আমাকে খুব ভুগিয়েছে যেটা সেটা হচ্ছে, এই শিশুদের চিকিৎসা সমস্যা। কোন ডাক্তার মহোদয় যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। এতগুলো বাচ্চাকে ওখান থেকে নিয়ে এসে এখানে দেখানোটা কঠিন। ডাক্তার মহোদয়দের কেজি-কেজি তৈল মর্দন করেও কোন লাভ হচ্ছিল না। এমন না তিনি বিনে পয়সায় দেখে দেবেন। একটা সম্মানি তাদের দেয়া হবে এটাও জানানো হয়েছিল।
একজন এমবিবিএস ডাক্তার সাহেবকে অনেক বলে-কয়ে রাজি করানো হয়েছিল। ওনাকে অন্যরা এবং আমি সবাই প্রাণপণে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলাম এই স্কুলগুলো চলছে কষ্টেসৃষ্টে। যাওয়ার পূর্বে তিনি জানিয়ে দিলেন, ওনাকে আনা-নেয়ার পর এক হাজার টাকা দিতেই হবে। এই দাবী করলে আমার মনটাই খারাপ হয়ে যায়। এই দেশের বেশিরভাগ ডাক্তাররাই নীচ-লোভী, এঁদের সীমাহীন লোভ! এবং এঁরা অমর!
অথচ আমি এঁদেরকে বলি, দ্বিতীয় ঈশ্বর। মুমূর্ষু কোন মানুষ যখন আধ-জবাই পশুর মত ছটফট করতে থাকে ঠিক সেই মুহূর্তে একজন ডাক্তারের উপস্থিতিকে মনে হয় উপরে ঈশ্বর আর নীচে দ্বিতীয় ঈশ্বর।
ব্যতিক্রমও আছেন অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইফুলের যখন দু-পা কাটা যায় তখন তাঁর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। সেই মুহূর্তে পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসক আরিফ আনোয়ার তাঁর নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে সাইফুলকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।
পূর্বের একটা লেখায় লিখেছিলাম [১], এই একটা পেশার প্রতি আমার ঈর্ষা আছে। আমি কিছুই হতে পারিনি এই নিয়ে আমার কখনও হা-হুতাশ ছিল না কেবল মনে হতো ডাক্তার হতে পারলে বেশ হতো। অন্তত হাঁটতে-শুতে-বসতে মানুষের জন্য কিছু একটা করা যেত। অসুস্থ একটা মানুষ যখন শেষ আশাটা-হাল ছেড়ে দেয় তখন তার পাশে দাঁড়াতে পারাটা যে আনন্দের এটা লিখে কেমন করে বোঝাই?
ডাক্তার নামের মানুষটাকে [২] ঈশ্বরের বিশেষ সন্তানদের ইশকুলে নিয়ে যাই। আমরা যখন গিয়ে পৌঁছি তখনও স্কুল শুরু হওয়ার সময় হয়নি। বাচ্চারা দেখলাম, রিকশার টায়ার দিয়ে চমৎকার গাড়ি চালাচ্ছে। আফসোস হলো, সঙ্গে একটা ফুটবল নিয়ে আসলে মন্দ হতো না, বাচ্চারা খেলত! ফুটবলে দু-চার লাথি আমিও দিলে আটকাত কে!
ডাক্তার এখানে বাচ্চাদের যতটুকু দেখার দেখে দিয়েছেন।
আমার তীব্র আগ্রহ ছিল নার্গিস নামের মেয়েটিকে দেখানো। বাচ্চাদের মধ্যে এই কেবল চোখে দেখতে পায় না। এই মেয়েটার কখনও দেখতে পারবে কি না এটা জানাটা আমার বড়ো জরুরি। এই ডাক্তার যদিও চোখের ডাক্তার না তবুও খানিকটা হলেও তো ধারণা পাওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা যায়, খানিকটা হলেও সম্ভাবনা আছে। আমি চেষ্টা করব এই মেয়েটাকে ভাল একটা চোখের ডাক্তার দেখাতে।
এই বাচ্চাদের বাবা-মা, যাদের সমস্যা প্রবল এদেরকে তিনি যে ক্লিনিকে বসেন সেখানে নিয়ে আসা হয়েছে। একবারে সবাইকে দেখা তো সম্ভব না, ঠিক হয়েছে প্রতি সপ্তাহে দু-তিনজন করে দেখে দেবেন। কারণ এখানে তিনি আসেনই সপ্তাহে একদিন।
আমাকে খুব বেগ পেতে হয় ডাক্তার নামের মানুষটার ছবি উঠাতে কারণ এতে তাঁর বড়ো অনীহা। কিন্তু আমার চিন্তা অন্য, অন্য ডাক্তাররা অন্তত এটা দেখে খানিকটা লজ্জা পাক, অন্তত লজ্জা স্থানটা ঢেকে রাখার চেষ্টা করুক।
*ইশ্বরের বিশেষ সন্তানদের ইশকুল, ২: http://www.ali-mahmed.com/2010/08/blog-post_05.html
সহায়ক লিংক:
১. মা এবং তার অদেখা সন্তান: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_10.html
২. ডাক্তার নামের মানুষটা: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_06.html
... ... ...
আজ হুট করে মনে হলো একটা চক্কর দিয়ে আসি। ছাত্র-ছাত্রী ছিল ২৬ জন। আজ দেখছি আরেকজন বেড়েছে! চোখে দেখতে পায় না এমন আরেকটা ছেলে বিড়বিড় করছিল, আমিও পড়তাম।
আমি তাকে বলি, তুমি টিচারের সঙ্গে কথা বলো, তোমাকেও পড়াবে। সব মিলিয়ে দাঁড়াল ২৮ জন! আমি খানিকটা শংকিত, এই ২৮ জন ছাত্র-ছাত্রীকে টিচার পড়াতে পারবে তো, খুব বেশি চাপ হয়ে যাচ্ছে না?
আজ সঙ্গে ফুটবল নিতে ভুল হয় না। বলটা এদের দেখানো মাত্র স্কুলের সমস্ত শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। এরা যে আচরণ করে মনে হচ্ছিল এটা বিশ্বকাপ!
পরে এদের কাছে আমি জানতে চাই, এটা দিয়ে কি কেবল তোমরাই খেলবা, মেয়েরা খেলব না?
ছেলেদের সাফ উত্তর, মেয়েরা খেলব না, এইটা মেয়েদের খেলা না।
আমি জানতে চাই, কেন? মেয়েরা তোমাদের সাথে পড়লে সমস্যা নাই কিন্তু খেললে সমস্যা হবে কেন? তোমরা যদি মেয়েদেরকে একেবারেই খেলায় না নাও তাহলে খেলা বন্ধ।
এরা মুখ শুকিয়ে রাজি হয়। দেখা যাক, কেবল কি ছেলেরাই খেলে নাকি মেয়েদেরকেও খেলায় নেয়...।
আপডেট: ১৮ আগস্ট, ২০১০
আজ এখানে এসেছি অন্য কাজে। উঁচু এক টিলা থেকে যখন ছবি উঠাচ্ছি, মেয়েদের কাউকে এখানে খেলতে দেখলাম না! ছেলেরা কী দাদাগিরি দেখানো শুরু করে দিল?
পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল ঘটনা এটা না, মেয়েরা তখন সেলাইয়ের কাজ শিখছিল।
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Saturday, August 7, 2010
ঈশ্বরের বিশেষ সন্তানদের ইশকুল: ৩
বিভাগ
আমাদের ইশকুল: দুই
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 comment:
"ছেলেদের সাফ উত্তর, মেয়েরা খেলব না, এইটা মেয়েদের খেলা না।"
বাপ রে, এরা এই বয়সেই মেল শৌভিনিস্ট! :)
Post a Comment