আমাদের দেশের কিছু কায়দা-কানুন আছে এই অন্যথা হওয়ার যো নাই! এই যেমন দাবী আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমে আসা, গাড়ি-টাড়ি ভাঙচুর করা। এই সব না-করে আমরা থাকতে পারি না কারণ এমনটাই আমাদেরকে শেখানো হয়েছে। রাস্তায় নেমে না-আসা পর্যন্ত সরকার-মিডিয়া-আমাদের চোখে কোন সমস্যাই সমস্যা মনে হয় না, মগজে কিছুই আটকায় না! আজ পত্রিকায় দেখলাম, লিবিয়ায় আটকে থাকা লোকজনের স্বজনেরা রাস্তায় মাতম করছেন। আশা করছি, সরকারী লোকজনের এবার খানিকটা টনক নড়বে।
বছরের-পর-বছর, যুগের-পর-যুগ ধরে যারা দেশগুলোর লোকজনকে কচ্ছপের মত কামড় দিয়ে ধরে আছে তাদের কামড় আলগা হয়ে আসছে। আমি সৌদি আরবের মত দেশগুলোর জন্য অপেক্ষায় আছি। এমনিতে অবশ্য এরাই ধর্মের ঝানডা উঁচিয়ে রেখেছে কিন্তু নিজেরাই ধর্মের অপব্যবহার করছে। প্রিন্সের ছেলে প্রিন্স হবে রাজার ছেলে রাজা। সাধারণ একজন মানুষের হাতে ক্ষমতা আসার কোন সুযোগ নাই তাঁর যোগ্যতা যাই থাকুন না কেন! উটচালক রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকবে এটা জানার জন্য আমাদের দেশে আয়োজন করে বই তাক থেকে নামিয়ে ধুলে মুছে পড়ে আবার উঠিয়ে রাখব। ইসলাম ধর্মের যে ক্ষতিটা এদের হাত দিয়ে হচ্ছে তা অপূরণীয়! অন্য এক লেখায় যেটা লেখা হয়েছিল [১],
"আমার মনে হয় সৌদি আরবই সবচেয়ে সুবোধ বালক, গ্রহপিতাকে মান্য করে। সৌদি আরব ইরানে হামলা চালাবার জন্য ইসরাইলকে বিমান চলাচলের জন্য সুযোগ করে দিয়েছে। সৌদি শাসক গ্রহপিতা নেতানিয়াহুর পাদোদক (বৃদ্ধাঙ্গুলি স্পর্শ করা পানি, চরণামৃত) পান করে ব্রেক ফাস্ট শুরু করেন এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। অন্যরা যে কেন সৌদি শাসকদের মত সুবোধ বালক হতে চান না এটা দুর্বোধ্য। বোকার দল, সৌদিদের দেখে শেখে না কেন এরা?"
সৌদি ইরানে হামলা চালাবার জন্য ইসরাইলকে সুযোগ করে দেবে আর আমরা বাংলাদেশে আগামীতে এমন দৃশ্য নিয়ে [২] বেশ ক-দিন ঝাপিয়ে পড়ে লিখব। এবং জুমার নামাযে মুসলিম উম্মাহ, ইরানের জন্য দোয়া করব। আমীন!
যাই হোক, সম্প্রতি লিবিয়ায় গাদ্দাফির বিষ দাঁত উপড়ে ফেলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা হচ্ছে। গাদ্দাফি অনড়। তার বক্তব্য হচ্ছে, 'আমার কোন পদ নেই যে সরে দাঁড়াব। যেমনটা অনেক প্রেসিডেন্ট করেছেন। আমি তো একজন বিপ্লবী নেতা'।
গাদ্দাফি নামের মানুষটা আমাদেরকে বড়ো ধরনের সমস্যায় ফেলে দিয়েছেন। বলা হচ্ছে, লিবিয়ায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি আটকে আছেন এবং অধিকাংশই ভয়ংকর, মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
সরকার এঁদের সহায়তা দেয়া প্রসঙ্গে অনেক কিছুই বলছেন কিন্তু যথারীতি কেউ আস্থা রাখতে পারছেন না। এটা নতুন কিছু না। এই-ই আমাদের কপাল। আমরা এখনও অভ্যস্ত হয়ে উঠলাম না চোখ বুজে এটা বলার জন্য, আমার সরকার, আমার মন্ত্রী। এটা সত্য, আমাদের দেশটা গরীব, অন্তহীন সমস্যা কিন্তু সীমাহীন অভাবে সঙ্গে যখন যোগ হয় সদিচ্ছার অভাব তখন আর মেনে নিতে ইচ্ছা করে না!
পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস যখন বলেন, "...নাগরিকদের দেশে ফেরাতে সম্পদের অপ্রতুলতা আছে বাংলাদেশের"। [২]
মানে কী এই কথাটার? জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এঁদের বেতন কী এই কারণে দেয়া হয় এই সব কথা বলে একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা? জনগণ তো একাগাদা টাকা খরচ করে এই কাজে এদের রাখেনি! তার মানে কী, লিবিয়ায় লোকজনরা ফটাফট মারা যাবে আর এই আমলারা তামাশা দেখবেন এই দোহাই দিয়ে আমাদের দেশের টাকা নাই? ৫০ হাজার কোটি টাকার নতুন এয়ারপোর্ট বানাবার টাকার যোগান দিচ্ছে কে, ভূত?
নাকি এই ধরনের আমলাদের দোষ দিয়ে লাভ নাই এরা চেয়ারের পেছনে টাওয়াল ঝুলিয়ে (নিয়ম) [৪] উপরের নিদের্শে এমনটা বলে বলে মুখ হাঁ করছেন? ভাগ্যিস প্রবাসীদের ভোট দেয়ার নিয়ম এখনও চালু হয়নি, হলে...।
সহায়ক সূত্র:
১. সৌদি...: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_15.html
২. ইসরাইল: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_493.html
৩. সচিব...: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2011-02-27
৪. তোয়ালে: http://www.ali-mahmed.com/2008/10/blog-post_20.html
এরশাদের সময়, খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লিখতে পেরেছি, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকতে পেরেছি আওয়ামী শাসনামলে এ ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! যেদিন শহিদুল আলমকে পুলিশ নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল, কোর্টে 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Monday, February 28, 2011
সস্তা প্রাণ!
বিভাগ
কষ্ট
Thursday, February 24, 2011
তথ্য, এটা পাওয়া আমার অধিকার
মাহমুদুর রহমান মানুষটাকে পছন্দ করি এটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না। বা তাঁকে পছন্দ করার মত কোন বিষয় দাগ কেটে আছে এটাও বলা চলে না! কী কী যেন ঝামেলা আছে এই মানুষটার মধ্যে। যেভাবে গোপন মিটিং-ফিটিং করেছিলেন [০]এই ভঙ্গির সঙ্গে তুলনা চলে কেবল একজন অপরাধীর। তদুপরি এই মানুষটার পাশে আমি দাঁড়াব। আমি ভলতেয়ারের বিখ্যাত কথাটা বিস্মৃত হতে চাই না, "আমি তোমার সঙ্গে একমত না কিন্তু তোমার মত প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু লড়ব"।
সর্বোচ্চ আদালত তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করছেন এটা একজন মানুষের অধিকারকে খর্ব করে। এ অন্যায়েরই শামিল!
এমনিতে একটা বিষয়ে এই মানুষটার প্রতি আমার অন্য রকম ভাল লাগা আছে। তাঁকে রাজাকার বলায় তিনি একটা মামলা করেছিলেন যেটা প্রকারান্তরে তা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষেই গিয়েছিল [১]। কারণ জামাত জোটের সঙ্গে তাঁর দল বনবন করে যখন ক্ষমতার ছড়ি ঘোরাচ্ছিল তখন তাঁকে রাজাকার বলায় তিনি মামলা করেছিলেন এবং ওই মামলায় সিপিডি-র মঞ্জুর এলাহী গংদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানাও জারী হয়েছিল। এই মামলায় যেটা প্রমাণিত হয়েছিল, প্রমাণ ব্যতীত কাউকে রাজাকার বললে এই নিয়ে মামলা করা যায় এবং এটা একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রকারান্তরে যেটা বলা চলে রাজাকার শব্দটা একটা গালি। রাজাকারদের সঙ্গে উঠবস থাকলেও, যেটা শুনলে মাহমুদুর রহমানের মত লোকজনরা ক্ষেপে যান!
গত বছরের ২১ এপ্রিল 'চেম্বার মানেই সরকারের পক্ষে ষ্টে' শিরোনামে আমার দেশ প্রত্রিকায় এক প্রতিবেদনের কারণে মাহমুদুর রহমানকে আদালত অবমাননার দায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ছয় মাসের কারাদন্ড দেন এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে আরও এক মাসের জেল।
আদালতের বিবেচনার উপর আমার আস্থা রেখেই বলি, তাঁকে নিশ্চয়ই যথাযথ আইনের আওতায় এই শাস্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু...। আমার এটাও মনে হয় আদালত অবমাননা একটা প্রতীকী বিষয় এর জন্য ছয় মাসের জেল দেয়ার আদৌ প্রয়োজন ছিল না। এটা ছয় দিন হলে আকাশ এক হাত নীচে নেমে আসত বলে আশংকা করি না। অতীতে এমন উদাহরণ আমাদের দেশে আছে বলে আমার জানা নাই। অন্তত শিল্প-সাহিত্য জগতের লোকজনকে চোর-চোট্টার কাতারে নামিয়ে আনা হয়নি। মতিউর রহমান গংরাও ক্ষমা প্রার্থনা করে পার পেয়ে গেছেন। এটা সত্য, মাহমুদুর রহমান ওপথ মাড়াননি।
কিন্তু এই কাতারে হুমায়ূন আহমেদও আছেন- তিনি ক্ষমা চাইতে রাজী হননি [২]। ওই লেখাটায় আমি লিখেছিলাম:
"তাঁর ‘দরজার এপাশে’ উপন্যাসে একটা সংলাপ ছিল এমন, ‘…আগে জাজ সাহেবরা টাকা খেতেন না। এখন খায়। অনেক জাজ দেখেছি কাতলা মাছের মত হা করে থাকে’। ব্যস, তুমুল প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। এ নিয়ে ক’জন বিচারপতি হুমায়ূন আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন হাইকোর্টে। ৪৮ জন বিচারপতি একাট্টা হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন এই লেখকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।"
হুমায়ূন আহমেদকে বলা হয়েছিল ক্ষমা চাইলে বিষয়টা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু তিনি অনড়, তিনি ক্ষমা চাইবেন না। তাঁর মতে, তিনি কোন অন্যায় করেননি।"
শেষ পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদ ক্ষমা চাননি।
যাই হোক, এটা বিজ্ঞ আদালতের বিষয়, তাঁরা মাহমুদুর রহমানের বিষয়টাকে যথাযথ মনে করেছেন এটা নিয়ে আর কথা বাড়াই না। কেবল অল্প কথায় বলি, বিচারপতি ঈশ্বর না, ঈশ্বরও সমালোচিত হন। একজন বিচারপতি যখন ট্রাফিক কনস্টেবলকে প্রকাশ্য রাস্তায় কান ধরান [৪] তখন কী আমরা বলব না, এ তো লেজার গান দিয়ে পাখি শিকার!
যেহেতু আপিল বিভাগ এই রায় দিয়েছেন এখানে খানিকটা জটিলতা থেকেই যায়। মাহমুদুর রহমান এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সুযোগ পাননি। আপিল বিভাগ বলেছিলেন, মাহমুদুর রহমানকে কেন এই শাস্তি দেয়া হলো তার কারণ জানানো হবে। মাহমুদুর রহমানের জেল খাটার ছয় মাস পূর্ণ হবার পরও এই কারণ জানা যায়নি [৩]। এখনও মূল রায়ের কপিই পাওয়া যায়নি! এটা না-থাকলে আদালতের নিয়ম অনুযায়ী কারও রিভিউ করার সুযোগ থাকছে না! তাঁকে যে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এটা নিয়েও আমি বিভ্রান্তির মধ্যে আছি। আমাদের দেশের অধিকাংশ আইনই ব্রিটিশদের করা।
আমি অন্য এক লেখায় উল্লেখ করেছিলাম, একটি বহুজাতিক কোম্পানি যারা কঠিন একটা অপরাধ করার পরও আদালত তাদেরকে ২০০ টাকা জরিমানা করেছিলেন। ব্রিটিশ আমলে ২০০ টাকা মানে বিপুল টাকা কিন্তু তুলনায় এখনকার সময়ে তা স্রেফ হাতের ময়লা। বছরে ৩৫০০ কোটি টাকা ট্যাক্স দেয় এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে যখন ২০০ টাকা জরিমানা করা হয় তা বড়ো হাস্যকর ঠেকে!
তাই আমার জানার খুব আগ্রহ মাহমুদুর রহমানকে এক লাখ টাকা জরিমানাটা ঠিক কোন আইনের আওতায় করা হয়েছে? এই তথ্য পাওয়া আমার অধিকার অথচ এটা আমি জানতে পারছি না! মাননীয় প্রধান বিচারপতি, আপনাকে কদমবুসির ইচ্ছাটা [৫] এখনও বহাল আছে কিন্তু বিষাদের সঙ্গে এও বলি, আমি তথ্য পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সর্বোচ্চ আদালত আমাদের শেষ ভরসাস্থল তাই এই অন্যায় আপনি করতে পারেন না। তাহলে আর পায়ের নীচে মাটি থাকে না। এমনিতেই এই দেশে দাঁড়াবার জায়গার বড়ো অভাব!
সহায়ক লিংক:
০. মিটিং, সমকাল: http://tinyurl.com/4lr6fya
১. রাজাকার...: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_6914.html
২. হুমায়ূন আহমেদ: http://www.ali-mahmed.com/2008/07/blog-post_03.html
৩. বিডিনিউজ: http://dhakanews24.com/?p=3699
৪. ট্রাফিক কনস্টেবল...: http://www.ali-mahmed.com/2011/01/blog-post_31.html
৫. কদমবুসি: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_13.html
সর্বোচ্চ আদালত তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করছেন এটা একজন মানুষের অধিকারকে খর্ব করে। এ অন্যায়েরই শামিল!
এমনিতে একটা বিষয়ে এই মানুষটার প্রতি আমার অন্য রকম ভাল লাগা আছে। তাঁকে রাজাকার বলায় তিনি একটা মামলা করেছিলেন যেটা প্রকারান্তরে তা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষেই গিয়েছিল [১]। কারণ জামাত জোটের সঙ্গে তাঁর দল বনবন করে যখন ক্ষমতার ছড়ি ঘোরাচ্ছিল তখন তাঁকে রাজাকার বলায় তিনি মামলা করেছিলেন এবং ওই মামলায় সিপিডি-র মঞ্জুর এলাহী গংদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানাও জারী হয়েছিল। এই মামলায় যেটা প্রমাণিত হয়েছিল, প্রমাণ ব্যতীত কাউকে রাজাকার বললে এই নিয়ে মামলা করা যায় এবং এটা একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রকারান্তরে যেটা বলা চলে রাজাকার শব্দটা একটা গালি। রাজাকারদের সঙ্গে উঠবস থাকলেও, যেটা শুনলে মাহমুদুর রহমানের মত লোকজনরা ক্ষেপে যান!
গত বছরের ২১ এপ্রিল 'চেম্বার মানেই সরকারের পক্ষে ষ্টে' শিরোনামে আমার দেশ প্রত্রিকায় এক প্রতিবেদনের কারণে মাহমুদুর রহমানকে আদালত অবমাননার দায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ছয় মাসের কারাদন্ড দেন এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে আরও এক মাসের জেল।
আদালতের বিবেচনার উপর আমার আস্থা রেখেই বলি, তাঁকে নিশ্চয়ই যথাযথ আইনের আওতায় এই শাস্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু...। আমার এটাও মনে হয় আদালত অবমাননা একটা প্রতীকী বিষয় এর জন্য ছয় মাসের জেল দেয়ার আদৌ প্রয়োজন ছিল না। এটা ছয় দিন হলে আকাশ এক হাত নীচে নেমে আসত বলে আশংকা করি না। অতীতে এমন উদাহরণ আমাদের দেশে আছে বলে আমার জানা নাই। অন্তত শিল্প-সাহিত্য জগতের লোকজনকে চোর-চোট্টার কাতারে নামিয়ে আনা হয়নি। মতিউর রহমান গংরাও ক্ষমা প্রার্থনা করে পার পেয়ে গেছেন। এটা সত্য, মাহমুদুর রহমান ওপথ মাড়াননি।
কিন্তু এই কাতারে হুমায়ূন আহমেদও আছেন- তিনি ক্ষমা চাইতে রাজী হননি [২]। ওই লেখাটায় আমি লিখেছিলাম:
"তাঁর ‘দরজার এপাশে’ উপন্যাসে একটা সংলাপ ছিল এমন, ‘…আগে জাজ সাহেবরা টাকা খেতেন না। এখন খায়। অনেক জাজ দেখেছি কাতলা মাছের মত হা করে থাকে’। ব্যস, তুমুল প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। এ নিয়ে ক’জন বিচারপতি হুমায়ূন আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন হাইকোর্টে। ৪৮ জন বিচারপতি একাট্টা হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন এই লেখকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।"
হুমায়ূন আহমেদকে বলা হয়েছিল ক্ষমা চাইলে বিষয়টা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু তিনি অনড়, তিনি ক্ষমা চাইবেন না। তাঁর মতে, তিনি কোন অন্যায় করেননি।"
শেষ পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদ ক্ষমা চাননি।
যাই হোক, এটা বিজ্ঞ আদালতের বিষয়, তাঁরা মাহমুদুর রহমানের বিষয়টাকে যথাযথ মনে করেছেন এটা নিয়ে আর কথা বাড়াই না। কেবল অল্প কথায় বলি, বিচারপতি ঈশ্বর না, ঈশ্বরও সমালোচিত হন। একজন বিচারপতি যখন ট্রাফিক কনস্টেবলকে প্রকাশ্য রাস্তায় কান ধরান [৪] তখন কী আমরা বলব না, এ তো লেজার গান দিয়ে পাখি শিকার!
যেহেতু আপিল বিভাগ এই রায় দিয়েছেন এখানে খানিকটা জটিলতা থেকেই যায়। মাহমুদুর রহমান এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সুযোগ পাননি। আপিল বিভাগ বলেছিলেন, মাহমুদুর রহমানকে কেন এই শাস্তি দেয়া হলো তার কারণ জানানো হবে। মাহমুদুর রহমানের জেল খাটার ছয় মাস পূর্ণ হবার পরও এই কারণ জানা যায়নি [৩]। এখনও মূল রায়ের কপিই পাওয়া যায়নি! এটা না-থাকলে আদালতের নিয়ম অনুযায়ী কারও রিভিউ করার সুযোগ থাকছে না! তাঁকে যে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এটা নিয়েও আমি বিভ্রান্তির মধ্যে আছি। আমাদের দেশের অধিকাংশ আইনই ব্রিটিশদের করা।
আমি অন্য এক লেখায় উল্লেখ করেছিলাম, একটি বহুজাতিক কোম্পানি যারা কঠিন একটা অপরাধ করার পরও আদালত তাদেরকে ২০০ টাকা জরিমানা করেছিলেন। ব্রিটিশ আমলে ২০০ টাকা মানে বিপুল টাকা কিন্তু তুলনায় এখনকার সময়ে তা স্রেফ হাতের ময়লা। বছরে ৩৫০০ কোটি টাকা ট্যাক্স দেয় এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে যখন ২০০ টাকা জরিমানা করা হয় তা বড়ো হাস্যকর ঠেকে!
তাই আমার জানার খুব আগ্রহ মাহমুদুর রহমানকে এক লাখ টাকা জরিমানাটা ঠিক কোন আইনের আওতায় করা হয়েছে? এই তথ্য পাওয়া আমার অধিকার অথচ এটা আমি জানতে পারছি না! মাননীয় প্রধান বিচারপতি, আপনাকে কদমবুসির ইচ্ছাটা [৫] এখনও বহাল আছে কিন্তু বিষাদের সঙ্গে এও বলি, আমি তথ্য পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সর্বোচ্চ আদালত আমাদের শেষ ভরসাস্থল তাই এই অন্যায় আপনি করতে পারেন না। তাহলে আর পায়ের নীচে মাটি থাকে না। এমনিতেই এই দেশে দাঁড়াবার জায়গার বড়ো অভাব!
সহায়ক লিংক:
০. মিটিং, সমকাল: http://tinyurl.com/4lr6fya
১. রাজাকার...: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_6914.html
২. হুমায়ূন আহমেদ: http://www.ali-mahmed.com/2008/07/blog-post_03.html
৩. বিডিনিউজ: http://dhakanews24.com/?p=3699
৪. ট্রাফিক কনস্টেবল...: http://www.ali-mahmed.com/2011/01/blog-post_31.html
৫. কদমবুসি: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_13.html
বিভাগ
ইচ্ছা
Sunday, February 20, 2011
বিউটিফুল বাংলাদেশ- বিউটিফুল মাইন্ড!
একটা দেশ কতটা এগিয়ে এর একটা মাপকাঠি এটাও হতে পারে অন্য দেশের লোকজনরা কতটা আগ্রহ নিয়ে সেই দেশটা বোঝার জন্য, দেখার জন্য আসেন। একবার এক অস্ট্রেলিয়ানের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। মানুষটা দুবাই যাচ্ছেন ঘুরতে। আমি তাকে বললাম, তুমি দুবাইয়ে কী দেখবে, সাজানো-গোছোনো কাঁচের ঘর! এমন কাঁচের ঘরের তো তোমার দেশেও অভাব নাই। দেখতে হলে তুমি বাংলাদেশে আসো।
ব্যাটা বাংলাদেশের নাম শুনেছে। অবশ্য তখন মনে হচ্ছিল না-শুনলেই ভাল হত। প্লেনে সবে সে লার্জ জিন সাবড়ে আরেকটা নিয়েছে বলেই সম্ভবত মুখে কিছু আটকাচ্ছিল না। ফড়ফড় করে বলে যাচ্ছিল বলেই হয়তো আমার ভুলভাল ইংরাজিতে কথা চালিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছিল না।
তার সাফ কথা, ঘোরার জন্য বাংলাদেশ সেফ না। সে তার পরিচিত লোকজনের কার সঙ্গে কখন বাংলাদেশে বিচ্ছিরি কী হয়েছে একের-পর-এক এর ফিরিস্তি দেয়া শুরু করল।
আমি চিঁ চিঁ করে বলেছিলাম, দেখো, তুমি দু-চারজনের উদাহরণ দিয়ে বললে এদের সঙ্গে সমস্যা হয়েছে কিন্তু দেখবে তোমার দেশেরই শত-শত মানুষ বাংলাদেশ ঘুরে গেছে, সঙ্গে নিয়ে গেছে চমৎকার সব স্মৃতি। আচ্ছা, এই সব বাদ দাও, তুমি যদি বাংলাদেশে ঘুরতে আসো আমি নিজে তোমার গাইড হবো। সমস্ত কাজকাম ফেলে তোমাকে সময় দেব।
এটা কোন বানানো কথা ছিল না- আমার মনের কথা। আমি যদি একজনের ধারণা পাল্টে দিতে পারি তাহলে সে দেশে গিয়ে শতমুখে রসিয়ে রসিয়ে এই গল্প করবে, হেই ম্যান, গেসিলাম বেংলাদেশে...।
কোন একটা দেশে কেউ হুট করে চলে আসেন না, তাঁকে নিয়ে আসতে হয়। আনার জন্য অনেক কায়দা-কানুন আছে। ওই দেশে দেখতে আসার জন্য কী কী আছে তা ফলাও করে জানানো। সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে তাদের মধ্যে এই বিশ্বাসটা তৈরি করা, এই দেশে প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এঁরা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধার প্রসঙ্গটা এই কারণে উল্লেখ করলাম একজন শাহরুখ খান [১] যখন প্রকাশ্যে সিগারেট হাতে মহড়া দেন তখন আমাদের দেশের দায়িত্বশীল লোকদের মধ্যে একজনও শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি এটা নিয়ে কথা বলার জন্য!
২০০৮ সালে আমাদের দেশে পর্যটক এসেছেন ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩২ জন। এরপর, ২০০৯, ২০১০? এটা পত্রিকার খবর কিন্তু কেউ কী বিশ্বাস করবে, আমাদের দেশের পর্যটন বিভাগের কাছে বিগত দুই বছরে কতজন পর্যটক এসেছেন তার কোন হিসাব নেই! দোষটা অবশ্য পর্যটন বিভাগের না। এই হিসাবটা রাখে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। এসবির কাছে পর্যটন বিভাগ চিঠির পর চিঠি দিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু আমাদের পুলিশ মহোদয়গণ এর উত্তর দেননি!
কেন? পুলিশ মহোদয়গণের বক্তব্য, 'নরোম তারের' জটিলতার কারণে এই তথ্য দেয়া যাচ্ছে না। না, তারা 'নরোমতার' বলেননি বলেছেন, সফটওয়্যার। তাদের সফটওয়্যারের থেকে এ তথ্য দিতে গেলে নাকি নতুন প্রোগ্রাম বানাতে হবে। বিদেশ থেকে লোকজন না-আসা পর্যন্ত ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাগ্যিস, এরা বলে বসেননি, তারটা নরোম হয়ে যাওয়ায় তথ্যসব গলে যাবে বিধায় দিতে সমস্যা হচ্ছে! আমি নিজে খুব ভাল সফটওয়্যার সম্বন্ধে বুঝি না কিন্তু অল্প জ্ঞান নিয়েই জোর দিয়ে বলতে পারব এখনকার সময়ে এটা ফালতু একটা যুক্তি। আর কিছু না হোক অন্তত এরা যেখান থেকে এন্ট্রি দিচ্ছে সেখান থেকে নামধাম নিয়ে এক্সেল শিটে চলনসই একটা কিছু দাঁড় করিয়ে ফেলা যায়।
এই হচ্ছে আমাদের দেশের পর্যটন নিয়ে আমাদের ভাবনা। ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে নতুন এয়ারপোর্ট বানাবার জন্য আমাদের উল্লাসে ক্লান্তি নেই অথচ যে আর্ন্তজাতিক এয়ারপোর্টটা আছে এটাকে জবরজং বানাতে আমরা পিছপা হই না। কেন এই এয়ারপোর্টটা আনাচে কানাচে আমাদের সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবন, চা-বাগানের ছবি দিয়ে আমরা ভরে দিচ্ছি না? একটা দেশকে বুঝতে হলে প্রথমেই দেখতে হয় তার এয়ারপোর্ট, একজন বিদেশি এসে দেখবেটা কী, ঘন্টা! কমলাপুর, বিমানবন্দর স্টেশনে আমাদের দর্শনীয় স্থানের কয়টা নমুনা পাওয়া যাবে? আমাদের ভাবনার কী দৈন্যতা!
আর আমরা বিদেশী কাউকে দেখলে যেভাবে হামলে পড়ি বেচারা নিজেকে সম্ভবত চিড়িয়াখানার চিড়িয়া মনে করে।
একবার কি একটা কাজে স্টেশনে গেছি, লোকজনকে দেখি গোল হয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। একজনকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, আগরতলা থেকে কেনিয়ার একজন পর্যটক এসেছেন। সবাই তাঁকে দেখছে।
আমি হতভম্ব, একজন মানুষকে এমন অসভ্যের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা কেমন করে সম্ভব!
যে দেশের যে চল- একজন রেল পুলিশকে নাস্তা-পানির পয়সা দিয়ে পাঠানো হয়েছিল জনতাকে হটিয়ে দিতে। বীর জনতা কী আর হটে! পরে স্টেশন সুপারিনটেনডেন্টের কামরায় বসার ব্যবস্থা করায় অনেকখানি রক্ষা! মানুষটা বিব্রত বোধ করবেন বলে অনেক দূর থেকে ছবিটা উঠানো হয়েছিল।
অন্য এক লেখায় আমি লিখেছিলাম [২]:
"এই দেশে একটা ডকুমেন্টরি বানালেও দেখবেন, কত ভাবে দেশকে ছোট করা যায় তার প্রাণান্তকর চেষ্টা। যেন বন্যা-সিডর, মাদ্রাসা, অভাব এসব ব্যতীত আর দেখাবার কিছু নেই।
প্রবাসে এক বাঙ্গালি মহিলা জুতা কেনবার জন্য এ দোকান-ও দোকান ছুটে বেড়াচ্ছিলেন, ঠিক পছন্দসই জুতাটা চোখে লাগছিল না। তার এই অস্থিরতা দেখে একজন সেলস-গার্ল বলল, 'তোমার সমস্যাটা কী, জুতা নিয়ে তুমি এত চুজি কেন? তোমাদের দেশের মহিলারা তো জুতাই পায়ে দেয় না'!
আমার ওই সেলস-গার্লকে চাবকাতে ইচ্ছা করে না, কারণ সে দেখেছে নগ্ন পায়ের মহিলাদের। এই দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের পশ্চাদদেশে গদাম করে লাথি মারতে সুতীব্র ইচ্ছা জাগে। কারণ, এরা পৃথিবীর কাছে আমাদের দেশটাকে এভাবেই তুলে ধরেন- খালি পায়ের মা, তাঁর অপুষ্ট শরীর, কোলে ততোধিক অপুষ্ট দু-চারটা শিশুসহ। টাকা কামাবার ধান্দায় এরা পারলে মাকেও বিক্রি করে দেবেন, অবলীলায় ।
যাই হোক, তারপরও দেশকে তুলে ধরার চেষ্টা হয়। কেউ-না-কেউ এগিয়ে আসেন। যেমনটা ক্রিকেটকে উপলক্ষ করে 'বিউটিফুল বাংলাদেশ' নামে সাড়ে তিন মিনিটের অসাধারণ এই প্রামাণ্যচিত্র বানানো হয়েছে। এর নির্মাতা গাজী শুভ্র, ক্যামেরায় জনাব খসরু। যা ক্রমশ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আমি আশায় বুক বাঁধি এমন অজস্র প্রামাণ্যচিত্র বানাবে এই দেশেরই দামাল ছেলেরা। যার সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়বে দেশ থেকে দেশান্তরে। ভিনদেশি কারও সঙ্গে অন্যত্র কোথাও দেখা হয়ে গেলে সে ঝলমলে মুখে বলবে, হেই ম্যান, গেসিলাম টোমাডের ডেসে...। আমি তখন কিচ্ছু বলব না কেবল জলভরা চোখে সামনের অস্পষ্ট মানুষটার দিকে তাকিয়ে থাকব।
সহায়ক সূত্র:
১. শাহরুখ...: http://www.ali-mahmed.com/2010/12/blog-post_11.html
২. কষ্ট-মনন-দারিদ্রতা এবং ছফা পুরান: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_15.html
ব্যাটা বাংলাদেশের নাম শুনেছে। অবশ্য তখন মনে হচ্ছিল না-শুনলেই ভাল হত। প্লেনে সবে সে লার্জ জিন সাবড়ে আরেকটা নিয়েছে বলেই সম্ভবত মুখে কিছু আটকাচ্ছিল না। ফড়ফড় করে বলে যাচ্ছিল বলেই হয়তো আমার ভুলভাল ইংরাজিতে কথা চালিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছিল না।
তার সাফ কথা, ঘোরার জন্য বাংলাদেশ সেফ না। সে তার পরিচিত লোকজনের কার সঙ্গে কখন বাংলাদেশে বিচ্ছিরি কী হয়েছে একের-পর-এক এর ফিরিস্তি দেয়া শুরু করল।
আমি চিঁ চিঁ করে বলেছিলাম, দেখো, তুমি দু-চারজনের উদাহরণ দিয়ে বললে এদের সঙ্গে সমস্যা হয়েছে কিন্তু দেখবে তোমার দেশেরই শত-শত মানুষ বাংলাদেশ ঘুরে গেছে, সঙ্গে নিয়ে গেছে চমৎকার সব স্মৃতি। আচ্ছা, এই সব বাদ দাও, তুমি যদি বাংলাদেশে ঘুরতে আসো আমি নিজে তোমার গাইড হবো। সমস্ত কাজকাম ফেলে তোমাকে সময় দেব।
এটা কোন বানানো কথা ছিল না- আমার মনের কথা। আমি যদি একজনের ধারণা পাল্টে দিতে পারি তাহলে সে দেশে গিয়ে শতমুখে রসিয়ে রসিয়ে এই গল্প করবে, হেই ম্যান, গেসিলাম বেংলাদেশে...।
কোন একটা দেশে কেউ হুট করে চলে আসেন না, তাঁকে নিয়ে আসতে হয়। আনার জন্য অনেক কায়দা-কানুন আছে। ওই দেশে দেখতে আসার জন্য কী কী আছে তা ফলাও করে জানানো। সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে তাদের মধ্যে এই বিশ্বাসটা তৈরি করা, এই দেশে প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এঁরা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধার প্রসঙ্গটা এই কারণে উল্লেখ করলাম একজন শাহরুখ খান [১] যখন প্রকাশ্যে সিগারেট হাতে মহড়া দেন তখন আমাদের দেশের দায়িত্বশীল লোকদের মধ্যে একজনও শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি এটা নিয়ে কথা বলার জন্য!
২০০৮ সালে আমাদের দেশে পর্যটক এসেছেন ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩২ জন। এরপর, ২০০৯, ২০১০? এটা পত্রিকার খবর কিন্তু কেউ কী বিশ্বাস করবে, আমাদের দেশের পর্যটন বিভাগের কাছে বিগত দুই বছরে কতজন পর্যটক এসেছেন তার কোন হিসাব নেই! দোষটা অবশ্য পর্যটন বিভাগের না। এই হিসাবটা রাখে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। এসবির কাছে পর্যটন বিভাগ চিঠির পর চিঠি দিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু আমাদের পুলিশ মহোদয়গণ এর উত্তর দেননি!
কেন? পুলিশ মহোদয়গণের বক্তব্য, 'নরোম তারের' জটিলতার কারণে এই তথ্য দেয়া যাচ্ছে না। না, তারা 'নরোমতার' বলেননি বলেছেন, সফটওয়্যার। তাদের সফটওয়্যারের থেকে এ তথ্য দিতে গেলে নাকি নতুন প্রোগ্রাম বানাতে হবে। বিদেশ থেকে লোকজন না-আসা পর্যন্ত ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাগ্যিস, এরা বলে বসেননি, তারটা নরোম হয়ে যাওয়ায় তথ্যসব গলে যাবে বিধায় দিতে সমস্যা হচ্ছে! আমি নিজে খুব ভাল সফটওয়্যার সম্বন্ধে বুঝি না কিন্তু অল্প জ্ঞান নিয়েই জোর দিয়ে বলতে পারব এখনকার সময়ে এটা ফালতু একটা যুক্তি। আর কিছু না হোক অন্তত এরা যেখান থেকে এন্ট্রি দিচ্ছে সেখান থেকে নামধাম নিয়ে এক্সেল শিটে চলনসই একটা কিছু দাঁড় করিয়ে ফেলা যায়।
এই হচ্ছে আমাদের দেশের পর্যটন নিয়ে আমাদের ভাবনা। ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে নতুন এয়ারপোর্ট বানাবার জন্য আমাদের উল্লাসে ক্লান্তি নেই অথচ যে আর্ন্তজাতিক এয়ারপোর্টটা আছে এটাকে জবরজং বানাতে আমরা পিছপা হই না। কেন এই এয়ারপোর্টটা আনাচে কানাচে আমাদের সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবন, চা-বাগানের ছবি দিয়ে আমরা ভরে দিচ্ছি না? একটা দেশকে বুঝতে হলে প্রথমেই দেখতে হয় তার এয়ারপোর্ট, একজন বিদেশি এসে দেখবেটা কী, ঘন্টা! কমলাপুর, বিমানবন্দর স্টেশনে আমাদের দর্শনীয় স্থানের কয়টা নমুনা পাওয়া যাবে? আমাদের ভাবনার কী দৈন্যতা!
আর আমরা বিদেশী কাউকে দেখলে যেভাবে হামলে পড়ি বেচারা নিজেকে সম্ভবত চিড়িয়াখানার চিড়িয়া মনে করে।
একবার কি একটা কাজে স্টেশনে গেছি, লোকজনকে দেখি গোল হয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। একজনকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, আগরতলা থেকে কেনিয়ার একজন পর্যটক এসেছেন। সবাই তাঁকে দেখছে।
আমি হতভম্ব, একজন মানুষকে এমন অসভ্যের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা কেমন করে সম্ভব!
যে দেশের যে চল- একজন রেল পুলিশকে নাস্তা-পানির পয়সা দিয়ে পাঠানো হয়েছিল জনতাকে হটিয়ে দিতে। বীর জনতা কী আর হটে! পরে স্টেশন সুপারিনটেনডেন্টের কামরায় বসার ব্যবস্থা করায় অনেকখানি রক্ষা! মানুষটা বিব্রত বোধ করবেন বলে অনেক দূর থেকে ছবিটা উঠানো হয়েছিল।
অন্য এক লেখায় আমি লিখেছিলাম [২]:
"এই দেশে একটা ডকুমেন্টরি বানালেও দেখবেন, কত ভাবে দেশকে ছোট করা যায় তার প্রাণান্তকর চেষ্টা। যেন বন্যা-সিডর, মাদ্রাসা, অভাব এসব ব্যতীত আর দেখাবার কিছু নেই।
প্রবাসে এক বাঙ্গালি মহিলা জুতা কেনবার জন্য এ দোকান-ও দোকান ছুটে বেড়াচ্ছিলেন, ঠিক পছন্দসই জুতাটা চোখে লাগছিল না। তার এই অস্থিরতা দেখে একজন সেলস-গার্ল বলল, 'তোমার সমস্যাটা কী, জুতা নিয়ে তুমি এত চুজি কেন? তোমাদের দেশের মহিলারা তো জুতাই পায়ে দেয় না'!
আমার ওই সেলস-গার্লকে চাবকাতে ইচ্ছা করে না, কারণ সে দেখেছে নগ্ন পায়ের মহিলাদের। এই দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের পশ্চাদদেশে গদাম করে লাথি মারতে সুতীব্র ইচ্ছা জাগে। কারণ, এরা পৃথিবীর কাছে আমাদের দেশটাকে এভাবেই তুলে ধরেন- খালি পায়ের মা, তাঁর অপুষ্ট শরীর, কোলে ততোধিক অপুষ্ট দু-চারটা শিশুসহ। টাকা কামাবার ধান্দায় এরা পারলে মাকেও বিক্রি করে দেবেন, অবলীলায় ।
যাই হোক, তারপরও দেশকে তুলে ধরার চেষ্টা হয়। কেউ-না-কেউ এগিয়ে আসেন। যেমনটা ক্রিকেটকে উপলক্ষ করে 'বিউটিফুল বাংলাদেশ' নামে সাড়ে তিন মিনিটের অসাধারণ এই প্রামাণ্যচিত্র বানানো হয়েছে। এর নির্মাতা গাজী শুভ্র, ক্যামেরায় জনাব খসরু। যা ক্রমশ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আমি আশায় বুক বাঁধি এমন অজস্র প্রামাণ্যচিত্র বানাবে এই দেশেরই দামাল ছেলেরা। যার সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়বে দেশ থেকে দেশান্তরে। ভিনদেশি কারও সঙ্গে অন্যত্র কোথাও দেখা হয়ে গেলে সে ঝলমলে মুখে বলবে, হেই ম্যান, গেসিলাম টোমাডের ডেসে...। আমি তখন কিচ্ছু বলব না কেবল জলভরা চোখে সামনের অস্পষ্ট মানুষটার দিকে তাকিয়ে থাকব।
সহায়ক সূত্র:
১. শাহরুখ...: http://www.ali-mahmed.com/2010/12/blog-post_11.html
২. কষ্ট-মনন-দারিদ্রতা এবং ছফা পুরান: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_15.html
বিভাগ
ভাললাগা
Friday, February 18, 2011
সেলিব্রেটিদের বাহ্যজ্ঞান লোপ পায়!
ভাষার জন্য ভালোবাসা নামের লেখাটায় আমি লিখেছিলাম [১]:
"ফেব্রুয়ারি মাসটা আমাদের জন্য বড়ো জরুরি কারণ এই মাস এলেই আমরা ভাষার জন্য ঝাপিয়ে পড়ি, চোখের জল ফেলার সুযোগ পাই। বিস্তর কান্নাকাটি করি। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা তো কাঁদতে কাঁদতে অন্তর্বাস ভিজিয়ে ফেলেন! ফেব্রুয়ারি যাওয়ামাত্র যথারীতি আমরা সমস্ত কিছুই বিস্মৃত হই!"
'...মাস্ত কালান্দার', উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রুনা লায়লার এই গান নিয়ে অনেকে অস্থির! কেন? আর আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের আপত্তি এটা ভাষার মাস। আহা, মাসটা ফেব্রুয়ারি বলে? মার্চ হলে সমস্যা ছিল না, না? আর এতে অবাক হওয়ার কী আছে! আমি যেমনটা বলে থাকি, লাগাবেন ধুতুরা গাছ এতে কী আপেল ধরবে, নাকি? রুনা লায়লা তো এই গান গাওয়া নিয়ে চমৎকার একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, 'এই গানটি নির্বাচন করেছে ক্রিকেট বোর্ড এতে নাকি তাঁর কোন ভূমিকা ছিল না'।
তাই তো! এটা তো লাইভ টাইপের অনুষ্ঠান ছিল না যে বলামাত্রই একজন গেয়ে ফেললেন। এই গানটার, অনুষ্ঠানটার মহড়া হয়েছে দিনের-পর-দিন। কেউ এটা লক্ষ করলেন না! ক্রিকেট বোর্ড এমনটা করায় ক্রিকেট বোর্ডের লোকজনের পা ত্যাগ বা পা ফেলে দেয়ার দাবী উঠবে এমনটা ভাবার কোন অবকাশ নাই কারণ এটা আদিম যুগ না কিন্তু এই আধুনিক যুগে কেন এই দাবী উঠবে না এদেরকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা।
রুনা লায়লাকে খুব বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না কারণ তাঁকে ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা বলেছে তিনি তেমনটাই করেছেন। আহা বেচারা, অবোধ!
সেলিব্রেটি হতে গেলে সম্ভবত মগজের প্রচুর ব্যবহারে মগজ হয় জীর্ণ! ভুল, মগজের জীর্ণ-শীর্ণ হওয়ার কোন উপায় নেই, মগজের ক্ষয় হতে পারে। অতিরিক্ত ব্যবহারে হয়তো মগজশূণ্য হওয়াও বিচিত্র না, মগজশূণ্য হয়ে বাহ্যজ্ঞান লোপ পাওয়ায় যা হওয়ার তাই হয়! আসলে এটা বোঝা সাধারণ আমাদের কম্মো না, সেলিব্রেটিরাই ভাল বলতে পারবেন। সেলিব্রেটি বলে কথা!
এদিকে খানিকটা চিন্তায়ও আছি, খোদা-না-খাস্তা আমাদের সেলিব্রেটিদের কোন বোর্ড-ফোর্ড নগ্ন গাত্রে নৃত্য করতে বললে তাঁরা কী করবেন?
সহায়ক সূত্র:
১. ভাষার জন্য ভালোবাসা: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_16.html
"ফেব্রুয়ারি মাসটা আমাদের জন্য বড়ো জরুরি কারণ এই মাস এলেই আমরা ভাষার জন্য ঝাপিয়ে পড়ি, চোখের জল ফেলার সুযোগ পাই। বিস্তর কান্নাকাটি করি। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা তো কাঁদতে কাঁদতে অন্তর্বাস ভিজিয়ে ফেলেন! ফেব্রুয়ারি যাওয়ামাত্র যথারীতি আমরা সমস্ত কিছুই বিস্মৃত হই!"
'...মাস্ত কালান্দার', উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রুনা লায়লার এই গান নিয়ে অনেকে অস্থির! কেন? আর আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের আপত্তি এটা ভাষার মাস। আহা, মাসটা ফেব্রুয়ারি বলে? মার্চ হলে সমস্যা ছিল না, না? আর এতে অবাক হওয়ার কী আছে! আমি যেমনটা বলে থাকি, লাগাবেন ধুতুরা গাছ এতে কী আপেল ধরবে, নাকি? রুনা লায়লা তো এই গান গাওয়া নিয়ে চমৎকার একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, 'এই গানটি নির্বাচন করেছে ক্রিকেট বোর্ড এতে নাকি তাঁর কোন ভূমিকা ছিল না'।
তাই তো! এটা তো লাইভ টাইপের অনুষ্ঠান ছিল না যে বলামাত্রই একজন গেয়ে ফেললেন। এই গানটার, অনুষ্ঠানটার মহড়া হয়েছে দিনের-পর-দিন। কেউ এটা লক্ষ করলেন না! ক্রিকেট বোর্ড এমনটা করায় ক্রিকেট বোর্ডের লোকজনের পা ত্যাগ বা পা ফেলে দেয়ার দাবী উঠবে এমনটা ভাবার কোন অবকাশ নাই কারণ এটা আদিম যুগ না কিন্তু এই আধুনিক যুগে কেন এই দাবী উঠবে না এদেরকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা।
রুনা লায়লাকে খুব বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না কারণ তাঁকে ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা বলেছে তিনি তেমনটাই করেছেন। আহা বেচারা, অবোধ!
সেলিব্রেটি হতে গেলে সম্ভবত মগজের প্রচুর ব্যবহারে মগজ হয় জীর্ণ! ভুল, মগজের জীর্ণ-শীর্ণ হওয়ার কোন উপায় নেই, মগজের ক্ষয় হতে পারে। অতিরিক্ত ব্যবহারে হয়তো মগজশূণ্য হওয়াও বিচিত্র না, মগজশূণ্য হয়ে বাহ্যজ্ঞান লোপ পাওয়ায় যা হওয়ার তাই হয়! আসলে এটা বোঝা সাধারণ আমাদের কম্মো না, সেলিব্রেটিরাই ভাল বলতে পারবেন। সেলিব্রেটি বলে কথা!
এদিকে খানিকটা চিন্তায়ও আছি, খোদা-না-খাস্তা আমাদের সেলিব্রেটিদের কোন বোর্ড-ফোর্ড নগ্ন গাত্রে নৃত্য করতে বললে তাঁরা কী করবেন?
সহায়ক সূত্র:
১. ভাষার জন্য ভালোবাসা: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_16.html
বিভাগ
অশ্লীলতা
Wednesday, February 16, 2011
ভাষার জন্য ভালোবাসা
ফেব্রুয়ারি মাসটা আমাদের জন্য বড়ো জরুরি কারণ এই মাস এলেই আমরা ভাষার জন্য ঝাপিয়ে পড়ি, চোখের জল ফেলার সুযোগ পাই। বিস্তর কান্নাকাটি করি। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা তো কাঁদতে কাঁদতে অন্তর্বাস ভিজিয়ে ফেলেন! ভাগ্যিস, আমরা দেখতে পাই না, এই যা! ফেব্রুয়ারি যাওয়ামাত্র যথারীতি আমরা সমস্ত কিছুই বিস্মৃত হই! পরের বছরের ফেব্রুয়ারির জন্য ঝিম মেরে বসে থাকি।
এখনও আমাদের দেশের আদালতে অধিকাংশ রায় ইংরাজিতে লেখা হয়। গ্রামের সহজসরল ফরিয়াদি এই রায়ের বিন্দুবিসর্গও বুঝে উঠতে পারেন না। উকিল সাহেবকে পড়ে দেয়ার জন্য একগাদা টাকা খরচ করেন, ধমক ফাও। আইনগুলো ইংরাজিতে তো বটেই, কিছু তো মাশাল্লাহ! আইনগুলো বাংলা করার পর দাঁড়াচ্ছে, 'বেঙ্গল পশু ক্লেশ আইন'!
যথারীতি এতে আমাদের গাত্রদাহ হয় না! কিন্তু রক্তে ভেজা নিজের ভাষা নিয়ে অহংকার করা একটি জাতির জন্য এটা যে কী লজ্জার! আফসোস, এই লজ্জা আমাদেরকে স্পর্শ করে না! কারণ আমরা হুজুগে জাতি। এবং নিয়ম করে, মাস নির্দিষ্ট করে কাঁদতে কাঁদতে কপাল (!) ভিজিয়ে না-ফেললে আমরা আরাম পাই না।
এ লজ্জা কাকে বলি, কোথায় রাখি? আমরা ১৪ বছরে এখন পর্যন্ত ৭৫০টি আইনের মধ্যে মাত্র ১০৭টি আইন বাংলায় ভাষান্তর করতে পেরেছি! এখনও আমাদের অধিকাংশ আইন ব্রিটিশদের করা। নামও বলিহারি! ১৯২০ সালের 'বেঙ্গল পশু ক্লেশ আইন', ১৮৭১ সালের 'গবাধিপশু অনধিকার প্রবেশ আইন'! আহা, নিজের ভাষার প্রতি কী দরদ, কী দায়িত্ব আমাদের!
ইংরাজি শিখতে মানা করছে না কেউ কিন্তু কেউ ইংরাজি ভাল না-জানলে তাকে শূলে চড়াবারও কোন কারণ নেই [১]! এটাও বলা হচ্ছে না সফটওয়্যারের বাংলা কেউ 'নরোম তার' করুক। বা Hackler and Koch -কে অনুবাদ করুক 'হেকলার এবং কচ' অথবা থ্রি নট থ্রি রাইফেলকে লিখুক, 'থ্রি না থ্রি রাইফেল' [২]!
কিন্তু এখনও আমরা অধিকাংশ মানুষ নিজের ভাষাটাই শুদ্ধরূপে উচ্চারণ করতে পারি না। মানুষটা একজন মন্ত্রী-সচীব, আমলা-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তাতে কী! এই কষ্ট কোথায় রাখি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের মত একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক [৩] প্রতিটি বাক্য বিকৃত উচ্চারণ করেন!
আমি নিজে কী! আমি শপথ করেছিলাম, পারতপক্ষে লেখায় ইংরাজি শব্দ ব্যবহার করব না, অন্তত এড়িয়ে চলব। কোথায় সেই শপথ!
আসলে আমাদের নিজের ভাষার প্রতি তাচ্ছিল্য করার স্পর্ধা আমরা পাই কোত্থেকে এটা একটু বলি...। অন্যত্র এক লেখায় আমি লিখেছিলাম [৪]:
"ইউনেসকোর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ছয় হাজার ভাষার মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। লাটভিয়ায় ‘লিভোনিয়ান’ ভাষায় কথা বলেন এমন একজনই মাত্র জীবিত ছিলেন, তিনি মারা গেলে সেই ভাষারও মৃত্যু হবে। এটা ২০০৯ সালের কথা, এরিমধ্যে তিনি মারা গেছেন কিনা আমি জানি না।
আলাস্কার ‘আইয়াক’ ভাষা জানা শেষ ব্যক্তিটি মারা যান ২০০৮ সালে। তাঁর সঙ্গেই মৃত্যু হয় ‘আইয়াক’ ভাষার।
৮৫ বছর বয়সী 'বার সর' ছিলেন ভারতীয় আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের ৮০টি আদিবাস গোষ্ঠীর সবচেয়ে বৃদ্ধ সদস্য এবং ২০১০ সালের জানুয়ারিতে মৃত্যুর আগে তিনি ছিলেন এই আদি ভাষা জানা সর্বশেষ ব্যাক্তি!
যে আড়াই হাজার ভাষা এই গ্রহ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে আমাদের বাংলা ভাষাও থাকতে পারত কিন্তু আমাদের অপার সৌভাগ্য, আমাদের বাংলা ভাষা যে কেবল টিকেই আছে এমন না, আছে সদর্পে, সীমাহীন গৌরবে! এটাই আমাদের শক্তি এবং এই শক্তিতে ভর করে আমরা আমাদের ভাষার প্রতি অবজ্ঞা করার সাহস দেখাই।
বাংলা নামের আমাদের মায়ের ভাষা- এটা তো আর আমরা এমনি এমনি পাইনি, কেউ আমাদেরকে এটা মুফতে-দানে দেয়নি। এর জন্য আমরা কেবল দিনের-পর-দিন, মাসের-পর-মাস, বছরের-পর-বছর ধরেই লড়াই করিনি; লড়াই করেছি যুগের-পর-যুগ ধরে!
এই দেশের অসংখ্য সেরা সন্তান তাঁদের রক্ত অকাতরে বিলিয়ে গেছেন আমাদের ভাষার জন্য। আমাদের লেখার কালির সঙ্গে মিশে আছে তাঁদের স্বর্গীয় রক্ত। জান্তব স্বপ্ন নামের সেই মানুষগুলোর অনেকেই আজ নেই কিন্তু তাঁদের মায়াভরা সুশীতল ছায়া ছড়িয়ে আছে আমাদের মাথার উপর। তাঁদের ছায়ার পাশে যখন আমার মত অভাজন দাঁড়াই তখন নিজেকে কী ক্ষুদ্র, লজ্জিতই না মনে হয়। নতচোখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে তখন কোন উপায় থাকে না- তাঁদের চোখে চোখ রাখি কেমন করে?"
ডয়চে ভেলের কাছে [৫] একজন ভাষা আন্দোলনকারী মোহাম্মদ আফজাল তাঁর কষ্ট ব্যক্ত করেন এমন করে:
এখনও আমাদের দেশের আদালতে অধিকাংশ রায় ইংরাজিতে লেখা হয়। গ্রামের সহজসরল ফরিয়াদি এই রায়ের বিন্দুবিসর্গও বুঝে উঠতে পারেন না। উকিল সাহেবকে পড়ে দেয়ার জন্য একগাদা টাকা খরচ করেন, ধমক ফাও। আইনগুলো ইংরাজিতে তো বটেই, কিছু তো মাশাল্লাহ! আইনগুলো বাংলা করার পর দাঁড়াচ্ছে, 'বেঙ্গল পশু ক্লেশ আইন'!
যথারীতি এতে আমাদের গাত্রদাহ হয় না! কিন্তু রক্তে ভেজা নিজের ভাষা নিয়ে অহংকার করা একটি জাতির জন্য এটা যে কী লজ্জার! আফসোস, এই লজ্জা আমাদেরকে স্পর্শ করে না! কারণ আমরা হুজুগে জাতি। এবং নিয়ম করে, মাস নির্দিষ্ট করে কাঁদতে কাঁদতে কপাল (!) ভিজিয়ে না-ফেললে আমরা আরাম পাই না।
এ লজ্জা কাকে বলি, কোথায় রাখি? আমরা ১৪ বছরে এখন পর্যন্ত ৭৫০টি আইনের মধ্যে মাত্র ১০৭টি আইন বাংলায় ভাষান্তর করতে পেরেছি! এখনও আমাদের অধিকাংশ আইন ব্রিটিশদের করা। নামও বলিহারি! ১৯২০ সালের 'বেঙ্গল পশু ক্লেশ আইন', ১৮৭১ সালের 'গবাধিপশু অনধিকার প্রবেশ আইন'! আহা, নিজের ভাষার প্রতি কী দরদ, কী দায়িত্ব আমাদের!
ইংরাজি শিখতে মানা করছে না কেউ কিন্তু কেউ ইংরাজি ভাল না-জানলে তাকে শূলে চড়াবারও কোন কারণ নেই [১]! এটাও বলা হচ্ছে না সফটওয়্যারের বাংলা কেউ 'নরোম তার' করুক। বা Hackler and Koch -কে অনুবাদ করুক 'হেকলার এবং কচ' অথবা থ্রি নট থ্রি রাইফেলকে লিখুক, 'থ্রি না থ্রি রাইফেল' [২]!
কিন্তু এখনও আমরা অধিকাংশ মানুষ নিজের ভাষাটাই শুদ্ধরূপে উচ্চারণ করতে পারি না। মানুষটা একজন মন্ত্রী-সচীব, আমলা-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তাতে কী! এই কষ্ট কোথায় রাখি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের মত একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক [৩] প্রতিটি বাক্য বিকৃত উচ্চারণ করেন!
আমি নিজে কী! আমি শপথ করেছিলাম, পারতপক্ষে লেখায় ইংরাজি শব্দ ব্যবহার করব না, অন্তত এড়িয়ে চলব। কোথায় সেই শপথ!
আসলে আমাদের নিজের ভাষার প্রতি তাচ্ছিল্য করার স্পর্ধা আমরা পাই কোত্থেকে এটা একটু বলি...। অন্যত্র এক লেখায় আমি লিখেছিলাম [৪]:
"ইউনেসকোর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ছয় হাজার ভাষার মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। লাটভিয়ায় ‘লিভোনিয়ান’ ভাষায় কথা বলেন এমন একজনই মাত্র জীবিত ছিলেন, তিনি মারা গেলে সেই ভাষারও মৃত্যু হবে। এটা ২০০৯ সালের কথা, এরিমধ্যে তিনি মারা গেছেন কিনা আমি জানি না।
আলাস্কার ‘আইয়াক’ ভাষা জানা শেষ ব্যক্তিটি মারা যান ২০০৮ সালে। তাঁর সঙ্গেই মৃত্যু হয় ‘আইয়াক’ ভাষার।
৮৫ বছর বয়সী 'বার সর' ছিলেন ভারতীয় আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের ৮০টি আদিবাস গোষ্ঠীর সবচেয়ে বৃদ্ধ সদস্য এবং ২০১০ সালের জানুয়ারিতে মৃত্যুর আগে তিনি ছিলেন এই আদি ভাষা জানা সর্বশেষ ব্যাক্তি!
যে আড়াই হাজার ভাষা এই গ্রহ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে আমাদের বাংলা ভাষাও থাকতে পারত কিন্তু আমাদের অপার সৌভাগ্য, আমাদের বাংলা ভাষা যে কেবল টিকেই আছে এমন না, আছে সদর্পে, সীমাহীন গৌরবে! এটাই আমাদের শক্তি এবং এই শক্তিতে ভর করে আমরা আমাদের ভাষার প্রতি অবজ্ঞা করার সাহস দেখাই।
বাংলা নামের আমাদের মায়ের ভাষা- এটা তো আর আমরা এমনি এমনি পাইনি, কেউ আমাদেরকে এটা মুফতে-দানে দেয়নি। এর জন্য আমরা কেবল দিনের-পর-দিন, মাসের-পর-মাস, বছরের-পর-বছর ধরেই লড়াই করিনি; লড়াই করেছি যুগের-পর-যুগ ধরে!
এই দেশের অসংখ্য সেরা সন্তান তাঁদের রক্ত অকাতরে বিলিয়ে গেছেন আমাদের ভাষার জন্য। আমাদের লেখার কালির সঙ্গে মিশে আছে তাঁদের স্বর্গীয় রক্ত। জান্তব স্বপ্ন নামের সেই মানুষগুলোর অনেকেই আজ নেই কিন্তু তাঁদের মায়াভরা সুশীতল ছায়া ছড়িয়ে আছে আমাদের মাথার উপর। তাঁদের ছায়ার পাশে যখন আমার মত অভাজন দাঁড়াই তখন নিজেকে কী ক্ষুদ্র, লজ্জিতই না মনে হয়। নতচোখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে তখন কোন উপায় থাকে না- তাঁদের চোখে চোখ রাখি কেমন করে?"
ডয়চে ভেলের কাছে [৫] একজন ভাষা আন্দোলনকারী মোহাম্মদ আফজাল তাঁর কষ্ট ব্যক্ত করেন এমন করে:
"...বর্তমানে বাংলা ভাষায় অনেক পরিবর্তন দেখছেন মোহাম্মদ আফজাল৷ এই ভাষা আন্দোলনকারী পরিবর্তনকে সমর্থন করেন৷ তবে, হতাশ হন যখন বাঙালির বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রেও ইংরেজি ভাষার দেখা পান৷ তাঁর কথায়, বাংলা ভাষায় কথা বলার, লেখার এবং সবকিছু করার প্রবণতা সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে৷ কিন্তু উচ্চবিত্তদের মধ্যে বাংলা ভাষার ব্যবহারের ঘাটতি আছে, বরং সন্তানদের ইংরেজি মিডিয়ামের পড়ানোর দিকেই তাদের আগ্রহ বেশি৷ ইদানিং আবার বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রেও ইংরেজি ভাষা চালু হয়েছে৷ এটা খুবই খারাপ প্রবণতা৷"
এখানে আমি জনাব আফজালের সঙ্গে খানিকটা অমত পোষণ করি। কেবল উচ্চবিত্তরাই তাদের সন্তানদের ইংরাজি মিডিয়াম স্কুলে পড়াতে ব্যগ্র না, এই মিছিলে যোগ দেন মধ্যবিত্তরাও!
একজন ডাক্তার তাঁর সাড়ে তিন বছরের সন্তানকে ভর্তি করাতে গিয়ে জটিলতায় পড়েন কারণ হাতের নাগালে প্রায় সব স্কুলই ইংলিশ মিডিয়াম।
তো, এক ইংরাজি মিডিয়ামের স্কুল চালান এক ভদ্রমহিলা, ওই স্কুলে যাওয়ার পর এই স্কুল নিয়ে অহংকার প্রকাশ করতে গিয়ে ওই মহিলা ফট করে বলে বসেন, 'আই নেভার অ্যালাউ বেঙ্গলি ইন মাই স্কুল'। এই সব মানুষদের ঘাড় ধরে এই দেশ থেকে বের করে দেয়াটা জরুরি।
যাইহোক, ডাক্তার সাহেব এখন যে স্কুলে তার সন্তানকে ভর্তি করিয়েছেন এটা চালান মুনীর চৌধুরীর বোন। এইটুকুন বাচ্চা, এই বয়সীদের এখানে অবশ্য পড়ার চাপ নেই, খেলাই মূখ্য। এই তর্কে আমি যাব না সাড়ে তিন বছরের সন্তানকে স্কুলে দেয়ার অর্থ হচ্ছে তার কাছ থেকে শৈশব ছিনতাই করা। ডাক্তার দম্পতি একজন ছিনতাইকারিও বটে। অবশ্য এই ডাক্তার মানুষটা একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই ডাক্তার, যতক্ষণ এই শিশুটি স্কুলে থাকে ততক্ষণ তাদের সময়ের সুবিধে হয়। বেশ, কিন্তু এটা তাঁদের বক্তব্য, আমার না। আমার সাফ কথা, ছিনতাইকারি ছিনতাইকারিই...।
যাকগে, এটা তাঁদের সিদ্ধান্ত, সুবিধা। কিন্তু এই মানুষটা একটা বিষয়ে হতভম্ব হন। মুনীর চৌধুরীর যে বোন এই স্কুলটা চালান তিনি ওই স্কুলে অযথাই ছোট-ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে ইংরাজি খই ফোটান, অনর্গল ইংরাজিতে কথা বলেন যার আদৌ প্রয়োজন নাই। তাঁর এই আচরণ ডাক্তার সাহেবকে যতটা হতবাক করে আমাকে খুব একটা স্পর্শ করে না কারণ আমরা এমনই। মুখে আমরা যত লম্বা লম্বা কথা বলি আসলে আমাদের নিজেদের ভাষার প্রতি দরদের নমুনা এমনটাই!
ইনি তো মুনীর চৌধুরীর বোন, স্বয়ং মুনীর চৌধুরীকে নিয়ে আহমদ শরীফ লিখেছিলেন, "বেসরকারী সর্বক্ষেত্রে বাঙলা ব্যবহারের উচিত্য ও প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে মুনীর চৌধুরী এক সভায় বক্তৃতা দিয়ে আমার সঙ্গে ফিরছিলেন। আমি কথা প্রসঙ্গে তাঁকে বললাম, 'বাঙলার পক্ষে তো জোরালো বক্তৃতা দিয়ে এলেন কিন্তু নিজের সন্তানদের তো ইংরাজী মাধ্যম স্কুলে পড়াচ্ছেন'।
উত্তরে মুনীর চৌধুরী বললেন, 'পাগল নাকি, আমার নিজের সন্তানের সর্বনাশ করব নাকি'!" (ভাব-বুদ্বুদ, আহমদ শরীফ, পৃষ্টা নং: ১১৩/ ১১৪)
আ মরি বাংলা ভাষা! বেচারা, অভাগা বাংলা ভাষা...!
সহায়ক সূত্র:
১. ইংরাজি ভাল না-জানলে শূলে চড়বে: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_9242.html
২. ইংরাজি অনুবাদ: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_27.html
৩. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_8885.html
৪. বৈদেশ পর্ব, পনেরো: http://www.ali-mahmed.com/2010/10/blog-post_4123.html
৫. মোহাম্মদ আফজাল, ডয়চে ভেলে: http://www.dw-world.de/dw/article/0,,14844526,00.html?maca=ben-standard_feed-ben-615-xml
বিভাগ
কষ্ট
Tuesday, February 15, 2011
বোতল ব্যবসা!
এই দেশে এখন দেখছি লোকজনেরা ধাঁ ধাঁ করে উপরে উঠে যাচ্ছে! সরকারী চাকুরী একটা বাগাতে পারলে তো কথাই নেই। ঢাকায় ঝাঁ চকচকে অধিকাংশ বাড়িগুলোর মালিক হচ্ছেন সরকারী চাকুরে! আমলা-গামলা, মায় সার্জেন্ট সাহেব, ট্যাক্স অফিসের পিয়ন-চাপরাসী পর্যন্ত! এখন তো আর সরকারী চাকরি বললেই পয়দা হয় না, ধরাধরি একটা কঠিন বিষয় আছে। লাখ-লাখ টাকা লেনদেনটাই আসল!
ব্লগিং করে এখন আর পোষাচ্ছে না, বুঝলেন। কাঁহাতক নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো যায়- হাওয়া খেয়ে বী*পাত করা চলে কিন্তু দিনপাত করা যায় না। ভাবছি, একটা ব্যবসা-ট্যবসা ধরলে মন্দ হয় না। কিন্তু আমি যে খানিকটা লেখার চেষ্টা ব্যতীত আর কিছুই যে পারি না, গো।
চুপিচুপি একবার মাটি বিক্রির ব্যবসা [১] করতে গিয়ে ফেঁসে গিয়েছিলুম, ফ্লপ! কারণ যে মাটি বিক্রি করব, আহা, দেশে মাটিই বা কোথায়? এঁদের মুখে প্রায়শ শুনি, কখনও হাসিনা, কখনও খালেদা নাকি গোটা দেশটাই বিদেশীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। যেখানে দেশই নাই সেখানে দেশের মাটি থাকবে কোত্থেকে? অবশিষ্ট আর আছেটাই কী, ঘন্টা!
ব্যর্থ মনোরথে আরেকবার বাতাস বিক্রির [২] চেষ্টা করেও তো সুবিধে হলো না। সুপার ফ্লপ! এখন 'হাতে গাল দিয়ে' ভাবছি, নতুন কি ব্যবসায় হাত দেয়া যায়?
পত্রিকার খবরে প্রকাশ, "ঢাকার ৫৫ লক্ষ মানুষের জন্য ৪৫টি পাবলিক টয়লেট" [৩]!
ঢাকার মানুষেরা মূত্র বিসর্জন দেন কোথায় এই নিয়ে গভীর চিন্তায় ছিলাম। সৈয়দ আবুল মকসুদের 'নরমূত্র' [৪] পড়ে খানিকটা ধারণা হলো ঢাকার লোকজনরা কেমন বেতমিজ! উহারা নাকি প্রকাশ্যে রাস্তায় মূত্র বিসর্জন করে। ঢাকা শহরের 'লুকজন এতো খ্রাপ'! মকসুদ স্যারের শুভ্র বসনে নরমুত্র লেগে গেলে উপায় আছে? রাম-রাম!
এ অন্যায়-এ অন্যায়! গোটা ঢাকা শহর এই সাইনবোর্ড লাগিয়ে ভাসিয়ে দিতে হবে 'এখানে প্রস্রাব করিবেন না' নইলে ঢাকা শহর মূত্রে ভেসে যাবে। চুজ হেলথ অর টব্যাকো- এখন থেকে ঢাকায় ভাসবে, হয় সাইনবোর্ড নইলে মূত্র।
ঢাকায় একটা দেয়াললিখন দেখেছিলাম, 'এখানে পিসাব করিবেন না। করিলে ুনা কাটিয়া দিব বদমাশ'। শুরুটা ভালই ছিল কিন্তু পরেরটা ুনা কাটাকাটিটা আমার পছন্দ হয়নি, বাওয়া। যিনি ওটা লিখেছেন তিনি দুম করে ক্ষেপে গেলেন কেন বুঝলাম না!
যাই হোক, অচিরেই ঢাকার লোকজন যদি বহুতল ভবনের ছাদে উঠে এই কর্ম করা শুরু করে দেন অন্তত আমি অবাক হব না। ঢালিউডের বৃষ্টির একটা গতি হবে বটে কিন্তু মূত্রবৃষ্টিতে ভিজে এই সব দৃশ্য অবলোকন করে সূক্ষরূচির লোকজনের ব্লাডপ্রেসার বেড়ে গেলে এর দায় কার উপর বর্তাবে? নাহ, এ চলতে দেয়া যায় না। এর একটা উপায় বের না-করলে চলছে না আর।
ভাবছি... দেখো দিকি কান্ড, আজকাল আমি ভাবাও শুরু করে দিয়েছি! গোজ টু নরমুত্র। আচ্ছা, এই নিয়ে একটা ব্যবসা ফাঁদলে কেমন হয়? আরে না, পাবলিক টয়লেটের ব্যবসা না। ওটা তো সরকারের কাজ! এখন থেকে বঙ্গালদের অভ্যাস খানিকটা বদলাবার চেষ্টা করতে হবে। এই যে এক হাতে পানির বোতল বা বগলে পানির বোতল এই 'কলচর' আর কদ্দিনের? আমরা তো চাপাকলের মুখে মুখ লাগিয়েই পানি খেয়ে খেয়ে বড়ো হলুম। কিন্তু এখন হাতে একটা পানির বোতল না-থাকলে কেমন ফাঁকা-ফাঁকা, নিজেকে কেমন অরক্ষিত-অরক্ষিত মনে হয়! কালে কালে একটা ভাবও হয়ে গেছে বটে।
যাগগে, এক হাতে পানির বোতল কিন্তু অন্য হাত তো মুক্ত। ওই হাতে আরেকটা খালি বোতল ধরিয়ে দিলে আটকাচ্ছে কে, বাপু! কারও সূক্ষ রূচি আহত হলে বোতলে রঙ কালো করে নিলে মনে হয় না বাংলাদেশের আইনে আটকাবে; যেখানে নিষেধ থাকার পরও আমাদের হোমড়াচোমড়া সাহেবেরা গাড়িতে কালো কাঁচ ব্যবহার করেন। সেখানে 'নরমূত্রবোতল' কালো হলে পুলিশ লাঠি মেরে মাথা বা বোতল ফাটাবে এ আমি বিশ্বাস করি না। আর কাজ শেষ করার পর বোতল বাজেয়াপ্ত করলে চাইলে হুজ্জতে যাওয়ার প্রয়োজন কী, বাপু; দিয়ে দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। যাই হোক, মুত্র বিসর্জনের চিন্তায় বাড়তি কোন চাপ নেই। ঢাকাবাসী গাড়িতে থাকুক বা খেলার মাঠে, মুত্র বিসর্জনে আটকাচ্ছে কে!
সহায়ক সূত্র:
১. মাটির ব্যবসা: http://www.ali-mahmed.com/2009/02/blog-post_15.html
২. বাতাসের ব্যবসা: http://www.ali-mahmed.com/2009/06/blog-post.html
৩. পাবলিক টয়লেট ৪৭টি: http://tinyurl.com/4t667r9
৪. নরমূত্র এবং মুত্র বিসর্জন: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_09.html
ব্লগিং করে এখন আর পোষাচ্ছে না, বুঝলেন। কাঁহাতক নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো যায়- হাওয়া খেয়ে বী*পাত করা চলে কিন্তু দিনপাত করা যায় না। ভাবছি, একটা ব্যবসা-ট্যবসা ধরলে মন্দ হয় না। কিন্তু আমি যে খানিকটা লেখার চেষ্টা ব্যতীত আর কিছুই যে পারি না, গো।
চুপিচুপি একবার মাটি বিক্রির ব্যবসা [১] করতে গিয়ে ফেঁসে গিয়েছিলুম, ফ্লপ! কারণ যে মাটি বিক্রি করব, আহা, দেশে মাটিই বা কোথায়? এঁদের মুখে প্রায়শ শুনি, কখনও হাসিনা, কখনও খালেদা নাকি গোটা দেশটাই বিদেশীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। যেখানে দেশই নাই সেখানে দেশের মাটি থাকবে কোত্থেকে? অবশিষ্ট আর আছেটাই কী, ঘন্টা!
ব্যর্থ মনোরথে আরেকবার বাতাস বিক্রির [২] চেষ্টা করেও তো সুবিধে হলো না। সুপার ফ্লপ! এখন 'হাতে গাল দিয়ে' ভাবছি, নতুন কি ব্যবসায় হাত দেয়া যায়?
পত্রিকার খবরে প্রকাশ, "ঢাকার ৫৫ লক্ষ মানুষের জন্য ৪৫টি পাবলিক টয়লেট" [৩]!
ঢাকার মানুষেরা মূত্র বিসর্জন দেন কোথায় এই নিয়ে গভীর চিন্তায় ছিলাম। সৈয়দ আবুল মকসুদের 'নরমূত্র' [৪] পড়ে খানিকটা ধারণা হলো ঢাকার লোকজনরা কেমন বেতমিজ! উহারা নাকি প্রকাশ্যে রাস্তায় মূত্র বিসর্জন করে। ঢাকা শহরের 'লুকজন এতো খ্রাপ'! মকসুদ স্যারের শুভ্র বসনে নরমুত্র লেগে গেলে উপায় আছে? রাম-রাম!
এ অন্যায়-এ অন্যায়! গোটা ঢাকা শহর এই সাইনবোর্ড লাগিয়ে ভাসিয়ে দিতে হবে 'এখানে প্রস্রাব করিবেন না' নইলে ঢাকা শহর মূত্রে ভেসে যাবে। চুজ হেলথ অর টব্যাকো- এখন থেকে ঢাকায় ভাসবে, হয় সাইনবোর্ড নইলে মূত্র।
ঢাকায় একটা দেয়াললিখন দেখেছিলাম, 'এখানে পিসাব করিবেন না। করিলে ুনা কাটিয়া দিব বদমাশ'। শুরুটা ভালই ছিল কিন্তু পরেরটা ুনা কাটাকাটিটা আমার পছন্দ হয়নি, বাওয়া। যিনি ওটা লিখেছেন তিনি দুম করে ক্ষেপে গেলেন কেন বুঝলাম না!
যাই হোক, অচিরেই ঢাকার লোকজন যদি বহুতল ভবনের ছাদে উঠে এই কর্ম করা শুরু করে দেন অন্তত আমি অবাক হব না। ঢালিউডের বৃষ্টির একটা গতি হবে বটে কিন্তু মূত্রবৃষ্টিতে ভিজে এই সব দৃশ্য অবলোকন করে সূক্ষরূচির লোকজনের ব্লাডপ্রেসার বেড়ে গেলে এর দায় কার উপর বর্তাবে? নাহ, এ চলতে দেয়া যায় না। এর একটা উপায় বের না-করলে চলছে না আর।
ভাবছি... দেখো দিকি কান্ড, আজকাল আমি ভাবাও শুরু করে দিয়েছি! গোজ টু নরমুত্র। আচ্ছা, এই নিয়ে একটা ব্যবসা ফাঁদলে কেমন হয়? আরে না, পাবলিক টয়লেটের ব্যবসা না। ওটা তো সরকারের কাজ! এখন থেকে বঙ্গালদের অভ্যাস খানিকটা বদলাবার চেষ্টা করতে হবে। এই যে এক হাতে পানির বোতল বা বগলে পানির বোতল এই 'কলচর' আর কদ্দিনের? আমরা তো চাপাকলের মুখে মুখ লাগিয়েই পানি খেয়ে খেয়ে বড়ো হলুম। কিন্তু এখন হাতে একটা পানির বোতল না-থাকলে কেমন ফাঁকা-ফাঁকা, নিজেকে কেমন অরক্ষিত-অরক্ষিত মনে হয়! কালে কালে একটা ভাবও হয়ে গেছে বটে।
যাগগে, এক হাতে পানির বোতল কিন্তু অন্য হাত তো মুক্ত। ওই হাতে আরেকটা খালি বোতল ধরিয়ে দিলে আটকাচ্ছে কে, বাপু! কারও সূক্ষ রূচি আহত হলে বোতলে রঙ কালো করে নিলে মনে হয় না বাংলাদেশের আইনে আটকাবে; যেখানে নিষেধ থাকার পরও আমাদের হোমড়াচোমড়া সাহেবেরা গাড়িতে কালো কাঁচ ব্যবহার করেন। সেখানে 'নরমূত্রবোতল' কালো হলে পুলিশ লাঠি মেরে মাথা বা বোতল ফাটাবে এ আমি বিশ্বাস করি না। আর কাজ শেষ করার পর বোতল বাজেয়াপ্ত করলে চাইলে হুজ্জতে যাওয়ার প্রয়োজন কী, বাপু; দিয়ে দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। যাই হোক, মুত্র বিসর্জনের চিন্তায় বাড়তি কোন চাপ নেই। ঢাকাবাসী গাড়িতে থাকুক বা খেলার মাঠে, মুত্র বিসর্জনে আটকাচ্ছে কে!
সহায়ক সূত্র:
১. মাটির ব্যবসা: http://www.ali-mahmed.com/2009/02/blog-post_15.html
২. বাতাসের ব্যবসা: http://www.ali-mahmed.com/2009/06/blog-post.html
৩. পাবলিক টয়লেট ৪৭টি: http://tinyurl.com/4t667r9
৪. নরমূত্র এবং মুত্র বিসর্জন: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_09.html
বিভাগ
অন্যায়
Monday, February 14, 2011
ত্রিকালদর্শী মন্ত্রী বাহাদুরগণ!
"বানিজ্যমন্ত্রী বলছেন, এতো কম দামে পৃথিবীর কোন দেশে পন্য বিক্রি হয় না। দেশে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আছে দাবি করে তিনি বলেছেন, "দেশে কেউ না খেয়ে মরছে না, গ্রামে গঞ্জে কোনো হাহাকার নেই।" (বিডিনিউজ) [১]।
আমাদের মন্ত্রীবাহাদুররা সব জানেন তাই এই প্রশ্ন করব না, বানিজ্যমন্ত্রী মহোদয়, গতকাল পর্যন্ত এই পৃথিবী নামের গ্রহে কয়টা দেশ আছে, এটা কী আপনি জানেন? জানেন নিশ্চয়ই, না! কিন্তু আমার স্বল্প জ্ঞান ভান্ডারে খানিকটা জ্ঞান যোগ করার সু-ইচ্ছায় এটা অবশ্যই জানতে চাইব, মন্ত্রী মহোদয় কী নিশ্চিত এই গ্রহের মধ্যে সবচেয়ে কম মূল্যে আমাদের দেশেই পণ্য বিক্রি হয়? আমি জানতে চাই, এই তথ্য-উপাত্ত বানিজ্যমন্ত্রী কোথায় পেলেন? আমি এটাও জানতে চাইব, দ্বিতীয়স্থানে ঠিক কোন দেশটা আছে? এটাও আমার জানা প্রয়োজন দায়িত্বশীল কোন সংস্থা থেকে তিনি এই উপাত্ত নিয়েছেন?
মিডিয়ার মন্ত্রীর দেয়া তথ্যপ্রাপ্তির কোন নমুনা তো দেখতে পাচ্ছি না! আমাদের মিডিয়ার লোকজনরা বাদাম খাওয়ায় ব্যস্ত থাকেন বলে মন্ত্রী-শান্ত্রীদের কাছ থেকে এই সব কাজের কথা জেনে নিতে সময় পান না! বেচারা মিডিয়া!
"Nearly half of Bangladesh's 133 million people live below the national poverty level of $1 per day. "[২]।
"মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক গড়ে দৈনিক মাত্র ১ মার্কিন ডলার আয় করে (২০০৫)" [৩]।
আচ্ছা, বানিজ্যমন্ত্রী বলতে চান কী! যে দেশের লোকজনের মাথাপিছু আয় ১ ডলার সেই দেশে চাউলের কেজি ৪০/৪৫ টাকা, সয়াবিন তেল ১০০/১১০ টাকা! কেন? সব বাদ দিয়ে তাঁর এটা নিয়ে মাথা ঘামালে ভাল ছিল। ওয়েল, তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, আমাদের দেশে পণ্য খুব শস্তা, তো? মন্ত্রীর কী ধারণা, উন্নত দেশগুলোর মত আমরা ঘন্টা হিসাবে পয়সা আয় করি, নাকি? এই দেশের অধিকাংশ মানুষদের গড়ে প্রতিদিন ১০০ টাকা আয় করতেই প্রাণান্তকর অবস্থা হয় আর এদিকে তিনি এসেছেন আমাদেরকে নসীহত করতে, কেমন শস্তায় আমরা জিনিসপত্র পাচ্ছি!
মন্ত্রী বাহাদুর আরও বলেছেন, "গ্রামে গঞ্জে কোনো হাহাকার নেই..."।
তাই বুঝি? আ-হ-হা, গ্রাম-গঞ্জ? আপনি গ্রাম-গঞ্জ চেনেন বলছেন? ভাল-ভাল! অপেক্ষায় আছি ধানগাছের লাকড়িগুলো দিয়ে যেদিন আমরা আসবাবপত্র বানানো শুরু করব সেদিন আর আমাদের দুঃখ থাকবে না।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ যে টাকা আয় করে সেই টাকা দিয়ে ২ কেজি চাল কিনতেই দফারফা! এই চাউল রান্না না-করে চিবিয়ে খাওয়ার কোন উপায় যদি মন্ত্রী বাহাদুরেরা বাতলে দিলে আমরা খানিকটা আরামের শ্বাস ফেলতাম।
ভাগ্যিস, সরকার খোলাবাজারে ২৪/ ২৫ টাকায় চাল দিচ্ছে। একেকজন ডিলার প্রতিদিন পান ১ হাজার কেজি চাল। প্রতিজনকে ৫ কেজি করে দেয়ার নিয়ম, এই পরিমাণ চাল দিয়ে ২০০ মানুষকে অনায়াসে দেয়া সম্ভব কিন্তু অধিকাংশ চালই ডিলার সাহেবরা গাপ করে দেন। বাইরে মানে কালোবাজারে বিক্রি করে দেন। হায়, আমাদের ধার্মিক, নীতিবান লোকজনেরা!
ক্রমশ খোলাবাজারের এই চাল নেয়ার জন্য দীর্ঘ হচ্ছে মানুষের সারি। এই সব দোকানের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় আমি চোখ নীচু করে রাখি কারণ এমন অনেককেই এই সারিতে দাঁড়ানো দেখি, যারা চান না আমি তাঁদের চোখে চোখ রাখি। মধ্যবিত্তের অনেক কষ্ট! একজন কৃষকের রেশনের দোকানে থলে হাতে দাঁড়াবার যে কষ্ট, এই কষ্ট স্পর্শ করার ক্ষমতা আমার কই!
এঁদের ক্ষুধা, একপেট আগুন নিয়ে ফট করে বলে দেয়া গ্রামে হাহাকার নেই এটা এক ধরনের রসিকতা, কুৎসিত রসিকতা! আহ, মন্ত্রীদের মত হতে পারলে বেশ হতো- লজ্জার মাথা খেয়ে এই দীর্ঘ সারিতে দাঁড়ানো এমন কারও চোখে চোখ পড়লেও সমস্যা ছিল না আর রঙিন চশমা চোখে যা খুশি তা বলে দেয়া যেত...।
সহায়ক সূত্র:
১. বানিজ্যমন্ত্রী, বিডিনিউজ: http://www.bdnews24.com/bangla/details.php?cid=4&id=149835&hb=2
২. usaid: http://www.usaid.gov/policy/budget/cbj2005/ane/bd.html
৩. bn.wikipedia: http://bn.wikipedia.org/wiki/Bangladesh
আমাদের মন্ত্রীবাহাদুররা সব জানেন তাই এই প্রশ্ন করব না, বানিজ্যমন্ত্রী মহোদয়, গতকাল পর্যন্ত এই পৃথিবী নামের গ্রহে কয়টা দেশ আছে, এটা কী আপনি জানেন? জানেন নিশ্চয়ই, না! কিন্তু আমার স্বল্প জ্ঞান ভান্ডারে খানিকটা জ্ঞান যোগ করার সু-ইচ্ছায় এটা অবশ্যই জানতে চাইব, মন্ত্রী মহোদয় কী নিশ্চিত এই গ্রহের মধ্যে সবচেয়ে কম মূল্যে আমাদের দেশেই পণ্য বিক্রি হয়? আমি জানতে চাই, এই তথ্য-উপাত্ত বানিজ্যমন্ত্রী কোথায় পেলেন? আমি এটাও জানতে চাইব, দ্বিতীয়স্থানে ঠিক কোন দেশটা আছে? এটাও আমার জানা প্রয়োজন দায়িত্বশীল কোন সংস্থা থেকে তিনি এই উপাত্ত নিয়েছেন?
মিডিয়ার মন্ত্রীর দেয়া তথ্যপ্রাপ্তির কোন নমুনা তো দেখতে পাচ্ছি না! আমাদের মিডিয়ার লোকজনরা বাদাম খাওয়ায় ব্যস্ত থাকেন বলে মন্ত্রী-শান্ত্রীদের কাছ থেকে এই সব কাজের কথা জেনে নিতে সময় পান না! বেচারা মিডিয়া!
"Nearly half of Bangladesh's 133 million people live below the national poverty level of $1 per day. "[২]।
"মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক গড়ে দৈনিক মাত্র ১ মার্কিন ডলার আয় করে (২০০৫)" [৩]।
আচ্ছা, বানিজ্যমন্ত্রী বলতে চান কী! যে দেশের লোকজনের মাথাপিছু আয় ১ ডলার সেই দেশে চাউলের কেজি ৪০/৪৫ টাকা, সয়াবিন তেল ১০০/১১০ টাকা! কেন? সব বাদ দিয়ে তাঁর এটা নিয়ে মাথা ঘামালে ভাল ছিল। ওয়েল, তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, আমাদের দেশে পণ্য খুব শস্তা, তো? মন্ত্রীর কী ধারণা, উন্নত দেশগুলোর মত আমরা ঘন্টা হিসাবে পয়সা আয় করি, নাকি? এই দেশের অধিকাংশ মানুষদের গড়ে প্রতিদিন ১০০ টাকা আয় করতেই প্রাণান্তকর অবস্থা হয় আর এদিকে তিনি এসেছেন আমাদেরকে নসীহত করতে, কেমন শস্তায় আমরা জিনিসপত্র পাচ্ছি!
মন্ত্রী বাহাদুর আরও বলেছেন, "গ্রামে গঞ্জে কোনো হাহাকার নেই..."।
তাই বুঝি? আ-হ-হা, গ্রাম-গঞ্জ? আপনি গ্রাম-গঞ্জ চেনেন বলছেন? ভাল-ভাল! অপেক্ষায় আছি ধানগাছের লাকড়িগুলো দিয়ে যেদিন আমরা আসবাবপত্র বানানো শুরু করব সেদিন আর আমাদের দুঃখ থাকবে না।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ যে টাকা আয় করে সেই টাকা দিয়ে ২ কেজি চাল কিনতেই দফারফা! এই চাউল রান্না না-করে চিবিয়ে খাওয়ার কোন উপায় যদি মন্ত্রী বাহাদুরেরা বাতলে দিলে আমরা খানিকটা আরামের শ্বাস ফেলতাম।
ভাগ্যিস, সরকার খোলাবাজারে ২৪/ ২৫ টাকায় চাল দিচ্ছে। একেকজন ডিলার প্রতিদিন পান ১ হাজার কেজি চাল। প্রতিজনকে ৫ কেজি করে দেয়ার নিয়ম, এই পরিমাণ চাল দিয়ে ২০০ মানুষকে অনায়াসে দেয়া সম্ভব কিন্তু অধিকাংশ চালই ডিলার সাহেবরা গাপ করে দেন। বাইরে মানে কালোবাজারে বিক্রি করে দেন। হায়, আমাদের ধার্মিক, নীতিবান লোকজনেরা!
ক্রমশ খোলাবাজারের এই চাল নেয়ার জন্য দীর্ঘ হচ্ছে মানুষের সারি। এই সব দোকানের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় আমি চোখ নীচু করে রাখি কারণ এমন অনেককেই এই সারিতে দাঁড়ানো দেখি, যারা চান না আমি তাঁদের চোখে চোখ রাখি। মধ্যবিত্তের অনেক কষ্ট! একজন কৃষকের রেশনের দোকানে থলে হাতে দাঁড়াবার যে কষ্ট, এই কষ্ট স্পর্শ করার ক্ষমতা আমার কই!
এঁদের ক্ষুধা, একপেট আগুন নিয়ে ফট করে বলে দেয়া গ্রামে হাহাকার নেই এটা এক ধরনের রসিকতা, কুৎসিত রসিকতা! আহ, মন্ত্রীদের মত হতে পারলে বেশ হতো- লজ্জার মাথা খেয়ে এই দীর্ঘ সারিতে দাঁড়ানো এমন কারও চোখে চোখ পড়লেও সমস্যা ছিল না আর রঙিন চশমা চোখে যা খুশি তা বলে দেয়া যেত...।
সহায়ক সূত্র:
১. বানিজ্যমন্ত্রী, বিডিনিউজ: http://www.bdnews24.com/bangla/details.php?cid=4&id=149835&hb=2
২. usaid: http://www.usaid.gov/policy/budget/cbj2005/ane/bd.html
৩. bn.wikipedia: http://bn.wikipedia.org/wiki/Bangladesh
বিভাগ
অশ্লীলতা
Saturday, February 12, 2011
সবই পেশা কিন্তু...
আমাদের দেশে মোটা দাগে দুই ধরনের পেশা আছে, বৈধ এবং অবৈধ। দেশে আমাদের পছন্দসই পেশাগুলোর মধ্যে চুরি-ডাকাতি-ঘুষ এই সব আমাদের পছন্দের শীর্ষে থাকলেও আইনত তা অবৈধ। কসাই, রুপোপজীবিনী-বেশ্যা এদেরকে কেউ সরু চোখে দেখলেও পেশাগুলো কিন্তু বৈধ। ফলে আমাদের দেশের সরকার একজন বেশ্যা এবং অন্য যে-কোনও পেশার লোকজনকে একই অধিকার দিতে বাধ্য।
লেখক-টেখকরা নাকি আমাদেরকে আলো দেখান, আমরা আলোকিত হই। বলা হয়ে থাকে এঁরা জ্ঞানের বৃত্ত থেকে এক পা এগিয়ে থাকেন। সত্য-মিথ্যা জানি না। যাচাই করার মত বুদ্ধি, ক্ষমতা আমার নাই, থাকলে ভাল হত!
সেই আলোকিত মানুষটা যখন হাহাকার করা ভঙ্গিতে নিজেকে বিক্রি করার চেষ্টা করেন তখন বৈধ একটা পেশার বেশ্যার সঙ্গে মূলত তাঁর কোনো পার্থক্য থাকে না! একজন বেশ্যা যেমন তাঁর শরীর বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন কায়দা-কানুন করেন তেমনি অনেক লেখকের ভঙ্গিটাও দাঁড়ায় অনেকটা তেমন।
মোড়ক উম্মোচনের নামে পেটের কাছে বই ধরে যখন একজন লেখক পোজ দেন তখন সেই কুৎসিত দৃশ্য দেখে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি। হড়হড় করে বমি করে দেয়াটা আটকানো কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ চোখ খুললে, বইটা সরালেই দেখব ওই লেখকের পেটটা কাঁচের- লেখকের এক পেট আবর্জনা দৃশ্যমান হবে, এই ভয়ে!
আমাদের দেশটা বড়ো বিচিত্র। এখানে কাজ-কর্ম সব ভূতের উল্টো পা'র মত! যারা এই সমাজকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন তাঁদেরকেই রাখা হয় কোনঠাসা করে। এই দেশে একজন ইমাম-ধর্মীয় শিক্ষকের পেছনে সবাই নামাজ পড়বে কিন্তু অধিকাংশ ইমামকে যে বেতন দেয়া হবে ওই বেতনে কোনো মেথরও কাজ করতে রাজি হবেন না। ওই ইমাম ভুল ফতোয়া দেবে না তো কে দেবে? আমার মৃত্যুর পর আমার পরিবারের লোকজন কোনও ইমামের হাতে ২০০-৩০০ টাকা ধরিয়ে দিলে ইমাম সাহেবের চোখ দিয়ে দমকলের মত যে পানি বেরুবে এতে অন্তত আমার কোনো সন্দেহ নাই!
এই দেশে লেখালেখি করে খুব অল্প মানুষই হাওয়া না-খেয়ে ভাত-রুটি খেতে পারেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক লেখক ব্যতীত সবাই বই ছাপান নিজের পয়সায়। এটা যে কী লজ্জার তা এই সব নির্বোধ লেখকদের কে বোঝাবে! এরমধ্যে থেকে আবার খানিকটা বইয়ের কাটতি আছে এমন অনেকের বই প্রকাশক নিজের পয়সায় প্রকাশ করেন ঠিকই কিন্তু লেখককে লেখার সম্মানী দেন না!
আহা, তবুও লেখক বেচারা লেংটি পরে উবু হয়ে বছরের-পর-বছর লিখে যান। বেচারা লেখক, তিনি যে সমাজ উদ্ধার করার ব্রত নিয়ে এসেছেন। লেখক নামের একজন স্বপ্নবাজ সবাইকে স্বপ্ন দেখিয়ে বেড়াবেন কেবল তাঁর নিজের কোনো স্বপ্ন থাকবে না, থাকতে পারে না। তাঁর ইচ্ছা করবে না চকচকে কাপড় গায়ে দিতে, ভালমন্দ খাবার খেতে। লেখক বেচারা কপকপ করে চাঁদের আলো খেয়ে চাঁদের আলোয় 'ছিনান' করে পারলে লেংটিটাও খুলে ফেলবেন।
একজন স্বপ্নবাজকে বাঁচিয়ে রাখার মত যোগ্যতা আমাদের দেশ-সমাজের এখনও হয়ে উঠেনি। দেশ বেচারা, বেচারা দেশ!
...
অন্য প্রসঙ্গ, বইমেলা [১]। বইমেলা এখন হয়ে গেছে কর্পোরেট একটা মেলা। রাজনীতির মধ্যে যেমন পলিটিক্স ঢুকে গেছে তেমনি বইমেলা আর ঠাঠারি বাজারের মধ্যে তফাতটাও কমে গেছে! বইমেলার শুরুটাই হয় বেসুরো।
আমার সাফ কথা, বইমেলা উদ্বোধন করবেন একজন লেখক, কোনও রাজনীতিবিদ না [২]। একজন প্রধানমন্ত্রী যখন বইমেলা উদ্বোধন করেন এবং বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক বলেন, তিনি একজন বিশিষ্ট লেখক হিসাবে মেলা উদ্বোধন করছেন তখন মহাপরিচালক মানুষটাকে আমার বড়ো খেলো মনে হয়।
একজন হুমায়ূন আহমেদ প্রচুর ছেলে-মেয়েকে হলুদ কাপড় পরিয়ে মেলায় তান্ডব নৃত্য করান তখন ওই মানুষটাকে আমার স্রেফ একজন চানাচুরওয়ালা মনে হয়। যে চানাচুরওয়ালা ক্লাউনের টুপি পরে সুর করে বলেন, লাগে চা-ন্না- চ্চু-র-র-র! জানি-জানি, অনেকে বলবেন, এটা তো হুমায়ূন আহমেদ করেন না, করেন প্রকাশক। এতে যে হুমায়ূন আহমেদের গা দোলানো সায় আছে এটার জন্য গবেষণা করার প্রয়োজন হয় না, অভিসন্দর্ভ জমা দেওয়ার জন্যও ছুট লাগাতে হয় না।
এমনিতে অবশ্য বইমেলায় মানবস্রোত দেখে আমি চেপে রাখা শ্বাস ছেড়ে বলি, হুজুগে বাংগাল [৩]! বইমেলায় অধিকাংশ মানুষ কেন আসেন কে জানে!
বইমেলা আসলেই আমাদের প্রকাশক মহোদয়গণ মুক্তকচ্ছ হয়ে বই প্রকাশ করা শুরু করেন। ভাল! কীভাবে করেন তা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকাংশ নব্য লেখক নামের দুপেয়েদের কাছ থেকে হয় গুণে গুণে পুরো টাকাই নেন। কখনও অনেক বেশি টাকা হাতিয়ে নেন বিশেষ করে প্রবাসীদের কাছ থেকে। আবার কাউকে এক-দেড়শ বই গছিয়ে দিয়ে।
বেচারা প্রকাশকদের জন্য আমার চোখে জল চলে আসে। এদের নাকি পোষায় না। না-পোষালে বইয়ের ব্যবসা কেন বাওয়া বাঁদর নাচাবার ব্যবসা করলে আটকাচ্ছে কে! বইমেলায় এই যে কোটি-কোটি টাকার বই বিক্রি হচ্ছে অল্প কিছু লেখক ব্যতীত আর কাউকে তো রয়্যালটির টাকা দিতে হচ্ছে না তাহলে এই কোটি-কোটি টাকা যাচ্ছে কোন চুলোয়, বাপু হে!
ক-দিন আগে এক পত্রিকায় বেশ কিছু প্রকাশকদের বাণী পড়ছিলাম, অনেক কায়দা-কানুন করে এরা বাণীতে বলছিলেন, মননশীন-রেঁনেসা-প্রগতিশীল-আমাদের দায়বদ্ধতা...। বাণী-টানী ছাপিয়ে আমার মাথায় যে ভাবনাটা ঘুরপাক খাচ্ছিল, প্রকাশক নামের এই অল্প কিছু মানুষই ঠিক করে দেবেন, কে লেখক, কে লেখক নন- দুধের দুধ পানির পানি! অথচ অধিকাংশ প্রকাশকই লেখকের পান্ডুলিপি পড়ে দেখেন কিনা এতে আমার ঘোর সন্দেহ আছে। টাকা পেলে লেখার মান কোন বিষয় না! অধিকাংশ বই ছাপা হয় সম্পাদনা না করে।
যাই হোক, একসময় বইমেলায় যেতে না-পারলে অস্থির অস্থির লাগত, এখন এই অস্থিরতার অবসান হয়েছে। গতবছর বইমেলায় যাওয়া হয়েছিল বিশেষ একটা মানুষের কারণে, অপার সৌভাগ্য, আমি ব্লাডি সিভিলিয়ান তখন মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছিলাম [৪]। এবার আর যাওয়ার কোন গোপন ইচ্ছা নাই।
ভাগ্যিস, এইবার বইমেলায় অন্যান্য বছরের মত আনিসুল হকের নির্লজ্জ বিজ্ঞাপন চোখে পড়েনি, অন্তত এখন পর্যন্ত। আমার আন্তরিক সাধুবাদ আনিসুল হককে। মানুষটা এতোদিনে মানুষ হলেন।
কিন্তু আনিসুল হকের এমন বিজ্ঞাপন না-থাকলে কী হবে তার অনুসারীরা রয়ে গেছেন ঠিকই। এই সব বিজ্ঞাপন যে এই লেখক নামের দুপেয়েরাই দেন এটা বোঝার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন হয় না [৫] । হুশ-হুশ, লেখকের ওড়না গলার একই ছবিসহ আট-দশটা প্রকাশন সংস্থা একই পত্রিকায় একই দিনে বিজ্ঞাপন দেবে এটা জজ মিয়ার গল্পের মতই আষাঢ়ে! আবার এই লেখকরাই পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন, প্রথম মুদ্রণ শ্যাষ...। হুমায়ূন আহমেদের একটা বইয়ের বিজ্ঞাপন চলে গিয়েছিল, দ্বিতীয় মুদ্রণ নিঃশেষিত অথচ তখন পর্যন্ত ওই বই প্রকাশিতই হয়নি! সত্যিই একজন লেখক হতে অনেক মগজের অপচয় হয়!
এই সব লেখকরা কেন যে বুঝতে চান না, এ বড়ো অমর্যাদার! প্রত্যেকটা পেশায় যেমন পার্থক্য আছে তেমনি পার্থক্য আছে ভঙ্গি, উপস্থাপনায়ও। খানিকটা পার্থক্য না থাকলে ভাল দেখায় না। এ সত্য পেটের দায়ে বিশেষ পেশার কেউ নগ্ন হন রাতের আধারে কিন্তু তাই বলে ঝকঝকে দিনের আলোয় কাউকে নগ্ন দেখতে ভাল লাগে না।
*ছবি ঋণ: কালের কন্ঠ
সহায়ক সূত্র:
১. বইমেলা...: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_18.html
২. বইমেলা উদ্বোধন: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_30.html
৩. হুজুগে বাংগাল: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_25.html
৪. আমি ব্লাডি সিভিলিয়ান: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_15.html
৫. বইমেলায় বিজ্ঞাপন: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_07.html
লেখক-টেখকরা নাকি আমাদেরকে আলো দেখান, আমরা আলোকিত হই। বলা হয়ে থাকে এঁরা জ্ঞানের বৃত্ত থেকে এক পা এগিয়ে থাকেন। সত্য-মিথ্যা জানি না। যাচাই করার মত বুদ্ধি, ক্ষমতা আমার নাই, থাকলে ভাল হত!
সেই আলোকিত মানুষটা যখন হাহাকার করা ভঙ্গিতে নিজেকে বিক্রি করার চেষ্টা করেন তখন বৈধ একটা পেশার বেশ্যার সঙ্গে মূলত তাঁর কোনো পার্থক্য থাকে না! একজন বেশ্যা যেমন তাঁর শরীর বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন কায়দা-কানুন করেন তেমনি অনেক লেখকের ভঙ্গিটাও দাঁড়ায় অনেকটা তেমন।
মোড়ক উম্মোচনের নামে পেটের কাছে বই ধরে যখন একজন লেখক পোজ দেন তখন সেই কুৎসিত দৃশ্য দেখে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি। হড়হড় করে বমি করে দেয়াটা আটকানো কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ চোখ খুললে, বইটা সরালেই দেখব ওই লেখকের পেটটা কাঁচের- লেখকের এক পেট আবর্জনা দৃশ্যমান হবে, এই ভয়ে!
আমাদের দেশটা বড়ো বিচিত্র। এখানে কাজ-কর্ম সব ভূতের উল্টো পা'র মত! যারা এই সমাজকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন তাঁদেরকেই রাখা হয় কোনঠাসা করে। এই দেশে একজন ইমাম-ধর্মীয় শিক্ষকের পেছনে সবাই নামাজ পড়বে কিন্তু অধিকাংশ ইমামকে যে বেতন দেয়া হবে ওই বেতনে কোনো মেথরও কাজ করতে রাজি হবেন না। ওই ইমাম ভুল ফতোয়া দেবে না তো কে দেবে? আমার মৃত্যুর পর আমার পরিবারের লোকজন কোনও ইমামের হাতে ২০০-৩০০ টাকা ধরিয়ে দিলে ইমাম সাহেবের চোখ দিয়ে দমকলের মত যে পানি বেরুবে এতে অন্তত আমার কোনো সন্দেহ নাই!
এই দেশে লেখালেখি করে খুব অল্প মানুষই হাওয়া না-খেয়ে ভাত-রুটি খেতে পারেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক লেখক ব্যতীত সবাই বই ছাপান নিজের পয়সায়। এটা যে কী লজ্জার তা এই সব নির্বোধ লেখকদের কে বোঝাবে! এরমধ্যে থেকে আবার খানিকটা বইয়ের কাটতি আছে এমন অনেকের বই প্রকাশক নিজের পয়সায় প্রকাশ করেন ঠিকই কিন্তু লেখককে লেখার সম্মানী দেন না!
আহা, তবুও লেখক বেচারা লেংটি পরে উবু হয়ে বছরের-পর-বছর লিখে যান। বেচারা লেখক, তিনি যে সমাজ উদ্ধার করার ব্রত নিয়ে এসেছেন। লেখক নামের একজন স্বপ্নবাজ সবাইকে স্বপ্ন দেখিয়ে বেড়াবেন কেবল তাঁর নিজের কোনো স্বপ্ন থাকবে না, থাকতে পারে না। তাঁর ইচ্ছা করবে না চকচকে কাপড় গায়ে দিতে, ভালমন্দ খাবার খেতে। লেখক বেচারা কপকপ করে চাঁদের আলো খেয়ে চাঁদের আলোয় 'ছিনান' করে পারলে লেংটিটাও খুলে ফেলবেন।
একজন স্বপ্নবাজকে বাঁচিয়ে রাখার মত যোগ্যতা আমাদের দেশ-সমাজের এখনও হয়ে উঠেনি। দেশ বেচারা, বেচারা দেশ!
...
অন্য প্রসঙ্গ, বইমেলা [১]। বইমেলা এখন হয়ে গেছে কর্পোরেট একটা মেলা। রাজনীতির মধ্যে যেমন পলিটিক্স ঢুকে গেছে তেমনি বইমেলা আর ঠাঠারি বাজারের মধ্যে তফাতটাও কমে গেছে! বইমেলার শুরুটাই হয় বেসুরো।
আমার সাফ কথা, বইমেলা উদ্বোধন করবেন একজন লেখক, কোনও রাজনীতিবিদ না [২]। একজন প্রধানমন্ত্রী যখন বইমেলা উদ্বোধন করেন এবং বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক বলেন, তিনি একজন বিশিষ্ট লেখক হিসাবে মেলা উদ্বোধন করছেন তখন মহাপরিচালক মানুষটাকে আমার বড়ো খেলো মনে হয়।
একজন হুমায়ূন আহমেদ প্রচুর ছেলে-মেয়েকে হলুদ কাপড় পরিয়ে মেলায় তান্ডব নৃত্য করান তখন ওই মানুষটাকে আমার স্রেফ একজন চানাচুরওয়ালা মনে হয়। যে চানাচুরওয়ালা ক্লাউনের টুপি পরে সুর করে বলেন, লাগে চা-ন্না- চ্চু-র-র-র! জানি-জানি, অনেকে বলবেন, এটা তো হুমায়ূন আহমেদ করেন না, করেন প্রকাশক। এতে যে হুমায়ূন আহমেদের গা দোলানো সায় আছে এটার জন্য গবেষণা করার প্রয়োজন হয় না, অভিসন্দর্ভ জমা দেওয়ার জন্যও ছুট লাগাতে হয় না।
এমনিতে অবশ্য বইমেলায় মানবস্রোত দেখে আমি চেপে রাখা শ্বাস ছেড়ে বলি, হুজুগে বাংগাল [৩]! বইমেলায় অধিকাংশ মানুষ কেন আসেন কে জানে!
বইমেলা আসলেই আমাদের প্রকাশক মহোদয়গণ মুক্তকচ্ছ হয়ে বই প্রকাশ করা শুরু করেন। ভাল! কীভাবে করেন তা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকাংশ নব্য লেখক নামের দুপেয়েদের কাছ থেকে হয় গুণে গুণে পুরো টাকাই নেন। কখনও অনেক বেশি টাকা হাতিয়ে নেন বিশেষ করে প্রবাসীদের কাছ থেকে। আবার কাউকে এক-দেড়শ বই গছিয়ে দিয়ে।
বেচারা প্রকাশকদের জন্য আমার চোখে জল চলে আসে। এদের নাকি পোষায় না। না-পোষালে বইয়ের ব্যবসা কেন বাওয়া বাঁদর নাচাবার ব্যবসা করলে আটকাচ্ছে কে! বইমেলায় এই যে কোটি-কোটি টাকার বই বিক্রি হচ্ছে অল্প কিছু লেখক ব্যতীত আর কাউকে তো রয়্যালটির টাকা দিতে হচ্ছে না তাহলে এই কোটি-কোটি টাকা যাচ্ছে কোন চুলোয়, বাপু হে!
ক-দিন আগে এক পত্রিকায় বেশ কিছু প্রকাশকদের বাণী পড়ছিলাম, অনেক কায়দা-কানুন করে এরা বাণীতে বলছিলেন, মননশীন-রেঁনেসা-প্রগতিশীল-আমাদের দায়বদ্ধতা...। বাণী-টানী ছাপিয়ে আমার মাথায় যে ভাবনাটা ঘুরপাক খাচ্ছিল, প্রকাশক নামের এই অল্প কিছু মানুষই ঠিক করে দেবেন, কে লেখক, কে লেখক নন- দুধের দুধ পানির পানি! অথচ অধিকাংশ প্রকাশকই লেখকের পান্ডুলিপি পড়ে দেখেন কিনা এতে আমার ঘোর সন্দেহ আছে। টাকা পেলে লেখার মান কোন বিষয় না! অধিকাংশ বই ছাপা হয় সম্পাদনা না করে।
যাই হোক, একসময় বইমেলায় যেতে না-পারলে অস্থির অস্থির লাগত, এখন এই অস্থিরতার অবসান হয়েছে। গতবছর বইমেলায় যাওয়া হয়েছিল বিশেষ একটা মানুষের কারণে, অপার সৌভাগ্য, আমি ব্লাডি সিভিলিয়ান তখন মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছিলাম [৪]। এবার আর যাওয়ার কোন গোপন ইচ্ছা নাই।
ভাগ্যিস, এইবার বইমেলায় অন্যান্য বছরের মত আনিসুল হকের নির্লজ্জ বিজ্ঞাপন চোখে পড়েনি, অন্তত এখন পর্যন্ত। আমার আন্তরিক সাধুবাদ আনিসুল হককে। মানুষটা এতোদিনে মানুষ হলেন।
কিন্তু আনিসুল হকের এমন বিজ্ঞাপন না-থাকলে কী হবে তার অনুসারীরা রয়ে গেছেন ঠিকই। এই সব বিজ্ঞাপন যে এই লেখক নামের দুপেয়েরাই দেন এটা বোঝার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন হয় না [৫] । হুশ-হুশ, লেখকের ওড়না গলার একই ছবিসহ আট-দশটা প্রকাশন সংস্থা একই পত্রিকায় একই দিনে বিজ্ঞাপন দেবে এটা জজ মিয়ার গল্পের মতই আষাঢ়ে! আবার এই লেখকরাই পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন, প্রথম মুদ্রণ শ্যাষ...। হুমায়ূন আহমেদের একটা বইয়ের বিজ্ঞাপন চলে গিয়েছিল, দ্বিতীয় মুদ্রণ নিঃশেষিত অথচ তখন পর্যন্ত ওই বই প্রকাশিতই হয়নি! সত্যিই একজন লেখক হতে অনেক মগজের অপচয় হয়!
এই সব লেখকরা কেন যে বুঝতে চান না, এ বড়ো অমর্যাদার! প্রত্যেকটা পেশায় যেমন পার্থক্য আছে তেমনি পার্থক্য আছে ভঙ্গি, উপস্থাপনায়ও। খানিকটা পার্থক্য না থাকলে ভাল দেখায় না। এ সত্য পেটের দায়ে বিশেষ পেশার কেউ নগ্ন হন রাতের আধারে কিন্তু তাই বলে ঝকঝকে দিনের আলোয় কাউকে নগ্ন দেখতে ভাল লাগে না।
*ছবি ঋণ: কালের কন্ঠ
সহায়ক সূত্র:
১. বইমেলা...: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_18.html
২. বইমেলা উদ্বোধন: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_30.html
৩. হুজুগে বাংগাল: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_25.html
৪. আমি ব্লাডি সিভিলিয়ান: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_15.html
৫. বইমেলায় বিজ্ঞাপন: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_07.html
বিভাগ
বইমেলা
Thursday, February 10, 2011
নিজ হাতে হত্যা করা এবং হত্যার সিদ্ধান্ত দেয়া...
গোল্ডা মায়ারের চমৎকার একটা কথা আছে, "নিজ হাতে কাউকে হত্যা করা এবং হত্যা করার সিদ্ধান্ত দেয়ার মধ্যে মূলত কোন পার্থক্য নাই।"
এর সঙ্গে আমি যোগ করি, হত্যা করা এবং হত্যা করতে প্ররোচিত করা, হত্যাকান্ড গোপন করার চেষ্টাও হত্যাসম।
হেনাকে নিয়ে প্রথম যখন লেখা শুরু করি [১] তখন আমার তেমন ধারণা ছিল না এটার পেছনে এতো নাটের গুরুরা জড়িত! পরে দেখলাম, কেবল পুলিশ-মিডিয়াই হেনার প্রতি অন্যায়ই করেনি এর সঙ্গে মিডিয়ার কিছু লোকজনও অন্যভাবেও জড়িত [২]। আর কিছু না স্রেফ টাকা!
পুলিশের কথা বলে আর লাভ নাই...! এই দেশের পুলিশ পারে না এমন কোন কাজ নেই [৩]! এরা যদি বলে এখন দিন তো দিন, এরা যদি বলে এখন রাত তাহলে রাত। কোন পুলিশের লোক আমার পাশ দিয়ে গেলে আমি ভয়ে শ্বাস চেপে রাখি! খোদা-না-খাস্তা জোরে শ্বাস ফেলে আবার কোন বিপদে পড়ি!
আজ উচ্চ আদালত অসাধারণ একটা কাজ করেছেন। হেনার হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অধিকাংশকেই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। আদালতের প্রতি আমি নতজানু হই কিন্তু...। আইনের মারপ্যাঁচ আমি ভাল বুঝি না কিন্তু অতীতে আমরা দেখেছি বড়-বড় অপরাধের কারণেও অনেককে আদালত মৃদু তিরস্কার করে ছেড়ে দিয়েছেন। গানপাউডার দিয়ে যে বাসে আগুন লাগিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়েছে, যে পুলিশ কর্মকর্তা সত্য গোপন করে মামলাটি অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন তাকে আদালত তিরস্কার করে বিদায় দিয়েছেন।
কেন, মাননীয় আদালত, কেন? আরেকটা অন্যায় করার জন্য? আদালত, বলুন তো, এই পোড়া দেশে ক-জন পুলিশ ম্যানের ফাঁসি হয়েছে? ইয়াসমিন হত্যায় সামান্য কনস্টেবল, ব্যস! পদস্থ কর্মকর্তারা রয়ে গেলেন ধরাছোঁয়ার আড়ালে। মানে কী তাহলে, আমাদের দেশের পুলিশরা তাহলে তেমন অন্যায় করছে না? এটা যদি সত্য হয় তাহলে আমি হেমলকের পেয়ালায় চুমুক দেব, কসম। যেমনটা এখনও রয়ে গেলেন কিছু মিডিয়ার লোকজন, যারা টাকা আগাম নিয়েছিলেন ঘটনার তথ্য অন্যখানে প্রবাহিত করে দেবেন বলে!
বেশ কিছু মিডিয়া যখন হেনার প্রতি পদে পদে অন্যায় করছে, দ্বিতীয়বার খুন করছে ঠিক তখনি হেনার বাবা ওই সব মিডিয়ার মুখে ঠাস করে চড় মারেন। আদালতে দেয়া হেনার বাবার বক্তব্য আমরা যেমনটা জানতে পারি। প্রথম আলোর উদ্বৃতি দিয়ে ডয়চে ভেলে [৫]:
"হেনার বাবা দরবেশ খাঁ ঢাকার হাইকোর্টে উপস্থিত হন বৃহস্পতিবার। দৈনিক প্রথম আলো আদালতে দেওয়া হেনার বাবার বক্তব্য প্রকাশ করেছে ঠিক এভাবে, 'আমি থানায় বলেছি আমার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে'। তবে পুলিশ এই ধর্ষণের বিষয়টি এজাহারে উল্লেখ করেনি। দরবেশ খাঁ লেখাপড়া জানেন না। তাঁকে এজাহার পড়ে শোনায়নি পুলিশের উপপরিদর্শক৷ তবে তিনি সেই এজাহারে টিপসই দিয়েছিলেন। এই বক্তব্য শোনার পর আদালত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের দরবেশ খাঁ বলেন, 'মামলা দায়েরের সময় আমি ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ করলেও পুলিশ তা লেখেনি'।''
আজ বিডিনিউজ [৪] জানাচ্ছে, "প্রথম ময়নাতদন্তে হেনার দেহে নির্যাতনের কোনো চিহ্ন না পাওয়ার কথা বলা হলে সোমবার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের বেঞ্চ নতুন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয়। ঢাকায় নতুন ময়নাতদন্তে নির্যাতনের প্রমাণ মেলে। দুই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে অমিল থাকায় বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি করতে বলা হয়েছে।...।"
এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িত ডাক্তারদের কেন ডাক্তারি সনদ কেড়ে নেয়া হবে না? হা ইশ্বর, আমাদের দেশে মাত্র ২২০০ টাকার বিনিময়ে একজন ডাক্তার ধর্ষিতার ধর্ষণের রিপোর্ট বদলে দেন [৬]।
বিডিনিউজ আরও জানাচ্ছে, "পুলিশ বিভাগের প্রতিও বেশ কয়েকটি নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হেনার সুরতহাল প্রতিবেদন যিনি তৈরি করেছেন, সেই উপপরিদর্শক আসলাম এবং এজাহার নথিভুক্তকারী উপপরিদর্শক মির্জা একে আজাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) বলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা ১৫ দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে হবে।"
এই পুলিশ কর্মকর্তাদের চাকুরিতে থাকার কী আবশ্যকতা আছে? আমাদের ট্যাক্সের টাকায় কেন এদেরকে লালন করা হবে? মাননীয় আদালত, আমরা বড়ো আশা নিয়ে আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছি।
*আইনের হাত অনেক লম্বা কিন্তু এই হাতও অনেকের নাগাল পায় না। এখনও হেনার হত্যায় জড়িত যারা এই নাগালের বাইরে আছেন তাদের চোখে চোখ রেখে বলি, এখন হেনার বাবা যেমন ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আগামীতে ঠিক এমন এক দৃষ্টিতে আপনাদেরকেও দেখব আশা রাখি। এবং তখন আপনাদের সন্তানদের জন্যও আমি কলম তুলে নেব, ইনশাল্লাহ।
সহায়ক সূত্র:
১. হেনা, এক: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_6336.html
২. হেনা, দুই: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_06.html
৩. পুলিশ...: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_1998.html
৪. দুই ময়নাতদন্তে অমিল, বিডিনিউজ: http://bdnews24.com/bangla/details.php?cid=3&id=149634&hb=1
৫. ডয়চে ভেলে: http://www.dw-world.de/dw/article/0,,14835870,00.html
৬. ডাক্তার...: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_24.html
... ... ...
একজন দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যে বিষয়ে, ডাক্তার এবং পুলিশকে কেন আদালত ছেড়ে দিয়েছেন, কেন তাদের রিমান্ডে নেয়া হলো না?
যথার্থ প্রশ্ন কিন্তু আদালতের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আইনের বাইরে আদালতের যাওয়ার কোন সুযোগ নেই এবং আমাদের অধিকাংশ আইনই ব্রিটিশদের করা। কেউ কী বিশ্বাস করবেন, ৩৫০০ কোটি টাকা ট্যাক্স দেয় এমন একটি বহুজাতিক কোম্পানিকে আদালত কঠিন একটা অপরাধের জন্য জরিমানা করেছেন মাত্র ২০০ টাকা! ব্রিটিশ আমলের ২০০ টাকা এবং ২০১১ সালের ২০০ টাকা যে এক না এটা আদালতের বোঝার কোন সুযোগ নেই কারণ আইনে তেমনটাই বলা আছে। আমাদের দূভার্গ্য, এখনও এই হাস্যকর আইনগুলো পরিবর্তনের তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পরিতাপের সঙ্গে বলতেই হয়, যারা আইনপ্রণেতা তাঁরা গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়ান!
এই যে রিপোর্টটি এটা ৬/ ৭ বছরের একটি ধর্ষিতা শিশুর। মাত্র ২২০০ টাকার বিনিময়ে ডাক্তার এই রিপোর্টটা বদলে দিয়েছিলেন। এই ডাক্তারের কেশও আইন স্পর্শ করতে পারেনি! এমন করেই এই সব ডাক্তার নামের নরপশুরা আইনের আওতার বাইরে থেকে যান। কিন্তু এইবার আদালত এদেরকে জনসমক্ষে নগ্ন করে ছেড়ে দিয়েছেন। ওখানে উপস্থিত ছিলেন হাইকার্টের এমন একজন ল-অফিসারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। পুলিশের লোক এবং চিকিৎসকরা আদালতের তোপের মুখে পড়েন। এরা কাঁপছিলেন বেত্রাহত কুকুরের মত! দেয়ার মত কোন উত্তর এদের ছিল না। কালের কন্ঠ থেকে এর খানিকটা জানা যাচ্ছে:
"শরীয়তপুরের সিভিল সার্জনের কাছে আদালত জানতে চান। জবাবে সিভির সার্জন দুটি রিপোর্টকেই সত্য বলেন। এ সময় আদালত বলেন, 'দুটি রিপোর্ট সত্য হতে পারে না। সত্য কথা বলুন। নইলে জেলে পাঠানো হবে। নাজিমউদ্দিন রোড বেশি দূরে নয়...'।"
"পুলিশের এসআই আসলামউদ্দিনকে আদালত বলেন, 'কত টাকা খেয়ে এটা করেছেন? সুরতহাল রিপোর্টে প্রেমের কাহিনী আনলেন কেন'?"
আদালত এদের বিরুদ্ধে তদন্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন। আমি শ্বাস চেপে অপেক্ষায় আছি...।
এর সঙ্গে আমি যোগ করি, হত্যা করা এবং হত্যা করতে প্ররোচিত করা, হত্যাকান্ড গোপন করার চেষ্টাও হত্যাসম।
হেনাকে নিয়ে প্রথম যখন লেখা শুরু করি [১] তখন আমার তেমন ধারণা ছিল না এটার পেছনে এতো নাটের গুরুরা জড়িত! পরে দেখলাম, কেবল পুলিশ-মিডিয়াই হেনার প্রতি অন্যায়ই করেনি এর সঙ্গে মিডিয়ার কিছু লোকজনও অন্যভাবেও জড়িত [২]। আর কিছু না স্রেফ টাকা!
পুলিশের কথা বলে আর লাভ নাই...! এই দেশের পুলিশ পারে না এমন কোন কাজ নেই [৩]! এরা যদি বলে এখন দিন তো দিন, এরা যদি বলে এখন রাত তাহলে রাত। কোন পুলিশের লোক আমার পাশ দিয়ে গেলে আমি ভয়ে শ্বাস চেপে রাখি! খোদা-না-খাস্তা জোরে শ্বাস ফেলে আবার কোন বিপদে পড়ি!
আজ উচ্চ আদালত অসাধারণ একটা কাজ করেছেন। হেনার হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অধিকাংশকেই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। আদালতের প্রতি আমি নতজানু হই কিন্তু...। আইনের মারপ্যাঁচ আমি ভাল বুঝি না কিন্তু অতীতে আমরা দেখেছি বড়-বড় অপরাধের কারণেও অনেককে আদালত মৃদু তিরস্কার করে ছেড়ে দিয়েছেন। গানপাউডার দিয়ে যে বাসে আগুন লাগিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়েছে, যে পুলিশ কর্মকর্তা সত্য গোপন করে মামলাটি অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন তাকে আদালত তিরস্কার করে বিদায় দিয়েছেন।
কেন, মাননীয় আদালত, কেন? আরেকটা অন্যায় করার জন্য? আদালত, বলুন তো, এই পোড়া দেশে ক-জন পুলিশ ম্যানের ফাঁসি হয়েছে? ইয়াসমিন হত্যায় সামান্য কনস্টেবল, ব্যস! পদস্থ কর্মকর্তারা রয়ে গেলেন ধরাছোঁয়ার আড়ালে। মানে কী তাহলে, আমাদের দেশের পুলিশরা তাহলে তেমন অন্যায় করছে না? এটা যদি সত্য হয় তাহলে আমি হেমলকের পেয়ালায় চুমুক দেব, কসম। যেমনটা এখনও রয়ে গেলেন কিছু মিডিয়ার লোকজন, যারা টাকা আগাম নিয়েছিলেন ঘটনার তথ্য অন্যখানে প্রবাহিত করে দেবেন বলে!
বেশ কিছু মিডিয়া যখন হেনার প্রতি পদে পদে অন্যায় করছে, দ্বিতীয়বার খুন করছে ঠিক তখনি হেনার বাবা ওই সব মিডিয়ার মুখে ঠাস করে চড় মারেন। আদালতে দেয়া হেনার বাবার বক্তব্য আমরা যেমনটা জানতে পারি। প্রথম আলোর উদ্বৃতি দিয়ে ডয়চে ভেলে [৫]:
"হেনার বাবা দরবেশ খাঁ ঢাকার হাইকোর্টে উপস্থিত হন বৃহস্পতিবার। দৈনিক প্রথম আলো আদালতে দেওয়া হেনার বাবার বক্তব্য প্রকাশ করেছে ঠিক এভাবে, 'আমি থানায় বলেছি আমার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে'। তবে পুলিশ এই ধর্ষণের বিষয়টি এজাহারে উল্লেখ করেনি। দরবেশ খাঁ লেখাপড়া জানেন না। তাঁকে এজাহার পড়ে শোনায়নি পুলিশের উপপরিদর্শক৷ তবে তিনি সেই এজাহারে টিপসই দিয়েছিলেন। এই বক্তব্য শোনার পর আদালত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের দরবেশ খাঁ বলেন, 'মামলা দায়েরের সময় আমি ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ করলেও পুলিশ তা লেখেনি'।''
আজ বিডিনিউজ [৪] জানাচ্ছে, "প্রথম ময়নাতদন্তে হেনার দেহে নির্যাতনের কোনো চিহ্ন না পাওয়ার কথা বলা হলে সোমবার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের বেঞ্চ নতুন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয়। ঢাকায় নতুন ময়নাতদন্তে নির্যাতনের প্রমাণ মেলে। দুই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে অমিল থাকায় বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি করতে বলা হয়েছে।...।"
এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িত ডাক্তারদের কেন ডাক্তারি সনদ কেড়ে নেয়া হবে না? হা ইশ্বর, আমাদের দেশে মাত্র ২২০০ টাকার বিনিময়ে একজন ডাক্তার ধর্ষিতার ধর্ষণের রিপোর্ট বদলে দেন [৬]।
বিডিনিউজ আরও জানাচ্ছে, "পুলিশ বিভাগের প্রতিও বেশ কয়েকটি নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হেনার সুরতহাল প্রতিবেদন যিনি তৈরি করেছেন, সেই উপপরিদর্শক আসলাম এবং এজাহার নথিভুক্তকারী উপপরিদর্শক মির্জা একে আজাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) বলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা ১৫ দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে হবে।"
এই পুলিশ কর্মকর্তাদের চাকুরিতে থাকার কী আবশ্যকতা আছে? আমাদের ট্যাক্সের টাকায় কেন এদেরকে লালন করা হবে? মাননীয় আদালত, আমরা বড়ো আশা নিয়ে আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছি।
হেনার বাবা। ছবি ঋণ: প্রথম আলো |
সহায়ক সূত্র:
১. হেনা, এক: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_6336.html
২. হেনা, দুই: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_06.html
৩. পুলিশ...: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_1998.html
৪. দুই ময়নাতদন্তে অমিল, বিডিনিউজ: http://bdnews24.com/bangla/details.php?cid=3&id=149634&hb=1
৫. ডয়চে ভেলে: http://www.dw-world.de/dw/article/0,,14835870,00.html
৬. ডাক্তার...: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_24.html
... ... ...
যুক্তিসঙ্গত মনে হওয়ায় ধর্ষিতার নাম এবং ডাক্তারের নাম মুছে ফেলা হলো। |
যথার্থ প্রশ্ন কিন্তু আদালতের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আইনের বাইরে আদালতের যাওয়ার কোন সুযোগ নেই এবং আমাদের অধিকাংশ আইনই ব্রিটিশদের করা। কেউ কী বিশ্বাস করবেন, ৩৫০০ কোটি টাকা ট্যাক্স দেয় এমন একটি বহুজাতিক কোম্পানিকে আদালত কঠিন একটা অপরাধের জন্য জরিমানা করেছেন মাত্র ২০০ টাকা! ব্রিটিশ আমলের ২০০ টাকা এবং ২০১১ সালের ২০০ টাকা যে এক না এটা আদালতের বোঝার কোন সুযোগ নেই কারণ আইনে তেমনটাই বলা আছে। আমাদের দূভার্গ্য, এখনও এই হাস্যকর আইনগুলো পরিবর্তনের তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পরিতাপের সঙ্গে বলতেই হয়, যারা আইনপ্রণেতা তাঁরা গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়ান!
এই যে রিপোর্টটি এটা ৬/ ৭ বছরের একটি ধর্ষিতা শিশুর। মাত্র ২২০০ টাকার বিনিময়ে ডাক্তার এই রিপোর্টটা বদলে দিয়েছিলেন। এই ডাক্তারের কেশও আইন স্পর্শ করতে পারেনি! এমন করেই এই সব ডাক্তার নামের নরপশুরা আইনের আওতার বাইরে থেকে যান। কিন্তু এইবার আদালত এদেরকে জনসমক্ষে নগ্ন করে ছেড়ে দিয়েছেন। ওখানে উপস্থিত ছিলেন হাইকার্টের এমন একজন ল-অফিসারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। পুলিশের লোক এবং চিকিৎসকরা আদালতের তোপের মুখে পড়েন। এরা কাঁপছিলেন বেত্রাহত কুকুরের মত! দেয়ার মত কোন উত্তর এদের ছিল না। কালের কন্ঠ থেকে এর খানিকটা জানা যাচ্ছে:
"শরীয়তপুরের সিভিল সার্জনের কাছে আদালত জানতে চান। জবাবে সিভির সার্জন দুটি রিপোর্টকেই সত্য বলেন। এ সময় আদালত বলেন, 'দুটি রিপোর্ট সত্য হতে পারে না। সত্য কথা বলুন। নইলে জেলে পাঠানো হবে। নাজিমউদ্দিন রোড বেশি দূরে নয়...'।"
"পুলিশের এসআই আসলামউদ্দিনকে আদালত বলেন, 'কত টাকা খেয়ে এটা করেছেন? সুরতহাল রিপোর্টে প্রেমের কাহিনী আনলেন কেন'?"
আদালত এদের বিরুদ্ধে তদন্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন। আমি শ্বাস চেপে অপেক্ষায় আছি...।
বিভাগ
ইচ্ছা
Wednesday, February 9, 2011
"নরমূত্র" এবং মুত্র বিসর্জন!
প্রথম আলোতে (৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১) সৈয়দ আবুল মকসুদ 'নরমূত্র' শিরোনামে একটি লেখা লিখেছেন [১]। এমন একটি দৈনিকে কোনও লেখার শিরোনাম 'নরমূত্র' খানিকটা বৈচিত্রপূর্ণ খানিকটা সাহসের কাজও বটে!
আমাদের দেশের তা-বড় তা-বড় কলাম লেখকদের এক হাত-দেড় হাত লম্বা কলামগুলো আমার তেমন পড়া হয় না। লেখার দুর্বোধ্যতা, লম্বা লম্বা বাতচিত আমাকে তেমন আকর্ষণ করে না। এইসব ছাপিয়ে বিরক্তি উদ্রেক করে কারণ এদের অধিকাংশই চোখে রঙিন চশমা ঝুলিয়ে লেখা শুরু করেন। এরা কোনও এক বিচিত্র কারণে দেশে তেমন কোন সমস্যা দেখতে পান না। অনেকে বলবেন, এঁরা আশাবাদী। হতে পারে! আমার অল্প জ্ঞানে যেটা বুঝি, যে রোগীকে এখুনি অক্সিজেন দেয়া প্রয়োজন তা না-করে তার চারপাশে ঘুরপাক খেয়ে 'ধুম মাচা দে- ধুম মাচা দে' গান গাওয়া কোনও কাজের কাজ না। প্রকারান্তরে দেশের ক্ষতিই করা হয়।
এমনিতে সৈয়দ আবুল মকসুদের লেখা আমার পছন্দের কিন্তু মানুষটার মধ্যে অনেক ঝামেলা আছে- নামের কাঙ্গাল এমন পাগলা মানুষ আমি আর দেখিনি [২] । যা বলেন সাফ-সাফ! তাছাড়া হেনার [৩] বিস্তারিত জানার জন্য মানুষটা তাঁর গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিলেন এটাও মকসুদ সাহেবের জন্য আমার অযাচিত ভাল লাগা। কিন্তু তাঁর 'নরমূত্র' লেখাটা নিয়ে আমার অনেকখানি অমত আছে। তিনি লিখেছেন, "...নিত্যদিনের আচরণে প্রমাণ করতে হবে, বাংলার মানুষ সভ্য না অসভ্য..."।
ভুল লিখলেন মকসুদ সাহেব, বাংলার মানুষের জায়গায় হবে বাংলার সরকার। অফিস-আদালত, পাবলিক প্লেসে পাবলিক আসবে, যথারীতি মুত্রবিসর্জন দেয়ারও প্রয়োজন দেখা দেবে। হাজার-হাজার মানুষের জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা দূরের কথা যেটুকু ব্যবস্থা আছে তাতেই ইয়া বড় তালা ঝুললে [৪] পাবলিক মূত্রবিসর্জন করবেটা কোথায়, কার মাথায়? ছাদে উঠে করার চেষ্টা করলে কারও-না-কারও মাথায় পড়লে তাকে দোষ দেয়া কেন!
আচ্ছা, বুকে হাত দিয়ে বলুন তো রাস্তাঘাটে কোথায় কয়টা সরকারি টয়লেট--বাথরুম-টাট্টিখানা-পায়..., হালের ওয়শরুম চোখে পড়েছে আপনার? আর সরকারি যে টয়লেটগুলো আছে ওখানে মুত্রবিসর্জন দেয়ার পূর্বে 'জ্ঞানবিসর্জন' দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে হয়। কী বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি, লাগবেন বাজী? কী বুক কাঁপছে? আপনি চাইলে একটা অ্যাম্বুলেন্স দাঁড় করিয়ে রাখব।
আপনি লিখেছেন, "...২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নজরুল এভিনিউর ফুটপাত মুত্রমুক্ত চাই। তবে পুলিশি অ্যাকশন ছাড়া বাংলার মাটি মুত্রমুক্ত হবে না"।
বটে! বেচারা পুলিশ! মুত্রবিসর্জন আটকাতেও এদের প্রয়োজন হয়, হলি কাউ! আমার ছোট্ট একটা প্রশ্ন ছিল, ধরুন, একজন মুত্রবিসর্জন করছে। ধরুন, পুলিশ অ্যাকশনে যাবে। ধরুন, তখনও ওই মানুষটার মুত্রপ্রবাহ চালু আছে। আচ্ছা, ধরাধরি বাদ দিয়ে বলি, তখুনি কী পুলিশ অ্যাকশনে যাবে নাকি মানুষটার মুত্রবিসর্জন দেয়ার পর?
কাজটা কী ঠিক হবে? পবিত্রস্থানে এই কর্ম করলেও যেখানে অপেক্ষার ছাড় দেয়া হয় [বদু] সেখানে আপনি পুলিশ লেলিয়ে দিতে চাচ্ছেন, কাজটা কী ঠিক হবে, স্যার!
আপনি আরও লিখেছেন, "...প্রচুর পানি ও শীতল পানীয় শুধু বাংলাদেশের পুরুষরাই খায়। তাই রাস্তায় বের হওয়া মাত্র তাদের বেগ পায়..."।
আহা, আপনি কী চাচ্ছেন, পানি না-খেয়ে খেয়ে বাংলাদেশের পুরুষরা কিডনি বিসর্জন দিক! আর বেগ না পেলেও এই কাজ শখের বশে কেউ করেন এমন তথ্য অন্তত আমার কাছে নাই। থাকলে অবশ্য ভাল হতো।
প্রকাশ্যে নরের এহেন কর্মকান্ডে আপনার চোখ আহত হয়, ভাল-ভাল কিন্তু নারীদের জন্য আপনার মস্তিষ্ক আহত হয় না, ডিয়ার স্যার? নারীর জন্য দিকি আপনি একটা শব্দও ব্যয় করলেন না! আপনি কী জানেন স্যার, আমাদের দেশে নারীদের কী অসহনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়। আমাদের দেশের নারীদের ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার অন্যতম কারণ প্রয়োজনীয় বাথরুম না-থাকা।
আসলে অতি প্রয়োজনীয় এই বিষয়টার নিয়ে আমাদের কোন ভাবনা নেই। ঝা-চকচকে একটা মার্কেট করা হবে, শত-শত মানুষ একস্থানে জড়ো হবে কিন্তু সেখানে একটা বাথরুম থাকবে না। আমাদের মন-মগজে যেমন এই ভাবনাটা নেই তেমনি আপনার লেখায়ও। আফসোস, বড়ই আফসোস!
সহায়ক সূত্র:
১. হেনা: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_06.html
২. নরমূত্র: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=12&date=2011-02-08
৩. সন্তান উৎপাদন কারখানা...: http://www.ali-mahmed.com/2011/10/blog-post_23.html
৪. সরকারি মূত্রালয়: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_07.html
* [বদু]:
"আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করিয়াছেন, এক বদু (বেদুইন) নবী (সাঃ)-এর মসজিদে আসিয়া এক কোনে বসিয়া প্রস্রাব করিতে লাগিল। সকলেই বদুকে ধমক দিতে আরম্ভ করিলে নবী (সাঃ) তাহাদিগকে নিষেধ করিলেন এবং বলিলেন, এই অবস্থায় তাহাকে বাধা দিও না।
বদুর প্রস্রাব করা শেষ হইলে তিনি তাহাকে নিকটে ডাকিয়া বুঝাইয়া দিলেন, মসজিদ পবিত্র স্থান, এখানে মল-মূত্র ত্যাগ করা সমীচীন নহে।
তাহার পর সাহাবীগণকে আদেশ করিলেন, পানি আনিয়া জায়গাটি পরিস্কার করো। তোমরা (মুসলিম জাতি) পৃথিবীর প্রতি আদর্শরূপে আবির্ভূত হইয়াছ, কর্কশ ব্যবহারেরর জন্য নহে।" (বোখারী শরীফ)
আমাদের দেশের তা-বড় তা-বড় কলাম লেখকদের এক হাত-দেড় হাত লম্বা কলামগুলো আমার তেমন পড়া হয় না। লেখার দুর্বোধ্যতা, লম্বা লম্বা বাতচিত আমাকে তেমন আকর্ষণ করে না। এইসব ছাপিয়ে বিরক্তি উদ্রেক করে কারণ এদের অধিকাংশই চোখে রঙিন চশমা ঝুলিয়ে লেখা শুরু করেন। এরা কোনও এক বিচিত্র কারণে দেশে তেমন কোন সমস্যা দেখতে পান না। অনেকে বলবেন, এঁরা আশাবাদী। হতে পারে! আমার অল্প জ্ঞানে যেটা বুঝি, যে রোগীকে এখুনি অক্সিজেন দেয়া প্রয়োজন তা না-করে তার চারপাশে ঘুরপাক খেয়ে 'ধুম মাচা দে- ধুম মাচা দে' গান গাওয়া কোনও কাজের কাজ না। প্রকারান্তরে দেশের ক্ষতিই করা হয়।
এমনিতে সৈয়দ আবুল মকসুদের লেখা আমার পছন্দের কিন্তু মানুষটার মধ্যে অনেক ঝামেলা আছে- নামের কাঙ্গাল এমন পাগলা মানুষ আমি আর দেখিনি [২] । যা বলেন সাফ-সাফ! তাছাড়া হেনার [৩] বিস্তারিত জানার জন্য মানুষটা তাঁর গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিলেন এটাও মকসুদ সাহেবের জন্য আমার অযাচিত ভাল লাগা। কিন্তু তাঁর 'নরমূত্র' লেখাটা নিয়ে আমার অনেকখানি অমত আছে। তিনি লিখেছেন, "...নিত্যদিনের আচরণে প্রমাণ করতে হবে, বাংলার মানুষ সভ্য না অসভ্য..."।
ভুল লিখলেন মকসুদ সাহেব, বাংলার মানুষের জায়গায় হবে বাংলার সরকার। অফিস-আদালত, পাবলিক প্লেসে পাবলিক আসবে, যথারীতি মুত্রবিসর্জন দেয়ারও প্রয়োজন দেখা দেবে। হাজার-হাজার মানুষের জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা দূরের কথা যেটুকু ব্যবস্থা আছে তাতেই ইয়া বড় তালা ঝুললে [৪] পাবলিক মূত্রবিসর্জন করবেটা কোথায়, কার মাথায়? ছাদে উঠে করার চেষ্টা করলে কারও-না-কারও মাথায় পড়লে তাকে দোষ দেয়া কেন!
আচ্ছা, বুকে হাত দিয়ে বলুন তো রাস্তাঘাটে কোথায় কয়টা সরকারি টয়লেট--বাথরুম-টাট্টিখানা-পায়..., হালের ওয়শরুম চোখে পড়েছে আপনার? আর সরকারি যে টয়লেটগুলো আছে ওখানে মুত্রবিসর্জন দেয়ার পূর্বে 'জ্ঞানবিসর্জন' দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে হয়। কী বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি, লাগবেন বাজী? কী বুক কাঁপছে? আপনি চাইলে একটা অ্যাম্বুলেন্স দাঁড় করিয়ে রাখব।
আপনি লিখেছেন, "...২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নজরুল এভিনিউর ফুটপাত মুত্রমুক্ত চাই। তবে পুলিশি অ্যাকশন ছাড়া বাংলার মাটি মুত্রমুক্ত হবে না"।
বটে! বেচারা পুলিশ! মুত্রবিসর্জন আটকাতেও এদের প্রয়োজন হয়, হলি কাউ! আমার ছোট্ট একটা প্রশ্ন ছিল, ধরুন, একজন মুত্রবিসর্জন করছে। ধরুন, পুলিশ অ্যাকশনে যাবে। ধরুন, তখনও ওই মানুষটার মুত্রপ্রবাহ চালু আছে। আচ্ছা, ধরাধরি বাদ দিয়ে বলি, তখুনি কী পুলিশ অ্যাকশনে যাবে নাকি মানুষটার মুত্রবিসর্জন দেয়ার পর?
কাজটা কী ঠিক হবে? পবিত্রস্থানে এই কর্ম করলেও যেখানে অপেক্ষার ছাড় দেয়া হয় [বদু] সেখানে আপনি পুলিশ লেলিয়ে দিতে চাচ্ছেন, কাজটা কী ঠিক হবে, স্যার!
আপনি আরও লিখেছেন, "...প্রচুর পানি ও শীতল পানীয় শুধু বাংলাদেশের পুরুষরাই খায়। তাই রাস্তায় বের হওয়া মাত্র তাদের বেগ পায়..."।
আহা, আপনি কী চাচ্ছেন, পানি না-খেয়ে খেয়ে বাংলাদেশের পুরুষরা কিডনি বিসর্জন দিক! আর বেগ না পেলেও এই কাজ শখের বশে কেউ করেন এমন তথ্য অন্তত আমার কাছে নাই। থাকলে অবশ্য ভাল হতো।
প্রকাশ্যে নরের এহেন কর্মকান্ডে আপনার চোখ আহত হয়, ভাল-ভাল কিন্তু নারীদের জন্য আপনার মস্তিষ্ক আহত হয় না, ডিয়ার স্যার? নারীর জন্য দিকি আপনি একটা শব্দও ব্যয় করলেন না! আপনি কী জানেন স্যার, আমাদের দেশে নারীদের কী অসহনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়। আমাদের দেশের নারীদের ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার অন্যতম কারণ প্রয়োজনীয় বাথরুম না-থাকা।
আসলে অতি প্রয়োজনীয় এই বিষয়টার নিয়ে আমাদের কোন ভাবনা নেই। ঝা-চকচকে একটা মার্কেট করা হবে, শত-শত মানুষ একস্থানে জড়ো হবে কিন্তু সেখানে একটা বাথরুম থাকবে না। আমাদের মন-মগজে যেমন এই ভাবনাটা নেই তেমনি আপনার লেখায়ও। আফসোস, বড়ই আফসোস!
সহায়ক সূত্র:
১. হেনা: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_06.html
২. নরমূত্র: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=12&date=2011-02-08
৩. সন্তান উৎপাদন কারখানা...: http://www.ali-mahmed.com/2011/10/blog-post_23.html
৪. সরকারি মূত্রালয়: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_07.html
* [বদু]:
"আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করিয়াছেন, এক বদু (বেদুইন) নবী (সাঃ)-এর মসজিদে আসিয়া এক কোনে বসিয়া প্রস্রাব করিতে লাগিল। সকলেই বদুকে ধমক দিতে আরম্ভ করিলে নবী (সাঃ) তাহাদিগকে নিষেধ করিলেন এবং বলিলেন, এই অবস্থায় তাহাকে বাধা দিও না।
বদুর প্রস্রাব করা শেষ হইলে তিনি তাহাকে নিকটে ডাকিয়া বুঝাইয়া দিলেন, মসজিদ পবিত্র স্থান, এখানে মল-মূত্র ত্যাগ করা সমীচীন নহে।
তাহার পর সাহাবীগণকে আদেশ করিলেন, পানি আনিয়া জায়গাটি পরিস্কার করো। তোমরা (মুসলিম জাতি) পৃথিবীর প্রতি আদর্শরূপে আবির্ভূত হইয়াছ, কর্কশ ব্যবহারেরর জন্য নহে।" (বোখারী শরীফ)
বিভাগ
সাদাকে কালো বলিব
Sunday, February 6, 2011
কে অপরাধী, মিডিয়া নাকি প্রশাসন?
ছবি ঋণ: প্রথম আলো |
এই মিডিয়ারা বারবার যে প্রশাসনিক কর্মকর্তার বক্তব্য উদ্ধৃতি দিচ্ছে তিনি হচ্ছেন ওখানকার এসপি। এএফপি এসপির বক্তব্য আমাদেরকে জানাচ্ছে, "Fifteen-year-old Hena Begum died in hospital on Monday after a village court in the southern Bangladesh district of Shariatpur sentenced her to 100 lashes, said local police chief A.K.M Shahidur Rahman.
...and three villagers including the wife of the man who Hena Begum had an illicit relationship with," Mr Rahman told AFP.
According to Mr Rahman, the teenage girl was "beaten mercilessly" by the family of the married man, who was also Hena's cousin, after the affair was discovered."
এসপি প্রসঙ্গান্তরে বলছেন অ্যাফেয়ার-পরকীয়া। যে কেউ এই কথাটার সরল অর্থ করবে, হেনার সঙ্গে ধর্ষক মাহাবুবের অবৈধ-অন্যায় সম্পর্ক ছিল। ভাল-ভাল! থাকলে আর কী করা! পুলিশ বলে কথা তাও পুলিশ সুপার! পুলিশ সুপার এহেন বক্তব্য দিলে এবং মিডিয়া এটার উপর রিপোর্ট করলে মিডিয়াকে খুব একটা দোষ দেয়াটা অন্যায় হয় বৈকি। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো এবং পাশাপাশি আমাদের দেশের অনেক মিডিয়াও এই এসপির বক্তব্য ছাপিয়েছে, মনের মাধুরী মিশিয়ে রিপোর্ট করেছে। তার উপর আবর্জনা সব তথ্য, কোনটায় হেনা মারা গেছে ছয় দিন পর, কোনটায় ৭ দিন পর। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে যেদিন হেনাকে দোররা মারা হয় সে সেদিনই মারা যায়। তথ্যের কী দৈন্যতা!
হেনার এই সংবাদটা বিভিন্ন মিডিয়া যে কত রকম করে ছাপিয়েছে এটা দেখে মাথা খারাপ হয়ে যায়! হলুদ সাংবাদিকতা আর কাকে বলে! এবং অধিকাংশ সংবাদই প্রায় হুবহু, কপি-পেস্টের কারণে একজন যে ভুলটা করেছে অন্যরা একই ভুল করেছে। আবার কেউ কেউ একগাদা টাকা দিয়ে এজেন্সি থেকে তথ্য কিনে একই ভুলের ফাঁদে পা দিয়েছে।
আজ ভাগ্যক্রমে শরীয়তপুরে একজনকে পেয়ে যাই যিনি খুব কাছ থেকে এই বিষয়ে কাজ করছেন। জটিলতা এড়াবার জন্য বিশদ পরিচয়ে যাই না। তাঁকে আমি অনুরোধ করেছিলাম, আপনাদের ওখানকার এসপি কীসব বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন, হেনার ওই ধর্ষকের সঙ্গে নাকি অন্য রকম সম্পর্ক ছিল। আপনি একটা কাজ করেন, হেনার যে ধর্ষকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল এই বিষয়ে এসপিকে জিজ্ঞেস করেন। উত্তরটা আমাকে একটু জানান।
ওই মানুষটা অবিচল গলায় বলেন, "কেন, এসপির বক্তব্য নেব কেন? এসপি এই বিষয়ে কী জানেন? তিনি কী ওই গ্রামে থাকেন! তিনি কী হেনাদের প্রতিবেশী"?
আমি খানিকটা চিন্তায় পড়ে যাই, তাই তো? এসপি তো এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দূরের কথা ধারেকাছেও ছিলেন না, তাহলে? তাহলে তিনি নিশ্চয়ই এটা কারও মুখে শুনেছেন। এরপর থেকে মিডিয়ার কাছে মুখ হাঁ করলে অনবরত এই কথাটাই ভাঙ্গা রেকর্ডের মত বলে বেড়াচ্ছেন! যাক, এই বিষয় থাকুক। কেউ বললে তো আর মুখ চেপে ধরা যাবে না।
কিন্তু একজন দায়িত্বশীল সরকারী কর্মকর্তা এটা বলেন কেমন করে? কাউকে খুনি বলে রায় দেয়া [২] কী আদালতের কাজ নাকি আমাদের? তাঁর তো এই বিষয়ে বলার কথা না। তিনি কথা বলবেন আসামী ধরা নিয়ে, ফরেনসিক রিপোর্ট নিয়ে, কোথাও প্রচলিত আইন ভাঙ্গা হচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে। যারা হেনার অনৈতিক সম্পর্ক থাকার কথা বলছেন তারা কী করে এটা বিস্মৃত হলেন হেনার গালে কামড়ের দাগ ছিল [৪]। যে স্বইচ্ছায় দেহদান করবে তাঁর শরীরে কামড়ের দাগ থাকবে কেন আর সে চীৎকার করে সবাইকে জানাবেই বা কেন?
আমি আগের লেখায়ও লিখেছিলাম (Sailent features of the children act of 1974, Section 2 (F)-এ বলা হচ্ছে, "A child means a person under 16 years of age...")। আমাদের দেশের আইনে হেনা শিশু। হেনার সম্মতি থাকলেও তাঁর সঙ্গে দৈহিক মিলন করা আমাদের দেশের আইনে ধর্ষণ। এটা সত্য ধর্ষণ এবং তাঁকে হত্যা করাটা বদলে যাচ্ছে না কিন্তু এই গ্রহে রটে গেছে হেনা একজন স্বৈরিণী-ব্যাভিচারিণী। এই মেয়েটির ১৪ বছরের স্বোপার্জিত অর্জন এক নিমিষে ফুৎকারে উড়ে গেছে! আন্তর্জাতিক অন্য মিডিয়া কী ফলাও করেই না তা আমাদেরকে জানাচ্ছে। ডেইলি মেইলের শিরোনাম: "Whipped to death for having 'affair' with married man: Horrific fate of girl, 14, lashed 70 times after alleged rape by cousin" [৩]
অনুমান করি, এই পরকীয়া সংক্রান্ত বিষয়টার উৎস একই সংবাদ সংস্থা!
আমাদের পত্রিকার পন্ডিত সম্পাদক মহোদয়গণ জানেন কিনা জানি না, প্রায়শ যা হয়, ঢাকার বাইরে কোন ঘটনা ঘটলে ওখানকার অধিকাংশ পত্রিকার সাংবাদিক মহোদয়গণ নিজেদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বসে বসেই নিউজ পাঠান, কষ্ট করে পশ্চাদদেশ উত্তোলন করে আর ঘটনাস্থলে যান না! কোনও একজন ঘটনাস্থলে যান এবং তার তথ্যগুলোই খানিকটা এদিক-সেদিক করে অন্য সাংবাদিকরা নিজ নিজ পত্রিকা অফিসে পাঠিয়ে দেন। কারণ হচ্ছে অধিকাংশ পত্রিকাই মফস্বল সংবাদদাতাদের যথেষ্ঠ টাকা দেন না, প্রায় সাংবাদিক মহোদয়েরই সাইড বিজনেস আছে। দেখা গেল যিনি একটি চালু দৈনিকের সংবাদদাতা, যে খবরটা তার পত্রিকায় পাঠাচ্ছেন তিনিই খানিকটা বদলে বিডিনিউজে পাঠাচ্ছেন! ফল যা হওয়ার তাই হয়!
যাই হোক, কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসার কথা জানতাম কিন্তু বাস্তবে এখন দেখলাম, কেন্নো খুড়তে গিয়ে তেলাপোকা বেরিয়ে এসেছে! ধর্ষকের পরিবার চেষ্টা করেছিল সাত লাখ টাকা হেনার পরিবারকে দিয়ে মিটমাট করার জন্য কিন্তু হেনার বাবা রাজি হননি। তিনি যদি রাজি হতেন তাহলে এখান থেকে বিশেষ একটি সংস্থার ২ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ হেনার পরিবার পেত ৫ লাখ আর ওই সংস্থা ২ লাখ!
আরও আছে! একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক ঘটনাকে অন্যদিকে প্রবাহিত করে দেবেন এই শর্তে ধর্ষকের পরিবারের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা আগাম নিয়েছেন, বাকী টাকা কাজ উদ্ধার হওয়ার পর। গা শিউরানো সব ঘটনা!
মানুষ হিসাবে নিজেকে দাবী করতে আজ আমার বড়ো সংকোচ। কাপড় পরেও আজ নিজেকে সভ্য বলতেও কেমন বাঁধো বাঁধো ঠেকে। কোন একটা লেখায় আমি লিখেছিলাম ভাল দাম পেলে আমরা মাকেও বেচে দেব, তাঁর কিডনি-ফুসফুস-লিভার; কেবল দামটা ভাল হওয়া চাই। হেনা নামের মেয়েটির প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে এটা নিয়ে হেনার এখন আর কিছু যায় আসে না। সে মৃত কিন্তু আমরা জীবিত এই যা পার্থক্য!
আমি কেবল অপেক্ষায় আছি যারা এই অভাগা মানুষটার প্রতি যে অন্যায়টা করা হচ্ছে ঠিক এমন একটা ঘটনা এদের কোন প্রিয় মানুষের সঙ্গেও ঘটুক। কসম আমার লেখালেখির, তখন এরা কেমন করে কাঁদে এটা দেখার আমার বড়ো আগ্রহ; আমাদের মত হাউমাউ করে নাকি পশ্চিমাদের মত দাঁতে দাঁত চেপে?
চারদিকে সব শক্তিশালী বুদ্ধিমান মানুষেরা যারা একবার তাঁকে খুন করেছে, এখন মৃত হেনাকে দ্বিতীয়বার খুন করছে! কেবল এদের বুদ্ধির খেলা দেখব, একের পর এক।
কিন্তু আমরা কতিপয় নির্বোধ অশক্ত হাতে হেনার প্রাণহীন হাত ধরে অনবরত বকেই যাব, হেনা, তুমি ঘুমাও, আমরা জেগে আছি...।
সহায়ক সূত্র:
১. হলুদ সাংবাদিকতা: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_6336.html
২. খুনি এবং আদালত: http://www.ali-mahmed.com/2011/01/blog-post_24.html
৩. dailymail.co.uk: http://tinyurl.com/6ldaxh5
৪. বিডিনিউজ: http://tinyurl.com/5v9fq8a
*আজ নিজের জাগতিক বেদনায় মনটা ভারী বিষণ্ণ। সাত সাগর তেরো নদীর পার থেকে একজন ফোন করেন, হেনার ধর্ষক গ্রেফতার হয়েছে এবং পুনরায় করা হেনার পোস্টমর্টেমে হেনার পক্ষে আলামত পাওয়া গেছে।
নিমিষেই আমার জাগতিক বেদনা মিলিয়ে যায়। কেবল মনে হয়, মেয়েটা আজ খানিকটা শান্তিতে ঘুমাবে...।
ডয়চে ভেলের সংবাদ: http://tinyurl.com/5whtk2v
বিভাগ
সাদাকে কালো বলিব
Saturday, February 5, 2011
বিবিসি-এএফপি, যারা হলুদ ডিম্ব প্রসব করে!
ছবি ঋণ: প্রথম আলো |
এই নিয়ে এক লেখায় বলেছিলাম, 'কেবল ফাঁসি চাইছি, আর কিছু না' [১]। আমার স্পষ্ট বক্তব্য, এর সঙ্গে যারা যারা জড়িত প্রত্যেককে ফাঁসিতে ঝোলাতে হবে, যত দ্রুত সম্ভব। বিচারটা হবে বছরে পর বছর লাগিয়ে না, বিশেষ আদালতে।
এটা তো গেল সেইসব খুনিদের জন্য যারা জীবিত হেনাকে খুন করেছে তাদের জন্য কিন্তু যারা মৃত হেনাকে দ্বিতীয়বার খুন করেছে তাদের জন্য কোন শাস্তি চাইব? অসহায় এই বালিকাটির প্রতি এমন অন্যায়-কুৎসিত অভিযোগ যে খুনেরই নামান্তর।
হেনাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়া কি বলছে? বিবিসি বলছে [২]: "...The teenager was accused of having an affair with a married man, police say, and the punishment was given under Islamic Sharia law..."
"...She was alleged to have had the affair with her cousin and received 80 lashes..."
বিবিসি আরও জানাচ্ছে, "..."Her family members said she was admitted to a hospital after the incident and she died six days later. The village elders also asked the girl's father to pay a fine of about 50,000 Taka (£430; $700)," district superintendent of police, AKM Shahidur Rahman, told the BBC..."
এবার আমরা দেখি এএফপি [৩] কি বলছে? " "...after a teenage girl, who was accused of having an extra-marital affair with her cousin, was whipped to death..."
"...According to Mr Rahman, the teenage girl was "beaten mercilessly" by the family of the married man, who was also Hena's cousin, after the affair was discovered..."
"...The teenager was then handed to the village court, which publicly whipped her until she passed out and was taken to hospital, where she died seven days later,..."
বিবিসি এবং এএফপির উভয়েরই বক্তব্য, হেনার বিবাহিত ওই মানুষটার সঙ্গে অ্যাফেয়ার বা পরকীয়া ছিল এবং হেনা নামের মেয়েটি ৬/৭ দিন পর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে। অথচ আমরা জানি ৭০/৮০টা দোররা মারার পর তাঁকে হাসপাতালে নেয়ার পরপরই অর্থাৎ যেদিন দোররা মারা হয় সোমবার, সে সেদিনই মৃত্যুবরণ করে [৪]।
সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে, হেনা নামের বালিকা যে আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী শিশু। Sailent features of the children act of 1974, Section 2 (F)-এ বলা হচ্ছে, "A child means a person under 16 years of age..."। ওহে, পন্ডিত সাহেবগণ, আপনাদেরকে কী এটা মনে করিয়ে দেব, একজন শিশুর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না, সেটা পরকীয়া হোক বা বিয়ের নামে স্ত্রী হোক।
সে শিশু না বালিকা এই কুতর্কে না-গিয়ে ধরে নিলাম সে হেনা নামের এক কিশোরী । গ্রামের এই কিশোরী হেনা, স্ত্রী বর্তমান এমন একজন ৪০ বছরের ধামড়ার সঙ্গে তাঁর নাকি অ্যাফেয়ার ছিল! এটা কতটুকু বাস্তবসম্মত? অথচ আমরা জানতে পারি মাহাবুব নামের এই মানুষটি ইতিপূর্বে এমন অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদের তথ্য জেনে মনে হচ্ছে একই গোয়ালের ধোঁয়া, তথ্যের বিষয়বস্তু, ধাঁচ কাছাকাছি! সংবাদের শেষাংশে বিবিসি বলছে, "...Nearly 90% of Bangladesh's estimated 160 million population are Muslims, most of whom practise a moderate version of Islam."
এএফপিও সংবাদটা শেষ করছে এই লাইন দিয়ে, "...Some 90 per cent of Bangladesh's 146 million people are Muslims and most live in rural areas.
বিবিসির ঢাকা সংবাদদাতা Anbarasan Ethirajan কোথায় বসে এই রিপোর্টটা করেছেন, কোনও নাইট ক্লাবে? সাহেব মানুষ গলা না-ভেজালে কী চলে? তা কয় পেগ? আহা, লিমিটটা ছাড়িয়ে গিয়েছিল বুঝি? সাহেব মানুষ তবুও মানুষের শরীর তো! আহা, জিনিসটা সহ্য করতে না-পারলে গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করে দিতে পারলেন না? তাহলে এই 'মাতালিয়া প্রলাপের' কারণে আপনার প্রতি আমাদের বমন ভাবটার উদ্রেক হত না। অন্যের কথা জানি না, নিজেরটা বলি, ডিয়ার Anbarasan Ethirajan। ভাগ্যিস, আপনি হাতের নাগালে নেই নইলে হড়হড় করে আপনার উপর বমি করে দিতাম...।
কে অপরাধী, মিডিয়া নাকি প্রশাসন?: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_06.html
*গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি: আরাফাতুল ইসলাম, Voice of South.org: http://voiceofsouth.org/blog/?p=1529, যিনি এই বিষয়টা নিয়ে আলোকপাত করেছেন। ইয়েলো জার্নালিজম, এটা না-পড়লে আমার জানাই হত না আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো কেমন করে আস্ত একটা হলুদ ডিম প্রসব করে!
**বিবিসি বাংলার চুরি চামারি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই। সাক্ষাৎকার হাপিস করে দেয়া নিয়ে একটা জটিলতা দেখা দিয়েছিল [৫]। এবং ছবি চুরি নিয়েও [৬]।
সহায়ক সূত্র:
১. কেবল ফাঁসি চাইছি: http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post.html
২. bbc.co.uk: http://www.bbc.co.uk/news/world-south-asia-12344959
৩. AFP (হেরাল্ড সান প্রকাশিত এএফপির রিপোর্ট): http://tinyurl.com/699bbxq
৪. প্রথম আলো: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2011-02-02
৫. সাক্ষাৎকার চুরি, বিবিসি: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_27.html
৬. ছবি চুরি, বিবিসি: http://www.sachalayatan.com/guest_writer/34316
বিভাগ
চাবকানো প্রয়োজন
Subscribe to:
Posts (Atom)