*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Sunday, April 4, 2010
নিষিদ্ধ জ্যোৎস্না: ১
যুনি একগাদা কাপড়ে সাবান লাগাচ্ছে। এগুলো ধোয়ার প্রয়োজন ছিল না, করার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছিল না, মাথায় কেমন ভোঁতা যন্ত্রণা হচ্ছে। শরীর খারাপ-টারাপ কিছু না, রাগ করে নাস্তা বানায়নি। জুবায়ের যে বাজার থেকে নাস্তা নিয়ে এসেছে তা টেবিলেই পড়ে আছে, ছোঁয়ও নি!
কি করবে বুঝে উঠতে পারছে ন, কেরোসিন ঢেলে সব জ্বালিয়ে দেবে, নিজেকেও? কোথায় গেলে খানিকটা শান্তি পাওয়া যাবে? ওর যাওয়ার যে কোন জায়গাও নাই। জন্মের পরই মা মারা গেলেন, বাবাও ওর বিয়ের পর মার পিছু পিছু চলে গেলেন! আপনজন বলতে বড় ভাই। ও বাড়িতে যেতে ইচ্ছা করে না। ভাবি অসমান দাঁতের ফাঁক দিয়ে এমনসব জঘণ্য কথা বলেন, দমবন্ধ হয়ে আসে। ওর বিয়ের পর একবার বেড়াতে এসেছিলেন। আসার দু-মিনিটের মধ্যেই বললেন, এই মেয়ে, তোমার পোলাপাইন হয় না ক্যান?
যুনি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিল। ওর কল্পনাতেও আসছিল না কেউ এভাবে বলতে পারে!
ভাবি আবারও বললেন, কথা কও না ক্যান, তুমি বাঁজা নিহি?
যুনি কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, ভাবি, আপনি এই সব কী বলছেন!
মিছা কইলাম? এত্তো বছর হইল একটা পোলাপাইন হইল না, মিছা কইলাম, বাঁজা না তো কী!
ভাবি, চুপ করেন।
চোখ রাঙায়ো না। বাঁজা মাইয়্যা আমার দুই চোকখের বিষ। হেগো মুখ দেখলে দিনডাই মাডি।
আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান, এক মুহূর্ত না, এক্ষুণী চলে যান।
মহিলা নির্বিকার, এই কথা তুমি কইলে তো হইব না। বানের জলে ভাইসা আসি নাই, তুমার জামাই দাওয়াত দিয়া আনছে। দুই দিন পর তুমার ভাই আইসা লইয়া যাইব তখন যামু গা। যাওয়ার আগে ছ্যাপ দিয়া যামু, আমার ঠ্যাঙডাও তুমার এইহানে আইত না। বাঁজা মানু দেখনের হাউস আমার নাই।
ওই দু-দিন যুনির জন্য ছিল নরকবাস! বাবা বড়ো শখ করে গ্রামের মাদ্রাসা পাশ নিরক্ষর মেয়েকে বউ করে এনেছিলেন। এর নমুনা হচ্ছে ভাবি।
জুবায়েরের কথা মনে হতেই যুনির চোখে জল এসে পড়ে, এই মানুষটার উপর বড়ো অবিচার করা হচ্ছে। লোকটার জন্য কী মায়াই না হয়, অথচ সামনে এলে সব কেমন এলোমেলো হয়ে যায়, তখন মাথায় সমস্ত রক্ত জমা হয়!
জমিলা বেগম হাঁফাতে হাঁফাতে এসে বললেন, বৌমা, কাপড় ধুচ্ছো! তোমার না শরীর খারাপ, এইটুকুন পথ আসতেই তাঁর বুকে হাঁপ ধরে গেছে।
যুনি মুখ না তুলেই বলল, দেখতেই তো পাচ্ছেন।
যুনির রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। অসুখের কথা জিজ্ঞেস করছেন হাসি-হাসি মুখ করে। যেন এতে তিনি ভারী আনন্দিত।
জমিলা বেগম আবারও বললেন, হয়েছে কি তোমার, গা গুলাচ্ছে?
আমার কিছু হয়নি, যান এখান থেকে।
তুমি ভাল মুখ করে কথা বলতে পারো না?
আম্মা, আপনি খুব যন্ত্রণা করেন। আমার মুখ খারাপ, ভাল করে কথা বলতে পারি না, হয়েছে! যান এবার এখান থেকে।
জমিলা বেগম পা টেনে টেনে নিজের ঘরে ঢুকলেন। অনেকক্ষণ দ্রুত নিঃশ্বাস ফেললেন। শরীর গেছে। এভাবে বেঁচে থাকার কোন মানে হয় না, আর বাঁচার সাধও নাই। কিন্তু এই-ই নিয়তি, শকুনের মতো বেঁচে থাকতে হবে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত! কালই ধর্মপুস্তকে একাগ্রতা নিয়ে পড়ছিলেন, এমন একটা সময় আসবে মানুষ তীব্র আকাঙা নিয়ে মৃত্যু চাইবে কিন্তু তাকে তখন মৃত্যু দেয়া হবে না।
বউয়ের সঙ্গে রাগারাগি করে চলে আসা ঠিক হয়নি। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে পাকা খবরটা নিয়ে আসা প্রয়োজন ছিল।
ওঁর দৃঢ় বিশ্বাস এতো দিনে আল্লাহ মুখ তুলে চেয়েছেন। সকালে জুবায়ের বউয়ের শরীর খারাপ বলে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছিল বলে তখনই তার মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। তিনি হড়বড় করে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কিরে, বউ কি বমি-টমি করছে নাকি? জুবায়ের তাড়াহুড়োয় কি বলে গেল, হ্যাঁ-ই তো বলল। জুবায়ের যাওয়ার পর দু-রাকাত নফল নামাজ পড়েছেন।
দুপুরে যুনি খাবার নিয়ে এলো। তিনবেলার খাবার এই ঘরেই দেয়া হয়। জমিলা বেগম স্নিগ্ধ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, শরীর খারাপ নিয়ে রান্না করেছো, বউ। কাউকে পাঠিয়ে বাজার থেকে কিছু আনিয়ে নিতে।
যুনি উত্তর দিল না। কথা বললেই এই মহিলা একগাদা কথা বলবেন। কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। ক্লান্ত লাগছে, বড়ো ক্লান্ত!
বৌমা, একটু বস না আমার কাছে।
কি বলবেন বলেন, কাজ ফেলে এসেছি।
ঘরে তেঁতুল আছে?
জ্বী না।
কাউকে পাঠিয়ে বাজার থেকে আনাও তো।
তেঁতুল দিয়ে কি করবেন!
আচার বানাবো।
কেউ ভুলেও টক খায় না, কি করবেন আচার দিয়ে? আপনি খাবেন?
না গো মা, তুমি খাবে। তোমার না গা গুলাচ্ছে।
কেন মা, বানিয়ে বানিয়ে বলেন। কে বলেছে আমার গা গুলাচ্ছে, আমি বলেছি?
অমা, বমি-বমি ভাব হচ্ছে না!
যুনি এবার তীক্ষ্ণ গলায় বলল, মানে! অ, এই ব্যাপার! এই জন্যই ইনিয়ে-বিনিয়ে ফেনাচ্ছেন। আপনার তাহলে ধারণা দাদি হচ্ছেন?
জমিলা বেগম ভাঙা গলায় বললেন, তাহলে কি বৌমা-?
জ্বে না আম্মাজান, কোন দিন হতে পারবেন না। কেন? এটা আপনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করবেন।
জমিলা বেগম স্তব্ধমুখে বসে রইলেন। কী বোকা তিনি, সকাল থেকেই কী আনন্দই না হচ্ছিল। আজই মনে হচ্ছিল: যে শিশুটা আসছে তার জন্য সীমাহীন শারীরিক যন্ত্রণা নিয়েও, ওকে দেখার জন্য কিছুদিন বেঁচে থাকা যেতে পারে।
বৌমা, তোমরা কষ্ট পাবে বলে কোন দিন জানতে চাইনি, তাহলে কি, তাহলে কি-। না-না, তা কি করে হয়!
যুনি কাঁপতে কাঁপতে বলল, জে আম্মাজান, তাই হয়! দোষটা আপনার ছেলের। পুরুষ মানুষের আবার দোষ কী, পুরুষ মানুষ হচ্ছে বটগাছ। সোনার আঙটি বাঁকা হলেও সোনার আঙটি! ছেলের আরেকটা বিয়ে দেন, ছেলে তো সোনার হাস!
জমিলা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বললেন, এই সব বলো, বলো না। আহ, কী কষ্ট!
যুনি থামল না, আপনিই পৃথিবীর সব কষ্ট নিয়ে বসে আছেন। আমার কোন কষ্ট নাই। আমি খুব আনন্দে আছি, না? কী আনন্দ আমার, নেচে নেচে গাইতে ইচ্ছা করে।
যুনি আরও শক্ত কথা বলার জন্য প্রস্তত হচ্ছিল। শাশুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারল না। এই মহিলার কী অপরাধ- সত্যিই তো, ভুলেও কোন দিন এই নিয়ে কটু কথা দূরে থাক, জানতেও চাননি।
যুনি বিছানায় ঝাপিয়ে অঝোরে কাঁদল। হোক বিকলাঙ্গ, তবুও একটা শিশু আসুক।
বিভাগ
নিষিদ্ধ জ্যোৎস্না
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment