পুর্বের পোস্টে [১] লিখেছিলাম, এই বিচ্ছুদের কাবু করা নিয়ে। আজ বাচ্চাদের বই দেয়া হয়েছে। ঠিক এখুনি বইয়ের প্রয়োজন ছিল না কিন্তু এদের একের পর এক ফাঁদে না ফেলে উপায় নেই। ঝাঁ-চকচকে, ছবিঅলা রঙিন বইগুলোর আবেদন এদের কাছে কেমন এটা নিজ চক্ষে দেখলাম। একজনের পর একজনের অনুরোধ, সবগুলো বিচ্ছুর ছবি তুলতে হয়েছে আমাকে!
মাস্টার মশাইয়ের হাতে বেত দেখলাম, আমার অপছন্দের কথা জানিয়ে দিলাম। তাঁকে আমি বললাম, প্রচলিত পড়ানো আমি চাচ্ছি না। এদের অক্ষর জ্ঞানের পাশাপাশি যেটা দেখা প্রয়োজন, খাবার আগে হাত ধোয় কি না, হাতের নোখ বড়ো কি না, দাঁত মাজে কি না? কারণ আপনি যে বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন এরা শিক্ষিত বাবা-মার সন্তান না। এখুনি অক্ষর নিয়ে মারামারি করার প্রয়োজন নাই। বই থেকে ছবিগুলো চিনুক, ছবিগুলো নিয়ে গল্প করুন।
আর ভুলেও কখনও আমাকে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াবেন না কারণ আমি চাই এই বাচ্চারা বুঝতে শিখুক শিক্ষকের উপরে আর কেউ নাই।
গত পোস্টে বলেছিলাম, বাচ্চাদের বাবারা, বয়স্করাও শিখতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আজ থেকে এটা চালু হলো, ৮জন ছাত্র পাওয়া গেল। খারাপ কী! বয়স্করা পড়বেন সন্ধ্যা ৭টা থেকে। এরা মিনমিন করে বললেন, আমরা কিন্তু পড়ব ঘরের ভেতর।
সমস্যাটা বুঝতে পারি। আমি হাসি গোপন করে বললাম, যেখানে আপনাদের ভাল লাগে সেখানে পড়েন, আমার সমস্যা কি।
আজ হয়েছে আরেক কান্ড! মহিলারাও পড়তে চাচ্ছেন। আমি বললাম, বেশ কিন্তু আমি মহিলা শিক্ষক পাব কোথায়? আপনারা কি এই শিক্ষকের কাছে পড়বেন? এতে তাঁদের কোন আপত্তি নাই।
মাস্টার মশাই অবশ্য বয়স্ক এবং মহিলাদের পড়ার বিষয়ে খানিকটা সন্দিহান। আমি মাস্টার মশাইকে এঁদের অলক্ষ্যে শিখিয়ে দিয়েছি, এঁদের কানের কাছে তোতা পাখির মত জপ করবেন। টিপসই দেয়া বড়ো লজ্জা। যে সই করতে জানে তাকেই শিক্ষিত ধরা হয়, কে এম.এ পাশ কে এস.এস.সি ফেল সেটা পরের কথা।
দেখা যাক...।
(আজ রাত ৯টার আপডেট: সন্ধ্যা ৭টায় সময়টা এঁরা সবাই মিলে পরিবর্তন করেছেন। কারণটা আমি ধরতে পারছি, এটা এখানে শেয়ার করা যাবে না। এঁরা সবাই মিলে সময়টা ঠিক করেছেন দুপুর ১২ টায়)
*স্বপ্ন: http://tinyurl.com/3y7bpz3
সহায়ক লিংক:
১. স্বপ্ন চার, আপডেট: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_14.html
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Monday, June 14, 2010
ইশকুল: স্বপ্ন পাঁচ
বিভাগ
আমাদের ইশকুল: এক
স্বপ্ন, চার: আপডেট
পূর্বের পোস্টে আমি লিখেছিলাম, স্বপ্ন চার [১]। এটার কাজ শেষ। আজ সকালে বাচ্চাদের এই স্কুলটা চালু হওয়ার কথা। অথচ আমি থাকতে পারছিলাম না। বাংলাদেশের বিখ্যাত এক রক্তচোষার খপ্পরে [২] আমাকে সকালে-সকাল ভৈরব যেতে হবে বলে নটায় স্কুলের প্রথম দিনে থাকা হবে না!
কপাল, যেখানে আমি যেতে চাই না সেখানেই আমাকে যেতে হয়! এমনিতে কোথাও যেতে আমার ভাল লাগে না। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি তো কোথাও যেতে চাই না [৩]।
নটায় স্কুলের কাজ শুরু হওয়ার কথা। আমি মত পরিবর্তন করলাম, ভৈরব পরে যাব। ভাগ্যিস, মত পরিবর্তন করেছিলাম।
আজই প্রথম এখানে এলাম। আক্ষরিক অর্থেই আমি মুগ্ধ। 'মেথর পট্টি' নামের এই জায়গায় যারা বসবাস করেন তাঁদের কাজই হচ্ছে আবর্জনা নিয়ে অথচ এখানকার ঘরবাড়িগুলো ঝকঝকে-তকতকে!
প্রথমেই আমি পড়ে গেলাম তোপের মুখে। সর্দাররা সর্দারি শুরু করলেন। একজনকে দেখলাম, হাত-পা নেড়ে বলছেন, 'হে যে আমার ঘরে স্কুল বসাইতে কইল, হের ঘর নাই? হের ঘরে জায়গা দিল না ক্যান'?
আমি আয়োজন পন্ড করার সুযোগই দিলাম না। বললাম, আমার ঘরের প্রয়োজন নাই। কেবল উপরে ছাউনি আছে, বৃষ্টি পড়বে না এমন একটা জায়গা ঘন্টাখানেকের জন্য আমাকে দেন। আর পড়বে তো আপনাদের বাচ্চারাই। আমি এনজিও-ফেনজিওর কোন লোক না। আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য নাই। আমি কেবল চাইছি আপনাদের বাচ্চাগুলো অক্ষর শিখুক। আমাকে কিছুটা সময় দিন, দেখুন। এরপর আপনাদের পছন্দ না হলে এই স্কুল আমি বন্ধ করে দেব।
উপরে আবরণ দেয়া উঁচু যে চাতাল বাচ্চাদের পড়াবার জন্য আমি বেছে নিলাম তা এতোটাই পরিছন্ন যে আমার ওখানে পা ছড়িয়ে বসতে বিন্দুমাত্র অস্বস্তি লাগেনি!
বিস্ময়ের আরেক ধাক্কা, মাস্টার মশাই কাঁটায়-কাঁটায় নটায় চলে এসেছেন। এমন না আমি আসব বলে, আগেই এটা জানিয়ে দেয়া হয়েছিল আজ আমি থাকব না।
আমি ধারণা করেছিলাম, ৮/১০ জন বাচ্চাও হবে না কিন্তু আমার ধারণা ছাড়িয়ে ১৫জন ছাত্র-ছাত্রী পাওয়া গেল!
আমার পরিচিত দু-একজন আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন মুফতে এদের পড়াবার জন্য কিন্তু আমি গা করি নি। এর পেছনে আমার যুক্তি আছে। আমরা বড়োই আবেগ প্রবণ জাতি। কাউকে এটার দায়িত্ব দিলে প্রচন্ড আবেগে কিছু দিন পড়াবে তারপর আর হয়তো তার ভালো লাগবে না।
আমি খুঁজছিলাম একজন প্রফেশনাল, একজন দক্ষ শিক্ষক, যিনি বাচ্চাদের পড়াবার জন্য ওস্তাদ। এবং যথারীতি জনাব বকুল নামের মানুষটাকে মাস শেষে উপযুক্ত সম্মানী দেয়া হবে। আমার সৌভাগ্য সম্ভবত ঠিক মানুষটিকেই আমি খুঁজে পেয়েছি।
তো, বাচ্চারা ইতস্তত এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাস্টার মশাইকে বললাম, মাস্টার সাব, আপনি ছিপ ফেলার আগে মাছের চারা করেন। আজ কোন পড়া না, চকলেট দেন, বাচ্চাদের সঙ্গে গল্প করেন। দেখবেন, চকলেটের লোভে এরা সুড়সুড় করে চলে আসবে।
হলোও তাই। আমি মনে মনে বলি, বাচ্চারা রসো, এরপর আসছে পড়া। বাছাধনরা, না পড়ে উপায় নাই।
তবে অধিকাংশ বাচ্চাদের পেটভরা কৃমি। একদিন এখানে একজন ডাক্তার নিয়ে আসতে হবে। এবং কোন ডাক্তার মুফতে দেখুক এটাও আমি চাই না। কেন না, এর প্রয়োজন হবে প্রায়ই।
এমনিতে মাস্টার মশাইকে দেখলাম, বাচ্চাদের পড়াবার জন্য উদগ্রীব হয়ে অছেন। আমি তাঁকে বললাম, আমি এটা চাই না আপনি এদের কেবল গতানুগতিক পড়া পড়ান। এদের সঙ্গে আমার কিছু খেলা আছে। একদিন ১৬টা চকলেট রেখে ১৫জন বাচ্চাদের বলবেন, সবাই একেকটা করে নিয়ে যাও; যখন দেখবেন একটা চকলেটও পড়ে নাই তখন বুঝবেন ঘাপলা আছে। তখন এদের এটা বোঝাবার চেষ্টা করবেন তোমাদের মধ্যে কেউ একজন মন্দ কাজ করেছ। এ অন্যায়।
এরপর আমার বিস্ময়ের শেষ ধাক্কা! পুরুষ-মহিলা, এঁদের সবার মধ্যে আমি যে বিপুল উৎসাহ লক্ষ করেছি এটা আমার আশাতীত! ঘর তেকে, রাস্তা থেতে ধরে ধরে বাচ্চাদের নিয়ে আসছিলেন। অন্তত এতোটা আমি কল্পনা করিনি। একেকজন অভিভাবকের কী উদ্দীপনা!
এঁদের কথাবার্তা খানিকটা প্রলম্বিত, কয়েকজন বুড়া আমাকে চেপে ধরলেন, 'বা-বু, হা-মা-দের পড়ার একটা বে-বু-স্তা করা যায় না'?
আমি মনে মনে হাতে কিল মেরে বলি, চিয়ার্স-চিয়ার্স-চিয়ার্স, তিন চিয়ার্স! আমার স্বপ্নগুচ্ছের মধ্যে এটাও ছিল, বয়স্কদের জন্যও একটা স্কুল করা। মনে মনে ভাবছিলাম, এই স্কুলটা দাঁড়িয়ে গেলে পরবর্তীতে ওটায় হাত দেব। কিন্তু এটা কোথায় শুরু করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। দেখো দিকি কান্ড, এ যে না চাইতে জল- আমি কুয়ার কাছে যাব কী, কুয়াই আমার কাছে চলে এসেছে!
আমি আমার উল্লাস গোপন করে গম্ভীর হয়ে বলি, হুম। ভেবে দেখতে পারি কিন্তু আগে বাচ্চাদের স্কুলটা আপনারা ঠিকভাবে চলতে দিন। বাচ্চাদের বই-খাতা কিচ্ছু লাগবে না আপনারা কেবল নটা বাজলেই বাচ্চাদের এখানে পাঠিয়ে দেবেন। এই আপনাদের কাজ।
বুড়ারা ঘন ঘন মাথা নাড়েন, 'আলবাত-আলবাত'।
তাহলে ঠিক আছে আপনাদের পড়ার ব্যবস্থাটাও হবে। বুড়াদের ফোকলা দাঁত বেরিয়ে পড়ে। আমি জানতে চাই, আপনারা কয়জন পড়বেন? এঁরা নিশ্চিত করেন অন্তত ১০ জন। ওয়াল্লা, এ তো অনেক!
আমি ঠিক করেছি, এই জায়গায় সকালে বাচ্চারা পড়বে, রাতে বুড়ারা।
আমি হেঁটে হেঁটে ফিরে আসছি। এঁদের কি আনন্দ হলো, না হলো এ নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় কোথায় আমার! আমার নিজের আনন্দ রাখার জায়গা কই- হাঁটছি, নাকি ভাসছি? এই আনন্দের তুলনা কিসের সঙ্গে হয় এটা আমি জানি না, জানলে ভাল হতো।
কে জানে, মৃত্যুর সময় আমার মস্তিষ্ক সচল থাকলে এই সব সুখ-স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেলে মৃত্যু যন্ত্রণা হয়তো বা অনেকখানি লাঘব হবে।
ফিরে আসার সময় দেখি, ৭/৮ বছরের এক শিশু 'নাংগাপাংগা' হয়ে মহা আনন্দে উপর থেকে পড়া পানিতে গোসল করছে। ওর নাচের কাছে সাম্বা নৃত্য কোন ছার!
এই শিশুটির এই অন্য ভুবনের আনন্দের সঙ্গে আমার আনন্দের পার্থক্য কোথায়? অন্তত আমি তো কোন ফারাক খুঁজে পাই না। ফারাক খুঁজতেই আমি চাই না।
*এঁদের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটাবার জটিল কাজটা করেছেন জুটন বণিক। তাঁকে আমার কৃতজ্ঞতা।
**স্বপ্ন: http://tinyurl.com/3y7bpz3
সহায়ক লিংক:
১. স্বপ্ন চার: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_8254.html
২. লাশ-বানিজ্য-পদক: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_23.html
৩. আমি কোথাও যেতে চাই না: http://www.ali-mahmed.com/2009/07/blog-post.html
কপাল, যেখানে আমি যেতে চাই না সেখানেই আমাকে যেতে হয়! এমনিতে কোথাও যেতে আমার ভাল লাগে না। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি তো কোথাও যেতে চাই না [৩]।
নটায় স্কুলের কাজ শুরু হওয়ার কথা। আমি মত পরিবর্তন করলাম, ভৈরব পরে যাব। ভাগ্যিস, মত পরিবর্তন করেছিলাম।
আজই প্রথম এখানে এলাম। আক্ষরিক অর্থেই আমি মুগ্ধ। 'মেথর পট্টি' নামের এই জায়গায় যারা বসবাস করেন তাঁদের কাজই হচ্ছে আবর্জনা নিয়ে অথচ এখানকার ঘরবাড়িগুলো ঝকঝকে-তকতকে!
প্রথমেই আমি পড়ে গেলাম তোপের মুখে। সর্দাররা সর্দারি শুরু করলেন। একজনকে দেখলাম, হাত-পা নেড়ে বলছেন, 'হে যে আমার ঘরে স্কুল বসাইতে কইল, হের ঘর নাই? হের ঘরে জায়গা দিল না ক্যান'?
আমি আয়োজন পন্ড করার সুযোগই দিলাম না। বললাম, আমার ঘরের প্রয়োজন নাই। কেবল উপরে ছাউনি আছে, বৃষ্টি পড়বে না এমন একটা জায়গা ঘন্টাখানেকের জন্য আমাকে দেন। আর পড়বে তো আপনাদের বাচ্চারাই। আমি এনজিও-ফেনজিওর কোন লোক না। আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য নাই। আমি কেবল চাইছি আপনাদের বাচ্চাগুলো অক্ষর শিখুক। আমাকে কিছুটা সময় দিন, দেখুন। এরপর আপনাদের পছন্দ না হলে এই স্কুল আমি বন্ধ করে দেব।
উপরে আবরণ দেয়া উঁচু যে চাতাল বাচ্চাদের পড়াবার জন্য আমি বেছে নিলাম তা এতোটাই পরিছন্ন যে আমার ওখানে পা ছড়িয়ে বসতে বিন্দুমাত্র অস্বস্তি লাগেনি!
বিস্ময়ের আরেক ধাক্কা, মাস্টার মশাই কাঁটায়-কাঁটায় নটায় চলে এসেছেন। এমন না আমি আসব বলে, আগেই এটা জানিয়ে দেয়া হয়েছিল আজ আমি থাকব না।
আমি ধারণা করেছিলাম, ৮/১০ জন বাচ্চাও হবে না কিন্তু আমার ধারণা ছাড়িয়ে ১৫জন ছাত্র-ছাত্রী পাওয়া গেল!
আমার পরিচিত দু-একজন আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন মুফতে এদের পড়াবার জন্য কিন্তু আমি গা করি নি। এর পেছনে আমার যুক্তি আছে। আমরা বড়োই আবেগ প্রবণ জাতি। কাউকে এটার দায়িত্ব দিলে প্রচন্ড আবেগে কিছু দিন পড়াবে তারপর আর হয়তো তার ভালো লাগবে না।
আমি খুঁজছিলাম একজন প্রফেশনাল, একজন দক্ষ শিক্ষক, যিনি বাচ্চাদের পড়াবার জন্য ওস্তাদ। এবং যথারীতি জনাব বকুল নামের মানুষটাকে মাস শেষে উপযুক্ত সম্মানী দেয়া হবে। আমার সৌভাগ্য সম্ভবত ঠিক মানুষটিকেই আমি খুঁজে পেয়েছি।
তো, বাচ্চারা ইতস্তত এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাস্টার মশাইকে বললাম, মাস্টার সাব, আপনি ছিপ ফেলার আগে মাছের চারা করেন। আজ কোন পড়া না, চকলেট দেন, বাচ্চাদের সঙ্গে গল্প করেন। দেখবেন, চকলেটের লোভে এরা সুড়সুড় করে চলে আসবে।
হলোও তাই। আমি মনে মনে বলি, বাচ্চারা রসো, এরপর আসছে পড়া। বাছাধনরা, না পড়ে উপায় নাই।
তবে অধিকাংশ বাচ্চাদের পেটভরা কৃমি। একদিন এখানে একজন ডাক্তার নিয়ে আসতে হবে। এবং কোন ডাক্তার মুফতে দেখুক এটাও আমি চাই না। কেন না, এর প্রয়োজন হবে প্রায়ই।
এমনিতে মাস্টার মশাইকে দেখলাম, বাচ্চাদের পড়াবার জন্য উদগ্রীব হয়ে অছেন। আমি তাঁকে বললাম, আমি এটা চাই না আপনি এদের কেবল গতানুগতিক পড়া পড়ান। এদের সঙ্গে আমার কিছু খেলা আছে। একদিন ১৬টা চকলেট রেখে ১৫জন বাচ্চাদের বলবেন, সবাই একেকটা করে নিয়ে যাও; যখন দেখবেন একটা চকলেটও পড়ে নাই তখন বুঝবেন ঘাপলা আছে। তখন এদের এটা বোঝাবার চেষ্টা করবেন তোমাদের মধ্যে কেউ একজন মন্দ কাজ করেছ। এ অন্যায়।
এরপর আমার বিস্ময়ের শেষ ধাক্কা! পুরুষ-মহিলা, এঁদের সবার মধ্যে আমি যে বিপুল উৎসাহ লক্ষ করেছি এটা আমার আশাতীত! ঘর তেকে, রাস্তা থেতে ধরে ধরে বাচ্চাদের নিয়ে আসছিলেন। অন্তত এতোটা আমি কল্পনা করিনি। একেকজন অভিভাবকের কী উদ্দীপনা!
এঁদের কথাবার্তা খানিকটা প্রলম্বিত, কয়েকজন বুড়া আমাকে চেপে ধরলেন, 'বা-বু, হা-মা-দের পড়ার একটা বে-বু-স্তা করা যায় না'?
আমি মনে মনে হাতে কিল মেরে বলি, চিয়ার্স-চিয়ার্স-চিয়ার্স, তিন চিয়ার্স! আমার স্বপ্নগুচ্ছের মধ্যে এটাও ছিল, বয়স্কদের জন্যও একটা স্কুল করা। মনে মনে ভাবছিলাম, এই স্কুলটা দাঁড়িয়ে গেলে পরবর্তীতে ওটায় হাত দেব। কিন্তু এটা কোথায় শুরু করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। দেখো দিকি কান্ড, এ যে না চাইতে জল- আমি কুয়ার কাছে যাব কী, কুয়াই আমার কাছে চলে এসেছে!
আমি আমার উল্লাস গোপন করে গম্ভীর হয়ে বলি, হুম। ভেবে দেখতে পারি কিন্তু আগে বাচ্চাদের স্কুলটা আপনারা ঠিকভাবে চলতে দিন। বাচ্চাদের বই-খাতা কিচ্ছু লাগবে না আপনারা কেবল নটা বাজলেই বাচ্চাদের এখানে পাঠিয়ে দেবেন। এই আপনাদের কাজ।
বুড়ারা ঘন ঘন মাথা নাড়েন, 'আলবাত-আলবাত'।
তাহলে ঠিক আছে আপনাদের পড়ার ব্যবস্থাটাও হবে। বুড়াদের ফোকলা দাঁত বেরিয়ে পড়ে। আমি জানতে চাই, আপনারা কয়জন পড়বেন? এঁরা নিশ্চিত করেন অন্তত ১০ জন। ওয়াল্লা, এ তো অনেক!
আমি ঠিক করেছি, এই জায়গায় সকালে বাচ্চারা পড়বে, রাতে বুড়ারা।
আমি হেঁটে হেঁটে ফিরে আসছি। এঁদের কি আনন্দ হলো, না হলো এ নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় কোথায় আমার! আমার নিজের আনন্দ রাখার জায়গা কই- হাঁটছি, নাকি ভাসছি? এই আনন্দের তুলনা কিসের সঙ্গে হয় এটা আমি জানি না, জানলে ভাল হতো।
কে জানে, মৃত্যুর সময় আমার মস্তিষ্ক সচল থাকলে এই সব সুখ-স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেলে মৃত্যু যন্ত্রণা হয়তো বা অনেকখানি লাঘব হবে।
ফিরে আসার সময় দেখি, ৭/৮ বছরের এক শিশু 'নাংগাপাংগা' হয়ে মহা আনন্দে উপর থেকে পড়া পানিতে গোসল করছে। ওর নাচের কাছে সাম্বা নৃত্য কোন ছার!
এই শিশুটির এই অন্য ভুবনের আনন্দের সঙ্গে আমার আনন্দের পার্থক্য কোথায়? অন্তত আমি তো কোন ফারাক খুঁজে পাই না। ফারাক খুঁজতেই আমি চাই না।
*এঁদের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটাবার জটিল কাজটা করেছেন জুটন বণিক। তাঁকে আমার কৃতজ্ঞতা।
**স্বপ্ন: http://tinyurl.com/3y7bpz3
সহায়ক লিংক:
১. স্বপ্ন চার: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_8254.html
২. লাশ-বানিজ্য-পদক: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_23.html
৩. আমি কোথাও যেতে চাই না: http://www.ali-mahmed.com/2009/07/blog-post.html
বিভাগ
আমাদের ইশকুল: এক
Subscribe to:
Posts (Atom)