*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Wednesday, April 22, 2009
আবারও অগ্নিপুরুষের মুখোমুখি
মুক্তিযুদ্ধের দুধর্র্ষ কমান্ডো, এই মানুষটাকে চা খাবার নাম করে, আবারও ধরে নিয়ে এলাম। তাঁর সঙ্গে চা খাওয়ার যে সুখ, এই মানুষটা কেমন করে বুঝবে? মন্ত্রী-ফন্ত্রীর চা কোন ছার!
আমি অবশ্য ভয়ে ভয়ে ছিলাম, আসবেন তো ঠিক ঠিক! আসার কথা বলার পর বললেন, আপনি আগান, আমি আসতাছি। এসেছেন ঠিকই, কিন্তু আসার আগ পর্যন্ত আমি উদ্বেগে।
পরে আমি বুঝতে পারি, পাঞ্জাবীটা গায়ে দিয়ে এসেছেন, দেরি হয়েছে এজন্যই। আজ সেই পাঞ্জাবীটাই গায়ে দিয়ে এসেছেন, যেটা আগেরবার পরে এসেছিলেন। বুঝতে বাকি থাকে না মানুষটার এই একটাই পাঞ্জাবী।
চা খেতে খেতে আমরা কথা বলি।
মানুষটাকে আমি জিজ্ঞেস করি, আচ্ছা, আপনি যে জিয়ার সঙ্গে ঠাস ঠাস করে কথা বললেন, আপনার ভয় করেনি? এমন একজন মানুষ, সেক্টর কমান্ডার।
মানুষটা অবাক হয়ে বললেন, ভয করব ক্যান? আমি তো অন্যায় কিছু বলি নাই। খালি বলছিলাম, স্যার, আপনে লিমপেট মাইন চিনেন না, কেমন কমান্ডার আপনে। তাছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমিও মুক্তিযোদ্ধা তাইনেও মুক্তিযোদ্ধা। এমনিতে অবশ্যি অন্য মুক্তিযোদ্ধারা কমান্ডোদের ভয়ের চোক্কে দেখত।
প্রশ্ন করি, কেন ভয় করত?
কি কন! অখন যে বুড়া হইছি, অখনও চাইরজন মানু আমারে ধইরা রাখতে পারব না। এমুন চিকন মাইর দিমু কোন সময় অজ্ঞান হইব, টেরও পাইব না। আমাদের কমান্ডো ট্রনিং-এর সময় এইসবও শিখান হইত। খালি হাতে মারামারি (কমব্যাট ট্রেনিং)। একজন মানুষের শরীরের দুর্বল দিক কোনডা এইসব।
ডেইলি ২৪ ঘন্টার মইধ্যে ১৬ ঘন্টা ম্যালা ট্রেনিং চলত। ভোর ৫টা থিক্যা শুরু হইত ট্রেনিং। ২ ঘন্টা ধইরা চলত পিটি, খালি হাতে মারামারি (জুডো কারাত, আন আর্মড কমব্যাট)। গ্রেনেড মারা, রাইফেল ট্রেনিং, মাটিতে বোম ফুটানো, বোম ঠান্ডা করা (ডিফিউজ করা)।
এরপর নাস্তা এক মগ চা, দুইটা মোটা রুটি। নাস্তা শ্যাষ হইলে ঘন্টার পর ঘন্টা সাতার, নৌকা বাওয়া। পানির নীচে ডুব দিয়া দম বাড়ানো। সন্ধা ৬টা থিক্যা রাত ৯/ ১০টা পর্যন্ত পানিতে থাকতাম। ড্যাগার (কমান্ডো নাইফ) দিয়া জাহাজের নীচে (খোল) শ্যাওলা পরিষ্কার কইরা মাইন ফিট করা। মাইনের চুম্বুক জাহাজের নীচে আটকাইয়া যাইত। দিরং সুইচ(ডি-লে সুইচ)৩০ থিক্যা ৫০ মিনিট টাইম বাইন্ধা দেয়া। গামছা দিয়া লিমপেট মাইন...।
আমি বলি, আচ্ছা, এই মাইনের ওজন কেমন থাকত? জমা দেয়ার জন্য আপনার কাছে কি একটাই মাইন ছিল?
৫ কেজি হইব। না, তিনটা আছিল। আমার একটা, আমার লগের যোদ্ধা কুটির আ: খালেক মিয়ার একটা, পানিস্বরের আরজ মিয়ার একটা। মোট তিনটা। হালুয়াঘাটে থাকতে যুদ্ধ শ্যাষ হইল, আমরা বাড়িত ফেরত আইতাছিলাম। আখাউড়ার কাছে, উজানিশার আসলে আমরা আলাদা হইলাম। তখন হেরা কইল, এইগুলা নিয়া কী হইব, উজানিশার ব্রীজের পানিতে ফালাইয়া দিয়া যাই। আমি রাজি হইলাম না। ট্রেনিং-এর সময় আমাদের বলা হইছিল, এইগুলার ম্যালা দাম। তাছাড়া যেইটা দিয়া বড় বড় জাহাজ, ব্রীজ পাউডার কইরা দেয়া যায়, এইগুলা তো যেখানে সেখানে ফেলা যায় না। তো, হেরার ২টাও আমি নিয়া নিলাম। পরে ৩টাই জমা দিছিলাম।
আমি আগ্রহ নিয়ে জানতে চাই, আপনার কী ট্রেনিংগুলো সব মনে আছে, না ভুলে গেছেন?
মানুষটা এবার ইস্পাত-কঠিন ভঙ্গিতে বলেন, সব মনে আছে, কিসসু ভুলি নাই। আবার দরকার হইলে আবার যুদ্ধ করুম।
যুদ্ধে আহত হন নাই?
হই নাই আবার। পা-টা গেছিল এক্কেবারে। আগরতলা থিক্যা আমারে পাঠাইল রাশিয়া। রাশিয়ায় ১২ দিন ছিলাম। এরপর ফিরা আইয়া নৌ-কমান্ডোতে গেলাম।
আজ আমার ব্যস্ততা। মানুষটাকে এগিয়ে দেই।
(মুক্তিযুদ্ধের সময় লিমপেট মাইন নিয়ে জানতে গিয়ে যা জানলাম, এই মাইনগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনী জাপানের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য তৈরি করেছিল। যুগোশ্নাভিয়ায় মাইনগুলো এতদিন অব্যবহৃত পড়ে ছিল। ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য ২০০০ মাইন ক্রয় করে, প্রতিটি ১২০০ ইউ, এস ডলারে।
নৌ-কমান্ডোদের নিয়ে উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে বিস্মিত এবং বেদনাহত হয়ে দেখলাম, কী অবহেলাই না করা হয়েছে এঁদের প্রতি এবং এঁদের তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারে, স্বীকৃতি দেয়ায়।
বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে নৌ-কমান্ডোরা সবচেয়ে অবহেলিত। খেতাব দিতে প্রভাবিত করার পেছনে সেক্টর কমান্ডারদের অনেকখানি ভূমিকা ছিল, সুপারিশ ছিল। নৌ-কমান্ডোরা আসলে কোন সেক্টর কমান্ডাররের অধীন ছিলেন না। ১০ নম্বর সেক্টরটা ছিল সর্বাধিনায়ক ওসমানির অধীনে। প্রচলিত আছে, ওসমানি এইসব বিষয়ে খুব একটা তৎপর ছিলেন না।
এই নৌ-কমান্ডোদের ভূমিকা কতটা জরুরী ছিল এটার বোঝা যাবে সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানির নৌ-কমান্ডোদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতায়, 'নৌ-কমান্ডোদের সফলতার উপর স্বাধীনতা যুদ্ধ কতদিন চলবে তা অনেকাংশে নির্ভর করছে। এই প্রশিক্ষণ গ্রহনের পর সফল প্রশিক্ষণার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত হবে একটি সুইসাইড স্কোয়াড। সুতরাং যারা একটা আত্মত্যাগ করতে রাজি নয়, কিংবা যাদের সাহস কম তারা যেন প্রথম অবস্থাতেই প্রশিক্ষণ ত্যাগ করে চলে যায়।'
এরপরই কমান্ডোদের ফর্মে ছবিসহ সই করতে হয়, '...যুদ্ধে আমার মৃত্যু ঘটলে কেউ দায়ী থাকবে না'।
এদেঁর বীরত্বের খানিকটা আঁচ করা যায় সেক্টর কমান্ডার লে ক: আবু ওসমান চৌধুরীর কথায়, 'যারা দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে লিখিত বন্ড দিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তাদের প্রত্যেককে সর্বাত্মক বীরত্বের খেতাব দেয়া সমীচীন।'
অন্য কমান্ডো এস এ মজুমদারের বেদনার কথা এখানে তুলে দেই, 'আমাদের দূভার্গ্য, আমাদের সাথে যদি একজন অফিসার থাকতেন তাহলে ১০নম্বর সেক্টরের কমান্ডার তিনিই হতেন। স্বাধীনতোত্তর ইতিহাসবিদ, সাহিত্যিক, বড় বড় লেখক সবাই ছুটে চললেন সেক্টর কমান্ডার আর বড় বড় অফিসারদের কাছে। তথ্য সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ হল ১৬ খন্ডের বিশাল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।...কিন্তু হতভাগ্য নৌ-কমান্ডোদের বীরত্বগাঁথা, দু:সাহসিক অভিযানের কাহিনী সম্পর্কে অবহিত না থাকার কারণে বাদ পড়ে যায় ইতিহাসের পাতা থেকে।'
আরেকজন বীরপ্রতীক আলমগীর সাত্তার বলেন, '...খেতাব দেয়ার সময় কেন এত কার্পণ্য করা হল? খেতাবপ্রাপ্তদের বেলায় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যাই বেশী এবং এটাই স্বাভাবিক। কারণ সামরিক বাহিনীর সদস্য যারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তাদের প্রশিক্ষণ ছিল পর্যাপ্ত। এরপরও আমি বলব, বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধারাই খেতাব পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বেশী। খেতাবপ্রাপ্তির ব্যাপারে সুপারিশ করার মত যাঁরা উচ্চপদে আসীন ছিলেন, তাদের অবহেলার কারণেই হয়েছে এমনটা।
...তবে ব্যতিক্রমি সেনানায়ক ছিলেন মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চীফ অভ স্টাফ এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার। তার মত উদার যদি অন্য সেক্টর কমান্ডাররা হতেন, তাহলে অবশ্যই খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা অনেক বেশী হত। অনেক সেক্টর কমান্ডারই মনে হয় বুঝতে পারেনি যে, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ বারবার হয় না।...।')
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment