Search

Wednesday, December 31, 2008

২০০৯ নামের একটা ভোরের অপেক্ষায়।

বছরটা বড় বাজে গেল, বড় বাজে। আমার শক্ররও যেন এমন সময় না আসে। বাসস্থান-আহার, এইসব মৌলিক চাহিদাগুলোর সমস্যা হলে দেশ-দশ বঙ্গোপসাগরে গেল না লোহিতসাগরে, এই খোঁজে কার কী দায় পড়ে!
কেমন করে নিজের হাতের আঙ্গুলগুলো কুঁকড়ে আসে, কেমন করে চেনা মানুষগুলো অচেনা হয়ে যায়? জনান্তিকে বলি, বাহে, একদা আমিও ছিলাম তোমাদের লোক! আমিও তাদের সাথে সাথে বিশ্বাস করি, তারা শান্ত পুকুর, ঢেউ উঠবে না কোনদিন? বেশ-বেশ। তারাও আমাকে বিশ্বাস করিয়ে ছেড়েছে, বাতিল পুতুল একটা। তাইতো দেখছি...!


একজন মানুষ যখন নিজের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে তখন ওই মানুষটার সঙ্গে একটা গলিত শবের কোন পার্থক্য থাকে না। 

২০০৯ নামের একটা ভোরের অপেক্ষায়। আসলে ভোর হয়, ভোরকে কেউ আটকাতে পারে না কিন্তু আফসোস, কেউ কেউ ভোর দেখার আগেই হাল ছেড়ে দেয়। আমার প্রবল বিশ্বাস, আমি তাদের মধ্যে একজন না...।

Monday, December 29, 2008

মুসলমানরা টেররিস্ট হয়ে থাকলে, এরা কারা?


















এই গ্রহের সমস্ত টেররিস্ট নাকি মুসলমান, তা আর বলতে! দাড়ি, টুপি এখন ভারী সন্দেহজনক চরিত্র, বাইরের লোকজনরা চোখ সরু করে তাকিয়ে থাকে। এয়ারপোর্টে এদের জন্য বাড়তি খাতির, উঠবস করাতে করাতে কাল ঘাম বের করে ফেলে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে হাগিয়ে ছাড়ে।
সম্প্রতি ইসরায়েল গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে প্রায় ৩০০ বে-সামরিক মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করল এটাকে কী খুন বলা হবে না, না?

ওহ, এরা তো আদম-সন্তান না। যারা খুন হল তাদের প্রিয়জন, এরা কী ধরেই নিয়েছে যুগের পর যুগ ধরে এদেরকে ইসরাইলিরা বিষণ্ন বোধ করলেই পাখির মত গুলি করে মারবে!
তাই কী গাজার অধিবাসিরা অনেকখানি রোবট হয়ে পড়েছে? হাসপাতালের অবর্ণনীয়, বীভত্স দৃশ্য দেখে যখন আমাদের পাগল-পাগল লাগে তখন গাজাবাসীরা এরই মধ্যে দ্রুততার সঙ্গে তাদের স্বজনদের পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী দেহ থেকে অবলীলায় খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। নির্মম বাস্তবতা।

পাশাপাশি এই শিকার-শিকার খেলায় ইসরাইলিদেরকে, এমন কী তাদের শিশুদেরকেও করে তুলছে আমোদপ্রীয়, খেলুড়ে।
আহা, ওদের শিশুরা কত প্রাণোচ্ছল! ইসরাইলী শিশুরা অপার আনন্দে যে মিসাইলে ফানি ফানি কথা লিখে সেই মিসাইলটাই ছুটে আসে, গাজাবাসীদের শিশুরা পড়ে থাকে ক্ষত-বিক্ষত, ভাগাড়ের কুকুরের মত।

হা ঈশ্বর, তোমার লীলা বোঝা দায়...?

নির্বাচনী নামতা দুই এক এ দুই...।

এইবার ক্ষমতায় কে আসবে- এখানে কিছু অংকের হিসাব আছে? লাইম লাইটে যারা ছিলেন, তাদের কোন ইচ্ছা-অনিচ্ছা-ভয় থাকতে নেই বুঝি? তারেক-কোকোর শারিরিক দৃশ্যগুলো আপাততদৃষ্টিতে সুখকর ছিল না।
প্রাসঙ্গিক হবে বিধায় এখানে একরোখা খালেদা জিয়ার একটা প্রসঙ্গ উল্লেখ করি, আশা করছি বুদ্ধিমানরা যোগসূত্রটা ধরতে পারবেন।
‍"সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন- বিদেশী পর্যবেক্ষকরা বলছিলেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কিন্তু খালেদা জিয়ার অনড় বক্তব্য ১০০ আসনে কারচুপি হয়েছে। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করতে যাচ্ছিলেন।
এতে বড় ধরনের গলযোগ সৃষ্টি হতে পারে, এটা জানতে পেরে, ব্রিটিশ হাই কমিশনারের দপ্তর থেকে অনুরোধ করে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, জাপানের রাষ্ট্রদূত, হাই কমিশনাররা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বলার জন্য অনুমতি চান। কিন্তু খালেদা জিয়া ব্যস্ত আছেন এটা বলে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন।
উপায়ন্তর না দেখে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্কিন প্রেসিডেন্টের অতি জরুরি বার্ত বেগম জিয়ার কাছে এখনই পৌঁছে দিতে চান বলে জানান এবং তার সঙ্গে আরও ২জন রাষ্ট্রদূত এবং ২জন হাই কমিশনার থাকবেন এটাও উল্লেখ করেন। বেগম জিয়া বাধ্য হয়ে সময় দেন।
নির্ধারিত সময়ে এঁরা ৫জন বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। বেগম জিয়া বাংলায় বলেন, 'এরা কেন এসেছে, মাতব্বরি করার আর জায়গা পায় না'।
বেগম জিয়ার দোভাষী ইংরাজিতে বলেন, 'আপনারা আসায় ম্যাডাম অত্যন্ত খুশি হয়েছেন তিনি আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছেন'।
এরা কেউই জানতেন না যে, জাপানি রাষ্ট্রদূত ভালই বাংলা জানতেন আর ফরাসি রাষ্ট্রদূত জানতেন জাপানি ভাষা। সঙ্গে সঙ্গে জাপানি রাষ্ট্রদূত খালেদা জিয়ার বলা কথাগুলো জাপানি ভাষায় ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে তর্জমা করে বলেন।
যাই হোক, অনেকক্ষণ ধরে এই ৫ কূটনীতিক খালেদা জিয়াকে নির্বাচনি ফলাফল মেনে নিতে অনুরোধের পর অনুরোধ করেন, নইলে বাংলাদেশ আবার নতুন করে সংকটে পড়বে, রাষ্ট্রপতি কোন চরম ব্যবস্থা নিয়ে ফেলবেন। কিন্তু খালেদা জিয়া অনড় থাকেন।
এই ৫ কূটনীতিক হাল ছাড়েন না। একসময় খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিক সম্মতি না দিলেও এরা বুঝতে সক্ষম হন খালেদা জিয়া সম্মত হবেন তখন তাঁরা ধন্যবাদ জানিয়ে চলে আসেন"।
(সূত্র: বিপুলা পৃথিবী/ আনিসুজ্জামান)

তো, ওই যে বললাম অংক।
নির্বাচনটা হচ্ছে ডিসেম্বরে। ডিসেম্বর হচ্ছে আমাদের বিজয়ের মাস। যুদ্ধপরাধির ইস্যুটা প্রবল হয়ে উঠবে এতে সন্দেহ কী। তাছাড়া এইবারই প্রথমবারের মত ভোটার হয়েছেন প্রায় ৩ কোটি। তো এই ভোটারদের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিপক্ষে মনোভাব অনেকটা প্রবল। ঘুরিয়ে বললে ভোটগুলো আওয়ামীলীগদের পক্ষেই এসে পড়ে।
আমি বিশ্বাস করি, এই প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে বড়ো ব্যাকুল। স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্ক-কুতর্ক করার কোন আগ্রহই তাদের নাই।

কেউ ধোয়া তুলসি পাতা না কিন্তু যেহেতু শেষবার ক্ষমতায় ছিল বিএনপি- ক্ষতগুলো বড়ো দগদগে। ত্রানের বিস্কুট খায় ঘোড়া! এদের সময়ে , এদের মদদে ইসলামের দোহাই দিয়ে জঙ্গীরা যা করেছে এটা সব হিসাবের বাইরে! তার উপর কুড়ালে পা- নির্বাচনের ঠিক আগে আগে সিমেন্স, কোকোর সিঙ্গাপুরে অবৈধ টাকা।
এমনিতেও একটা পরিবর্তন তো আম-জনতা চাইতেই পারে। আর প্রার্থী নির্বাচনের বেলায় বিন্দুমাত্র কোন ভাবনা ছিল বলে তো আমার মনে হয় না নইলে কী আর পিন্টুকে...!

সবই অংকের হিসাব কিন্তু আমাদের মত সাধারণ মানুষদের ভাগ্যর কী পরিবর্তন আসবে সেটাই দেখার বিষয়। আপনারা কী যুদ্ধাপরাধীদের প্রাপ্য বিচার করবেন, আমি আগের মতই ধন্ধে আছি? শেখ হাসিনা ১০ টাকা কেজি দরে আমাদের চাল খাওয়াবেন এতে যার উল্লসিত হওয়ার হন, আমি হতাশ, অন্তত এই কথা বলার পেছনে কোন অংকের সূত্র কাজ করেছে বলে আমি মনে করি না। তাইলে এই দেশের সব কৃষকের গলায় ফাঁস দিতে হবে।

Tuesday, December 23, 2008

মুক্তিযুদ্ধে একজন পীর সাহেব!

কইবুল্লা। অসম্ভব ধার্মিক এই মানুষটা পীর নামে পরিচিত ছিলেন। উত্তর বাংলায় তাঁর ছিল হাজার হাজার মুরীদ-সাগরেদ। তাঁর ছোট ৩ ভাই, এঁরাও পীর। মাঝারি ধরনের এই বাড়িটায় সর্বদা গমগম করত শতশত দর্শনার্থি। কোরান, মৌলুদ পাঠ, ওয়াজ নসিহত আর ওয়াক্তে ওয়াক্তে নামায...।

এই পীর সাহেব ছিলেন আধুনিকমনস্ক। পাক আর্মি যখন ইসলামের দোহাই দিয়ে নির্বিচারে খুন করছে লাখ-লাখ মানুষ, নস্ট করছে নারীর সম্ভ্রম, লুটতরাজ করছে, তিনি এসব মেনে নিতে পারছিলেন না। তাঁর ১ ভাই তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ২৫ মার্চের পর তিনি ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডার নিযুক্ত হন।

গোকুল গ্রামের তসিম পাড়ের 'জনৈক' এখানে পাক আর্মিকে নিয়ে আসে। কালো বোরকা পরে মেয়েদের সাজ নিয়ে সে পীরবাড়ি সনাক্ত করিয়ে দেয়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে আদেশ-নির্দেশও দিচ্ছিল।

রমজান মাস। শেষরাত। সেহরি সেরে পীর সাহেব এবাদতে মগ্ন। ১ ভাই পাশের মসজিদে কোরান তেলাওয়াত করছিলেন। অন্য ভাই ভাত খাচ্ছিলেন।
পাক আর্মি এইসময় ঘিরে ফেলে পীর বাড়ি। একেক করে ৪ ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। পীর সাহেব মারা গেলেন হাতে তসবীহ নিয়ে, অন্য ভাই হাতে এঁটো ভাত। একজন গড়িয়ে পড়েছেন ওজুর ঘটির উপর।
পাক আর্মিরা পীর বংশেরই দোলনায় ঘুমন্ত এক শিশুকে গুলি করে হত্যা করে।

পরদিন সকাল। পীর বাড়িতে যেন সৃষ্টি হলো কারবালা। শতশত ভক্ত, বুক চাপড়াচ্ছে, মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে। কেউ রক্তরঞ্জিত মাটি নিয়ে মাথায় মাখছে।
ভক্তরা তাঁদের সমাহিত করেন। তারপর এই পীরবাড়ির মুঠো মুঠে মাটি নিয়ে যান। এই পবিত্র মাটি তাঁরা সযতনে তুলে রাখবেন।
*সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দৈনিক আজাদ, ১১ মার্চ ১৯৭২।
**ভাষারীতি প্রায় অবিকল রাখা হয়েছে।


রাজাকার বলতেই আমাদেরকে যেসব ছবি দিনের পর দিন দেখানো হয়েছে সেটা হচ্ছে এইরকম, দাড়ি-টুপি পরা বয়স্ক একজন মানুষ! এটা সত্য তখন প্রচুর তথাকথিত ইসলামমনস্ক মানুষ পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল কিন্তু তাই বলে ঢালাও মন্তব্যর কোন অর্থ নাই।
অজস্র উদাহরণ থেকে একটাই বলি, শহীদ ৪ সন্তানের পিতা মৌলভী আব্দুল হালিম বলেছিলেন, "ঘরে বসে গুলি খেয়ে মরার চেয়ে লড়াই করে শহীদ হওয়া অনেক মর্যাদার"।
মৌলভী আব্দুল হালিমের কেবল এক সন্তান প্রাণে বেঁচে যান এবং পরে স্মৃতিচারন করেন।

পাক আর্মিরা এই দেশে যুদ্ধ করেছে, এরা যোদ্ধা ছিল বলে আমি মনে করি না। পতিতারও যেমন অধিকার আছে তেমনি যুদ্ধেরও কিছু নিয়ম আছে। যুদ্ধেও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় আইনানুসারে। মানবিক দিকে না-হয় গেলাম না।
ইসলামের লেবেনচুষ খাইয়ে রমজান মাসে প্রার্থনারত মানুষদের অহেতুক মেরে ফেলা, ঘুমন্ত শিশুকে হত্যা করা আর যাই হোক যুদ্ধের অংশ না। এদের যোদ্ধা না বলে বলা প্রয়োজন সাইকোপ্যাথ।

এই খুনগুলোর কেন বিচার হবে না এটাই বিস্ময়, এর জন্য বিশেষ কোন আইনের প্রয়োজন পড়ে বলে তো মনে হয় না। অভাব ছিল কেবল আমাদের সদিচ্ছার, সচেতনতার। নইলে এই খুনের পেছনে যে মানুষটা, তাকে কালো বোরকার আড়ালে আমরা চিনতে পারছি 'জনৈক' নামে। কেন আমরা এখানে তার নামটা পাই না? চেষ্টার অভাব? এই 'জনৈক' নামের খুনিটাকে সনাক্ত করা হয়েছিল কী?
এতো সেইসব মানুষদের একজন না। মুক্তিযুদ্ধে অনেকে বুঝে-না বুঝে, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায়, ক্ষিধার জ্বালায়- এমন উদাহরণও আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ভবতী এক শিক্ষকের পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে দেশবিরোধী কাগজে সই নেয়া হয়েছিল। এসব অবশ্যই বিবেচ্য।
কিন্তু খুনিটা তো সেই দলে না। সে যেচে পড়ে আর্মিকে এখানে নিয়ে এসেছিল এবং পুরো হত্যাকান্ড উপভোগ করেছে।
এটা অবশ্যই বিচারযোগ্য অপরাধ।

মুক্তিযোদ্ধা হলেই সাতখুন মাফ হয়ে যাবে এরও কোন মানে নাই।
"যুদ্ধের পর, রাজাকারের বিচারের প্রহসনের নামে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা স্টেডিয়ামে হাজার হাজার লোকের সামনে নারকীয় তান্ডব হয়েছিল। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হাত-পা ছিড়ে এদের মারা হয়েছিল"। (ইন্টাভিউ উইথ হিস্ট্রি, ওরিয়ানা ফালাচি)
এটাও বিচারযোগ্য অপরাধ।

১৯৭১। অনেক বছর চলে গেছে, না?
"১৯১৫, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুর্কিরা আনুমানিক ১৫ লক্ষ আর্মেনিয়কে হত্যা করে। আর্মেনিয়রা এখনও এটা ভুলেনি কিন্তু বরাবরের মত তুরস্ক বিষয়টা এড়িয়ে যাচ্ছিল।
এই গণহত্যা নিয়ে কথা বলায় নোবেলজয়ী লেখক ওরহান পামুকসহ অনেককে আইনি হয়রানি করা হয়। হান্ট ডিংক নামের এক সাংবাদিককে গুলি করে মেরে ফেলা হয়।
সেই তুরস্কের ২০০বুদ্ধিজীবীসহ ২৫০০ হাজার সাধারণ নাগরিক আর্মেনিয়দের কাছে প্রকাশ্যে (ইন্টারনেটে) ক্ষমা চান"।
(ইন্টারনেট থেকে, এপি)

Wednesday, December 17, 2008

একটি ব্যর্থ নাটক নিয়ে নাটক!

সালটা ২০০৩। সুতীব্র ইচ্ছা, হরতালের উপর আমার লেখা 'কয়েদী' নিয়ে নাটক করার। কিন্তু কারা কারা নাটক বানান তাঁদের তো কাউকেই আমি চিনি না।
থাকি মফস্বলে, ঢাকা যাই কালেভদ্রে। গাঁও-গেরামে থাকা গায়ে সরষে তেলমাখা আমি এক ভুত, আমার এমন লোভ থাকাটা দোষের বৈকি! এই দেশে বিখ্যাত হতে হলে তো কথাই নেই, মানুষ হওয়ার জন্যও নাকি ঢাকায় বসবাস করাটা খুব জরুরি, অতি জরুরি।


যাই হোক, ব্যক্তিগত জটিলতায় ১৯৯৩ পর থেকে ২০০৩ পর্যন্ত আমার লেখালেখি আর করা হয়ে উঠেনি! আগে যাও-বা কিছু মানুষকে চিনতাম, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই পরে আর যোগাযোগ ছিল না। একদিন, প্রথম আলো অফিসে একজনকে খুঁজতে গেছি। ওখানেই আনিসুল হককে পেয়ে গেলাম। এই মানুষটাকে আমি চিনতাম ভোরের কাগজের 'মেলা'র কল্যাণে। তখন আমি ভোরের কাগজে ফি হপ্তাহে 'একালের রুপকথা' নামের একটা লেখা লিখি। ওই পাতা যিনি দেখতেন, সঞ্জীব চৌধুরী- একজন লেখক বানাবার মেশিন [১]। তিনি আনিসুল হকের সঙ্গে পরিচয় করে দিয়ে বলেছিলেন, ইনি 'মেলা' পাতাটা এখন থেকে শুরু করছেন, লেখা চাচ্ছেন। আপনি মেলার জন্য লেখা দেন।
আমি অবশ্য খুব একটা উচ্ছ্বসিত হইনি কারণ... সঞ্জীব চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করার মজাই আলাদা। তাছাড়া আমার গায়ের মফস্বলের গন্ধ নিয়ে সঞ্জীব চৌধুরী খুব একটা মাথা ঘামাতেন না- তাঁর নাক কখনও উঁচু হতে দেখিনি।
যাই হোক, মেলায় লেখা দিয়ে সে এক কাহিনি হয়েছিল, সে এক চোট্টামির অন্য কাহিনি...অন্য কোন দিন!

আনিসুল হককে বললাম, 'কয়েদী' নামের যে পান্ডুলিপিটা আমার ওটা নিয়ে নাটক করবে, এমন কেউ তাঁর পরিচিত আছেন কিনা। তিনি ওই লাইনেই গেলেন না। আমাকে বুঝিয়ে প্রায় ফেললেন, দেশের অবস্থা দেখছেন না, এখন নাটকের তেমন বাজার নাই।ইত্যাদি, ইত্যাদি...। আনিসুল হক, নামকরা মানুষ, আমার কী আর না-বুঝে উপায় আছে!
তারপর বললেন, আর আপনি যে নাটক করবেন, আপনার স্ক্রিপ্টটার তো নাট্যরূপ দেয়া নাই। নাট্যরূপ দিতে হবে।
আমি বললাম, নাট্যরূপ, এটা তো আমি আগে কখনও করিনি। আপনি কী এটার নাট্যরূপ করে দিতে পারবেন।
আনিসুল হক বললেন, আমাকে দিয়ে করালে ২০ হাজার দিতে হবে।
আমি কুর্নিশ করে চলে এসেছিলাম।


পরে যখন আমি এটার নাট্যরূপ দিয়েছিলাম তখন বিস্মিত হয়ে ভাবছিলাম, হা ঈশ্বর, এটার জন্য ২০ হাজার টাকা! শ্লা, সব টাকা দেখি এখন মিডিয়াতে! ২০০৩-এ ২০ হাজার হলে এখন ২০০৮-এ এই টাকার মান সম্ভবত লাখখানেক হবে! না আরও বেশি? আল্লা জানে...।
২০০৫ সালে 'কয়েদী' যখন বই আকারে বের হল তখন এটা পড়ে শংকর সাওজাল বিচিত্র কোনো এক কারণে অযাচিত মুগ্ধতা প্রকাশ করেছিলেন, তখন এটা নিয়ে নাটক করার জন্য বাড়াবাড়ি রকমের আগ্রহ দেখালেন। আমার ধারণা, এই চমঃকার মানুষটা 'হুদাহুদি', অল্পতেই মুগ্ধ হয়ে যান!


কিন্তু... ২০১২ শেষ হয়-হয়, এখনো নাটকের ন-ও হয়নি! হরতাল নিয়ে নাটক নাকি পটাবলিক খাবে না। এই দেশের মানুষ নাকি আলকাতরা খায় আর এই অখাদ্য খাবে না, 'আজিব'! কথা সেটা না, এই দেশে হরতাল নিয়ে কোনো ফিকশন নাই, কোনো নাটক নাই। কেন? হরতাল নামের অতি কুৎসিত গা ঘিনঘিনে এই দানবটাকে নিয়ে কোনো নাটক করা যাবে না!
শংকর দা অবশ্য এখনও আশার বাণী শোনান। এই চমত্কার মানুষটার উপর আমার কোন ক্ষোভ নাই কারণ তিনি নিজে নাটক বানান না। যে দুজন বিখ্যাত নাট্যপরিচালকের সঙ্গে তাঁর কথা পাকা হয়েছিল এঁরা গা না করলে শংকরদার কীই-বা করার আছে!
এখনও ফোনে কথা হলে তিনি হাল ছাড়েন না, মাহমেদ, দাঁড়াও হবে-হবে।
আমার আর এই মানুষটাকে বিব্রত করতে ভাল লাগে না। তবে মনে মনে বলি, দাদা, আমি তো আর এখন দাঁড়িয়ে নাই, বসে বসে থেকে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি।


আশিক নামের এক ছেলে আমার লেখা নিয়ে নাটক করার জন্য খুব ঝুলাঝুলি করছিল। তার নাকি কার-কার সঙ্গে জানা-শোনা আছে। আসলেই ছিল। একদিন নিয়ে গেল আফসানা মিমির কাছে। ও আল্লা, মিমির সঙ্গে দেখি এর ভালই খাতির। একজন অন্যজনের হাত ধরে আছে। কৃষ্ণচুড়া না কি যেন নাম, ওই প্রডাকশন হাউজ থেকে মিমি নাটক বানাচ্ছেন।
মিমির সঙ্গে কথা হল। শুটিং নিয়ে খুব ব্যস্ত। তবুও এই মানুষটার আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে।


ওখানেই প্রথম দেখলাম সুবর্ণা মুস্তফাকে। স্রেফ, এই ভদ্রমহিলাকে আমার অভব্য, অমার্জিত মনে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছিল এই ভদ্রমহিলার আচরণ খানিকটা মার্জিত হলে তিনি নিশ্চয়ই অ-সেলিব্রটি হয়ে যেতেন না।
তো, মিমির মোদ্দা কথা, এই দেশে ভাল স্ক্রিপ্টের আকাল তাই তিনি ভারতীয় স্ক্রিপ্ট নিয়ে নাটক বানাচ্ছেন। আগামিতেও এমনটাই ইচ্ছা।


আমার এখানে আর ভাল লাগছিল না। এদের দেয়া চা-টাও বিস্বাদ লাগছিল। এটা কেমন কথা! আমি না-হয় ছাতাফাতা তিন টাকা দামের কলমবাজ, তাই বলে কী এ দেশের সমস্ত লেখক মারা গেছেন যে ভারত থেকে স্ক্রিপ্ট আমদানী করতে হবে? এই সব ফাজিলদের ফাজলামি কথা শুনে গায়ে আগুন ধরে যায়। মিমি ব্যতীত আরও অনেকে দাদাদের লেখা নিয়ে ঝাপিয়ে নাটক বানাচ্ছেন।

আশিক ছেলেটা আরেকজনের কাছে নিয়ে গেল। ওর চ্যাংড়া নাটকনির্মাতার নামটা ভুলে গেছি। উনি আবার প্রেমের নাটক ব্যতীত অন্য নাটক করেন না। আমাকে বললেন, প্রেমের নাটক হলে আছি।
আমি বললাম, আমার কিছু উপন্যাস আছে, ওগুলো নাট্যরূপ করে দেই? 'কনকপুরুষটা'...।
তিনি বললেন, আরে না-না, আধুনিক প্রেমের উপন্যাস। যেটা পাবলিক খাবে। হে মাবুদ, পাবলিক যে কি খায় এটা সম্ভবত তুমি ব্যতীত আর কেউ জানে না।
তিনি একটা প্লটের আইডিয়াও দিয়েছিলেন। ভয়াবহ, গায়ের রক্ত হিম হয়ে আসে! সবটা মনে নাই। অনেকটা এমন: এক দেশে এক ছেলে ছিল। সে এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে। করুক...কিন্তু সে যে মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে সেই মেয়ের মায়ের সঙ্গেও সে প্রেম করে। এটা আবার মা-মেয়ে জানে না। এমনসব উদ্ভট আইডিয়া নিয়ে নাটক এগুবে। তিনি আমাকে হাত-পা নিড়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেলেন কেমন করে আমাকে লিকতে হবে।

আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম, এক কাজ করেন, আপনি নিজেই লিখে ফেলেন না কেন! এটাই উত্তম হবে।
ওখান থেকে ফিরে আসতে আসতে জনান্তিকে বিড়বিড় করছিলাম, হে প্রভূ, আর নাটক ভাল লাগে না...।


*কয়েদীর লিংক: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_5073.html

সহায়ক সূত্র:
১. সঞ্জীব চৌধুরী: http://www.ali-mahmed.com/2007/11/blog-post.html

এক গ্রাম্য গাতক- লোকন মইসান!

বিচিত্র নামের এই মানুষটা বিচিত্র বাদ্য (পেতলের গামলা) বাজিয়ে গান করেন কী সাবলীল!

Tuesday, December 16, 2008

১০০ পারমানবিক বোমার চেয়ে শক্তিশালি যে বোমা: জুতাবোমা



৬৬ বছর বয়সী নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আইরিশ বেটি উইলিয়ামস ২০০৬-এ বলেছিলেন, "বুশকে আমি সামনে পেলে অবশ্যই তাকে হত্যা করতাম। আজ আমার কাছে অহিংস শব্দটা ভীষণ অপ্রয়েজনীয় মনে হয়"!
এমন একজন বয়স্ক মানুষ, একজন নোবেল লরিয়েট কোন পর্যায়ে গেলে এমন হিংস্র অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তা সহজেই অনুমেয়। কারণ তিনি ইরাক থেকে ঘুরে এসেছিলেন। সেখানে তিনি দেখেছেন শত-শত শিশুকে বাতিল পুতুলের মত মরে পড়ে থাকতে। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে যখন তিনি ওখানকার শিশুদের সামনে কথাগুলো বলছিলেন তখন তার চোখে-মুখে ফুটে উঠেছিল তীব্র ঘৃণা!

২০০৩ সালে যৌথ বাহিনীর সুগার কোটেড বড়ির মোড়কে আমেরিকা আক্রমনের পর থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে ১৬ হাজার বৃটিশ সেনা চাকরি ছেড়েছিল।
তো এমন নোবেল লরিয়েট, দুর্ধর্ষযোদ্ধাদেরই যদি এই অবস্থা হয় আমি কোন ছার!

আমি আমার টাট্টিখানার দরজায় আমেরিকা-বৃটিনের পতাকা লাগালে লোকজনদের সূক্ষরূচি আহত হয় বুঝি! আর এইসব সভ্য দেশের অসভ্য লোকদের বর্বরতার কারণে আমার মস্তিষ্কে যে শর্ট-সার্কিট হয়ে যেত, পাগল-পাগল লাগত এর বুঝি কোন দাম নেই? কসম, তখন মরে যেতে ইচ্ছা করত।
হায়, নপুংসক আমি, কীই-বা করার ছিল ৩ টাকা দামের এই কলমবাজের; অনর্থক কলমবাজি করা ব্যতীত।


বুশ ওরফে জঙ্গল। এই গ্রহে জঙ্গলের আইন চালু করেছিল। এখানে ছাপার অক্ষরে কথা চালাচালির সুযোগ কই!

তবে মানুষটাকে মেরে ফেললে কী লাভ হত? নিমিষেই জাগতিক আনন্দ-বেদনার বাইরে চলে যেত! তারচে এই-ই ভাল হল। বুশের বাকি জীবন এই জুতা মারার স্মৃতি তাড়া করুক এটা আমার সুতীব্র চাওয়া। তাড়া করবেই। কারণ ধারণা করি, বুশ পুরাপুরি রোবট না কেননা রোবটদের প্রজনন-ক্ষমতা নাই বলেই জানি (বুশের ২টা মেয়ে আছে বলেই শুনেছি। এই নিয়ে কারও সংশয় থাকলে তাদের ডিএনএ টেস্ট করাতে পারেন। )

*লেখাটা অসমাপ্ত। আরও লেখার ছিল। পরে হয়তো যোগ করব।
'ফ্রিডম' বই থেকে খানিকটা তুলে দিচ্ছি:
বুশ, এ মানসিক রোগে ভুগছে; অ্যাটেনশন ডেফেশিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার।
বুশকে যদি বলা হয়, তুমি সারফেস উঁচু করো। এ করবে কি, সব লোকজন মেরে কবর বানিয়ে সারফেস উঁচু করে ফেলবে। এবং করছেও তাই!
আমাদের দুর্ভাগ্য, বুশ-এর মতো মানুষ পৃথিবীর মাথায় বনবন করে ছড়ি ঘুরাচ্ছে। কোন দেশের নিয়তি নির্ভর করে সেই দেশের শাসক কতটুকু পেটের পীড়াগ্রস্থ তার উপর। আসলেই পৃথিবীর নিয়তি নির্ভর করে বুশ সাহেব ঠিক মতো ডেলিভারী দিচ্ছেন কিনা, রেস্টরুমে !


এই মানুষটা এ গ্রহের কী যে বিপুল ক্ষতি করছে তার ইয়াত্তা নাই! ইরাকের হাজার হাজার বছরের সভ্যতা গুড়িয়ে দিয়েছে। একজন মানব সন্তানের প্রতি জন্তর চেয়েও খারাপ আচরণ করেছে। ইরাকের পবিত্র জায়গাগুলো অপবিত্র করেছে।
ইসলামের ধারক-বাহক আরব দেশ নিশ্চুপ। কিন্তু এটা ছিল আসলে এসিড টেস্ট- ভবিষ্যতে সৌদির পবিত্র জায়গাগুলোর জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি হলো।


বুশ, ইরাকের লোকজনদের ভাবনা এলোমেলো করে দিয়েছে। একজন ইরাকি কুর্দি আরি বলেন: 'I know i am recist but i can’t help it. আরবদের আমি ঘৃণা করি। এমনকি মুসলমানদেরকেও। আমি কোরআন পড়ি না- কেন না এটা আরবীতে লেখা। আমি ইসলাম মানি না কেননা আরবদের মাধ্যমে ইসলাম এসেছে'।

জঙ্গল সাহেব আমাদের জঙ্গলের আইনের বদলে গণতন্ত্র শেখান! শেখান তেলের সংগে কেমন করে রক্ত মেশাতে হয়। কেমন করে হাইটেক মারণাস্ত্রগুলোর জান্তব মহড়া দিতে হয়।
একজন মানুষকে হত্যা করলে চরম শাস্তি দেয়া হয় অথচ বুশকে লক্ষ-লক্ষ মানুষ হত্যার জন্য কোন শাস্তি দেয়ার বিধান নাই- গ্রহবাবা যে!
এটা সত্য বুশ নিজ হাতে কাউকে হত্যা করেনি- তাতে কী! গোল্ডা মায়ারের স্পষ্ট কথা, 'একজনকে নিজ হাতে হত্যা করা আর হত্যা করার সিদ্ধান্ত দেয়ার মধ্যে মুলত কোন পাথর্ক্য নাই'।"

Tuesday, December 9, 2008

কোপানি এন্ড চাবানি ঈদ

আমার মতে ২ ঈদকে সামনে রেখে এই দেশে সবচেয়ে বেশি 'দু-নম্বুরি' হয়। এই বিষয় নিয়ে আবারও আলোচনা করার ফায়দা নেই বিধায় একই বিষয় নিয়ে লেখার লিংকটা...http://www.ali-mahmed.com/2008/10/blog-post.html

ওষুধের দোকানে দেখলাম ৫০০ টাকা করে টাকা তোলা হচ্ছে ড্রাগ সুপার সাহেবের জন্য। এই সুপার সাহেবের আয়ত্বে আছে প্রায় ২০০ দোকান। তাইলে টাকা উঠবে আনুমানিক ১ লাখ!
এই সুপার সাহেব যখন লাখ টাকার গরু কোরবানি দেবেন তখন আমাদের মত লোকরা পশ্চাদদেশে চাপড় মেরে লাখ-উল্লাস করব এতে আর সন্দেহ কী!

Monday, December 8, 2008

এক কলমযোদ্ধা

ছবিটি সেলিনা পারভীনের। ‌'শিলালিপি' পত্রিকার প্রকাশক, সম্পাদক। মুক্তিযোদ্ধাদের ওষুধ, খাবার দিয়ে সহায়তা করতেন।
১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর, দুপুর। পাকবাহিনির দোসররা তাকেঁ তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়।
তখনও তাঁর দুপুরের খাওয়া হয়নি। ৮ বছরের ছেলে সুমনকে বলে গিয়েছিলেন, তুমি খেয়ে নাও, আমি ফিরে খাব। ওয়ান-ওয়ে জার্নি, সেই শেষ যাওয়া।

তাঁর সন্তান সুমনের কী মাথা খারাপ? তিনি কিনা তাঁর মায়ের নামে সামান্য একটা রাস্তার নামকরণ করার জন্য বছরের পর বছর ধরে সরকার বাহাদুরের লোকজনদের বিরক্ত করেছেন।
কী আস্পর্ধা!
ছবি ঋণ: আফতাব আহমদ

সাধুবাদ বনাম মুর্দাবাদ

সাধুবাদ:
"হাইকোর্ট। ২৮ আগষ্ট।
১ দিনে বিচারপতি শরীফ উদ্দিন চাকলাদার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ প্রায় ৩১৯ মিনিটে ২৯৮ মামলার রায় দিয়েছেন। প্রতি মামলার জন্য লেগেছে গড়ে ৬৩ সেকেন্ড বা প্রায় ১ মিনিট"। (০৯.১১.০৮, মিজানুর রহমান খান/ প্রথম আলো)

এ ঐতিহাসিক!
এ অসম্ভব!!
এ অভূতপূর্ব!!!


হাইকোর্টের একটি মামলা অন্যের চোখ না, নিজের চোখে দেখার সুযোগ হয়েছিল বলেই জানি এটা কী অসম্ভব একটা কাজ! কোর্টে একটি মামলার কাগজপত্র গুছিয়ে উঠাতে আর নামাতে যে সময় ব্যয় হয় তাতে এই সময়ের হিসাবের কাছাকাছিও নেই!
আমি নিশ্চিত, এই গ্রহে আর কোথাও এমন রেকর্ড ভেঙ্গে খানখান করে ফেলার নজির নেই। গিনিস রেকর্ডে নাম উঠাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। দেশের এমন একটা সাফল্যে মনটা কেমন শান্তি শান্তি লাগছে। আহা, মানুষের অসাধ্য কী আছে!
মাননীয় বিচারপতি জনাব শরীফ উদ্দিন চাকলাদারকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই।


মুর্দাবাদ:
“মাননীয় বিচারক মি. ফ্যাঙ অতন্ত কৃশকায় এবং গরম মেজাজের লোক। ইনি অশক্ত শরিরে যতোটুকু সহ্য হয় তারচেয়ে বেশি মদ্যপান করেন। ফল যা হবার তাই হয়, সর্বদা মেজাজ টং হয়ে থাকে। তাছাড়া ক-দিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় তাঁর লেখা মামলার এক রায়-এর কঠিন সমালোচনা বেরিয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, এ নিয়ে তিনশোবার বিচারক ফ্যাঙের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে...”। (অলিভার টুইস্ট/ চার্লস ডিকেন্স)


এ অন্যায়!
এ নিন্দনীয়!!
এ ক্ষমার অযোগ্য!!!

মাননীয় বিচারক মি. ফ্যাঙের ঘোর নিন্দা জানাই।

Sunday, November 9, 2008

সব বদলে ফেলব, নিজেকে বদলাব না: শক্তচিন্তা

পত্রিকায় এটার খুব একটা চল নেই, এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি। একজন ফটো সাংবাদিক প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দুর্ধর্ষ একটা ছবি উঠাবেন কিন্তু তার নামের বদলে ছাপা হবে পত্রিকার নাম। ভাবখানা এমন ছবিটা ওই পত্রিকা উঠিয়েছে নাইকন, অলম্পাস ক্যামেরা, জড়পদার্থের সাহায্যে।
বেতনভোগীর আবার নাম কী! একটা ছবির কারণে পত্রিকার কাটতি বেড়ে গেল এটাই বা কে জানতে চাইবে!

গোটা একটা উপন্যাস অনুবাদে অনুবাদকের পরিশ্রমের ক্লেশ বেশি নাকি কয়েক লাইন ভূমিকা লেখা উপসম্পাদকের? এই নিয়ে তর্ক করা বৃথা। তেল জিনিসটা তেলতেলে কিন্তু চকচকেও বটে!

এমনিতেও পত্রিকায় দু-চারজন বিশেষ আলোকিত মানুষ থাকেন নইলে কর্তৃপক্ষের ধারণা হয় এদের ব্যতীত পত্রিকা অচল। তাই উপসম্পাদকের কানসাট নিয়ে ১০১ লাইনের কবিতা না ছাপিয়ে উপায় কী, তাও সাহিত্য পাতায় না, সম্পাদকীয় পাতায়!

পাঠককে হজম করতে হয়। পাঠক পাকস্থলির মত- সব কিছু হজম করতে হয়। বেচারা!
অনুমান করি, তখন এই দেশের সমস্ত কবি জ্যোত্স্না খাওয়ার জন্য হিমালয়ে অবস্থান করছিলেন। নইলে সমুদ্র গুপ্তের মত ভারী চটের ব্যাগ কাঁধে বয়ে ওষুধ ফেরি করছিলেন।

‘ওয়েবসাইট অবলম্বনে’ বা ‘ইন্টারনেট থেকে’- এসব হচ্ছে গণিমতের মালের মত। পত্রিকায় এই ২টা শব্দ ছেপে দিয়ে তথ্যের মহাসমুদ্র থেকে যে কোন তথ্য নিয়ে নিলেই হল, কেউ চোর-চোট্টা বলবে না। যেন ওয়েবসাইট নামের যন্ত্র নিজে নিজেই এইসব তথ্য যোগাড় করেছে, চাহিবামাত্র পত্রিকাওয়ালাদের সরবরাহ করার জন্য মুখিয়ে থাকে। এর পেছনে দুপেয়ে বুদ্ধিমান কোন প্রাণী ছিল না, সাইটটার কোন নাম থাকতে নেই! অতএব অনুমতি, নামোল্লেখ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আবশ্যকতাই বা কী!

যে তথ্য পাঠকের জন্য জরুরি না সেটা ফলাও করে ছাপা হবে, আজ এত লক্ষ কপি ছাপা হল। যেটা জরুরি সেটা ছাপার আশা বাতুলতা, যে আজ পত্রিকার মোট স্পেসের এত ভাগ বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে? আধাআধি হলেও মন্দের ভাল- ৫০ ভাগ খবর, ৫০ ভাগ বিজ্ঞাপন। এতেও অন্তত আমি সুখি, ৪০০ পয়সা উসুল হয়েছে এই আনন্দে।
নইলে একদিন দেখব গোটা পত্রিকা বিজ্ঞাপনে ঠাসা। পেছনে ছোট্ট করে লেখা, স্থানাভাবে আজ কোন খবর ছাপা হলো না। খবরের জন্য দেখুন আগামিকাল। আমাদের সাথেই থাকুন, চোখ বন্ধ করে।
চোখ খুললেই...।
বড় ধন্ধে আছি।

Saturday, November 8, 2008

অহেতুক আবেগ- মূল্য মাত্র ৫০ টাকা।

সালটা ৯৩। 'বীরশ্রেষ্ঠ' নামের লেখাটার জন্য পেয়েছিলাম ৫০ টাকা। তখন আমি দৈনিক 'ভোরের কাগজ'-এ ফি হপ্তাহে 'একালের রূপকথা' নামে নিয়মিত লিখি। হাবিজাবি বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে।

থাকি গ্রাম টাইপের একটা জায়গায়, দায়ে না পড়লে ঢাকা যাওয়া হয় না। কিন্তু একবার ঢাকায় পা রেখেই আমার মাথা খারাপের মত হয়ে গেল। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পাকিস্তানি পতাকায় ছেয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পাকিস্তানি প্রাইম-মিনিস্টার আসছেন। বেশ। তর্কের খাতিরে, শিস্টাচারের দোহাই দিলেও এমন করে পাকিস্তানি পতাকা দিয়ে ঢাকা শহর মুড়িয়ে দেয়ার যুক্তি কী এটা আজো বোধগম্য হয় না। প্রচন্ড মনখারাপ করে তখন বীরশ্রেষ্ঠ লেখাটা লিখেছিলাম।

তখন ওই পাতাটা দেখেতেন সঞ্জীব চৌধুরী। তাঁকে আমি অনুরোধ করেছিলাম এই লেখাটার জন্য কোনো টাকা আমাকে না-দিতে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোনো লেখা লিখব টাকার বিনিময়ে এটা আমার কল্পনাতেও ছিল না। তিনি বিষয়টা গুরুত্ব দেননি নাকি নিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম ছিল না এটা জানার আজ আর উপায় নেই! বাধ্য হয়ে টাকাটা আমাকে নিতে হয়েছিল- অনেক লেখার বিল একসঙ্গে দেয়া হত। হায়, এই ৫০ টাকার আমি কী করব, কোথায় রাখব?

৫০ টাকাটা আমি রেখে দিয়েছিলাম। আজও আছে। কখনও ইচ্ছা হয়নি এটা খরচ করে ফেলি। সজ্ঞীবদা, আপনি আসলে(!) দেখাব নে আপনাকে...।

"বীরশ্রেষ্ঠ
দেশের ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত অঝোরে ঝরে এক জায়গায় জমা হলো। সে সাগরে উঠল উথাল-পাতাল ঢেউ। সে ঢেউ ক্রমশ ফুঁসে উঠল। ছাড়িয়ে গেল এ দেশ- মহা বিশ্ব, সবকিছু। সৃষ্টিকর্তার ভাবনা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। একাগ্রচিত্তের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে শাসন কার্য, সৃষ্টিকর্তার জন্যে এরচেয়ে লজ্জার কিছু নেই। পাথরচাপা কষ্ট নিয়ে বললেন: এতো অপাপবিদ্ধ রক্ত, এতো রক্ত- এ নিয়ে আমি কি করব, কোথায় রাখব!

এদেশের ক’জন সেরা সন্তান, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ একই সঙ্গে আবেদন করলেন, অল্প সময়ের জন্যে হলেও প্রিয় মাতৃভূমি দেখার অনুমতি দেয়া হোক। তাঁদেরকে জানানো হলো, এ রকম কোনো নিয়ম নেই। বীরশ্রেষ্ঠরা গোঁ ধরে রইলেন। অবশেষে অনুমতি মিলল কিন্তু নিয়মকানুনও বলে দেয়া হলো:
কোনো অবস্থাতেই নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না, সাত জনকেই একসঙ্গে থাকতে হবে, এবং নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে ফেরা যাবে না।

ঢাকা। ১২ ডিসেম্বর। আর মাত্র একদিন পর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, মাত্র তিনদিন পর বিজয় দিবস।
চোখের পলকে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ প্রিয় মাতৃভূমিতে উদয় হলেন। মৃত্যুনীল যন্ত্রণায় তাঁদের দেহ মোচড় খাচ্ছে, ভুল করে তাঁরা পাকিস্তানে চলে এসেছেন। আহ-আহ, কী কষ্ট! চারদিকে উড়ছে পাকিস্তানি পাতাকা পতপত করে। চারদিক ছেয়ে গেছে পাকিস্তানি পতাকায়।


সিপাহী মোঃ মোস্তফা কামাল চেঁচিয়ে বললেন: কিন্তু একী আশ্চর্য! ওই, ওই তো দেখা যায় বায়তুল মোকারম মসজিদ?
ল্যান্স নায়েক নুর মোহাম্মদ সুর মেলালেন: আরে, বাহ, আমিও তো স্টেডিয়াম দেখতে পাচ্ছি।
কিছুদূর এগুতেই নায়েক মুন্সী আব্দুর রব অবাক হয়ে বললেন: অবাক কাণ্ড, এটাই তো সেই ঘড়িঅলা বিল্ডিংটা!
ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ফুটপাতের অসংখ্য পত্রপত্রিকা নেড়েচেড়ে দেখলেন, সব বাংলা।

ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার রুহুল আমীন অস্ফুট স্বরে বললেন: সবাই বাংলা ভাষায় কথা বলছে, এটা পাকিস্তান হতেই পারে না, আউট অভ কোশ্চেন!

মতিঝিলে জ্যামে অনেকক্ষণ আটকে রইলেন। পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে বঙ্গভবনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে নাকি সবুজ চত্বরে স্বাগত জানানো হবে।
এঁরা এদিক ওদিক বেশ অনেকটা সময় ঘুরে বেড়ালেন। একসময় সচেতন হয়ে ভারী লজ্জিত হলেন। আসার সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু...!


জাতীয় স্মৃতিসৌধের চারপাশে মানব-প্রাচীর ঘিরে আছে। বীরশ্রেষ্ঠরা অলৌকিক ক্ষমতার ব্যবহার না-করে এ ব্যুহ ভেদ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই ক্ষমতা ব্যবহার করার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে।
একজন বীরশ্রেষ্ঠ, কঠিন নিষেধ বিস্মৃত হয়ে মুখ ফসকে বলে ফেললেন: কেন স্মৃতিসৌধে ঢুকতে দেবেন না, আমরা বীরশ্রে..., আমাদের কি এইটুকু অধিকারও নেই?


ভাগ্যিস, বীরশ্রেষ্ঠরা কি করে এখানে এ নিয়ে সৈনিক মাথা ঘামাল না। পাথরমুখে একচুল আঁচড় না ফেলে বরফ ঠাণ্ডা গলায় বলল, পাকিস্তানের প্রাইম মিনিস্টার এখন ফুল দিচ্ছেন। আপনারা যেই হোন আর যাই হোন ওনার চেয়ে বড় না।

বীরশ্রেষ্ঠদের সবারই যেন কী হলো, সমগ্র বিশ্ব আধার হয়ে আসছে। চোখ জলে ছাপাছাপি কিন্ত কেউ কারো দিকে ভুলেও তাকাচ্ছেন না। বীরপুরুষদের চোখের জল যে দেখতে নেই। তাঁরা ফিরে আসছেন, একেকজনের থুতনী নীচু হতে হতে বুকে গিয়ে ঠেকছে।
সবাই জামার ভেতর আটকে থাকা মেডেলটা খুলে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। মেডেলগুলো ফেলে দিতে গিয়ে তারা জমে গেলেন, এগুলোর গায়ে দৈববাণী জ্বলজ্বল করছে: 'ও আমার বীর সন্তান, তোমাদের চেয়ে প্রিয় আমার আর কেউই নাই।"

দুঃখ প্রকাশ:
ভোরের কাগজের অধিকাংশ লেখা নিয়ে যে বইটি 'একালের প্রলাপ' ছাপা হয় ওখানে 'বীরশ্রেষ্ঠ' নামের এই লেখাটিতে স্কোয়াডন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ রুহুল আমীন ছাপা হয়েছে। যা হবে, ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার মোহাম্মদ রুহুল আমীন। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের কারণে দুঃখ প্রকাশ করি।  

Thursday, November 6, 2008

সাদা বাড়িতে কাল অতিথি...

এ গ্রহে এক প্রভু নাকি থাকেন বিশেষ একটা সাদা বাড়িতে। আকাশবাড়ির আসল প্রভু কী চান সেটা আলোচনার বিষয় না, সাদা বাড়ির প্রভু কী চান সেটাই বিষয়। তিনি কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মাথায় হাত বুলাবেন নাকি ইয়েতে আঙ্গুল দেবেন সেটা তার সদয় মর্জি।
 

এই প্রভু শেখান, এই গ্রহ শেখে। তিনি শেখাতে বাকি রাখেন না কিছুই- সময় থাকলে এটাও বলে দিতে চেষ্টা করেন একজন বিছানায় কেমন করে বিশেষ সময় কাটাবে!
এমন 'শিকখিত' প্রভুর দেশ অথচ সাদা বাড়িতে প্রভুর বেশে একজন কাল মানুষের প্রবেশ করতে ২০০৮ সাল লেগে গেল কেন, এটাই আমার কাছে বিস্ময়! হায়, কেমন 'শিকখিত' প্রভুর দেশ! একজন বুশ- পাগলটা এই গ্রহের মাথায় বনবন করে ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছে ৮ বছর হল! কোন আইন তার কেশাগ্র দূরের কথা গোপনকেশও স্পর্শ করতে পারছে না। একে যদি বলা হয় সারফেস উঁচু করো তো- এ করবে কী, সব প্রাণ মেরে কেটে সাফ করে কবর বানিয়ে সারফেস উঁচু করে ফেলবে। 


আফসোস, ইমপিচমেন্টের ফাঁদে ক্লিনটনের মতো চমত্কার শাসকের সিংহাসনের স্ক্রু ঢিলা হয়ে যায় যায়- মনিকার সঙ্গে ফস্টিনস্টি করে স্বীকার না করার কারণে। অথচ একটা কুকি বিস্কুট ব্যতীত আর কেউ বুশ নামের পাগলপ্রভুকে আটকাবার চেষ্টা করেনি (এই বদ্ধউম্মাদ গলায় কুকি বিস্কুট আটকে মরতে মরতে বেঁচেছিল)।
এ ঘটা করে আবার রাইসের কাছে চিরকুট লেখে, "আই নিড আ বাথরুম ব্রেক, ইজ দিস পসিবল"?
 

আসলে এইসব নকলপ্রভুরা- ডেমোক্রেট না রিপাবলিকান সেটা বিষয় না, এদের চালায় ব্যবসায়িরা। এরাই হচ্ছে এদের প্রাণপাখি। নির্বাচনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ফান্ড না আসলে পৃথিবীর ব্যয়বহুল নির্বাচনের তকমা লাগতে হবে না! 
তেল এবং অস্ত্র- সাংঘাতিক লাভজনক ব্যবসা। এই যে এতসব হাইটেক মারণাস্ত্র তৈরি হচ্ছে, এইসব বিক্রি করতে হবে না বুঝি। আগের ক্লাস্টার বোমায় মারা যেত ১০/১৫ জন, এখন মারা যায় শয়ে শয়ে। মহড়া করতে হবে না? তো, জাত-পাত, ধর্ম, জাতির নামে লাগাও যুদ্ধ। আরাম করে ভিজ্যুয়াল দেখ। শ্যাম্পেনে চুমুক দাও। দরদাম করো। ডিল। আর যেসব দেশ বোমার আঘাতে আঘাতে জর্জরিত সেইসব দেশের পূর্ণবাসনের কাজও তো এরাই বাগাবে। স্প্লিল্টারের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত শিশুটি খেলনা পুতুলের মত মরে থাকলেই কী রাইসের পিয়ানোর নোটে ভুল হবে? নাকি হওয়া উচিত! পাগল!

Monday, November 3, 2008

এক লালচওয়ালার খপ্পরে

আমি মানুষটা বেশ লালচি!
প্রবাসে আমার যেসব সুহৃদরা থাকেন, এরা দেশে ফেরার আগেই আমার খপ্পরে পড়েন। আমি অম্লান, নির্বিকার ভঙ্গিতে অনায্য দাবীতে বলি: দেখিয়েন, খালি হাতে আমার এখানে আসিয়েন না কিন্তক।
বেচারা-রা আ আ, কী আর করবেন, মুখ লম্বা করে, লজ্জার মাথা খেয়ে আমার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসেন।



মাহবুব সুমন:
ইনার ধারণা, আমি একজন দুর্ধর্ষ শিকারি। অস্ট্রেলিয়া থেকে বয়ে নিয়ে আসলেন 'বুমেরাং'। হায় খোদা, আমি তো পিপড়াও মারতে পারি না, শিকার করব কী!


আনোয়ার সাদাত শিমুল:
ইনার ধারণা, আমি নাকি কলমযোদ্ধা- দুই কলম লেখার এই ফল! একদা ৩ টাকার কলম নিয়ে কস্তাকস্তি করতাম দেখে হয়তো তার ধারণা জন্মে গেছে আমি কলম-মারকুটে! তাই কী ব্যাংকক থেকে এক দুর্ধর্ষ যোদ্ধার প্রতিমূর্তি নিয়ে এলেন। দেখো দিকিনি কান্ড, এই যোদ্ধার নাকই তো চার কলম!



বাবু:
এই মানুষটাকে সরকার একের পর এক ট্রেনিং দিয়েও রোবট বানাতে পারেনি। যে মানুষটার একটা ফোনে সরকারি কোষাগারে জমা হয় কোটি-কোটি টাকা, সেই মানুষটারই কিনা কাঁচা কটা আম ভেট পেয়ে সবগুলো দাঁত বেরিয়ে পড়ে।
হা ঈশ্বর! কিন্তু কঙ্গোর এই মহিলার...। লালচি থেকে লো...। রাম-রাম!




মাহবুবুল হুদা:
কট্টর এই মুসলমানের দেখার চোখটা বড় ঝকঝকে-স্বচ্ছ! নইলে কী আর আমাদের দেশের সবচেয়ে চালু মূর্তিপুজার প্রসঙ্গ একপাশে সরিয়ে এটা দেন!


সাদিক মো: আলম:
বিচিত্র এই মানুষ ততোধিক বিচিত্র তার আচরণ- সিংগাপুর থেকে নিয়ে এসেছিলেন এই সিংহাসন কিন্তু এটায় বসার উপায় নেই!



Friday, October 17, 2008

কে কাকে নাড়ায়!

Wednesday, October 1, 2008

শেকল

একেকজনের জন্য একেক পদের শেকল। কারো জন্য ধর্মের, কারও জন্য শিক্ষার...। কারো জন্য বা এমন সু-কঠিন শেকল, তার রক্তের শেকল! আটকে দেয় যাওয়াটা। অথচ অসীম বিনিদ্র রজনী! অনেক কাল না-ঘুমাবার তাড়না। শূণ্য পড়ে থাকে শীতনিদ্রার মোহনীয় বিছানাটা।

প্রবলপুরুষদের এমন শেকল কতটা সময় এ গ্রহে আটকে রাখতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়...।

এরা কারা- এলিয়েন, অন্য গ্রহের কেউ?

আমার ধারণা, বাংলদেশে সবচেয়ে বেশি দূর্নীতি হয় ২ ঈদের আগে-আগে।
কোরবানির ঈদে কী কী কোরবানি হয় সেই বিতর্কে আমি যাব না! তবে আমাদের দেশে কোরবানির ঈদ মানেই গরু জবাই। এবং চোখ দিয়ে যদি গরু খাওয়ার উপায় থাকত তাইলে একটা গরুও বাজার থেকে আস্ত ফিরতে পারত না, রাস্তাময় কেবল পড়ে থাকত গরুর কঙ্কাল!

আমার এলাকায় গতবছর সবচেয়ে বড় গরুটা (৬৫ হাজার) দিয়েছিলেন সার্জেন্ট সাহেব। সবার সেকি উচ্ছ্বাস!
অনুমান করতে কষ্ট হয় না, ঈদকে সামনে রেখে এ দেশের কোটি-কোটি মানুষের কাতারে আমাদের সার্জেন্ট সাহেবও ছিলেন বৈকি।

এবার আসা যাক ইদুল ফিতরের ঈদ। হাঙ্গা নাকি লেহাঙ্গাটা (৮০ হাজার) কিনেছেন একজন ক্লার্কের বখা মেয়ে।
আচ্ছা, স্যাররা যে ধুমসে দূর্নীতি করেন এই ঈদকে সামনে রেখে- নিশ্চয়ই ঈদের দিন মালপানি আসে না। তবে কখন, গোটা রমজানব্যাপি নিশ্চয়ই?
আমাদের দেশটা বড় বিচিত্র, রমজান মাস এলেই আমরা দেখি ধাঁ ধাঁ করে দ্রব্যমূল্যর দাম আকাশ ছাড়িয়ে যায়। কতটা গভীর মানুষের গলা কাটা যায়!
রিখটার স্কেলের মত যদি দূর্নীতি স্কেল থাকত তবে নির্ঘাত এই ২ ঈদের সময় বঙ্গালদেশ ধসে পড়ত।

রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি দূর্নীতি হয়, এই-ই আমার মত। জানি, অনেকেই একমত হবেন না। বেশ।

এ দেশের সমস্ত লোকজন তো দেখি রোজা রেখে মসজিদের সামনের কাতারে, বনবন করে ঘুরছে হাতের তসবি।
তাইলে এরা কারা, যারা সংযমের মাসে সীমাহীন হার্মাদী করছে? এরা কি অন্য গ্রহ থেকে আসে, এলিয়েন?

Monday, September 22, 2008

শিশু হত্যার মারণাস্ত্র, বিজ্ঞাপনরঙ্গ!

সোয়াইক গেল যুদ্ধে নাটকের একটি সংলাপ ছিল এমন: নাত্স-ই বাহিনীর অফিসার বলছে, 'হাগিস কেমন'?
সোয়াইক উত্তর দিয়েছিল, 'যেমন চাইবেন স্যার। শক্ত চাইলে শক্ত, পাতলা চাইলে পাতলা'।
এই আলাপে অশ্লীলতা খোঁজা বৃথা। তীব্র ভয়ে বাহ্যজ্ঞান যেমন লোপ পায় তেমনি লজিক। এখানে আমি সোয়াইকের তীব্র ভয়ে কাবু হওয়াটাই দেখছি- প্রাণের চেয়ে প্রিয় তো আর কিছু নাই!


এখনকার সময়ে বাহ্যজ্ঞান লোপ পেতে ভয়ের পাশাপাশি বেসুমার টংকাও (টাকা) দায়ি। সেলিব্রেটিরা যথেষ্ঠ টাকা পেলে যে-কোন বিজ্ঞাপন করে ফেলেন। শাহেদ নামের সেলিব্রেটি, সেল ফোনের একটা বিজ্ঞাপনে, বাবা-মাকে ছেড়ে আসা স্ত্রীর মন খারাপ দেখে বাসে জনসমক্ষে ললিপপ চুষতেও আপত্তি করেন না। বেকুবটা কী মনে করে এটা চুষছে সেই জানে!

আজিব, কোন চুতিয়ার মাথা থেকে বিজ্ঞাপনের এই আইডিয়া বেরিয়েছে কে জানে! চাবকাতে পারলে আরাম পাওয়া যেত।
কে জানে, আগামীতে দেখব, ইসুবগুলের ভূষির বিজ্ঞাপনে কোন সেলিব্রেটিকে কাস্ট করে জানতে চাওয়া হবে, আপনি কি হাগতে পারেন?
সেলিব্রেটি বিমলানন্দে মাথা নুইয়ে বলবেন, হুঁ, হাগা কোন বিষয় না। পেমেটন্টা ভাল দেন, দেখবেন, আচ্ছা করে হেগে দেখিয়ে দেব। শক্ত চাইলে শক্ত, পাতলা চাইলে পাতলা।

আমার ধারণা, শিশুদের সবচেয়ে পছন্দের অনুষ্ঠান কার্টুন এবং বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন শিশুরা কেন এত আগ্রহ করে দেখে আমি জানি না, এটা মনোবিদরা ভাল বলতে পারবেন। এদের অবচেতন মনে এর প্রভাব অকল্পনীয়! ৪-৫ বছরের শিশু বিজ্ঞাপনের জিংগাল পুরোটাই মুখস্ত করে বসে থাকে। লোগো দেখে গড়গড় করে আউড়ে যায়। সেল কোম্পানির বিজ্ঞাপন শুরু হওয়া মাত্রই ছাদ ফাটিয়ে বলে, মা কান্না করে-মা কান্না করে।

কী বিপুল প্রভাব!

একটি দুধ কোম্পানির চালু একটা বিজ্ঞাপন। বাচ্চালোক এই দুধ কোম্পানির দুধ খেয়ে এমন ‘তানদুরস্ত’-বলশালী হয়, গাছের মগডাল থেকে ছাতা নিয়ে লাফিয়ে পড়ে। কেবল লাফিয়েই পড়ে না প্যারাসুটের মত ভেসে ভেসে নিচে নেমে আসে। এরপর গলা ফাটিয়ে বলে, আমরা করব জয়, এ- এ-এ।

অল্প বয়সের শিশুরা যা দেখে তাই শেখে- বাবা চাঁদ ধরব, বাবা তোপ খাব। এই বিজ্ঞাপন দেখে কোন শিশু ছাদ থেকে ছাতা নিয়ে লাফিয়ে পড়লে ওই শিশুর মৃত্যুর দায় কে নেবে? এই বঙ্গালদেশে কি এমন কেউ নাই যাকে এর জন্য দায়ি করা চলে?

নাকি এরিমধ্যে কোন শিশু লাফ দেয়ার চেষ্টা করেছে? গোটা দেশের খবর তো আর আমাদের নখদর্পনে নাই। প্রত্যক্ষদর্শী কেউ না থাকলে এটাই বা কি করে নিশ্চিত হওয়া যাবে শিশুটি ছাতা নিয়েই ছাদ থেকে লাফ দিয়েছিল নাকি এমনি এমনি? পোস্টমর্টেম করে তো আর এটা বের করার উপায় নেই।

আমাদের দেশে জাতীয় দৈনিকগুলোতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির ৯০০ কোটি টাকা দানের খবরই আসে না আর একটা শিশুর মৃত্যুর খবর নিয়ে স্যারদের গা করার স্পৃহা কই?

মুক্তচিন্তার পরতিকায়(!) আসলেও বড়জোর আসতে পারে ছাদ থেকে পড়ে একটি শিশুর অকাল মৃত্যু। ফলোআপ করার চল আমাদের দেশে খুব একটা নাই। এরপর আমরা আর কিছুই জানব না।

ব্যস। মামলা ডিসমিস।

Saturday, September 13, 2008

ঈশ্বর হইতে সাবধান!

প্রায়শ ভাবি, আমরা যারা ভুল রোলে অভিনয় করি, নিতান্ত বাধ্য হয়ে; এদের কাছ থেকে খুব বেশি আশা করা বাতুলতা মাত্র। এদের মস্তিষ্ক, পায়ু, উদর একাকার হয়ে যায়।
চাকুরি সংক্রান্ত বিষয়, ভাইয়ের জন্য ।একজন সদাশয় মানুষের রেফারেন্সে এখানে আসা। চাকুরিদাতার অপেক্ষা। বসে থাকা, অনেক ফানির্চারের সঙ্গে মিলেমিশে ফার্নিচার হয়ে।
গুলশান। গাড়ির শো-রুম। এখানে ঘুষখোর, দূর্নীতিবাজদের বখা ছেলে-মেয়েদের স্যার-ম্যাম বলে বলে মুখে ফেনা তুলে আলগোছে গছিয়ে দিতে হবে ঝাঁ চকচকে একখানা গাড়ি।
অবশেষে তিনি এলেন। তাঁর খাস কামরা। টুকটাক উত্তর দেয়ার পাশাপাশি প্রশস্ত কামরায় চোখ বুলানো। ভদ্রলোকের সামনে রাখা এলসিডি মনিটরে অসংখ্য চলমান ছবি। ভালই তো, ইনি তাহলে একই সঙ্গে অনেকগুলো চ্যানেল দেখেন।
অরি আল্লা, ঘটনা তো এটা না, এটা তো লুকানো অসংখ্য সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি! মাবুদ, মনের ভুলে কেউ গোপনাঙ্গ চুলকালে এটাও যে কেউ আয়েশ করে বসে বসে দেখবে আর হি-হি করে হেসে গড়িয়ে পড়বে?
বিষয়টা মেনে নেয়া কঠিন কিন্তু এই অসভ্য কান্ড এই দেশেই সম্ভব। এখানে কে এটা নিয়ে গলাবাজি করবে যে এটা অবশ্যই আগন্তককে সতর্ক করা আবশ্যক যে গোপন ক্যামেরা চালু আছে। এবং ক্যামেরা যে চালু আছে তার একটা চিহৃ প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে না-দেয়াটা কঠিন অন্যায়।

ভদ্রলোক দুপুরের খাবার খাওয়াচ্ছেন। শুকরিয়া। এবং এটাও স্মরণ করিয়ে দিতে ভুলছেন না, কার রিজিক কোথায় থাকে কে বলতে পারে, এই যেমন আমিই কী জানতাম আজ দুপুরের আমার রিজিক এখানে? হুম, তা বটে। আরেকটা বিষয় হতে পারে এটাও ইন্টারভিউ-এর একটা অংশ।
ভদ্রলাক একনাগাড়ে কথা বলেই যাচ্ছেন। সৌদি আরব নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত।  আমি নিরীহ মুখে বললাম, ওখানে মুতওয়া (পুলিশ) ঘরে ঢুকে এক বাঙ্গালিকে ধরে নিয়ে গেছে, সে বারবার বলছে আমি পাক না, কে শোনে কার কথা। জোর করে থানায় নামায পড়িয়ে বন্ড সই রেখে তবে ছেড়েছে।
সবটা মনোযোগ দিয়ে শুনে কাজটা যথার্থ হয়েছে বলেই ভদ্রলোক সায় দিলেন এবার তিনি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এই দেশে মাতামাতি করায় খুবই উষ্মা প্রকাশ করলেন। ওঁর ধারণা, কবির মর্যাদা দিলে নজরুল ব্যতীত আর কাউকে দেয়া চলে না। দরাজ গলায় আবৃত্তি করলেন, 'কবর দিও আমায় মসজিদের পাশে...'।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, কবি নজরুল ইসলাম যে সমস্ত লেখা লিখে গেছেন এখনকার সময়ে নজরুল এর দশ ভাগের এক ভাগ লেখাও লিখলে কবির বাবরি চুল বাতাসে উড়ত। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বাবরি চুলের পেছনে কবির কল্লা থাকত []!
তিনি বলেই যাচ্ছেন, এখানে কাজের সময় সকাল সাড়ে আটটা থেকে রাত সাড়ে আটটা। বেশ। মধ্যে খাওয়া, নামাযের ব্রেক। খাওয়ার ব্যবস্থা এখানেই। বেশ। এবার তিনি চেষ্টাকৃত গম্ভীর হলেন, এখানে নামায কিন্তু অবশ্যই পড়তে হবে, এই বিষয়ে কিন্তু কোন ছাড় নাই।

হায় আকাশ! সকাল থেকে রাত- এখানে পড়ে থাকলে আকাশ দেখার সুযোগ কই? আচ্ছা, না-হয় আকাশ হারিয়েই গেল। পেটে আগুন নিয়ে আকাশ তো আর চিবিয়ে খাওয়া যায় না। বাদ আকাশ! কিন্তু নামাজ পড়ার আদেশ? এটাও তাহলে চাকুরির একটা শর্ত-অংশ!
আমি কখনও ঈশ্বর দেখিনি, এত কাছ থেকে তো প্রশ্নাতীত- তাহলে ঈশ্বরের সান্নিধ্যে ঝলসে যাব যে!

আজকাল বাড়ির গেটে ‘বিষধর সাপ হইতে সাবধান’ সাইনবোর্ড লাগাবার চল শুরু হয়ে গেছে। কালে কালে দেখব ‌'‌রাজাকার হইতে সাবধান' এমন সাইনবোর্ডও চলে এসেছে! ‘ঈশ্বর হইতে সাবধান’ এমন সাইনবোর্ডও ঝুলিয়ে দেয়া জরুরী, তাইলে আমরা বেঁচে যাই...।
 
লিংক:
১. কাজী নজরুল ইসলাম: https://www.ali-mahmed.com/2015/05/blog-post_25.html 

Tuesday, September 9, 2008

বীভত্স স্বপ্ন এবং আত্মার ফেরিওয়ালা!

শাহাদুজ্জামান 'বীভত্স মজা' নামে একটা লেখা লিখেছেন। লেখা না বলে এটাকে কি শব্দছন্দ বলা হবে নাকি ছন্দশব্দ এটা বলা মুশকিল! শব্দ নিয়ে এমন হেলাফেলায় জাগলিং সম্ভবত শাহাদুজ্জামানের মত দুঁদে লেখকের পক্ষেই সম্ভব! হায়, কেমন করে পারেন একজন মানুষ শব্দের এমন শব্দনাচ দেখাতে!

শাহাদুজ্জামান আপনি টলটলে পানিঘষা চোখ দিয়ে কী অবলীলায়ই না ফালাফালা করেছেন ঢাকা নগরকে। ঢাকা, যেন লাশকাটা টেবিলে শুয়ে থাকা অপরূপ এক মানব। কিন্তু ব্যবচ্ছেদের পর, একপেট আবর্জনা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো অতি সুদর্শন একজন আর গলিত শবে পার্থক্য কী?
আহা, লুই কান নামের পরিকল্পনাবিদের পরিকল্পনা থেকে আপনি এখনো বেরুতে পারেননি বুঝি! বিদেশি না হলে বুঝি কিছুই আমাদের পাতে দেয়া যায় না? আপনার আর দোষ কী বলুন, যে দেশে আইডিয়া বিক্রি হয় কেজি দরে।


এই হতভাগা দেশে স্বপ্নপুরি কোথায়? কে স্বপ্ন বিক্রি করে, কে স্বপ্ন কেনে? কেই বা স্বপ্ন দেখে, কেই-বা স্বপ্ন দেখায়! কোথায় সেইসব স্বপ্নবাজ, যাদের চোখে উপচে পড়ত স্বপ্ন, যাদের হাড় ক্ষয়ে ক্ষয়ে বেড়ে উঠত স্বপ্নের শেকড়? এরা যে আজ নিজেকেই বিক্রি করতে হন্যে হয়ে ঘুরছে। একটা চাকরির জন্য একে-ওকে ধরছে। কেউ হ্যা হ্যা করে হাসছে, যেন ভারী মজার একটা কিছু শুনল যা হোক। কেউবা অন্য দিকে তাকিয়ে থাকার ভান করে।
এই অভাগা দেশে স্বপ্নবাজদের আদৌ প্রয়োজনই বা কী? স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা এখন থেকে স্বপ্নের বদলে নিজের আত্মা ফেরি করবে অন্ধকারের পশুর কাছে!

Saturday, August 23, 2008

কী সাহস গো আপনার ! পেন্নাম হই।

"শোনা গেল লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে-ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়াছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হ'ল তার সাধ।
বধু শুয়ে ছিল পাশে-শিশুটিও ছিলো;
...
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
...
লাশকাটা ঘরে
চিত হ'য়ে শুয়ে আছে টেবিলের 'পরে।"

আহা, কী সাহস গো আপনার! মরিবার হ'ল তার সাধ...! মরিবার সাধ কার না জাগে? এ্যাহ, সাধ হলেই কী! সাধ হলেই বুঝি লম্বা হয়ে শুয়ে পড়া যায়? লাশকাটা ঘরে লাশ হয়ে শুতে ভয় করে না বুঝি?

কী পাষন্ড গো আপনি! কেমন করে পারলেন, বাহে, কেমন করে? কেমন করে পারলেন শিশুটির গায়ের গন্ধ বিস্মৃত হতে?

জানি-জানি বিপন্ন একটা বিস্ময় আপনার রক্তের ভিতরে খেলা করে। সে তো আমাদের রক্তেও সবিরাম খেলা করে! তাই বলে আপনার মত সাহস আসে কেত্থেকে? ট্রাম না হোক চলমান গাড়ি তো আমাদেরও টানে- একটা শীতনিদ্রার যে বড্ড প্রয়োজন।

জীবনানন্দ দাদা, আট বছর আগের একদিন? কেন এটা যে-কোন একদিন হলে দোষ কী!

Thursday, August 21, 2008

ভূত দিবস:


বুকিন ঘুমাচ্ছে।
মাঝরাতে ওর ঘুম ভাঙ্গানো হলো। অবশ্য এ জন্য অনেক কায়দা-কানুন করতে হয়েছে। বুকিনের ছোট্ট খাটটা অনেকক্ষণ ধরে বেদম ঝাঁকানো হলো। পর্যায়ক্রমে ফোস্কা পড়া গরম, বরফ ঠান্ডা বাতাস, কান ফাটানো শব্দে ওর ঘরটা ভরে গেল। এত কাঠখড় পুড়িয়েও ফল মিললো না দেখে বুকিনের ছোট্ট খাটটা উল্টে ফেলা হলো।

অবশেষে বুকিন চোখ মেলে বিকট হাই তুলল, অবিকল টারজানের মতো শোনাল। ঘুমঘুম চোখে দেখল, অদ্ভুত এক অবয়ব। আকৃতিটা অনেকটা কঙ্কালের মতো। আশ্চর্য, আকৃতিটার মুন্ডু নেই! না আছে, মুন্ডুটা হেলমটের মতো বগলে চেপে রেখেছে!
বুকিন অসম্ভব বিরক্ত হয়ে বলল, ‘কি জিনিস তুমি?’
আকৃতিটা অবাক হলো, এ আবার কেমন প্রশ্ন? কি জিনিস তুমি, সে কি জিনিস, আলু-পটল? বাচ্চাটা ভয়ে আধমরা হয়ে মুর্ছা যাওয়ার আগে বলবে, ক্কে-কে, কে আপনি, তা না...আবার জিগায় কি জিনিস তুমি!
‘আমি রাগী ভূত,’ বলল, আকৃতিটা চিবিয়ে চিবিয়ে।
বুকিন ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, ‘বলার ভঙ্গিটা আরও রপ্ত করতে হবে তোমায়, একদম মানাচ্ছেনা। আর ফড়ফড় করবে না। ভূত বললেই হয়, তা না রাগী ভূত, এইসব কী! মানুষ হলে বলতে পারতে আমি ডক্টর অমুক তমুক। তুমি তো আর মানুষ না, ভূত। অবশ্য তুমি যে ফাজিল টাইপের ভূত এতে আমার আমার কোন সন্দেহ নাই। ভূত, হেহ! ছাগল-ছাগল, ছাগল না হলে কেউ অযথা গভীর রাতে কারো ঘুম ভাঙ্গায়! আমি ডিস্টার্ব হইলাম, বড়ো ডিস্টার্ব হইলাম । হুশ-হুশ!’

ভূত স্তম্ভিত । ওর ধারণা ছিল ওকে দেখামাত্র পুঁচকে ছেলেটা বিছানা ভাসিয়ে ফেলবে। মুন্ডুটা হেলমেটের মতো কোমরের কাছে কায়দা করে ধরে রাখতে কতো অনুশীলনই না করতে হয়েছে। গুড লর্ড, এইসব হচ্ছেটা কী! ও কী কুত্তা- একবার না, দুইবার হুশ বলল! ভূতদের মান-সম্মান বলে কিছুই রইল না। অপমানে মরে যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু ভূতদের তো আবার দ্বিতীয়বার মরে যাওয়ার কোন নিয়ম নাই।
ভূত রাগী গলায় বলল, ‘অযথা ঘুম ভাঙ্গিয়ে রসিকতা করব- আমি কি গোপাল ভাঁড়, নাকি মি. বীন, না টেলি সামাদ! ব্যাপারটা খুবই জরুরী। আজ আমাদের ভূত দিবস।’

বুকিনের দু-চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসছে। এপাশ ওপাশ ঢুলতে ঢুলতে বলল, ‘ভাত দিবস, বেশ-বেশ। আমরা করছি ফাস্ট ফুড দিবস আর তোমরা করছ ভাত দিবস, মন্দ না! কিন' ব্রাদার, ভাত খেয়েও তোমার শরীরে দেখি এক ছটাক মাংসও নাই, বিষয়টা কী!’
‘খোকা, আমি একজন বয়স্ক ভূত। আমার সঙ্গে তোমার আচরণ দেখে কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে আমি বলছি ভূত দিবস আর তুমি কিনা-’ এই মুহুর্তে ভূতটাকে দেখে মনে হচ্ছে কাঁদার উপায় থাকলে এ নির্ঘাত ভেউ ভেউ করে কেঁদে ফেলত। কিন্তু কাঁদার জন্য এর চোখ তো দূরের কথা, চোখের মনিই নাই!
বুকিন এবার কোমল গলায় বলল, ‘সরি, তোমার, মানে আপনার কথা ঠিক শুনতে পাইনি। ভূতদের আবার দিবস-টিবস আছে নাকি?’
ভূত রাগে গসগস করে বলল, ‘হোয়াই, হতে পারে না কেন! তোমরা গাছ দিবস, পশু দিবস, ভাল্লুক না কি যেন ভালুবাসা দিবস, লাখ লাখ দিবস করো আর আমরা বছরে একটা দিবস, ভূত দিবস করতে পারব না, এটা কেমন বিচার!’
বুকিনের গলায় উষ্মা, ‘আহা ওভাবে বলবেন না, গাছ দিবস না, আমরা বৃক্ষ রোপন দিবস পালন করি।’
ভূত বলল, ‘হাতির ডিম।’
বুকিনের বিভ্রান্ত চোখ, ‘মানে!’
‘আমরা ভূতরা তাচ্ছিল্য করে ঘোড়ার ডিম না বলে হাতির ডিম বলি। যা বলছিলাম, একটা গাছ লাগাতে লাখ খানেক টাকা খরচ করো। অনুষ্ঠান শেষ হলে নার্সারী থেকে ভাড়া করে আনা ক্রিসমাস ট্রিগুলো নার্সারীর লোকজনরা উপড়ে নিয়ে যায়। হাহ!’
বুকিন উষ্ণ হয়ে বলল, ‘আপনি ভূত বলেই খারাপটা দেখছেন। জানেন, গাছ না লাগালে কি হবে, পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষ মরে সাফ হয়ে যাবে।’
ভূত হেলাফেলা ভঙ্গিতে বলল, ‘পৃথিবীতে মানুষ না থাকলেই আমরা ভূতরা মজা করে থাকব। মানুষ বড়ো যন্ত্রণা করে। একে একে সব গাছ কেটে ফেলছে। ভাবো দেখি, আমরা গেছো ভূতরা যাবোটা কোথায়! গাছের চেয়ে ভূতের সংখ্যা বেশি। আমার গাছটা কেটে ফেলার পর এক বছর ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরেছি। গাছ দখলে চ্যাংড়া ভূতদের সঙ্গে কি আমি পারি, বুড়া হয়েছি না, গেটিং ওল্ড!’
বুকিন ছলছল চোখে বলল, ‘আহা-আহা, আপনার থাকার জায়গা নাই।’
ভূত মুন্ডুবিহীন ধড় নাড়িয়ে বলল, ‘না-না, ক-দিন হলো থাকার সমস্যার সমাধান হয়েছে। সার্ক ফোয়ারা দেখেছ তো। ওটা দেখতে অনেকটা গাছের কঙ্কালের মতো। আমার বড়ো মনপসন্দ হইছে। তাছাড়া কয়েক কোটি টাকার গাছ। হাক্কু, হাক্কু, হাক্কু!’
হাড়ে খটখট শব্দ তুলে ভূতটা হাক্কু, হাক্কু হাসতে গিয়ে মুন্ডুটা গড়িয়ে গেল।
বুকিন চোখ বড় বড় করে বলল, ‘আলাদা মুন্ডুটা হাতে নিয়ে রাখেন কেন?’
‘শরীরের একটা অংশ ফেলতে মায়া লাগে। তাছাড়া খুব বিষণ্ন বোধ করলে এটা দিয়ে লাউয়ের জুস না খেয়ে এটা দিয়ে ফুটবল খেলি।’
বুকিন অবাক হলো, ‘একা-একা?’
‘হুঁ।’
বুকিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ‘আহা, আপনার বড়ো কষ্ট! আচ্ছা ভূত দিবস কী?’
‘এইদিন আমরা মানুষের ক্ষতি-টতি করি। ভয় দেখাই। এই ধরো কারও প্রিয় কোন জিনিস ফেলে তাকে দুঃখ দেয়া। সরি, আমি তোমার খেলনাগুলো বাইরে ফেলে দিয়েছি।’

বুকিন চুপ করে রইল, খানিক পর ঠোঁট উল্টে বলল, ‘বেশ করেছেন। যেসব বাচ্চাদের খেলনা নেই ওরা কুড়িয়ে নেবে। জানেন, আমার না ইচ্ছা করে ওদের কিছু খেলনা দেই। আমার কত্তো খেলনা। কিন্তু মা’র জন্য পারি না। খুব কষ্ট হয়। এখন আমার মন খুব খারাপ হয়েছে।’
ভূতটা এক পাক নেচে বলল, ‘আচ্ছা বুকিন, তোমায় একটা গান শুনাই, তোমার মন ভালো হবে:
‘হে-হে-এ। আমি একটা বৃদ্ধ ভূত,
বুকিনের সঙ্গে খেলি কুত কুত ।
হে-হে-এ, হে- হে- এ- এ-এ।’
বুকিনের মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে ওর চেয়ে সুখী আর কেউ নেই। কী এক বিচিত্র ভঙ্গিতে ততোধিক বিচিত্র গান গেয়ে বুকিনের মন ভাল করার চেষ্টা করছে। আহা, ভূতটার মনে কী মায়াই না গো!
বুকিন থেমে থেমে বলল, ‘আচ্ছা, মরে গেলে আমিও কি আপনার মত ভূত হবো?’
ভূতটা হাহাকার করে উঠল, ‘না-না-না, বুকিন না, গড ব্লেস য়্যু। তুমি কেন ভূত হবে, অসৎ- দূর্নীতিবাজ মানুষরা মরে গেলেই কেবল ভূত হয়।’
‘আপনি কি দূর্নীতিবাজ ছিলেন?’
ভূত ভাঙ্গা গলায় বলল, ‘হ্যাঁ। জীবিত থাকতে আমি দেদারসে ঘুষ খেতাম।’
‘ঘুষ কি?’
‘থাকগে এতো জেনে তোমার কাজ নেই। এসব বড়দের ব্যাপার। কুত্সিত ব্যাপার।’
বুকিন বলল, ‘বলেন না, প্লিজ।’
ভূত নিশ্চুপ।
বুকিন অসহিষ্ণু, ‘না না, চুপ করে থাকবেন না, বলতে হবে।’
ভূত অনেকক্ষণ চুপ থেকে থেমে থেমে বলল, ‘এটা তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করো। বিদায়। ভাল থেক, এই রকমই, পানির মতো টলটলে। আর বুকিন তোমাকে এ কথাটা বলতে বুকটা ফেটে যাচ্ছে খুব শিগগির তোমার বাবার সঙ্গে আমার দেখা হবে, তারও একটা গাছের প্রয়োজন হবে!’

* 'একালের প্রলাপ' বই থেকে

Friday, August 15, 2008

কলম নামের মারণাস্ত্র

মুনসুর আলী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অখ্যাত লেখক নামের এই মানুষটার জন্য কী মায়াই না হচ্ছে, এই মায়ার উত্স কী কে জানে! 
মুনসুর আলী নিজেই নিজের উপর বিরক্ত- এই সব কী, এই সবের মানে কী! উঁহু, এ ভূমিকায় ওঁকে মোটেও মানাচ্ছে না। পত্রিকা অফিসের লোকজনরা আঁচ করতে পারলে হাসাহাসি করবে। তাচ্ছিল্য করে বলবে, হায় মুনসুর, হায়, তুমি এখনও প্রফেশনাল হলে না। তুমি দেখি পত্রিকা ডুবিয়ে ছাড়বে।

মুনসুর আলী আসলে একটি চালু দৈনিকের সাহিত্য পাতার সম্পাদক। কতটুকুই বা ওঁর ক্ষমতা- ওঁ তো আর পত্রিকার সম্পাদক না। আসলে এখন সমস্ত ক্ষমতা পত্রিকা মালিকের। বড়ো বিচিত্র ব্যাপার- ব্যবসায়ীরাই সব পত্রিকার মালিক হয়ে বসে আছেন! পত্রিকা মালিক ত্রাণ দিচ্ছেন এটা হররোজ ঘটা করে ছাপা হবে। ত্রাণ বন্ধ তাতে কী- রক্ত দান কর্মসূচীতে তিনি যে মূল্যবান রক্ত দান করছেন এটা কী ছাপা না হয়ে যায়?

মুনসুর আলীর সাক্ষাত্কার নেয়ার কথা ছিল যে লেখকের তিনি একজন অ-জনপ্রিয়, অখ্যাত লেখক । খুব জনপ্রিয় লেখক হলে সমস্যা ছিল না। যাদের বইয়ের কপি নিঃশেষ হয়ে যায় বই বের হওয়ার পূর্বেই।
জনপ্রিয় লেখক, বড় জটিল জিনিস! জনপ্রিয় এমন একজন লেখক, যার বই এখনও বেরই হয়নি অথচ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন চলে এসেছিল প্রথম মুদ্রণ নিঃশেষিত দ্বিতীয় মুদ্রণও প্রায় শেষ হয় হয়। সন্তান প্রসবের পূর্বেই সন্তানের পিতা! যে এ নিউজ করল তার চাকরি যায় যায়।

বা যারা নিজের বইয়ের বিজ্ঞাপন নিজেই দিয়ে লিখে দেন প্রথম মুদ্রণ শ্যাষ, দ্বিতীয় মুদ্রণের ছাপার কাজ চলিতেছে।

মুনসুর আলী পূর্ণদৃষ্টিতে এই লেখক নামের প্রাণীটির দিকে তাকালেন। প্রাণীটি কাঠের টেবিলে মাথা নীচু করে লিখে যাচ্ছে, যেন বা সে গোটা পৃথিবীটা এই কাঠের টেবিলটায় আটকে ফেলেছে। শব্দের ইট একের পর এক সাজিয়ে অন্য ভুবনের এক ইমারত গড়ছে। 

মুনসুর আলী ভেবে পাচ্ছেন না একে কি করে বলবেন এঁর সাক্ষাত্কার ছাপা হচ্ছে না। ছাপা হচ্ছে এক টিভি স্টারের, যে কিনা মাত্র দু-একটা বিজ্ঞাপন করে স্টার হয়ে গেছে। সম্পাদকের ধারণা, ওই টিভি স্টারের বিজ্ঞাপনটা পাবলিক ভাল খাবে, কচকচ করে খাবে।

মুনসুর আলী কথাটা বলবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে লেখক নামের প্রাণীটি মুখ তুলে তাকাল। কী তীব্র সেই চোখের দৃষ্টি! অ-জনপ্রিয় লেখক পাঁচ আঙ্গুলে আকড়ে ধরা ভয়ংকর অস্ত্রটা তাক করলেন। কলম নামের কী হাস্যকর একটা অস্ত্র অথচ মুনসুর আলীর গা কাঁপছে।   

*'সাদাকে কালো বলিব' থেকে

সহায়ক লিংক: http://www.ali-mahmed.com/2009/03/blog-post_21.html 

Sunday, August 3, 2008

গাধু, গাধার মত এইটা কী করলি!

 
(না ভান-না মান, কেবলই অভিমান)
গাদুরা।
তোকে তো গাধুই ডাকতাম, নাকি? তোকে আরেকটা নামে ডাকতাম ‘তিন ঠেইঙ্গা’। ওরে, তোর তিন ঠেইঙ্গাটা রাখা আছে আমার বৈঠকখানায়- আয় না একদিন, দেখে যা।

কি রে, তোর কী জানা আছে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস? মার্কিন কংগ্রেস নাকি ১৯৩৫ সালে আইন করে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস ঘোষণা করে। চিন্তা কর, বন্ধুত্বের জন্যও নাকি আইন লাগে।
এইসব জানিস না, না? ছ্যা! দেখ দেখি কান্ড, এটা আমি প্রায়শ ভুলে যাই আমি তো আবার তোর থেকে ২ পাতা বেশি পড়েছি। এটা ফলাও করে তোকে, লোকজনকে না বললে শান্তি লাগে না, বুঝলি। আমি যে কী ‘শিকখিত’ হয়েছি এটা জনে জনে না জানালে চলবে কেন, বল! বুঝিস না কেন দুনিয়াটাই এমন...।

তুই যে আমায় ‘চার চইখ্যা’ ডাকতি আমার এটা ভাল লাগত না, বুঝলি। আরে, চশমা চোখে দিলে দুয়ে দুয়ে তো চার চোখই হবে- এটা আবার ঘটা করে বলাবলির কী আছে! চশমা চোখে কী আর সাধে দিতাম, সেই ছোটবেলা থেকেই তো চোখ গেছে। গেলে কী আর করা! ওই সময় এ বয়সের ক-টা ছেলেই বা চশমা পরে, লজ্জা করত না বুঝি আমার? ইচ্ছা করে তুই এই কান্ডটা করবি, চার চইখ্যা ডাকবি আর আমি আনন্দে লাফাব, পাগল!


ইয়ে, তোর কি ওই পাগলা স্যারটার কথা মনে আছে, আছাদ আলি স্যার। আমাদের বাসায় যার কাছে আমরা প্রাইভেট পড়তাম। প্রাইমারীতে পড়ার সময় যেবার তোর বুকে নাগরাপরা পা তুলে দিলেন। আরেকবার পেয়ারা গাছের পাতাসহ ডাল ভেঙ্গে তোকে মারছিলেন আর তুই হি হি করে হাসছিলি। পরে তুই গোমর ফাঁস করে দিলি, পাতাভর্তি ডালটার কারণে তুই নাকি কোন ব্যথাই পাচ্ছিলি না।

জানিস, আজ না আমার আলাভোলা বাবাটার কথা মনে পড়ছে বড্ডো। মানুষটা আমাকে শৈশবে ওই শিক্ষাটা দিয়েছিলেন বলেই না আজ আমার এই হা-হুতাশ নাই, কেন শৈশবের বন্ধুদের মধ্যে কেউ মন্ত্রীর ছেলে, সচিবের ছেলে নাই।
দেখলাম তো আজকালকার বন্ধুত্ব! সর্দি ঝাড়ার মত একজন অন্যজনকে ভুলে যায়! কী অবলীলায় একজন অন্যজনের হাত ছেড়ে দেয়। আসলে আমাদের এত সময় কই!
 

যাগ-গে, তোর সঙ্গে ডাং-গুলি খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, মাঞ্জা দেয়া সুতা...ঘ্যাচ ঘ্যাচ ঘ্যাচ। ডাং-গুলি ...আহা, কী খেলা- এড়ি, দুড়ি, তেলকা...! ডাং-গুলিতে তোর অসাধারণ দখল আমার ভাল লাগত না, বুঝলি? ভাল লাগার কী কোন কারণ ছিল? তোর কাছে নিয়মিত হারতাম। খেলার নিয়মানুযায়ি এক লালে কেনা যেত আস্ত একটা গোদাম, দুই লালে নদি। তুই তিতাস নদিটাও কিনে ফেলতি, এইটা কোন দেশের বিচার!
আর আমি, হারুয়া পার্টি? গুমগুম করে পিঠে পড়ত তোর কিল। ইশ-শ, কী জোরেই না মারতি! তখন জোর প্রতিজ্ঞা করতাম, শোধ নোব একদিন। ঠিক গদাম করে মারব একটা।
অনেক বছর পরে তোকে কিন্তু ওইদিন ঠিকই মারতাম। তুই শ্লা, আমায় গালি দিলি কেন? শ্লা, আমাকে আপনি আপনি করে বলছিলি কেন রে, তুই থেকে আপনি? কুতুয়া রে!

গাধু, গাধার মত তুই যে মরে গেলি পচাই খেতে খেতে এটা কী একটা কাজের কাজ হল?!

Saturday, August 2, 2008

একালের নাইট, একালের যুদ্ধাপরাধি।

­ডন কুইক্সোট অভ লা মানচা মরেও শান্তি পাচ্ছেন না। তাঁর মতো সৎ, দূঃসাহসিক-ডাকাবুকো নাইট জীবিত নেই বলেই সম্ভবত পৃথিবীটা ভরে গেছে অনাচার, দুঃশাসনে। উহু, আড়মোড়া ভেঙ্গে হুড়মুড় করে জেগে উঠতেই হয়, মরে গা ভাসিয়ে থাকা চলে না। অবশ্য ডন কুইক্সোটের মত নাইটরা নাকি কখনও মৃত্যু বরণ করেন না, খোলস বদলান মাত্র।

বাংলাদেশে আসবেন মনস্থ করলেন। এ সিদ্ধান্তের পেছনে লুকিয়ে আছে বিশাল এক ক্ষুব্ধতা। শুনেছেন এ জাতি অতিশয় পাজি। প্রকাশ্যে বীরবর একজন বয়স্ত মানুষকে তার সন্তানসম কেউ লাথি মারে আর লক্ষ-লক্ষ মানুষ তা অবলোকন করে। অথচ ওই অতি দুষ্টকে শায়েস্তা করতে, তার কেশাগ্র স্পর্শ করার ক্ষমতা নাকি কারও নাই! ধিক, ধিক-ধিক। নাহ, এর একটা বিহিত করা আবশ্যক।

ডন কুইক্সোট তার শালপ্রাংশু-কিসমিস টাইপের শরীর অদ্ভুত ভঙ্গিতে বাঁকিয়ে বিকট হাই তুললেন। লাফিয়ে উঠতে গিয়ে সামলে নিলেন যখন বুঝতে পারলেন এই বজ্রপাতের উৎস তিনি নিজেই। তাঁর পার্শ্বচর, পৃথুল-থলথলে শরিরের সাংকো পানযাকে বললেন: সাংকো, জীবনটা এক যুদ্ধ, নিরন্তর যুদ্ধ- তৈরি হও, আমি যুদ্ধে বের হব।
সাংকো চোখ কচলাতে কচলাতে ভাবল, যন্ত্রণা, আবার যুদ্ধের ভূত চেপেছে। লোকটার মাথা কি আবারও এলোমেলো হয়ে গেল! হাই চেপে ভূঁড়িতে হাত বুলিয়ে বলল: স্যার নাইট, খেয়ে-দেয়ে একটু গড়িয়ে নিলে হতো না।
ডন কুইক্সোট গাঁকগাঁক করে উঠলেন: আরে এ গাধা বলে কি, চারদিকে এতো অন্যায়-অবিচার, তুই কি খেয়ে ঘুমিয়ে রসাতলে যেতে চাস- তোর কি আঠারো মাসে বছর!
সাজ-সাজ রব পড়ে গেল, ডন কুইক্সোট তাঁর বর্শা, অসি শাণ দিতে বসলেন। অবশ্য এ তরবারি দিয়ে মুরগির গলা দু-ভাগ হবে কি না সন্দেহ! তার বর্শাটা দিয়ে কলাগাছ এফোঁড়-ওফোঁড় করতে , তা প্রায় ঘন্টাখানেক তো লাগতেই পারে।
ডন কুইক্সোট তার লজঝড় মার্কা পুরোদস্তুর যুদ্ধের পোশাকে, তাঁর প্রিয় দুর্ধর্ষ ঘোড়া রোজিন্যান্ট-এ চাপলেন। সাংকো পানযা তার গাধা ড্যাপল নিয়ে অনিচ্ছা সত্বেও পিছু নিল।

বঙ্গাল দেশের মহা সুন্দরীদের হাবভাব নাইট ডন কুইক্সোটকে তিলমাত্র প্রভাবিত করছে না। টকটকে লাল রঙের প্রলেপ মাখানো হাত পায়ের লম্বা-লম্বা নখ দেখে মনে হচ্ছে শকুনের রক্তাক্ত পা। উৎকট লিপস্টিক-রুজে মাখামাখি ঠোঁট, গাল দেখে বিড়বিড় করলেন: ড্রাকুলী।
স্যার নাইট একটু গুলিয়ে ফেলেছেন। ড্রাকুলী না বলে বলতে পারতেন ড্রাকুলার মেয়ে অথবা মহিলা ড্রাকুলা। অভিজাত মহিলাদের কামানো ভ্রু দেখে আঁতকে উঠলেন মড়ার খুলি ভেবে।
ধনুর্ভঙ্গ পণ করায় কিনা কে জানে ডন কুইক্সোট-এর সমস্ত মন ছেয়ে আছে ইনার প্রেমিকা ডালসিনিয়া দেল টোবাসো। দেল টোবাসোর আকাশ পাতাল রূপ ছিল কি না সেটা আলোচ্য বিষয় না কিন্তু ইনার চোখে অন্যরা নস্যি। আসলে লাইলীকে দেখতে হয় মজনুর চোখ দিয়ে- দেল টোবাসোকে দেখতে হবে ডন কুইক্সোটের চোখে।

ঘোড়া রোজিন্যান্ট তার হাড্ডিসার শরীর নিয়ে পূর্ণ গতিতে ছুটছে (সত্য বলতে কি গতি গাধার চেয়ে কম) ভিআইপি রোড ধরে। ঘোড়া মধ্যরাস্তা পেরুতে গিয়ে দুহাত উঁচু আইল্যান্ডে মাথা বাঁধিয়ে চার পা আকাশে তুলে দিল। ডন কুইক্সোটকে গড়াগড়ি খেতে দেখে সাংকো টেনে তুলল। ধুলায় ধবলীভূত নাইট ব্যাথায় কুঁইকুঁই করে গা ঝাড়া দিলেন। থসথসে দেহের হাড় গুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
রাগ চেপে একজনকে জিঞ্জেস করলেন: এইসব কি!
লোকটা অবঞ্জাভরে বলল, অ, এইটা আইল্যান্ড। ক-দিন পর পর এটার নমুনা আমরা বদল করি। একবার গাছ লাগালাম তো পরের বার কেটে ফেললাম। সিরামিক ইট বসিয়ে রেলিং দিয়ে ক-দিন পর ওটা গুঁড়িয়ে রঙ দিয়ে দিলাম। ইচ্ছে হলে আবার গাছ লাগালাম। ইনফ্যাক্ট, আমরা ভাংচুর না করে থাকতে পারি না, পরিশ্রমী জাতি তো। আপনি হয়তো ক-দিন পর দেখবেন দুহাত উঁচু এ দেয়ালের চিহ্নমাত্র নেই। শোভা পাচ্ছে দশ হাত গভীর ড্রেন, ওটাই আইল্যান্ড।

ডন কুইক্সোট এগুচ্ছেন, ক্রমশ মন খারাপ হচ্ছে, স্পষ্ট দৈববাণী (রেডিও, টেলিভিশনকে দৈববাণী ভাবছেন) শুনছেন, বারংবার: পূর্বে এ দেশে অযুত-নিযুত সমস্যা ছিল, এখন কোন সমস্যা নাই। ভবিষ্যৱ হবে আরো চমৎকার।
ডন কুইক্সোট একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, তুমি কি আমায় মুক্তিযোদ্ধা ওই মানুষটার খোঁজ দিতে পার, খুনিদের বিচার চাইলে গেলে যাকে প্রকাশ্যে লাথি মারা হয়েছিল?
যাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলেন সে বিরক্ত হয়ে বলল, ওই মানুষটাকে তো সবাই খুঁজছে, মোস্ট ওয়ান্টেড পারসন। ১৯৭১-এ স্বাধীনতার নামে গন্ডগোল লাগিয়ে দেশটার বারোটা বাজিয়েছিল। এইসব যুদ্ধাপরাধিদের এখন খুঁজে বের করে বিচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

আসলে ডন কুইক্সোট তার ধীরগতির কারণে এই দেশে পৌঁছতে অনেক দেরি করে ফেলছেন। দাবার ছক পাল্টে গেছে।
ডন কুইক্সোট গভীর বিষাদে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন: সাংকো, এখানে আমার অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই, চলো অন্য কোথাও।


*চরিত্রগুলোর নাম নেয়া হয়েছে: Cervantes-এর Don Quixote থেকে

Tuesday, July 29, 2008

ক্রসফায়ার, এক মহাআবিষ্কার!

ক্রসফায়ার (link) এ দেশের এক মহা মহা আবিষ্কার। গ্রিজ-জেল মাথায় মেখে একজন মন্ত্রীবাহাদুর এটা চালু করেছিলেন! এ জন্যে নোবেল না পেলেও 'বোবেল' পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। 
ক্রসফায়ার জটিল এক আবিষ্কার! অনেক আঁক কষতে হয়, জটিলসব সূত্র, অংকের ফল মেলাতে হয়। বাংলার ফল খেতে খেতে, অংকের ফল মিলিয়ে, ইংরাজিতে ফল হয়ে জনমের তরে মাটিতে শুয়ে যেতে হয়। 
প্রথমে আমি ধারণা করেছিলাম এটা মৌলিক আবিষ্কার না। কিন্তু স্টেফেন হকিং-এর 'আ ব্রিফ হিস্ট্রি অভ টাইম' বা আইনস্টাইনের বই-টই খুঁজেও না পেয়ে স্বস্থির নিশ্বাস ফেললাম, যাক এটা তাহলে বঙ্গালদের(! ) আবিষ্কার!

ক্রসফায়ার খুব জটিল একটা বিষয়! ধরুন, আপনি আইনের লোক। আপনার কাছে আছে শটগান। একজন আউট-ল, তার কাছে আছে ওয়েলথার পিপিকে।
ধরুন (আমি বিজ্ঞানী না যে আপনাদেরকে চুলচেরা তথ্য দিতে পারব। তাই আমি ধরুন বলব আর আপনারা ধরতে থাকবেন, দয়া করে আবার হাতের মুঠোয় গুলি ধরতে যাবেন না যেন)।
তো ধরুন, আপনার শটগানের গুলির গতি সেকেন্ডে ১০০ মাইল, আইটল’র ওয়েলথারের গতি ১১৫ মাইল।
বজ্রনির্ঘোষ ঘোষণা হল, ওপেন ফায়ার। ওয়ান, টু, থ্রি...টেন...ফিফটি...নাউ ফাইনাল ফায়ার। আপনি গুলি করলেন (আপনি আ মীন আইনের লোকই প্রথমে গুলি চালাবেন। এটা ক্রিকেট খেলা না, এখানে টসের কোন সুযোগ নাই। লেডিজ ফার্স্ট এর মত আইনের লোকও ফার্স্ট)।

আউটলও গুলি করল। ১০০ মাইল এবং ১১৫ মাইলের মধ্যে শুরু হয়ে গেল তুমুল যুদ্ধ।
যদিও আপনারা সবাই জানেন, আপনি যদি ১০০ মাইল স্পিডের কোন গাড়িতে ভ্রমণ করেন এবং আপনার জানালার বাইরে দিয়ে যদি ঠিক একটা ১০০ মাইল স্পিডের গুলি যায়, সত্যি সত্যি আপনি হাতের মুঠোয় গুলিটা ধরতে পারবেন। হে হে হে, উত্তাপে হাত পুড়ে গেলে অবশ্য অন্য কথা!
রসো, এক্ষণ কিন্তু গুলিতে কেউ হাত দেবেন না, কেউ না, যমও!

তো, আমরা ফিরে যাই সেই কুরুক্ষেত্রে, না-না, ক্রসফায়ারক্ষেত্রে। যেহেতু ১১৫ মাইল গতির আউটল’র গুলিটা ভিলেনের ভূমিকায় অভিনয় করছে তাকে তো না হেরে উপায় নেই।
আপনাকে মনে রাখতে হবে ১০০ মাইল হচ্ছে নায়ক, ১১৫ মাইল হচ্ছে খলনায়ক-ভিলেন। হিন্দি-বাংলা সিনেমায় কি কখনো দেখেছেন ভিলেন বেঁচে আছে নায়ক মরে গেছে? পাগল, এই ছবি একদিন পরই হল থেকে নেমে যাবে!
তো, একটা গাড়ি যেমন অন্য গাড়িকে ওভারটেক করে তেমনি দু-পক্ষের গুলি আগুপিছু করে খুব সূক্ষ একটা পয়েন্টে স্থির হবে। উভয়পক্ষই ওই পয়েন্টটা নোটবুকে টুকে রাখবেন।
যাকে আপনি মারার জন্যে গোপন ইচ্ছা পোষণ করেন, তিনি কিন্তু এতক্ষণ ধরে ফ্রিজ হয়ে থাকবেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখবেন, লাইক আ ল্যাম্পপোস্ট। অতঃপর নোটবুক খুলে ওই পয়েন্টটার সূক্ষাতিসূক্ষ হিসাবটা বুঝবে,ন তারপর হেলেদুলে হাঁটা ধরবেন।
ঠিক ওই সূক্ষ যে পয়েন্টটাতে ১০০ এবং ১১৫ মাইল গতির দুইটা বুলেট একত্রিত হয়েছে, আ মীন ক্রস করেছে এবং বিদ্ধ করার জন্য ঝুলে আছে, ওখানে গিয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়াবেন।
ব্যস।

এরপর আর কী? ইন্নালিল্লাহ, রাম নাম সাত্য হ্যায়, যীশু তার আত্মাকে শান্তি দিন।
কি এক বিচিত্র কারণে, কে জানে, সক্রেটিস যেভাবে স্ব-ইচ্ছায় হেমলক পান করেছিলেন এইসব আউটলরাও সূক্ষ ওই পয়েন্টে বুক পেতে দিচ্ছে! এ এক রহস্য! আমি সম্ভবত ঠিক বুঝাতে পারলাম না, আসলে খুবই জটিল একটা বিষয় তো! হকিং ছাড়া আসলে হবে না। দেখি হকিং সাহেবকে মেইল করে...।

ক্রসফায়ার আমাদের দেশে এতো জনপ্রিয় হওয়ার কারণ অনেক। দু একটা বলি, কিছু সন্ত্রাসী এতো ভয়ংকর, এদের টিকিটিও কেউ স্পর্শ করতে পারে না। কোন কারণে ধরা গেলেও অল্প কয়েকদিনের ভেতরই জামিন নিয়ে সে আবার সাক্ষী বা বাদীকে খুন করে। এই দানবদের থামানো মুশকিল।
এ জন্য আইনে কি কি পরিবর্তন আনা প্রয়োজন এটা আমার আলোচ্য বিষয় না- এর জন্য বড় বড় বিশেষজ্ঞরা রয়ে গেছেন। তবে প্রলম্বিত বিচার, এটাই সবেচেয়ে বড়ো সমস্যা!
জাস্টিস ডিলে...আমি ওই বহুল ব্যবহৃত শব্দটা না বলে, চীনা একটা প্রবাদ বলি: একটি বেড়ালের জন্যে আপনি মামলা করবেন। নির্ঘাত একটা গাভী হারাবেন কিন্তু তারপরও আপনি ওই বেড়ালটা পাবেন কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই।

বহুল আলোচিত একটা মামলার কথা বলতে চাই। শাজনীন হত্যা মামলা। শাজনীনের বাবা হচ্ছেন প্রথম আলোর মালিক এবং এ দেশের একজন বিগশট, মি. লতিফুর রহমান। স্কলাসটিকা স্কুলের নবম শ্রেনীর ছাত্রী শাজনীনকে ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল রাতে হত্যা করা হয়। ২০০৭ সাল পর্যন্ত (তখন পর্যন্ত তাই জানতাম), এই মামলা চলছে। কেন চলছে এসব জটিলতায় আমি যেতে চাচ্ছি না। প্রায় ৯ বছর এ মামলা চলছে।
লতিফুর রহমানের মতো বিগশটের যদি এই হয় অবস্থা, আমাদের মতো ছাপোষাদের আল্লা-ভগবান-গড-গুরু নানক ছাড়া গতি কী! এঁরা আবার ঘুমাতে বড়ো পছন্দ করেন!

২৪.০৪.০৬-এ প্রথম আলোয় একজন লিখেছেন, 'দয়া করে এ খুনটাকে ক্রসফায়ার বলবেন না'। ঘটনাটা এ রকম, শুনুন ওই পত্র লেখকের মুখে: "খুলনায় পুলিশের ক্রসফায়ারে মুকুল নামের একজন চরমপন্থী নিহত হন। এই পত্র লেখক মুকুলের নিকট আত্মীয়।
তার বক্তব্য: ২২ বছর আগে কিশোর মুকুল কুড়িয়ে পাওয়া এক বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে তার দুই হাত বোমায় ওড়ে যায়। ২২ বছর ধরে দুই হাতবিহীন প্রতিবন্ধী মুকুল অসহায় নিরপেক্ষভাবে জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করেছে! এটা সবাই জানে, আর জানেন মহান প্রভু আল্লাহ, যিনি সবই জানেন।
...নিরপেক্ষ তদন্ত করলে সব বেরিয়ে পড়বে। পুলিশ মুকুলকে দীর্ঘ আটদিন আটকে রেখে না খেতে দিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে, গ্রেপ্তার না দেখিয়ে লুকিয়ে রেখেছিল, তার পাপহীন জীবনটা ভিক্ষা চাইতে গিয়ে অনেক সরকারী নেতার কাছে গিয়েছি, নতজানু হয়ে ভিক্ষা চেয়েছি। হাত না থাকার কারণে তাকে সন্ত্রাসী করেছে, আরও কতশত প্রশ্ন। কী হাস্যকর, কী বিস্ময়কর!" 

*'শুভ'র ব্লগিং' বই থেকে।

Monday, July 28, 2008

লাইফ- এচিভমেন্ট- সেক্রিফাইস!

করিম শেখ। 
প্রাইমারী স্কুলের একজন শিক্ষক। কিছু জমি জিরেত আছে। চাষবাস করে যৎসামান্য টাকা আসত। সে বছরটা প্রচন্ড খরা গেল, ফসল সব পুড়ে ছাই। স্কুলের বেতন কি আর নিয়মিত পাওয়া যায়! তার স্ত্রী একটা ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন। এই ব্যাংকে আবার মহিলাদের সদস্য হতে হয় এবং সেই সদস্যের নামেই ঋণ পাওয়া যায়।
করিম শেখের ধারণা ছিল, ফসল উঠলে কিস্তির টাকাসহ জমা দিয়ে দেবেন। করিম শেখ ফসলের মাঠের দিকে তাকিয়ে লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলেন! ব্যাংক থেকে লোক এসে বেশ ক-বার হুমকী দিয়ে গেছে, সময়মতো টাকা শোধ না দিলে এর পরিণাম ভালো হবে না।

করিম শেখ হুমকীর ভয়ে কাবু নন। ব্যাংকের লোকজনরাও নিশ্চয়ই খোঁজখবর রাখে, তিনি একজন শিক্ষক। ৭ গ্রামে তাকে ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত হয় না। কিন্তু তিনি নিজেই লজ্জায় মরে যাচ্ছিলেন, মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করে! গ্রামে, স্কুলে জানাজানি হলে কি উপায় হবে! বাচ্চার মায়ের গায়েই বা ক-ফোঁটা গহনা! অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলেন জমি বিক্রি করে দেবেন, এ ছাড়া আর গতি নেই।

সেদিন ছিল হাটবার। করিম শেখ হাটে গিয়েছিলেন। ব্যাংকের লোকজনরা পুলিশসহ এসেছিল। করিম শেখের স্ত্রী বারংবার কাতর অনুরোধ করছিলেন, বাচ্চার বাপ বাড়ীতে নাই, হাটে গেছে; ফিরুক, নিশ্চয়ই কোন একটা ব্যবস্থা হবে। এরা কান দিল না। ব্যাংকের লোকদের এক কথা: টাকা তো আমরা বাচ্চার বাপকে ধার দেই নাই তোমাকে দিয়েছি, তুমি পরিশোধ করবা।
করিম শেখের স্ত্রী এক্ষণ টাকা পাবেন কোথায়? সমস্ত গ্রামের মহিলারা এ বাড়ীতে জড়ো হয়েছেন; পুরুষরা বেশীরভাগই হাটে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে। মহিলাদের হা হুতাশে কান দেয় কে! এরা করিম শেখের একটা গরু , কয়েক বস্তা ধান, করিম শেখের স্ত্রীর হাতের সরু তারের দুইটা রুলি নিয়ে নিল।

ঝমঝম শব্দ। করিম শেখের ৬ষ্ট শ্রেণী পড়ুয়া কন্যা দৌড়ে এলো। ঝমঝম শব্দের উৎস তার পায়ের নূপুর।
বাবা বড়ো শখ করে খেয়ে না খেয়ে গড়িয়ে দিয়েছিলেন। যেদিন বাজান এটা নিয়ে এসেছিলেন, সে দিন বাজান সুর করে বলছিলেন: কই রে আমার টুনটুনি, কই রে আমার ঝুনঝুনি, কই রে আমার মুনমুনি; দেখ লো মা, তোর লিগ্যা কি আনছি।

সেদিন তার চোখে তীব্র আনন্দে পানি চলে এসেছিল! বিড়বিড় করে বলছিল, আল্লা-আল্লা, আল্লা গো, আমার বাপজানের লাহান বাপজান এই দুনিয়াত আর একটাও নাই! কিছু দিন নষ্ট হবার ভয়ে তুলে রেখেছিল। বাবা ছদ্মরাগে বলেছিলেন: আমার মা হাঁটে আওয়াজ পাই না ক্যা? এরপর থেকে পায়ে দেয়া শুরু করল।

করিম শেখের কন্যা ব্যাংকের লোকের পা জড়িয়ে ধরলো। ব্যাংকের লোকদের ভাবান্তর হলো না। এত কিছু দেখলে ব্যাংক চলে না, মাসিক টার্গেটেরই বা কি হবে? এদের নিজেদেরর মধ্যে চোখাচোখি হলো।
একজন বলেছিল: খুকি তোমার পায়ের নূপুরটা তো খুব সুন্দর, দেখি একটু। করিম শেখের কন্যা সরল মনে খুলে দিল। কিন্তু ওরা যখন অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে এটাও নিয়ে গেল তখন
সে ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
ভিড়ের মধ্যে তার স্কুলের মুখরা এক বান্ধবী বলেছিল: ভালা হইছে, স্কুলে এইটা পইরা গিয়া খুব রঙ্গ করতি, অহন রঙ্গ বাইর হইবো!
করিম শেখ সন্ধ্যায় ফিরে এলে, অনেক কিছুর সঙ্গে পাননি জমিতে দেয়ার জন্য ১টা কীটনাশক বোতল আর তার কন্যাকে।

গরমকাল। রাতের মধ্যেই জানাজা পড়ে কবর দিয়েছিলেন। মানুষটা শান্তই ছিলেন, চিৎকার চেঁচামেচি কিছুই করেননি। শুধু তার কন্যাকে কবরে নামাবার সময় একবার কাতর গলায় বলেছিলেন: আহা, একটু আস্তে কইরা নামাও না, মায়াডা দুকখু পায় না বুঝি! 

করিম শেখ নামের শান্ত মানুষটা আরও শান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। জমি বিক্রি করে শোধ করে শুধু নূপুরটা নিয়ে এসেছিলেন, আর কিচ্ছু আনেনি।
ব্যাংকের লোকজনরা অনেক পীড়াপীড়ি করেছে। করিম শেখ অবিচল। এমন কি একবার লোক দিয়ে এরা গরু, ধানের বস্তা গ্রামে করিম শেখের বাড়ীতে নিয়ে এসেছিল। জোর করে রেখে যাওয়ার চেষ্টা করলে, করিম শেখের মতো শান্ত মানুষটা বটি দা নিয়ে হিংস্রভঙ্গিতে বলেছিলেন: আমার চোকখের সামনে থিক্যা দূর হ, নাইলে একটা কোপ দিমু।

ছোট একটা পত্রিকার সাংবাদিক এসেছিল। করিম শেখ দেখা করতে, কথা বলতে রাজী হননি। অন্যদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে, ওই পত্রিকার মফঃস্বল বিভাগে খুব ছোট্ট করে এ খবরটা ছাপা হয়েছিল। গ্রামের ছেলেপুরেরা, তার ছাত্ররা বলেছিল, আপনে খালি একবার কন, ব্যাংক জ্বালায়া দিমু। করিম শেখ মাথা নেড়ে না করেছিলেন।
...


প্রায় ২০ বছর পর। নামী এক পত্রিকার দুঁদে সাংবাদিক ঢাকা থেকে এসেছেন করিম শেখের সঙ্গে দেখা করতে। করিম শেখ দেখা করতেন না কিন্তু সঙ্গে এসেছে তার অতি প্রিয় ছাত্র, যে এখন ওই পত্রিকাতেই এখন চাকরি করে। এই সাংবাদিক অসম্ভব বুদ্ধিমান। তিনি জানেন, এই নিউজের এই মুহূর্তে কী অপরিসীম মূল্য!
সাংবাদিক বললেন, ‘আপনার প্রতি ভয়াবহ অন্যায় হয়েছে। আমি আবার নতুন করে আপনার ওই খবরটা প্রথম পাতায় ছাপাতে চাই। আপনার মেয়ের ছবি থাকবে, সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎকার এবং ছবি।’
করিম শেখ বললেন, ‘এত্তো বছর পর আপনে এইটা নিয়া নাড়াচাড়া করতে চাইতাছেন ক্যান?’ 

সাংবাদিক খানিকটা থমকালেন, ‘অনেক বছর আপনি ন্যায় পান নাই… টাকাও আপনি পাবেন।’
করিম শেখ তার ভারী চশমাটা মুছতে মুছতে বললেন, ‘বাবা, আমি একজন শিক্ষক, সামান্য লেখাপড়া জানি। বিষয় এইটা না, বিষয়টা হইলো গিয়া যে ব্যাংক আমার প্রতি মহা অন্যায় করছিল ওই ব্যাংকের পরতিষ্ঠাতা অনেক বড়ো সম্মান পাইছেন। দুনিয়ায় আমাগো দেশের নাম আলোচনা হইতাছে। আমাদের মাথা অনেক উঁচা হইছে। আপনের পরতিকা চাইতাছে, ওই মানুষটারে কেমনে ছোড করা যায় কি বাবা, ভুল বললাম?’
সাংবাদিক তো তো করে বললেন, ‘আপনি কি আপনার মেয়ের কথা ভুলে গেছে, তার কথা ভেবে…।’

করিম শেখ এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। উঠে গিয়ে ভেতর থেকে গিট দেয়া একটা রুমাল নিয়ে এলেন। নিমিষেই ঘরময় ছড়িয়ে পড়লো ন্যাপথলিনের সৌরভ। তিনি খুব যত্ন করে রুমালের গিট খুললেন। বেরিয়ে এলো কালচে রুপার ১টা নূপুর। করিম শেখ রুমাল দিয়ে অযথাই ঘসে ঘসে নূপুরটা চকচক করার চেষ্টা করছেন। তার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ে নুপরটা ভিজে যাচ্ছে। করিম শেখ ভাঙ্গা গলায় বললেন, ‘দেশের সম্মানের থিক্যা বড়ো কিছু আর নাই। দেশের লাইগ্যা আমার ১টা মাইয়া কুরবানী দিলেই কী’!”

* সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই লেখাটি লেখা হয়েছিল। মূল ঘটনা সত্য, মেয়েটি দুর্দান্ত অভিমানে আত্মহত্যা করেছিল। পত্রিকার ভেতরের পাতায় খুব অবহেলা ভরে মেয়েটির আত্মহত্যার খবরটা ছাপা হয়েছিল। ক-রাত ঘুমের খুব সমস্যা হয়েছিল আমার।
ফিকশনের জন্ম রিপোটিং-এর গর্ভে। তাই এ লেখাতেও খানিকটা ফিকশন আছে বৈকি। 

বিটিভি'র আটটার সংবাদ...

শাসক সাহেব নিরিবিলিতে অবসর জীবন কাটাবেন বলে একটা রাজবাড়ী কিনলেন। অবশ্য এটাকে রাজবাড়ী না বলে পোড়োবাড়ী বললেই ভালো হয়। আধমাইলের ভেতর জনমানব নেই।
বাড়িটা কিনেছেন পানির দামে। বাজারে গুজব, এ বাড়ির মালিকদের নাকি অপঘাতে মৃত্যু হয়, বদরাগী একটা ভূত নাকি থাকে এ বাড়িতে।
শাসক সাহেব ছুঁচালো গোঁফের ডগা (মোম দিয়ে প্রচুর সময় নিয়ে পাকানো) দুমড়ে মুচড়ে মুচকি হেসেছিলেন, ব্যাটারা ভাড় কোথাকার। ভূতের ভয় দেখায় তাকে, রিটায়ার্ড এস.পি এম. এইচ. শাসককে, যার ভয়ে একঘাটে শেয়াল মুরগি পানি খেয়েছে।

গভীর রাতে শাসক সাহেবের ঘুম ভেঙে গেল, অকারণেই কেমন যেন গা ছমছম করছে। চোখ পুরোপুরি খুলে খাটের পাশে যে অবয়বটাকে দেখলেন এক কথায় একে বলা চলে, কত্সিত-অশুভ। ভয় গোপন করে হুংকার দিলেন, এ্যাই, কে-কে, কে তুমি।
আমি ভূত, অবয়বটা বিকট হেসে বলল, নড়াচড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়গুলো থেকে মটমট শব্দ হচ্ছে।
মামদোবাজীর জায়গা পাও না- তুমি ভূত, প্রমাণ কি? আই.ডি মানে পরিচয়পত্র আছে?
ভূতটা এতো অবাক হলো তার লাল চোখটা নীল হয়ে গেল, তোতলাতে তোতলাতে বলল, আমি ভূ-ভূত, আমার আ-আবার-আইডি!

ইয়েস, চোয়াল শক্ত করে বললেন আজাদ সাহেব। ভূত হও আর টূত হও পার পাবে না, আই.ডি না দেখালে বাপকেও ছাড়ি না। সাংবাদিকরা আই.ডি দেখিয়েও আমার কাছ থেকে ছাড় পায়নি, পিটিয়ে শুইয়ে দিয়েছি।
ভূতটা মাথা নিচু করে মাথা চুলকাতে চুলকাতে কি যেন ভাবল। দূরে পড়ে থাকা একটা লোহার ডান্ডা তুলে কচকচ করে চিবিয়ে মস্তো ঢেকুর তুলে বলল, কি, এইবার বিশ্বাস হয়?
এবার শাসক সাহেব ভয় পেলেন, হাত-পা পেটে ঢুকে যাওয়ার দশা। ক্ষীণ গলায় কোনোমতে বললেন, হয়।
হয়, না, ভালো-ভালো, ভূতটা বলল পোড়ো বাড়িটাকে নাড়িয়ে দিয়ে, হুই, এইবার তোর মুণ্ডুটা ছিঁড়ে ফেলব।

শাসক সাহেব স্তম্ভিত। ভূতটা তাকে তুই তুই করে বলছে, একজন রিটায়ার্ড এস.পি-কে! মাথায় কেমন ভোঁতা যন্ত্রণা, হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মতো মনে পড়ল। এই তো সেদিন টিভি নাটকে দেখছিলেন কিভাবে চট করে একজনকে সম্মোহিত করে ফেলা যায়। কি সর্বনাশ, দেখতে দেখতে তিনি নিজেও সম্মোহিত হয়ে পড়েছিলেন। আচ্ছা, এ নিয়ম কি ভূতদের বেলায়ও খাটে, চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি। ঠাণ্ডা শ্বাস ছেড়ে ভাবলেন, হারাবার তো আর কিছু নেই, তুই করে তো বলেই ফেলেছে।
তিনি উঁচু গলায় বললেন, আমি ঊনিশ থেকে নয় পর্যন্ত গুণব, সম্মোহিত হয়ে আমি যা বলব তুমি তাই করবে।
ভূত গা জ্বালানো হাসি হেসে বলল, হয়-হয়, মরার আগে ব্রেন আউট হয়।
শাসক সাহেব একাগ্রচিত্তে গুণে চলেছেন, উনিশ... সতের... পনের... এগার... নয়।

ডিং। ভূতটার হাড়ের মটমট শব্দ মিলিয়ে গেল, ফার্নিচারের মতো দাঁড়িয়ে রইল। শাসক সাহেব বিস্ময় চেপে ঠাণ্ডা গলায় বললেন, এবার ডান হাত দিয়ে ডান কান ধরো, ধরেছো, গুড। মোচড় দাও, উহু, আরও জোরে, দিয়েছ, ভেরী গুড। এবার কানটা ছিঁড়ে ফেল। যাও, এখন থেকে ভ্যানগগের মতো এক কান নিয়ে ঘুরে বেড়াও।
ভূত ছেঁড়া কান নিয়ে কাঁদ-কাঁদ গলায় বলল, ভ্যানগগ তো মাফলার দিয়ে কান ঢেকে রাখত, এই গরমে মাফলার পাই কই।
তুমি তাহলে জানো ভ্যানগগ সম্বন্ধে, আজাদ সাহেবের বিস্ময়ের শেষ নেই।
হাহ, ভূত বলল হেলাফেলাভাবে। এটা কোনো ব্যাপারই না। আমি হলাম গিয়ে প্রাচীন ভূত। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই আছি, কোন ব্যাপারটা জানি না? বুঝলেন, আমার মনটা ওদিন খুব বিষণ্ন ছিল, অনেকগুলো লুডিওমিল ট্যাবলেট খেয়েও কাজ হল না। মানুষের খুলিতে হুইস্কি পান করতে করতে ভাবলাম, জীবনটা আসলে খুব নিরামিষ হয়ে যাচ্ছে। তো, আমি একটা মন্ত্র পড়লাম: মানুষ আমার পুত, মেয়ে মানুষ আমার ঝি- বুকে আছে আমেরিকার নাম, করবি আমার কি। ভ্যানগগের মাথায় পাগলামিটা তো আমিই ঢুকিয়েছিলাম। আহ্, এরপর কি মজাটাই না হয়েছিল!

এবার ভূতটা সামনে পেছনে হেলেদুলে হা হা করে হাসতে লাগল, হাড়ে ঘষা খেয়ে বিকট মট মট শব্দ হচ্ছে। শাসক সাহেব শঙ্কিত হলেন, বাড়িটার যে অবস্থা যেভাবে হাসছে ফেলে না দেয়। ধমক দিলেন, ফ্যা ফ্যা করে হেসো না তো। আর মট মট শব্দ শুনে মনে হচ্ছে ইউনিভার্সিটিতে গোলাগুলি হচ্ছে। জয়েন্টগুলোতে গ্রীজ লাগাও গিয়ে, গ্রীজ না পেলে মঘা দাওয়াখানার হালুয়া লাগিয়ে দেখতে পারো।
ভূতটার অসম্ভব রাগ হলো, তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবল, আঃ, এই লোকটার খুলিতে করে চা খেলে কি মজাই না হবে।

শাসক সাহেব কি করে জানি টের পেয়ে গেলেন, বিড়বিড় করে বললেন, ঊনিশ...নয়?
ডিং। ভূতটার এবার ভাবলেশহীন চোখ, নিস্তেজ গলা, মাফ করে দেন, জনাব।
আচ্ছা যাও মাফ করে দিলাম। তা দৈত্য-টৈত্যদের শুনেছি অনেক ধরনের ক্ষমতা-টমতা থাকে, তোমার কি আছে নাকি এরকম কিছু?
জ্বী জনাব, আছে, আপনি কি চান?
শুনেছি টেলিভিশনের মতো শক্তিশালী মাধ্যম নাকি এদেশে আর নাই। এই যাদুর বাক্সে যা দেখানো হয় পাবলিক তাই বিশ্বাস করে। আমি চাই সংবাদে, বিশেষ করে আটটা-দশটার সংবাদে গুরুত্বের সঙ্গে আমাকে দেখানো হোক। জনগণের জন্যে আমি যে সোনার দেহ মাটি করে ফেলছি, এসব তুলে ধরা হোক। বিশেষ করে প্রথম পনেরো মিনিট আমার জন্য বরাদ্দ রাখবে।
কি করবেন আপনি, যেটা দেখানো হবে, ভূত আগ্রহের সঙ্গে জানতে চাইল।
এই ধরো গাছ-টাছ লাগালাম, ফিতা কাটলাম- এইসব আর কি।
তথাস্তু,ভূত অদৃশ্য হয়ে গেল।

পরদিন, আরাম কেদারায় গা এলিয়ে শাসক সাহেব গভীর আগ্রহে সংবাদ দেখছেন- কী চমৎকারই না দেখা যাচ্ছে তাকে।
তার পেছনে ভূতটা দাঁড়িয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল, একমাত্র সেই জানে, এই মুহূর্তে এই দেশে এরা দুজনই মাত্র সংবাদের এ অংশ দেখছে। বিচিত্র কারণে বাংলাদেশের দর্শকরা আটটার সংবাদ শুরু হওয়ার পনেরো মিনিট পর টিভি অন করে।

Saturday, July 26, 2008

সমুদ্র গুপ্ত, কেন অভিমান করে বললেন না, যাব না?

রবীন্দ্রনাথের কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই। আর আমাদের চুতিয়া দেশে কবি-শিল্পীদের মরার আগে প্রমাণ দিয়ে যেতে হয় আমরা জাতি হিসাবে কী আবেগপ্রবন, সচেতন, সভ্য।
মুক্তচিন্তার পত্রিকায় তেলতেলে উপ-সম্পাদক কানসাট নিয়ে ১০১ লাইনের অখাদ্য কবিতা লেখে, কবিতার জন্য তখন সমুদ্র গুপ্তদের খুঁজে পাওয়া যায় না। আমরা নিবোর্ধ পাঠক তা গিলতে বাধ্য হই। একজন সমুদ্র গুপ্ত, মায় পত্রিকায়ও চাকুরির পান না।


একজন সমুদ্র গুপ্তকে ৫৫-৫৬ বছর বয়সে ফেরিওয়ালা হতে হয়। স্বপ্নের ফেরিওয়ালা না, ওষুধের ফেরিওয়ালা। জীবনের তাগিদে। আরেকটু গুছিয়ে বললে ওষুধের হকার, প্রচলিত 'ক্যাম্বেসার'।
পেট থেকে কান্না এসে জমে চোখে। হায় পেট-হায় জীবন! এই একটা জায়গায় প্রতিভার কী-ই বা দাম! কবির কান্না চশমার মোটা কাচেঁর আড়ালে হারিয়ে যায়। ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে কাউকেই খুজেঁ পাওয়া যায় না কেউ কবির হাত ধরতে পারে।

আমার মাথায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলে। কিন্তু এই অসভ্য ইচ্ছাটাও জাগে, যদি দেখে যেতে পারতাম সমুদ্র গুপ্ত একজন চালু হকারের মত বাঁদর নাচিয়ে ওষুধ বিক্রি করছেন। লোকজন গোল হয়ে বাঁদরের তামাশা দেখছে, আমিও। দেখছি বানরটাকে, দেখছি সমুদ্র গুপ্তকে, দেখছি নিজের পশুত্বটাকে। বেশ হত, অন্তত এই দৃশ্য দেখার পর আর আমি কখনই নিজেকে মানুষ বলে দাবি করতাম না। খোদার কসম।

আমাদের চাওয়াটা তো খুব বেশি না, যে মিরোশ্লাফ হোলুবের মত সমুদ্র গুপ্তকে মোটা অংকের স্কলারশীপ দেয়া হবে, বছরের পর বছর ধরে। হোলুব ১ বছরে ১টা কবিতা লিখবেন যে কবিতা ঘষামাজা করতে করতে লাগবে আরও বছরখানেক। মানলাম আমাদের সীমাবদ্ধতা কিন্তু ১৫ কোটি মানুষের দেশে কেন সমুদ্র গুপ্তকে ফেরিওয়ালা হতে হবে? একজন রুদ্র বসার জন্য ১টা চেয়ার পাবে না, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে লিখতে হারিয়ে যাবে! কেন?

এই বিচিত্র দেশে আমরা অপেক্ষা করি, কখন এঁরা মুমূর্ষু হবেন তখন আমাদের যাবতীয় দরদ উথলে পড়বে। তখন আমরা ঘটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি, পত্রিকায় পত্রিকায় সাহায্যের আবেদন করি, কনসার্ট করি। শালার দেশ!

সমুদ্র গুপ্ত, আপনার কেন এই করুণা নেয়া, দেশে কী চ্যারেটি, সরকারি হাসপাতালের অভাব ছিল? কেন তীব্র অভিমান নিয়ে না বলতে পারলেন না, যাব না?
কেন আপনার অচল কবিতাকে নতুন করে লিখলেন না: ...আমি তাদের কাছাকাছি থাকি না, যাদের ঘামের গন্ধে গা গুলায়…।

Wednesday, July 23, 2008

এইডস, বাঁচতে হলে জানতে হবে।


এই 'ভদ্দরনোক' একজন যাদুকর ছিলেন। হুডিনি, কপারফিল্ড, জুয়েল আইচ এর কাছে নস্যি! ইনি দিব্যি ঘুরে বেড়াতেন সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে , প্রাইভেট কোর্ট বসিয়ে যাকে খুশি তাকে বিচার করতেন। কর্মকান্ডগুলো করতেন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে কিন্তু কেউ তাঁকে দেখতে পেত না!


এই যেমন, তাঁর একমুখ আউলা-ঝাউলা দাড়ি। দাড়ি দূরের কথা, দাড়ি যেখানে গজিয়েছিল, মুখ-মুখমন্ডল; সেই মুখমন্ডল লেগে থাকত যে শরীরে, সেই শরীর! ওই গোটা শরীর নিয়ে দিব্যি দাবড়ে বেড়িয়েছেন দেশময় কিন্তু এই দেশের চৌকশ পুলিশ বাহিনী তার শরীর দূরে থাক দাড়িটিও খুঁজে পেত না। গোপন কেশের কথা না-হয় নাই বললাম...।
এটা আসলে যাদু, স্রেফ যাদু।

ইনি আমাদের বঙ্গাল ভাই। আপনারা চাইলে নিজ দায়িত্বে বাংলা ভাইও বলতে পারেন। তবে ইনাকে একবার আটকানো হয়ছিল। এই বঙ্গাল ভাইয়ের জেলখানায় বিভিন্ন মহাপুরুষদের সঙ্গে উঠা-বসা ছিল, উঠ-বস না (রিমেম্বার, আপনারা উঠবস শুনে আবার অন্য কিছু ভাবলেন না, বাট আ য়্যাম নট শিয়্যুর। 'হৈলেও হৈতারে'।)।
যাই হোক, জেল থেকে বেরিয়ে তিনি চিন্তা করলেন কি পেশা বেছে নেবেন? লেখক হয়ে লাভ নাই, লেখালেখি করে এই দেশে ভাত দূরের কথা রুটিও মেলে না। ফাও গালি মেলে!


শোনা কথা, একটা ওয়েব-সাইটে নাকি এসেছিলেন চাকরির জন্য। ওই ওয়েব-সাইটটা চালান আবার একজন বিদেশী। প্রথমে সবাই ধারণা করেছিল তিনি বিদেশী হয়ে এসেছেন আমাদের বাংলা উদ্ধার করতে, ত্রাণকর্তা। ক্রমশ সবার ভুল ভাঙ্গল!
ওই ব্লগাধিপতির সঙ্গে কথাবার্তা ছিল নিম্নরূপ-
বঙ্গাল ভাই: হা-ডু-ডু, হালু- হালু, আপনে ভালু?
ওই ব্লগাধিপতি: কথা নাম্বার এক, আমি হা-ডু-ডু খেলা পারি না। কথা নাম্বার দুই, আমি হালু-আলু খাই না। আর আমি ভালু না। আমার শরীরে আপনার মত লোমও নাই যে...।
বঙ্গাল ভাই: 'আস্ছা-আস্ছা'। আলু না, পুছ করলাম ভালু আছেন কিনা?
ব্লগাধিপতি: আপনি এভাবে বাংলা বলছেন কেন? হয় শুদ্ধ করে বাংলা বলেন নইলে ইংরাজি।
বঙ্গাল ভাই (উষ্মা নিয়ে): ইংরাজী মুরতাদের ভাষা, মুরতাদের ভাষা বললে হারপিক দিয়ে কুলি করতে হয়। এস্তেঞ্জার পর শিরীষ কাগজ ব্যবহার করতে হয়। এইটা বড় কষ্ট, তাই আমি মুরতাদের ভাষায় কথা বলি না। যাক, বাংলা যখন বুঝতে পারেন, বাঁচলাম। একটা চাকরি চাইছিলাম।
ব্লগাধিপতি (বিস্মিত হয়ে): এখানে আপনি কী চাকরি করবেন?
বঙ্গাল ভাই: আমার নাম শোনেন নাই, আমি বঙ্গালভাই। পাবলিকদের ছহীহ বংলা শিখাব।
ব্লগাধিপতি: দু:খিত, আমার এই সাইটে বাংলা জানা লোকদের অভাব নাই।

এরপর... বঙ্গাল ভাই যাওয়ার আগে হুমকি দিয়ে গিয়েছিলেন, বোমা মেরে এই ওয়েব-সাইটের সমস্ত নরমতার (সফটওয়্যার মুরতাদের ভাষা বলে তিনি এটা উচ্চারণ করেননি) এলোমেলো করে দেবেন।
অবশেষে নিরুপায় বঙ্গালভাই পীর হয়ে গেলেন, পীর হতে নাকি কোন যোগ্যতা লাগে না- কোন পরীক্ষাও দিতে হয় না! কী মজা! তো, পীর হয়ে প্রতি নিঃশ্বাসে হাক মাওলা-হাক মাওলা বলেন! লোকজনের সব সমস্যার সমাধান দেন! সবচেয়ে বেশি নামডাক হলো, বঙ্গাল হুজুরের দোয়ায় শতশত সন্তান প্রত্যাশী মহিলার (পুরুষদের হওয়ার নিয়ম নাই) সন্তান হল। সিস্টেমটা কী জানা যায়নি কিন্তু হুজুরের দোয়া বিফলে যায় কমই! অঅর বাচ্চাগুলোও মাশাল্লাহ! বাচ্চাগুলোর চেহারাও হয় বঙ্গাল হুজুরের মত, বঙ্গানুরানি!

কী কারণে জানা যায়নি হুজুরেআলা বঙ্গাল ভাইয়ের মনে একদিন ভয় ঢুকল। আল্লার ভয় না, এইডসের ভয়! সম্ভবত কারও কাছে শুনেছিলেন এইডস হলে বাঁচার উপায় নাই। বাঁচতে হলে জানতে হবে। পীর সাহেবরা আপামর জনতার সব রোগের চিকিত্সা করেন কিন্তু নিজের চিকিত্সা করান ডাক্তার দিয়ে! বঙ্গাল হুজুরেরও ডাক্তারের কাছে না গিয়ে উপায়ই বা কী! বাঁচতে হলে জানতে হবে।


ডাক্তার: আপনি কি কোন নেশায় আসক্ত? সুঁই ব্যবহার করেন?
বঙ্গাল ভাই: ('হামোশ' কুতুয়া বলতে গিয়ে রাগ চেপে) নাহ, আমার কেবল একটাই নেশা। চার্জারে বোমা রাখা আর সুযোগ পেলে তা ফাটিয়ে দেয়া।
ডাক্তার (বিভ্রান্ত চোখে) : নিজের রেক...(সেন্সর) ফাটালে বেঁচে থাকেন কেমন করে!
বঙ্গাল ভাই (অমায়িক হেসে): আরে, না-না, ওখানে রাখি কিন্তু ফাটাই অন্যখানে। আমার বিষয়টা একটু 'গোফনিয়'। কাছে আসেন কানে কানে বলি।
ডাক্তার (ভয়ে ভয়ে) : কে জানে এর চার্জারের বোমাটা না এক্ষুনি ফেটে যায়।
সব শুনে ডাক্তার সাহেব বঙ্গাল ভাইকে বললেন, আপনি ক...ব্যবহার করেন, যেটা প্রত্যেক দায়িত্ববান পুরুষ বিশেষ সময়ে ব্যবহার করে, এইডস থেকে বাঁচার এটাই উপায়।

হুজুরেআলা বঙ্গাল ভাই অপার আনন্দে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ফিরে এলেন এবং ক... ব্যবহার করে এখন দস্তরমতো দায়িত্ববান পুরুষ! বাঁচতে হলে জানতে হয়।
কিন্তু হায়! বিকট একটা সমস্যা দেখা দিল, ;‘দায়িত্ববান পুরুষ’ বঙ্গাল ভাই হুজুরের দোয়া এখন আর কাজ করে না, মহিলাদের সন্তান হওয়া বন্ধ হয়ে গেল। কেন বন্ধ হয়ে গেল এই বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে লাভ নাই। কারণ...


*সত্যর চেয়ে পাজি আর নাই। কখনও বাস্তব কল্পনাকেও হার মানায়! একটি উপাসনালয়ের ধর্মগুরুরা অবিকল এমন একটা সমস্যায় পড়েছিলেন। বিশাল একটা গোত্রকে আহত করা সমীচীন মনে করিনি বলে স্থান-কাল-পাত্র উল্লেখ করলাম না।

**অংশবিশেষ ছাপা হয়েছিল শুভ'র ব্লগিং বইয়ে।