একটি মাসিক পত্রিকা, 'রহস্য পত্রিকা'। মূলত এটায় অধিকাংশই অনুবাদ লেখা ছাপানো হয়। এ মাসিক পত্রিকায় প্রায় প্রতি সংখ্যায় লেখা হয়, “আমরা পাঠকদের কাছে লেখা আহ্বান করছি। গল্প, উপন্যাস ও বিচিত্র মজার ফিচার পাঠান।”
পতঙ্গ যেমন আগুন দেখে মুগ্ধ হয়, সম্মোহিত হয়ে চোখ বুজে (চোখ খোলা থাকলে ঝাঁপ দেয়ার কথা না) আগুনে লাফিয়ে পড়ে। তেমনি এই অখ্যাত লেখক এদের আহ্বান শুনে লাফাতে লাফাতে পত্রিকা আফিসে হাজির হলেন। এত দিন এ লেখক বড় বিব্রত বোধ করছিলেন। ইনি যে জিনিসটা নিয়ে অসম্ভব মানসিক কষ্টে ছিলেন, সেটা একটা উপন্যাস।
এ বিশাল দেশে গোটা একটা উপন্যাস চিবিয়ে হজম করতে পারে এরকম পত্রিকা নেই বললেই চলে, হাতেগোনা কয়েকটা। তা ছাড়া মার্কেট ভ্যালু তেমন নেই। উপন্যাস লিখে দু-এক জনই টাকার বস্তার উপর শুয়ে নাক ডাকছেন। অন্যরা তাঁদের বই বিয়ে- জন্মদিনে উপহার দিয়ে উদাস গলায় বলেন, বইয়ের উপর কোন গিফট নাই। অবশ্য কবিতা-টবিতার মার্কেট ভ্যালু আরো খারাপ (উইপোকারা কবিদের বদান্যতায় কৃতজ্ঞ হচ্ছে এবং মোটাসোটা হয়ে আমজাদ খান না হউক পিঁপড়ার সমান হয়ে যাচ্ছে)। তবে বাংলাদেশে ‘কাকের সংখ্যা বেশী নাকি কবির সংখ্যা’ এটা গবেষণার বিষয় হলেও পত্রিকায় কবিতা ছাপানোর সুযোগ প্রবল।
এই অখ্যাত লেখক এক শীতের সকালে তিতিবিরক্ত হয়ে ভাবছিলেন, আহ, পান্ডুলিপিটা দিয়ে চা বানিয়ে খেলে মন্দ হয় না। তো এরকম আহ্বান শুনে স্বস্থির নিঃস্বাস ফেলে উদ্বাহু নৃত্য করতে গিয়ে একটুর জন্য ছাদে মাথা ঠুকল না। এ ছাদের দূর্ভাগ্য না মাথার, কে জানে! সহকারী সম্পাদকের সামনে প্রায় দ্বিগুণ হার্টবিট নিয়ে হাজির হলেন (সম্পাদকের দেখা পাওয়ার চেয়ে নাকি চাঁদে যাওয়া সহজ)।
শেখ আবদুল হাকিম। ডিগডিগে শরীরের ইনি হড়বড় করে বললেন, কি ব্যাপার, কি জন্য এসেছেন?
জ্বী, আমি একটা লেখা নিয়ে এসেছি, মাখনের মতো গলে গিয়ে বললাম।
কি ধরনের লেখা?
উপন্যাস। একটু কাইন্ডলী দেখবেন।
রহস্য উপন্যাস?
জ্বী না, রহস্য উপন্যাস না।
রেখে যান। ঢাকায় থাকেন তো, যোগাযোগ রাখবেন।
ইয়ে, মানে আমি ঢাকার বাইরে থাকি। আপনি বলে দেন কখন যোগাযোগ করব।
মাসখানেক পর খোঁজ নেবেন। এরিমধ্যে আমি এটা পড়ে দেখব।
দেড় মাস পর খোঁজ নিয়ে জানলাম, ইনি সপ্তাহে তিন দিন অফিসে আসেন: রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি- দূর্ভাগ্যক্রমে আজ এ তিন দিনের এক দিনও না। এদের অফিসের সামনের চৌবাচ্চায় পোষা বাহারী মাছ। মাছরা বিভিন্ন সার্কাস দেখাচ্ছে, মুগ্ধ করার অপচেষ্টা। মুগ্ধ হওয়া দূরের কথা, এ মুহূর্তে ইচ্ছে করছে এদের ধরে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে, লবন ছাড়াই।
বেশ ক-বার ঘোরাঘুরি করে সহকারী সম্পাদক সাহেবকে ধরা গেল।
রাশভারী গলায় বললেন, কি ব্যাপার, কি জন্য এসেছেন?
সরি, আপনাকে ডিস্টার্ব করছি, একটা উপন্যাস জমা দিয়েছিলাম।
অ, বাইন্ডিং করা ওই খাতাটা তো। ওহ হো, আমি দেখতে পারিনি।
হন্তদন্ত হয়ে পিয়ন এসে বলল: স্যার বুলায়।
সেই যে গেলেন ঘন্টাখানেক পর এলেন। এতোক্ষণ বসিয়ে রাখার জন্য দুঃখ প্রকাশ করার মতো অসৌজন্যতা দেখানোর প্রয়োজন বোধ করলেন না। সম্ভবত অখ্যাত লেখকদের মতো পাগল-ছাগলদের এসব বলার নিয়ম নাই।
স.সম্পাদক (শেখ আবদুল হাকিম) চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন: আপনি আমাকে কাহিনীটা বলেন তো।
আমার মাথায় সব কেমন জট পাকিয়ে গেল, আকাশ পাতাল হাতাতে লাগলাম। অবশেষে ক্ষীণ গলায় বললাম, সরি, আমি ভালো বলতে পারি না- গুছিয়ে বলা আমার পক্ষে তো সম্ভব না।
কয়েক পাতা উল্টেপাল্টে রাগী গলায় বললেন, এতো ফাঁক ফাঁক করে লিখেছেন কেন, এসব কী!
জ্বী, এখন তো এভাবেই লিখা হচ্ছে।
কোথায় দেখেছেন এরকম লিখতে, কারা লিখছে?
কয়েকজন দুঁদে ঔপন্যাসিকের নাম করতেই ওঁর শরীরে অদৃশ্য আগুন ধরে গেল। চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, তারা যা লিখে তা কি সাহিত্য, সর্দি মুছে ফেলে দেয়ার জিনিস! এরা ফটকাবাজের দল। অল্প লিখে পাঠকদের কাছ থেকে বেশী পয়সা নিচ্ছে।
অফিসে আরেকজন অনুবাদ লেখকের আগমন। এরা দু’জন চোখ মুখ সিরিয়াস করে আলাপে মশগুল হয়ে গেলেন। অল্প সময়ে টরটর করে যে বাণীগুলো দিলেন, সংক্ষেপ করলে তা হবে এরকম, মৌলিক সাহিত্য লেখা তেমন কোন ব্যাপার না। বাঁ হাতে এমন কি ভাঙ্গা হাতেও তরতরিয়ে লেখা যায়। কিন্তু অনুবাদের ব্যাপারটা খুবই দুরূহ; ঘিলু বলে, থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে।
আমি এইসব অনেক বিষয়েই একমত না, কিন্তু এ নিয়ে পত্রিকা যারা চলান এদের সঙ্গে তর্ক করার প্রশ্নই আসে না। লেখালেখির ভূবনে এরা হলেন দ্বিতীয় ইশ্বর। তো, ঈশ্বরগোছের কারো সঙ্গে আর যাই হোক হাসি-ঠাট্টা, তর্ক চলে না।
*'একালের প্রলাপ' থেকে
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Wednesday, May 27, 2009
শেখ আবদুল হাকিম, ভার্চুয়াল করকমলেষু
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment