এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Wednesday, December 31, 2008
২০০৯ নামের একটা ভোরের অপেক্ষায়।
কেমন করে নিজের হাতের আঙ্গুলগুলো কুঁকড়ে আসে, কেমন করে চেনা মানুষগুলো অচেনা হয়ে যায়? জনান্তিকে বলি, বাহে, একদা আমিও ছিলাম তোমাদের লোক! আমিও তাদের সাথে সাথে বিশ্বাস করি, তারা শান্ত পুকুর, ঢেউ উঠবে না কোনদিন? বেশ-বেশ। তারাও আমাকে বিশ্বাস করিয়ে ছেড়েছে, বাতিল পুতুল একটা। তাইতো দেখছি...!
একজন মানুষ যখন নিজের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে তখন ওই মানুষটার সঙ্গে একটা গলিত শবের কোন পার্থক্য থাকে না।
২০০৯ নামের একটা ভোরের অপেক্ষায়। আসলে ভোর হয়, ভোরকে কেউ আটকাতে পারে না কিন্তু আফসোস, কেউ কেউ ভোর দেখার আগেই হাল ছেড়ে দেয়। আমার প্রবল বিশ্বাস, আমি তাদের মধ্যে একজন না...।
Monday, December 29, 2008
মুসলমানরা টেররিস্ট হয়ে থাকলে, এরা কারা?
সম্প্রতি ইসরায়েল গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে প্রায় ৩০০ বে-সামরিক মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করল এটাকে কী খুন বলা হবে না, না?
ওহ, এরা তো আদম-সন্তান না। যারা খুন হল তাদের প্রিয়জন, এরা কী ধরেই নিয়েছে যুগের পর যুগ ধরে এদেরকে ইসরাইলিরা বিষণ্ন বোধ করলেই পাখির মত গুলি করে মারবে!
তাই কী গাজার অধিবাসিরা অনেকখানি রোবট হয়ে পড়েছে? হাসপাতালের অবর্ণনীয়, বীভত্স দৃশ্য দেখে যখন আমাদের পাগল-পাগল লাগে তখন গাজাবাসীরা এরই মধ্যে দ্রুততার সঙ্গে তাদের স্বজনদের পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী দেহ থেকে অবলীলায় খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। নির্মম বাস্তবতা।
পাশাপাশি এই শিকার-শিকার খেলায় ইসরাইলিদেরকে, এমন কী তাদের শিশুদেরকেও করে তুলছে আমোদপ্রীয়, খেলুড়ে।
আহা, ওদের শিশুরা কত প্রাণোচ্ছল! ইসরাইলী শিশুরা অপার আনন্দে যে মিসাইলে ফানি ফানি কথা লিখে সেই মিসাইলটাই ছুটে আসে, গাজাবাসীদের শিশুরা পড়ে থাকে ক্ষত-বিক্ষত, ভাগাড়ের কুকুরের মত।
হা ঈশ্বর, তোমার লীলা বোঝা দায়...?
নির্বাচনী নামতা দুই এক এ দুই...।
প্রাসঙ্গিক হবে বিধায় এখানে একরোখা খালেদা জিয়ার একটা প্রসঙ্গ উল্লেখ করি, আশা করছি বুদ্ধিমানরা যোগসূত্রটা ধরতে পারবেন।
"সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন- বিদেশী পর্যবেক্ষকরা বলছিলেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কিন্তু খালেদা জিয়ার অনড় বক্তব্য ১০০ আসনে কারচুপি হয়েছে। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করতে যাচ্ছিলেন।
এতে বড় ধরনের গলযোগ সৃষ্টি হতে পারে, এটা জানতে পেরে, ব্রিটিশ হাই কমিশনারের দপ্তর থেকে অনুরোধ করে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, জাপানের রাষ্ট্রদূত, হাই কমিশনাররা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বলার জন্য অনুমতি চান। কিন্তু খালেদা জিয়া ব্যস্ত আছেন এটা বলে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন।
উপায়ন্তর না দেখে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্কিন প্রেসিডেন্টের অতি জরুরি বার্ত বেগম জিয়ার কাছে এখনই পৌঁছে দিতে চান বলে জানান এবং তার সঙ্গে আরও ২জন রাষ্ট্রদূত এবং ২জন হাই কমিশনার থাকবেন এটাও উল্লেখ করেন। বেগম জিয়া বাধ্য হয়ে সময় দেন।
নির্ধারিত সময়ে এঁরা ৫জন বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। বেগম জিয়া বাংলায় বলেন, 'এরা কেন এসেছে, মাতব্বরি করার আর জায়গা পায় না'।
বেগম জিয়ার দোভাষী ইংরাজিতে বলেন, 'আপনারা আসায় ম্যাডাম অত্যন্ত খুশি হয়েছেন তিনি আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছেন'।
এরা কেউই জানতেন না যে, জাপানি রাষ্ট্রদূত ভালই বাংলা জানতেন আর ফরাসি রাষ্ট্রদূত জানতেন জাপানি ভাষা। সঙ্গে সঙ্গে জাপানি রাষ্ট্রদূত খালেদা জিয়ার বলা কথাগুলো জাপানি ভাষায় ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে তর্জমা করে বলেন।
যাই হোক, অনেকক্ষণ ধরে এই ৫ কূটনীতিক খালেদা জিয়াকে নির্বাচনি ফলাফল মেনে নিতে অনুরোধের পর অনুরোধ করেন, নইলে বাংলাদেশ আবার নতুন করে সংকটে পড়বে, রাষ্ট্রপতি কোন চরম ব্যবস্থা নিয়ে ফেলবেন। কিন্তু খালেদা জিয়া অনড় থাকেন।
এই ৫ কূটনীতিক হাল ছাড়েন না। একসময় খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিক সম্মতি না দিলেও এরা বুঝতে সক্ষম হন খালেদা জিয়া সম্মত হবেন তখন তাঁরা ধন্যবাদ জানিয়ে চলে আসেন"।
(সূত্র: বিপুলা পৃথিবী/ আনিসুজ্জামান)
তো, ওই যে বললাম অংক।
নির্বাচনটা হচ্ছে ডিসেম্বরে। ডিসেম্বর হচ্ছে আমাদের বিজয়ের মাস। যুদ্ধপরাধির ইস্যুটা প্রবল হয়ে উঠবে এতে সন্দেহ কী। তাছাড়া এইবারই প্রথমবারের মত ভোটার হয়েছেন প্রায় ৩ কোটি। তো এই ভোটারদের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিপক্ষে মনোভাব অনেকটা প্রবল। ঘুরিয়ে বললে ভোটগুলো আওয়ামীলীগদের পক্ষেই এসে পড়ে।
আমি বিশ্বাস করি, এই প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে বড়ো ব্যাকুল। স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্ক-কুতর্ক করার কোন আগ্রহই তাদের নাই।
কেউ ধোয়া তুলসি পাতা না কিন্তু যেহেতু শেষবার ক্ষমতায় ছিল বিএনপি- ক্ষতগুলো বড়ো দগদগে। ত্রানের বিস্কুট খায় ঘোড়া! এদের সময়ে , এদের মদদে ইসলামের দোহাই দিয়ে জঙ্গীরা যা করেছে এটা সব হিসাবের বাইরে! তার উপর কুড়ালে পা- নির্বাচনের ঠিক আগে আগে সিমেন্স, কোকোর সিঙ্গাপুরে অবৈধ টাকা।
এমনিতেও একটা পরিবর্তন তো আম-জনতা চাইতেই পারে। আর প্রার্থী নির্বাচনের বেলায় বিন্দুমাত্র কোন ভাবনা ছিল বলে তো আমার মনে হয় না নইলে কী আর পিন্টুকে...!
সবই অংকের হিসাব কিন্তু আমাদের মত সাধারণ মানুষদের ভাগ্যর কী পরিবর্তন আসবে সেটাই দেখার বিষয়। আপনারা কী যুদ্ধাপরাধীদের প্রাপ্য বিচার করবেন, আমি আগের মতই ধন্ধে আছি? শেখ হাসিনা ১০ টাকা কেজি দরে আমাদের চাল খাওয়াবেন এতে যার উল্লসিত হওয়ার হন, আমি হতাশ, অন্তত এই কথা বলার পেছনে কোন অংকের সূত্র কাজ করেছে বলে আমি মনে করি না। তাইলে এই দেশের সব কৃষকের গলায় ফাঁস দিতে হবে।
Tuesday, December 23, 2008
মুক্তিযুদ্ধে একজন পীর সাহেব!
এই পীর সাহেব ছিলেন আধুনিকমনস্ক। পাক আর্মি যখন ইসলামের দোহাই দিয়ে নির্বিচারে খুন করছে লাখ-লাখ মানুষ, নস্ট করছে নারীর সম্ভ্রম, লুটতরাজ করছে, তিনি এসব মেনে নিতে পারছিলেন না। তাঁর ১ ভাই তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ২৫ মার্চের পর তিনি ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডার নিযুক্ত হন।
গোকুল গ্রামের তসিম পাড়ের 'জনৈক' এখানে পাক আর্মিকে নিয়ে আসে। কালো বোরকা পরে মেয়েদের সাজ নিয়ে সে পীরবাড়ি সনাক্ত করিয়ে দেয়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে আদেশ-নির্দেশও দিচ্ছিল।
রমজান মাস। শেষরাত। সেহরি সেরে পীর সাহেব এবাদতে মগ্ন। ১ ভাই পাশের মসজিদে কোরান তেলাওয়াত করছিলেন। অন্য ভাই ভাত খাচ্ছিলেন।
পাক আর্মি এইসময় ঘিরে ফেলে পীর বাড়ি। একেক করে ৪ ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। পীর সাহেব মারা গেলেন হাতে তসবীহ নিয়ে, অন্য ভাই হাতে এঁটো ভাত। একজন গড়িয়ে পড়েছেন ওজুর ঘটির উপর।
পাক আর্মিরা পীর বংশেরই দোলনায় ঘুমন্ত এক শিশুকে গুলি করে হত্যা করে।
পরদিন সকাল। পীর বাড়িতে যেন সৃষ্টি হলো কারবালা। শতশত ভক্ত, বুক চাপড়াচ্ছে, মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে। কেউ রক্তরঞ্জিত মাটি নিয়ে মাথায় মাখছে।
ভক্তরা তাঁদের সমাহিত করেন। তারপর এই পীরবাড়ির মুঠো মুঠে মাটি নিয়ে যান। এই পবিত্র মাটি তাঁরা সযতনে তুলে রাখবেন।
*সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দৈনিক আজাদ, ১১ মার্চ ১৯৭২।
**ভাষারীতি প্রায় অবিকল রাখা হয়েছে।
রাজাকার বলতেই আমাদেরকে যেসব ছবি দিনের পর দিন দেখানো হয়েছে সেটা হচ্ছে এইরকম, দাড়ি-টুপি পরা বয়স্ক একজন মানুষ! এটা সত্য তখন প্রচুর তথাকথিত ইসলামমনস্ক মানুষ পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল কিন্তু তাই বলে ঢালাও মন্তব্যর কোন অর্থ নাই।
অজস্র উদাহরণ থেকে একটাই বলি, শহীদ ৪ সন্তানের পিতা মৌলভী আব্দুল হালিম বলেছিলেন, "ঘরে বসে গুলি খেয়ে মরার চেয়ে লড়াই করে শহীদ হওয়া অনেক মর্যাদার"।
মৌলভী আব্দুল হালিমের কেবল এক সন্তান প্রাণে বেঁচে যান এবং পরে স্মৃতিচারন করেন।
পাক আর্মিরা এই দেশে যুদ্ধ করেছে, এরা যোদ্ধা ছিল বলে আমি মনে করি না। পতিতারও যেমন অধিকার আছে তেমনি যুদ্ধেরও কিছু নিয়ম আছে। যুদ্ধেও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় আইনানুসারে। মানবিক দিকে না-হয় গেলাম না।
ইসলামের লেবেনচুষ খাইয়ে রমজান মাসে প্রার্থনারত মানুষদের অহেতুক মেরে ফেলা, ঘুমন্ত শিশুকে হত্যা করা আর যাই হোক যুদ্ধের অংশ না। এদের যোদ্ধা না বলে বলা প্রয়োজন সাইকোপ্যাথ।
এই খুনগুলোর কেন বিচার হবে না এটাই বিস্ময়, এর জন্য বিশেষ কোন আইনের প্রয়োজন পড়ে বলে তো মনে হয় না। অভাব ছিল কেবল আমাদের সদিচ্ছার, সচেতনতার। নইলে এই খুনের পেছনে যে মানুষটা, তাকে কালো বোরকার আড়ালে আমরা চিনতে পারছি 'জনৈক' নামে। কেন আমরা এখানে তার নামটা পাই না? চেষ্টার অভাব? এই 'জনৈক' নামের খুনিটাকে সনাক্ত করা হয়েছিল কী?
এতো সেইসব মানুষদের একজন না। মুক্তিযুদ্ধে অনেকে বুঝে-না বুঝে, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায়, ক্ষিধার জ্বালায়- এমন উদাহরণও আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ভবতী এক শিক্ষকের পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে দেশবিরোধী কাগজে সই নেয়া হয়েছিল। এসব অবশ্যই বিবেচ্য।
কিন্তু খুনিটা তো সেই দলে না। সে যেচে পড়ে আর্মিকে এখানে নিয়ে এসেছিল এবং পুরো হত্যাকান্ড উপভোগ করেছে।
এটা অবশ্যই বিচারযোগ্য অপরাধ।
মুক্তিযোদ্ধা হলেই সাতখুন মাফ হয়ে যাবে এরও কোন মানে নাই।
এটাও বিচারযোগ্য অপরাধ।
১৯৭১। অনেক বছর চলে গেছে, না?
"১৯১৫, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুর্কিরা আনুমানিক ১৫ লক্ষ আর্মেনিয়কে হত্যা করে। আর্মেনিয়রা এখনও এটা ভুলেনি কিন্তু বরাবরের মত তুরস্ক বিষয়টা এড়িয়ে যাচ্ছিল।
এই গণহত্যা নিয়ে কথা বলায় নোবেলজয়ী লেখক ওরহান পামুকসহ অনেককে আইনি হয়রানি করা হয়। হান্ট ডিংক নামের এক সাংবাদিককে গুলি করে মেরে ফেলা হয়।
সেই তুরস্কের ২০০বুদ্ধিজীবীসহ ২৫০০ হাজার সাধারণ নাগরিক আর্মেনিয়দের কাছে প্রকাশ্যে (ইন্টারনেটে) ক্ষমা চান"।
(ইন্টারনেট থেকে, এপি)
Wednesday, December 17, 2008
একটি ব্যর্থ নাটক নিয়ে নাটক!
থাকি মফস্বলে, ঢাকা যাই কালেভদ্রে। গাঁও-গেরামে থাকা গায়ে সরষে তেলমাখা আমি এক ভুত, আমার এমন লোভ থাকাটা দোষের বৈকি! এই দেশে বিখ্যাত হতে হলে তো কথাই নেই, মানুষ হওয়ার জন্যও নাকি ঢাকায় বসবাস করাটা খুব জরুরি, অতি জরুরি।
যাই হোক, ব্যক্তিগত জটিলতায় ১৯৯৩ পর থেকে ২০০৩ পর্যন্ত আমার লেখালেখি আর করা হয়ে উঠেনি! আগে যাও-বা কিছু মানুষকে চিনতাম, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই পরে আর যোগাযোগ ছিল না। একদিন, প্রথম আলো অফিসে একজনকে খুঁজতে গেছি। ওখানেই আনিসুল হককে পেয়ে গেলাম। এই মানুষটাকে আমি চিনতাম ভোরের কাগজের 'মেলা'র কল্যাণে। তখন আমি ভোরের কাগজে ফি হপ্তাহে 'একালের রুপকথা' নামের একটা লেখা লিখি। ওই পাতা যিনি দেখতেন, সঞ্জীব চৌধুরী- একজন লেখক বানাবার মেশিন [১]। তিনি আনিসুল হকের সঙ্গে পরিচয় করে দিয়ে বলেছিলেন, ইনি 'মেলা' পাতাটা এখন থেকে শুরু করছেন, লেখা চাচ্ছেন। আপনি মেলার জন্য লেখা দেন।
আমি অবশ্য খুব একটা উচ্ছ্বসিত হইনি কারণ... সঞ্জীব চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করার মজাই আলাদা। তাছাড়া আমার গায়ের মফস্বলের গন্ধ নিয়ে সঞ্জীব চৌধুরী খুব একটা মাথা ঘামাতেন না- তাঁর নাক কখনও উঁচু হতে দেখিনি।
যাই হোক, মেলায় লেখা দিয়ে সে এক কাহিনি হয়েছিল, সে এক চোট্টামির অন্য কাহিনি...অন্য কোন দিন!
আনিসুল হককে বললাম, 'কয়েদী' নামের যে পান্ডুলিপিটা আমার ওটা নিয়ে নাটক করবে, এমন কেউ তাঁর পরিচিত আছেন কিনা। তিনি ওই লাইনেই গেলেন না। আমাকে বুঝিয়ে প্রায় ফেললেন, দেশের অবস্থা দেখছেন না, এখন নাটকের তেমন বাজার নাই।ইত্যাদি, ইত্যাদি...। আনিসুল হক, নামকরা মানুষ, আমার কী আর না-বুঝে উপায় আছে!
তারপর বললেন, আর আপনি যে নাটক করবেন, আপনার স্ক্রিপ্টটার তো নাট্যরূপ দেয়া নাই। নাট্যরূপ দিতে হবে।
আমি বললাম, নাট্যরূপ, এটা তো আমি আগে কখনও করিনি। আপনি কী এটার নাট্যরূপ করে দিতে পারবেন।
আনিসুল হক বললেন, আমাকে দিয়ে করালে ২০ হাজার দিতে হবে।
আমি কুর্নিশ করে চলে এসেছিলাম।
পরে যখন আমি এটার নাট্যরূপ দিয়েছিলাম তখন বিস্মিত হয়ে ভাবছিলাম, হা ঈশ্বর, এটার জন্য ২০ হাজার টাকা! শ্লা, সব টাকা দেখি এখন মিডিয়াতে! ২০০৩-এ ২০ হাজার হলে এখন ২০০৮-এ এই টাকার মান সম্ভবত লাখখানেক হবে! না আরও বেশি? আল্লা জানে...।
২০০৫ সালে 'কয়েদী' যখন বই আকারে বের হল তখন এটা পড়ে শংকর সাওজাল বিচিত্র কোনো এক কারণে অযাচিত মুগ্ধতা প্রকাশ করেছিলেন, তখন এটা নিয়ে নাটক করার জন্য বাড়াবাড়ি রকমের আগ্রহ দেখালেন। আমার ধারণা, এই চমঃকার মানুষটা 'হুদাহুদি', অল্পতেই মুগ্ধ হয়ে যান!
কিন্তু... ২০১২ শেষ হয়-হয়, এখনো নাটকের ন-ও হয়নি! হরতাল নিয়ে নাটক নাকি পটাবলিক খাবে না। এই দেশের মানুষ নাকি আলকাতরা খায় আর এই অখাদ্য খাবে না, 'আজিব'! কথা সেটা না, এই দেশে হরতাল নিয়ে কোনো ফিকশন নাই, কোনো নাটক নাই। কেন? হরতাল নামের অতি কুৎসিত গা ঘিনঘিনে এই দানবটাকে নিয়ে কোনো নাটক করা যাবে না!
শংকর দা অবশ্য এখনও আশার বাণী শোনান। এই চমত্কার মানুষটার উপর আমার কোন ক্ষোভ নাই কারণ তিনি নিজে নাটক বানান না। যে দুজন বিখ্যাত নাট্যপরিচালকের সঙ্গে তাঁর কথা পাকা হয়েছিল এঁরা গা না করলে শংকরদার কীই-বা করার আছে!
এখনও ফোনে কথা হলে তিনি হাল ছাড়েন না, মাহমেদ, দাঁড়াও হবে-হবে।
আমার আর এই মানুষটাকে বিব্রত করতে ভাল লাগে না। তবে মনে মনে বলি, দাদা, আমি তো আর এখন দাঁড়িয়ে নাই, বসে বসে থেকে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি।
আশিক নামের এক ছেলে আমার লেখা নিয়ে নাটক করার জন্য খুব ঝুলাঝুলি করছিল। তার নাকি কার-কার সঙ্গে জানা-শোনা আছে। আসলেই ছিল। একদিন নিয়ে গেল আফসানা মিমির কাছে। ও আল্লা, মিমির সঙ্গে দেখি এর ভালই খাতির। একজন অন্যজনের হাত ধরে আছে। কৃষ্ণচুড়া না কি যেন নাম, ওই প্রডাকশন হাউজ থেকে মিমি নাটক বানাচ্ছেন।
মিমির সঙ্গে কথা হল। শুটিং নিয়ে খুব ব্যস্ত। তবুও এই মানুষটার আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে।
ওখানেই প্রথম দেখলাম সুবর্ণা মুস্তফাকে। স্রেফ, এই ভদ্রমহিলাকে আমার অভব্য, অমার্জিত মনে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছিল এই ভদ্রমহিলার আচরণ খানিকটা মার্জিত হলে তিনি নিশ্চয়ই অ-সেলিব্রটি হয়ে যেতেন না।
তো, মিমির মোদ্দা কথা, এই দেশে ভাল স্ক্রিপ্টের আকাল তাই তিনি ভারতীয় স্ক্রিপ্ট নিয়ে নাটক বানাচ্ছেন। আগামিতেও এমনটাই ইচ্ছা।
আমার এখানে আর ভাল লাগছিল না। এদের দেয়া চা-টাও বিস্বাদ লাগছিল। এটা কেমন কথা! আমি না-হয় ছাতাফাতা তিন টাকা দামের কলমবাজ, তাই বলে কী এ দেশের সমস্ত লেখক মারা গেছেন যে ভারত থেকে স্ক্রিপ্ট আমদানী করতে হবে? এই সব ফাজিলদের ফাজলামি কথা শুনে গায়ে আগুন ধরে যায়। মিমি ব্যতীত আরও অনেকে দাদাদের লেখা নিয়ে ঝাপিয়ে নাটক বানাচ্ছেন।
আশিক ছেলেটা আরেকজনের কাছে নিয়ে গেল। ওর চ্যাংড়া নাটকনির্মাতার নামটা ভুলে গেছি। উনি আবার প্রেমের নাটক ব্যতীত অন্য নাটক করেন না। আমাকে বললেন, প্রেমের নাটক হলে আছি।
আমি বললাম, আমার কিছু উপন্যাস আছে, ওগুলো নাট্যরূপ করে দেই? 'কনকপুরুষটা'...।
তিনি বললেন, আরে না-না, আধুনিক প্রেমের উপন্যাস। যেটা পাবলিক খাবে। হে মাবুদ, পাবলিক যে কি খায় এটা সম্ভবত তুমি ব্যতীত আর কেউ জানে না।
তিনি একটা প্লটের আইডিয়াও দিয়েছিলেন। ভয়াবহ, গায়ের রক্ত হিম হয়ে আসে! সবটা মনে নাই। অনেকটা এমন: এক দেশে এক ছেলে ছিল। সে এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে। করুক...কিন্তু সে যে মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে সেই মেয়ের মায়ের সঙ্গেও সে প্রেম করে। এটা আবার মা-মেয়ে জানে না। এমনসব উদ্ভট আইডিয়া নিয়ে নাটক এগুবে। তিনি আমাকে হাত-পা নিড়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেলেন কেমন করে আমাকে লিকতে হবে।
আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম, এক কাজ করেন, আপনি নিজেই লিখে ফেলেন না কেন! এটাই উত্তম হবে।
ওখান থেকে ফিরে আসতে আসতে জনান্তিকে বিড়বিড় করছিলাম, হে প্রভূ, আর নাটক ভাল লাগে না...।
*কয়েদীর লিংক: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_5073.html
সহায়ক সূত্র:
১. সঞ্জীব চৌধুরী: http://www.ali-mahmed.com/2007/11/blog-post.html
এক গ্রাম্য গাতক- লোকন মইসান!
Tuesday, December 16, 2008
১০০ পারমানবিক বোমার চেয়ে শক্তিশালি যে বোমা: জুতাবোমা
৬৬ বছর বয়সী নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আইরিশ বেটি উইলিয়ামস ২০০৬-এ বলেছিলেন, "বুশকে আমি সামনে পেলে অবশ্যই তাকে হত্যা করতাম। আজ আমার কাছে অহিংস শব্দটা ভীষণ অপ্রয়েজনীয় মনে হয়"!
এমন একজন বয়স্ক মানুষ, একজন নোবেল লরিয়েট কোন পর্যায়ে গেলে এমন হিংস্র অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তা সহজেই অনুমেয়। কারণ তিনি ইরাক থেকে ঘুরে এসেছিলেন। সেখানে তিনি দেখেছেন শত-শত শিশুকে বাতিল পুতুলের মত মরে পড়ে থাকতে। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে যখন তিনি ওখানকার শিশুদের সামনে কথাগুলো বলছিলেন তখন তার চোখে-মুখে ফুটে উঠেছিল তীব্র ঘৃণা!
২০০৩ সালে যৌথ বাহিনীর সুগার কোটেড বড়ির মোড়কে আমেরিকা আক্রমনের পর থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে ১৬ হাজার বৃটিশ সেনা চাকরি ছেড়েছিল।
তো এমন নোবেল লরিয়েট, দুর্ধর্ষযোদ্ধাদেরই যদি এই অবস্থা হয় আমি কোন ছার!
আমি আমার টাট্টিখানার দরজায় আমেরিকা-বৃটিনের পতাকা লাগালে লোকজনদের সূক্ষরূচি আহত হয় বুঝি! আর এইসব সভ্য দেশের অসভ্য লোকদের বর্বরতার কারণে আমার মস্তিষ্কে যে শর্ট-সার্কিট হয়ে যেত, পাগল-পাগল লাগত এর বুঝি কোন দাম নেই? কসম, তখন মরে যেতে ইচ্ছা করত।
হায়, নপুংসক আমি, কীই-বা করার ছিল ৩ টাকা দামের এই কলমবাজের; অনর্থক কলমবাজি করা ব্যতীত।
বুশ ওরফে জঙ্গল। এই গ্রহে জঙ্গলের আইন চালু করেছিল। এখানে ছাপার অক্ষরে কথা চালাচালির সুযোগ কই!
তবে মানুষটাকে মেরে ফেললে কী লাভ হত? নিমিষেই জাগতিক আনন্দ-বেদনার বাইরে চলে যেত! তারচে এই-ই ভাল হল। বুশের বাকি জীবন এই জুতা মারার স্মৃতি তাড়া করুক এটা আমার সুতীব্র চাওয়া। তাড়া করবেই। কারণ ধারণা করি, বুশ পুরাপুরি রোবট না কেননা রোবটদের প্রজনন-ক্ষমতা নাই বলেই জানি (বুশের ২টা মেয়ে আছে বলেই শুনেছি। এই নিয়ে কারও সংশয় থাকলে তাদের ডিএনএ টেস্ট করাতে পারেন। )
*লেখাটা অসমাপ্ত। আরও লেখার ছিল। পরে হয়তো যোগ করব।
'ফ্রিডম' বই থেকে খানিকটা তুলে দিচ্ছি:
বুশ, এ মানসিক রোগে ভুগছে; অ্যাটেনশন ডেফেশিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার।
বুশকে যদি বলা হয়, তুমি সারফেস উঁচু করো। এ করবে কি, সব লোকজন মেরে কবর বানিয়ে সারফেস উঁচু করে ফেলবে। এবং করছেও তাই!
আমাদের দুর্ভাগ্য, বুশ-এর মতো মানুষ পৃথিবীর মাথায় বনবন করে ছড়ি ঘুরাচ্ছে। কোন দেশের নিয়তি নির্ভর করে সেই দেশের শাসক কতটুকু পেটের পীড়াগ্রস্থ তার উপর। আসলেই পৃথিবীর নিয়তি নির্ভর করে বুশ সাহেব ঠিক মতো ডেলিভারী দিচ্ছেন কিনা, রেস্টরুমে !
এই মানুষটা এ গ্রহের কী যে বিপুল ক্ষতি করছে তার ইয়াত্তা নাই! ইরাকের হাজার হাজার বছরের সভ্যতা গুড়িয়ে দিয়েছে। একজন মানব সন্তানের প্রতি জন্তর চেয়েও খারাপ আচরণ করেছে। ইরাকের পবিত্র জায়গাগুলো অপবিত্র করেছে।
ইসলামের ধারক-বাহক আরব দেশ নিশ্চুপ। কিন্তু এটা ছিল আসলে এসিড টেস্ট- ভবিষ্যতে সৌদির পবিত্র জায়গাগুলোর জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি হলো।
বুশ, ইরাকের লোকজনদের ভাবনা এলোমেলো করে দিয়েছে। একজন ইরাকি কুর্দি আরি বলেন: 'I know i am recist but i can’t help it. আরবদের আমি ঘৃণা করি। এমনকি মুসলমানদেরকেও। আমি কোরআন পড়ি না- কেন না এটা আরবীতে লেখা। আমি ইসলাম মানি না কেননা আরবদের মাধ্যমে ইসলাম এসেছে'।
জঙ্গল সাহেব আমাদের জঙ্গলের আইনের বদলে গণতন্ত্র শেখান! শেখান তেলের সংগে কেমন করে রক্ত মেশাতে হয়। কেমন করে হাইটেক মারণাস্ত্রগুলোর জান্তব মহড়া দিতে হয়।
একজন মানুষকে হত্যা করলে চরম শাস্তি দেয়া হয় অথচ বুশকে লক্ষ-লক্ষ মানুষ হত্যার জন্য কোন শাস্তি দেয়ার বিধান নাই- গ্রহবাবা যে!
এটা সত্য বুশ নিজ হাতে কাউকে হত্যা করেনি- তাতে কী! গোল্ডা মায়ারের স্পষ্ট কথা, 'একজনকে নিজ হাতে হত্যা করা আর হত্যা করার সিদ্ধান্ত দেয়ার মধ্যে মুলত কোন পাথর্ক্য নাই'।"
Tuesday, December 9, 2008
কোপানি এন্ড চাবানি ঈদ
ওষুধের দোকানে দেখলাম ৫০০ টাকা করে টাকা তোলা হচ্ছে ড্রাগ সুপার সাহেবের জন্য। এই সুপার সাহেবের আয়ত্বে আছে প্রায় ২০০ দোকান। তাইলে টাকা উঠবে আনুমানিক ১ লাখ!
এই সুপার সাহেব যখন লাখ টাকার গরু কোরবানি দেবেন তখন আমাদের মত লোকরা পশ্চাদদেশে চাপড় মেরে লাখ-উল্লাস করব এতে আর সন্দেহ কী!
Monday, December 8, 2008
এক কলমযোদ্ধা
ছবিটি সেলিনা পারভীনের। 'শিলালিপি' পত্রিকার প্রকাশক, সম্পাদক। মুক্তিযোদ্ধাদের ওষুধ, খাবার দিয়ে সহায়তা করতেন। ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর, দুপুর। পাকবাহিনির দোসররা তাকেঁ তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়।
তখনও তাঁর দুপুরের খাওয়া হয়নি। ৮ বছরের ছেলে সুমনকে বলে গিয়েছিলেন, তুমি খেয়ে নাও, আমি ফিরে খাব। ওয়ান-ওয়ে জার্নি, সেই শেষ যাওয়া।
তাঁর সন্তান সুমনের কী মাথা খারাপ? তিনি কিনা তাঁর মায়ের নামে সামান্য একটা রাস্তার নামকরণ করার জন্য বছরের পর বছর ধরে সরকার বাহাদুরের লোকজনদের বিরক্ত করেছেন।
কী আস্পর্ধা!
ছবি ঋণ: আফতাব আহমদ
সাধুবাদ বনাম মুর্দাবাদ
"হাইকোর্ট। ২৮ আগষ্ট।
১ দিনে বিচারপতি শরীফ উদ্দিন চাকলাদার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ প্রায় ৩১৯ মিনিটে ২৯৮ মামলার রায় দিয়েছেন। প্রতি মামলার জন্য লেগেছে গড়ে ৬৩ সেকেন্ড বা প্রায় ১ মিনিট"। (০৯.১১.০৮, মিজানুর রহমান খান/ প্রথম আলো)
এ ঐতিহাসিক!
এ অসম্ভব!!
এ অভূতপূর্ব!!!
হাইকোর্টের একটি মামলা অন্যের চোখ না, নিজের চোখে দেখার সুযোগ হয়েছিল বলেই জানি এটা কী অসম্ভব একটা কাজ! কোর্টে একটি মামলার কাগজপত্র গুছিয়ে উঠাতে আর নামাতে যে সময় ব্যয় হয় তাতে এই সময়ের হিসাবের কাছাকাছিও নেই!
আমি নিশ্চিত, এই গ্রহে আর কোথাও এমন রেকর্ড ভেঙ্গে খানখান করে ফেলার নজির নেই। গিনিস রেকর্ডে নাম উঠাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। দেশের এমন একটা সাফল্যে মনটা কেমন শান্তি শান্তি লাগছে। আহা, মানুষের অসাধ্য কী আছে!
মাননীয় বিচারপতি জনাব শরীফ উদ্দিন চাকলাদারকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই।
মুর্দাবাদ:
“মাননীয় বিচারক মি. ফ্যাঙ অতন্ত কৃশকায় এবং গরম মেজাজের লোক। ইনি অশক্ত শরিরে যতোটুকু সহ্য হয় তারচেয়ে বেশি মদ্যপান করেন। ফল যা হবার তাই হয়, সর্বদা মেজাজ টং হয়ে থাকে। তাছাড়া ক-দিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় তাঁর লেখা মামলার এক রায়-এর কঠিন সমালোচনা বেরিয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, এ নিয়ে তিনশোবার বিচারক ফ্যাঙের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে...”। (অলিভার টুইস্ট/ চার্লস ডিকেন্স)
এ অন্যায়!
এ নিন্দনীয়!!
এ ক্ষমার অযোগ্য!!!
মাননীয় বিচারক মি. ফ্যাঙের ঘোর নিন্দা জানাই।
Sunday, November 9, 2008
সব বদলে ফেলব, নিজেকে বদলাব না: শক্তচিন্তা
বেতনভোগীর আবার নাম কী! একটা ছবির কারণে পত্রিকার কাটতি বেড়ে গেল এটাই বা কে জানতে চাইবে!
গোটা একটা উপন্যাস অনুবাদে অনুবাদকের পরিশ্রমের ক্লেশ বেশি নাকি কয়েক লাইন ভূমিকা লেখা উপসম্পাদকের? এই নিয়ে তর্ক করা বৃথা। তেল জিনিসটা তেলতেলে কিন্তু চকচকেও বটে!
এমনিতেও পত্রিকায় দু-চারজন বিশেষ আলোকিত মানুষ থাকেন নইলে কর্তৃপক্ষের ধারণা হয় এদের ব্যতীত পত্রিকা অচল। তাই উপসম্পাদকের কানসাট নিয়ে ১০১ লাইনের কবিতা না ছাপিয়ে উপায় কী, তাও সাহিত্য পাতায় না, সম্পাদকীয় পাতায়!
পাঠককে হজম করতে হয়। পাঠক পাকস্থলির মত- সব কিছু হজম করতে হয়। বেচারা!
অনুমান করি, তখন এই দেশের সমস্ত কবি জ্যোত্স্না খাওয়ার জন্য হিমালয়ে অবস্থান করছিলেন। নইলে সমুদ্র গুপ্তের মত ভারী চটের ব্যাগ কাঁধে বয়ে ওষুধ ফেরি করছিলেন।
‘ওয়েবসাইট অবলম্বনে’ বা ‘ইন্টারনেট থেকে’- এসব হচ্ছে গণিমতের মালের মত। পত্রিকায় এই ২টা শব্দ ছেপে দিয়ে তথ্যের মহাসমুদ্র থেকে যে কোন তথ্য নিয়ে নিলেই হল, কেউ চোর-চোট্টা বলবে না। যেন ওয়েবসাইট নামের যন্ত্র নিজে নিজেই এইসব তথ্য যোগাড় করেছে, চাহিবামাত্র পত্রিকাওয়ালাদের সরবরাহ করার জন্য মুখিয়ে থাকে। এর পেছনে দুপেয়ে বুদ্ধিমান কোন প্রাণী ছিল না, সাইটটার কোন নাম থাকতে নেই! অতএব অনুমতি, নামোল্লেখ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আবশ্যকতাই বা কী!
যে তথ্য পাঠকের জন্য জরুরি না সেটা ফলাও করে ছাপা হবে, আজ এত লক্ষ কপি ছাপা হল। যেটা জরুরি সেটা ছাপার আশা বাতুলতা, যে আজ পত্রিকার মোট স্পেসের এত ভাগ বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে? আধাআধি হলেও মন্দের ভাল- ৫০ ভাগ খবর, ৫০ ভাগ বিজ্ঞাপন। এতেও অন্তত আমি সুখি, ৪০০ পয়সা উসুল হয়েছে এই আনন্দে।
নইলে একদিন দেখব গোটা পত্রিকা বিজ্ঞাপনে ঠাসা। পেছনে ছোট্ট করে লেখা, স্থানাভাবে আজ কোন খবর ছাপা হলো না। খবরের জন্য দেখুন আগামিকাল। আমাদের সাথেই থাকুন, চোখ বন্ধ করে।
চোখ খুললেই...।
বড় ধন্ধে আছি।
Saturday, November 8, 2008
অহেতুক আবেগ- মূল্য মাত্র ৫০ টাকা।
থাকি গ্রাম টাইপের একটা জায়গায়, দায়ে না পড়লে ঢাকা যাওয়া হয় না। কিন্তু একবার ঢাকায় পা রেখেই আমার মাথা খারাপের মত হয়ে গেল। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পাকিস্তানি পতাকায় ছেয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পাকিস্তানি প্রাইম-মিনিস্টার আসছেন। বেশ। তর্কের খাতিরে, শিস্টাচারের দোহাই দিলেও এমন করে পাকিস্তানি পতাকা দিয়ে ঢাকা শহর মুড়িয়ে দেয়ার যুক্তি কী এটা আজো বোধগম্য হয় না। প্রচন্ড মনখারাপ করে তখন বীরশ্রেষ্ঠ লেখাটা লিখেছিলাম।
তখন ওই পাতাটা দেখেতেন সঞ্জীব চৌধুরী। তাঁকে আমি অনুরোধ করেছিলাম এই লেখাটার জন্য কোনো টাকা আমাকে না-দিতে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোনো লেখা লিখব টাকার বিনিময়ে এটা আমার কল্পনাতেও ছিল না। তিনি বিষয়টা গুরুত্ব দেননি নাকি নিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম ছিল না এটা জানার আজ আর উপায় নেই! বাধ্য হয়ে টাকাটা আমাকে নিতে হয়েছিল- অনেক লেখার বিল একসঙ্গে দেয়া হত। হায়, এই ৫০ টাকার আমি কী করব, কোথায় রাখব?
৫০ টাকাটা আমি রেখে দিয়েছিলাম। আজও আছে। কখনও ইচ্ছা হয়নি এটা খরচ করে ফেলি। সজ্ঞীবদা, আপনি আসলে(!) দেখাব নে আপনাকে...।
এদেশের ক’জন সেরা সন্তান, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ একই সঙ্গে আবেদন করলেন, অল্প সময়ের জন্যে হলেও প্রিয় মাতৃভূমি দেখার অনুমতি দেয়া হোক। তাঁদেরকে জানানো হলো, এ রকম কোনো নিয়ম নেই। বীরশ্রেষ্ঠরা গোঁ ধরে রইলেন। অবশেষে অনুমতি মিলল কিন্তু নিয়মকানুনও বলে দেয়া হলো:
কোনো অবস্থাতেই নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না, সাত জনকেই একসঙ্গে থাকতে হবে, এবং নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে ফেরা যাবে না।
ঢাকা। ১২ ডিসেম্বর। আর মাত্র একদিন পর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, মাত্র তিনদিন পর বিজয় দিবস।
চোখের পলকে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ প্রিয় মাতৃভূমিতে উদয় হলেন। মৃত্যুনীল যন্ত্রণায় তাঁদের দেহ মোচড় খাচ্ছে, ভুল করে তাঁরা পাকিস্তানে চলে এসেছেন। আহ-আহ, কী কষ্ট! চারদিকে উড়ছে পাকিস্তানি পাতাকা পতপত করে। চারদিক ছেয়ে গেছে পাকিস্তানি পতাকায়।
সিপাহী মোঃ মোস্তফা কামাল চেঁচিয়ে বললেন: কিন্তু একী আশ্চর্য! ওই, ওই তো দেখা যায় বায়তুল মোকারম মসজিদ?
ল্যান্স নায়েক নুর মোহাম্মদ সুর মেলালেন: আরে, বাহ, আমিও তো স্টেডিয়াম দেখতে পাচ্ছি।
কিছুদূর এগুতেই নায়েক মুন্সী আব্দুর রব অবাক হয়ে বললেন: অবাক কাণ্ড, এটাই তো সেই ঘড়িঅলা বিল্ডিংটা!
ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ফুটপাতের অসংখ্য পত্রপত্রিকা নেড়েচেড়ে দেখলেন, সব বাংলা।
ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার রুহুল আমীন অস্ফুট স্বরে বললেন: সবাই বাংলা ভাষায় কথা বলছে, এটা পাকিস্তান হতেই পারে না, আউট অভ কোশ্চেন!
মতিঝিলে জ্যামে অনেকক্ষণ আটকে রইলেন। পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে বঙ্গভবনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে নাকি সবুজ চত্বরে স্বাগত জানানো হবে।
এঁরা এদিক ওদিক বেশ অনেকটা সময় ঘুরে বেড়ালেন। একসময় সচেতন হয়ে ভারী লজ্জিত হলেন। আসার সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু...!
জাতীয় স্মৃতিসৌধের চারপাশে মানব-প্রাচীর ঘিরে আছে। বীরশ্রেষ্ঠরা অলৌকিক ক্ষমতার ব্যবহার না-করে এ ব্যুহ ভেদ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই ক্ষমতা ব্যবহার করার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে।
একজন বীরশ্রেষ্ঠ, কঠিন নিষেধ বিস্মৃত হয়ে মুখ ফসকে বলে ফেললেন: কেন স্মৃতিসৌধে ঢুকতে দেবেন না, আমরা বীরশ্রে..., আমাদের কি এইটুকু অধিকারও নেই?
ভাগ্যিস, বীরশ্রেষ্ঠরা কি করে এখানে এ নিয়ে সৈনিক মাথা ঘামাল না। পাথরমুখে একচুল আঁচড় না ফেলে বরফ ঠাণ্ডা গলায় বলল, পাকিস্তানের প্রাইম মিনিস্টার এখন ফুল দিচ্ছেন। আপনারা যেই হোন আর যাই হোন ওনার চেয়ে বড় না।
বীরশ্রেষ্ঠদের সবারই যেন কী হলো, সমগ্র বিশ্ব আধার হয়ে আসছে। চোখ জলে ছাপাছাপি কিন্ত কেউ কারো দিকে ভুলেও তাকাচ্ছেন না। বীরপুরুষদের চোখের জল যে দেখতে নেই। তাঁরা ফিরে আসছেন, একেকজনের থুতনী নীচু হতে হতে বুকে গিয়ে ঠেকছে।
সবাই জামার ভেতর আটকে থাকা মেডেলটা খুলে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। মেডেলগুলো ফেলে দিতে গিয়ে তারা জমে গেলেন, এগুলোর গায়ে দৈববাণী জ্বলজ্বল করছে: 'ও আমার বীর সন্তান, তোমাদের চেয়ে প্রিয় আমার আর কেউই নাই।"
দুঃখ প্রকাশ:
ভোরের কাগজের অধিকাংশ লেখা নিয়ে যে বইটি 'একালের প্রলাপ' ছাপা হয় ওখানে 'বীরশ্রেষ্ঠ' নামের এই লেখাটিতে স্কোয়াডন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ রুহুল আমীন ছাপা হয়েছে। যা হবে, ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার মোহাম্মদ রুহুল আমীন। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের কারণে দুঃখ প্রকাশ করি।
Thursday, November 6, 2008
সাদা বাড়িতে কাল অতিথি...
এই প্রভু শেখান, এই গ্রহ শেখে। তিনি শেখাতে বাকি রাখেন না কিছুই- সময় থাকলে এটাও বলে দিতে চেষ্টা করেন একজন বিছানায় কেমন করে বিশেষ সময় কাটাবে!
এমন 'শিকখিত' প্রভুর দেশ অথচ সাদা বাড়িতে প্রভুর বেশে একজন কাল মানুষের প্রবেশ করতে ২০০৮ সাল লেগে গেল কেন, এটাই আমার কাছে বিস্ময়! হায়, কেমন 'শিকখিত' প্রভুর দেশ! একজন বুশ- পাগলটা এই গ্রহের মাথায় বনবন করে ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছে ৮ বছর হল! কোন আইন তার কেশাগ্র দূরের কথা গোপনকেশও স্পর্শ করতে পারছে না। একে যদি বলা হয় সারফেস উঁচু করো তো- এ করবে কী, সব প্রাণ মেরে কেটে সাফ করে কবর বানিয়ে সারফেস উঁচু করে ফেলবে।
আফসোস, ইমপিচমেন্টের ফাঁদে ক্লিনটনের মতো চমত্কার শাসকের সিংহাসনের স্ক্রু ঢিলা হয়ে যায় যায়- মনিকার সঙ্গে ফস্টিনস্টি করে স্বীকার না করার কারণে। অথচ একটা কুকি বিস্কুট ব্যতীত আর কেউ বুশ নামের পাগলপ্রভুকে আটকাবার চেষ্টা করেনি (এই বদ্ধউম্মাদ গলায় কুকি বিস্কুট আটকে মরতে মরতে বেঁচেছিল)।
এ ঘটা করে আবার রাইসের কাছে চিরকুট লেখে, "আই নিড আ বাথরুম ব্রেক, ইজ দিস পসিবল"?
আসলে এইসব নকলপ্রভুরা- ডেমোক্রেট না রিপাবলিকান সেটা বিষয় না, এদের চালায় ব্যবসায়িরা। এরাই হচ্ছে এদের প্রাণপাখি। নির্বাচনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ফান্ড না আসলে পৃথিবীর ব্যয়বহুল নির্বাচনের তকমা লাগতে হবে না!
তেল এবং অস্ত্র- সাংঘাতিক লাভজনক ব্যবসা। এই যে এতসব হাইটেক মারণাস্ত্র তৈরি হচ্ছে, এইসব বিক্রি করতে হবে না বুঝি। আগের ক্লাস্টার বোমায় মারা যেত ১০/১৫ জন, এখন মারা যায় শয়ে শয়ে। মহড়া করতে হবে না? তো, জাত-পাত, ধর্ম, জাতির নামে লাগাও যুদ্ধ। আরাম করে ভিজ্যুয়াল দেখ। শ্যাম্পেনে চুমুক দাও। দরদাম করো। ডিল। আর যেসব দেশ বোমার আঘাতে আঘাতে জর্জরিত সেইসব দেশের পূর্ণবাসনের কাজও তো এরাই বাগাবে। স্প্লিল্টারের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত শিশুটি খেলনা পুতুলের মত মরে থাকলেই কী রাইসের পিয়ানোর নোটে ভুল হবে? নাকি হওয়া উচিত! পাগল!
Monday, November 3, 2008
এক লালচওয়ালার খপ্পরে

মাহবুব সুমন:
ইনার ধারণা, আমি একজন দুর্ধর্ষ শিকারি। অস্ট্রেলিয়া থেকে বয়ে নিয়ে আসলেন 'বুমেরাং'। হায় খোদা, আমি তো পিপড়াও মারতে পারি না, শিকার করব কী!

আনোয়ার সাদাত শিমুল:
ইনার ধারণা, আমি নাকি কলমযোদ্ধা- দুই কলম লেখার এই ফল! একদা ৩ টাকার কলম নিয়ে কস্তাকস্তি করতাম দেখে হয়তো তার ধারণা জন্মে গেছে আমি কলম-মারকুটে! তাই কী ব্যাংকক থেকে এক দুর্ধর্ষ যোদ্ধার প্রতিমূর্তি নিয়ে এলেন। দেখো দিকিনি কান্ড, এই যোদ্ধার নাকই তো চার কলম!

বাবু:
এই মানুষটাকে সরকার একের পর এক ট্রেনিং দিয়েও রোবট বানাতে পারেনি। যে মানুষটার একটা ফোনে সরকারি কোষাগারে জমা হয় কোটি-কোটি টাকা, সেই মানুষটারই কিনা কাঁচা কটা আম ভেট পেয়ে সবগুলো দাঁত বেরিয়ে পড়ে।
হা ঈশ্বর! কিন্তু কঙ্গোর এই মহিলার...। লালচি থেকে লো...। রাম-রাম!

মাহবুবুল হুদা:
কট্টর এই মুসলমানের দেখার চোখটা বড় ঝকঝকে-স্বচ্ছ! নইলে কী আর আমাদের দেশের সবচেয়ে চালু মূর্তিপুজার প্রসঙ্গ একপাশে সরিয়ে এটা দেন!

Friday, October 17, 2008
কে কাকে নাড়ায়!
Wednesday, October 1, 2008
শেকল
প্রবলপুরুষদের এমন শেকল কতটা সময় এ গ্রহে আটকে রাখতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়...।
এরা কারা- এলিয়েন, অন্য গ্রহের কেউ?
কোরবানির ঈদে কী কী কোরবানি হয় সেই বিতর্কে আমি যাব না! তবে আমাদের দেশে কোরবানির ঈদ মানেই গরু জবাই। এবং চোখ দিয়ে যদি গরু খাওয়ার উপায় থাকত তাইলে একটা গরুও বাজার থেকে আস্ত ফিরতে পারত না, রাস্তাময় কেবল পড়ে থাকত গরুর কঙ্কাল!
আমার এলাকায় গতবছর সবচেয়ে বড় গরুটা (৬৫ হাজার) দিয়েছিলেন সার্জেন্ট সাহেব। সবার সেকি উচ্ছ্বাস!
অনুমান করতে কষ্ট হয় না, ঈদকে সামনে রেখে এ দেশের কোটি-কোটি মানুষের কাতারে আমাদের সার্জেন্ট সাহেবও ছিলেন বৈকি।
এবার আসা যাক ইদুল ফিতরের ঈদ। হাঙ্গা নাকি লেহাঙ্গাটা (৮০ হাজার) কিনেছেন একজন ক্লার্কের বখা মেয়ে।
আচ্ছা, স্যাররা যে ধুমসে দূর্নীতি করেন এই ঈদকে সামনে রেখে- নিশ্চয়ই ঈদের দিন মালপানি আসে না। তবে কখন, গোটা রমজানব্যাপি নিশ্চয়ই?
আমাদের দেশটা বড় বিচিত্র, রমজান মাস এলেই আমরা দেখি ধাঁ ধাঁ করে দ্রব্যমূল্যর দাম আকাশ ছাড়িয়ে যায়। কতটা গভীর মানুষের গলা কাটা যায়!
রিখটার স্কেলের মত যদি দূর্নীতি স্কেল থাকত তবে নির্ঘাত এই ২ ঈদের সময় বঙ্গালদেশ ধসে পড়ত।
রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি দূর্নীতি হয়, এই-ই আমার মত। জানি, অনেকেই একমত হবেন না। বেশ।
এ দেশের সমস্ত লোকজন তো দেখি রোজা রেখে মসজিদের সামনের কাতারে, বনবন করে ঘুরছে হাতের তসবি।
তাইলে এরা কারা, যারা সংযমের মাসে সীমাহীন হার্মাদী করছে? এরা কি অন্য গ্রহ থেকে আসে, এলিয়েন?
Monday, September 22, 2008
শিশু হত্যার মারণাস্ত্র, বিজ্ঞাপনরঙ্গ!
সোয়াইক উত্তর দিয়েছিল, 'যেমন চাইবেন স্যার। শক্ত চাইলে শক্ত, পাতলা চাইলে পাতলা'।
এই আলাপে অশ্লীলতা খোঁজা বৃথা। তীব্র ভয়ে বাহ্যজ্ঞান যেমন লোপ পায় তেমনি লজিক। এখানে আমি সোয়াইকের তীব্র ভয়ে কাবু হওয়াটাই দেখছি- প্রাণের চেয়ে প্রিয় তো আর কিছু নাই!
এখনকার সময়ে বাহ্যজ্ঞান লোপ পেতে ভয়ের পাশাপাশি বেসুমার টংকাও (টাকা) দায়ি। সেলিব্রেটিরা যথেষ্ঠ টাকা পেলে যে-কোন বিজ্ঞাপন করে ফেলেন। শাহেদ নামের সেলিব্রেটি, সেল ফোনের একটা বিজ্ঞাপনে, বাবা-মাকে ছেড়ে আসা স্ত্রীর মন খারাপ দেখে বাসে জনসমক্ষে ললিপপ চুষতেও আপত্তি করেন না। বেকুবটা কী মনে করে এটা চুষছে সেই জানে!
আজিব, কোন চুতিয়ার মাথা থেকে বিজ্ঞাপনের এই আইডিয়া বেরিয়েছে কে জানে! চাবকাতে পারলে আরাম পাওয়া যেত।
কে জানে, আগামীতে দেখব, ইসুবগুলের ভূষির বিজ্ঞাপনে কোন সেলিব্রেটিকে কাস্ট করে জানতে চাওয়া হবে, আপনি কি হাগতে পারেন?
সেলিব্রেটি বিমলানন্দে মাথা নুইয়ে বলবেন, হুঁ, হাগা কোন বিষয় না। পেমেটন্টা ভাল দেন, দেখবেন, আচ্ছা করে হেগে দেখিয়ে দেব। শক্ত চাইলে শক্ত, পাতলা চাইলে পাতলা।
আমার ধারণা, শিশুদের সবচেয়ে পছন্দের অনুষ্ঠান কার্টুন এবং বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন শিশুরা কেন এত আগ্রহ করে দেখে আমি জানি না, এটা মনোবিদরা ভাল বলতে পারবেন। এদের অবচেতন মনে এর প্রভাব অকল্পনীয়! ৪-৫ বছরের শিশু বিজ্ঞাপনের জিংগাল পুরোটাই মুখস্ত করে বসে থাকে। লোগো দেখে গড়গড় করে আউড়ে যায়। সেল কোম্পানির বিজ্ঞাপন শুরু হওয়া মাত্রই ছাদ ফাটিয়ে বলে, মা কান্না করে-মা কান্না করে।
কী বিপুল প্রভাব!
একটি দুধ কোম্পানির চালু একটা বিজ্ঞাপন। বাচ্চালোক এই দুধ কোম্পানির দুধ খেয়ে এমন ‘তানদুরস্ত’-বলশালী হয়, গাছের মগডাল থেকে ছাতা নিয়ে লাফিয়ে পড়ে। কেবল লাফিয়েই পড়ে না প্যারাসুটের মত ভেসে ভেসে নিচে নেমে আসে। এরপর গলা ফাটিয়ে বলে, আমরা করব জয়, এ- এ-এ।
অল্প বয়সের শিশুরা যা দেখে তাই শেখে- বাবা চাঁদ ধরব, বাবা তোপ খাব। এই বিজ্ঞাপন দেখে কোন শিশু ছাদ থেকে ছাতা নিয়ে লাফিয়ে পড়লে ওই শিশুর মৃত্যুর দায় কে নেবে? এই বঙ্গালদেশে কি এমন কেউ নাই যাকে এর জন্য দায়ি করা চলে?
নাকি এরিমধ্যে কোন শিশু লাফ দেয়ার চেষ্টা করেছে? গোটা দেশের খবর তো আর আমাদের নখদর্পনে নাই। প্রত্যক্ষদর্শী কেউ না থাকলে এটাই বা কি করে নিশ্চিত হওয়া যাবে শিশুটি ছাতা নিয়েই ছাদ থেকে লাফ দিয়েছিল নাকি এমনি এমনি? পোস্টমর্টেম করে তো আর এটা বের করার উপায় নেই।
আমাদের দেশে জাতীয় দৈনিকগুলোতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির ৯০০ কোটি টাকা দানের খবরই আসে না আর একটা শিশুর মৃত্যুর খবর নিয়ে স্যারদের গা করার স্পৃহা কই?
মুক্তচিন্তার পরতিকায়(!) আসলেও বড়জোর আসতে পারে ছাদ থেকে পড়ে একটি শিশুর অকাল মৃত্যু। ফলোআপ করার চল আমাদের দেশে খুব একটা নাই। এরপর আমরা আর কিছুই জানব না।
ব্যস। মামলা ডিসমিস।
Saturday, September 13, 2008
ঈশ্বর হইতে সাবধান!
প্রায়শ ভাবি, আমরা যারা ভুল রোলে অভিনয় করি, নিতান্ত বাধ্য হয়ে; এদের কাছ থেকে খুব বেশি আশা করা বাতুলতা মাত্র। এদের মস্তিষ্ক, পায়ু, উদর একাকার হয়ে যায়।আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, কবি নজরুল ইসলাম যে সমস্ত লেখা লিখে গেছেন এখনকার সময়ে নজরুল এর দশ ভাগের এক ভাগ লেখাও লিখলে কবির বাবরি চুল বাতাসে উড়ত। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বাবরি চুলের পেছনে কবির কল্লা থাকত [১]!
Tuesday, September 9, 2008
বীভত্স স্বপ্ন এবং আত্মার ফেরিওয়ালা!
শাহাদুজ্জামান আপনি টলটলে পানিঘষা চোখ দিয়ে কী অবলীলায়ই না ফালাফালা করেছেন ঢাকা নগরকে। ঢাকা, যেন লাশকাটা টেবিলে শুয়ে থাকা অপরূপ এক মানব। কিন্তু ব্যবচ্ছেদের পর, একপেট আবর্জনা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো অতি সুদর্শন একজন আর গলিত শবে পার্থক্য কী?
আহা, লুই কান নামের পরিকল্পনাবিদের পরিকল্পনা থেকে আপনি এখনো বেরুতে পারেননি বুঝি! বিদেশি না হলে বুঝি কিছুই আমাদের পাতে দেয়া যায় না? আপনার আর দোষ কী বলুন, যে দেশে আইডিয়া বিক্রি হয় কেজি দরে।
এই হতভাগা দেশে স্বপ্নপুরি কোথায়? কে স্বপ্ন বিক্রি করে, কে স্বপ্ন কেনে? কেই বা স্বপ্ন দেখে, কেই-বা স্বপ্ন দেখায়! কোথায় সেইসব স্বপ্নবাজ, যাদের চোখে উপচে পড়ত স্বপ্ন, যাদের হাড় ক্ষয়ে ক্ষয়ে বেড়ে উঠত স্বপ্নের শেকড়? এরা যে আজ নিজেকেই বিক্রি করতে হন্যে হয়ে ঘুরছে। একটা চাকরির জন্য একে-ওকে ধরছে। কেউ হ্যা হ্যা করে হাসছে, যেন ভারী মজার একটা কিছু শুনল যা হোক। কেউবা অন্য দিকে তাকিয়ে থাকার ভান করে।
এই অভাগা দেশে স্বপ্নবাজদের আদৌ প্রয়োজনই বা কী? স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা এখন থেকে স্বপ্নের বদলে নিজের আত্মা ফেরি করবে অন্ধকারের পশুর কাছে!
Saturday, August 23, 2008
কী সাহস গো আপনার ! পেন্নাম হই।
আহা, কী সাহস গো আপনার! মরিবার হ'ল তার সাধ...! মরিবার সাধ কার না জাগে? এ্যাহ, সাধ হলেই কী! সাধ হলেই বুঝি লম্বা হয়ে শুয়ে পড়া যায়? লাশকাটা ঘরে লাশ হয়ে শুতে ভয় করে না বুঝি?
কী পাষন্ড গো আপনি! কেমন করে পারলেন, বাহে, কেমন করে? কেমন করে পারলেন শিশুটির গায়ের গন্ধ বিস্মৃত হতে?
জানি-জানি বিপন্ন একটা বিস্ময় আপনার রক্তের ভিতরে খেলা করে। সে তো আমাদের রক্তেও সবিরাম খেলা করে! তাই বলে আপনার মত সাহস আসে কেত্থেকে? ট্রাম না হোক চলমান গাড়ি তো আমাদেরও টানে- একটা শীতনিদ্রার যে বড্ড প্রয়োজন।
জীবনানন্দ দাদা, আট বছর আগের একদিন? কেন এটা যে-কোন একদিন হলে দোষ কী!
Thursday, August 21, 2008
ভূত দিবস
‘হে-হে-এ। আমি একটা বৃদ্ধ ভূত,বুকিনের সঙ্গে খেলি 'কুত কুত' ।হে-হে-এ, হে- হে- এ- এ-এ।’
Friday, August 15, 2008
কলম নামের মারণাস্ত্র
মুনসুর আলী নিজেই নিজের উপর বিরক্ত- এই সব কী, এই সবের মানে কী! উঁহু, এ ভূমিকায় ওঁকে মোটেও মানাচ্ছে না। পত্রিকা অফিসের লোকজনরা আঁচ করতে পারলে হাসাহাসি করবে। তাচ্ছিল্য করে বলবে, হায় মুনসুর, হায়, তুমি এখনও প্রফেশনাল হলে না। তুমি দেখি পত্রিকা ডুবিয়ে ছাড়বে।
মুনসুর আলী আসলে একটি চালু দৈনিকের সাহিত্য পাতার সম্পাদক। কতটুকুই বা ওঁর ক্ষমতা- ওঁ তো আর পত্রিকার সম্পাদক না। আসলে এখন সমস্ত ক্ষমতা পত্রিকা মালিকের। বড়ো বিচিত্র ব্যাপার- ব্যবসায়ীরাই সব পত্রিকার মালিক হয়ে বসে আছেন! পত্রিকা মালিক ত্রাণ দিচ্ছেন এটা হররোজ ঘটা করে ছাপা হবে। ত্রাণ বন্ধ তাতে কী- রক্ত দান কর্মসূচীতে তিনি যে মূল্যবান রক্ত দান করছেন এটা কী ছাপা না হয়ে যায়?
মুনসুর আলীর সাক্ষাত্কার নেয়ার কথা ছিল যে লেখকের তিনি একজন অ-জনপ্রিয়, অখ্যাত লেখক । খুব জনপ্রিয় লেখক হলে সমস্যা ছিল না। যাদের বইয়ের কপি নিঃশেষ হয়ে যায় বই বের হওয়ার পূর্বেই।
জনপ্রিয় লেখক, বড় জটিল জিনিস! জনপ্রিয় এমন একজন লেখক, যার বই এখনও বেরই হয়নি অথচ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন চলে এসেছিল প্রথম মুদ্রণ নিঃশেষিত দ্বিতীয় মুদ্রণও প্রায় শেষ হয় হয়। সন্তান প্রসবের পূর্বেই সন্তানের পিতা! যে এ নিউজ করল তার চাকরি যায় যায়।
বা যারা নিজের বইয়ের বিজ্ঞাপন নিজেই দিয়ে লিখে দেন প্রথম মুদ্রণ শ্যাষ, দ্বিতীয় মুদ্রণের ছাপার কাজ চলিতেছে।
মুনসুর আলী পূর্ণদৃষ্টিতে এই লেখক নামের প্রাণীটির দিকে তাকালেন। প্রাণীটি কাঠের টেবিলে মাথা নীচু করে লিখে যাচ্ছে, যেন বা সে গোটা পৃথিবীটা এই কাঠের টেবিলটায় আটকে ফেলেছে। শব্দের ইট একের পর এক সাজিয়ে অন্য ভুবনের এক ইমারত গড়ছে।
মুনসুর আলী ভেবে পাচ্ছেন না একে কি করে বলবেন এঁর সাক্ষাত্কার ছাপা হচ্ছে না। ছাপা হচ্ছে এক টিভি স্টারের, যে কিনা মাত্র দু-একটা বিজ্ঞাপন করে স্টার হয়ে গেছে। সম্পাদকের ধারণা, ওই টিভি স্টারের বিজ্ঞাপনটা পাবলিক ভাল খাবে, কচকচ করে খাবে।
মুনসুর আলী কথাটা বলবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে লেখক নামের প্রাণীটি মুখ তুলে তাকাল। কী তীব্র সেই চোখের দৃষ্টি! অ-জনপ্রিয় লেখক পাঁচ আঙ্গুলে আকড়ে ধরা ভয়ংকর অস্ত্রটা তাক করলেন। কলম নামের কী হাস্যকর একটা অস্ত্র অথচ মুনসুর আলীর গা কাঁপছে।
*'সাদাকে কালো বলিব' থেকে
সহায়ক লিংক: http://www.ali-mahmed.com/2009/03/blog-post_21.html
Sunday, August 3, 2008
গাধু, গাধার মত এইটা কী করলি!
(না ভান-না মান, কেবলই অভিমান)
গাদুরা।
তোকে তো গাধুই ডাকতাম, নাকি? তোকে আরেকটা নামে ডাকতাম ‘তিন ঠেইঙ্গা’। ওরে, তোর তিন ঠেইঙ্গাটা রাখা আছে আমার বৈঠকখানায়- আয় না একদিন, দেখে যা।
কি রে, তোর কী জানা আছে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস? মার্কিন কংগ্রেস নাকি ১৯৩৫ সালে আইন করে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস ঘোষণা করে। চিন্তা কর, বন্ধুত্বের জন্যও নাকি আইন লাগে।
এইসব জানিস না, না? ছ্যা! দেখ দেখি কান্ড, এটা আমি প্রায়শ ভুলে যাই আমি তো আবার তোর থেকে ২ পাতা বেশি পড়েছি। এটা ফলাও করে তোকে, লোকজনকে না বললে শান্তি লাগে না, বুঝলি। আমি যে কী ‘শিকখিত’ হয়েছি এটা জনে জনে না জানালে চলবে কেন, বল! বুঝিস না কেন দুনিয়াটাই এমন...।
তুই যে আমায় ‘চার চইখ্যা’ ডাকতি আমার এটা ভাল লাগত না, বুঝলি। আরে, চশমা চোখে দিলে দুয়ে দুয়ে তো চার চোখই হবে- এটা আবার ঘটা করে বলাবলির কী আছে! চশমা চোখে কী আর সাধে দিতাম, সেই ছোটবেলা থেকেই তো চোখ গেছে। গেলে কী আর করা! ওই সময় এ বয়সের ক-টা ছেলেই বা চশমা পরে, লজ্জা করত না বুঝি আমার? ইচ্ছা করে তুই এই কান্ডটা করবি, চার চইখ্যা ডাকবি আর আমি আনন্দে লাফাব, পাগল!
ইয়ে, তোর কি ওই পাগলা স্যারটার কথা মনে আছে, আছাদ আলি স্যার। আমাদের বাসায় যার কাছে আমরা প্রাইভেট পড়তাম। প্রাইমারীতে পড়ার সময় যেবার তোর বুকে নাগরাপরা পা তুলে দিলেন। আরেকবার পেয়ারা গাছের পাতাসহ ডাল ভেঙ্গে তোকে মারছিলেন আর তুই হি হি করে হাসছিলি। পরে তুই গোমর ফাঁস করে দিলি, পাতাভর্তি ডালটার কারণে তুই নাকি কোন ব্যথাই পাচ্ছিলি না।
জানিস, আজ না আমার আলাভোলা বাবাটার কথা মনে পড়ছে বড্ডো। মানুষটা আমাকে শৈশবে ওই শিক্ষাটা দিয়েছিলেন বলেই না আজ আমার এই হা-হুতাশ নাই, কেন শৈশবের বন্ধুদের মধ্যে কেউ মন্ত্রীর ছেলে, সচিবের ছেলে নাই।
দেখলাম তো আজকালকার বন্ধুত্ব! সর্দি ঝাড়ার মত একজন অন্যজনকে ভুলে যায়! কী অবলীলায় একজন অন্যজনের হাত ছেড়ে দেয়। আসলে আমাদের এত সময় কই!
যাগ-গে, তোর সঙ্গে ডাং-গুলি খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, মাঞ্জা দেয়া সুতা...ঘ্যাচ ঘ্যাচ ঘ্যাচ। ডাং-গুলি ...আহা, কী খেলা- এড়ি, দুড়ি, তেলকা...! ডাং-গুলিতে তোর অসাধারণ দখল আমার ভাল লাগত না, বুঝলি? ভাল লাগার কী কোন কারণ ছিল? তোর কাছে নিয়মিত হারতাম। খেলার নিয়মানুযায়ি এক লালে কেনা যেত আস্ত একটা গোদাম, দুই লালে নদি। তুই তিতাস নদিটাও কিনে ফেলতি, এইটা কোন দেশের বিচার!
আর আমি, হারুয়া পার্টি? গুমগুম করে পিঠে পড়ত তোর কিল। ইশ-শ, কী জোরেই না মারতি! তখন জোর প্রতিজ্ঞা করতাম, শোধ নোব একদিন। ঠিক গদাম করে মারব একটা।
অনেক বছর পরে তোকে কিন্তু ওইদিন ঠিকই মারতাম। তুই শ্লা, আমায় গালি দিলি কেন? শ্লা, আমাকে আপনি আপনি করে বলছিলি কেন রে, তুই থেকে আপনি? কুতুয়া রে!
গাধু, গাধার মত তুই যে মরে গেলি পচাই খেতে খেতে এটা কী একটা কাজের কাজ হল?!
Saturday, August 2, 2008
একালের নাইট, একালের যুদ্ধাপরাধি।
বাংলাদেশে আসবেন মনস্থ করলেন। এ সিদ্ধান্তের পেছনে লুকিয়ে আছে বিশাল এক ক্ষুব্ধতা। শুনেছেন এ জাতি অতিশয় পাজি। প্রকাশ্যে বীরবর একজন বয়স্ত মানুষকে তার সন্তানসম কেউ লাথি মারে আর লক্ষ-লক্ষ মানুষ তা অবলোকন করে। অথচ ওই অতি দুষ্টকে শায়েস্তা করতে, তার কেশাগ্র স্পর্শ করার ক্ষমতা নাকি কারও নাই! ধিক, ধিক-ধিক। নাহ, এর একটা বিহিত করা আবশ্যক।
ডন কুইক্সোট তার শালপ্রাংশু-কিসমিস টাইপের শরীর অদ্ভুত ভঙ্গিতে বাঁকিয়ে বিকট হাই তুললেন। লাফিয়ে উঠতে গিয়ে সামলে নিলেন যখন বুঝতে পারলেন এই বজ্রপাতের উৎস তিনি নিজেই। তাঁর পার্শ্বচর, পৃথুল-থলথলে শরিরের সাংকো পানযাকে বললেন: সাংকো, জীবনটা এক যুদ্ধ, নিরন্তর যুদ্ধ- তৈরি হও, আমি যুদ্ধে বের হব।
সাংকো চোখ কচলাতে কচলাতে ভাবল, যন্ত্রণা, আবার যুদ্ধের ভূত চেপেছে। লোকটার মাথা কি আবারও এলোমেলো হয়ে গেল! হাই চেপে ভূঁড়িতে হাত বুলিয়ে বলল: স্যার নাইট, খেয়ে-দেয়ে একটু গড়িয়ে নিলে হতো না।
ডন কুইক্সোট গাঁকগাঁক করে উঠলেন: আরে এ গাধা বলে কি, চারদিকে এতো অন্যায়-অবিচার, তুই কি খেয়ে ঘুমিয়ে রসাতলে যেতে চাস- তোর কি আঠারো মাসে বছর!
সাজ-সাজ রব পড়ে গেল, ডন কুইক্সোট তাঁর বর্শা, অসি শাণ দিতে বসলেন। অবশ্য এ তরবারি দিয়ে মুরগির গলা দু-ভাগ হবে কি না সন্দেহ! তার বর্শাটা দিয়ে কলাগাছ এফোঁড়-ওফোঁড় করতে , তা প্রায় ঘন্টাখানেক তো লাগতেই পারে।
ডন কুইক্সোট তার লজঝড় মার্কা পুরোদস্তুর যুদ্ধের পোশাকে, তাঁর প্রিয় দুর্ধর্ষ ঘোড়া রোজিন্যান্ট-এ চাপলেন। সাংকো পানযা তার গাধা ড্যাপল নিয়ে অনিচ্ছা সত্বেও পিছু নিল।
বঙ্গাল দেশের মহা সুন্দরীদের হাবভাব নাইট ডন কুইক্সোটকে তিলমাত্র প্রভাবিত করছে না। টকটকে লাল রঙের প্রলেপ মাখানো হাত পায়ের লম্বা-লম্বা নখ দেখে মনে হচ্ছে শকুনের রক্তাক্ত পা। উৎকট লিপস্টিক-রুজে মাখামাখি ঠোঁট, গাল দেখে বিড়বিড় করলেন: ড্রাকুলী।
স্যার নাইট একটু গুলিয়ে ফেলেছেন। ড্রাকুলী না বলে বলতে পারতেন ড্রাকুলার মেয়ে অথবা মহিলা ড্রাকুলা। অভিজাত মহিলাদের কামানো ভ্রু দেখে আঁতকে উঠলেন মড়ার খুলি ভেবে।
ধনুর্ভঙ্গ পণ করায় কিনা কে জানে ডন কুইক্সোট-এর সমস্ত মন ছেয়ে আছে ইনার প্রেমিকা ডালসিনিয়া দেল টোবাসো। দেল টোবাসোর আকাশ পাতাল রূপ ছিল কি না সেটা আলোচ্য বিষয় না কিন্তু ইনার চোখে অন্যরা নস্যি। আসলে লাইলীকে দেখতে হয় মজনুর চোখ দিয়ে- দেল টোবাসোকে দেখতে হবে ডন কুইক্সোটের চোখে।
ঘোড়া রোজিন্যান্ট তার হাড্ডিসার শরীর নিয়ে পূর্ণ গতিতে ছুটছে (সত্য বলতে কি গতি গাধার চেয়ে কম) ভিআইপি রোড ধরে। ঘোড়া মধ্যরাস্তা পেরুতে গিয়ে দুহাত উঁচু আইল্যান্ডে মাথা বাঁধিয়ে চার পা আকাশে তুলে দিল। ডন কুইক্সোটকে গড়াগড়ি খেতে দেখে সাংকো টেনে তুলল। ধুলায় ধবলীভূত নাইট ব্যাথায় কুঁইকুঁই করে গা ঝাড়া দিলেন। থসথসে দেহের হাড় গুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
রাগ চেপে একজনকে জিঞ্জেস করলেন: এইসব কি!
লোকটা অবঞ্জাভরে বলল, অ, এইটা আইল্যান্ড। ক-দিন পর পর এটার নমুনা আমরা বদল করি। একবার গাছ লাগালাম তো পরের বার কেটে ফেললাম। সিরামিক ইট বসিয়ে রেলিং দিয়ে ক-দিন পর ওটা গুঁড়িয়ে রঙ দিয়ে দিলাম। ইচ্ছে হলে আবার গাছ লাগালাম। ইনফ্যাক্ট, আমরা ভাংচুর না করে থাকতে পারি না, পরিশ্রমী জাতি তো। আপনি হয়তো ক-দিন পর দেখবেন দুহাত উঁচু এ দেয়ালের চিহ্নমাত্র নেই। শোভা পাচ্ছে দশ হাত গভীর ড্রেন, ওটাই আইল্যান্ড।
ডন কুইক্সোট এগুচ্ছেন, ক্রমশ মন খারাপ হচ্ছে, স্পষ্ট দৈববাণী (রেডিও, টেলিভিশনকে দৈববাণী ভাবছেন) শুনছেন, বারংবার: পূর্বে এ দেশে অযুত-নিযুত সমস্যা ছিল, এখন কোন সমস্যা নাই। ভবিষ্যৱ হবে আরো চমৎকার।
ডন কুইক্সোট একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, তুমি কি আমায় মুক্তিযোদ্ধা ওই মানুষটার খোঁজ দিতে পার, খুনিদের বিচার চাইলে গেলে যাকে প্রকাশ্যে লাথি মারা হয়েছিল?
যাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলেন সে বিরক্ত হয়ে বলল, ওই মানুষটাকে তো সবাই খুঁজছে, মোস্ট ওয়ান্টেড পারসন। ১৯৭১-এ স্বাধীনতার নামে গন্ডগোল লাগিয়ে দেশটার বারোটা বাজিয়েছিল। এইসব যুদ্ধাপরাধিদের এখন খুঁজে বের করে বিচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আসলে ডন কুইক্সোট তার ধীরগতির কারণে এই দেশে পৌঁছতে অনেক দেরি করে ফেলছেন। দাবার ছক পাল্টে গেছে।
ডন কুইক্সোট গভীর বিষাদে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন: সাংকো, এখানে আমার অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই, চলো অন্য কোথাও।
*চরিত্রগুলোর নাম নেয়া হয়েছে: Cervantes-এর Don Quixote থেকে
Tuesday, July 29, 2008
ক্রসফায়ার, এক মহাআবিষ্কার!
আউটলও গুলি করল। ১০০ মাইল এবং ১১৫ মাইলের মধ্যে শুরু হয়ে গেল তুমুল যুদ্ধ।
*'শুভ'র ব্লগিং' বই থেকে।
Monday, July 28, 2008
লাইফ- এচিভমেন্ট- সেক্রিফাইস!
কই রে আমার টুনটুনি, কই রে আমার ঝুনঝুনি, কই রে আমার মুনমুনি; দেখ লো মা, তোর লিগ্যা কি আনছি।
'আহা, একটু আস্তে কইরা নামাও না, মায়াডা দুকখু পায় না বুঝি'!
বিটিভি'র আটটার সংবাদ...
বাড়িটা কিনেছেন পানির দামে। বাজারে গুজব, এ বাড়ির মালিকদের নাকি অপঘাতে মৃত্যু হয়, বদরাগী একটা ভূত নাকি থাকে এ বাড়িতে।
শাসক সাহেব ছুঁচালো গোঁফের ডগা (মোম দিয়ে প্রচুর সময় নিয়ে পাকানো) দুমড়ে মুচড়ে মুচকি হেসেছিলেন, ব্যাটারা ভাড় কোথাকার। ভূতের ভয় দেখায় তাকে, রিটায়ার্ড এস.পি এম. এইচ. শাসককে, যার ভয়ে একঘাটে শেয়াল মুরগি পানি খেয়েছে।
গভীর রাতে শাসক সাহেবের ঘুম ভেঙে গেল, অকারণেই কেমন যেন গা ছমছম করছে। চোখ পুরোপুরি খুলে খাটের পাশে যে অবয়বটাকে দেখলেন এক কথায় একে বলা চলে, কত্সিত-অশুভ। ভয় গোপন করে হুংকার দিলেন, এ্যাই, কে-কে, কে তুমি।
আমি ভূত, অবয়বটা বিকট হেসে বলল, নড়াচড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়গুলো থেকে মটমট শব্দ হচ্ছে।
মামদোবাজীর জায়গা পাও না- তুমি ভূত, প্রমাণ কি? আই.ডি মানে পরিচয়পত্র আছে?
ভূতটা এতো অবাক হলো তার লাল চোখটা নীল হয়ে গেল, তোতলাতে তোতলাতে বলল, আমি ভূ-ভূত, আমার আ-আবার-আইডি!
ইয়েস, চোয়াল শক্ত করে বললেন আজাদ সাহেব। ভূত হও আর টূত হও পার পাবে না, আই.ডি না দেখালে বাপকেও ছাড়ি না। সাংবাদিকরা আই.ডি দেখিয়েও আমার কাছ থেকে ছাড় পায়নি, পিটিয়ে শুইয়ে দিয়েছি।
ভূতটা মাথা নিচু করে মাথা চুলকাতে চুলকাতে কি যেন ভাবল। দূরে পড়ে থাকা একটা লোহার ডান্ডা তুলে কচকচ করে চিবিয়ে মস্তো ঢেকুর তুলে বলল, কি, এইবার বিশ্বাস হয়?
এবার শাসক সাহেব ভয় পেলেন, হাত-পা পেটে ঢুকে যাওয়ার দশা। ক্ষীণ গলায় কোনোমতে বললেন, হয়।
হয়, না, ভালো-ভালো, ভূতটা বলল পোড়ো বাড়িটাকে নাড়িয়ে দিয়ে, হুই, এইবার তোর মুণ্ডুটা ছিঁড়ে ফেলব।
শাসক সাহেব স্তম্ভিত। ভূতটা তাকে তুই তুই করে বলছে, একজন রিটায়ার্ড এস.পি-কে! মাথায় কেমন ভোঁতা যন্ত্রণা, হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মতো মনে পড়ল। এই তো সেদিন টিভি নাটকে দেখছিলেন কিভাবে চট করে একজনকে সম্মোহিত করে ফেলা যায়। কি সর্বনাশ, দেখতে দেখতে তিনি নিজেও সম্মোহিত হয়ে পড়েছিলেন। আচ্ছা, এ নিয়ম কি ভূতদের বেলায়ও খাটে, চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি। ঠাণ্ডা শ্বাস ছেড়ে ভাবলেন, হারাবার তো আর কিছু নেই, তুই করে তো বলেই ফেলেছে।
তিনি উঁচু গলায় বললেন, আমি ঊনিশ থেকে নয় পর্যন্ত গুণব, সম্মোহিত হয়ে আমি যা বলব তুমি তাই করবে।
ভূত গা জ্বালানো হাসি হেসে বলল, হয়-হয়, মরার আগে ব্রেন আউট হয়।
শাসক সাহেব একাগ্রচিত্তে গুণে চলেছেন, উনিশ... সতের... পনের... এগার... নয়।
ডিং। ভূতটার হাড়ের মটমট শব্দ মিলিয়ে গেল, ফার্নিচারের মতো দাঁড়িয়ে রইল। শাসক সাহেব বিস্ময় চেপে ঠাণ্ডা গলায় বললেন, এবার ডান হাত দিয়ে ডান কান ধরো, ধরেছো, গুড। মোচড় দাও, উহু, আরও জোরে, দিয়েছ, ভেরী গুড। এবার কানটা ছিঁড়ে ফেল। যাও, এখন থেকে ভ্যানগগের মতো এক কান নিয়ে ঘুরে বেড়াও।
ভূত ছেঁড়া কান নিয়ে কাঁদ-কাঁদ গলায় বলল, ভ্যানগগ তো মাফলার দিয়ে কান ঢেকে রাখত, এই গরমে মাফলার পাই কই।
তুমি তাহলে জানো ভ্যানগগ সম্বন্ধে, আজাদ সাহেবের বিস্ময়ের শেষ নেই।
হাহ, ভূত বলল হেলাফেলাভাবে। এটা কোনো ব্যাপারই না। আমি হলাম গিয়ে প্রাচীন ভূত। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই আছি, কোন ব্যাপারটা জানি না? বুঝলেন, আমার মনটা ওদিন খুব বিষণ্ন ছিল, অনেকগুলো লুডিওমিল ট্যাবলেট খেয়েও কাজ হল না। মানুষের খুলিতে হুইস্কি পান করতে করতে ভাবলাম, জীবনটা আসলে খুব নিরামিষ হয়ে যাচ্ছে। তো, আমি একটা মন্ত্র পড়লাম: মানুষ আমার পুত, মেয়ে মানুষ আমার ঝি- বুকে আছে আমেরিকার নাম, করবি আমার কি। ভ্যানগগের মাথায় পাগলামিটা তো আমিই ঢুকিয়েছিলাম। আহ্, এরপর কি মজাটাই না হয়েছিল!
এবার ভূতটা সামনে পেছনে হেলেদুলে হা হা করে হাসতে লাগল, হাড়ে ঘষা খেয়ে বিকট মট মট শব্দ হচ্ছে। শাসক সাহেব শঙ্কিত হলেন, বাড়িটার যে অবস্থা যেভাবে হাসছে ফেলে না দেয়। ধমক দিলেন, ফ্যা ফ্যা করে হেসো না তো। আর মট মট শব্দ শুনে মনে হচ্ছে ইউনিভার্সিটিতে গোলাগুলি হচ্ছে। জয়েন্টগুলোতে গ্রীজ লাগাও গিয়ে, গ্রীজ না পেলে মঘা দাওয়াখানার হালুয়া লাগিয়ে দেখতে পারো।
ভূতটার অসম্ভব রাগ হলো, তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবল, আঃ, এই লোকটার খুলিতে করে চা খেলে কি মজাই না হবে।
শাসক সাহেব কি করে জানি টের পেয়ে গেলেন, বিড়বিড় করে বললেন, ঊনিশ...নয়?
ডিং। ভূতটার এবার ভাবলেশহীন চোখ, নিস্তেজ গলা, মাফ করে দেন, জনাব।
আচ্ছা যাও মাফ করে দিলাম। তা দৈত্য-টৈত্যদের শুনেছি অনেক ধরনের ক্ষমতা-টমতা থাকে, তোমার কি আছে নাকি এরকম কিছু?
জ্বী জনাব, আছে, আপনি কি চান?
শুনেছি টেলিভিশনের মতো শক্তিশালী মাধ্যম নাকি এদেশে আর নাই। এই যাদুর বাক্সে যা দেখানো হয় পাবলিক তাই বিশ্বাস করে। আমি চাই সংবাদে, বিশেষ করে আটটা-দশটার সংবাদে গুরুত্বের সঙ্গে আমাকে দেখানো হোক। জনগণের জন্যে আমি যে সোনার দেহ মাটি করে ফেলছি, এসব তুলে ধরা হোক। বিশেষ করে প্রথম পনেরো মিনিট আমার জন্য বরাদ্দ রাখবে।
কি করবেন আপনি, যেটা দেখানো হবে, ভূত আগ্রহের সঙ্গে জানতে চাইল।
এই ধরো গাছ-টাছ লাগালাম, ফিতা কাটলাম- এইসব আর কি।
তথাস্তু,ভূত অদৃশ্য হয়ে গেল।
পরদিন, আরাম কেদারায় গা এলিয়ে শাসক সাহেব গভীর আগ্রহে সংবাদ দেখছেন- কী চমৎকারই না দেখা যাচ্ছে তাকে।
তার পেছনে ভূতটা দাঁড়িয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল, একমাত্র সেই জানে, এই মুহূর্তে এই দেশে এরা দুজনই মাত্র সংবাদের এ অংশ দেখছে। বিচিত্র কারণে বাংলাদেশের দর্শকরা আটটার সংবাদ শুরু হওয়ার পনেরো মিনিট পর টিভি অন করে।
