Search

Thursday, September 30, 2010

নিধন: দানবীর নূতন সিংহ এবং জনৈক সালাউদ্দিন

দানবীর নূতনচন্দ্র সিংহ:
তাঁর একমাত্র ইচ্ছে ছিল তিনি যেনো দেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারেন। সে ইচ্ছা তার পূরণ হয়েছে। দেশের মাটিতে তিনি মরতে পেরেছেন। তবে বড় নিষ্ঠুরভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে তাঁকে- কখনো কেউ যা কল্পনাও করেনি।

গত বছর এই ১৩ এপ্রিলে চট্টগ্রামের অদূরে নিজের হাতে গড়া কুন্ডেশ্বরী ভবনে তাঁকে হত্যা করা হয়। কুন্ডেশ্বরী বিদ্যাপিঠের প্রতিষ্ঠাতা বাবু নূতন সিংহের কথা বলছি। এপ্রিলের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম শহরের পতন হয়েছিল। ১৩ তারিখে পাক বাহিনী কুন্ডেশ্বরী আক্রমণ করে। বাবু নুতন সিংহ তখন মন্দিরে প্রার্থনা করছিলেন।

স্বাধীনতা ঘোষণার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৭ জন অধ্যাপক সস্ত্রীক আশ্রয় নিয়েছিলেন সেখানে। সৈয়দ আলী আহসান, ডঃ এ আর মল্লিক, ডঃ আনিসুজ্জামান, ডঃ কোরাইশী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রাম থেকে আগরতলা যাওয়ার পথে জনাব এম, আর, সিদ্দিকীও কুন্ডেশ্বরীতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
পাক বাহিনীর অগ্রগতির খবর শুনে সবাই কুন্ডেশ্বরী ছেড়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যায়। বাবু নূতন সিংহকে যাওয়ার কথা বললে তিনি রাজী হননি। বলেছিলেন, যদি মরতে হয় দেশের মাটিতেই মরব। অনেক পীড়াপীড়ির পরও তাঁকে রাজী করান গেল না। এদিকে পাক বাহিনী দ্রুত এগিয়ে আসছিল। ১৩ই এপ্রিল পাক বাহিনী কুন্ডেশ্বরী ভবনে প্রবেশ করে।


ছেলেরা আগেই পালিয়ে গিয়েছিল। বাবু নূতন সিংহ তখন মন্দিরে প্রার্থনা করছিলেন। জনৈক সালাউদ্দিন তাঁকে সেখান থেকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে এসেছিল। তাঁর চোখের সামনে মন্দিরটি উড়িয়ে দিয়েছিল। তারপর তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল নৃশংসভাবে। মেজর তিনটি গুলি করার পরও- সালাউদ্দিন রিভলবারের গুলি ছুঁড়েছিল নূতন বাবুর দিকে। তিনি লুটিয়ে পড়েছিলেন। তেমনি মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন তিন দিন।

নিজের মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে পারেননি তিনি। সেজন্যে একটা ক্ষোভ ছিল মনে। তখন রাউজান থানায় কোন বিদ্যালয় ছিল না। রাউজান থানার মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগের জন্য তিনি গড়ে তুলেছিলেন কুন্ডেশ্বরী বালিকা মন্দির। পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিদ্যালয় ছিল এটি। শুধু রাউজান থানা নয় দেশের সব এলাকা থেকেই ছাত্রীরা যায় সেখানে লেখাপড়া করার জন্যে। বিদ্যালয়ের নিজস্ব ডাকঘর, সরাসরি টেলিফোন যোগাযোগ, পানির পাম্প, জেনারেটর, বাস ইত্যাদি ছিল। মোট প্রায় ২ লাখ টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে সেখানে। 

*তথ্যসূত্র: দৈনিক বাংলা ১৩ এপ্রিল, ১৯৭২ (ভাষারীতি অবিকল রাখা হয়েছে)। 

** এই লেখাটাই ২০০৭ সালে একটা ওয়েব সাইটে লিখেছিলাম। তখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ওই সাইটে চুটিয়ে লিখছিলাম। তো, এই লেখাটা পরে আর খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কারণ বেশ ক-বছর হয়ে গেল ওই সাইটে আমি আর লেখালেখি করি না। আমার শত-শত লেখা মুছে ফেলে ওখান থেকে চলে এসেছিলাম।
পরবর্তীতে ওখানে আবারও লেখা শুরু করেছিলাম, যথারীতি বন্ধও করে দিয়েছিলাম। আমার খেয়াল ছিল না কিছু লেখা ড্রাফটও করা ছিল। ভাগ্যিস, ড্রাফট করেছিলাম নইলে এই লেখাটাও আর খুঁজে পেতাম না।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিক্ষিপ্ত আকারে বিভিন্ন জায়গায় লিখেছিলাম। সবগুলোর হদিস বার করা এখনও আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এটা আমার জন্য ভারী বেদনার! কারণ অন-লাইনে এখন মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত তথ্য পাওয়াটা যতোটা সহজ তখন এতোটা সহজ ছিল না। খুব কম তথ্যই ওয়েব-সাইটে পাওয়া যেত। তথ্য-উপাত্ত যোগাড় করতে, একেকটা লেখা লিখতে গিয়ে কেটেছিল অনেক বিনিদ্র রজনী!
এখন আমার সাইটে মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত [১] যেসব লেখা আছে, ভাল করে লক্ষ করে দেখলাম, অনেক লেখা নাই যা আমি ইতিপূর্বে লিখেছিলাম। এই বেদনার কথা কাকে বলি! তবুও মনটা অন্য রকম হচ্ছে, অন্তত কিছু লেখা তো উদ্ধার করা গেছে।

***নূতন সিংহের হত্যার জন্য দায়ী জনৈক সালাউদ্দিন...। এই জনৈক সালাউদ্দিন যে সাকা চৌধুরী এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। কারণ ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল রাউজানে গেলে, "নূতন চন্দ্রের ছেলে প্রফুল্ল সিংহ সাংবাদিকদের বলেন, '১৩ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সাকা চৌধুরী আমাদের বাড়িতে এসে বাবাকে মন্দির থেকে বের করেন। পরে তাকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয় বলে শুনেছি। পাকিস্তানি বাহিনী এর আগে দুবার এসে বাবার সঙ্গে কথা বলে চলে যায়। পরে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সাকা চৌধুরী এসে বলেন, 'তার বাবা (ফজলুল কাদের চৌধুরী) নূতন সিংহকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন'।'" [২] (প্রথম আলো, ২৫.০৯.১০) 

****সো-কলড ইসলামের ধারক-বাহক পাকিস্তানিরা প্রার্থনারত অবস্থায় অবলীলায় একজন মানুষকে খুন করে, প্রার্থনাস্থল উড়িয়ে দেয়। আজ তাদের প্রার্থনাস্থলে বোমা ফাটে, প্রাণ বিনষ্ট হয়।
হিস্ট্রি রিপিট!

*****সাকা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, "...গঠিত ট্রাইব্যুনাল...হিন্দুপাড়ায়, শ্মশানে শ্মশানে ঘুরে ফিরেছেন। সাইরেন বাজিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করতে গেছেন মনে হয়...। (কালের কন্ঠ, ২৯.০৯.১০)
শাবাশ, যোগ্য দেশের যোগ্য মরদ (!) বটে! আমাদের উচিত সাকার পদাম্বুজে চুমু খাওয়া।

******মুক্তিযুদ্ধের কিছু ছবি: http://71photogun.blogspot.com/

সহায়ক লিংক:
১. ১৯৭১, প্রসব বেদনা: http://tinyurl.com/37wksnh
২. প্রথম আলো: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2010-09-25  

Tuesday, September 28, 2010

তাহারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল

পাবনার ডিসি সাহেব বলেছেন, "...তিনি বা অন্য কর্মকর্তারা কাঁদেননি বা কারও সহযোগিতাও চাননি...।"

"বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন ও প্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের কাছে বলেন, জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, তাঁরা কাঁদেননি। বৈঠকে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগও করেন তিনি। ...তিনি (আরও) বলেন, জনপ্রতিনিধিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। তাঁদের কাছে অনেক মানুষই আবদার নিয়ে আসেন। আবদার রক্ষার জন্য তিনি তার লোকজনকে চাকরি দিতেই চাইবেন...।" [১] (প্রথম আলো/ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১০)

ইতিপূর্বে আমি যে লেখাটা লিখেছিলাম [২] তা এখন মূল্যহীন! কারণ ওখানে আমি লিখেছিলাম, "...প্রশাসনের কান্না আমাকে স্পর্শ করছে না।...There was no one left to speak for me. এইসব হাবিজাবি"। এরা যখন কান্নাই করেননি তখন লেখার মূল ভাবটাই অথর্হীন হয়ে পড়েছে। লেখাটা ডিলিট করা প্রয়োজন। অবশ্য আমার সমস্ত লেখালেখিই মূল্যহীন-গার্বেজ। থাকুন আবর্জনা আবর্জনার জায়গায়। মুছে লাভ নাই, কত আবর্জনা পরিষ্কার করব!

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১
সৌজন্যে: প্রথম আলো, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০
দৈনিক সমকাল, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০
আমি মিডিয়ার প্রতি বিষোদগার করি। এরা আমাদেরকে কেন এমন বিভ্রান্ত করলেন, কেনু-কেনু-কেনু? তাহলে এই সব ছবিগুলো কি ফটোশপের কাজ, নাকি আধুনিক ক্যামেরাগুলোতে পেয়াজের রস ছুঁড়ে দেয়ার কোন পদ্ধতি আছে? কি জানি, এই গ্রহের কটা খবরই বা আমি জানি!

কোন একটা রাশিয়ান গল্পে পড়েছিলাম, "মরদও কাঁদে তবে সময়মতো মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারাটাই আসল কথা"।
আর আমার বাংলা গল্প হচ্ছে, 'মরদদের কাঁদতে নেই। কিন্তু কাঁদলে মরদের মতই স্বীকার যেতে হয়, কেঁদেছি, বেশ করেছি'।

আকালের দেশে পুরুষ আছে কিন্তু মরদ কোথায়! স্মৃতি থেকে লিখছি, সম্ভবত বছর পনেরো হবে। তখন ইউএনওকে টিএনও বলা হতো। তো, এক মন্ত্রী বাহাদুর রাজনৈতিক সভা করার জন্য যেদিন টিএনওর গাড়ি চাইলেন সেদিনই টিএনও-এর ওই গাড়ি টিকাদান কর্মসূচির জন্য ঠিক করা ছিল। বিনীত ভঙ্গিতে টিএনও মন্ত্রী বাহাদুরকে এটা বলার পর মন্ত্রী বাহাদুর ক্ষেপে গিয়েছিলেন, 'টিকাদান কর্মসূচি বড়ো না আমার অনুষ্ঠান'? তারপরও টিএনও অপারগতা প্রকাশ করলে মন্ত্রী বাহাদুর আরও ক্ষেপে গিয়ে বললেন, 'খাগড়াছড়ি বদলি হয়ে যাবেন'।
টিএনও সাহেব শান্ত গলায় বলেছিলেন, 'স্যার, এই দেশের যে কোন জায়গায় চাকরি করতে আমি বাধ্য। খাগড়াছড়ি তো এই দেশেই, আমার কোন সমস্যা নেই'। মন্ত্রী বাহাদুর শীতল।
পরদিন এই খবরটাই সম্ভবত ভোরের কাগজের একস্লিপে চলে এলো। খবরটা দেশময় নিমিষেই ছড়িয়ে পড়ল। তখন মন্ত্রী বাহাদুর অতি শীতল!
তো, যেটা বলছিলাম, এখন এই দেশে মরদ কোথায়!

এখন এই দেশে সবই সম্ভব, সবই পাওয়া যায়। আমার একটা লেখার চরিত্রের খুব ইচ্ছা ছিল, তিমি মাছের ঝোল খাওয়ার। বেচারা, খেতে পারেনি। এখন আমি জোরের সঙ্গে বলতে পারি, চরিত্রটা এই সময়ে থাকলে তিমি মাছের ঝোল কেন বাঘের দুধের পায়েসও খেতে পারত। এখন সবই সম্ভব।
যাগগে, ডিসি সাহেব এবং অন্যরা যখন কাঁদেননি তখন এই নিয়ে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। এটা মিডিয়ার কারসাজি, পেয়াজের রস।

বালকবেলায় যখন ছায়াছবি দেখতাম অতি আনন্দ হতো সেইসব ছবি দেখে যেসব ছবিতে নায়ক নায়িকাকে পেয়ে যেত বা নায়িকা নায়ককে। পয়সা খরচ করে কে যায় একগাদা দুঃখ কেনার জন্যে। আজ আবারও বালকবেলার কথা মনে পড়ে গেল, এইচ টি ইমাম সাহেবের বক্তব্যে। কী চমৎকার সমাধান!
"সবাই সুখের সাগরে ভাসিতে চাহিল, 
নৌকার পালে হাওয়া লাগিল।"
আমি অপেক্ষায় আছি, সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার মহোদয়কে পূর্ণ মন্ত্রী হিসাবে দেখতে এবং এসপি সাহেবকে আই,জি রূপে। 

খোদা-না-খাস্তা, মিডিয়ার ছবিগুলো যদি সত্য হয় তাহলে সেটা হবে এই গ্রহের অতি বিচিত্র এক ঘটনা। হিন্দি ছবিকে হার মানিয়ে দেবে কারণ এ অভূতপূর্ব! হিন্দি ছবিতে আমরা দেখি না ছোটবেলায় যমজ ভাই মেলায় হারিয়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি।
হয়তো ডিসি সাহেব আসলে একজন না, দুজন কিন্তু যমজ ভাই। বাল্যকালে মেলায় হারিয়ে গিয়েছিলেন। হতে পারে না এমনটা, বেশ পারে। তাই তো এক ভাই কেঁদেছেন, অন্য ভাই কাঁদেননি। সিম্পল! কিন্তু দুই যমজ ভাই আবার একই জেলার ডিসি! ধুর, আমার সব কেমন জট পাকিয়ে যাচ্ছে, এটা কেমন করে হয়? আমার বুদ্ধিশুদ্ধির উপর আমার নিজেরই ভরসা নাই। ভেবে ভেবে এর সমাধান বের করতে পারব এমন আস্থা নিজের উপর নাই। পাঠকদের অনেক বুদ্ধি, এঁরা ভেবে ভেবে বার করুন ততক্ষণে আমি ঘু - মা - ই...।

....
পরিশিষ্ট: স্বর্গ-নরকের মাঝামাঝি একটা জায়গা আছে। নামটা ভুলে গেছি! তো, ওই মাঝামাঝি জায়গায় যিনি ঝুলে থাকেন তার চেয়ে অভাগা আর কেউ নাই। লেখাটা লেখার পরের দিন জানলাম, এই ডিসি সাহেবকে বদলি করে দেয়া হয়েছে। মাথাব্যথার জন্য পেইন-কিলার খেয়ে লাভ নাই, মাথা কেটে ফেলাই উত্তম। 'না রাহেগি বাঁস, না রাহেগি বাঁসরি'- বাঁশও নাই বাঁশীও নাই- আম গেল, ছালাও!

সহায়ক লিংক:
১. প্রথম আলো: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2010-09-28
২. সুদৃশ্য কফিনের পেরেকগুলো: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_5190.html
৩. ইত্তেফাক: http://ittefaq.com.bd/content/2010/09/24/news0187.htm
৪. ফোকাস বাংলা: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2010-09-24
সমকাল: http://www.samakal.com.bd/details.php?news=13&view=archiev&y=2010&m=09&d=24&action=main&option=single&news_id=94729&pub_no=464

Monday, September 27, 2010

ছেলে-মেয়ে, মেয়ে-ছেলে

আমি আগেও লিখেছি স্কুলগুলোয় আমি কেবল অক্ষর শেখাবার উপরই জোর দিচ্ছি না [১]। পারলে আমার অর্জিত অল্প জ্ঞানও গুলে খাইয়ে দেই।

স্কুল, দুই-এ যখন ফুটবল দেয়া হয়েছিল [২] তখন ছাত্ররা সল্লোসে বলেছিল, মেয়েরা কিন্তু ফুটবল খেলবে না।
আমি তখন বলেছিলাম, কেন?
এদের সাফ উত্তর, ফুটবল মেয়েরা খেলে না।
কে বলেছে ফুটবল মেয়েরা খেলে না?
সবাই চুপ।
এবার আমি বললাম, মেয়েরা তোমাদের সাথে পড়তে পারবে কিন্তু ফুটবল খেলতে পারবে না এটা কেমন কথা!
কারও মুখে রা নেই। আমি বুঝতে পরছিলাম, এরা এটা মেনে নিতে চাচ্ছে না।
কখনও কখনও কঠিন আচরণ জরুরি হয়ে পড়ে। আমি কঠিন গলায় বললাম, হয় মেয়েরাও খেলবে নইলে ফুটবল খেলা বন্ধ।
পরে খোঁজ নিয়ে দেখেছি ছেলেরা মেয়েদেরকেও খেলায় নিত।

এই স্কুলে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। এখানে সুই-সুতার কাজ শেখার জন্য ফ্রেমসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনে দেয়া হয়েছিল। এরা শিখতে পারলে আমার ভাবনা আছে, এরপর এদেরকে শেখার জন্য আপাতত পুরনো একটা সেলাই মেশিন কিনে দেয়া। একটা মেয়ে সেলাইয়ের কাজ করে গোটা একটা পরিবারকে কেমন করে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে এর নমুনা হচ্ছে রানি [৩]। ছোট্ট এই মেয়েটি তার গোটা পরিবারকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এবারের ঈদে নাকি প্রচুর কাজও পেয়েছে!

স্কুলে যখন সুই-সুতোর কাজ শেখার জন্য জিনিসপত্রগুলো দেয়া হচ্ছিল তখন এই স্কুলের 'সফর' নামের এক ছাত্র ফট করে জিজ্ঞেস করে বসল, সেলাইয়ের কাজ আমরা ছেলেরা কি শিখতে পারব?
এখানে আমি ভুল করে ফেলি। মুখ ফসকে বেরিয়ে পড়ে, সেলাই তো মেয়েদের কাজ।
কথাটা মাটিতে পড়তেও পারেনি, উত্তর হাজির, স্যার, মেয়েরা ফুটবল খেলতে পারলে আমরা ছেলেরা সেলাই শিখতে পারব না কেন?
কঠিন যুক্তি। আমি কুপোকাত!
আমি বিস্মিত দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকাই কারণ ক-দিন আগে এর হাত ভেঙ্গেছে। মাত্র প্লাস্টার করে একে নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের হাবিজাবি অনেক কাজের মধ্যে এদেরকে চিকিৎসা দেয়াটাও যুক্ত।
সফর (ছবিতে যার হাতে প্লাস্টার)
একে একজন ছেলে বলছে সেলাইয়ের কাজ শিখবে কি না তার উপর এর হাত ভাঙ্গা। আমি মিনমিন করে বললাম, পারলে শেখো।

এরিমধ্যে চলে গেছে অনেক কটা দিন। আজ স্কুলে সফর মিয়ার কিছু কর্মকান্ডের নমুনা দেখলাম। এ অনায়াসে মেয়েদেরকে সেলাইয়ে পেছনে ফেলে দিয়েছে। ফাজিলের দল- এই সব পোলাপাইন সম্ভবত আমাকে গিনিপিগ পেয়েছে। আমার উপর একের পর এক পরীক্ষা চালিয়ে হতভম্ব করে দিচ্ছে।


সহায়ক লিংক:
১. অক্ষর শেখা...: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_2229.html
২. ফুটবল...: http://www.ali-mahmed.com/2010/08/blog-post_07.html
৩. রানি: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_25.html 

Sunday, September 26, 2010

নাম বিভ্রাট এবং...

মামুনকে নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম [১], যে ছেলেটি আমাকে চমকে দিয়েছিল। একে এক ক্রেট পানির বোতলও দেয়া হয়েছিল যেটা জিরো ক্রেডিটের [২] আওতায় পড়ে (যে টাকাটা আর ফেরত দিতে হয় না) ।
এ ঠিকই সেই পানি বিক্রি করে কিছু পুঁজিও জমিয়ে ফেলেছে এবং কিছু কিছু করে স্কুলে নিয়মিত সঞ্চয়ও করছে।

স্কুল, এক [৩] এবং স্কুল, দুই [৪], এখানকার শিক্ষার্থী প্রত্যেককে একটা করে মাটির ব্যাংক কিনে দেয়া হয়েছিল। এরা মাটির ব্যাংকে নিয়মিত পয়সা জমাচ্ছে। এদেরকে আগ্রহী করার জন্যে আমাকে খানিকটা চালবাজিও করতে হয়েছে, এদেরকে বলা হয়েছে যখন মাটির ব্যাংকগুলো ভাঙ্গা হবে তখন যার টাকা সবচেয়ে বেশী হবে তার জন্য পুরষ্কার আছে।

আমি আগেও লেখায় বলেছিলাম, আমি কেবল অক্ষর শিক্ষা দেয়ার উপরই জোর দিচ্ছি না। আমি চাচ্ছি, আমার নিজের বাচ্চারা যা যা শিখবে এরাও তাই শিখবে। আমি জটিল কথা বুঝি না, সাফ কথা, আমার নিজের বাচ্চার পড়ার-জানার সুযোগ থাকলে এদের থাকবে না কেন? এই দেশের প্রতিটি শিশুর পড়াবার দায়িত্বটা সরকারের ছিল, সরকার বেচারা পারছে না, কী আর করা!

আমি নিজে যে ভুলগুলো করেছি সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিচ্ছি, সেই শিক্ষাটাই এদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। একজন মানুষের জীবনে সঞ্চয়ের যে কী প্রয়োজনীয়তা এটা আমি আমার দুঃসময়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। যে শিক্ষাটা একটা পিঁপড়ার আছে, দুঃসময়ের জন্য খাবার জমিয়ে রাখতে হয় সেই শিক্ষাটাই আমার ছিল না। আফসোস, কখনই আমার জীবনে কোন সঞ্চয় ছিল না!
তো, স্কুল তিন [৫] -এর বেলায় সমস্যাটা দেখা দিল কারণ এখানকার বেশিরভাগ ছেলেই ঘুমায় ওভারব্রীজে, মাটির ব্যাংক রাখবে কোথায়? এই সমস্যারও একটা সমাধান বের হয়। এরা এদের টিচারের কাছে টাকা জমাবে। এর জন্য প্রত্যেকের নাম লিখে একটা খাতাও বানিয়ে দেয়া হয়েছিল।
এদের কান্ডকারখানা দেখে দেখে আর কত হতভম্ব হব? এদের এই স্কুলটা চালু হয়েছে এক মাসও হয়নি এখনই এরা প্রায় ১৪০০ টাকার মত জমিয়ে ফেলেছে!

আজ সকাল-সকাল ফোন। মামুন নামের এই ছেলেটিকে নিয়ে 'দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন'-এ নাকি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে [৬]। ভাল, ছেলেটা জানলে খুশি হবে। প্রতিবেদনটা পড়ে একজনের নাম দেখে মেজাজ খারাপ হয়। এই মানুষটা এখানে কী করছে? মানুষটা কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে আমার কাজ পন্ড করছে! আমার বাড়া ভাত আগেভাগেই খেয়ে ফেলছে।
আবার মানুষটা আমি কি না এটাও বুঝতে পারছি না!

পত্রিকায় লিখেছে, "...আলি মাহমুদের..."।
এই আলি মাহমুদটা কে? তবলার ঠুকঠাক থাকুক আসল কথায় আসি। এটা যে এবারই প্রথম হয়েছে এমন না, এরা ইচ্ছা করে এই কাজটা করে! ব্যাটারা এই সব ফাজলামি আর কত কাল করবে? এরা কলাম্বিয়ার গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস, তুরস্কের ওরহান পামুক, ফিলিস্তিনের মাহমুদ দারবিশ, ইন্দোনেশিয়ার প্রমোদিয়া অনন্ত তোয়ের লিখতে পারে; কেবল পারে না আলী মাহমেদ লিখতে! কলমের নিব ভেঙ্গে যায়!
জানি-জানি, অনেকে চোখ পাকাচ্ছেন, মিয়া, ছলিমুল্লা, কোথায় এঁরা আর কোথায় তুমি তিন টাকা দামের কলমচী, ছ্যাহ!
রসো, আগে আমার যুক্তিটা শেষ করি। অনুমান করি, যারা রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন সমস্যাটা তাদের না। এসি অফিসে যেসব পন্ডিত স্যাররা ঢাকায় বসে থাকেন, তাঁদের।
কিন্তু ভুল মনে হলে কেন মাহমেদের স্থলে এখানে আহমেদ না, কেনই বা মোহাম্মেদ না; কেনই বা এদের এটা মনে হলো মাহমুদটাই সঠিক?
কোথাও খটকা লাগলে যিনি রিপোর্টটা পাঠিয়েছেন তাকে একটা ফোন করে জেনে নিলেই হয়। পাগল, এটা করলে মান থাকে নাকি? এই চটচটে জ্ঞানের ভান্ডরা কেন যে বুঝতে চান না কোন নাম অভিধানের কোন শব্দ না যে ভুল মনে হলো আর অভিধানের পাতা চিবিয়ে খেয়ে ঠিক করে দিলুম।

এঁরা হচ্ছেন একেকটা চলমান জ্ঞানের ভান্ড, একটা ফোন করার জন্য ঘাড় কাত করলেই জ্ঞান গড়িয়ে পড়বে এই ভয়ে এতটাই কাবু যে আর ফোন করা হয়ে উঠে না।

সহায়ক লিংক:
১. মামুন: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_17.html
২. জিরো ক্রেডিট: http://tinyurl.com/2fpxq9d
৩. আমাদের ইশকুল, এক: http://tinyurl.com/3xpuov5
৪. আমাদের ইশকুল, দুই: http://tinyurl.com/2fs9j4p
৫. আমাদের ইশকুল, তিন: http://tinyurl.com/327aky3
৬. বাংলাদেশ প্রতিদিন: http://tinyurl.com/22w53un

সরকারি পোশাকপরা গুন্ডা

এই সব সরকারি গুন্ডাদের আমরা কখনও দেখি ভিক্ষুকের বেশে [১], কখনও খুনির বেশে। এরা কেবল একজন মানুষকে পরোক্ষভাবে খুনই করেন না, করেন তার গোটা পরিবারকে। এদের কেউ কিচ্ছু বলে না। ইয়াসমীন হত্যা ব্যতীত ক-জন পুলিশম্যানের ফাঁসি হয়েছে- মানেটা কি এরা ফাঁসির মত অপরাধ করছেন না, করছে কেবল আমজনতা?
এদের শাস্তি বলতে বড়জোর পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুদিন ওখানে গায়ে বাতাস লাগিয়ে কাটাবার পর ঘুষ-ঘাস দিয়ে আবারও নতুন কোথাও পোস্টিং। দুর্বল মানুষ যেমন কচুগাছ কাটতে কাটতে ডাকাত হয় তেমনি এরা আরও নৃশংস, দুর্ধর্ষ হন।

এসএসসি পরীক্ষার্থী রুবেল এবং নাজমুলকে চোখ বেঁধে তালা থেকে সাতক্ষীরা জেলা দায়রা জজ আদালতে নিয়ে আসা হয়েছে! সন্দেহজনক মানুষের চোখ বাঁধার নিয়ম আজকের না, তাও জটিল কোন মিশনে, মাঠ পর্যায়ে; কখনও শারীরিক নির্যাতন করার সময়। এটা উচিত, কি অনুচিত সে প্রসঙ্গে এখন আর যাই না কিন্তু তাই বলে আদালতে নিয়ে আসা হবে চোখ বেঁধে? একটা সভ্য দেশে এটা সম্ভব? আর এরা কি জঙ্গিদের চেয়েও দুর্ধর্ষ?

প্রথম আলো জানাচ্ছে [২], এই দুইজনের প্রতি পুলিশের অভিযোগ হচ্ছে, এরা একটা খুনের সঙ্গে জড়িত।

কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার্থী রুবেল বিচারকের কাছে ফাঁসি চাইছে তবুও যেন তাকে রিমান্ডে না দেয়া হয়। কারণ রিমান্ডে তাকে অমানুষিক অত্যাচার করা হয়েছে। একটা মানুষ কোন পর্যায়ে গেলে এমনটা বলতে পারে, আমাকে ফাঁসি দেন কিন্তু রিমান্ডে দিয়েন না! মানুষ কখন, কোন পর্যায়ে মরে যেতে চায়?
রুবেলের আরও বক্তব্য, এসআই লুৎফুর রহমান তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল। না দেয়ায় তাকে অমানুষিক অত্যাচার করে জোর করে খুন করেছে এটা বলার জন্য বাধ্য করা হয় এবং এমনটা না করলে পরবর্তীতে আরও ভয়াবহ নির্যাতন করা হবে বলে শাসানোও হয়।
জজ সাহেব পুরো বিষয়টা অনুধাবন করতে পেরেছেন এবং রুবেলকে জেলহাজতে পাঠাবার নির্দেশ দিয়েছেন।

ভাল, মাননীয় জজ সাহেবকে আন্তরিক সাধুবাদ। কিন্তু এটুকু করেই কী জজ সাহেবের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? তিনি এই এসআই নামের গুন্ডাকে কেন কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন না? এর জন্য আইনের কোন বই ঘাঁটতে হবে এটা খুঁজে বের করা তো তাঁর দায়িত্ব, আমাদের না।
আমরা কেউই যার যার দায়িত্ব পালন করছি না- গা ভাসিয়ে দিচ্ছি। এর পরিণাম ভয়াবহ! যে বিষবৃক্ষগুলো রোপণ করছি এতে টসটসে ফল না ধরার তো কোন কারণ দেখি না।
এই দেশে কি এমন কোন আইন নাই সরকারী উর্দিপরা এই সব গুন্ডাদের বিচার করা যাবে? কখনও-সখনও আমরা দেখি আদালত এদের মৃদু তিরস্কার করে ছেড়ে দেন। বাসে গান পাউডার দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে ফেলা হয়, চড়চড় করে চামড়া পুড়তে থাকে। যে পুলিশম্যান এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন তাকে আদালত মৃদু তিরস্কার করেছিলেন! বাহ, এই-ই!
গোল্ডা মায়ারের কথাটা আবারও বলতে হয়, "কাউকে হত্যা করা এবং হত্যা করার সিদ্ধান্ত দেয়ার মধ্যে কোন তফাত নাই"। যেমন তফাত নাই হত্যাকারীকে রক্ষা করা, তেমনি আইনের থাবা থেকে বেঁচে যেতে পারেন না প্রকৃত সত্যকে গোপন করে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টাকারী।

মার্টিন সাহেবের উদাহরণ দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, "...There was no one left to speak for me".হিস্ট্রি রিপিট! এই দেশের মহা ক্ষমতাধর আর্মি, গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছে। আজ প্রশাসন কাঁদছে [৩], কাল আপনারা কাঁদবেন। কপাল, অনেক কান্না দেখার যে বাকী রয়ে গেছে আমাদের...।

সহায়ক লিংক:
১. ভিক্ষুক: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_03.html
২. প্রথম আলো: http://www.eprothomalo.com/?opt=view&page=5&date=2010-09-26
৩. প্রশাসনের কান্না: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_5190.html   

শিরোনামহীন

জানি না কেন আজ সকাল থেকেই মনটা ভারী বিষণ্ণ! অথচ আকাশটা আজ মেঘলা না, ঝকঝকে, গাঢ় নীল। প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত! তবুও এই অস্থিরতার উৎস কি জানা নেই।
আমার এই আমিকে আমি বড়ো ভয় পাই। চোখ বন্ধ করে বলা যায়, আমার ভেতরের ঈর্ষায় কাতর পশুটা তার সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে। একে পরাস্ত করা চাট্টিখানি কথা না। প্রতিবার যে একে কাবু করা যাবে না এটাও আমি বিলক্ষণ জানি। অথচ আমার সমস্ত জীবনের চমৎকার সময় কাটাচ্ছি এখন। বছরের-পর বছর ধরে আমার লালন করা ছোট-ছোট স্বপ্নগুলো তরতর করে বেড়ে উঠছে, অজস্র অদেখা স্বপ্নের বীজ উঁকিঝুকি মারছে। তাহলে?

আমার পাগলা টাইপের এক বন্ধু আছে। একে ফোন করে বলি, তোর ব্ল্যাক স্ট্যালিয়ন নিয়ে আয়। একজন কাউবয়ের যেমন ব্ল্যাক স্ট্যালিয়নের পিঠে বসে থাকাই সুখ তেমনি এর মটর সাইকেলে! আমি নিশ্চিত, এ কোন ফেরারি গাড়ির সঙ্গেও এর মটর সাইকেল অদল-বদল করবে না। এমনিতে এখন যেটায় দাবড়ে বেড়ায় এটার দামও ছোটখাটো একটা গাড়ির দামের সমান। এটায় চেপে ঢাকা-সিলেট যাওয়াটা এর কাছে ছেলেখেলা। আমাকে বান্দরবান নিয়ে যাওয়ার জন্য ঝুলাঝুলি করছে। স্রেফ পাগলামি!

এমনিতে এ কখনও জানতে চায় না কোথায় যাব। কেবল রওয়ানা হওয়ার আগে জিগেস করবে, কোথায় যাবি? আজও জানতে চায়, কোথায় যাবি?
আমি উদাস হয়ে বলি, জানি না।
এ এক লহমায় বুঝে যায় ঝামেলা আছে। হাইওয়েতে এ কখনও ১০০ কিলোমিটারের নীচে চালাতে পারে না। এই দেশে মটর সাইকেল এই গতিতে চালানো অপরাধ। কারণ আমাদের দেশে হাইওয়ের পাশেই হাট-বাজার-বাড়ি-ঘর সমস্ত কিছু। কখন বাচ্চা-কাচ্চা-গরু-ছাগল নিমিষেই রাস্তায় চলে আসবে এটা আগাম বলা মুশকিল। সচরাচর গতি ১০০ ছাড়ালে আমি বকা দেই। ডিজিটাল স্পীডমিটারে গতি আজ দেখছি এ ১১০ ছাড়িয়েছে। আমি চুপ করে বসে থাকি। মাথা থেকে হেলমেটটা খুলে ফেলি- বিরক্ত লাগছে। হেলমেটের কারণে তীব্র আকাশটা আমি দেখতে পাচ্ছি না। তাছাড়া কেবল মাথা বাঁচিয়ে কী হবে, দূর-দূর!

আমি স্থির চোখে আকাশ দেখি। থ্রি পয়েন্ট টু মেগাপিক্সেল সেলফোন লেন্সের একে ধারণ করার ক্ষমতা কোথায়! আমি নিশ্চিত, আমি না, আকাশটাই আজ পাগল হয়ে গেছে। কী চোখ ধাঁধানো- স্বর্গের আকাশ কী এরচেয়েও চমৎকার!
বড়ো বড়ো কবি-সাহিত্যিক জ্যোৎস্না রাতে মরতে চান। কবি-সাহিত্যিকরা দলে দলে মরুক জ্যোৎস্না রাতে, আমার কী! আমার মত সাধারণ মানুষের জ্যোৎস্নায় ডুবে মরার শখ নাই। আমি মরতে চাই এমন অপার্থিব আকাশটাকে তাড়া করতে করতে।
   

Friday, September 24, 2010

সুদৃশ্য কফিনের পেরেকগুলো

ধুতুরা গাছে আম ধরে না, ধুতুরাই ধরে [০]। একজন লাগাবে বিষবৃক্ষ, এতে তো আর 'আমরুদ' ফল ধরবে না। পাবনায় যেটা হয়ে গেল এটা নিয়ে অনেকে চমকে গেছেন হয়তো কিন্তু  বুকে হাত দিয়ে বলি, আমি বিন্দুমাত্র অবাক হইনি। এমনটাই তো হওয়ার কথা, এ আর বিচিত্র কী!
জেলা প্রশাসনের কান্না আমাকে স্পর্শ করছে না [১]। আমাদের এমন অনেক কান্না নদী-নালায় মিশে গেছে। তখন প্রশাসনের লোকজনরা বসে বসে তামাশা দেখেছেন।
হিস্ট্রি রিপিট। মার্টিন সাহেবের এই কথাগুলো আমি অনেক জায়গায় শেয়ার করেছি। এখানেও শেয়ার করার প্রয়োজন বোধ করি:
"...First they came for the jews. I was silent. I was not a jew. Then they came for the communists. I was silent. I was not a communist. Then they came for the trade unionists. I was silent. I was not a trade unionist. then they came for me. There was no one left to speak for me". 

এ তো হওয়ারই ছিল। একসময় আমরা দেখব আমাদের পেছনে আর কেউ নাই।

আমরা এটা কেন বুঝতে চাইছি না সরকারী দলের সংসদ সদস্য মহোদয়গণ গোটা দেশটাকে চাক চাক করে কেটে নিজেদের কাছে রেখেছেন। এই দেশে এই চল নতুন না, যারা ক্ষমতায় আসেন তারাই এই কাজটা করেন। করতে হয়, না করে উপায় থাকে না। অধিকাংশ সংসদ সদস্য কোটি-কোটি টাকা খরচ করে [২] জনসেবা করতে এসেছেন। এঁদের জনসেবায় বাধা দেয়াটা কী সমীচীন!
পাবনা জেলার বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় তাঁর দলের কর্মীদের চাকরি দেয়া সংক্রান্ত জটিলতায় এখানকার সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রথম আলোর [৩] কাছে বলেছেন, "জেলা প্রশাসক একজন মিথ্যাবাদী এবং মানসিক রোগী...।"
আমার জেনে ভাল লাগছে, সংসদ সদস্য মহোদয় কেবল মিথ্যা সনাক্ত করার মেশিনই না তিনি একজন মানসিক রোগের চিকিৎসকও বটে।

এখানে কি হয়েছে এটা আমার জানা নাই কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় দলের লোক-টোক বিষয় না, বিষয় হচ্ছে চাকরি দেয়ার নাম করে শত-শত মানুষের কাছ থেকে দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা নিয়ে নেয়া হয়। আপনারাই বলুন, এদের চাকরি না হলে যে টাকাগুলো নেয়া হয়েছে এগুলো কে ফেরত দেবে? আপনি, না আমি?
এই গ্রহে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের স্নেহের হাত ব্যতীত কুটোটিও নড়ে না তেমনি আমাদের দেশের সংসদ সদস্য সাহেবদের হাত কারও মাথায় না থাকলেও।

আমরা এটাও বিস্মিত হয়ে লক্ষ করেছি, জেলা প্রশাসকের ডাকা এই অনুষ্ঠানে এস, পি সাহেব আসেননি। কেন আসেননি কে জানে! সম্ভবত উপর থেকে নির্দেশ পাননি নাকি কবিতা লিখছিলেন [৪]? এই 'উপর' জিনিসটা বড়ো মজার জিনিস- পুলিশ পোষা হয় আমাদের ট্যাক্সের টাকায় কিন্তু এরা উপরের নির্দেশ ব্যতীত এক পাও ফেলতে পারেন না।
তা, ঘটনাটা যখন ঘটে তখন পুলিশ স্যাররা ওখানে কি করছিলেন? ধরে নিলাম, পর্যাপ্ত পুলিশ পরীক্ষা হলে ছিল না কিন্তু রিজার্ভ ফোর্স, দাঙ্গা পুলিশ এরা কোথায় ছিল? এমনিতে তো দেখি বিদ্যুতের দাবীতে জনগণের উপর দাঙ্গা পুলিশ নাঙ্গা হয়ে ঝাপিয়ে পড়েন। তখন বুঝি শরীরে আলাদা জোশ এসে পড়ে, না? এখনও এর সঙ্গে জড়িত সবগুলো মানুষকে এরা ধরতে পারেননি? সারদার ট্রেনিং কি কেবল অল্প বয়সি ছাত্র-ছাত্রীদের [৫] জন্যে?

সরকার তাঁদের এই সব পোষ্যদের লালন করুন, আমাদের কী! ক্ষমতার কফিনের পেরেক গোণা ব্যতীত আমাদের আর কী-ই বা করার আছে। কফিনের পেরেক তো পেরেকই, এটা সোনার পানি দিয়ে মুড়িয়ে দিলেই কফিনের মুর্দার খানিকটা আরাম হয় এমনটা অন্তত আমার জানা নাই...।

সহায়ক লিংক:
০. ধুতুরা গাছে...: http://www.ali-mahmed.com/2009/02/blog-post_20.html
১. কান্না, প্রথম আলো: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-09-24/news/95929
২. ছোপ ছোপ দাগ: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_24.html
৩. প্রথম আলো: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-09-22/news/95408
৪. পুলিশ লিখবে কবিতা: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_09.html
৫. সারদায় কি এই সব শেখায়?: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_24.html

ধপধপে সাদা পাঞ্জাবিতে ছোপ ছোপ কালো দাগ

আমাদের কিছু সংসদ সদস্য মহোদয়গণ কতিপয় মিডিয়ার উপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সংসদ সদস্য মহোদয়গণ কি দেবদূত যে তাঁদের নিয়ে সমালোচনা করা যাবে না? সমালোচনা করলেই কটাক্ষ হয়ে যাবে? কেন মহান সংসদ অবমাননা হবে না তার জন্য রুল জারি হবে?

আমরা গণতন্ত্রের যে চারাটা রোপণ করি তার গোড়ায় ঢেলে দেই গ্যালন গ্যালন রাসায়নিক দ্রব্য। অধিকাংশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আনুমানিক চার-পাঁচ কোটি টাকায়। হাজারটা খরচ বাদ দিলেও নির্বাচন করার জন্য যে দলের টিকেট পান সেই দলে কত টাকা চাঁদা দিতে হয় সেটার প্রকৃত তথ্য জানলে হিসাবটা অনেকটা সহজ হয়ে আসে।
খরচের এই সংখ্যা নিয়ে কু-তর্ক করার পূর্বে সাধারণ একটা পৌরসভার মেয়র হওয়ার জন্য কত টাকা খরচ হচ্ছে এটা একটু খোঁজ নিলে চোখ গোল হয়ে যাবে। ১০ ফিট বাই ১২ ফিটের একেকটা ভিনায়েল বোর্ড নামের জিনিসটার খরচ দাঁড়ায় পাঁচ হাজার টাকা। এমন ৫০টা ভিনায়েল বোর্ড নস্যি! কেবল একটা খাতেই আসে আড়াই লাখ টাকা! এ তো কেবল তবলার ঠুকঠাক! তবলা বাজাবার জন্য যে সারা রাত পড়ে আছে।
অবশ্য প্রত্যেকটা ভিয়ায়েল বোর্ডে মেয়র প্রার্থীর শুভানুধ্যায়ীর আনুপাতিক হারে ছোট একটা ছবি থাকে এবং মানুষটার বক্তব্যও থাকে যে, তিনি নাচতে নাচতে অতি আনন্দে এটা তার প্রার্থীর জন্য করে দিয়েছেন। এটা জানার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন হয় না এই খরচটা তিনি না মেয়র প্রার্থীই জুগিয়েছেন।

তো, চার-পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে একজন সংসদ সদস্য হন জনসেবা করার জন্য। আহারে জনসেবা! চার-পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে জনসেবা করার জন্য সংসদ সদস্য হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না- এরচেয়ে অনেক কম টাকায় শত শত গ্রামের চেহারা আমূল পরিবর্তন করে দেয়া সম্ভব। তবুও একেকজন এমন বিপুল টাকা খরচ করে সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন। আমরা ঘটা করে এঁদের আবার ভোট দিতে যাই। ফল যা হওয়ার তাই হয়। জীবনে একবার সংসদ সদস্য হতে পারলে আর পায় কে! ক্ষমতা-টাকা-তকমা সমস্ত কিছুই তখন হাতের মুঠোয়। এরাই আইন করেন, পদে পদে আইন ভাঙেন!

তারপর প্রয়োজন হয় শুল্কমুক্ত গাড়ির। যিনি ছিলেন আলুর বেপারি তিনি আনেন লেক্সাস, হামার, ফেরারী। সেই গাড়িটিই পাওয়া যায় অভিজাত শো-রুমে। হাত বদল হয় অন্তত ৫০ লক্ষ টাকা! কত্তো কত্তো সুবিধা ভোগ করা যায়, কতটা যে নিলাজ হওয়া যায়! উদাহরণের জন্যে একজন দেলোয়ার সাহেবই [১] যথেষ্ঠ!
মাসের-পর-মাস, বছরের-পর-বছর ধরে একজন সংসদ সদস্য সংসদে যান না কিন্তু তাঁর বেতন-ভাতা নিতে বিন্দুমাত্র অপ্রতিভ হন না। অন্যদের কথা না-হয় বাদই দিলাম, খালেদা জিয়া বর্তমান সংসদে ১৫৮ কার্যদিবসের মধ্যে মাত্র ৫দিন উপস্থিত ছিলেন! আর গত টার্মে শেখ হাসিনা ৩৭৩ কার্যদিবসে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৭২ দিন! এই যে মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা সংসদে যান না এঁরা কি বেতন-ভাতাদি গ্রহন করেন না? করেন, আনন্দের সঙ্গেই করেন।
আমাদের দেশে জবাবদিহিতার চল নেই। উন্নত দেশগুলোর মত আমরা এটার জিজ্ঞেস করার সাহস রাখি না কারণ হাতে মুখে-গণতন্ত্রের ঝান্ডা যে আমাদের।

ব্রিটেনের সেনাপ্রধান জেনারেল স্যার পিটার ওয়াল অতিরিক্ত মোটা হওয়ার কারণে সরকারি উর্দি গায়ে আঁটছে না বিধায় নতুন করে উর্দি বানাতে হয়েছে এবং এই বাড়তি খরচ লক্ষাধিক টাকা দিতে হবে তাঁর নিজের গাঁট থেকে।
বাংলাদেশের কোন সেনাপ্রধানের এই অবস্থা হলে এবং এই বাড়তি খরচটা তাঁর বেতন থেকে কাটা যাবে এটা আমরা স্বপ্নেও ভাবি না। 'খোদা-না-খাস্তা' জনসাধারণের কেউ এই নিয়ে বাতচিত করলে তিনি বাত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিত হয়ে পড়ে থাকবেন এটা বলতে পারলে ভাল লাগত। আফসোস, না থাকবে শরীর, না থাকবে বাত, না হবেন চিত! পাহাড়ে পাহাড়ে হুটোপুটি খাবে কেবল গণতন্ত্র!

সহায়ক লিংক:
১. খোন্দকার দেলোয়ার: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_12.html

Thursday, September 23, 2010

আপাতত বিদায়, ফেসবুক

বেশ পূর্বে ফেসবুক নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম। ওখানে খানিকটা বলার চেষ্টা করেছি [১]। এখন আর বিস্তারিত আলোচনায় যেতে চাচ্ছি না। অল্প কথায় বলি, "ফুটছে কথার খই/ বড় বেশি হইচই।" আমার নিরিবিলিতেই থাকতে ভাল লাগে- অসামাজিক হিসাবে আমার যথেষ্ঠ কুখ্যাতিও আছে। ফেসবুককে বলা হয়, সামাজিক নেটওয়ার্ক। এদিকে আমি মানুষটা সামাজিক টাইপের এটা আমার শত্রুও বলবে না।

এটা যে আমার জানা নাই এমন না, ফেসবুকে একাউন্ট না-থাকা এখন প্রায় অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। ভদ্র-সমাজে (!) এটা ভাবাই যায় না। আমাদের দেশে ফেসবুক ব্যবহার করেন এমন লোকের সংখ্যা সম্ভবত লাখ দশেক। ভাবাই যায় না! কালে কালে প্রায় ১৬ কোটির এই দেশে, ১৭ কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছেন এমনটা জানলেও আমি খুব একটা অবাক হবো না! তা হোক, তাতে আমার কী! আমি ফেসবুকে আরাম পাচ্ছি না, এটা আমার নিজস্ব সমস্যা।

আমার ফেসবুক একাউন্টের লিস্টে কিছু লোকজন আছেন, তাঁদের প্রতি দুঃখিত হয়ে বলি, আপাতত আমি আমার ফেসবুক একাউন্ট স্থগিত করে দিয়েছি। এই লেখাটা কেবল তাঁদের অবগতির জন্যে। আবারও তাঁদের কাছে দুঃখ প্রকাশ...।

সহায়ক লিংক:
১. প্যাঁচবুক ওরফে ফেসবুক: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_12.html       

Monday, September 20, 2010

আমার আকাশটা নিয়ে নাও, বন্ধু

বিশু ফোনের ওপাশ থেকে গলা ফাটাচ্ছে, ‘হ্যালো-হ্যালো।’
কল্লোল এপাশ থেকে বলল, ‘ষাড়ের মত চেঁচাচ্ছিস কেন, আস্তে বল। আরেকটা কাজ করতে পারিস, ফোনটা বিচ্ছিন্ন করে কথা বল!’
‘বাছাল, এতক্ষণ ধরে চেষ্টা করছি, রিং যাচ্ছে কেউ উঠাচ্ছে না, ঘটনা কি! জামি আছে নাকি তোর ওখানে?’
‘ইয়েস-ইয়েস।’
‘তোকে বলেছে কিছু?’
‘ইয়েস-ইয়েস, বলেছে তুই নাকি কী হাতির ডিম দেখাবি। অই-অই, অইত, তুই আবার কী দেখাবি, কুমড়া দেখেও বলিস 'উই-ই মা'।’
‘কল্লোল মার্ডার হয়ে যাবি, জাষ্ট মার্ডার।’
‘হুপ।’
‘তোর সঙ্গে কথা বলতে চাই না, জামিকে ফোন দে।’


কল্লোল মাউথপীসে হাত চাপা দিয়ে জামিকে হাসতে হাসতে বলল, ‘বিশু তোর সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছে। বী কেয়ারফুল, আগুন হয়ে আছে কিন্তু।’
‘কি খবর শিশু মিঞা, টেলিফোন করাকরি কেন আবার, আমরা এই মাত্র তোর ওখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরুচ্ছিলাম।’
‘জামি, হোয়াট ননসেন্স, তোরা কি ফাজলামির দোকান খুলেছিস। আর এই সব কী, নাম বিকৃত করিস! ’
‘কী বলছিস, বিকৃত করলাম কোথায়! তুই শিশু তাই শিশু বললাম, ভুল বলেছি।’
ওপাশ থেকে বিশুর দাঁত ঘষার শব্দ ভেসে এলো। জামি হাসি চেপে বলল, ‘বিশু, বাপ, এমন করে না। দাঁত এ অত্যাচার সইবে না, খুলে আসবে।’
‘জামি, ইউ রাস্কেল, টেলিফোন রাখছি।’
‘করিস কী-করিস কী, ইয়ে ফোন করলি কি জন্যে সেটা বল?’
‘এটা জানাতে, আমার সঙ্গে যে প্রোগ্রাম ছিল, বাতিল। জরুরী একটা কাজে এখুনি বেরিয়ে যাব।’
‘শালা, তুই
কি ভাঁড়, থ্রি ষ্টুজেসের ওয়ান ষ্টুজ নাকি! আমাদের এভাবে খবর দিয়ে-।’
‘সরি, জরুরি কাজ না হলে-।’
‘তা জরুরি কাজটা কি?’
‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করব।’
‘কা-কার সঙ্গে! কিক-কি জন্য!’
‘আমাদের দেশের জাতীয় ঋণ-লেটেস্ট মাথাপিছু যে ঋণ আসে তা আমি জমা দিয়ে দিতে চাই। আমিই হব এ দেশে প্রথম 'জাতীয় ঋণমুক্ত ব্যক্তি'।’


জামি হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারছে না। সামলে নিয়ে বলল, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর কে, জানিস?
খোরশেদ আলম।’
তুই খোরশেদ আলমকে কেমন করে চিনিস?
‘চিনি না, তবে নোটের গায়ে নাম ছাপানো দেখলাম।’
‘নোটটা কত সালে ছাপানো হয়েছে, তুই জানিস রে হাঁদারাম? একজন কী আজীবন গভর্ণর থাকে!’
‘আগে তো যাই, তারপর দেখা যাবে।’
জামি কাঁধ ঝাঁকাল, ‘কী আর করা, প্রোগ্রাম যখন হয়েই গেছে চল আমরাও যাই।’
বিশু বলল, ‘মাথা খারাপ, এত বড় লোকের কাছে যাচ্ছি তোদের নিয়ে যাই আর কি! যেখানে সেখানে একপাল মূর্খ নিয়ে ঘুরি।’
‘হ্যালো, হ্যালো বিশু।’
‘হ্যাঁ, বল শুনছি।’
‘বিশু, তোর মুখে করি হিসু।’
‘জামি, হারামজাদা আজই আমার হাতে খুন হয়ে যাবি, জাষ্ট মার্ডার।’
জামি এর উত্তর না দিয়ে ধড়াম করে রিসিভার নামিয়ে রাখল। রাগে গরগর করে বলল, ‘বানচোত, বলে কী খুন করে ফেলবে। একটা চড় দিলে ছটা দাঁত খুলে আসবে, প্যান্ট নষ্ট করে ফেলবে। হারামজাদার কী সাহস, বলে কি না একপাল মূর্খ নিয়ে ঘুরি।’
কল্লোল ওপাশের বক্তব্য আন্দাজ করে উঠতে পারছিল না, এবার সবগুলো দাঁত বেরিয়ে পড়ল, ‘জামি, তোকেও মৃত্যুদন্ড দিয়েছে?’
‘হুঁ, আজই নাকি
আমার শেষদিন।’
‘এটা ওর দু-নম্বর মুদ্রাদোষ হয়ে গেছে। বাদ দে, এখন কি করবি?’
‘কি আর করবো, অসহ্য রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে, দিনটাই মাটি। বাসায় চলে যাব। দেখি একটা ম্যারাথন ঘুম দেয়া যায় কিনা। শোন,
ভুলিস না, বিকেলেই কিন্তু যাব বিশুর ওখানে। হারামজাদাকে সাইজ করতে হবে।’
...
বিকেলে বিশুকে স্টুডিওতেই পাওয়া গেল। ছবি আঁকছে। জামি উঁচু স্বরে বলল, ‘হ্যালে টিস্যু, কী হচ্ছে?’
‘জামি, প্লিজ ডিস্টার্ব করিস না, ছবি আঁকছি। প্লিজ এখন যা, আমাকে ছেড়ে দে।’
‘ওয়েল টিস্যু, রিমেম্বার, গড ইজ অলমাইটি ইন স্কাই লাইন, অ্যান্ড মাইটি জামি ইন বাংলাদেশ। ছেড়ে দেব আবার কিরে লেদার হেড। কোন ছাড়াছাড়ি নাই।’
‘প্লিজ তোরা এখন যা, পরে আসিস। সামনে আমার একক প্রদর্শনী, একগাদা ছবির শেষ করতে হবে।’
‘তোর কাজ তুই কর, আমরা বসে বসে দেখি।’
‘খামোখা বসে থাকবি কেন, বিকেলটা নষ্ট না করে কোথাও থেকে ঘুরে আয়।’
‘বেশ, দে আমিও কিছু আঁকি।’
‘ছ্যাহ, একটা রেখা সোজা টানতে পারিস না, তুই ছবি আঁকবি, তু-ই!’
‘ইয়েস, তবে কি আঁকব এটা এখন বলব না। সময় হলে দেখবি। ব্যবস্থা করে দে নইলে তোর আঁকা ছবির উপর-।’


বিশু খুঁজে বাতিল রং ক্যানভাস জামির সামনে ছুঁড়ে ফেলে চা’র কথা বলতে ভেতরে গেল।
জামি কড়াৎ-কড়াৎ করে হাড় ফুটিয়ে কাজে লেগে গেল। সমস্ত রং মাখামাখি করে কোনটাই লাগাতে বাকি রাখল না। লম্বাটে কি যেন একটা আঁকছে। জিনিসটা কি কল্লোল ঠিক ধরতে পারছে না, ভয়ে ভয়ে জানতে চাইল, ‘স্যার, জিনিসটা কি?’
‘ডিপ শিট, ভোন্ট গ্রিন।’
ক্যানভাসের অবয়বটা ক্রমশ লম্বা হতে থাকল। কল্লোল নিঃশব্দে হাসল, ক্যানভাসে আটবে তো! বিশু চা নিয়ে ঢুকল, দুপদাপ পা ফেলে। তাচ্ছিল্য করে বলল, ‘শেষ হয়েছে?
‘হুঁ, এই দেখ।’
‘জিনিসটা কি?”
জামি চা’র কাপ টেনে নিয়ে বলল, ‘তোর সার্টিফিকেটটা কি আমারটার মতই জাল!’
‘কচকচানি বাদ দিয়ে বল এইটা কি আবর্জনা?’
‘কদু।’
‘ক্কি-কি!’
‘লাউ রে বেটা, লাউ।’
কল্লোল আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, ‘জামি নিচে লিখে দে, লাউ । অনেকে রকেট ভেবে বসতে পারে।’
চলে আসার সময় বিশু রক্তচক্ষু মেলে বলল, ‘তোর এই নোংরা মোজাটা ফেলে যাচ্ছিস কি ভেবে!’
‘মাই গড, তোকে বলিনি। প্রদর্শনীতে দিয়ে দিস, তোর নাম লিখে। তোলপাড় পড়ে যাবে। আনন্দের চোটে সবাই বিশুর মুখে, হা হা হা। ’


সহায়ক লিংক:
১. তিতলি তুমিও: http://tinyurl.com/3y93om8

Saturday, September 18, 2010

দ্য কাউ ইজ আ ডমেস্টিক এনিমেল

মাঝে-মাঝে আমার মেজাজ তিরিক্ষি হয়, নিজের উপর। নিজের স্মরণশক্তির উপর! আমার কাছের লোকজনরা জানেন, আমি ভয়াবহ রকম দুর্বল স্মৃতিশক্তির অধিকারী। প্রায়শ আমার সন্দেহ হয়, ব্রেন নামের জিনিসটা আদৌ আমার আছে কি না!

এই যেমন এখন আমার প্রচুর তথ্যের প্রয়োজন। অথচ জানা প্রচুর তথ্য এখন মনে নাই, এর কোন মানে হয়! বাংলাদেশের জনসংখ্যা কত এবং ভারতেরও? জাতিসংঘের ৬৫তম সাধারণ অধিবেশনে ভারত যোগ দিচ্ছে কি না? বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছেন ১০০ জন, ভারত থেকে কতজন যাচ্ছেন? জনসংখ্যা জানাটা জরুরি এই কারণে আঁক কষে বের করা যেত ভারত থেকে কতজন যাচ্ছেন?

ধরি, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি। আবারও ধরি, ভারতের জনসংখ্যা ১১৩ কোটি। তাহলে ভারত থেকে যাচ্ছেন প্রায় ৮০০ মানুষ? এক শ্বাসে বলা চলে হাজারখানেক মানুষ।
এটাও জানার ইচ্ছা ভারতের লোকজনরা সবাই কি হাওয়াই জাহাজে করে যাচ্ছেন, নাকি পানি-জাহাজে? পানির জাহাজে গেলে সমস্যা নাই কিন্তু হাওয়াই জাহাজে করে গেলে- ওরিআল্লা, সবাই কি বসে বসেই যাচ্ছেন নাকি কিছু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে‍!

এটাও আমার জানার ইচ্ছা, আমাদের দেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে ১০০ জন যাচ্ছেন- সব মিলিয়ে ঠিক কত টাকা লাগছে? নড়বড়ে একটা হিসাব দাঁড় করানো চলে ন্যূনতম ৬ কোটি টাকা।
(জন আইলিয়েফ মহোদয়ের মতে), বাংলাদেশের ৭৫ লাখ মানুষ [১] রাতের বেলা না-খেয়ে ঘুমাতে যায় সেই দেশের জন্য ৬ কোটি টাকা খুব একটা বড়ো অংকের টাকা এটা বলা চলে না। আচ্ছা, এঁরা রাতের বেলা খান না কেন, রঙ্গে?

তা, এই ১০০জন এরা ওখানে গিয়ে কি কি করবেন? আহা, আমি কখন বললাম, এঁরা ওখানে গিয়ে ডিগবাজি খাবেন! জানি না বলেই তো এতো জানার হ্যাপা!
ভাল কথা, বান কে মুন কি এখনও স্বপদে বহাল আছেন? কবিরাও তো যাচ্ছেন দেখি। এঁরা কি ওখানে ছড়া কেটে শোনাবেন? না-না, ছড়া না, কবিতা। কবিরা ওখানে কি বান কে মুনকে কবিতা পড়ে শোনাবেন নাকি হাওয়াই জাহাজে বসে-বসে কবিতা লিখবেন?
"ভুলেও হাওয়াই জাহাজের জানালায় মুখ বাড়িয়ো নাকো, মা-
পেঁজা পেঁজা মেঘে ঝাপসা হবে তোমার চোখের চশমা।"

মাথায় কত চিন্তা ঘুরপাক খায়! কবিরা গেলে ব্লগারদের যেতে দোষ কোথায়? আচ্ছা, বান কে মুন কি ব্লগিং করতে জানেন? না-জানলে আমি চোখ বুজে আমাদের দেশ থেকে 'ফিউশন ফাইভ'কে পাঠাবার জন্য কেবল নামই প্রস্তাব করতাম না, প্রয়োজনে খুনাখুনিও করতাম। কারণ গতবার বেচারার উপর খুব অন্যায় হয়েছিল। এই প্রতিযোগিতার একজন প্রতিযোগি হয়েও কারওয়ান বাজারের কারখানায় বসে তিনি অন্য একজন প্রতিযোগি, আমাকে নিয়ে দুর্ধর্ষ একটা পোস্ট প্রসব করেছিলেন, "...বাংলা ব্লগের গরিব অ্যাম্বেসেডর"।
হা ঈশ্বর, মানুষ, কী এমনও নির্বোধ হয়!

ওই পোস্টে অনেক তথ্য-উপাত্ত একাট্টা করে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, আমার নির্বাচিত হওয়ার পেছনে 'র'-সিআইএ-মোসাদের হাত ছিল। ভদ্রলোক সম্ভবত বিস্মৃত হয়েছিলেন, জুরিরাই কেবল আমার সাইটটাকে নির্বাচিত করেননি, পাঠকরাও ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন। তবুও যেহেতু ওই পোস্টে তিনি হা বিতং করে তার মর্মবেদনা তুলে ধরেছিলেন তাই নিজেকে বড়ো অপরাধি-অপরাধি লাগে! পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার এই সুযোগ ছিল আমার। যাচ্ছলে, ফসকে গেল!

পত্র-পত্রিকায় আমাদের দেশের কবিদের উদারতার নমুনা পড়ে ভাল লাগায় মন ছেয়ে যায়। নির্মলেন্দু গুণ [১], মহাদেব সাহা, মুহাম্মদ সামাদ এই তিন কবি রাষ্ট্রের ১৩ লাখ টাকার সাশ্রয় করেছেন! আমি অনুমান করি, এই আইডিয়াটা গুণ দাদার মাথা থেকে বেরিয়েছে। কেন এমন অনুমান করলাম এটা লিখতে গেলে আরেকটা পোস্ট হয়ে যাবে। আমার বক্তব্য অন্য খানে। কবিদের কথা শুনি একটু:
"...প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরসঙ্গী হিসাবে আমাদের বেছে নিয়ে এবং যাতায়াতের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ" ...দেশের জনপ্রিয় তিন কবির একজন মহাদেব সাহা এ কথা বলেন।" (কালের কন্ঠ, ১৭. ০৯.২০১০)

অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের কথায়ও আমার মনটা ভরে আসে। তিনি বলেছেন, "প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার সুযোগ পেয়ে আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু গরিব দেশের নাগরিক হিসাবে এত টাকায় সফরে যাওয়া অনৈতিক হবে..." (প্রথম আলো, ১৭.০৯.২০১০)

কসম, এটা একটা সু-উদাহরণ এতে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু লেখক কবিরা যখন মন্ত্রীর ভাষায় কথা বলেন তখন মানুষটার মেরুদন্ড নিয়ে সংশয় জাগে। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এমন কৃতজ্ঞ কেন, তাঁরা কি প্রধানমন্ত্রীর টাকায় সফর করছেন? আমাদের দেশের লোকজনরা যে কেন এটা ভুলে যান এই দেশের রাস্তা-ঘাট-কালভার্ট-ব্রীজ-অনুদানের টাকা কোনো মন্ত্রী বাহাদুরের পকেট থেকে আসে না। এটা স্রেফ এই দেশের জনগণের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের টাকা। রক্ত-ঘামের সঙ্গে মিশে থাকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ট্যাক্সের টাকা। কৃতজ্ঞতা জানালে কেবল এই দেশের জনগণের প্রতি, আর অন্য কারও প্রতি না।
কী চমৎকার করেই না হুমায়ূন আহমেদও কৃতজ্ঞতার লালায় নিজের 'তহবন' ভিজিয়ে ফেলেন, ছবি বানাবার জন্য একদা তিনি ব্যা. হুদার কাছ থেকে সরকারী অনুদানের টাকা পেয়েছিলেন বলে। এই কৃতজ্ঞতার কথা তিনি পত্রিকায় ফলাও করে লিখেছিলেন। বেচারা পাঠক, পত্রিকার নিউজপ্রিন্ট ভিজে পাঠকের দফারফা!

গুণ দাদা কেমন কৃতজ্ঞ এটাও জানার ইচ্ছা ছিল কারণ গত টার্মে শেখ হাসিনা গুণ দাদাকে সরকারী ভোজসভায় দাওয়াত দেন নাই বলে গুণ দাদা ব্যাঙের মত গাল ফুলিয়ে বিস্তর অশ্রুপাত করেছিলেন; ঘটা করে মিডিয়াকে বলেছেন। এইবার দাদার কষ্টটা অনেকখানি লাঘব হয়েছে বলে দাদার চেয়ে আমার আনন্দই বেশি হচ্ছে।
আমি গভীর আগ্রহ নিয়ে এটার জন্যও অপেক্ষা করছি, আমেরিকান কবি 'করসো'-এর সঙ্গে আমাদের গুণ দাদার কি এই বার দেখা হবে? গুণ দাদা কি এইবারও অদৃশ্য লেজ নাড়াবেন [২]? করসো বাংলাদেশকে নিয়ে অতি অমানবিক কথা বলবেন, কুৎসিত ভঙ্গি করবে আর আমাদের গুণদাদা কি এবারও হ্যা হ্যা করে হাসবেন?

মস্তিষ্ক নাকি কখনও ঘুমায় না [৩]। ভুল, এই সব জ্ঞানপাপিদের মস্তিষ্ক দিব্যি ঘুমায়! মাছের পচন শুরু হয় তার মাথা থেকে এবং একটা দেশের পচন শুরু হয় যখন সেই দেশের কবি-সাহিত্যিকের নষ্ট মেরুদন্ড প্রতিস্থাপনের আবশ্যকতা দেখা দেয়, তখন থেকে।

সহায়ক লিংক:
১. জন আইলিয়েফ: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_3172.html
২. নির্মলেন্দু গুণ: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_7854.html
৩. মস্তিষ্কের ঘুম: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_4207.html 

*আজ (১৯.০৯.১০) আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেল। ১০০ ছাড়িয়ে গেছে, ১০৩ জন! এবং সফরসঙ্গীদের তালিকাও পাওয়া গেল: 
"...নিউইয়র্ক সফরের সময় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের ছয় সদস্য তাঁর সঙ্গে অবস্থান করবেন। তাঁরা হলেন ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, পুত্রবধূ ক্রিস্টিন ওভারমায়ার ওয়াজেদ, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ও তাঁর স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেন...।" (প্রথম আলো, ১৯.০৯.১০) 
প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের এই ৬ সদস্যের ওখানে কি কাজ তা এরাই ভাল বলতে পারবেন! এবং প্রথম আলোর মতে, সফরসঙ্গীদের মধ্যে বিশেষ  ব্যক্তিত্বরা হচ্ছেন:
"...বিশেষ ব্যক্তিত্বরা হলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা ও মুহাম্মদ সামাদ, সাবেক আমলা এ জে এম আবদুল আলী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা, টঙ্গী পৌরসভার মেয়র আজমত উল্লাহ খান, ঠাকুরগাঁও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক কোরাইশী, শেরপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইকবাল হোসেন মিয়া, আনোয়ার হোসেন ও আখতার হোসেন, নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহ আলম, যুবলীগের (উত্তর) সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. শাহজাহান মিয়া...।" (প্রথম আলো, ১৯.০৯.২০১০) 
দু-চারজন ব্যতীত এঁরা বিশেষ ব্যক্তিত্ব! প্রথম আলো কোন মানুষ হলে বলতাম, হা ভগবান, এর ব্রেন ডিফেক্ট! ভাগ্যিস, প্রথম আলো কোনো মানুষ না।

একজন বিজেতার গল্প

'ন্যানো ক্রেডিট' [১] নিয়ে যখন আমি কাজ শুরু করেছিলাম তখন অনেকে ঠোঁট গোল করে বলেছিলেন, ফুঃ!

তাদের এই ভঙ্গির কোডটা শব্দে রূপান্তর করলে যেটা দাঁড়ায় সেটা হচ্ছে, 'এই উদ্যোগ ভেস্তে যাবে'। আরে শ্লা, কি হাতি-ঘোড়া নিয়ে ভেগে যাবে?
এই আমাদের একটা ঢং হয়েছে, পশ্চাদদেশ উত্তোলন না-করেই আমরা কী অবলীলায়ই না বকে যাই, বকবক-বকবক-বকবক, চিঁ হিঁ হিঁ- হর্স মাউথ!
রাস্তায় কলার খোসাটা কেন সরকার এসে সরিয়ে দিচ্ছে না এই নিয়ে কাছা মেরে অনলবর্ষন না করলে আমাদের চলে-ই না।

ক্ষুদ্র ব্যবসা করার জন্য ন্যানো ক্রেডিটের নামে যে টাকা দেয়া হয় তা চাইলেই দিয়ে দেয়া হয় এমনটা না। যথেষ্ঠ খোঁজ-খবর নিয়েই দেয়া হয়। পূর্বেও উল্লেখ করেছিলাম, আমার পায়ের নীচে সর্ষে। মাইলের পর মাইল লম্বা-লম্বা পা ফেলে হেঁটে যেতে আমার কোন ক্লান্তি নাই!
টাকা নেয়ার জন্য একজন এসেছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল এর কাজ হচ্ছে গাঁজা খাওয়া, কেউ কখনও একে কোন কাজ করতে দেখেনি। পরে আমি একে বলেছিলাম, কিসের ব্যবসার জন্য টাকা চাচ্ছেন, গাঁজা? এরপর থেকে মানুষটার চেহারা মোবারক আর দেখিনি।

মন মিয়া হচ্ছেন ন্যানো ক্রেডিটের সুবিধা নেয়া প্রথম ব্যক্তি- ব্যবসার জন্য তাঁকে ১০০০ টাকা দেয়া হয়েছিল। প্রতিদিন দশ-বিশ টাকা করে নিয়ম করে জমা দিয়েছেন, কখনও ব্যতিক্রম হয়নি। আজ তাঁর ১০০০ টাকা শোধ হলো।
ইতিমধ্যে তিনি কিছু পুঁজিও জমিয়ে ফেলেছেন। ব্যবসা আরও বাড়াবেন বিধায় আজই তাঁকে ২০০০ টাকা হয়েছে। এখন প্রতিদিন তাঁর কথামতে, ২০/ ৩০ টাকা করে জমা দেবেন।
প্রথম হিসাবে এই মানুষটা একটা পুরষ্কারও পাওনা হোন। ভাবছি, কি দিলে মানুষটা খুশি হবেন? আমি লক্ষ করেছি, চকচকে শার্টের সঙ্গে ইনি যে লুঙিটা পড়েন এটা বেমানান, মলিন। একটা লুঙি দিলে মন্দ হয় না...।

মন মিয়া নামের এই মানুষটা কেবল একজন বিজেতাই নন, তিনি আমাকে তাঁর পেছনে দাঁড়াবার জন্য খানিকটা জায়গাও করে দিয়েছেন। একজন বিজেতার বিজয় কাতারের পেছনে আমিও একজন এটা ভাবলেই মনটা অন্য রকম হয়। একজন বিজেতার সঙ্গে দাঁড়াবার যে সুখ তা স... ব্যতীত অন্যত্র কোথায়!

সহায়ক লিংক:
১. ন্যানো ক্রেডিট: http://tinyurl.com/39dkbhh
২. মন মিয়া: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_4248.html

Friday, September 17, 2010

ঠিক প্রতিশোধ নেয়া হবে

আজকাল লোকজন পণ করেছে থেকে থেকে আমাকে চমকে দেবে। সাহিত্যের ভাষায় যাকে বলে পিলে চমকে দেয়া।

এই রে সেরেছে, পিলে শব্দটার অর্থ কি? এখন আবার অভিধান নিয়ে কস্তাকস্তি করো! যন্ত্রণা!

এই ছেলেটির পেছন পেছন আমি ঘুরছিলাম কিন্তু নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না। স্টেশনে গিজগিজ করছে লোকজনে, ট্রেনের আসা-যাওয়ায় বিরাম নেই। যখন মামুন নামের এই ছেলেটির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয় তখন সন্ধ্যা হয় হয়।
এ আমাকে বড়ো বেশি চমকে দিয়েছিল কারণ দুই পা'র এমন অবস্থা নিয়ে আমি ধামড়া ধামড়া মানুষকে দেখেছি ভিক্ষা করতে। আমরা তো আবার এদের আধুলি দিয়ে দাতা 'হাতেম তাই' হয়ে যাই। অথচ মামুন নামের শিশুটি দিব্যি পানি বিক্রি করে দিনযাপন করছে!

তখন তাকে বলেছিলাম, তুমি পড়বে?
ও চকচকে চোখে বলেছিল, হ।
আমি উল্লাস গোপন করে বলেছিলাম, কাল থেকে স্কুলে [১] চলে আসো।
মামুন থমকে গিয়ে বলেছিল, টেকা-পয়সা লাগব না?
আমি হড়বড় করে, নারে ব্যাটা, কিসসু লাগব না। তুই খালি স্কুলে চলে আয়।

পরে আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এ এরপর থেকে নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে। একদিনও স্কুল কামাই করেনি!

কেবল স্কুলে আসে এমনই না। আগ্রহ নিয়ে খেলেও।
পূর্বে স্কুল শুরু হতো বিকাল চারটা থেকে কিন্তু আমি খানিকটা নিয়ম পাল্টে দিয়েছিলাম। এখন স্কুল শুরু হয় তিনটা থেকে। তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত এরা এখানে ক্যারাম-লুডু-ক্রিকেট-ফুটবল যার যেটা ভাল লাগে খেলে। চারটা বাজলেই স্কুলের পড়া শুরু।

আমি ঠিক করেছি একে দাবা শেখাব। আমি ভাল দাবা পারি না, আমি এও নিশ্চিত, এ আমাকে ঠিক ঠিক হারিয়ে দেবে। যেদিন এই কান্ডটা ঘটবে সেদিন সবাইকে বলব, এই ছেলেটা আমাকে দাবায় হারিয়ে দিয়েছে!

মামুন নামের এই ছেলেটা আমাকে যথেষ্ঠ চমকে দিয়েছে। আমি ঠিক করেছি, এর প্রতিশোধ নেব। ফাজলামী, একজন দুম করে আমার পিলে (এখনও অভিধান দেখা হয়ে উঠেনি, পিলের অর্থটা এখনও জানি না) চমকে দেবে আর আমি বসে বসে তামাশা দেখব!
ঠিক করেছি, একেও চমকে দেব। আগামীকাল স্কুলে একে এক ক্রেট পানির বোতল দিয়ে বলব, যা ব্যাটা, এই সমস্ত পানি তোর।

পানির দেশ, তদুপরি কেবল পানি দিয়ে কাউকে চমকে দেয়া যায় এও এক বিচিত্র!

সহায়ক লিংক:
১. স্কুল, ৩: http://tinyurl.com/327aky3

Wednesday, September 15, 2010

কুত্তে কে লিয়ে হাড্ডি, হ্যালো টনি

টনি ব্লেয়ার যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। আমি যারপরনাই আনন্দিত হয়েছি। আমি মনে করি, যার যেটা প্রাপ্য সেটা তার পাওয়া উচিত, যাবচ্চন্দ্রদিবাকর ধরে এটা পালন করা প্রয়োজন। টনির মত এমন প্রভুভক্ত দু-পেয়ে তার পাওনা না-পেলেই বরং আমি দুঃখিত হতাম।

টনি ব্লেয়ারের বই 'আ জার্নি' থেকে আমরা জানতে পারি, তিনি যে বুশকে খুব পছন্দ করেন এটা জেনে অনেকে নাকি অবাক হয়েছেন।
হতে পারে কিন্তু আমি মোটেও বিস্মিত হইনি। টনিকে আমার কখনও মন্দ মনে হয়নি, আমার কল্পনাতেই আসেনি টনি নামের মানুষটার প্রভুর প্রতি বিরাগ থাকবে। অদৃশ্য লেজ নাড়াবেন না তা কি হয়!

'আ জার্নি' থেকে আরও জানতে পাই, তার মতে, ইরাক যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা ছিল, এই নিয়ে তার কোন বিকার নেই। এবং নিহতদের জন্য কাঁদতে কাঁদতে তার 'প্যাটলুন-ট্যাটলুন' সব ভিজে গেছে (ভেতরে আর কিছু পরেন কিনা এটা আমার জানা নাই বিধায় ওটা আর্দ্র কিনা এই বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলাম।) ভাগ্যিস, তার মাথায় থাকা অল্প চুলগুলো ভিজে যায়নি!

বলা চলে ইরাক যুদ্ধে ব্রিটেনের জড়িয়ে যাওয়াটা ব্লেয়ারের প্রায় একক সিদ্ধান্ত ছিল কারণ ১৩৯জন এমপি চাননি এই যুদ্ধে ইংল্যান্ড অংশগ্রহন করুক। এমপি পিটার হেইন পর্যন্ত তার বইয়ে লিখেছিলেন, ব্লেয়ারের ইচ্ছাতেই যুদ্ধটায় জড়ানো হয়েছে। 

এখানে একটা খুন [১] বা একটা খুনের অভিযোগে ষ্ট্যানলি টুকি উইলিয়ামসকে ফাঁসি দেয়া হয় কিন্তু হাজার-হাজার মানুষকে খুনের অপরাধে সেই দানব-খুনিটার কিছুই হয় না। ইরাকি জনগণের কথা নাহয় বাদই দিলাম কিন্তু ব্রিটেনের জনগণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে, প্রকারান্তরে খুন করার অপরাধে টনি ব্লেয়ারের কোন শাস্তির আশা করা দুরাশা মাত্র। হাস্যকর! এরা নাকি সভ্য জাতি, ঘটা করে আমাদেরকে সভ্যতা [২] শেখায়!
ব্লেয়ার নিজের হাতে খুন করা করেছেন, কি করেননি সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।

গোল্ডা মায়ারের ভাষায়, "নিজের হাতে খুন করা আর খুন করার সিদ্ধান্ত দেয়া মধ্যে কোন পার্থক্য নাই"।
এই টনি ব্লেয়ার নামের দানব খুনিটা যখন আমাদের দেশে ব্যাক্তিগত সফরে সস্ত্রীক আসেন তখন আমরা এমন বিয়াকুল হই, মুক্তকচ্ছ হয়ে প্রাণ বাজি রেখে মহা-খুনিটার সঙ্গে দেখা করার জন্য ছুটে যাই।

এই গ্রহের নিয়মগুলো বড়ো বিচিত্র! ততোধিক বিচিত্র এই গ্রহের মানুষগুলো! 

*ছবি ঋণ: দৈনিক সমকাল, আমার দেশ

সহায়ক লিংক:
১. মৃত্যুদন্ড: http://www.ali-mahmed.com/2009/06/blog-post_07.html 
২. সভ্যতা: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_493.html      

মোসুমি লেখক: ২

লেখক সাহেবের লেখা এগুচ্ছিল তরতর করে কিন্তু এখন কলম চিবুচ্ছেন। লেখা আটকে গেছে। ডান হাতে লেখকদের আঙুল নাকি ছয়টা, কলমসহ- অন্য আঙুলগুলো চিবুলে ব্যথা হয় বলে ‘কলম আঙুল’ চিবুচ্ছেন।
যে  হরতাল লেখককে অখন্ড অবসর এনে দিয়েছে সেই হরতালের জন্য বেনাপোল সীমান্তে চার হাজার ট্রাক আটকে আছে, পচনশীল দ্রব্য সব পচে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে রপ্তানীযোগ্য চিংড়ি দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, এ নিয়ে লেখক মাথা ঘামাচ্ছেন না। লেখক-টেখকদের এই সব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামালে চলে না। লেখকদের অনেক বড়ো বড়ো সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়। চাঁদ থেকে কতটা জ্যোৎস্নার ছটা ছিটকে পড়ল, মগ দিয়ে কেমন করে জ্যোৎস্না ঢেলে গোসল করতে হয় এই সব।

মোদ্দা কথা, হরতালের কারণে, অবসরে তিনি লিখতে পেরে আনন্দিত, এই মুহূর্তে জটিল সমস্যা তাঁকে কাবু করে ফেলেছে। যে উপন্যাসটা লিখছেন এটা একটা রাজনৈতিক উপন্যাস। একজন খারাপ মানুষ কী এক বিচিত্র কারণে ভালোমানুষ- ভালোমানুষ খেলা খেলে, কু ছাপিয়ে সু উঠে আসার সেই চেষ্টা আর কী! উপন্যাসের নাম ... উহু, এখন যেটা দিয়েছেন সেটায় জোর আছে কিন্তু পতিতার মত বহুভোগ্যা বহুল ব্যবহারে... তিনি চাচ্ছেন উপন্যাসের নামটা অন্যভাবে দিতে।
আচ্ছা, ওই জায়গাটার  নামটা যেন কী, স্বর্গ নরকের মাঝামাঝি জায়গাটা...এইখানেই লেগেছে গেরো। স্বর্গ নরকের মাঝামাঝি জায়গাটার চমৎকার একটা নাম আছে। এই মুহূর্তে মনে করতে পারছেন না। ঝড়ের গতিতে অভিধান-শব্দকোষের পাতা উল্টাচ্ছেন। ফলাফল শূণ্য। দিন যায়, রাত যায়! লেখকের দীর্ঘশ্বাস ভারী হয়। লেখা আটকে গেছে- লেখা আটকে যাওয়ার এই কষ্টটা অন্য কেউ বুঝবে না। অন্যভাবে লিখে দিলেই হয় কিন্তু তা তিনি করবেন না।

তিনি মনে করেন অশিক্ষিত নারী এবং জন্তু প্রসব করে বেশি। কিন্তু এই অখ্যাত নির্বোধ লেখক বুঝতে চাচ্ছেন না তিনি বিখ্যাত লেখক মিরোশ্লাফ হোলুব না, যে তাকে মোটা অংকের স্কলারশীপ দিয়ে সসম্মানে বার্লিন নিয়ে যাওয়া হবে। হোলুব ঘুরে বেড়াবেন, আলস্য কাটিয়ে উঠলে ইচ্ছা হলে লিখবেন। লিখবেন, যা-খুশী! হোলুব এক বছরে মাত্র একটি কবিতা লিখবেন দয়া করে, যে-কবিতা  ঘষামাজা করতে লাগবে আরও বছরখানেক। অবশেষে লেখকের মনে পড়ল, লেখা এখন এগুলো দুর্দান্ত গতিতে। রক্ত চাই-রক্ত চাই টাইপের লেখা:

“আমি, আমি কে? আমি কেউ না এটা জাঁক করে বলতে পারলে বেশ হত। বেশ একটা সাহিত্যি-সাহিত্যি ভাব চলে আসত কিন্তু ব্রাদার আমি তো আর সাহিত্যিক-টাহিত্যিক না, ছা-পোষা একজন সন্ত্রাসী। ছা-পোষা অবশ্য বিনয় করে বললাম কারণ বিশ্ববিদ্যালয় পাড়ায় আমাকে একডাকে চেনে। আমার নাম? উঁহু, এটা আপনাদের বলব? 'পাগাল, কাভি নেহি'। কইমাছের প্রাণ এমন কাউকে কাউকে ‘ইন্নালিল্লাহ ’ বা ‘রাম নাম সাত্য হ্যায়’ অথবা ‘জিশু তার আত্মাকে শান্তি দিক’ এইসব দুর্লভ ভূষণে যদি কাউকে ভূষিত করতে চান তো সোজা চলে আসুন এই অভাজনের কাছে। ইয়ে, টাকাকড়ি সঙ্গে নিয়ে আসবেন এটা বলে আপনাদের সূক্ষ্মবুদ্ধি খর্ব করতে চাচ্ছি না। কলাগাছ ফেলবেন অথচ খালি হাতে আসবেন এ তো আর মামা বাড়ির আবদার না। ক্ষমা করবেন, আপনাদের সঙ্গে একটু উঁচু গলায় কথা বলে ফেললাম। আহা, আপনারাই তো আমার 'মাই বাপ'। কী অবলীলায়, কী অনায়াসেই না আমার হাতে অস্ত্র তুলে দিলেন, আমার লম্বা লম্বা শিল্পীর আঙুলে ট্রিগার পেঁচিয়ে মায়াভরা গলায় বলেছিলেন, ডোন্ট টক, শ্যূট-শ্যূট! প্লিজ-প্লিজ, হইচই করবেন না, বেশ বুঝতে পারছি আপনারা বুক ঠুকে সদম্ভে বলছেন: আমরা, আমরা কেন, আমরা তো ভালমানুষ। এই দেখুন, কী যন্ত্রণা, ভালমানুষের কথা ভাবতেই মুখে একগাদা থুথু জমেছে। ভাই, থুতু নিয়ে তো কথা বলতে পারব না। হোল্ড অন প্লিজ, থুথুটা ফেলে দেই- থু, থু!

তো কি বলছিলাম? কিরুপে হামার খোঁজ পাইবেন? কেন ভাই, এখনি কি কাউকে ফেলে দিতে চান? চাইলে প্রয়োজন হলেই চলে আসবেন। ও হ্যা, আমি বলছিলাম আপনাদের ভালমানুষির কথা। আপনারা তো আবার ভারি অহংকার নিয়ে বলেন, আমার সোনার বাংলা...ই ই ই। আমি ভাই ছা-পোষা সন্ত্রাসী বিনয় করেই বলি, আমার প্রাণপ্রিয় সোনার বাংলা নামের মাটির বাংলাকে নিয়ে এ-ও-সে যেভাবে খুশি যেভাবে ইচ্ছা বলৎকার করছে আর আপনারা উচ্ছ্বসিত দর্শক গোল হয়ে দাড়িয়ে-বসে-ঘুমিয়ে 'আহা কী আনন্দ আজি এ আকাশে' গাইছেন। কী বললেন? ধর্ষণ যখন অবধারিত তখন উপভোগ করাই শ্রেয়। তা বেশ, গা বাঁচিয়ে মন্দ বলেননি, একপাল শকুন মাংস খুবলে খুবলে ডিনার সারবে আর আমরা যারপরনাই বিস্মিত হয়ে বলব: শকুনের বাচ্চা শকুন, মাংসটা সিরকায় ডুবিয়ে নরোম করে নিবি, তা-না অনন্তকাল ধরে চিবিয়েই যাচ্ছিস। হ্যা-রে, তোর চোয়াল ব্যথা করে না?

আপনাদের প্রিয় মানুষ জনতার সেবক এ দেশকে কিছুই দিতে পারেননি এটা আমি মন্দমানুষও বলি না। পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে জনবহুল দেশ হওয়ার সম্ভবনা, এ বিরল সৌভাগ্য এনে দিয়েছেন। এই যে টানা এতদিন সমগ্র দেশ অচল করে দেয়া হয়েছে নো-কাজ, নো-কাম। ধর্মে ভরাপেটে অবশ্য ওইসব করা নিষেধ আছে; ভাগ্যিস, বিশাল একটা কারাগারে আটকে এ অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছেবাজারে আগুন, পাকস্থলি ভরো-ভরো থাকার সম্ভাবনা নেই যখন তো দিনরাত বাচ্চা পয়দা করো । বুঝলেন, দেশের এহেন অগ্রগতিতে আপনাদের সঙ্গে আমার কোনো সহযোগীতা নেই ভাবলেই মনটা ভার-ভার হয়। কি করব বলুন, আমার তো আর আপনাদের মতো দু-একটা বউ নেই। অবশ্য আমার বউ এর প্রয়োজনই বা কী বলুন, পরিচিত সবারই তো একটা করে বউ আছে। আমি যে মহান জনসেবকের ছত্রছায়ায় নিরুদ্বিগ্ন জীবন যাপন করছি, ওঁর সমস্ত কাজই তো অন্য কেউ করে দেয়। ওঁর বাবা হওয়ার ক্ষমতা আল্লাহপাক ওনাকে দেননি অথচ ওনার একমাত্র ছেলে আরিজোনায় পড়াশুনা করছে। তো, জনসেবকের বেগব সাহেবা আবার কখনো-সখনো তাঁর বিছানাটা এই অধমকে ধার দেন। অথবা ধরুন গিয়ে ‘মহিলা কসাই’, এই যারা ঘুরে ঘুরে নোংরা কটা কাগজের বিনিময়ে মাংস বিক্রি করেন। আফসোস, এরা কেউই আমার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতে চান না। আফসোস, বড়ই আফসোস! এইসবে এখন আর মজা পাই না বুঝলেন, বিশ্বাস করুন, একেকটা 'ঠান্ডা গোসত'। বুঝলেন, ভেজা বারুদে আগুন ধরাতে ভাল্লাগে না।

হা হা হা। ফানি! হুটহাট করে আপনাদেরই কেউ কেউ গরুর মতো মায়া-মায়া চোখে বলেন: ফিরে এসো খোকা। মাইন্ড ইয়োর ল্যাংগুয়েজ সার, আমি তো আর এখন ছোট্ট খোকা না, আপাদমস্তক দানব। আপনাদের এইসব মূর্খতা দেখে যারপরনাই বিস্মিত হই। মানব চট করে দানব হয়, দানব থেকে বাচ্চা-দানব হতে পারে বড় জোর কিন্তু দানব থেকে মানব হওয়া যায় না। আভূমিনত প্রণাম গ্রহন করুন মহান মনুষ্যজাতি, কী অপরিসীম ক্ষমতা আপনাদের- আমার নিউক্লিয়াসের তথ্য পর্যন্ত গোলমাল করে দিয়েছেন। এখন যা খুশি তাই করতে পারি। চুইংগাম চিবুতে চিবুতে মেরে ফেলতে পরি আমার প্রিয় সৃষ্টিকর্তাকে যিনি গভীর মমতায় এই আমাকে দানব বানিয়েছিলেন। হাসি-হাসি মুখে লাশ ফেলে দিতে পারি আপনারও। কী বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে তো ভাই আপনাকে মরিয়া প্রমাণ করিতে হইবে সত্যি-সত্যি মরিয়া গিয়াছেন।
এ দেশের জনসেকদের মতো আমারও মৃত্যু নাই- সিন্দাবাদের ভূতপ্রেতের মতো জনতার ঘাড়ে চেপে বসে থাকব। জনসেবক যেখানে, আমি আছি সেখানে।


কার্ল সাগান সাহেব তাঁর The Dragons of Eden-এ বলেছেন: 'আমরা যাকে কখনো কখনো মন বলি তা হচ্ছে ব্রেন। আর এই ব্রেনের কাজ কর্ম হচ্ছে শরীরের যাবতীয় নাট-বল্টুর নড়াচড়ার ফলাফল'। মাফ করবেন, অনুবাদটা কাজ-চলা গোছের হল। বেশ বুঝতে পারছি বিস্ময়ে আপনাদের চোখ বড় হয়ে এসেছে। অজান্তেই বলে ফেলেছেন: ওই মা, ব্যাটা দেখি, ‘শিকখিত’ আছে। এ তো ক-অক্ষর গোমাংস অকাট মূর্খ না, এ-বি-সি-ডি ছাড়াও কিছু জানে! হোয়াট ননসন্স, ফাজলামো নাকি? প্রায় দশ-পনের বছর ধরে ছাত্রনেতার জোব্বা গায়ে দিয়ে নিরলশ অধ্যয়ন করছি না বিশ্ববিদ্যালয়ে! এ কিন্তু ভারি অন্যায়, নিজেরা মূর্খ বলে সব্বাইকে মূর্খ ভাবেন। কী ভাই, মূর্খকে কি মূর্খ বলতে নাই! কিন্তু ভাই, নারকেল গাছ কিসে তোমার পরিচয়, নারকেলে? আপনি যদি নেহায়েৎ গোঁ ধরে বলেন না-না আমগাছ, বেশ!
একটা শেষ-হয়ে আসা নাটকের কথা বলি, আপতত আমি যে ‘বড় ভাই’ এর কোলে বসে থাকি, এই তো সেদিন ঝকঝকে এক তরুনের পাসপোর্ট সাইজের একটা ছবি দিয়ে আড়মোড়া ভেঙে বললেন, এই মুখ আমার পছন্দ না একে এমন একটা মুখবন্ধ বাক্সে ফেলে দাও যে বাক্স কেউ কোনোদিন খুলবে না। এই শুয়োরের বাচ্চা কাউকে চিরতরে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ এভাবেই দেন। চিনে রাখার চেষ্টায় ভাল করে তাকালাম, বিশ-বাইশ বছরের এই ছেলের চোখগুলো কী মায়া-মায়া। অল্পক্ষণ তাকালেই চোখ ধাঁধিয়ে যায়, গা-ছমছম করে। একজন যন্ত্রদানবের তো এতসব দেখলে চলে না। যথারীতি নির্দেশ পালিত হল।


বড় ভাই তো আবার প্রখ্যাত জনসেবক তাই মৃতের পরিবারকে এই চরম দুঃসময়ে সান্ত্বনা না দিলে আপনারাই তো আবার ভারি গোলামাল করবেন। সর্বজনশ্রদ্ধেয় বড় ভাই সাঙ্গোপাঙ্গ সাংবাদিকসহ যথাসময়ে উপস্থিত হলেন। মৃতের মা-বোন লাশের উপর ঝাঁপিয়ে চিৎকার করে কাঁদছিল: খোকা-খোকা, তুই ফিরে আয়। বড় ভাইয়ের উপস্থিতি হারিয়ে-যাওয়া মানিকের মতো এ পরিবারে খানিকটা স্বল্পমেয়াদি স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে এল। বড় ভাই তাঁর স্বভাব অনুযায়ী পরিবারের একজনকে বেছে নিলেন- তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদার মতো একটা ভাব করলেন। কাছে-পিঠে দাঁড়ানো সাংবাদিকগণ নিমিষে অতি তৎপর হলেন। পরদিন প্রায় সমস্ত দৈনিকে বিশাল বিশাল হেডিং-এ বড় ভাইয়ের কাঁদো-কাঁদো চেহারা মোবারকের ছবি ছাপা হল।
জনগণ সব্বাই মুগ্ধ। থ্যাঙ্ক গড, মুগ্ধতা চুঁইয়ে পড়ার ব্যবস্থা নেই নইলে অসময়ে বন্যা বয়ে যেত। যাক, চিন্তার কিছু নেই ওই মৃত ছেলে আপনার আমার ভাই-বন্ধু কেউ না। খানিকটা সমস্যা অবশ্য থেকেই যাচ্ছে । পৃথিবীর সবচাইতে ভারী ওজন এ মুহূর্তে ধারণ করে আছেন যিনি- মৃত সন্তানের যে-লাশ, যে-পিতা শিরদাঁড়া বাঁকা করে আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, অনঢ়। তিনি, তিনি কি ভাবছেন? যে-সব জনতার সেবক জনগণের সেবা করবেনই বলে পণ করে আছেন তাদের সবাইকে জড়ো করে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিতে? কী লাভ, এদের শূণ্যস্থানে অন্য কেউ আসবে। অবশ্য এ-ও সত্য এরিমধ্যে দেশ বহুদূর এগিয়ে যাবে। নোংরা সে-সব মানুষদের সঙ্গে আমাকেও ছুঁড়ে ফেলো হে পিতা, দেখো তখন যেন তোমার চোখের পাতাটিও না কাঁপে।”

লেখক উপন্যাসের নাম কেটে গোটা গোটা অক্ষরে লিখলেন, পশুর পিঠে শিশু। কারণ তিনি জানেন এমন রগরগে নাম পাবলিক খাবে ভাল... 

মৌসুমি লেখক, ১: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_14.html

Tuesday, September 14, 2010

মৌসুমি লেখক: ১

ওঁ একজন লেখক। তেমন জনপ্রিয় নন। জনপ্রিয় নন এই জন্য তাঁর এখনও কোনও সাক্ষাৎকার ছাপা হয়নি। বহুদিনের স্বপ্ন ওঁর কোনও-না-কোনও দিন, কখনও-না-কখনও, কোথাও-না-কোথাও একটা সাক্ষাৎকার ছাপা হবেই। সাক্ষাৎকারে অতি প্রয়োজনীয় একটা প্রশ্ন থাকে, আপনি কি খেতে পছন্দ করেন? লেখক তখন আলাদা একটা ভাব নিয়ে বলবেন, তিমি মাছের ঝোল। সঙ্গে এটাও বলবেন, আফসোস, চাইলেই এই দুর্লভ ঝোলটা রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় না।

বয়স প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই হলে তাকে কি যুবক বলা চলে? বেশ, তাহলে লেখক যুবক। এখনো ‘চির কুমার সভা’র সদস্য। বিয়ে করবেন কিন্তু কাকে? অন্তত একটা মেয়ে তো প্রয়োজন! ভালবাসাবাসির কোনও মানুষ না থাকলে বিয়ে করবই পণ করলেই তো আর বিবাহযোগ্য মেয়ে পয়দা হয় না। অবশেষে ‘পাত্রী চাই’ বিজ্ঞাপনই শেষ ভরসা। বিজ্ঞাপনটা লিখলেন নিজেই। কপটতা, ছাপাছাপি লেখকের অপছন্দ বলেই বিজ্ঞাপনটা দাড়াল এরকম:
"ত্রিশ দাঁত বিশিষ্ট (৫-১১) একজন ‘লেখক কাম ব্যবসায়ী’ মুসলিম গ্রাজুয়েট পাত্রের জন্য পাত্রী খোঁজা হচ্ছে। এক কাপড়ে এবং অনুষ্ঠান ছাড়া বিয়েতে আগ্রহী পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করুন।"
লোকজন জোর নিষেধ করে বলল: এ বিজ্ঞাপন ছাপা হলে সমস্যা হবে।
লেখক ভারি অবাক হলেন: সমস্যা হবে কেন?
ফাজিল ধরনের চিঠি আসবে।
ফাজিল ধরনের চিঠি আবার কি রকম?
এই বখা ছেলেরা মেয়ে বা মেয়ের অভিভাবক সেজে ফাজলামো করবে।


এইসব নিষেধ লেখককে খুব একটা কাবু করল না। ওঁর এক আত্মীয় একটা খবরের কাগজে চাকরি করেন তাকেই কাজটা গছিয়ে দিলেন।
আত্মীয় বেচারা দুদিন পরেই মুখ শুকিয়ে এলেন, এই বিজ্ঞাপন আমাদের কাগজ ছাপবে না।
লেখক অবাক, কেন, ছাপবে না কেন?
আমাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বলেছেন: এটা উম্মাদ-কার্টুন পত্রিকার অফিস না।
সমস্যাটা কি?
আত্মীয় এবার রাগী গলায় বললেন, এই সব কি লিখেছেন ‘ত্রিশ দাঁত বিশিষ্ট’ লেখক কাম ব্যবসায়ী, হাবিজাবি।
লেখক এবার চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন: সাদাকে সাদা বলিতে পারিব না! সাদাকে কি গাধা বলিতে হইবে?  আল্লাহপাকের নির্দেশে ডেন্টিষ্ট বাবাজী আমার দুটা দাঁত শখ করে রেখে দিয়েছেন, এতে তো আমার হাত নাই ব্রাদার।
পাত্রী চাই বিজ্ঞাপনে দাঁতের প্রসঙ্গ আসছে কেন?
আসছে এই জন্য, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে লোকজনকে একটা ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করেছি যে আমার গোপন করার কিছু নাই। আর ‘লেখক কাম ব্যবসায়ী’ লেখালেখির পাশাপাশি ব্যবসা করি এটা বললে অনেকে তাচ্ছিল্য-তাচ্ছিল্য ভঙ্গি করে বলেই হিউমার করে এটা লেখা। অনেকের বদ্ধমূল ধারণা লেখক মানেই ওরাংওটাং টাইপের একটা কিছু। একজন লেখকের পোশাক-পরিচ্ছদ থাকবে অপরিছন্ন, সস্তা, চুলের সঙ্গে চিরুনির কি সম্পর্ক এ নিয়ে থিসিস সাবমিট করবেন, আকন্ঠ মদ্যপান করে নর্দমা কেন রাস্তার মাঝখানে এ নিয়ে মাঝরাতে নর্দমার সঙ্গে কাপড় খুলে ঝগড়া করবেন। বড় বড় নোখ দিয়ে বেশ্যাকে অহরহ খামচাবেন। অনেকেরই ধারণা লেখক-টেখকরা অন্যভুবন থেকে এ গ্রহে আসেন দেশ উদ্ধার করার মিশন নিয়ে। লেখালেখি ছাড়া কিছুই করবেন না।


আত্মীয় বেচারা পড়লেন মহা ঝামেলায়। তিনি ছা-পোষা চাকুরে, সাহিত্য-টাহিত্য বঙ্গোপসাগরে ভেসে যাক তার কী! কম্বল ছেড়ে দিতে পারেন কিন্তু কম্বল ছাড়বে কেন, নৈব নৈব চ!
লেখক এইবার হংকার দিলেন: এই-এই, তোমাদের কাগজের একজন কর্মীকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে তার সহকর্মীরা- কি মনে  পড়ছে না ওই দিনের বিজ্ঞাপনটা: কবি-উপন্যাসিক-গদ্যকার্টুনিষ্ট-কলাম লেখক-সাংবাদিক-প্রকৌশলী ও সদ্য আমেরিকা ফেরত অমুককে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা। সদ্য আমেরিকা ফেরত কি এই ভদ্রলোকের উপাধি? নামের শেষে কি লেখা হবে স.আ.ফে? এটা কি স্থূল বিজ্ঞাপন না? তখন কি সূক্ষ্মরুচি ভোঁতা হয়ে যায় এই জন্য, এরা তোমাদেরই পত্রিকার লোক, সেই জন্যই কি তোমাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের অসুস্থ হওয়ার সংবাদ আসে তোমাদের পত্রিকার প্রথম পাতায়?
আত্মীয় বেচারা লেখকের কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচলেন এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, এই জিনিস যন্ত্রদানব ট্রাকের মতই ভয়াবহ। ইহার নিকট হইতে একশো হাত দূরে থাকিবেক। লেখকের আত্মীয় হওয়ারও দূর্ভাগ্যও কম না। এরা বড় যন্ত্রণা করে, চারপাশের লোকজনকে জ্বালিয়ে মারে। এটা এমন কেন, ওটা তেমন কেন? আরে ব্যাটা এত কথা কিসের! 
লেখক একমনে লিখে যাচ্ছেন। হরতাল-অবরোধের কারণে অখন্ড অবসর এ বিরল সৌভাগ্য এনে দিয়েছে। সময়ের অভাবে লেখালেখি হয় না। এইবার একটা উপন্যাস নামিয়ে ফেলবেন বলে পণ করেছেন।

Sunday, September 12, 2010

জাফর ইকবাল, আলো-ছায়া

আমি আগেও লিখেছি, এই দেশে যে অল্প কিছু মানুষকে আমি পছন্দ করি তাঁদের মধ্যে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন। এই মানুষটার সঙ্গে কথা বলার আমার সুযোগ হয়েছে, আমার মনে হয়েছে ভান বিষয়টা তাঁর মধ্যে নাই। যেটা তাঁর অগ্রজ হুমায়ূন আহমেদের মধ্যে প্রবল। হুমায়ূন আহমেদ আপাদমস্তক একজন ভানবাজ!

জাফর ইকবালের আরেকটা বিষয় আমাকে অভিভূত করে সেটা হচ্ছে, ঢাকায় বসবাস করার লোভ তাঁর নাই অথচ ইচ্ছা করলেই মানুষটার ঢাকায় থাকতে পারেন। এই দেশের সুশীলরা ঢাকায় বসবাস করার জন্য পারলে তাদের আত্মা বিক্রি করে দেন। পারলে প্রিয় মানুষকে কারও বিছানায় তুলে দেন। না-না, হইচই করার কিছু নাই- বিবাহ নামের বৈধতার মোড়কে। এই সুশীলরাই ঢাকাকে একটা মৃত্যুকূপ বানাচ্ছে [১], অচিরেই লক্ষ-লক্ষ মানুষের হত্যাকারীর খাতায় এরা নাম লেখাবে। 
এই মানুষটার প্রতি মুগ্ধতার আরও কারণ আছে। ১০ টাকার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের যে ক্ষীণবপু যে বইটা বের করেছেন [২] এটা একটা অসাধারণ কাজ হয়েছে এতে অন্তত আমার কোন সন্দেহ নেই।

আবার আমি এটাও মনে করি, প্রিয় মানুষের সব কিছুতে লাফাতে হবে এমন না। জাফর ইকবালের অনেক বিষয় আবার আমার পছন্দ না। ৭১ সালে সমস্ত দেশ যখন যুদ্ধে উত্তাল তখন এঁরা দু-ভাই পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। কেন জাফর ইকবাল যুদ্ধে গেলেন না এর উত্তর তিনিই ভাল দিতে পারবেন কিন্তু কাজটা অমর্যাদার, লজ্জার!
হরতাল নিয়ে তাঁর ভাবনা হাস্যকর [৩]! মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি নামে যে দল চকচকে মোড়কে মুড়িয়ে 'লেবেনচুষ' বিক্রি করে, জাফর ইকবাল অন্যদের মত এই বিষয়টা গুলিয়ে ফেলেন।
যাই হোক, মানুষ দেবতা না তাই তাঁর সব কিছুই নিখুঁত হবে এমনটা আশা করা সমীচীন না। দেখা প্রয়োজন যেটা, একজন মানুষের কতটা পচন ধরেছে...।

তাঁর লেখার চোর্যবৃত্তি  নিয়ে গুরুতর আপত্তি উঠেছে [৫] । আমি জাফর ইকবালের সমস্ত লেখা পড়িনি বলে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলাম। এর সদুত্তর দিতে পারবেন জাফর ইকবাল এবং ডিউক জন।
তদুপরি আমি মনে করি, এই পোড়া দেশে জাফর ইকবালের মত লোকই বা কোথায়? অন্তত তাঁর অগ্রজ হুমায়ূন আহমেদের [৬] মত দু-নম্বর তো আর না...। 

সহায়ক লিংক:
১. মৃত নগরী, ঢাকা: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_06.html
২.কুর্নিশ করি হে স্বপ্নবাজ: http://www.ali-mahmed.com/2009/03/blog-post_27.html
৩. হরতাল: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_3914.html
৪. পক্ষপাতদুষ্টতা: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_8885.html
৫. ডিউক জন: http://dukejohndj.blogspot.com/2010/08/blog-post_25.html
৬. হুমায়ূন আহমেদ: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_09.html