*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Sunday, February 21, 2010
জীবনটাই যখন নিলামে: ৪
লোপার রাগ অনেকখানি উবে গেছে। রাব্বিকে কেমন অস্থির-অস্থির লাগছে। মানুষটা এমনিতে বড়ো অস্থির কিন্তু বেশ কয়েক মাস ধরে এ অনেকখানি পাল্টে গেছে। এর স্বাভাবিক জীবন-যাপন, নিজের সময় বলতে কিছু নেই। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। একটা কথা জিজ্ঞেস করলে হা-হু বলতেও বড্ড কষ্ট হয় এমন। বারবার জিজ্ঞেস করলে ঘুরেফিরে একটাই উত্তর, অফিসে খুব ঝামেলা যাচ্ছে।
কি ঝামেলা জিজ্ঞেস করলেই চিড়বিড় করে উঠে, আহ, আমি অফিসের সমস্যা নিয়ে তোমার সাথে ডিসকাস করব নাকি! কী যন্ত্রণা, আমাকে কী লিখিতাকারে তোমার কাছে রিপোর্ট করতে হবে! তুমি কি আমার বস?
লোপা অবাক হয়ে ভাবে, মানুষটা কতো বদলে গেছে। মানুষটা শেষ কবে তাকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে, শেষ কবে গল্প করেছে, শেষ কবে তাকে কাছে টেনেছে মনেও পড়ে না। মানুষটা একটা রোবট হয়ে গেছে। আজ আট বছর হলো ওদের কোন সন্তান নেই। এই নিয়েও মানুষটার কোন বিকার নেই। হা-হুতাশ নেই, কোন চেষ্টা নেই। লোপার এটা আজও বোধগম্য হয় না, একটা মানুষ সন্তান নেয়ার ব্যাপারে কেমন করে এতোটা নির্বিকার থাকে। এই বিষয়ে কিছু বললেই গা-ভাসানো উত্তর, এতো অস্থির হওয়ার কী আছে। যখন হওয়ার এমনিই হবে।
এটা কেমন কথা। এতো বছর হলো, সন্তান না-হওয়ার পেছনে কোন না কোন জটিল একটা সমস্যা আছে নিশ্চয়ই। কার সমস্যা, কেন সমস্যা এটা জানাটা কি জরুরি না? অন্তত ডাক্তারের কাছে না-যাওয়ার পেছনে যুক্তি কী। চুপিচুপি লোপা ডাক্তারের কাছে যায়নি এমন না কিন্তু কিছু বিষয় আছে যার জন্য দু-জনের যাওয়াটা জরুরি। লোপা একবার বলেছিল। রাব্বি ঠোঁট উল্টে বলেছিল, তোমার প্রয়োজন হলে তুমি যাও, আমি যাব না।
লোপা নাছোড়বান্দা, আহা, ডাক্তারের কাছে গেলে তো আর দোষ নেই। মানুষ বেড়াতেও তো যায়।
বেড়ালে তুমি বেড়াও। আর এই নিয়ে হইচই করো না তো, অফিসের যন্ত্রণায় দম ফেলার ফুরসত নাই।
রাগে লোপার গা জ্বলে যায়। অফিস আর অফিস, যেন এই পৃথিবীতে আর কেউ অফিস করে না। বিয়ের পর পরই কোথাও ঘুরতে যাওয়া দূরের কথা, আত্মীয়দের বাড়িতেই যাওয়া হয়নি!
কিন্তু এখন এইসব সব ভুলে গেছে। রাব্বিকে দেখে এখন কী মায়াই না লাগছে!
রাব্বি, কি হয়েছে তোমার?
রাব্বি চুপ করে রইল।
লোপা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে নরম গলায় বলল, বলো না কি হয়েছে?
কিছু না, অফিসের ঝামেলা।
তোমার এই ঘোড়ার অফিসের ঝামেলা কবে শেষ হবে! বিয়ের পর থেকে তো শুনেই আসছি এটা।
রাব্বি ক্লান্ত ভঙ্গিতে সোফায় গা এলিয়ে দিল।
লোপা রাব্বির গায়ে হাত রাখলে রাব্বি বিরক্তি ভরে হাতটা সরিয়ে দিল। লোপা কষ্টের শ্বাস গোপন করল। রাব্বি কি এটা জানে ওর এই আচরণ ওকে কতটা কষ্ট দেয়? ও কোন দিন জানার চেষ্টাও করবে না। একজন মানুষ এমন নিষ্ঠুর হয় কেমন করে? এইসব মানুষরা বিয়েই বা করে কেন? এরা থাকবে একা একা, পৃথিবী থেকে বিদায়ও নেবে একা।
লোপা আবারও হাত ধরার চেষ্টা করলে রাব্বি সজোরে সরিয়ে দিল। লোপার কষ্টের শ্বাস এবার আর গোপন থাকল না। লোপা নিজেকে ধিক্কার দিল, ওর মত বেহায়া মানুষ এই পৃথিবীতে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাব্বির এতোটা তাচ্ছিল্যের পরও রাব্বির জন্য ওর এই মায়ার উৎস কমে না কেন? এই উত্তরটা ওর অজানাই থেকে যাবে। আজকাল এই উত্তরটার জন্য ওর মনে প্রশ্নটা কেবল ঘুরপাক খায়, কেন-কেন!
লোপা ম্লান গলায় বলল, চা খাবে?
হুঁ, চা খাওয়ার বিষয়ে রাব্বির কোন না নাই।
শুধু চা, সঙ্গে আর কিছু খাবে?
নাহ, চা-ই দাও।
খালি পেটে চা খাবে?
আহ, না বলতাম তো।
অফিসে সন্ধ্যায় নিশ্চয়ই কিছু খাওনি?
লোপা, তুমি বড়ো বিরক্ত করো।
লোপা আর কথা বাড়ালো না। কিন্তু চা নিয়ে আসার সময় কয়েকটা বিসু্কট নিয়ে এসেছে। রাব্বি ঠিকই আগ্রহের সঙ্গে চার-পাঁচটা বিস্কুট খেল। লোপা কাতর চোখে তাকিয়ে আছে। মানুষটার পেটে ক্ষিধে অথচ ইচ্ছা করেই সে অন্য কিছু খাচ্ছে না।
রাব্বি অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বলল, লোপা, আমার না অফিসে খুব সমস্যা হচ্ছে। আমার এই চাকরিটা করতে আর ভাল লাগছে না।
চাকরি করতে কার ভালো লাগে, বলো।
জানো, আমি এখানে আর কিছুদিন চাকরি করলে ঠিক পাগল হয়ে যাব।
লোপা অজান্তেই কেঁপে উঠল। নিশ্চিত এ খুব বড়ো সমস্যায় আছে। মানুষটা শক্ত প্রকৃতির। লোপা অনেকবার দেখেছে, কেমন করে অনেক বড়ো বড়ো সমস্যা এ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। অনেক গুন্ডা-পান্ডাকে দেখেছে একে সমীহ করে কথা বলতে। অনেক জায়গায় লোপা রাব্বির বউ হওয়ার সুবাদে আলাদা খাতির পেয়েছে। অথচ আজই একে দেখল একেবারে ভেঙ্গে পড়তে।
রাব্বি, তোমার অফিস থেকে কি চাকুরি ছেড়ে দিতে বলেছে?
নাহ।
তাহলে?
আরে, সৈয়দ মাদারফাকারটার জন্য-।
প্লিজ রাব্বি, মুখ খারাপ করবে না।
মুখ খারাপ করব আবার কী, এর নাম মুখে নিলে অজু ভেঙ্গে যায়, জানো না?
না জানি না।
আজ তো জানলে।
জানলাম, বেশ। প্লিজ, তুমি মাথা গরম করো না। কুল।
ফাকিং কুল।
রাব্বি, তুমি প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে খুব মুখ খারাপ করো।
হুম।
হুম, কুল।
হুম।
হুম, কুল।
রাব্বির মুখে অজান্তেই একচিলতে হাসি ফুটে উঠল।
আচ্ছা রাব্বি, তুমি কি জানো, তোমাকে হাসলে খুব সুন্দর দেখায়?
না, জানি না।
আজ তো জানলে।
লোপা বাজে বকবে না, আমাকে সুন্দর দেখায়। আমার মা-ই এই গ্রহের একমাত্র মহিলা যিনি আমাকে সুন্দর বলে এসেছেন, তার চোখে আমার চেয়ে সুন্দর আর কেউ নাই।
লোপা হাসি চাপল। রাব্বি এটা প্রায়শ বলে ওর চেহারা নিয়ে আলোচনা করার কিছু নেই। যারা করে তারা চাটুকার ইত্যাদি ইত্যাদি। রাব্বিকে বললে বিশ্বাসই করবে না লোপা কখনও এই মানুষটার চেহারা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। এটা ভেবে লোপা লাল হয়ে গেল, রাব্বিকে ওর বেশ লাগে!
কী আশ্চর্য, মানুষটা সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছে!
লোপা অবাক হতেও ভুলে গেছে, মানুষটা এতো যন্ত্রণার মধ্যেও কী অবলীলায় ঘুমিয়ে পড়েছে। লোপার কেন যেন অন্য রকম কষ্ট হতে লাগল। এই মুহূর্তে একে কী অসহায়-ভঙ্কুরই না লাগছে! মাথাটা কেমন এলিয়ে আছে, চোখ থেকে চশমাটা পর্যন্ত খুলে পড়েছে। লোপা আলগোছে চশমাটা সরিয়ে রাখল। লোপা অপেক্ষা করছে রাব্বি উঠলে একসঙ্গে খাবে বলে কিন্তু রাব্বি গাঢ় ঘুমে। সারাটা রাত ও সোফায় শুয়ে রইল। কয়েকবার জাগাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে, এই ছোট্ট সোফায় ঘুমাতে ওর কষ্ট হবে ভেবে। কেমন গোল হয়ে শুয়ে আছে, পা মুড়ে। খালি পেটে কেমন করে ঘুমাবে কে জানে! নিরুপায় হয়ে একটা চাদর ওর গায়ে দিল। এখানে এভাবে ওকে ফেলে যায় কেমন করে? লোপার রাত কাটল নির্ঘুম!
*জীবনটাই যখন নিলামে: ৩
**সুলেখক শেখ জলিল, যিনি নিজেও লিখেন চমৎকার। বইটার একটা সমালোচনা লিখেছেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা।
বিভাগ
জীবনটাই যখন নিলামে
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
2 comments:
পরাজয়ের গল্প। :-(
আমি নিজেও চাই আমার চরিত্রগুলো অন্তত পরাজিত না হোক কিন্তু লিখতে গিয়ে সব তালগোল পাকিয়ে যায়! :(
Post a Comment