Search

Wednesday, October 21, 2009

সভ্যতা কাকে বলে?

অভিধান মতে, সভ্যতার অর্থ হচ্ছে, "সভ্য জাতির জীবনযাত্রা নির্বাহের পদ্ধতি- সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্ম ও বিবিধ বিদ্যার অনুশীলনহেতু মন মগজের উৎকর্ষ সাধন"।

মানবতার কথা এখানে উল্লেখ নাই। অনুমান করি, এটা সম্ভবত এই সমস্ত সু-চর্চার নির্যাস বা ফল। 
 
এএফপি জানাচ্ছে, অষ্ট্রেলীয়ার আউটব্যাকে উটের সংখ্যা অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। এতে বিবিধ সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে। সৃষ্টি হয়েছে উটের খাদ্য সংকট, প্রাণ বাঁচবার তাগিদে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষদের এরা বড় যন্ত্রণা দিচ্ছে। অষ্ট্রেলীয়ার চাকা যারা বনবন করে ঘুরাচ্ছেন, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সাড়ে ছয় লাখ উট গুলি করে মেরে ফেলা হবে। এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হবে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে। এর জন্য আড়াই কোটি ডলার বাজেট নির্ধারন করা হয়েছে। প্রয়োজনে এরা অবলীলায় যে-কোন প্রাণ বিনস্ট করে ফেলতে দ্বিধা করে না, প্রাণটা উট, না মানুষ এটা বিবেচ্য না!
পৃথিবীর অনেক দেশেই উটের রয়েছে বিপুল চাহিদা, রয়েছে মাংসের ঘাটতি! বিনে পয়সায় না-দিলেও রফতানি করার সীমাহীন সুযোগ। কিন্তু ওয়াইল্ড লাইফ প্রিজারভেশন সোসাইটি অভ অস্ট্রেলীয়ার প্রেসিডেন্ট মার্ক পিটারসন বলেন, 'উট রপ্তানি করার পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত না'
কেন বাস্তবসম্মত না এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। স্রেফ অংকের হিসাবই না ওই যে সভ্য হওয়ার অনিচ্ছা! এই গ্রহেরই ক্ষুধার্ত সন্তানদের নিয়ে এদের কোনও মাথা ব্যথা নেই- কে যাবে এতো হ্যাপা সামলাতে। তারচেয়ে গুলি করে ল্যাঠা চুকিয়ে দিলেই হয়।
 
‘Conspiracy of Murder, the Rwandan Genocide’ নামের বইয়ে লিন্ডা মেলবার্ন লেখেন:
"১৯৯৪ সালে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে রোয়ান্ডায় প্রায় ১০ লাখ মানুষকে সুপরিকল্পিত ভাবে হত্যা-খুন করা হয়।
পৃথিবীতে এমন উদাহরণ খুব একটা নাই। নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে এর তুলনা চলে কারণ তারাও চেয়েছিল একটা জাতিকে নিচিহ্ন করে দিতে।
রোয়ান্ডাতে এটা করা হয়েছিল টুটসি (Tutsi) জাতিকে নিচিহ্ন করা এবং একটা বিশুদ্ধ হুটু (Hutu) জাতি-রাষ্ট্র সৃষ্টি করা। 
এই হত্যাযজ্ঞ থামাতে জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিল পুরাপুরি ব্যর্থ হয়, যা বিংশ শতাব্দীর এক মহা কেলেংকারি। এদের কাজের খানিকটা নমুনা মানুষকে সুপরিকল্পিত ভাবে হত্যা-খুন করা হয়।
পৃথিবীতে এমন উদাহরণ খুব একটা নাই। নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে এর
পাওয়া যাবে, ওই সময়ে শান্তিরক্ষা বাহিনীর কমান্ডার লেফট্যানেন্ট জেনারেল রোমিও ড্যালায়ার তাগাদার পর তাগাদা দিয়েছেন প্রয়োজনীয় সহায়তা পাঠাবার জন্য।
তিনি বলেন, 'মাত্র ৫০০০ ট্রেনিংপ্রাপ্ত সৈন্য থাকলেই গণহত্যাকে অনেকটা সীমিত রাখা যেত'
যথারীতি পশ্চিমা মিডিয়া উদাসিন, গা ছাড়া ভাব দেখিয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম বিবিসি। ১০ লাখ মানুষের মৃত্যুর পর এরা বিপুল আয়োজন করে 'শুটিং ডগস' (Shooting dogs) নামে একটা ডকুমেন্টরি বানিয়েছিল যার অধিকাংশই ছিল অতিরঞ্জিত, মিথ্যা।"
সভ্যতার পতাকা বহনকারি সভ্য নামের ক্ষমতাবান, এরাই খাদ্যশস্যের জাহাজ ফিরিয়ে নিয়ে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে, এরাই ঘটা করে রিলিফ পাঠায়। এরাই ওয়ার্কশপ করে আমাদেরকে মানবতা শেখায়। এদের ইচ্ছাই শেষ কথা!
আসলে এদের কাছে সবই একেকটা সংখ্য:
একটা বিয়ার।
একটি উট।
একজন মানুষ।
একটি কুকুর।
একটি শিশু!
...
১ লাখ ক্যান বিয়ার।
সাড়ে ৬ লাখ উট।
১০ লাখ মানুষ (রোয়ান্ডান)।
অসংখ্য মোটাতাজা কুকুর।
৩০ লাখ মানুষ (বাঙ্গালি)!

এই সব দাম্ভিক জাতি, এদের ঈশ্বরসুলভ আচরণ দেখে মনে হয়, এরাই বুঝি শেষ কথা। প্রকৃতি, প্রকৃতির সন্তানদের নিয়ে এরা খেলবে ইচ্ছামত। কিন্তু আফসোস! সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা ধার করে বলতে হয়"
"...দু আঙুলের ফাঁক দিয়ে
কখন
খসে পড়ল তার জীবন-
লোকটা জানলই না...।"
প্রকৃতি কখন এদের ফেলে দেবে এটা এরা যখন জানবে তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে। কেবল সময়ের অপেক্ষা...।

*ছবিঋণ: বাংলার মুক্তিসংগ্রাম, আফতাব আহমদের বই থেকে।

No comments: