এলিয়েন-শিশুটিকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা গেল না! কেন গেল না এটা বলে নিজেকে আর লজ্জা দেই না! যে মানুষ নিজের চোখে চোখ রাখতে পারে না, নিজের কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায় এমন একজন মানুষকে ফিজুল ধিক্কার দিয়ে লাভ কী?
তবুও ভাল এই শিশুটি আমাকে পশু বানাবার খেলায় পুরোপুরি হারাতে পারেনি। অনেকে চোখ সরু করে বলবেন, এইসব কি কও মিয়া, কে এই শিশুটিকে নিয়ে স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে আসত? ব্যাটলফিন্ডে থাকা আর নিরাপদ দূরত্বে থেকে লম্বা-লম্বা বানচিত করায় অনেক ফারাক। গু-মুতে মাখামাখি হয়ে থাকা একটা শিশুকে ঘন্টায় ঘন্টায় পরিষ্কার করা মুখের কথা না। ওষুধ খাওয়াবার পর এর পেট থেকে কতশত পোকা (ভাল নামটা বলতে চাচ্ছি না অনেকের গা গুলাবে) বের হয়েছে এর ইয়াত্তা নাই। ঘরময় পোকা কিলবিল করছে...!
তারপরও আমার মনটা আজ ভারী বিষণ্ন, এই ১৭ দিনে শিশুটা আমায় প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত মায়ায় ফেলে দিয়েছিল। কী নির্ভাবনায় মুঠো করে আমার হাতটা ধরত। একটা কথাই কেবল বলতে পারত, 'ভাত দে'।
আমার সুতীব্র ইচ্ছা ছিল একে দিয়েই শুরু করি না কেন? একটা হোম করতে কি হাতি-ঘোড়া লাগে। মাসে দশ হাজার টাকা হলে আরামসে এমন ১০/১৫ শিশুকে রাখা যায়। কিন্তু শীতল মস্তিষ্কে ভেবে দেখলাম, কেবল ঝোকের মাথায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া চলে না। যুক্তিতে আবেগের স্থান কাথায়?
হয়তো এক মাস চালিয়ে মনে হলো, ধুর; বা ফট করে আমি অন্য ভুবনে যাত্রা করলাম, হতে পারে না এমনটা? তখন এই শিশুগুলো ভাসিয়ে দেয়া কোন কাজের কাজ না। যেটা যুক্তিযুক্ত, অন্তত এক বছরের টাকা হাতে নিয়ে নামা; ফি মাসে দশ হাজার হলে এক লক্ষ বিশ বিশ হাজার টাকা। এতো টাকা এই মুহূর্তে আমি পাবো কোথায়? হায়রে টাকা...!
দুর্জয় নারী সংঘের হাজেরা বেগম নামে এক মহিলা নামপরিচয়হীন শিশুদের লালন-পালন করেন। ড্যানিডা নামের একটি বিদেশি দাতা সংস্থা হঠাৎ করে তাদের অনুদান দেয়া বন্ধ করে দিলে এই ভদ্রমহিলা অকূল পাথারে পড়লেন। পত্রিকায় যখন এই বাচ্চাদের কথা পড়ি, বাচ্চাদের হাহাকার, "মা, এইবার ইদে আমাদের জামা দিবা না"? হাজেরা আপার কথা প্রথমে জেনেছিলাম পত্রিকার এই রিপোর্টে। তখন নিজেকে একজন নেংটি পরা মানুষ মনে হচ্ছিল।
তখন আমি, আমার বন্ধু রাসেল পারভেজ, তারিফ আজিজ আমরা গিয়েছিলাম তাঁর ওখানে। সেই থেকে তাঁর সঙ্গে পরিচয়।
এই ভদ্রমহিলা ওই শিশুদের নিয়েই হিমশিম খাচ্ছেন, তাঁকে অনুরোধ করি কেমন করে? হাজেরা আপাকে ফোন করে বলি, আপা, আপনার এই ২৬টা বাচ্চা নিয়ে এখন কেমন করে চলছেন?
তিনি বিমর্ষ উত্তর দেন, চলছে না রে ভাই। আর আমার এখানে এখন শিশু ২৬টা না, মোট ৩৩।
তদুপরি অমানুষের মত আমি হাজেরা আপাকে বলি, আপা, আপনি এই শিশুটাকে আপনার এখানে রাখতে পারেন?
তিনি ক্ষণকাল না-ভেবেই বলেন, সমস্যা নাই যেখানে ৩৩টা বাচ্চা খাবে সেখানে আর একজনে কি আসে যায়। গতকাল শিশুটিকে হাজেরা আপার এখানে দিয়ে আসলাম। সঙ্গে আমার বন্ধু রাসেল পারভেজ, দুলাল ঘোষ। এদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই।
আমরা যখন গেলাম তখন অন্য শিশুরা গোল হয়ে গান শিখছিল। এই শিশুটিকে নিয়ে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে হাজেরা আপা অন্য শিশুদের সঙ্গে এর পরিচয় করিয়ে দিলেন, তোমাদের আরেকজন ভাই আসছে।
নিমিষেই অন্য শিশুরা এই শিশুটিকে যে ভঙ্গিতে আপন করে নিল চোখে না-দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। নামপরিচয়হীন এই শিশুটির নাম রাখা নিয়ে এদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। সমস্ত শিশু একটা করে নাম দিল, এরপর লটারি, লটারিতে যে নাম উঠল আজ থেকে এটাই এই শিশুটির নাম। স্বপন।
আমার চোখ ভরে আসে, মাথা ঘুরিয়ে ছাদে টিকটিকি দেখি। নিজেকে ধিক্কার দেই, এই অসামান্য মহিলা যে কাজটা করে চলেছেন আমার এর ধারে-কাছে যাওয়ারও ক্ষমতা নাই। খর্বাকৃতি এই মহিলার সামনে নিজেকে কী ক্ষুদ্র, হাস্যকরই না লাগছিল!
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Friday, January 8, 2010
আজ আমার মন খারাপ, এলিয়েন
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
2 comments:
কী বলবো, বুঝতেছি না। নিজেরে খুব ক্ষুদ্র মনে হয় এইরকম লেখা পড়লে...
I am highly touched. Keep it going. It is all about the journey called 'LIFE'
Post a Comment