Search

Thursday, June 28, 2007

ধর্মহীনতা, ধর্মনিরেপেক্ষতা

একজন জানতে চেয়েছিলেন, ধর্ম কেন জরুরী? এমন জটিলস্য, কঠিনস্য প্রশ্নে আমি চোখে সর্ষে ফুল দেখি! আমি মোটা চিন্তা, মোটা মাথার মানুষ। এইসব জটিল প্রশ্নের উত্তরের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি আমার নাই! যাই হোক, আমি মূল বিষয় থেকে সরে গিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করি।
আমার অল্প জ্ঞানে যা বুঝি, প্রথমেই আসতে হয় রাষ্ট্রের কথায়। রাষ্ট্র হচ্ছে পিতাসম। পিতার কাছে তার সব সন্তান যেন হাতের সবগুলো আঙ্গুল। এই আমার মত। এখন পিতার আচরণ তার সন্তানদের উপর কেমন হবে সেটা আঁচ করা মুশকিল। এমন হওয়া বিচিত্র কী! রাষ্ট্রপিতা তার সন্তানদের পুরোদস্তুর চকচকে যন্ত্র বানাতে চান।


ধরা যাক, কোন রাষ্ট্র চাচ্ছে প্লেটোর মত গ্রহণ করতে। যেমনটি প্লেটো তার ইউটোপিয়ায় বলছেন:
“জন্মের সময়ই সব শিশুকে তাদের পিতামাতার কাছ থেকে সরিয়ে নিতে হবে; কোনও পিতামাতা যেন জানতে না পারে কোনটা তার সন্তান, তেমনি কোন শিশুও যেন জানতে না পারে কোনটা তার বাবা মা। বিকলাঙ্গ শিশু বা নিম্নমানের পিতামাতার সন্তানদের সরিয়ে নেয়া হবে একটি রহস্যময় জায়গায়।
…তাদের জীবনে এমন কোন গল্প থাকবে না যেখানে ভালো মানুষরা কাঁদে, হাহাকার করে, এমন কি তাদের প্রিয়মানুষ, বন্ধুর মৃত্যুতেও”।

বেশ তো। কেউ যদি মনে করেন, তিনি এমন একটা রাষ্ট্র চান; সমস্যা তো নাই। ক্ষতি কী, কিন্তু চলমান একেকটা রোবট যখন একের সঙ্গে অন্যে ধাক্কা খাবে এর দায় কে নেবে? ওই জগতে কোন হাসি থাকবে না, কান্না থাকবে না। কোন শেকড় থাকবে না। শেকড়বিহীন গাছ। একটা অন্য ভুবন! সাজানো ভুবন!

রাষ্ট্রের উদাহরণ দিলাম এই জন্য, এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার সমস্ত ধর্মাবলম্বীকে সমান অধিকার দেয়া। নাগরিকের পছন্দ, অধিকার যদি হয় তার ধর্ম পালন- রাষ্ট্রের দায়িত্ব এটা নিশ্চিত করা। একটি রাষ্ট্রের কাজ হচ্ছে নিরাসক্তদৃষ্টিতে তার সন্তানদের সমান চোখে দেখা। তবে সংখ্যাগরিষ্টতা, এই শব্দটা যখন আমদানি হয় তখনই পক্ষপাতদুষ্টতা অবলীলায় চলে আসে- ধাওয়া করে ধর্মহীনতা। ধর্মের নামে চরম অন্যায় করার সুযোগ করে দেয়া।

ঈশ্বর ভাজা ভাজা হন মানুষের কড়াইয়ে, ধর্মের নামে। নইলে যতবার চেষ্টা করা হয়েছে ঈশ্বরকে জানার জন্য ততবার এদের জ্যান্ত পুঁতে, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে- এখনও হয়, পদ্ধতিটা বদলেছে এই যা!
আমরা এই উদাহরণ মনে রাখার চেষ্টা করি না- নামজের সময় হলে বিশপ এলচিঙ্গার স্টানবুর্গের প্রধান গির্জায় নামাজ পড়ে নেয়ার অনুরোধ জানালে উলেমা দল গির্জার বেদীর সামনে কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। অথবা বাবরী মসজিদ নিয়ে যখন ধুন্ধুমার কান্ড তখন বিসমিল্লা খাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলো তাঁর বক্তব্য। তিনি বলেন, ‘আমার জায়নামাজ বিছানোর জায়গা থাকলেই চলে’।

ধর্ম মানুষকে এটা শেখায় অন্য ধর্মকে হেয় করতে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। একেকটা ধর্মের শক্তি আঁচ করা যায় অন্যের ধর্মমতের প্রতি শ্রদ্ধায়। উন্নত অনেক দেশের এমন সিদ্ধান্তের উদাহরণ আমরা বিস্মৃত হই, মাইক দিয়ে আযান দেয়ার বিষয়ে যখন আপত্তি উঠে তখন সিদ্ধান্ত হয়, গির্জার ঘন্টা যত ডেসিবল তত ডেসিবলে আযান দেয়া যাবে। যেমনটি কোন উপজাতি বিশ্বাস করে, সামান্য একটা পাথরের টুকরোকে ঈশ্বররূপে- আমি সত্যটা জানি, এটা পাথর ব্যতীত কিছুই না, কিন্তু আমার কী অধিকার জন্মায় এতে পদাঘাত করার?
যেটা ভলতেয়ার বলার চেষ্টা করেছেন ২ লাইনে:“আমি তোমার সঙ্গে একমত না, কিন্তু তোমার মত প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু লড়ব।”

ধর্ম কেন জরুরী। আমি মনে করি, একেকটা মানুষকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখে অসংখ্য শেকল। প্রথমেই আসে শেকড়ের শেকল। তার উত্তরসুরিরা। ঝপ করে আসমান থেকে তো কেউ আর পড়ে না- তার বাবা, মা আত্মার সম্পর্কের কেউ না কেউ তো থাকেই। শিক্ষার শেকল, ধর্মের শেকল- রাশি রাশি শেকল। এটা স্বীকার করে নিতে হয় ধর্মের শেকলে বেঁধে রাখাটা সহজ- এও সত্য, একজন ধর্মবক্তার কোন যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না!
একজন মানুষকে হরদম লড়ে যেতে হয় কুর সঙ্গে। এই লড়াইয়ে শেকলের যে বড়ো প্রয়োজন- হোক না সেটা ধর্মের শেকল। যার যে শেকলটা প্রয়োজন, চাপাচাপি করার তো কিছু নাই।

একজন স্বশিক্ষিত নাস্তিক, এটা তো তার সিদ্ধান্ত। সমস্যা দাঁড়ায় তখনি, যখন জোরজবরদস্তি শুরু হয়ে যায়। আমরা চট করে বলি, তুমি কি ধর্মীয় আচার পালান করো- কিন্তু এটা মনে রাখি না, তারও অধিকার দাঁড়ায় এ প্রশ্নটা করার কেন তুমি ধর্মীয় আচার পালন করো?

অন্য ভাবে দেখারও অবকাশ আছে। আমরা একটা মুভি নিয়ে দ্বিতীয়বার চিন্তা করি কিন্তু ফট করে বলে দেই আমি নাস্তিক। ৫টা মিনিট চোখ বন্ধ করে এই মহাবিশ্বটার কথা ভাবতে সচেষ্ট হই না। এখন তো শোনা যাচ্ছে প্যারালাল ইউনিভার্সের কথা। ইউনির্ভাস ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এর জন্য দায়ী যে শক্তি, বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ডার্ক এনার্জি। এই ডার্ক এনার্জি সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা জানেন মাত্র ৪ ভাগ।
তো, আমি যেটা বলতে চাচ্ছিলাম, আমাদের কাছে যথেষ্ট জ্ঞান আছে, ফাইন। কিন্তু কতটা জ্ঞান, কবেকার জ্ঞান? অবস্থান, সময় খুব একটা বড়ো ফ্যাক্টর।

আরেকটা বিষয়, একজন নাস্তিকের এটাও সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ তাঁর মৃত্যুর পর মৃত্যু পরবর্তী আচার কি হবে? একজন নাস্তিকের মৃত্যুর পর তাঁর ভাষায় বিড়বিড় করে বিজাতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করার চেয়ে হাস্যকর আর কি হতে পারে!
এখানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না, বৃটিশ শ্রমিক দলের নেতা বিভান ছিলেন নিরীশ্বরবাদী। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পর, বাইবেল পাঠ করা অর্থহীন। তো, বিভানের স্বরচিত গ্রন্থ In place of fear থেকে খানিকটা পাঠ করার জন্য।
*(আরও কিছু বিষয় যোগ করার আছে হয়তো পরে, হয়তো কখনও না।)