28, 2010

রতনে রতন চেনে

ইউনূস সাহেবকে নিয়ে যখন এই লেখাটা লিখেছিলাম, 'ওই আসে মহাপুরুষ' [১] তখন থেকে অপেক্ষায় ছিলাম, কখন সেই অপেক্ষার ক্ষণের অবসান হবে? আজ সেই দিন। আমার অপেক্ষা শেষ হলো। ইউনূস সাহেব সামাজিক ব্যবসার নামে আমাদের উদ্ধার করছেন আর এখানে আমাদের আলোচ্য মিডিয়া প্রথম আলো থাকবে না তা কী হয়!

সামাজিক ব্যবসার আড়ালে 'শক্তি' দই এসেছে, 'ভেওলিয়া' পানি এসেছে, 'এডিডাস' জুতা আসছে, আগামীতে 'জ্যাকসনিয়া' বাতাস আসবে। আশা করছি, এই সামাজিক জুতা না খেয়ে পায়ে দিলে ক্ষুধা কম লাগবে।
হরলিকস বেচারারা এখন নামকরা স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের ধরে এনে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ঘটা করে বলাচ্ছে, প্রকারান্তরে কেমন করে হরলিকস গেলাতে হবে। হরলিকস খেলে পাঁচ ফুটের বঙ্গালের আট ফুট 'টলার' সন্তান হবে কেমন করে! বেচারা হরলিকস, এরা সম্ভবত ইউনূস সাহেবের খোঁজ পায়নি! করপোরেট বন্দুক রাখতে ইউনূস সাহেবের প্রশস্ত কাঁধ আছে কোন দিনের জন্যে!
কালে কালে এই সব কোম্পানির জন্য মামা আবদার করবেন [২], তখন আমরা তাঁর ভাগিনারা সেই আবদার রক্ষা না করে উপায় কী!

ছবি ঋণ: প্রথম আলো
আজকের প্রথম আলোয় ইউনূস সাহেবের সামাজিক ব্যবসা নিয়ে ঢাউস লেখা ছাপানো হয়েছে।
তিনি আমাদের গ্রামের বাচ্চাদের শক্তি দধি খাইয়ে খাইয়ে দেশময় পুষ্টির মহোদধি বানিয়ে দেন। হাভাতে বাচ্চাদের কেমন তন্দুরস্ত-নীরোগ করে দিচ্ছেন তার নমুনা আমরা দেখতে পাই এই ছবিতে।

সুলতান সাহেব এদের হৃষ্টপুষ্ট দেখার স্বপ্ন দেখতেন আর আমাদের ইউনূস সাহেব বাস্তবে তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন!
মিডিয়া ইউনূস সাহেবের মুখ থেকে কি শোনাচ্ছে তা আমরা একটু শুনি:
"...দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামর্থ্যের কথা ভেবে প্রতিটি ৬০ গ্রাম ওজনের কাপের দাম রাখা হয়েছে সাত টাকা...।" (প্রথম আলো, ২৭ নভেম্বর, ২০১০)

আরেক প্রিন্ট মিডিয়া যা বলছে:
"একটি শক্তি দইয়ের দাম ছয় টাকা...।" (কালের কন্ঠ, ৩১ অক্টোবর, ২০১০)
এ পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে ইউনূস সাহেব বলছেন, "...তিনি এখন এককাপ দই বিক্রি করেন ছয় টাকায়। প্রতি কাপে এক টাকা ত্রিশ পয়সা কমিশন পান...।"
একালের মহা সুদখোর ইউনূস সাহেবের সুদের হার যেমন আজও আমার বোধগম্য হয়নি তেমনি তাঁর কথাও! তিনি বলছেন, এককাপ দই বিক্রি হয় ছয় টাকায়। কমিশন এক টাকা ত্রিশ পয়সা। মানে কী! কাপের দাম কি চার টাকা সত্তর পয়সা?

শুনতে তো ভালই লাগে। যাক, দুই চুমুক দইয়ের দাম তাহলে ছয় টাকা। অবশ্য এই কুতর্কে আমি যাব না ছয় টাকা এই দই খাওয়ালে শিশুরা এই ছবির মত হৃষ্টপুষ্ট হবে, কি হবে না! কারণ ইউনুস সাহেব বলেই দিচ্ছেন, "...সপ্তাহে দুই কাপ খাওয়ালেই তার পুষ্টির চাহিদা মিটে যাবে...।"
অবশ্যই মিটে যাবে। অবশ্য এটা এই দেশের পুষ্টিবিদরা ভাল বলতে পারবেন, এই দই সপ্তাহে দুবার খেলেই পুষ্টির 'পু' কোথায় থাকবে আর 'ষ্টি' কোথায় থাকবে। এই বিষয়ে আমার কোন মতামত দেয়াটা সমীচীন হবে না।

কিন্তু আমাদের মিডিয়ার এই বোধ, দায়িত্ব, এই ইচ্ছাটাই নাই, ইউনূস সাহেব নামের মানুষটার সব কথাই আকাশলোকের বাণী না যে কথায় কথায় কেবল অদৃশ্য ল্যাজ নাড়াতে হবে।

এক চুমুক যেখানে দইয়ের কাপ বিক্রি হয় দশ টাকায় সেখানে মিডিয়ার পক্ষে ছয় টাকা-সাত টাকা বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলার অর্থ কী!
সব বাদ দিলেও এদের দইয়ের কাপের গায়েই লেখা আছে আট টাকা! যেখানে এরা নিজেরাই লিখে রেখেছে আট টাকা সেখানে ছয় টাকা-সাত টাকা বলে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করার অর্থ কী!
নাকি আকাশলোকের বাসিন্দা মুখ হাঁ করলে 'হর্স মাউথ' মনে না-হয়ে বেদবাক্য মনে হয়? তাই বুঝি, না? আ-হা, রতনে যে রতন চেনে...।

*আমাদের ইউনূস সাহেব চড়া সুদে নিম্নবিত্ত মহিলাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছেন এটা আর যেই বিশ্বাস করুক আমি করতাম না। এই বিশ্বাসটা দৃঢ় হয়েছিল ন্যানো ক্রেডিট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে [৮]ন্যানো ক্রেডিট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি, জিরো ইন্টারেস্টেই এরা টাকা শোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যান সেখানেচড়া সুদ দিয়ে? এই সুদ দিয়ে ঈশ্বর ব্যবসা করলেও সম্ভবত মুখ থুবড়ে পড়তেন!
সুফিয়া খাতুন নামের যে মহিলাকে দিয়ে ইউনূস সাহেবের জোবরা গ্রাম থেকে জোব্বা গায়ে দিয়ে যাত্রা শুরু সেই ভদ্রমহিলা মারা গেছেন। তাঁর সন্তান বলেন, "..."গ্রামীণ ব্যাংকের স্থানীয় কর্মকর্তারা ঘরের পাশের দোতলা পাকা দালান দেখিয়ে দিয়ে ছবি তোলায়। ...চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকা কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হয়েছিলো। গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি শোধ করতে আম্মাকে অন্যজনের কাছ থেকে আবার ঋণ নিতে হয়েছিলো।" (bdnews24.com)
**ইউনূস সাহেব দরিদ্র হটাবার নাম করে কেমন করে টাকা-পয়সা নয়-ছয় করেছেন তার খানিকটা নমুনা পাওয়া যাবে এখানে, দরিদ্রদের ইউনূসফাঁদ: http://bdnews24.com/bangla/details.php?cid=2&id=143014&hb=top 
         
সহায়ক লিংক:
১. ওই আসে মহাপুরুষ: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_04.html
২. মামা বাড়ির আবদার: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_12.html
৩. bdnews24.com: http://www.bdnews24.com/bangla/details.php?id=143190&cid=2 

Friday, November 26, 2010

ফিরে দেখা: ২

কল্লোলের চোখ ঘুমে বন্ধ হয়ে আসছে।
ওপাশ থেকে জামির উৎফুল্ল গলা, আচ্ছা শোন, যে জন্য ইনফ্যাক্ট ফোন করেছি। মহা সমস্যায় পড়েছি। রুমে দাঁত মাজছি। বুঝলি! রাত তখন পৌনে-।’
‘আ, জিলাপী বানাচ্ছিস কেন!’
‘কী মুশকিল, বলতে দিবি তো! বেসিনে বেশ কটা পিঁপড়া ডিনার সেরে হাঁটাহাঁটি করছে, পায়চারী-টায়চারী গোছের কিছু একটা আর কী! শালার পিঁপড়ারা সম্ভবত রবার্ট ফ্রস্টের কবিতা-টবিতা পড়ে...ওয়াকস আ ন্যানো মাইল বিফোর আ স্লীপ।
‘আচ্ছা-আচ্ছা, বুঝলাম, রবার্ট ফ্রস্ট এদের কবিতা পড়ার জন্য পাঠিয়েছে। হুঁ, তারপর,’ ঘুমে কল্লোলের চোখ ভারী হয়ে আসছে। নিঃশব্দে হাই তুলল। পাগলটা কতক্ষণ জ্বালাবে কে জানে! অসাধারণ লোকগুলো আধপাগলা হয় কেন কে জানে!


জামি মহা উৎসাহে আবারও শুরু করল, ‘তুই ব্যাটা দেখি  থ্রি স্টুজেসকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছিস। তো, পিঁপড়াদের সরাতে বেশ ক’বার চেষ্টা করেছি। এরা গা করছে না। এদের কাছে আমি কি, বল কি, দৈত্য না? কান্ড দেখ, আমার মত দৈত্যকে মোটেই পাত্তা দিচ্ছে না। শালা সব আহাম্মক তো, শরীরের চেয়ে চল্লিশ গুণ বেশি ওজন অনায়াসে হাসতে হাসতে টেনে নিয়ে যায়। কুলি করতে পারছি না, পেস্ট শুকিয়ে চটচট করছে। কী অবস্থা, বল দেখি।’
‘বিরাট সমস্যা,’ ঘুমে কল্লোলের দু'চোখ বন্ধ হয়ে এসেছে, হাত থেকে রিসিভার গড়িয়ে পড়তে চাইছে। চোখের পাতা জোর করে সিকিভাগ খুলে বলল, ‘এক কাজ কর, টানাটানি করে বেসিনটা খুলে ফেল। সমস্যা হলে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুড়িয়ে দে। এইবার বেসিনের পাইপে মুখ লাগিয়ে কুলি কর, আরাম পাবি।’
এই প্রথম জামি খানিকটা রেগে গেল, ‘আমি সিরিয়াস, আর তুই কী না ফাজলামো করছিস!’
‘আচ্ছা, তুই সিরিয়াস তাহলে, আই সী! এক কাজ কর, পানি ঢেলে দে।’
‘কী বলছিস, সব ভেসে যাবে
যে।’
‘ভেসে গেলে ভেসে যাবে, পিঁপড়াই তো! পিঁপড়া খাওয়ার চল এদেশে এখনও চালু হয়নি। চল থাকলে, কোটি কোটি পিঁপড়া ভাজি করে খেয়ে ফেলতি, মচ্ছব হয়ে যেত। অথবা ধর, ভাতের বদলে পিঁপড়া সেদ্ধ করে খাওয়া শুরু হল। নাম হল, 'পিঁপড়া ভাত'।’
‘এই, এই সব কী বলছিস,’ জামির আহত গলা।
‘জেনেশুনেই বলছি। মিঞা রসিক লাল, রস করার আর জায়গা পাও না! কুলি করার জায়গা পাচ্ছ না, হুপ। দুর্গের মত বাড়িতে আর বেসিন-টয়লেট নেই, নিদেনপক্ষে একটা ডিব্বাও নেই!’
জামি কিছুক্ষণ চুপ থেকে ক্ষীণ গলায় বলল, ‘আমার রুমে এ্যাটাচ বাথ নাই। এটা তুই জানিস, জানিস না? সরি, তোকে ডিস্টার্ব করলাম। বাই।’


কল্লোল কথা বলতে গিয়ে থেমে গেল, ওপাশ থেকে যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ও কী রাগ করল? আধ ঘন্টা ধরে চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিল! ওপাশ থেকে কেউ টেলিফোন উঠাল না! সম্ভবত টেলিফোনের প্লাগ খুলে ফেলেছে। এই আধ ঘন্টায় কল্লোল জামির তিন চৌদ্দ বেয়াল্লিশ গুষ্টি উদ্ধার করল।
কল্লোল নিজের রুমে ঢুকে অস্বস্তিতে পড়ে গেল। কাছাকাছি কোথাও ওয়াজ হচ্ছে। নিশুতি এ রাতে কিসের ওয়াজ! ফুল ভল্যুমে মাইক। ওর প্রচন্ড ইচ্ছা করছে, উঠে দেখে আসে, এই মধ্য রাতে ক’জনের ধর্ম উদ্ধার হচ্ছে। সংখ্যা গরিষ্ট এই ধর্মের লোকজনের কথা উপেক্ষা করলেও অন্য ধর্মের লোকজনকে যন্ত্রণা দেয়া কেন?


পূর্বে ওরা যে বাসায় থাকত, পাশেই মসজিদ ছিল। মসজিদের ছাদের সমস্ত পানি ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল রাস্তার উপর, মসজিদের অন্য পাশগুলো ফাঁকা। বর্ষাকালে রাস্তায় পানি পড়ে প্যাচপ্যাচে কাদা হয়ে যেত। লোকজন ভিজে জবজবা। বৃষ্টি থামার অনেকক্ষণ পরও চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ত।
ওই মসজিদের চারপাশে জানালা ছিল। অধিকাংশ সময় রাস্তার দিকে জানালাগুলো খোলা থাকত। মুসুল্লী সাহেবানগণ প্রচুর সময় নিয়ে গলা পরিস্কার করে, কফসহ থুথু সজোরে রাস্তার উপর ফেলতেন। একবার কল্লোলের উপর থুথু পড়ল। সর্তক হয়ে থুথু ফেলার জন্য ও কেন বলল, এ নিয়ে মুসল্লীরা বাজার জমিয়ে ফেললেন। প্রায় সবারই বক্তব্য অভিন্ন। মসজিদ থাকলে জানালা থাকবে, জানালা থাকলে থুথু ফেলা হবেই, থুথু ফেললে কারও না কারও গায়ে পড়বে, এ তো বিচিত্র কিছু না।
পরে একসময় এ মসজিদের ইমাম সাহেবকে ব্যাপারটা জানাল। ইমাম সাহেব অমায়িক ভঙ্গিতে জানালেন, নামাজীদের মত থুথুও পবিত্র। এইসব নিয়ে হইচই করায় খানিকটা ভৎর্সনাও করলেন। কল্লোল কেবল নির্বোধ চোখে তাকিয়ে ছিল, একটা কথও না-বলে ওখান থেকে সরে এসেছিল।

আগুনে সিগারেটের ছ্যাকা লাগতেই তাড়াহুড়ো করে এ্যাসট্রেতে সিগারেট ফেলল। উঠে জানালা বন্ধ করেও খুব একটা লাভ হল না। এ ঘরের ফ্যানটা নস্ট, গরমে সেদ্ধ হতে হবে। ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে জামির কথা ভাবল, ছেলেটা হুটহাট করে এমন সব পাগলামী করে। বেশ ক’বছর আগের কথা। বই মেলায় এক লেখিকাকে দেখে ফট করে বলে বসল: ম্যাডাম, আপনার কি জ্যাক দ্য রিপার-এর সঙ্গে পরিচয় আছে?
ঐ ভদ্রমহিলা সম্ভবত কোন বান্ধবী-টান্ধবীর সঙ্গে গল্প করছিলেন। থতমত খেয়ে গেলেন: কি বলছেন, কে আপনি?
ম্যাম, আমি কে এটা তো আপনার জেনে কাজ নেই। আপনার গদ্য লেখার হাত পছন্দ করি, অবশ্য সব লেখা না। ওদিন লিখলেন, আপনার প্রতিভা বুঝতে পারে এমন কোন পুরুষ এ শহরে নেই। আপনার যোগ্য কোন পুরুষ নেই। ঘুরিয়ে বললে, কোন পুরুষ আপনার নখের যোগ্য না, এইসব আজেবাজে কথা। এই জন্যই জানতে চাইছিলাম, জ্যাক দ্য রিপারের সঙ্গে আপনার পরিচয় আছে কি না, ওই ভদ্রলোক পরম যত্নে নেইল কাটার দিয়ে আপনার পায়ের নখগুলো কেটে দিত।
লেখিকার ডাগর চোখে আগুন, শাটআপ, ইয়্যু রাস্কেল!
ইজি ম্যাম। লেখেন তো শুধু এইসব অথচ তুচ্ছ, অমানুষ পুরুষদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মাখামাখি করতে বিন্দুমাত্র সঙ্কোচবোধ করেন না। কী অসাধারণ একটা উপায়ই না বের করেছেন। অসংখ্য মূর্খ লোকজন, সরকার আপনাকে নিয়ে লাফাতে থাকবে, অজান্তেই অসম্ভব নাম করে ফেলবেন। নোবেল-টোবেল পেয়ে যাওয়া বিচিত্র কিছু না।
কল্লোল জামিকে জোর করে সরিয়ে নিয়ে এসেছিল। জামি অসহ্য রাগে ওকে খামচে দিয়েছিল। চোখ লাল করে বলেছিল: আহাম্মক, আগ বাড়িয়ে দিলি তো পন্ড করে।
কল্লোলও সমান তেজে বলেছিল: এনাফ, যথেষ্ট পাগলামী হয়েছে।
হোয়াইট ডু য়্যু মীন বাই পাগলামী, জামি দুর্দান্ত রাগে কাঁপছিল বলেই ওর কথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। সমানে চেঁচাচ্ছিল, নারী মুক্তি, নারী স্বাধীনতা এইসব নিয়ে এত হল্লা করার কী প্রয়োজন। নারীরা আজ পাইলট হচ্ছে, মহাশূন্যে যাচ্ছে, বডি বিল্ডিং করছে। কাজের ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে ওদের একাগ্রতা বেশি, অনেক ক্ষেত্রে আই কিউও বেশি। নারী পুরুষে পার্থক্যটা কী? নারীদের গর্ভধারন করতে হয়, মাসের বিশেষ কিছু দিনে অনেকে কাবু হয়ে পড়ে, এই-ই তো! এটা তো কাঠামোগত পার্থক্য। একজন প্রাচীন লোকের শরীলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, যুবকের বেশি, সো। লড়াই করা উচিত মানুষের স্বাধীনতা নিয়ে। নারী স্বাধীনতা কি আবার , বা...।


কল্লোল ভারী বিব্রত হচ্ছিল। কী লজ্জা, চারপাশে লোকজন জমে গিয়েছিল। আসলে জামি রেখে ঢেকে কথা বলতে জানে না। ভান জিনিসটা ওর মধ্যে একেবারেই নেই। ওদের এক বন্ধু সুবির, মহা গল্পবাজ। দুনিয়ার যতসব গায়ে জ্বালা ধরানো কথা কল্লোলরা সহ্য করে যেত। কিন্তু জামি থাকলেই সেরেছে, মহা ভজঘট। একদিন সুবির চোখ মুখ আলো করে বলছিল: জানিস, আমার মামার না ডেইলি দশ হাজার টাকার ফ্রুটস লাগে।
জামি তক্কে তক্কে ছিল, কথাটা মাটিতে পড়তে দিল না। দু’কান লম্বা হাসি নিয়ে বলল: তোর কোন মামা?
আরে ওই যে, চিনিস না, গোল্ড মার্চেন্ট।
ওয়াও, ওদের টয়লেট কটা রে, জামির নিরীহ মুখ।
সুবির চোখ ছোট করে বলল: ওদের টয়লেট কটা এ খবর জানতে চাচ্ছিস কেন!
জামি গৃহপালিত জন্তুর মত মুখ করে বলল: না মানে জানতে চাচ্ছিলাম এজন্যে, ডেইলি দশ হাজার টাকার ফ্রুটস, আঙ্গুরই পাওয়া যাবে আনুমানিক দেড় মণ। তা, দু-চারটা টয়লেটে তো কুলাবে না।
জামি, খবরদার, খবরদার বলছি, সুবির রাগে দিশেহারা।
আরে যা-যা, মামদোবাজি আর কী। শালা চাপাবাজ, আমরা ডুডু খাই না।
কল্লোলের চোখের পাতা ভারী হয়ে গেল। জামির কথা, ওয়াজের কথা সব মিলিয়ে গেল।


সহায়ক লিংক:
*ফিরে দেখা, ১: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_24.html

Thursday, November 25, 2010

এই তালার চাবি আপনার কাছে, প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতির বিষয়ে লিখেছিলাম, হাতের নাগালে পেলেই তাঁকে কদমবুসি করব [১]। কিন্তু এখন যেটা মনে আসছে সেটা হচ্ছে, কিছু দূর্লভ তালা আছে যে চাবির হদিস জানেন এমন মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত অল্প। প্রধান বিচারপতি সেই অল্প মানুষদের একজন!

অনুমান করি, ক্রসফায়ারের নামে কিছু মানুষ মেরেছেন (যদিও এটা তিনি স্বীকার করেন না, আমিও সরাসরি জিজ্ঞেস করি না) এমন একজনের সঙ্গে একবার কথা হচ্ছিল। আমি আমার বক্তব্যে অটল ছিলাম, কোন অবস্থাতেই ক্রসফায়ার নামের বিচার বহির্ভূত অন্যায় আমি মানি না [২]
তিনি দুঃখিত গলায় বলছিলেন, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আমরা একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ধরি। আপনি কি জানেন, কখনও কখনও কতোটা ঝুঁকি নিতে হয়? আজকাল এদের কাছে যেসব অস্ত্র থাকে এসবের অনেকগুলো আমরা চোখেও দেখিনি! আর এই অবস্থায় আমি মারা গেলে আমার পরিবারের দায়িত্ব কে নেবে, বলেন? কেন আমি প্রাণের ঝুঁকি নেব, দেশের জন্য? শুনতে ভাল লাগে কিন্তু আমার বউ-বাচ্চা রাস্তায় ভেসে যাবে এটা ভেবে আমার ভাল লাগে না। জানেন, আমি তো কোন উৎসাহ পাই না। আগে এই ভুলটা প্রায়ই করতাম। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে একেকজন দানবকে ধরতাম, এক সপ্তাহের মধ্যে জামিন নিয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসত। কী লাভ, বলেন!

ছবি ঋণ: এম সাদেক, প্রথম আলো
আমাদের বিচার ব্যবস্থার অবস্থা কী ভয়াবহ এর কতটুকুই বা আমরা জানি? এই একটা নমুনাই কি যথেষ্ঠ না। এরপর এই দেশে আর কোথাও দাঁড়াবার জায়গা আছে বলে তো আমার মনে হয় না! আজ কেউ আমাকে মেরে ফেললে আমি নিশ্চিত এক দিনের মধ্যে সেই মানুষটা জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে পরদিনই আমার সন্তানকে মারবে। এমনটাই হবে। তাহলে আর গণতন্ত্র-গণতন্ত্র বলে চেঁচিয়ে লাভ নাই, স্রেফ জঙ্গলতন্ত্র! জঙ্গলের আইন।

টিটুর বেরিয়ে আসতে লেগেছে দেড় মাস, আমার খুনি বিটু-ফিটুর লাগবে এক দিন। কারণ প্রিন্ট মিডিয়ায় অজস্র প্রমাণ থাকার পরও টিটু জামি পেয়েছে আর আমার মত অখ্যাত মানুষের অখ্যাত খুনির খবর কে রাখবে?
মিডিয়ায় অজস্র প্রমাণ থাকার পরও এবং জামিন দেয়া প্রসঙ্গে সরকারি ল-অফিসার (পিপি) মজিবুর রহমান বলেন, "কুমিল্লার অস্ত্রবাজির ঘটনা সারা দেশে আলোচিত হয়েছে। আলোচনা হয়েছে জাতীয় সংসদেও। এ রকম ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজন আসামি জামিন পেয়েছেন। আমার আপত্তি সত্ত্বেও মহামান্য আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা তো কোনো মন্তব্য করতে পারি না।" (প্রথম আলো, ২৫ নভেম্বর ২০১০)

মহামান্য আদালতের বিরুদ্ধে কেউই কোন মন্তব্য করতে পারছেন না কিন্তু মহামান্য আদালত তো ঈশ্বর না যে কোন ভুল করতে পারেন না। মহামান্য আদালত কেন এই সন্ত্রাসীকে জামিন দিলেন এই নিয়ে আমার জানার কৌতুহল হচ্ছে। কেউ এই কৌতুহল মেটাতে পারবেন এমন ভরসা নাই। পারলে পারবেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর কাছে আমার অনুরোধ, এই মামলার বিস্তারিত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখুন। এমন একটা বহুল আলোচিত চরিত্রকে কেন জামিন দেয়া হলো সরকারি উকিলের তীব্র আপত্তি থাকার পরও! যিনি জামিন দিয়েছেন সেই বিচারককে জিজ্ঞেস করুন, লিখিত আকারে বিচার বিভাগকে অবগত করানোর জন্য আপনি উদ্যোগ নিন। এটা আপনিই পারেন, এই তালার চাবি কেবল আপনার কাছে। এই তালাবদ্ধ ঘরটা খোলা বড্ডো প্রয়োজন। সমস্ত আলো আটকে আছে ওই তালাবদ্ধ ঘরে...।

সহায়ক লিংক:
১. প্রধান বিচারপতি: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_13.html
২. ক্রসফায়ার: http://www.ali-mahmed.com/2008/07/blog-post_29.html   

Wednesday, November 24, 2010

ফিরে দেখা: ১

জামির মেজাজ ফরটি নাইনের জায়গায় নাইনটি ফোর হয়ে আছে। রাত বাজে একটা দশ। চার পেগ হুইস্কি গিলে ফুরফুরে ভাব নিয়ে দাঁত ব্রাশ করে কুলি করতে বেসিনে যখন দাঁড়াল, ঘড়ির কাঁটা তখন বারটা চল্লিশ, ছুঁইছুঁই। এখনও জামি ঘোড়ার মত দাঁড়িয়ে আছে। বেসিনে বেশ ক’টা কালো পিপড়া। কুলি করতে পারছে না, পানি ঢেলে দিলেই সব ভেসে যাবে।
কে যেন বলতেন এটা, দাদি? যে কাল পিঁপড়া মুসলমান। তাহলে লাল পিঁপড়া কী হিন্দু! এ মুহূর্তে হিন্দু-মুসলমান নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। বেসিনে বেশ ক’বার টুথব্রাস দিয়ে ঠুকঠুক করল, বিশেষ কোন হেরফের হল না। শালার পিঁপড়া করছে কী, পায়চারি-টায়চারি করছে নাকি! আগুন চোখে তাকিয়ে রইল, ভস্ম করে দিলে বেশ হত। সমস্যা হচ্ছে, এই ক্ষমতা কেবল সাধু-টাধুদের দেয়া হত। কী যন্ত্রণা, ওর এই রুমটা আবার অ্যাটাচ বাথ না। এটাও সম্ভবত মন্তাজ মিয়ার কোন চাল। এই লোকটার কি ধারণা অ্যাটাচ বাথ হলে ওই কাজটা বেশি বেশি করা হবে। পুরনো ধাঁচের এ বাড়িটা কী বুদ্ধিতে কিনেছে কে জানে!

জামি পিঁপড়া এড়িয়ে মুখ ভরে পেস্ট ফেলল। পেস্ট শুকিয়ে মুখ কেমন চটচট করছে। বিরস মুখে সিগারেট ধরাল। কেমন ঝাল ঝাল লাগছে। তিতলি যে মোর সিগারেট খায় অনেকটা ওরকম। মেয়েটা কেমন যেন বদলে গেছে। খুবই সূক্ষ্ণ পরিবর্তন কিন্তু ওর চোখকে ফাঁকি দিতে পারেনি! এই তো সেদিন পর্যন্ত, সারাটা দিন, নিশুত রাত অবধি টো টো করে ঘুরত। ঢাকা শহর ভাজাভাজা করে ফেলছিল। ওদিন তো জামির মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার দশা, তিতলিকে পড়ার বই ঘাঁটতে দেখে। জামি কপালে ভাঁজ ফেলে বলতে বাধ্য হয়েছিল: কি তিতলি, ওরফে প্রজাপতি, কাম ফ্রম শুঁয়োপোকা, বিষয় কি!
ভাইয়া, ভাবছি অনার্সটা দিয়ে দেব।
হাহ, আপনার সংখ্যা বয়ফ্রেন্ডদের কী গতিটা হবে তাহলে!
তিতলি মাথা নিচু করে দাঁত দিয়ে নখের কোন খুঁটতে লাগল। জামির আর কিছু বলতে ইচ্ছে করেনি। নিঃশব্দে ওখান থেকে সরে এসেছিল। জামি উঠে এসে বেসিনে উঁকি দিল। মাথা ঝাঁকিয়ে বিড়বিড় করে বলল, হারামজাদা পিঁপড়া, ব্লাডি সফটিজ, লাইফ ইজ গোয়িং টু বি হেল।


পিঁপড়ার সংখ্যা আরও বেড়েছে। হারামজাদারা বাচ্চাকাচ্চা-কাচ্চাবাচ্চা সব নিয়ে এসেছে। জামি দাঁতে দাঁত ঘষল, ভাই পিঁপড়া সকল, বিষয় কী, ঘুম নাই! যান ভাইসব, ঘুমান গিয়া। সকাল সকাল উঠিয়া বলিবেন, সকালে উঠিয়া আমি পিঁপড়া মনে মনে বলি...।
মহা মুসিবত। কি করা যায়, আচ্ছা, টেলিফোন করে কল্লোল ব্যাটার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলে কেমন হয়। ওদের কি ফোন আছে এখনও, না কেটে দিয়েছে? অনেকক্ষণ রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে ঘুম জড়ানো হেঁড়ে গলা ভেসে এলো, ‘কে-কে?’
‘কে কথা বলছেন, প্লিজ?

‘আপনি কাকে চান?’
‘এটা কি ২৪০৪১...?’
ওপাশ থেকে টেলিফোনের রিসিভার সম্ভবত সশব্দে নামিয়ে রাখা হল। শালার রঙ নাম্বার। জামি আবার চেষ্টা করল। ওপাশ থেকে যে কান ফাটানো শব্দ ভেসে এলো, তা জোড়া দিলে হবে, ‘কে-এ-এ-এ?’
জামি কানের পাশ থেকে রিসিভার ইঞ্চি তিনেক সরিয়ে বলল, ‘এটা কি ২৪০-?’
‘হারামজাদা, এত রাতে ফাজলামি করার জায়গা পাস না। কুত্তার ছাও! ফোন তোর হো...।’
জামি স্তম্ভিত, এ কী কথা! চট করে সামলে নিয়ে যথাসম্ভব মোলায়েম গলায় বলল, ‘ভাইয়া প্লিজ, আমার কথা শুনুন। ভাইয়া কসম, আমি তো আর আপনার নাম্বার জানি না। অন্য নাম্বারে করছি, আপনার নাম্বারে চলে যাচ্ছে। এতে আমার কি দোষ বলুন ভাইয়া, আপনি অযথা রাগ করছেন। বড় ভাই, এক্সকিউজ করে দেন।’
ভদ্রলোক সম্ভবত খানিক লজ্জিত হলেন। প্রায় শোনা যায় না এরকম গলায় বললেন, ‘আপনার নাম্বার কত?’
জামি এবার অসম্ভব অমায়িক স্বরে বলল, ‘বড় ভাইয়া, আমার উপর রাগ নাই তো?’
‘আরে না, কী যে বলেন, হে হে হে!’
‘ভাই অনুমতি দিলে একটা কথা বলি?’
‘জ্বী-জ্বী, বলেন।’
জামি শান্ত গলায় বলল, ‘য়্যু ব্লাডি ফাকিন গাই, য়্যু ব্লাডি শিট অভ আ মিউল, নাউ বাজ অফ...।’
ওপাশে কবরের নিস্তব্ধতা।
‘ভাইজান রাখি?’
লাইন কেটে গেল। ও চোয়াল শক্ত করে আবারও চেষ্টা করল। রিং যাচ্ছে কেউ উঠাচ্ছে না। রেখে দেবে ভাবছে, মেয়েলি চিকন গলা ভেসে এলো, ‘হ্যালো, কে বলছেন?’
‘আপনি কে বলছেন, প্লিজ?’
‘আমি মৌ।’
‘জিস, রাত বাজে দেড়টা, তুমি টেলিফোন ধরেছ! সরি মৌ, তোমার কাঁচা ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলাম।’
‘জামি ভাই! না-না, আমি তো পানি খেতে উঠেছিলাম।’
‘কী অবস্থা, তোমার গলা একদম বুঝতে পারিনি!’
‘ঘুম থেকে উঠেছি তো, তাই।’
‘ইয়ে মৌ, কল্লোল কি জেগে আছে?’
‘জামি ভাই, কী যে বলেন আপনি, এতরাতে জেগে থাকবে ভাইয়া! ও হল কুম্ভকর্ন, ঘুমের রাজা। আমি না রাতে ভাইয়ার খাটের পাশে একজগ পানি রেখে দেই। সকালে ওর মাথায় ঢেলে দেই। জামি ভাই, তখন যদি ভাইয়াকে দেখতেন। হি হি হি।’

তোমাদের টেলিফোন লাইন চালু আছে। গুড-গুড।

‘টেলিফোনের কথা কেন বললেন, জামি ভাই।
‘এমনি-এমনি। অ্যাঁ মৌ, তোমাকে টেলিফোন চালু আছে কিনা এটা জিজ্ঞেস করেছি, এটা কিন্তু তোমার ভাইয়াকে বলো না, ঠিক আছে?’
‘কেন, জামি ভাই?’
‘এমনি-এমনি, কোন কারণ নেই। তোমার ভাইয়ার সঙ্গে একটা বাজি ধরেছি, এই আর কী। তুমি কিন্তু বলো না, এ্যাঁ। কাল তোমার স্কুল আছে না, শুয়ে পড়ো। ইয়ে, কল্লোলকে একটু ডেকে দাও, বলবে আমি ফোন করেছি। খুব জরুরি দরকার।’


দীর্ঘ সময় পর কল্লোলের রাগী গলা ভেসে এলো, ‘আপনার কি সব গ্রে মেটারই আউট হয়ে গেছে। গেছে না, ঠিক ধরেছি। এবার টেলিফোনটা শক্ত করে ধরে নিজের মাথায় বাড়ি দেন।’
‘খুব মৌজে আছি রে, ফুরফুরে ভাব। খানিকটা অলিপান, আ মীন মদ্যপান করেছি। বেশি না, চার পেগ। হা হা হা। ভাবলাম তোর সঙ্গে শেয়ার করা যাক।’

তুই আবার কি ছাতাফাতা শেয়ার করবি!
আরে শুনলে তুই পাগল হয়ে যাবি।
কল্লোল রাগ চেপে বলল, ‘আজ পর্যন্ত কোন পাগল কাউকে পাগল বানাতে পেরেছে বলে অন্তত আমার জানা নাই। তা টেলিফোন করেছিস কেন?’
‘দেখলাম তুই জেগে আছিস কিনা। তুই ঘুমুচ্ছিলি নাকি? আচ্ছা যা, শুয়ে পড়।’
‘ঘুম ভাঙ্গিয়ে এখন এটা বলছিস, তুই দেখি বিরাট ফাজিল! আর আমি কি তোর মত নিশাচর ড্রাকুলা রে, যে এই মধ্যরাতে জেগে থাকব!’
‘শোন, কাল তোকে জরুরী একটা কথা বলতে ভুলে গেছি-’ এটুকু বলে জামি হাসি একান ওকান করে চুপ মেরে গেল।
‘জরুরি কথাটা কি, অবশ্য আমার ধারণা জরুরী কথাটার অর্থ আপনার জানা নেই।’
‘তোর লাল চশমাটা দেখে ভাবছিলাম এই জঘন্য জিনিস কোত্থেকে জোগাড় করলি। জিজ্ঞেস করতে পরে আর মনে ছিল না। তা, কোম্পানী কি এই একটাই মাল বাজারে ছেড়েছে, বাপ!’
‘জামি, তোর মাথাটা জোরে ঝাঁকা তো, ঝাঁকিয়েছিস? শব্দ হচ্ছে না, হচ্ছে? ঠিক ধরেছিস, কয়েকটা নাট-বল্টু ছুটে গেছে। কাল ওগুলো টাইট দিয়ে ফোন করিস।’
জামি গলা ফাটিয়ে গা দুলিয়ে হাসতে লাগল। কল্লোলের কানের পর্দা, সম্ভবত টেলিফোনের তারও কাঁপিয়ে। কল্লোল চট করে রিসিভারের কাছ থেকে কান সরিয়ে নিল। বদমাশটা দিয়েছিল কানের বারোটা বাজিয়ে। হিসহিস করে বলল, ‘জামি, এমন জঘন্য করে হাসতে আজ অবধি কাউকে দেখিনি।’
‘বাঁচা গেল-আজ তো দেখলি। অ, দেখবি কি করে, টেলিফোনে তো সে উপায় নেই! ইয়ে, বিশ্বকাপের খেলা দেখছিস না?’
‘না।’
‘আশ্চর্য, তুই একটা মানুষ!’
‘ব্যাটা গর্দভ, বিশ্বকাপের খেলা কী দেয়ালে দেখায়, টিভি থাকলে না দেখব!’
‘বলিস কী, তোদের টিভি কি হয়েছে?’
‘অ্যাকুরিয়াম বানিয়ে ফেলেছি। রং বেরং-এর মাছ ছেড়েছি।’
‘অ,’ জামি একটা জোর ধাক্কা খেল। টিভি বিক্রি করে ফেলেছে! এদের তাহলে চরম দুঃসময় যাচ্ছে। গলার ভাব গোপন করে বলল, ‘সৌদি আরব-হল্যান্ডের খেলা দেখছিলাম, বুঝলি। ক্যামেল টু ক্যাডিলাক ভাইজানরা কেমন খেলে এটাই ছিল কৌতুহল। খেলা আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল। তুই তো জানিস, খেলা-টেলায় আমার তেমন আগ্রহ নাই। আমি খেলা দেখা শুরু করলাম এখান থেকে, সৌদি এক, হল্যান্ড শূণ্য। আমার মনে হচ্ছিল সৌদি ভাইজানরা এক গোল খেয়ে ফেলছে। কিছুক্ষণ পর ভুল ভাঙ্গল, হল্যান্ড এক গোলে পিছিয়ে আছে। চিন্তা কর, কী বোকা আমি, ব্রেন হয়ে গেছে হালুয়া। হা হা হা।’
‘এই সত্যটা জানতে তোর এতটা সময় লাগল! তোর খুলির ভেতর বাতাস হুহু করে বয়, এটা সবাই জানে; কল্লোল রাগে গরগর করে উঠল। পাগলটার কতক্ষণে পাগলামি থামবে কে জানে! কল্লোলের চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসছে।


সহায়ক লিংক:
* তিতলি তুমিও: http://tinyurl.com/3y93om8

Tuesday, November 23, 2010

হরতাল মানি, তবে...

যা বলেছিলাম, হরতাল নামের পশুটা এগিয়ে আসছে গুটিগুটি পায়ে [১]। এটা টের পাওয়ার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হতে হয় না, পশুটার গায়ের গন্ধই বিলক্ষণ বলে দেয়!
তবলার ঠুকঠাক শেষ হয়েছে, যথারীতি ৩০ নভেম্বর হরতাল ডাকা হয়েছে। না দিয়ে উপায় কি, জনগণ নাকি চাচ্ছে! জনগণ নাকি স্বইচ্ছায় হরতাল কামনা করেন, নিজেরাই নিজেদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন, মহা আনন্দে সাধের গাড়িটা গুড়িয়ে দেন।
কালে কালে এই হরতাল দেয়া হবে বৃহস্পতিবারে কারণ শুক্র-শনি এমনিতেই সরকারী ছুটি। হরতালের লম্বা ছুটিতে অনেকে যেন চুটিয়ে দেদারসে বাচ্চা পয়দা করে দেশ উদ্ধার করতে পারেন এই জন্যে। দেশের জন্য কী ভাবনা আমাদের ন্যাতাদের!

তদুপরি আমি নির্বোধ পূর্বের লেখায় লিখেছিলাম, হরতাল আমি মানি না। এই কারণে গণতন্ত্রের কি বেহাল দশা হলো এই নিয়ে নতুন করে আলোচনায় যেতেও চাচ্ছি না।
আমি এও লিখেছিলাম, হরতাল এই দেশের সমস্ত মানুষ মেনে নিলেও এই ভয়াবহ অন্যায়, ন্যায় হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি না।
এই দেশের সুশীলদের স্বর এই একটা জায়গায় এসে এমন নিম্নে ধাবিত হয় যে তাদের হর্স-মাউথ চিঁ-হিহি রব থেকে ইঁদুরের চিঁচি রব হয়ে যায়। সম্ভবত এদের মস্তিষ্কও নিম্নে ধাবিত হয়- নিম্নে না পেছনে সেই আলোচনায় গিয়ে মূল প্রসঙ্গ থেকে এখন আর সরে যাই না।
তো, এই দেশের সাদা গোঁফঅলা সুশীলরা সবাই মেনে গেলে আমার মত কুশীল না মানলে কী আসে যায়! স্রোতের প্রতিকূলে গিয়ে তো লাভ নাই তাছাড়া এই সব সুশীলরা আমাদের ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করেন আমাদেরকে ভাবান। তিন টাকা দামের কলমবাজ, আমারও না ভেবে উপায় কি?

আইন করে হরতাল বন্ধ করা হবে না কারণ বর্তমান সরকার এই অস্ত্রটা রেখে দেবে। বর্তমান সরকার যখন বিরোধী দলে থাকবেন তখন তাঁদেরও এই হরতাল নামের ক্রাচের প্রয়োজন হবে। আমাদের রাজনীতিবিদদের পা বড়ো দুর্বল-বিকলাঙ্গ, ক্রাচ ব্যতীত হাঁটার কথা ভাবাই যায় না।
এখন নিরুপায় আমিও ভাবছি, হরতাল মেনে নেব। তবে ছোট্ট একটা শর্ত আছে, খুব ছোট্ট...।
ছবি ঋণ: প্রথম আলো
এই ছবিটা প্রথম আলোয় ছাপা হয়েছিল। ছবিটা উঠিয়েছেন সম্ভবত মতি ভাইয়া নিজেই। মানুষটা লাজুক, নিজের নাম ছাপার অক্ষরে দেখতে চান না বিধায় আলোকচিত্রির জায়গায় ছাপা হয়েছে কেবল প্রথম আলো। এরা নিজেরা বদলাবে না। এই নিয়ে বিস্তর লিখেছি [২] আর শব্দের অপচয় করার কোন মানে হয় না। এই অহংকারী মিডিয়া ভুলে যায় এই গ্রহে ডায়নোসর নাই, রাশিয়া নাই...।

মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। গত হরতালের পরের ছবি এটা। এই ছবিটায় যে ভদ্রমহিলা ছাদে উঠার চেষ্টা করছেন তা খুব সহজই তো মনে হচ্ছে। আমার ছোট্ট আবদার হচ্ছে, যারা হরতাল দেবেন তাঁরা এভাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ট্রেনে ভ্রমণ করবেন, এরপর ফিরে এসে হরতাল ঘোষণা করবেন। খালেদা জিয়ার পায়ে সমস্যা আছে এই দোহাই দিয়ে হয়তো তিনি ছাদে উঠা থেকে পার পেয়ে যাবেন কিন্তু দেলোয়ার সাহেব? তাকে তো খানিকটা কষ্ট করে এভাবে ট্রেনের ছাদে উঠে দেখাতে হবে। এই বয়স্ক ভদ্রমহিলা পারলে তিনি পারবেন না কেন? দেলোয়ার সাহেব পারবেন বলেই আমার প্রবল আশা।
আর না পারলে আমি আগের কথাতেই অটল, হরতাল আমি মানি না। হরতালে আমি ঘুরে বেড়াব, পারলে ঠেকান।

সহায়ক লিংক:
১. হরতাল নামের পশুটা: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_20.html
২. প-তে পাকস্থলী, প-তে প্রথম আলো: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_07.html

Monday, November 22, 2010

মৃত্যু-ব্যবসা-তাচ্ছিল্য-অপরাধ

ক-দিন আগের কথা।
গোল হয়ে যেখানে লোকজন দাঁড়িয়ে তামাশা দেখে সচরাচর ওখানে আমি ফাঁকা মাথা গলাই না। কারণ কিছু বিষয়ে আমার কৌতুহল বাড়াবাড়ি রকম কম। বাংলাদেশে ওয়ান, টু, থ্রি  বললেই বিশ-ত্রিশজন লোক জমে যায়। কিন্তু এখানে আগ্রহ হলো এই কারণে, রেল-স্টেশনের মাটিতে একজন মানুষ লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। প্রথমে আমি ধারণা করেছিলাম, হয়ত কোন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে।

খানিক পর বুঝতে পারলাম মানুষটা মৃত। মৃত মানুষ আমার কাছ থেকে খুব একট দেখা হয়নি। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মত অবশ্য আমি বলার চেষ্টা করি না:
"আমার একটুও ভাল লাগে না
তবু শবানুগমনে
মাঝে মাঝে আমাকে যেতেই হয়-
নেহাত মুখরক্ষার জন্যে।"

পারতপক্ষে আমি যাই না, গেলেও সেসব ক্ষেত্রে চেনা মানুষগুলো নামের লাশগুলো কেমন অচেনা মনে হতো। হয়তো নাকে তুলো গুঁজে দেয়ার কারণে বা আরও অন্যান্য কারণ থাকতে পারে কিন্তু এখন যে মানুষটাকে দেখছি এঁকে দেখে মনে হচ্ছে, মানুষটা অনেককাল পর প্রশান্তির ঘুম ঘুমিয়েছেন। যেন ঘুমাতে পেরে বেঁচে গেছেন! জানি না, এটা হয়তো আমার দেখার ভুল কিন্তু তখন তেমনটাই মনে হয়েছিল।
এই সব অহেতুক ভাবনা একপাশে সরিয়ে কাজের ভাবনা আসে, এই লাশ নামের মানুষটা প্ল্যাটফরমে এভাবে পড়ে আছে কেন? আমার অন্য রকম আগ্রহ দেখে দু-জন মানুষ এগিয়ে আসে।
আমি বলি, ঘটনা কি? আপনারা কারা?

দু-জনের মধ্যে একজনের চোখে দেখি আবার সুরমা টাইপের কিছু একটা দেয়া, এ বলে, আমরা এই লাশ দাফনাইবার দায়িত্বে আছি।
আমি অনুমান করি, এরা ডোম। আমি আবারও বলি, দাফনাইবেন কিন্তু এর পরিবার -পরিজন কই?
সুরমা চোখের ডোম, পরিবার-পরিজন কই এইটা কেমনে কমু, কারও খোঁজ নাই? বেনামে দাফন হইব।
আমি এবার অবাক হই, মানে! আপনাকে কি স্টেশন কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিয়েছে?
মানুষটা অবজ্ঞার হাসি হাসে, হে-হে, হেরার এই ময়লা ঘাঁটাঘাঁটি করার সময় নাই।
আমি বলি, বেশ। বেনামে যে দাফন হবে, তা এই মানুষটার কাছে কোন ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি?
এবার অন্য ডোমটা কিছু কাগজ এগিয়ে দেয়। কাগজে কিছু ফোন নাম্বার। আমি ফোন নাম্বারগুলোতে একের পর এক ফোন করতে থাকি। কোন হদিস বের করা গেল না। অন্য পাশ থেকে এই নাম্বারগুলো থেকে যেটা বলা হলো, এই মানুষটা তাদের এখানে বিভিন্ন সময় শ্রমিকের কাজ করেছেন কিন্তু মানুষটার বাড়ি কোথায় স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারলেন না! নামটা পর্যন্ত না!
আমি ডোমদের কাছে জানতে চাই, তা এখন আপনারা কি করছেন?
সুরমা চোখের ডোম, লাশ দাফনে খরচ আছে না! টেকা দিব কেডা? পাবলিক থিক্যা টেকা তুলতে হইব।
এ আমাকে একটা হিসাব দেয়, এদের দুজনের খরচসহ সব মিলিয়ে ১২০০ টাকা লাগবে।

আমি একজনকে বললাম, আচ্ছা, এভাবে একটা লাশ ফেলে দু-পাঁচ টাকা উঠানো কেমন কুৎসিত দেখায়। এরা তো ১২০০ টাকা না-উঠা পর্যন্ত ছাড়বে না। তাছাড়া স্টেশনে আসা শিশুরাও এটা দেখছে। দাফনে ঠিক যে টাকা খরচ হবে এটা দিলে এবং এদের দুজনের ন্যূনতম মজুরি দেয়া হলে কেউ কি এর দায়িত্ব নেবে?
কেউ দায়িত্ব নেয়া দূরের কথা। উত্তরটা আমাকে হতভম্ব করল, লাভ নাই। আপনার দেয়াটা টাকাটাই মার যাবে। আর এটাই নিয়ম। বেওয়ারিশ লাশের এভাবেই দাফন হয়।

আমার মনে পড়ে গেল পূর্বের একটা ঘটনা। আমার সিনিয়র একজন, বন্ধু মানুষ। সব মিলিয়ে চমৎকার রুচিশীল একজন মানুষ। বিদেশে থেকে এসেছেন অনেকটা সময়। এদের সন্তানাদি নাই এই কারণেও মানুষটার প্রতি আমার আলাদা মমতা ছিল। বানিয়ে বানিয়ে অনেক আশার কথা শোনাতাম। কখনও কখনও বানিয়ে নিজেকেও জড়িয়ে ফেলতাম, এই দেখেন না আমার নিজেরও এই সমস্যা ছিল...ইত্যাদি ইত্যাদি।
মানুষটা হাতে স্বর্নের বাড়াবাড়ি রকম মোটা একটা ব্রেসলেট পরতেন। একদিন আমি তাকে বললাম, আপনার পোশাক-আশাক সবই ভাল লাগে কিন্তু এই মোটা ব্রেসলেটটা চোখে লাগে। উত্তরে সবাই যা বলে তিনিও তাই বলতে পারতেন, আমার তো ভাল লাগে, তাই পরি। তাহলে কথা এখানেই শেষ হয়ে যেত।

কিন্তু তার উত্তরটা আমার ভাবনায় জট পাকিয়ে দিল। তিনি বললেন, আমি এটা পরি এই জন্যে যেন অজ্ঞাত জায়গায় মৃত্যু হলে আমার মৃত্যু পর এই ব্রেসলেট দিয়ে আমার মৃত্যু পরবর্তী খরচ চলবে।
আমি মনে মনে ভাবছিলাম, মিয়া, তোমার দাফন হবে হয়তো কিন্তু কব্জী ব্যতীত কারণ কব্জী কেটে ব্রেসলেটটা যে হাপিস করে দেবে এতে কোন সন্দেহ নাই।  আমি বলব-না-বলব-না করেও বললাম, আপনার মৃত্যুর পর আপনার লাশ পাওয়া যাবে এটাই বা আপনি নিশ্চিত হলেন কেমন করে?
মানুষটা আমার উপর প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়েছিলেন এটা পরে জানতে পারি কারণ তিনি বিভিন্ন জনের কাছে আমার বিস্তর দুর্নাম করেছিলেন।

আমি একদা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, মানুষটা আর ব্রেসলেট পরছেন না। আমার আনন্দিত হওয়ার কথা কিন্তু ঘটনার পেছনের ঘটনা জেনে আমার মনটা বিষণ্ন হলো। এই মানুষটাকে এক মসজিদের হুজুর নিষেধ করেছেন বলে তিনি এটা এখন আর পরছেন না। হুজুর নামের এই মানুষটার দৌড় আমার জানা আছে। অশিক্ষিত একজন মানুষ। মাদ্রাসায় কেবল দু-পাতা আরবি পড়েছেন, ব্যস। পেপার পড়েন না, রেডিও শোনেন না। এই মানুষটাকে আমি একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'আচ্ছা, বাচ্চারা তো নিষ্পাপ-ফেরেশতা। তো, অন্য ধর্মের দুধের শিশু মারা গেলে তার কি গতি হবে? সে তো কোন পাপ করেনি তাহলে কেন সে বেহেশতে যাবে না'?
তিনি অনেক ভেবে টেবে বললেন, 'হ, বেহেশতে যাইব তবে ওইখানে চাকর হইব'।
আমার বন্ধুসম সেই সিনিয়র মানুষটাকে আর বলা হয়ে উঠেনি, একজন অশিক্ষিত মানুষের কথা আপনাকে বড়ই আমোদিত করল অথচ অন্তত আপনি আমার যুক্তিটাও শুনতে চাইলেন না!

যেমন আমি কায়মনে চাই। মৃত্যুর পর আমার শব নিয়ে কি করা হবে এই নিয়ে আমার কাতরতা নাই বরং এরচেয়ে আমি কাতর যে কারণে আমার মৃত্যুটা আমি যেখানে জন্মেছি, নড়বড়ে পড়ো বাড়ি নামের আমার বাসাটায়, সেখানেই যেন হয়। আমার ধারণা, এতে আমার মৃত্যুযন্ত্রণা কম হবে। এটাই আমার সুতীব্র ইচ্ছা।
বাস্তবে ফিরে আসতে হয়। আমি প্রিন্ট মিডিয়ার কারও কারও কাছে সহায়তা চাইলাম কিন্তু এদের এরচেয়ে অনেক জরুরি কাজ রয়ে গেছে। ভাবখানা এমন, বয়েই গেছে এই সামান্য বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে। অথচ এদের কাজই এটা, প্রয়োজনীয় সমস্ত ধরনের সুবিধা এদের হাতের নাগালে। আফসোস, এদের এখন তথ্যের পেছনে ছুটতে হয় না, তথ্য এদের পেছনে ছোটে।

একটা মানুষ আর ফিরে আসবে না এই নিয়ে কারও কোন মাথা ব্যথা নাই! কে নিশ্চিত করে বলতে পারবে এই মানুষটার কেউ-ই নাই। অন্তত জড়িয়ে ধরে রাখার মত কেউ ছিল না! কে মাথার দিব্যি দিয়ে বলতে পারবে, এই মানুষটা কাজ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময় তাঁর কিশোরী মেয়েটি গলা ধরে ঝুলে বলেনি: বাজান, ফির‌্যা আসার সময় আমার লিগ্যা লাল রেশমি চুড়ি নিয়া আইবা কিন্তুক।
মানুষটির পরিবার, এই কিশোরিটি কখনও জানবেই না- মৃত্যুর আগ অবধি বাবার অপেক্ষায় থাকবে। বাজান, এমুন করল ক্যান? মানুডা আর আসল না, রেশমি চুড়িও নিয়া আইলো না...কেন-কেন-কেন?  
কী অভাগা একটা দেশ! কত শস্তা একটা প্রাণ! কী তাচ্ছিল্য একটা মানুষের শেকড় খোঁজার চেষ্টায়...।

*আমার লেখার প্রয়োজনে আমি চাচ্ছি, লাশ নামের এই মানুষটার ছবি এখানে থাক। তবে এই লেখার একেবারে নীচে ছবিটা রাখছি। শবের ছবি দেখতে যাদের সমস্যা আছে তাঁরা দয়া করে এখান থেকেই বিদায় নিন।


.
..
...
....
.....
......
.......

   

Saturday, November 20, 2010

গুটিগুটি পায়ে এগুচ্ছে 'হরতাল' নামের পশুটা

এটা পুরনো লেখা, রি-পোস্ট! এই লেখাটা গত বছর [০] যখন লিখেছিলাম তখন ওখানে লিখেছিলাম: "কে জানে, বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি [০১] করে হয়তো হরতালের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করা হবে"। আসলে এটা জানার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। দেশ জাহান্নামে যাক দলবাজী ঠিক থাকুক [১]। ফল যা হওয়ার তাই হয়!
শীতের যেমন না এসে উপায় নেই- শীত যেমন আসি আসি করছে, হরতাল নামের পশুটাও গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসবে এতে সন্দেহ কী! প্রবল আশা, হরতালের পদ্ধতি বদলাবে- ডিজিটাল [৪] হরতাল নামের নতুন কোন জিনিস প্রসব হবে। 

"শুভ'র ব্লগিং" থেকে পুরনো লেখাটা আবারও দেয়ার কারণ হচ্ছে, এখন আবার দেখছি আমাদের মহান রাজনীতিবিদরা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হরতালের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের কথা বলে গলাবাজি করছেন। আমাদের রাজনীতিবিদ- একেকজনের ত্যাগের নমুনা দেখে [২] কাঁদব না হাসব বুঝে উঠতে পারি না! আমাদের রাজনীতিবিদ মহোদয়গণ অপচয়ে কেমন অভ্যস্ত এর একটা নমুনাই যথেষ্ঠ [৩]
আগেও একটা লেখায় লিখেছিলাম, এমনিতে এয়ারপোর্ট-টেয়ারপোর্টের নাম না বদলে একবারে দেশের নাম পাঁচ বছরের জন্য বদলে ফেললেই তো ঝামেলা চুকে যায়। নাম রাখা যেতে পারে 'আওয়ামী বাংলাদেশ' বা 'জাতীয়তাবাদী বাংলাদেশ'।

হরতাল নিয়ে লিখতে গিয়ে দেখলাম নতুন করে আসলে লেখার কিছু নাই। ভঙ্গি একই, কেবল জলিল সাহেবের জায়গায় দেলোয়ার সাহেব। আর আমরা হচ্ছি দাবার গুটি। এঁরা 'হরতাল হও' বলবেন আর গোটা দেশ থেমে যাবে। আমাদের দেশের লোকজনরা এই অন্যায় মানেন কেমন করে এটাই আমার বোধগম্য হয় না। এ তো অন্যায়, ভয়াবহ অন্যায়!
গোটা দেশের লোকজন মেনে নিক, আমি মানি না। গোটা দেশের লোকজন এটাকে ন্যায় মনে করলেই অন্যায় ন্যায় হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি না।   
... ... ... ...
"...এ গ্রহের সবচেয়ে বড়ো কারাগার- কয়েদী সংখ্যা আনুমানিক ১৬ কোটি! অবশ্য কারাগারটা ৩৬৫ দিন চালু থাকে না, এটাই আমাদের জন্যে ভারী বেদনার! পৃথিবীতে ফাইভ স্টার সুবিধাসহ, বেশ কিছু বিচিত্র কারাগার আছে, ওইসব নিয়ে না হয় অন্য দিন কথা বলা যাবে। আমি যেটার কথা বলছি, এখানে আপনি যা খুশি তা করতে পারবেন না, ইচ্ছা-অনিচ্ছা বলে কিছু থাকবে না।

কারাগারটা হচ্ছে বাংলাদেশ, আমাদের সোনার বাংলাদেশ- গোটা দেশটাই সোনার হয়ে গেছে, মাটি কোথায়- আফসোস, কাউকে কবর দেয়ার জায়গাটুকুও নাই! 

তিনি [৫] যেমন বলেছিলেন হও, আর হয়ে গেল, তেমনি বিরোধীদল (যখন তাঁরা ক্ষমতায় থাকেন না, বিরোধীদল বা যাহার জন্য প্রযোজ্য) বললেন, হরতালের নামে কারাগার হও- ব্যস, হয়ে গেল! এবং আপনার জীবনের দাম যাই থাকুক, এ দিন আপনার জীবন রক্ষার দায়িত্ব ঈশ্বর ব্যতীত আর কারও না। কী এক কারণে যেন এদিন ঈশ্বরের ভারী ঘুম পায়!
এদিন বড়ো মজা, অনেক চাকুরীজীবীকে অফিস করতে হয় না। এদের অহরহ প্রার্থনা থাকে, কেন যে সারাটা বছর হরতাল থাকে না। মাস শেষে খালি গিয়ে বেতনটা উঠিয়ে আনা। হরতালে আর কিছু না হোক আমরা জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেই যাচ্ছি, জনশক্তি বড় শক্তি! ইনশাল্লা, হরতালের কারণে জনশক্তি বিষয়ে আমরা যথেষ্ঠ অবদান রাখব। ১৬ কোটি একদিন ৬১ কোটি হবে...।

এদিন ইচ্ছা করলেই গান পাউডার দিয়ে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া যায়। আমাদের অনেকের বাড়ীর চুলায় বিড়াল ঘুমায় কিন্তু এমন একটা দিনে আমাদের পায়ের শব্দে রাজপথ থরথর কাঁপে। ইচ্ছা করলেই গাড়ি ভেঙ্গে ফেলা যায়, ইচ্ছা করলেই পেট্রোল ঢেলে কারও গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া যায়, আগুনের লেলিহান শিখায় আমাদের রক্তের কথা মনে পড়ে যায়। চড়চড় শব্দ করে যখন মানুষের চামড়া পুড়তে থাকে, শরীরে ঝনঝন করে একটা ভাল লাগা ছড়িয়ে পড়ে! মানুষের চামড়া পোড়ার গন্ধে আমাদের এখন আর গা গুলায় না!
ঈশ্বর নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখেন!

এদিন ইচ্ছা করলেই আমরা বাবার বয়সী একজন অফিসযাত্রীর গায়ের কাপড় এক এক করে খুলে নগ্ন করে ফেলতে পারি [৬] এক সময় তিনি অবিকল ভিক্ষুকের গলায় ভারী কাতর হয়ে হাহাকার করে বলবেন, '...আমাকে কেউ আল্লারওয়াস্তে একটা কাপড় দেন'। আমরা সবাই গোল হয়ে তামাশা দেখি- আহা, তার সন্তানকেও যদি এনে এ তামাশাটা দেখাতে পারতাম [৭]! অন্তত বিটিভিতে উপস্থাপক হয়ে লম্বা লম্বা বুলি কপচানো যায়।
ঈশ্বর অন্য দিকে তাকিয়ে থাকেন!


হরতাল, এ গ্রহের সবচেয়ে কুৎসিত বেশ্যার গর্ভে যার জন্ম। হরতাল নামের গা ঘিনঘিনে জন্তুটা জন্ম দিচ্ছে অসংখ্য দানবের। যে আমাদের, এক ফোঁটা রক্ত দেখলে গা গুলাতো আজ সেই রক্তের স্রোত মাড়িয়ে নির্বিকারচিত্তে আমরা হেঁটে যাই। গণতন্ত্রের জন্য গরম গরম রক্তের স্রোতের উপরে হাঁটাটা আমাদের জন্য খুব জরুরি!
ঈশ্বর গালে হাত দিয়ে ভাবনায় তলিয়ে যান!
 

হরতাল নামের এ দানবটা ক্রমশ আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে, আমরা নপুংসকরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। এ দেশের সেরা সন্তানরা তাঁদের মস্তিষ্ক ...-এ জমা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন। টনকে টন কাঁচামাল পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়। বিদেশীদের মাথায় গন্ডগোল না থাকলে এ দেশে বিনোয়োগ করার কথা না [৮], কেন করে আল্লা মালুম! হয়তো আর অন্য কোন দেশে আমাদের দেশের মতো শোষণ করার সুযোগ অপ্রতুল!
ঈশ্বর থুথু ফেলেন!


হরতালে একটা লাশ আমাদের বড়ো প্রয়োজন। যে হরতালে অন্তত একটা লাশ পড়বে না ওই হরতাল সম্বন্ধে মিডিয়া বলবে বা মিডিয়ায় লেখা হবে, ঢিলেঢালা হরতাল পালিত হইয়াছে।
একটা লাশ পেলে নেতাদের আনন্দ-আমোদের শেষ নাই। ঝড়ের গতিতে ছুটে যাবেন লাশের পরিবারের বাসায়, কোন একজনকে ধরে কান্না কান্না ভাব করবেন, মিডিয়া ফটাফট ছবি তুলবে। সেই ছবি আমরা পরের দিন পত্রিকায় বিশাল আকারে দেখি। নিউজপ্রিন্ট ভিজে যায়।

...
আমি আইন সম্বন্ধে খুবই অল্প জ্ঞান রাখি, তবুও আমার অল্প জ্ঞান নিয়ে বলি, টর্র্ট আইনের মাধ্যমে অনায়াসে মামলা করতে পারার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত কয়টা মামলা হয়েছে? হরতাল-অবরোধে, আমাদের ক্ষতির একশোটা কারণ থাকতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, কে বাঁধবে বেড়ালের গলায় ঘন্টা- এটা খুব চমৎকার একটা পাশ কাটানোর অপবুদ্ধি, গণতন্ত্রের অপ-মহাযন্ত্র।
আমাদের এ প্রজন্মই পারবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে। ইচ্ছা করলেই এটা সম্ভব, প্রয়োজন হলে চাঁদা তুলে মামলা করা যায়, প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার।
ঈশ্বর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন...।"


এটা অনেক পুরনো লেখা। পূর্বে একটা লেখায় লিখেছিলাম: "...বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আওয়ামী লীগ সম্ভবত ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছিল কিন্তু ১৭৩ সেকেন্ড আগেও বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে হটাতে পারেনি। এই হচ্ছে ন-মু-না" [৯]! তাহলে এই সব ফাজলামি করার মানে কী!
এখন আমার স্পষ্ট বক্তব্য, আইন করে হরতাল বন্ধ করা হোক। যিনি হরতাল ডাকবেন তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। হাইকোর্ট কত সুয়োমটো রুল জারি করেন, পারেন না আর একটা জারি করতে যেন কোন ইস্যুতে কেউ কখনও হরতাল করতে না পারে।

সহায়ক লিংক:
০. পুরনো লেখা: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_26.html
০১. বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_24.html
১. দলবাজী: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_09.html
২. মহান রাজনীতিবিদ: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_12.html
৩  অপচয়: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_16.html
৪. ডিজিটাল: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_8733.html 
৫. তিনি: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_18.html 
৬. গণতন্ত্রের বলি: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_22.html
৭. গণতন্ত্রের শিশু: http://www.ali-mahmed.com/2009/02/blog-post_18.html
৮. বায়ার: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_5073.html
৯. অসভ্যতা: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_16.html 

Friday, November 19, 2010

বীরশ্রেষ্ঠ, ভাগ্যিস, আপনি বেঁচে নেই....

এমনিতে আমরা বড়ো বক্তা জাতি- কথায় অনভিভবনীয়। এমনিতেও অবশ্য অনলবর্ষী বক্তা তো হাটে-মাঠে মেলে, আমি অবশ্য এই সব বক্তাদের মুখ থেকে আগুন বেরুতে দেখিনি। অবশ্য বেশি জোশ চলে এলে থুথু বেরুতে দেখা গেছে। এমনিতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বলে বলে আমরা মুখে ফেনা তুলে ফেলব।
এখন আবার একটা নতুন ধারা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারলে আর পায় কে!
প্রায়শ বড়ো হাস্যকর একটা কথা শুনি একজন মুক্তিযোদ্ধা কখনও অন্যায় করতে পারেন না। ভাল-ভাল, তাহলে টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকীর করা অর্ধ-সমাপ্ত সেতুগুলো কে সমাপ্ত করবে, যারা এই সব সংলাপগুলো আওড়ান, তাঁরা? তো, এই সব নিয়ে আলোচনার শেষ নেই...। ব্লগস্ফিয়ারে এই ঝড় সামাল দেয় এমন সাধ্যি কার!

আমাদের দেশে বীরশ্রেষ্ঠর সংখ্যা হাজার-হাজার না যে এদের নাম মনে রাখা দায় হয়ে পড়বে অন্তত লিখতে গিয়ে গুলিয়ে যাবে! 'বীর শ্রেস্ঠ মোঃ মোস্তফা'? সঙ্গে কামাল ছিল না? আর মোঃ কোত্থেকে আসল? নাকি আমিই ভুল করছি!

বাচ্চাদের আঁকাআঁকি নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করা হয়েছিল [১] যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন একজন দুর্ধর্ষ নৌ-কমান্ডো [২] এবং বিশেষ অতিথি একজন 'ট্যাংক মানব' [৩]। ওই অনুষ্ঠানটা করার অনেকগুলো কারণের একটা ছিল শিশুদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দেয়া। সব মিলিয়ে শিশুদের মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখেছিলাম তা আমার স্মৃতিতে এখনও অম্লান। কিন্তু একটা বিষয় তখন আমাকে তীব্র হতাশ করেছিল, অধিকাংশ শিশুই মুখস্ত করা আঁক আঁকছে- এদের ভাবনার প্রসারতা নেই! এবার আমি খানিকটা চালবাজি করব বলে ঠিক করে রেখেছিলাম।
আমার পরের ইচ্ছাটা এমন, শিশুদের নিয়ে আঁকাআঁকির এইবারের অনুষ্ঠানের ভেন্যু থাকবে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামালের সমাধিস্থল। শিশুরা এটা দেখে দেখে আঁকবে। এতে অনেকগুলো কাজ হবে, প্রত্যেকটা শিশুকে এখানে আসতে হবে, আগাম প্রস্তুতি ব্যতীত আঁকতে হবে। কিন্তু এখানে এদের নিয়ে এলে এরা এখান থেকে শিখবেটা কী? বীর শ্রেস্ঠ মোঃ মোস্তফা?

এমন না এখানে কেউ আসেন না। বিশেষ বিশেষ দিনে এসি-ডিসি, মন্ত্রী-এমপি কেউই বাদ থাকেন না। এঁদের গাড়ির গ্লাসে সমস্যা সম্ভবত- টিনটিড গ্লাসের কারণে ভুলটা ভাল ঠাওর করতে পারেন না।
এখানে আছেন এই দেশের সমস্ত প্রিন্ট মিডিয়া, জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক। আমার জানার বড়ো কৌতুহল, এঁরা কেউ লক্ষ করেননি? অদ্যাবধি এটা এঁদের কারও চোখে পড়েনি? নাকি নিউজটা পাঠিয়েছেন, আমাদের মহান প্রিন্ট মিডিয়া এই নিউজটা ধরেননি এটা ডিসেম্বর মাস না বলে? আমাদের মিডিয়ার আবার খানিক সমস্যা আছে, এরা বিশেষ মাস, বিশেষ আয়োজন ব্যতীত কান্নাকাটি করতে পারেন না; ডিসেম্বর হচ্ছে পছন্দের মাস। তখন পাবলিকও নাকি এই সমস্ত খবর খায় ভাল।

প্রথম আলোর 'ম্যা-ম্যা' শব্দ শুনে শুনে প্রাণ ওষ্ঠাগত। কি বললেন, ম্যা ম্যা হবে না, 'মা মা' হবে? আহা, এমন একটা ফলকে 'বীর শ্রস্ঠ' বানান লিখতে ভুল করলে আমি কেবল একটা য-ফলা ভুল লিখেছি এতে করে রে রে করে তেড়ে আসার কি আছে! ডিসেম্বর আসছে তখন আমরা দেখিয়ে দেব কেমন করে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে মুখ থেকে আগুনের হল্কা বের করা যায়। এরপরেই আসছে ফেব্রুয়ারি। গতবার তো মতি ভাইয়া দেখিয়ে দিয়েছিলেন কেমন করে ৩০ মিনিটি দেশ কাঁপানো যায় [৪]। এবার দেখাবেন ৩ মিনিটে দেশটা কেমন থরথর করে কাঁপে। গতবারের ৩০ মিনিটের ফল কি না জানি না ঢাকার বিল্ডিংগুলো হেলে পড়ছে, এবার ৩ মিনিটে কাঁপালে কী অবস্থা হবে এই নিয়ে বড়ো ভয়ে ভয়ে আছি।

সহায়ক লিংক:
১. বাচ্চাদের আঁকাআঁকি...: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_4596.html
২. নৌ-কমান্ডো http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_18.html
৩. ট্যাংক মানব: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_03.html 
৪. দুনিয়া কাঁপানো ত্রিশ মনিট: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_19.html  

Tuesday, November 16, 2010

অসভ্যতা

আমি পূর্বের লেখায় লিখেছিলাম দাবা খেলার কথা [১]। এখানে আমাদের কোন ভূমিকা নাই- যেমন নাই আমাদের জন্ম, ধর্মে। আর এর সঙ্গে এই অভাগা দেশে যোগ হয় আমাদের স্বাধীনতা। হরতাল গণতন্ত্রের ঢাল, না ছাল এটা আমার জানার প্রয়োজন নাই; হরতালের নামে একজন স্বাধীন মানুষকে পরাধীন করার নিয়ম আমি মানি না। এর জন্য গণতন্ত্র জাহান্নামে গেল নাকি নরকে এই নিয়েও আমার কোন বিকার নাই।

তার উপর হরতাল ঠিক ঈদের আগে! এর চেয়ে বড়ো অসভ্যতা এই গ্রহে আর ক-টা হয়েছে এ অনেক ভেবে বের করতে হবে।

এটা স্রেফ অসভ্যতাই না, চরম নিষ্ঠুরতা। অমানবিকতা! কেউ যদি দোয়া-অভিশাপে বিশ্বাস করে তাহলে ঘর ফেরা লক্ষ-লক্ষ মানুষকে যে নিদারুণ কষ্ট দেয়া হয়েছে, এদের সমস্ত অভিশাপ জড়ো হয়ে, এর জন্য দায়ীদের তাড়া করুক, নরক অবধি।
আমাদের দেশের সুশীল কলমবাজ মহোদয়গণের ইয়ে এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না কারণ এরা গণতন্ত্রের লাউ গাছের বিচি লাগাতে ব্যস্ত।  এই দেশের সুশীলরা প্রকারান্তরে অ-মরদরা অনেক আঁক কষে বের করেছেন, হরতাল না হলে নাকি গণতন্ত্রের শিশুটির শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। সঠিক হিসাবটা আমার কাছে এখন নাই, বিএনপি যখন ক্ষমতায় তখন আওয়ামী লীগ সম্ভবত ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছিল কিন্তু ১৭৩ সেকেন্ড আগেও বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে হটাতে পারেনি। এই হচ্ছে ন-মু-না!

পূর্বে আওয়ামী লীগ দলের পক্ষ থেকে জলিল সাহেব হরতাল ঘোষণা করতেন, এখন দেলোয়ার সাহেব। আওয়ামী লীগের তো গভীর রাতেও হরতাল ঘোষণা করার নজির আছে। সেবার গভীর রাতে হরতাল ঘোষণা করার কারণে অনেকে জানতেনও না যে ওদিন হরতাল, অনেক বাচ্চা সকালে স্কুলেও চলে গিয়েছিল। তখন আর এখনকার মত জনে জনে মোবাইল ফোন ছিল না। সেই বাবা-মাদের উৎকন্ঠা জলিল সাহেবদের স্পর্শ করত না। কারণ এরা অমর হয়ে এই গ্রহে এসেছেন!
হরতাল ডেকে শেখ হাসিনা বিদেশও চলে গেছেন। এমন কত উদাহরণ...।

তখন জলিল সাহেবকে আমার ঈশ্বর-ঈশ্বর মনে হতো- মর্তধামের ঈশ্বর। 'হও' বললেই হয়ে যায়! বাহ, এই মানুষটার মুখের কথায় এই দেশের সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়! মর্তধামের ঈশ্বরের এতো ক্ষমতা, না-জানি আকাশলোকের ঈশ্বরের কত ক্ষমতা!
হরতাল চলাকালে একজন বাবা ফোনে হাসপাতালে ছটফট করতে থাকা তার সন্তানের আর্ত চিৎকার শুনবেন কিন্তু তার মাথায় হাত রাখার জন্য যেতে পারবেন না কারণ জলিল সাহেবদের মত মর্তধামের ঈশ্বরের এতে মত নাই। তখন ইচ্ছা করলেই গাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দেয়া যায়, চড়চড় করে যখন একজন চামড়া পুড়তে থাকত সেই শব্দ কি জলিল সাহেবদের আমোদিত করত?
এখন জলিল সাহেবের জায়গায় এসেছেন মর্তধামের নতুন ঈশ্বর, দেলোয়ার সাহেব। আহ, কী একজন নেতা! সংসদ ভবনের ক্যাফেটেরিয়ারে আলকাতরা পাওয়া গেলে ঘটিতে করে তিনি এটাও নিয়ে যেতেন [২] এতে সন্দেহ নেই।

জাফর ইকবাল স্যারদের মতো মানুষরা ছাপার অক্ষরে কথা বলতে থাকুন, চোখে রঙিন চশমা লাগিয়ে, সাদা গোঁফ ঝুলিয়ে, প্রয়োজনে গলায় প্ল্যাকার্ড আটকে এই দাবী জানাতে থাকুন, "শিক্ষা বিভাগকে হরতালের আওতার বাইরে রাখা হোক"[৩]
আমি স্পষ্ট করে বলি, আইন করে হরতাল বন্ধ করে দেয়া হোক। যিনি হরতাল ঘোষণা করবেন সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করা হোক। নইলে দল বদলাবে, হরতাল বদলাবে না- ক্রমশ এই দানব আকাশ ছাড়িয়ে যাবে।
আমার ধারণা ছিল অসভ্যতা কেবল রাজনীতিবিদরাই করেন এখন দেখছি এই কাতারে মিছিলের মত দলে দলে লোকজনরা যোগ দিচ্ছেন!
আমাদের দেশের সেনাবাহিনী, মার্সেনারি-ভাড়াটে সৈন্য হিসাবে বিশ্বে সংখ্যায় প্রথম কাতারে 'ইউএন' শিল্ডের আড়ালে। এখন এঁরা দেখছি অরুচিকর কর্মকান্ডেও পিছিয়ে নেই। খালেদা জিয়াকে ওই বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর বাড়িটা সিলগালা করে দেয়া হয়েছিল। সিলগালা করার কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে তেমনি এটা খুলে দেয়া বিষয়েও। কোন কর্তৃপক্ষ কোন অধিকার বলে, কে সিলগালা করে দিলেন কে খুলে দিলেন এটা আমাদের জানা প্রয়োজন। খালেদা জিয়ার যে জিনিসপত্র ওখানে থেকে গিয়েছিল এটা যথাযথ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে ছিল।
এরা পরদিনই মিডিয়াকে ওখানে নিয়ে গেলেন কার নির্দেশে? যারা হেলমেট না-থাকার কারণে প্রকাশ্যে রাস্তায় স্ত্রীর সামনে স্বামীকে কান ধরে উঠবস করান তারা কবে থেকে এমন সহৃদয় হয়ে গেলেন? কবে থেকে?
আমরা আমাদের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের টাকায় এদেরকে একের-পর-এক ট্রেনিং দেয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি কি এটা শেখার জন্য, একজনের সিলগালা করে রাখা বাড়ি খুলে বেডরুম-বাথরুম দেখাবার জন্য মিডিয়াকে জড়ো করতে? ওয়ারড্রোবে রাখা অর্ন্তবাস কি কি রঙের অপদার্থ মিডিয়াকে এই ছবি তোলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য?
তারচেয়ে বরং এটা জানালে তথ্যবহুল হতো্, এঁর পরিবহন পুলে যে গাড়িগুলো রাখা আছে, কেবল শুনে আসছি মূল্যবান গাড়ি কিন্তু কোনও চু ভাই এটা বলছে না এগুলোর দাম কত?  

'ফোকাস বাংলা' নামের এক অপদার্থ মিডিয়া ড্রয়ারের ভেতর কি কি ম্যাগাজিন আছে সেটারও চকচকে ছবি ছাপিয়েছে। বেশ-বেশ, বস্তুনির্ভর সাংবাদিকতা বলে কথা! তা, যারা ফোকাস বাংলা চালান এরা কি রঙের আন্ডারওয়্যার পরেন এটা জানার কৌতুহল হচ্ছে আমার। হতে পারে না এমন, এরা এমন এক চিত্র-বিচিত্র আন্ডারওয়্যার পরেন যেটায় এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে যত রঙ আবিষ্কার হয়েছে তার সবগুলো আছে? বা এমনও হতে পারে মাইকেল প্যান্টের উপর আন্ডারওয়্যার নামের যে জিনিসটা পরে রাখতেন ফোকাস বাংলার লোকজনরা ওরকম একটা জিনিস শার্টের উপর পরেন। কে মাথার দিব্যি দিয়েছে এমনটা হতে পারে না? বেশ পারে।

ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জ, ই, মামুন একজন সিনিয়র মানুষ। তিনিও কী অবলীলায়ই না বেডরুম-বাথরুম দেখালেন! ওয়েল, মামুন কেবল এটুকু করেই থেমে গেলেন কেন? তিনি ক্যামেরা কেন জুম করলেন না, বাথরুমের কমোডের ঢাকনা উঠিয়ে এটা কেন দেখালেন না যে কমোডের পানি কি রঙের? 'ফ্ল্যাশম্যাটিক' ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা কমোডের পানিটাকে নীল রাখার জন্য? ফাঁকে ফ্ল্যাশম্যাটিকের বিজ্ঞাপনটাও হয়ে যেত।
ডিয়ার জ, ই, মামুন, এই দেশের অধিকাংশ মানুষ হাই-কমোড চেনে না অথচ এরাও কিন্তু আপনাদের অনুষ্ঠান দেখে। এখন হাই-কমোড জিনিসটা কি এটা জানানোও কিন্তু আপনাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ট্রায়াল হিসাবে আপনাদের চ্যানেল মালিককে এই হাই-কমোডে উবু করে বসিয়ে সাধারণ জনগণকে দেখালে মন্দ হতো না। এবং আপনি রাশভারী গলায় কিছু প্রশ্ন রাখতেন তিনি নির্বোধ চেহারাটাকে বোধসম্মত করে ফাঁকে কিছু তার সফলতার ইতিহাসও বলে ফেলতেন।
রুচিবাগীশ জ, ই, মামুন আপনি একজন সিনিয়র সাংবাদিক, আপনার কাছ থেকে আমরা আরও তথ্য নির্ভর সংবাদ আশা করি, কেন আপনি এই দৃশ্যটাও দেখালেন না এটা ভেবে পাচ্ছি না, এ অন্যায়!

দেশের চেয়ে দল বড়ো, দলের চেয়ে ব্যক্তি [৪], ব্যক্তির চেয়েও বাড়ি বড়ো, তারচেয়েও  বড়ো অরুচি...।

সহায়ক লিংক:
১. দাবা: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_15.html
২. খাদক: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_12.html 
৩. শিক্ষা বিভাগ হরতালের আওতার...: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_3914.html
৪. দেশের চেয়ে দল বড়ো...: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_09.html     

Monday, November 15, 2010

দাবা

দাবা নাকি বুদ্ধিমানদের খেলা। তবে এও প্রমাণ হয় না, যারা খেলেন তারা সবাই বুদ্ধিমান। এটা সবার জানা, খেলাটা দুই জনে খেলা হয়, ঘর থাকে ৬৪টা। খেলায় রাজা-মন্ত্রী, হাতি-ঘোড়া, পাইক-পেয়াদা সবই থাকে।

কিন্তু এখন দাবা নামের যে খেলাটার কথা বলছি এখানেও সবই আছে কেবল ৬৪টা ঘরের সংখ্যাটা একটু বেশিই। আনুমানিক ১৬ কোটি! এখানে কেবল ঘরের তারতম্য হবে, এই যা! সাদা পক্ষ, নীল পক্ষ এই দুই দলই খেলবে- এরা কখনও এদিক কখনও ওদিক, এইই পার্থক্য। অন্যরা কেবল দর্শক।
যে খেলাটা শুরু হয়েছিল খেলাটা ছিল খানিকটা অসম। দু-পাশে দু-পক্ষ, সাদা, নীল। সাদা প্রথম থেকেই মন্ত্রী ছাড়া খেলছে। দাবাড়ুরা জানেন মন্ত্রী ছাড়া খেলাটা কত কঠিন, খেলায় হার প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু দাবায় শেষ কথা বলতে কোন কথা নাই। ভুল চাল দিলেই কখন দান উল্টে যাবে এটা আগাম বলা মুশকিল।

যেহেতু খেলাটা শুরু করেছিলেন সাদা পক্ষ মন্ত্রী ব্যতীত, তাই প্রতিপক্ষের জন্য একটা ফাঁদ পাতার বড়ো প্রয়োজন ছিল। একটা বাড়ি সেই সুযোগ এনে দেয়। আইনের মারপ্যাঁচ আদালতের ঝুল-বারান্দায় ঝুলতে থাকুক। আর মাত্র কয়েক দিন, ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত আপিলের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করলে ইস্রাফিল তাঁর শিঙ্গা খোঁজা শুরু করতেন বলে মনে হয় না।
কিন্তু প্রতিপক্ষ নীল পক্ষকে ফাঁদে পা দিতে হবে যে! তো, এখুনিই উচ্ছেদ অভিযান শুরু। আর্মি নামের সৈন্যদের এগিয়ে দেয়া হলো। দাবার নিয়ম হচ্ছে সৈন্যরা কেবল অন্ধের মত এগুতেই জানে, কেবল প্রতিপক্ষকে শুইয়ে ফেলতে হলে এরা খানিকটা ভঙ্গি বদল করে।

খালেদা জিয়াকে আমরা মিডিয়ায় দেখলাম, বিস্তর কান্নাকাটি করতে। বলেছেনও, "...আমি অপমানিত, লাঞ্ছিত, লজ্জিত বোধ করছি..."। এটা আগেই বুঝলেই ভাল ছিল। ভাল কথা, সব বাদ দিলেও একজন সিভিলিয়ান হয়ে ক্যান্টনমেন্টে এতো নিয়ম-কানুন মেনে তিনি থাকতেন কেমন করে?
একজন সিভিলিয়ান সূক্ষ বোধ নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে থাকতে পারেন এটা অন্তত আমি মনে করি না। আমার মত সাধারণ মানুষ ক্যান্টনমেন্টের বাইরের রাস্তা দিয়েও যেতে আগ্রহী না। যেদিন [১] আমাকে উম্মুক্ত রাস্তায় চলাচলে বাঁধা দেয়া হয়েছিল সেদিনই আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ওই রাস্তা আর মাড়াব না। এই প্রতিজ্ঞা এখনও মেনে চলি।
আমি আগের একটা লেখায় লিখেছিলাম [২], ঔচিত্য বোধ প্রবল হলে ওই বাড়িটা অনেক আগেই থুথু ফেলে চলে আসা উচিৎ ছিল।

জনতা এতো খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করে না। খালেদা জিয়ার অভিব্যক্তি দেখে, সাদা পক্ষ খালেদা জিয়ার সপক্ষে অধিকাংশ জনতা এক নিমিষেই চলে এলো। দাবার এই চালে প্রতিপক্ষ সরকার নামের নীল পক্ষকে শুইয়ে ফেলা যেত, রাজা চেক।
কিন্তু খেলাটা যে দাবা, চালটা নির্ভর করে যে খেলছে তার উপর। উল্টাপাল্টা চাল দিলে যা হয়, হরতালের নামে ঈদের ঠিক আগে দেশটাকে বানিয়ে ফেলা হলো এই গ্রহের সবচেয়ে বড়ো কারাগার, যেখানে ১৬ কোটি মানুষ কয়েদী। কোণঠাসা সরকার নামের নীল পক্ষ আবারও সুবিধাজনক অবস্থানে চলে এলো।

দাবা বুদ্ধির খেলা। কঠিন প্রতিপক্ষ হলে খেলাটা চলতে থাকে, কতটা সময় কে বলতে পারে...।

সহায়ক লিংক:
১. ব্লাডি সিভিলিয়ান...: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_15.html
২. বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_24.html   

Sunday, November 14, 2010

এক বিজেতা এবং এক কুলাঙ্গারের গল্প

(কিছু নরোম মনের মানুষ আছেন। যারা চিঁ চিঁ করে ছাপার অক্ষরে কথা বলেন। আলাপ সূত্রে এদের কাছে আমি একজন দুর্বিনীত মানুষ হিসাবে পরিচিত। আপনাদের সো-কলড, আমার দুর্বিনেয় আচরণ নিয়ে আমার বিশেষ মাথাব্যথা নাই। একেকজনের কাজ করার ভঙ্গি একেক রকম, আমি এই রকমই। আপনারা আপনাদের ছাপার অক্ষরের চিঁ চিঁ স্বর নিয়ে রয়েসয়ে 'সুশীলডিম্বে' তা দিতে থাকুন এবং দয়া করে এই লেখাটা পড়া থেকে বিরত থাকুন।)

মন মিয়ার [১] পর ইনি হচ্ছেন দ্বিতীয় মানুষ যিনি ন্যানো ক্রেডিট [২] সফলতার সঙ্গে শেষ করেছেন, সময়ের পূর্বেই! মানুষটা হচ্ছেন মালতি রানী সাহা [৩]। তাঁকে ন্যানো ক্রেডিটের আওতায় এ বছরের জুলাইয়ে ১০০০ টাকা দেয়া হয়েছিল, স্কুলে চাটনি-চকোলেট বিক্রি করবেন বলে। মাসে মাসে টাকাটা শোধ করে ফেলেছেন। আবারও তাঁকে টাকা দিতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু তাঁর কাছে আমার যেটা জানা প্রয়োজন, এই টাকাটা নিয়ে আদৌ তাঁর কোন সুবিধা হয়েছে কিনা? নাকি নিলাম আর দিলাম।

কেবল তাঁর সঙ্গেই কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু সঙ্গে ভাল প্যান্ট-শার্টপরা একজন মানুষকে দেখে প্রচন্ড বিরক্ত হলাম, মানুষটা বেশ নাদুস-নুদুস। ধরাধরি জিনিসটা আমার পছন্দ না, তাছাড়া তাঁকে যেখানে বলা হয়েছিল আবারও ঋণ দিতে কোন সমস্যা নাই সেখানে সুপারিশের জন্য লোক আনা কেন!
আমি বিরক্তি গোপন করে বললাম, সঙ্গে ইনাকে এনেছেন কেন?
মালতি রানী সাহা উত্তর দেয়ার পূর্বেই মানুষটা আগ-বাড়িয়ে বলেন, আমার মা।
আমি এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে মালতি রানীর ছেলেকে দেখি। মাশাল্লা, শরীর একখানা! মনে মনে ভাবছিলাম, গদাম করে একটা লাথি পেছনে দিলে কেমন হয়?
আমি থেমে থেমে বললাম, ও আচ্ছা, ইনি আপনার মা। বেশ-বেশ, শুনে খুশি হলাম। তা আপনি কি করেন?
আনাজ-তরকারির ব্যবসা করি।
কেমন চলে ব্যবসা।
আপনাদের আর্শীবাদে ভালই। আপনে মারে বলে টাকা দিবেন?
সেটা পরের কথা। যতটুকু জানি, আপনি আপনার মার কোন খোঁজ-খবর কখনই রাখতেন না, এখন কোত্থেকে হাজির হলেন?
মানুষটা চুপ। এরপর আমি যেটা বললাম এর জন্য সম্ভবত প্রস্তুত ছিলেন না। আপনার মাকে টাকা দেব কিন্তু এর জন্য এখানে তার কুলাঙ্গার সন্তানের থাকার প্রয়োজন নাই। আপনি এখান থেকে যেতে পারেন।

কুলাঙ্গারটা বিদায় হওয়ার পর মালতি রানীকে বললাম, আমি আপনাকে এখুনি টাকা দিচ্ছি কিন্তু শর্ত একটাই এখান থেকে এক টাকাও আপনার ছেলেকে দিতে পারবেন না। এই শর্তে রাজি থাকলে বলেন। মালতি রানী আমাকে কথা দিয়েছেন এই টাকাটা তিনি নিজের ব্যবসার কাজে লাগাবেন।

সহায়ক লিংক:
১. মন মিয়া: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_18.html 
২. ন্যানো ক্রেডিট: http://tinyurl.com/39dkbhh 
৩. মালতি রানী সাহা: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_14.html

Saturday, November 13, 2010

কদমবুসি করি আপনাকে, প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে হাতের নাগালে পেলেই পায়ে ধরে সালাম করব, আমার লেখালেখির কসম। রাস্তাটা সুনসান, না ব্যস্ত তাতে আমার এই শপথের হেরফের হবে না। প্রয়োজনে হাজার-হাজার মানুষের সামনে, মধ্য রাস্তায় কদমবুসি করব। যানজট লাগলে লাগুক, তাতে কী!

এই মানুষটা একটা অভাবনীয় কান্ড করে ফেলেছেন! আমাদের দেশে এখন সাদাকে সাদা বলার লোকের বড়ো অভাব। আগে লেখক-টেখকরা এই কঠিন দায়িত্ব পালন করতেন, এঁরা এখন রঙিন চশমা চোখে দিয়ে শিল্পপতিদের পেছনে পেছনে অদৃশ্য ল্যাজ নাড়ান। উদাহরণের অভাব নেই।
আমার পরিচিত এক মানুষের ভাষায় এখন এই দেশের লেখকরা 'পুতিয়ে' গেছেন। আমি বলি, 'চুতিয়ে' গেছেন।

প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, "...আপনারা অনেকেই নাজিরদের সঙ্গে টাকা-পয়সা লেনদেন করেন।...অনেকে বদলি হওয়ার সময় ডিমান্ড করেন, 'তোমরা তো আমাকে একটা কিছু দিবে, কোরআন শরিফ আর লাঠি না দিয়ে একটা ডিপ ফ্রিজ দিয়ে দিয়ো...'।" (প্রথম আলো, ১৩.১১.১০)

অনেকের কাছে প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য অতিরঞ্জিত মনে হবে, সুশীলদের কাছে শিষ্টাচার বহির্ভূতও মনে হতে পারে। আহা সুশীল, সুশীল বলে কথা! এদের নাক যে আবার অনেক লম্বা। সুশীলরা সব সময় ধোপদুরস্ত হয়ে থাকেন। আমার ধারণা, বাথরুমও সারেন কোট-প্যান্ট লাগিয়ে।
চীনা প্রবাদ এখন অনেকটা অচল: "একটা বেড়ালের জন্য মামলা করার অর্থ একটা গাভী হারোনো তারপরও বেড়ালটা পাওয়া যাবে কি না এ নিয়ে নিশ্চিত করে বলা যায় না"।
আমাদের দেশে এখনও অনেক আইন ব্রিটিশদের করা। কিছু আইন তো বড়ো হাস্যকর, অমানবিক! আমরাও যেসব আইন করেছি তা কতটা কার্যকর এটা ভেবে দেখার সময় কোথায়? সম্প্রতি নতুন আইন চালু হয়ে না-থাকলে Child Rights and Juvenile' Article-এ বলা হচ্ছে:
3.13: The most recent and consolidated legislation related to children is the Children Act, 1974.
Section 35: Employing children for beginning, penalty maximum fine Tk. 300/ + and/ or 1 (one) year imprisonment.
Section 42/ 43: Encouraging exposing and seducing sexual intercourse or prostitution of girl child under 16, penalty up to 2 years imprisonment. 

এমনিতে কোন অপরাধ হলে কাউকে এসে অভিযোগ করতে হবে [১], আজব! আমাদের শেষ ভরসাস্থল আদালত কিন্তু এখানে যে কত ধরনের অন্যায় হচ্ছে এর কটার খবর আমরা রাখি? যে নকল উঠাতে সরকারি ফিস ১০০ টাকার নীচে এটা যদি কেউ আমাকে ১৫০০ টাকার নীচে এনে দিতে পারেন তাহলে আমি লেখালেখি ছেড়ে দেব।
একটা নোটিশ জারি করার জন্য এক-দুই দিন না, ৩৬৫ দিনও কম পড়ে যায়! ১ বছরেও একটা জেলা শহর থেকে ঢাকার একটা ঠিকানায় কোর্টের নোটিশ পৌঁছায় না কারণ ঢাকা গিয়ে স্পিড মানি নামের ঘুষ দিয়ে ওই নোটিশ জারী করতে হবে; এটাই নাকি অতি প্রচলিত অলিখিত নিয়ম! যে জজ সাহেব এর দায়িত্বে তিনি একবারও জানতে চান না, জিজ্ঞেস করেন না কেন একটা নোটিশ পৌঁছাতে বছরের পার বছর লাগে?
এখন যে প্রশ্নটা করা যায়, যিনি সরকারকে যথার্থ ফি দিয়ে এই মামলাটা করেছেন ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায়, তার কাজ কি পিয়নের? ঢাকায় গিয়ে ঘুষ দিয়ে এটা সমাধা করতে হবে? তাহলে কোর্টের পিয়নরা আছেন কোন কাজের জন্যে, ঘন্টা বাজাবার জন্য?

জজ সাহেবরা কোন ফেরেশতা না। আমরা এটাও দেখেছি একজন লেখককে শাস্তি দেয়ার জন্য জজ সাহেবরা সমিতির মত করে ফেলার চেষ্টা করেন [২]। ভাগ্যিস, শেষ পর্যন্ত এই হাস্যকর কাজটা আর করা হয়নি। 'জাস্টিস' [৩] নামের লেখায় আমি এই সব প্রসঙ্গে খানিকটা বলার চেষ্টা করেছিলাম। এমনিতে বিচারের এমন নমুনা [৪] যখন দেখি তখন বিচার নামের জিনিসটার প্রতি আর ভক্তি আর থাকে না।

অনেক আইনজীবী মক্কেলের সঙ্গে চুক্তি করেন এতো টাকা হলে তাকে জামিন পাইয়ে দেবেন। মাত্রাতিরিক্ত টাকার চুক্তি হলে মক্কেলের পক্ষে অন্যায্য রায়ও এনে দেবেন। আইনজীবীদের এই আত্মবিশ্বাসের উৎস কোথায়? বড়ো সহজ হিসাব- এরা নাজিরদের মাধ্যমে জজ সাহেবদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কোথাও কোথাও সরাসরি জজ সাহেবদের সঙ্গেও।
কিন্তু অন্য রকম দৃশ্যও আছে। একটি বহুজাতিক কোম্পানি বিপুল অংকের টাকা দিয়েও একজন জাজকে কেনা দূরের কথা একচুল নড়াতে পারেনি!
এমন অল্প মানুষদের জন্যই হয়তো এখনও আমরা এই বিশ্বাস বুকে লালন করি, আইনের হাত অনেক লম্বা...। 

জজ সাহেবদেরও অনেক সময় করার কিছু থাকে না। একটা জেলা শহরের উদাহরণ দেই। এখানে একেকজন জজের প্রতিদিনের কার্য তালিকায় আনুমানিক ৪০/ ৪৫টা মামলা থাকে। এই সময়ে তাঁর পক্ষে ৪০/ ৪৫টা মামলার মধ্যে কয়টার শুনানি করা সম্ভব?
এর উপর অবস্থা যদি দাঁড়ায় এমন, প্রধান তিন বিচারকের একজন বদলি হয়েছেন অথচ বদলি জজ এখনও আসেননি, এদিকে আবার একজন বিচারক গেছেন হজে। সবেধন নীলমনি একজন জজের পক্ষে প্রতিদিন ১০০টা মামলার চালানোর গতি কি? জাদুকর না হলে তারিখের পর তারিখ দেয়া ব্যতীত তাঁর তো কোন উপায় থাকার কথা না।

আমাদের সবচেয়ে ভরসার জায়গাটা আমরা কী করে রেখেছি? এই দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১১ লক্ষ! অনেক মামলা আছে ২১ বছরেও শুনানি হয়নি! ১৯৯০ সালে যে শিশুর কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল, কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, সেই শিশু আজ আর শিশু নাই অথচ ২০ বছরেও তার আপিলের শুনানি হয়নি।
রাহেলা [৫] নামের অভাগা মানুষটা কবে বিচার পাবে?
আমি আদলতে কোলে দুধের শিশু নিয়ে যে মহিলাদের দেখেছি পা ছড়িয়ে বসে থাকতে এঁদের পান্ডুর মুখ দেখলে আমার মত কঠিন মানুষেরও চশমার কাঁচ ঝাপসা হয়ে যায়!

প্রায় ১ মাস পূর্বে প্রধান বিচারপতি যখন নিম্ন আদালত পরিদর্শন করেন, বিচারিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন, দৈনিক কার্যতালিকা খুঁটিয়ে দেখেন তখনই আমি আশায় বুক বেঁধেছিলাম, এই মানুষটা অন্য রকম। কিন্তু প্রধান বিচারপতি এভাবে পুরো অবস্থাটা কখনই বুঝতে পারবেন না যে আদালতের অবস্থা কতটা ভয়াবহ। মাননীয় প্রধান বিচারককে অনুরোধ করি, পরিচয় না দিয়ে একবার একটা দিন আদালত চত্ত্বরে অতিবাহিত করুন, আমি সানন্দে আপনার গাইড হবো। আমি নিশ্চিত, আপনি সহ্য করতে পারবেন না, অসুস্থ বোধ করবেন।

সহায়ক লিংক:
১. বেচারা এতিম...: http://www.ali-mahmed.com/2010/10/blog-post_11.html 
২. জজ সাহেবদের সমিতিhttp://www.ali-mahmed.com/2008/07/blog-post_03.html 
৩. জাস্টিস: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_08.html  
৪. বিচারের নমুনা: http://www.ali-mahmed.com/2008/12/blog-post_08.html
৫. রাহেলা একটা চাবুকের নাম: http://www.ali-mahmed.com/2008/02/blog-post_27.html