জুবায়ের আহমেদের বয়স চল্লিশ, দেখায় পঞ্চাশ! চুলে এখন নিয়মিত কলপ দিতে হয়। বিয়ের আগে রীতিমত সুপুরুষ ছিলেন। যুনির সঙ্গে বিয়ে হয়েছে আট বছর হবে। তাদের কোন সন্তান নেই।
যুনিকে ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন হয়নি। সমস্যাটা ওর নিজের। সৃষ্টিকর্তা এমন ভয়াবহ শাস্তি কেন দিলেন, কেন-কেন?
এ বিষয়ে যুনির সঙ্গে সরাসরি কোন কথা হয়নি। ডাক্তারের রিপোর্টটা সহজেই চোখে পড়ে এমন জায়গায় রেখে দিয়েছিলেন। বুঝতে পেরেছেন, যুনি এটা নিয়ে কোন লেডি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছে। এ নিয়ে একটা কথাও বলেনি, বললে ভালো হতো!
এরপর থেকে যুনি অবহেলা দেখাচ্ছে। এ বেদনার কথা কাউকে বলা যায় না, যুনিকেও না। কী কষ্ট, বেঁচে থাকাটা কী কষ্টের! শরীর ক্রমশ ভেঙ্গে যেতে থাকল। এখন আয়নায় নিজের ভাঙ্গাচোরা অবয়ব দেখে কাকতাড়ুয়া বলে ভ্রম হয়!
ক-দিন ধরে যুনি যাচ্ছেতাই রেগে আছে। কারণটা ঠিক ধরতে পারছেন না। যুনির সব সেরে ঘুমাতে রাত হয়, ওর আবার পরিষ্কার বাতিক আছে। জুবায়ের রাত জাগতে পারেন না, সকালে অফিসও থাকে। ঘুম আসছিল না বলে শুয়ে শুয়ে বই পড়ছেন।
যুনি শোবার ঘরে ঢুকেই চোখ-মুখ শক্ত করে বলল, কি ব্যাপার, জেগে আছে যে বড়ো?
ঘুম আসছে না।
কিছু চাও?
নাহ, তোমার কাজ শেষ?
যুনির কাটা-কাটা গলা, আমার কাজ শেষ না শুরু এটা জেনে তো তোমার কোন লাভ নাই। মুখ ফুটে বলো, লজ্জার কিছু নেই। বলো তো এখুনি কাপড় খুলি?
জুবায়ের ভাঙ্গা গলায় বললেন, না।
না বলতে তাকে মনের সঙ্গে যুজতে হয়েছে। নির্লজ্জের মতো হ্যাঁ বলে ফেললে কী হয়! বলা যায় না, প্রবল জৈবিক চাহিদা কর্পূরের মত উবে যায়।
যুনি নির্বিকার, শোন, তোমার যখন প্রয়োজন হবে, বলবে, বুঝলে। চাইলেই কাপড় খুলব, সমস্যা নাই। এটা বলার অধিকার তোমার আছে। তুমি তো আমার সোয়ামি। কি ঠিক বলিনি?
জুবায়ের মুখ ঘুরিয়ে নিলেন, চোখ ভরে আসছে। বুকে কেমন চাপা কষ্ট, পুরোটা শ্বাস নিতে পারছেন না। এমন একটা গোপন জায়গায় আঘাত, সহ্যাতীত মনে হচ্ছে।
যুনি চেঁচিয়ে বলল, চুপ করে আছো কেন, কি, ঠিক বলিনি?
জানি না।
জানো না, তুমি দেখি কচি খোকা, নাক টিপলে দুধ বের হয়।
প্লিজ যুনি, চুপ করো।
তুমি চুপ করো। এ্যাহ, আমাকে আবার ধমক দেয়।
কি হয়েছে তোমার, কোন কারণে আমার উপর রেগে আছ?
যুনি হিসহিস করে বলল, রাগ করব তোমার উপর। দুনিয়ায় কী আর কুকুর-বেড়াল নাই!
কোন কারণে তুমি উত্তেজিত হয়ে আছে, প্লিজ শুয়ে পড়ো।
খবরদার লেকচার দেবে না। আমার ইচ্ছা হলে ঘুমাব, ইচ্ছা না হলে ঘুমাব না। তোমায় বলতে হবে নাকি!
জুবায়ের কম্বলে মুখ ঢেকে অন্য পাশে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ নিঃশব্দে কাঁদলেন। এক খাটে শুয়েও দু-জন দু-ভুবনের বাসিন্দা। বিয়ের পর যুনি এমন ছিল না। ওর জন্য ছিল গাঢ় ভালোবাসা। একটা সন্তানের তীব্র আকাঙ্খা ওকে এমন হৃদয়হীন, ঝগড়াটে বানিয়ে দিয়েছে। বুকচেরা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো, পৃথিবীতে কত অনাকাঙ্খিত শিশু জন্ম নিচ্ছে। কত শিশুকে পাথর হৃদয়ে আবর্জনায় ফেলে দেয়া হচ্ছে। নিয়তির কী পরিহাস, এ পরিবারে কোন শিশু আসবে না। কি হয় একটা শিশু এলে? হোক না অসুন্দর, বিকলাঙ্গ। এই সব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছেন, এক ফোঁটা ঘুম নেই। ঘুমের এ সমস্যাটা নতুন। একবার ঘুম না এলে আর ঘুম আসতে চায় না।
শোবার ঘরে নরোম আলো। সব কিছু কেমন তমোময়-অবছা দেখাচ্ছে। মাঝখানে প্রচুর জায়গা ছেড়ে অন্য পাশে যুনি ঘুমাচ্ছে। একে এখন কেমন অন্য ভুবনের মেয়ে মনে হচ্ছে। পেছন ফিরে আছে বলে মুখ দেখা যাচ্ছে না। ছায়া-ছায়া অন্ধকারেও ওর শরীরের চড়াই-উৎরাই গোপন থাকেনি। জুবায়ের নিঃশব্দে ঢোক গেলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। কেন যেন মনে হচ্ছে তার এই ঢোক গেলার শব্দ এ শহরেরর সব কটা মানুষ জেনে গেছে!
ঘোরলাগা চোখ ফিরিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এসেছে। ভেতরের অপার্থিব শক্তিটা স্পষ্ট টের পাচ্ছেন।
জুবায়ের যুনির গায়ে হাত রাখলেন। কী আশ্চর্য, এ জেগে ছিল নাকি! যুনি এদিক না ফিরেই বলল, চোরের মত গায়ে হাত দিচ্ছ কেন? তোমাকে তো বলেছিই যখন চাইবে তখনই। কি বলিনি?
জুবায়ের অন্য রকম গলায় বললেন, প্লিজ যুনি, প্লিজ।
যুনি সাড়াশব্দ করছিল না। যুনির একবার মনে হচ্ছিল বিপদজনক আদরে ভেসে যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে ভাবতে চেষ্টা করছিল নিরীহ এই লোকটার অন্য এক অবয়ব। এ কে, কদাকার একটা পশু। যে ছিন্নভিন্ন করবে ওকে, খুবলে অনাদরে ফেলে দেবে। লোকটার মন খারাপ করা আকুতি মস্তিষ্ক অন্যভাবে গ্রহন করবে কি, করুক-করুক, অবশ্যই করবে, করতেই হবে। জুবায়ের সরে যেতে যুনি হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।
যুনি কেমন শক্ত হয়ে আছে। জুবায়ের মনে হচ্ছে একটা ঠান্ডা লাশ ধরে আছেন। শিরদাঁড়ায় বরফ ঠান্ডা ঘাম, অপার্থিব শক্তি মিইয়ে গেছে। এমন একটা লাশের সঙ্গে আর যাই হোক ভালোবাসা-বাসি চলে না।
অন্য একটা প্রলয়ঙ্করী শক্তি মাথা চাড়া দিচ্ছে, ভয়াবহ একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে! এভাবে বেঁচে থাকার কোন মানে হয় না!
*নিষিদ্ধ জ্যোৎস্না: ১
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Tuesday, April 6, 2010
নিষিদ্ধ জ্যোৎস্না: ২
বিভাগ
নিষিদ্ধ জ্যোৎস্না
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment