এই খবরটা কাল না-এসে আজ এলে চমৎকার হতো। নতুন বছরে এক নতুন অসাধারণ ঘটনা! এই একটা খবরের জন্য প্রথম আলোর ১০টা ফাজলামি-অপরাধ-অন্যায় অবলীলায় ভুলে যাই। অরুণ কর্মকার, হানিফ মাহমুদকে টুপি খুলে অভিনন্দন জানাই।
পাট আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে! আমার মনে হচ্ছে এমন, অনেক, অনেক দিন হলো এমন আনন্দের সংবাদ শুনি না। কী যে ভাল লাগা! আমাদের সন্তান আমাদের কাছে ফিরে আসছে। গার্মেন্টসকে হেয় করছি না, একে আমি ঠিক আমাদের সন্তান বলতে চাচ্ছি না কিন্তু পাট আমাদের দেশমাতার ঔরসে। এই বিকলাঙ্গ সন্তান কোমা থেকে ফিরে এসেছে। কী হড়বড় করেই না এখন কথা বলছে। শিশুর উচ্ছ্বাসে ঘরময় আলোকিত করে রেখেছে। চারদিক কেমন সোনায় ছেয়ে গেছে সব!
যে পাটের দাম ছিল ২০০ টাকা মণপ্রতি আজ তা ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে যেখানে আড়াই হাজার বেল বিক্রি করা দুঃসাধ্য ছিল সেখানে আজ অনায়াসেই বিক্রি হচ্ছে আড়াই লাখ বেল! ভাবা যায়? এই অসাধ্য সাধন কিন্তু আমাদের সরকার বাহাদুর করেননি যদিও এর সমস্ত ক্রেডিট এরা নিয়ে নেবেন অচিরেই, এতে কোন সন্দেহ নাই। এই অসাধ্য সাধন করেছেন উত্তরবঙ্গের কিছু সাধারণ উদ্যেক্তা। এঁরা ৫০ বছরের পুরনো তাঁত কিনে এক অভাবনীয় ব্যাপার করে ফেলেছেন।
তপন চৌধুরী, ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ফজলে হাসান আবেদরা কিন্তু এগিয়ে আসেননি- আহা, জাতীয় দৈনিকে এঁরা তো কেবল লম্বা লম্বা বাতচিত করেই সারা।
বৈদেশি সাদা-লাল চামড়ার নির্দেশে সরকার লোকসানের অজুহাতে একের পর এক পাটকল বন্ধ করে দিচ্ছিল। বৈদেশি স্যাররা হাগেন নিজের দেশে পশ্চাদেদশ পরিষ্কার করেন আমাদের মতো দেশে এসে। আমরা বিমলানন্দে তাদের এই কাজটা করে দেই!
শ্রমিকদের মজুরির টাকা দিয়ে বিজেএমসি পাট কেনার জন্য ব্যয় করত। তখন অনেক বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। বেতনভাতা পাওয়ার দাবিতে রাষ্ট্রায়ত্ত স্টার জুটমিল এবং ক্রিসেন্ট জুটমিলে এই নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটে।
১৫.০৯.০৮-এ ২৭ স্টার, ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম জুটমিলের ২৭ জন শ্রমিকনেতা আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের এই সিদ্ধান্তে কোন খাদ ছিল না। এঁদের প্রস্তুতি- নামায আদায়, তওবা পড়া, কেরোসিনের ক্যান ঠান্ডা মাথায় এই কাজগুলো দেখে, তাঁদের সন্তানদের হাহাকার, 'তুমি মইরা যাইয়ো না, আব্বা'। দাঁতে দাঁত চেপে সব কিছু উপেক্ষা করে তাঁরা তাঁদের কাজগুলো করে যাচ্ছিলেন। পরে দমকলবাহিনীর পানি ছিটিয়ে তাঁদের ভিজিয়ে দেয়।
পত্রিকায় এটা পড়ে আমি শিশুর মত হাউমাউ করে কাঁদছিলাম। আমার কাছের মানুষরা চোখ বড় বড় করে ভাবছিলেন, এমন একটা ধামড়া মানুষ বাচ্চার মত এমন করছে কেন! আজ এতদিন পরও এখন যে এই লেখাটা লিখছি ; কসম, আমার লেখালেখির, আমার মনিটর ঝাপসা।
এটা একটা পুরনো লেখা। হারিয়ে ফেলেছিলাম। অন্য একটা ওয়েব সাইট থেকে আজ উদ্ধার করলাম। প্রাসঙ্গিক হবে মনে করে এখানে দিয়ে দিলাম:
"দাবী আদায়ের জন্য কখনও ভাংচুর, কখনও বা অন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা দেখে, প্রায়শ মনে হত, কেউ একজন নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় না কেন? আজ নিরাপদ দূরুত্বে এটার মুখোমুখি হয়ে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল। কেবল মনে হচ্ছে ফিচফিচ করে মেকি কান্না না, হাউমাউ করে কাঁদতে পারলে বেশ হত।
খুলনায় রাষ্ট্রয়ত্ত পাটকলের বকেয়া বেতনের দাবীতে ২৭ জন শ্রমিকনেতা গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহুতি দিতে গিয়েছিলেন। এঁরা ঠান্ডা মাথায় যে কাজগুলো করেছেন, কেবল মনে হচ্ছে আমার চামড়ার নীচে অসংখ্য সরীসৃপ কিলবিল করছে। এই ২৭ জন মানুষের তাঁদের প্রিয় মানুষদের মুখগুলো, নরক গমনের ভয় পেছনে ফেলে মৃত্যুকে ছুঁয়ে দিতে এগিয়ে চলা। শত-শত সহযোদ্ধাদের কান্না বাতাসে মিশে যায়, পায়ে দলে যায়। শরীর, মাথায় কাফনের কাপড়। শেষ নামায আদায়। তওবা করা। হাতে কেরোসিনের বোতল থেকে নিজের গায়ে ঢেলে দেয়া। ম্যাচ জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা...। দমকল বাহিনীর লোকজনরা বুদ্ধি করে এদের গায়ে পানি ছিটিয়ে না দিলে...? কী হত? এই দেশে কত মানুষই তো পোকা-মাকড়ের মত মারা যাচ্ছে। এর সংগে আরও কিছু সংখ্যা যোগ হত।
কিন্তু কে জানে, হয়তো আমার মত কোন এক নির্বোধের বড্ড সমস্যা হয়ে যেত। কানে ভেসে আসা চামড়া পোড়ার চড়চড় শব্দ কী ডেসিবল দিয়ে মাপা যেত? ধোঁয়াওঠা গরম গরম ভাতের গন্ধের সাথে কী চর্বিপোড়া গন্ধ একাকার হয়ে যেত? জানা নাই।
হায় জঠর! হায় ক্ষিধার কষ্ট! ক্ষিধার কষ্ট, বড় কষ্ট। এই কষ্টটা উপলব্ধি করার জন্য আমাদের কত কসরতই না করতে হয়। তবুও ক্ষিধা নামের পশুটাকে পুরোপুরি চেনা হয়ে উঠে না আজও! পেটে যখন আগুন জ্বলে ধর্ম কোন রসাতালে গেল নাকি দেশ, তাতে কি আসে যায়! এই সত্যটাকে আমরা লুকিয় রাখার কী আপ্রাণ চেষ্টাই না করি। কিন্তু কতশত মর্যাদাবান মানুষ তাঁদের হাতের অস্ত্র সমর্পণ করেন ক্ষুধার কাছে।
এই ২৭ জন শ্রমিকনেতাদের দেখে কেবল মনে হচ্ছে আমাদের জাতীয় বিবৃতিবাজ নেতাদের মত কেবল বিবৃতি দিয়েই এঁরা ক্ষান্ত দেননি, অনায়াসে সত্যি সত্যি নেতা হয়ে উঠেছেন। যে নেতার এক ডাকে ছুটে আসা চলে।
আহা, যেসব জাতীয় নেতাদের জন্য আমরা আপামর জনতা অবলীলায় অমূল্য প্রাণ বিসর্জন দেই এরা এঁদের পাশে দাঁড়ালে সংখ্যাটা হত ২৮...২৯...৩০? অলীক ভাবনা!
আমি খুব আশা নিয়ে ছিলাম, খুব আশা, আমাদের দেশের বিখ্যাতসব কলমবাজরা তাদের দামি কলম তুলে এদের পক্ষে ঝড় বইয়ে দেবেন। মুক্তচিন্তার দৈনিকগুলোতে প্রথম পাতায় মন্তব্য আকারে ঢাউস ঢাউস আগুনের গোলা উগরে দেবেন। দেবেন কী? কই, পেলাম না তো!
শক্তিশালী লেখকদের এইসব সামান্য বিষয় নিয়ে তাঁদের অন্য ভুবনের লেখাভরা মাথাটা ঘামাবার সুযোগ আছে কী! এঁরা তো জ্যোৎস্নায় থপথপ করে পায়চারি করে শরীরে কোমল জ্যোৎস্না মাখতে থাকেন, কচকচ করে জ্যোৎস্না চিবুতে চিবুতে কোন এক অজানা ভাবনায় তলিয়ে যান। জ্যোৎস্না-ফসর রাইত না হলে মরতে রাজি হন না, দম আটকে ঝুলে থাকেন। তাদের কোন ক্ষুধার্ত চরিত্র চাঁদের দিকে তাকিয়ে কোন এক আলোকিত ভাবনা ভাববেন। সেই আলোকিত ভাবনা আমরা আয়েশ করে, ভুড়ি ভাসিয়ে হাভাতের মতো গিলব।
এইসব সামান্য বিষয়ে এদের কলমবাজি করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এই বিষয়ে আমি আমার সর্বস্ব বাজি রাখতে রাজি আছি। এমন বাজিতে হেরে গেলেও সুখ। অতীতে দেখেছি, একের পর এক পাটকলগুলো যখন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছিল আমাদের লেখক মহোদয়দের দেখলাম না তেমন গা করতে। কেন, আল্লা মালুম! আসলে এদের ভাবনার জগৎ অপার্থিব, পরাবাস্তব- তীব্র আলোর ছটায় অন্যদের অন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আধুনিক, উত্তর আধুনিক সাহিত্যের চুলচেরা ফারাকের বিশ্লেষণ ব্যবচ্ছেদ করে করে ফুরসত আর কই! এখন শক্তিশালি জনপ্রিয় লেখকরা কোন এক শপিং মলের ফিতা কাটতে ভারী আমোদ বোধ করেন বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ডিম ভাজতে।
যাই হোক, কেন তাঁদের ঘামের পাওনা পরিশোধ করা হবে না? তত্ত্বাবধায়ক স্যাররা, রোডম্যাপওয়ালারা বলবেন, মিলগুলো লোকসান দিচ্ছে, টাকা আসবে কোত্থেকে? মিলগুলো চলছে না। কেন চলছে না? ভাল, কিন্তু এদের মজুরির টাকা দিয়ে পাট কেনার ক্ষমতা আপনাদের কে দিল? যিনি এই সিদ্ধান্তটা দিয়েছেন তিনি কি এই ২৭টা খুনের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াতেন?
বিভিন্ন অজুহাতে পূর্বেও অসংখ্য পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গিতিআরা সাফিয়া চৌধুরী আবার এক কাঠি সরেস! পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়াটা কেন অতীব জরুরি এই কুতর্ক করে লাভ নাই। এই পাটকলগুলো বন্ধ করার জন্য নাকি আমাদের পুরু মাখন খাওয়া বৈদেশিক দাতা মহোদয়দের তীব্র চাপ ছিল। এরা এই পাটকলগুলো বন্ধ করার জন্য মুঠো মুঠো ডলার দিতে আগ্রহি। সাধু-সাধু।
পাশ্ববর্তী অন্য দেশগুলোর (ভারত) জন্য আবার অন্য চিত্র। ওখানের জন্য নিয়মটা আবার অন্য রকম। ওখানে পাটকল চালু করার জন্য মুঠো মুঠো ডলার, ইউরো।
ভারতে পাটের সামগ্রী ব্যবহারের চাহিদা ৯০ ভাগ, আমাদের দেশে ৫ ভাগ। পাটকলগুলো লোকসানের অন্যতম কারণগুলোর কয়েকটা এমন: সীমাহীন দূর্নীতি, বিদ্যুত-পাওয়ার না থাকা। ১৬ ঘন্টা বিদ্যুত না থাকলে শ্রমিকদের দোষ দেয়া কেন? এরা কেন তাদের ঘামের মূল্য পাবেন না?
আমাদের মত অগাবগারা কি আর এইসব জটিল বিষয় বুঝতে পারি, আমাদের মস্তিষ্ক তো ঘন্টা দরে বিক্রি করে দেই! ওহে, এ দেশের সোনার শিল্প উদ্যোক্তারা, আপনাদের মধ্যে এমন কেউ কি ছিল না? ছিল না এমন কোন সোনার বাংলার সোনার সন্তান, যে এই রুগ্ন পাটকলগুলো দায়িত্ব নিতে পারতেন?
অনেককেই দেখেছি, হেনতেন এমন কিছু নেই যা মার্কেটিং করতে পারেন না, ইশবগুলের ভুষিও ঝাঁ চকচকে প্যাকেট করে অবলীলায় মার্কেটিং করে ফেলেন। এক চিমটে ভুষি ৪ টাকা,পাবলিক দেদারসে কিনছে। শ্লা, পারেন না কেবল সোনার দেশের সোনার ছেলেরা সোনালী পাট মার্কেটিং করতে।
আহা, এমনটা হলে যে আমাদের জন্য যে ভারী বেদনার। কত্তো কত্তো গল্প যে আমরা মিস করব। শ্রমিকের যে মেয়েটি এসএসসি পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছিল, সে পরীক্ষা দিতে পারবে না। যে গৃহবধুটির সলাজ মুখে ঢলঢল করত কমনীয়তা সেই বধুটি বাসন মাজবে । একজন শ্রমিকের হাত যখন অবলীলায় ভিক্ষুকের হাতে পরিণত হবে, এরচে মজার আর কী হতে পারে, নাকি হওয়া উচিত!"
*পুরনো লেখা থেকে আরও কিছু তথ্য পেয়েছি। পাটকলগুলো যখন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছিল তখন সাড়ে ছ হাজার শ্রমিক ছাটাই করা হয়েছিল, আরও সাড়ে ৭ হাজার শ্রমিক ছাটাইয়ের অপেক্ষায় ছিলেন। বেতন-ভাতা বন্ধ, ক্ষুধার্ত শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলে গিতি আরা সাফিয়া চৌধুরী (স্মৃতি থেকে লিখছি, নামের বানান ভুল হতে পারে) তখন বলেছিলেন, পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করেছে। এই মৃদু লাঠিচার্জের নমুনা এমন, এরা শ্রমিক ইলিয়াসের কোলের সন্তান টুকটুকিকে পর্যন্ত বেদম পিটিয়েছিল।
আরেকজন পাটশ্রমিক মাহবুব। তিনি ঘরে বসে কোরআন পড়ছিলেন। পুলিশ ঘরের ভেতর ঢুকে তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রী নার্গিসকে বেদম পেটায়। এঁরা বুকে কোরআন ধরেও পুলিশের মার থেকে বাঁচতে পারেননি।
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Friday, January 1, 2010
পাট, ঘুরে দাঁড়ায় স্বপ্ন!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment