*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Thursday, February 11, 2010
উপন্যাস: জীবনটাই যখন নিলামে: ৩
শালার মিটিং। জীবনটা ভাজা ভাজা হয়ে গেল। রাব্বি মিটিং শেষ করে নিজের চেয়ারে মাত্র বসেছে মাত্র, পিয়ন মুনিম এসে বলল, স্যার, বড়ো স্যার আপনাকে এক্ষণ দেখা করতে বলছেন।
বড়ো স্যার মানে সৈয়দ। এই অফিসে ওই-ই চীফ। রাব্বি কষ্টের শ্বাস ফেলল। শালার চাকরের জীবন, খানিকটা নিজের মত চলারও কোন উপায় নাই। বড়ো ক্লান্ত লাগছে কিন্তু এখন সৈয়দ নামের এই বুড়বাকটার প্রলাপ শুনতে হবে, ক্ষণে ক্ষণে অদৃশ্য লেজটা নাড়াতে হবে। ৫টা পর্যন্ত অফিস কিন্তু এ প্রতিদিন ঠিক ১০টা বাজিয়ে ছাড়বে।
অথচ নিজে মার্কেট ভিজিটের কথা বলে সটকে পড়বে, ধাড়ি শুয়োরটাকে ঠিক-ঠিক বাসায় পাওয়া যাবে। কপাল আর কী, ওর কপালেই কিনা এমন একটা ছাগল মার্কা বস জুটল! মানুষটা ওর জীবনটা তছনছ করে ফেলল, এই চুতিয়া জীবন আর ভালো লাগে না। এমন অবস্থা নাই, নইলে এমন চাকরি লাত্থি মেরে কবেই চলে যেত। যাওয়ার আগে সৈয়দকে বলে যেত, গো ফাক ইয়্যুরসেলফ উইথ ইয়্যুর অফিস এন্ড ইয়্যুর নোংরা আন্ডারওয়্যার।
একটাই জীবন কিন্তু মানুষের জীবনে কত রকমের যে কষ্ট! রাব্বি সৈয়দ সাহেবের রুমে ঢুকতেই তিনি হাসিমুখে বললেন, বসেন-বসেন।
রাব্বি এই মানুষটাকে সবসময়ই দেখেছে মুখে একটা তেলতেলে হাসি ঝুলিয়ে রাখতে। এটা এর আরেকটা বদ-চর্চা। আচ্ছা, এর মুখটা এমন তেলতেলে থাকে কেমন করে, বাথরুমে হাত মেরে মুখে মাখে নাকি? বিষয়টা নিয়ে শামসিরের সঙ্গে আলাপ করতে হবে তো। আল্লা জানে, শুয়োরটার মাথায় এখন কী ঘুরপাক খাচ্ছে। এর মুখ দেখে আঁচ করা দুঃসাধ্য, বোঝার উপায় নেই।
চা দিতে বলি, রাব্বি?
নো থ্যাংকস, বস।
আরে খান খান। চা হচ্ছে টনিক। এক চুমুকে দেখবেন সব কান্তি উধাও। এই আমাকে দেখেন না, এত্তো এত্তো কাজ করি। দেখেছেন কখনও ক্লান্ত হতে? এক কাপ চা মেরে দেই, ব্যস। এরপরই আবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
রাব্বি বিড়বিড় করল, শালা, শজারুচো...।
কিছু বললেন?
না বস, বলছিলাম, আপনি একজন কর্মবীর।
সৈয়দ সাহেব চোখ সরু করে তাকিয়ে রইলেন। বুঝতে চেষ্টা করছেন এটা কি কমপ্লিমেন্ট নাকি অন্য কিছু। রাব্বি নিশ্চিত এর মস্তিষ্ক এখন পুরোদমে ব্যস্ত এটা নিয়ে। মানুষটা যত নির্বোধই হোক বুঝতে এর বাকি থাকবে না। এরপর এ একের পর এক ছুরি চালাবে, তেলতেলে পিচ্ছিল হাসি নিয়ে।
ইয়ে, রাব্বি, আপনার তো এম.বি.এ করা নাই, না?
রাব্বির অজান্তেই মন খারাপ করা শ্বাস বেরিয়ে এলো, এটা এ লক্ষবার জিজ্ঞেস করেছে। মানুষ এমন পশুর মত হয় কেন? জানার পরও লক্ষবার এই প্রশ্ন করে বিব্রত করার মানে কী! অথচ এ নিজেও এম. বি. এ করেনি। এরপরও একটা মানুষ কেমন করে নির্লজ্জের মত অন্যকে অপদস্ত করে?
বলবে না বলবে না করেও রাব্বির মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, না বস। ইয়ে, আপনারটা কি কমপ্লিট হয়েছে, বস?
সৈয়দ সাহেবের পরিচিত তেলতেলে হাসি উধাও হয়ে গেল। প্রাণপণ চেষ্টায় স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছেন। অজান্তেই মুখ লম্বা হয়ে গেছে, চোয়াল ঝুলে পড়েছে। অনেক সময় নিয়ে চশমার কাঁচ পরিষ্কার করলেন। খানিকক্ষণ রিভলবিং চেয়ারে আগুপিছু করলেন।
রাব্বি, আপনার সমস্যা কী!
আমার তো কোন সমস্যা নাই, বস।
আপনাকে আমি একটা প্রশ্ন করেছি। সাফ সাফ এর উত্তর দেবেন। এটা অফিস, আপনার বাসা না। জেন্টেলম্যান নর্ম কী গুলে খেয়ে ফেলেছেন নাকি? এমনিতেও আপনার কাজকর্ম নিয়ে অফিস বিরক্ত।
রাব্বি রাগ চেপে বলল, অফিস বিরক্ত, নাকি আপনি?
আয়্যাম নো বডি। অফিস মানে অফিস, এর সঙ্গে আমাকে জুড়ে দিচ্ছেন কেন!
বস, আমি আমার কাজে কখনও ফাঁকি দেই না। যখন যে কাজটা দেয়া হয় আমার সাধ্যমত শেষ করার চেষ্টা করি। তারপরও আপনি এটা বলছেন কেন আমি বুঝতে পারছি না। আপনি ব্যতীত আর একজনের নাম বলেন যিনি আমার কাজ নিয়ে বিরক্ত।
আমি আপনার কাছে এর ব্যাখ্যা দিতে চাইছি না।
ব্যাখ্যা না, বস, আপনি জাস্ট জানতে চাচ্ছি, কারা কারা আমার উপর বিরক্ত এবং কি কারণে? এটা জানাটা নিশ্চয়ই অপরাধ না?
সৈয়দ সাহেব মুখ শক্ত করে বললেন, সময় হলে জানবেন। এই মুহূর্তে এটা নিয়ে আপনার সঙ্গে আলাপ করার কোন আগ্রহ আমার নাই। শুনুন, যে জন্য আপনাকে ডেকেছি, রিটেল সেনসাসের কাজ কতটুকু হলো?
রাব্বি বুঝল ওর কপালে খারাবি আছে। যদিও এটা ওর দায়িত্বে পড়ে না কিন্তু ঠিক ওকে গছিয়ে দেবে। এটা হচ্ছে রাব্বিকে ঝামেলায় ফেলার সহজ উপায়। এটার দায়িত্ব নিলে দম ফেলার আর ফুরসুত থাকবে না। দোকানে দোকানে যেতে হবে, একেকটা আউটলেট সম্বন্ধে হাবিজাবি দুনিয়ার তথ্য সংগ্রহ করে এক্সেল শিটে সাজাতে হবে। এক-দুইটা আউটলেট না, প্রায় ৫০ হাজার আউটলেট। প্রচুর লোকজনের সহায়তা নেয়া যাবে কিন্তু তবু্ও প্রায় অসাধ্য একটা কাজ। সচরাচর এটা থার্ড পার্টিকে দিয়ে করানো হয়। কিন্তু এখন ওকে দিয়ে করানো মানে স্রেফ ওকে ফাঁসিয়ে দেয়া।
রাব্বি জানে লাভ নাই তবু্ও বলল, বস, এটা তো থার্ড পার্টি সুমেরার করার কথা।
থার্ড পার্টি না ফোর্থ পার্টি এটা আপনার কাছ থেকে আমায় জানতে হবে না। ওদের গতবারের কাজ আমার পছন্দ হয়নি। আমি ঠিক করেছি এবারেরটায় অফিসের কাউকে এই দায়িত্বটা দেব। আপনিই যোগ্য ব্যক্তি।
রাব্বির চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে। মনে মনে বলল, যোগ্য ব্যক্তি না বা...। আমার যোগ্য হয়ে কাজ নাই। অযোগ্য হতে পারলে বেশ হতো তোকে জুতায় গু লাগিয়ে পিটিয়ে আরাম পেতাম। ভেবেছিল, কয়েক দিন ছুটি নেবে, লোপাকে নিয়ে ঘুরবে। বেচারির বেড়াবার বড়ো শখ। ওদিন কেমন মুখ অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। যমুনা রিসোর্টে ওকে নিয়ে গিয়ে চমকে দেবে। সব ভেস্তে গেল। যমুনায় যাওয়া দূরের কথা এবার সোজা যমের কাছে যেতে হবে। লাভ নাই তবু্ও শেষ চেষ্টা করল, বস, এটা অন্য কাউকে দিলে-।
আমি কি ম্যানেজমেন্টকে বলব আপনি অফিসের কাজ করতে অস্বীকার করছেন?
না বস, আমি কেবল বলছিলাম এবারও সুমেরা কাজটা করলে এবার যেন আপনার মনমত হয় এটার আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি। আমি নিজে এটা মনিটর করব।
সৈয়দ সাহেব তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলেন, কে চাইছে আপনার নিশ্চয়তা।
রাব্বির নিজেকে সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে। তাড়াতাড়ি এখান থেকে সরে পড়া দরকার নইলে নির্ঘাত একটা অনর্থ হয়ে যাবে। ম্লান গলায় বলল, আমি কি তাহলে এবার উঠব?
যেতে পারেন।
রাব্বি পা টেনে টেনে বেরিয়ে যেতে গিয়ে মাঝপথে বাধা পেল, শুনুন, আরেকটা কথা, ড্রাইভারের সঙ্গে মাখামাখি কম করবেন।
মানে।
প্রায় সময় দেখি আমার ড্রাইভারের সঙ্গে গুজুর-গুজুর করেন। এটা আমার পছন্দ না।
প্রায় সময় না। মাঝে-মধ্যে সে আমার সঙ্গে কথা বলে বলেই আমি বলি। কেউ কথা বললে তো এটা বলা যায় না, না আমি তোমার সঙ্গে কথা বলব না।
আমার সঙ্গে চাল করবেন না। আপনি হাঁটেন ডালে ডালে, আমি হাঁটি পাতায় পাতায়।
রাব্বির ধৈর্যর বাঁধ ভেঙ্গে গেল। পাতায় হাঁটেন, হাটেন মানা করছে কে আপনাকে। ইচ্ছা হলে পাতা চিবিয়ে খান। ভাল লাগলে চা দিয়ে চুবিয়ে চুবিয়ে খান। আমাকে জানাবার দরকার কী!
পেছন থেকে সৈয়দ সাহেবের চিল-চিৎকার ভেসে এলো, ক্কি, কি বললেন আপনি?
গায়ের জোরে দরোজা খুলতে খুলতে রাব্বিও চেঁচিয়ে বলল, ছাতাফাতা, আপনার মাথা।
দড়াম করে দরোজা লাগিয়ে বেরিয়ে পড়ল। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। তীর ছোড়া হয়ে গেছে ফেরাবার আর উপায় নেই। সৈয়দ ওকে ছাড়বে না। পাতা না, ওকেই চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।
*জীবনটাই যখন নিলামে: ২
বিভাগ
জীবনটাই যখন নিলামে
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 comment:
বইটা পড়েছি কয়েকদিন আগে। কষ্টের গল্প। তবু ভালো লাগছে। কিন্তু খুব দ্রুতই শেষ হয়ে গেছে। আরেকটু বড় পরিসরে হলে ভালৈ হতো। :)
Post a Comment