দুলা মিয়া (তাঁর প্রতি সালাম) সম্বন্ধে আমি প্রথম জানতে পারি "বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ"র অষ্টম খন্ডে। পড়ে আমি হতভম্ব, কী সাহস মানুষটার! একজন আগুন-মানুষ!
আমি হতভম্ব হয়ে ভাবছিলাম, একজন মানুষ এতো সাহস পান কোত্থেকে? তীব্র বেদনাহতও হলাম, এই অসমসাহসী মানুষটাকে মুক্তিযুদ্ধে ন্যূনতম একটা খেতাবও দেয়া হয়নি, আজিব!
অথচ একজন বালকবেলায় গাছ থেকে পড়ে হাত ভেঙ্গেছেন, পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে সম্মুখ-যুদ্ধে হাত ভেঙ্গেছেন এটা বলে বড় একটা খেতাব বাগিয়েছেন এমন উদাহরণেরও অভাব নাই।
আরেকটা বিষয় আমাকে আলোড়িত করেছিল, এই আগুন-মানুষটার যুদ্ধে যাওয়ার পেছনে তাঁর ছোট্ট মেয়েটির অসম্ভব প্রভাব ছিল। তখন লিখেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধে একজন অখেতাবধারী দুলা মিয়া।
একদিন মাথায় কী এক রোখ চাপল, দুম করে বেড়িয়ে পড়লাম এই মানুষটার খোঁজে, ছোট্ট সেই মেয়েটির খোঁজে। মেয়েটিকে খুঁজে পেলাম কিন্তু এই মানুষটাকে আর খুঁজে পেলাম না। দুর্দান্ত অভিমান নিয়ে মানুষটা শুয়ে আছেন। পুরোটাই জঙ্গল টাইপের একটা জায়গা, চিহ্নিত করার কোন উপায় নেই। অনেক কষ্টে তার শুয়ে থাকার জায়গাটা খুঁজে বের করি। অথচ পাশেই অখ্যাত এক ফকিরের কবর চমৎকার করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ফিরে এসে ন্যালাক্ষেপা হয়ে, খুব মন খারাপ করে লিখেছিলাম, আমরা দুধ বিক্রি করে শুটকি খাওয়া জাতি ।
এই মানুষটা জীবিত থাকলে কায়ক্লেশে দিন যাপন করছিলেন অথচ তাঁর গ্রামের স্কুলের গোড়া পত্তন যখন হয় নিজের বাড়ির টিন খুলে স্কুল ঘরের টিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন!
জীবিত থাকতে এই মানুষটাকে আমরা ন্যূনতম সম্মান দিতে পারিনি, মৃত্যুর পরও! কে এটা আমাদের বোঝাবে, এতে এই মানুষটার কিছুই যায় আসে না কিন্তু আমরা যারা জীবিত আছি তারা নগ্ন হয়ে পড়ি!
দুলা মিয়ার কবরের জঙ্গল আরও ঘন হয়, ফকিরের কবরের বাড়ে জৌলুশ। আমরা চাউল বিক্রি করে কফের সিরাপ খাওয়া জাতি লেখাটা লিখতে সহ্যাতীত কষ্ট হচ্ছিল।
আজ এই প্রজন্মের একজন দুলাল আমাকে ফোন করে বলল, 'আলী ভাই, আমরা যাচ্ছি'।
এই ছেলেগুলো ভারি ভারি বেড়াগুলো ৫০-৬০ কিলোমিটার বয়ে নিয়ে গেছে। জঙ্গল সাফ করেছে। হাতুড়ি-বাটাল দিয়ে ঠুকে ঠুকে দাঁড় করিয়ে ফেলেছে! যে ভাবেই হোক তাঁর কবরটা অন্তত চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করেছে, অন্তত কাজটা তো শুরু হল।
অভাবনীয় যে ব্যাপারটা এখানে ঘটেছে, এটার পাশেই বাচ্চাদের একটা স্কুল, (যে স্কুলের গোড়া পত্তনের সময় দুলা মিয়া তাঁর বাড়ির টিন খুলে দিয়েছিলেন), সেই স্কুলের শত-শত বাচ্চাদের সামনে দুলা মিয়ার সাহসিকতা, ত্যাগের কথা তুলে ধরা হয়; কিছু বাচ্চা কাঁদছিল! এই বাচ্চাগুলো এই দেশের সেরা সন্তান সম্বন্ধে জানতে পারল। এই সমাধিস্থল দেখভালের দায়িত্ব এদের উপর ছেড়ে দেয়া হয়। এটা একটা অসাধারণ কাজ হয়েছে। আগামি প্রজন্ম এটা বুকে লালন করে বড় হবে, আমরা যেটা করতে পারিনি সেটা করে দেখাবে।
*ছবি-ঋণ: দুলাল ঘোষ
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Monday, January 4, 2010
মুছে ফেলবে দুঃস্বপ্ন, এ প্রজন্ম
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment