ওঁ একজন লেখক। তেমন জনপ্রিয় নন। জনপ্রিয় নন এই জন্য তাঁর এখনও কোনও সাক্ষাৎকার ছাপা হয়নি। বহুদিনের স্বপ্ন ওঁর কোনও-না-কোনও দিন, কখনও-না-কখনও, কোথাও-না-কোথাও একটা সাক্ষাৎকার ছাপা হবেই। সাক্ষাৎকারে অতি প্রয়োজনীয় একটা প্রশ্ন থাকে, আপনি কি খেতে পছন্দ করেন? লেখক তখন আলাদা একটা ভাব নিয়ে বলবেন, তিমি মাছের ঝোল। সঙ্গে এটাও বলবেন, আফসোস, চাইলেই এই দুর্লভ ঝোলটা রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় না।
বয়স প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই হলে তাকে কি যুবক বলা চলে? বেশ, তাহলে লেখক যুবক। এখনো ‘চির কুমার সভা’র সদস্য। বিয়ে করবেন কিন্তু কাকে? অন্তত একটা মেয়ে তো প্রয়োজন! ভালবাসাবাসির কোনও মানুষ না থাকলে বিয়ে করবই পণ করলেই তো আর বিবাহযোগ্য মেয়ে পয়দা হয় না। অবশেষে ‘পাত্রী চাই’ বিজ্ঞাপনই শেষ ভরসা। বিজ্ঞাপনটা লিখলেন নিজেই। কপটতা, ছাপাছাপি লেখকের অপছন্দ বলেই বিজ্ঞাপনটা দাড়াল এরকম:
"ত্রিশ দাঁত বিশিষ্ট (৫-১১) একজন ‘লেখক কাম ব্যবসায়ী’ মুসলিম গ্রাজুয়েট পাত্রের জন্য পাত্রী খোঁজা হচ্ছে। এক কাপড়ে এবং অনুষ্ঠান ছাড়া বিয়েতে আগ্রহী পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করুন।"
লোকজন জোর নিষেধ করে বলল: এ বিজ্ঞাপন ছাপা হলে সমস্যা হবে।
লেখক ভারি অবাক হলেন: সমস্যা হবে কেন?
ফাজিল ধরনের চিঠি আসবে।
ফাজিল ধরনের চিঠি আবার কি রকম?
এই বখা ছেলেরা মেয়ে বা মেয়ের অভিভাবক সেজে ফাজলামো করবে।
এইসব নিষেধ লেখককে খুব একটা কাবু করল না। ওঁর এক আত্মীয় একটা খবরের কাগজে চাকরি করেন তাকেই কাজটা গছিয়ে দিলেন।
আত্মীয় বেচারা দুদিন পরেই মুখ শুকিয়ে এলেন, এই বিজ্ঞাপন আমাদের কাগজ ছাপবে না।
লেখক অবাক, কেন, ছাপবে না কেন?
আমাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বলেছেন: এটা উম্মাদ-কার্টুন পত্রিকার অফিস না।
সমস্যাটা কি?
আত্মীয় এবার রাগী গলায় বললেন, এই সব কি লিখেছেন ‘ত্রিশ দাঁত বিশিষ্ট’ লেখক কাম ব্যবসায়ী, হাবিজাবি।
লেখক এবার চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন: সাদাকে সাদা বলিতে পারিব না! সাদাকে কি গাধা বলিতে হইবে? আল্লাহপাকের নির্দেশে ডেন্টিষ্ট বাবাজী আমার দুটা দাঁত শখ করে রেখে দিয়েছেন, এতে তো আমার হাত নাই ব্রাদার।
পাত্রী চাই বিজ্ঞাপনে দাঁতের প্রসঙ্গ আসছে কেন?
আসছে এই জন্য, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে লোকজনকে একটা ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করেছি যে আমার গোপন করার কিছু নাই। আর ‘লেখক কাম ব্যবসায়ী’ লেখালেখির পাশাপাশি ব্যবসা করি এটা বললে অনেকে তাচ্ছিল্য-তাচ্ছিল্য ভঙ্গি করে বলেই হিউমার করে এটা লেখা। অনেকের বদ্ধমূল ধারণা লেখক মানেই ওরাংওটাং টাইপের একটা কিছু। একজন লেখকের পোশাক-পরিচ্ছদ থাকবে অপরিছন্ন, সস্তা, চুলের সঙ্গে চিরুনির কি সম্পর্ক এ নিয়ে থিসিস সাবমিট করবেন, আকন্ঠ মদ্যপান করে নর্দমা কেন রাস্তার মাঝখানে এ নিয়ে মাঝরাতে নর্দমার সঙ্গে কাপড় খুলে ঝগড়া করবেন। বড় বড় নোখ দিয়ে বেশ্যাকে অহরহ খামচাবেন। অনেকেরই ধারণা লেখক-টেখকরা অন্যভুবন থেকে এ গ্রহে আসেন দেশ উদ্ধার করার মিশন নিয়ে। লেখালেখি ছাড়া কিছুই করবেন না।
আত্মীয় বেচারা পড়লেন মহা ঝামেলায়। তিনি ছা-পোষা চাকুরে, সাহিত্য-টাহিত্য বঙ্গোপসাগরে ভেসে যাক তার কী! কম্বল ছেড়ে দিতে পারেন কিন্তু কম্বল ছাড়বে কেন, নৈব নৈব চ!
লেখক এইবার হংকার দিলেন: এই-এই, তোমাদের কাগজের একজন কর্মীকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে তার সহকর্মীরা- কি মনে পড়ছে না ওই দিনের বিজ্ঞাপনটা: কবি-উপন্যাসিক-গদ্যকার্টুনিষ্ট-কলাম লেখক-সাংবাদিক-প্রকৌশলী ও সদ্য আমেরিকা ফেরত অমুককে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা। সদ্য আমেরিকা ফেরত কি এই ভদ্রলোকের উপাধি? নামের শেষে কি লেখা হবে স.আ.ফে? এটা কি স্থূল বিজ্ঞাপন না? তখন কি সূক্ষ্মরুচি ভোঁতা হয়ে যায় এই জন্য, এরা তোমাদেরই পত্রিকার লোক, সেই জন্যই কি তোমাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের অসুস্থ হওয়ার সংবাদ আসে তোমাদের পত্রিকার প্রথম পাতায়?
আত্মীয় বেচারা লেখকের কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচলেন এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, এই জিনিস যন্ত্রদানব ট্রাকের মতই ভয়াবহ। ইহার নিকট হইতে একশো হাত দূরে থাকিবেক। লেখকের আত্মীয় হওয়ারও দূর্ভাগ্যও কম না। এরা বড় যন্ত্রণা করে, চারপাশের লোকজনকে জ্বালিয়ে মারে। এটা এমন কেন, ওটা তেমন কেন? আরে ব্যাটা এত কথা কিসের!
লেখক একমনে লিখে যাচ্ছেন। হরতাল-অবরোধের কারণে অখন্ড অবসর এ বিরল সৌভাগ্য এনে দিয়েছে। সময়ের অভাবে লেখালেখি হয় না। এইবার একটা উপন্যাস নামিয়ে ফেলবেন বলে পণ করেছেন।
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Tuesday, September 14, 2010
মৌসুমি লেখক: ১
বিভাগ
‘কয়েদি’ বই থেকে অংশবিশেষ
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment