আমি জানি না মনখারাপ করা দিনে ঝুম বৃষ্টি নামে কেন?
দুপুর থেকেই কেমন অস্থির-অস্থির লাগছিল, কারণটার বিশদে যেতে চাচ্ছি না। আমার সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি, তীব্র। মনখারাপ হলেও তা হয় অতি তীব্র- এর ধাক্কা সামলানো আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। মাথায় তখন হাবিজাবি ভাবনা খেলা করে। এই ভাবনাগুলোর নমুনা কেমন এই নিয়েও আলোচনার ইচ্ছা নাই। অল্প কথায় বলা যায় নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা তখন দুস্কর হয়ে পড়ে।
এমনটা হলে আমি যেটা করি সোজা হাইড-হাউজে চলে যাই, ফোন বন্ধ করে দেই। নামটা শুনতে গালভরা কিন্তু এটা তেমন উল্লেখ করার মত কিছু না। নদীর তীরে একটা টং ঘরের মত। এটার খোঁজ আমি কাউকে বলি না, খুব কাছের মানুষকেও না।
এখানে যে মানুষটা থাকেন তিনি বিচিত্র কারণে আমাকে পছন্দ করেন- টুকটাক কথা চলে। আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করি, মানুষটা যখন দেখেন আমার কথা বলার আগ্রহ নাই তখন কোন একটা ছল করে ওখান থেকে সরে পড়েন। মুখে বলেন, শইলডা ম্যাজম্যাজ করতাছে, যাই হাইট্টা আসি।
এই মানুষটার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই!
এখানে আসার সময়ই আকাশ জুড়ে মেঘ ছিল। কী অসাধারণ প্রকৃতির খেলা! মানুষের বানানো যন্ত্রের এই ক্ষমতা কই একে ধরে রাখার, তাও আবার ৩.২ মেগাপিক্সেল সেলফোন ক্যামেরার?
ওয়াল্লা, আকাশ দেখি তার সমস্ত চুল এলোমেলো করে ঢেকে ফেলে সব, ঝাঁপিয়ে পড়ে বৃষ্টি! বৃষ্টি ভিজিয়ে দিচ্ছে, পা ঝুলিয়ে বসার সুখটা আর রইল না। আমার ধারণা ছিল অনেকক্ষণ লাগিয়ে বৃষ্টি হবে। কিসের কী, অল্পক্ষণেই বৃষ্টির আর নাম-গন্ধও নেই। ফিরে আসতে আসতে আমার খেয়াল হয় কাল যে স্কুল চালু হয়েছে [১] এটা আজ চারটা থেকে শুরু হওয়ার কথা। চারটা বাজতে আর বেশি বাকী নাই।
হা ইশ্বর, এটা সম্ভবত এই গ্রহের অসাধারণ একটা দৃশ্য! আমি কি ঠিক দেখছি? কাল ছাত্র ছিল কেবল ছয় জন, এখন দেখছি ১৯ জন! শিক্ষক আমাকে দেখে চোখ বড়বড় করে হড়বড় করে কিসব যেন বলতে থাকে। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি শিক্ষক নামের মেয়েটা হতভম্ব হয়ে গেছে। এ আশা করেনি এরা দল বেঁধে সবাই ঠিক-ঠিক সময়মতো চলে আসবে। কেবল চলেই আসেনি, সবাই মিলে প্রথমে ঘরটা পরিষ্কার করেছে। ঘরটা দীর্ঘ সময় অব্যবহৃত থাকায় রাজ্যের আবর্জনায় গিজগিজ করছিল। আমি নিশ্চিত, এই সংখ্যা আরও বাড়বে। আমি আগের লেখাও বলেছিলাম, অন্য দুইটা স্কুল থেকে [২] [৩]এই স্কুলের বাচ্চারা চমৎকার করবে।
এই ফাঁকে কখন যে আমার নিতল বিষণ্নতা বাষ্পের মতো উবে গেছে আমি নিজেও জানি না!
কালকের লেখায় একজন পাঠক আপত্তি জানিয়েছিলেন, এটাকে অভাগাদের স্কুল বলায়। ওখানে আমি ব্যাখ্যা দিয়েছি তদুপরি সবিনয়ে আবারও বলি, এটা কেবল আমার জন্য। এখানে আমার লেখার পাঠককেও জড়াতে চাই না। বুকে হাত দিয়ে বলি, এদের দেখে আমার কেবল মনে হয় একেকটা চাবুকের কথা। যে চাবুকের দগদগে ঘা আমার পিঠে।
আমি পড়ার সুযোগ পেয়েছি, আমার সন্তানও। হরিজন পল্লীর বাচ্চাদের মা-বাবা আছে। চোখে দেখতে পান না এমন মানুষদের বাচ্চাদেরও কিন্তু এই স্কুলের অধিকাংশ বাচ্চাদের মা-বাবার হদিস নাই। তাই অন্য স্কুলের চেয়ে এই স্কুলটা প্রতি আমার বিশেষ পক্ষপাতিত্ব আছে। অন্য স্কুলগুলোয় মাস্টাররা পড়ান, না-বলে কোন একদিন আমি চলে আসি। কিন্তু এখানে শিক্ষকের সঙ্গে আমিও থাকি কারণ এই বাচ্চাগুলো হচ্ছে দামাল টাইপের। নমুনা:
পরশু স্টেশনে একটার সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাঁটছিলাম, এ আমার অতি সামান্য পেছনে ছিল। হঠাৎ মনে হলো কোন প্রতিউত্তর পাচ্ছি না যে। ফিরে দেখি ভোজবাজির মত এ উবে গেছে। নাই তো নাই- পরক্ষণেই একে খুঁজে পেলাম রেলগাড়ির ছাদে, দাঁত একটাও ভেতরে নেই!
তো, এই সব মহা বিচ্ছুদের সামাল দেয়াটা মাস্টারের জন্য খানিকটা কঠিন বটে।
আমি যখন এই স্কুলটার জন্য বেদম দৌড়াচ্ছি তখন কেউ কেউ আমাকে কঠিন কথার ফাঁদে ফেলতে চেয়েছেন। দুয়েকটার নমুনা দেই:
১. এইসব পিরাইল্লারা (এটা ভাল বাংলা হবে সম্ভবত বখা) কী পড়ব?
আগেও বলেছিলাম, এমনিতে আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারি না, কথা জড়িয়ে যায় কিন্তু প্রচন্ড রেগে গেলে খানিকটা গুছিয়ে কথা বলতে পারি। আমি শান্ত ভঙ্গিতে বললাম, খোদা-না-খাস্তা, আপনার বাচ্চা হারিয়ে কোথাও-না-কোথাও বড়ো হলে এদের মত যে হবে না এটা আপনাকে কে বলল?
মানুষটা আর রা কাড়েননি।
২. একজন আমাকে কঠিন আক্রমণ করলেন, এই স্কুল করে কি আপনারা টাকা-পয়সা নিবেন?
আমি বললাম, না।
তিনি বললেন, তাহলে আপনার লাভ কি?
আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম, লাভ কি-লাভ কি। ঝড়ের গতিতে আমার মাথার তথ্যগুলো ওলটপালট হচ্ছে- আমার ফাঁকা মাথায় খুব একটা সুবিধা হচ্ছে না। মনে পড়ে, আমি মানুষটাকে ইতিপূর্বে দেখেছি সিগারেট খেতে। আমি বলি, আচ্ছা, সিগারেট খেয়ে আপনার লাভ কি?
মানুষটার উত্তর, জানি না। ভাল লাগে।
আমি বলি, আমিও জানি না। ভাল লাগে।
এদের পড়ার নমুনা দেখে আমি হতভম্ব! এর মধ্যে কয়েকটাকে পেয়েছি, চুপচাপ বসে আছে। আমি বলি, পড়ো না কেন?
এরা উদাস হয়ে বলে, বই শেষ।
আমি নিশ্চিত, ফাজলামী করছে। খানিকটা টাইট দিতে হবে। উল্টাপাল্টা অক্ষর ধরে দেখলাম ঠিক ঠিক বলতে পারছে। যেটা জানা গেল এরা পূর্বেও স্কুলে পড়েছে।
কাল এদের জন্য বড়দের বই যোগাড় করতে হবে। অন্যদেরও যেটা দেখলাম, শেখার ক্ষমতা আমার মতো মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য যথেষ্ঠ। আমি নাকি অল্পতে মুগ্ধ হই এই বিষয়ে আমার খানিকটা কুখ্যাতি আছে। বেশ, অল্পতে মুগ্ধ হন না এমন একজনকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে দেখি না...।
সহায়ক লিংক:
১. অভাগাদের স্কুল: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post.html
২. আমাদের ইশকুল, এক: http://tinyurl.com/3xpuov5
৩. আমাদের ইশকুল, দুই: http://tinyurl.com/2fs9j4p
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Wednesday, September 1, 2010
অভাগাদের স্কুল: ২
বিভাগ
আমাদের ইশকুল: তিন
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment