Search

Sunday, July 20, 2025

এন্টার্কটিকায় একজন অভিযাত্রী!

লেখক: Eng. Naim Uddin

(ইঞ্জিনিয়ার নাঈম উদ্দিন, বাংলাদেশের অল্প মানুষদের মধ্যে একজন, যিনি এন্টার্কটিকা ঘুরে এসেছেন, বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা নিয়ে।)

"


তিমির তৈলাক্তকরণ, প্রকৃতির অবদান ও দক্ষিণ জর্জিয়ার নির্মম তিমি শিকার স্টেশন 🌊

আমার অ্যান্টার্কটিকা তিমি লুব্রিকেশন অভিযানে, আমি শুধু তিমিদের অসাধারণ জীববৈজ্ঞানিক তৈলাক্তকরণ প্রক্রিয়াই দেখিনি, বরং ইতিহাসের এক ভয়াবহ অধ্যায়ও প্রত্যক্ষ করেছি। দক্ষিণ জর্জিয়ার পরিত্যক্ত তিমি তেল নিষ্কাশন কেন্দ্র।


একসময় এখানে লক্ষ-লক্ষ তিমিকে হত্যা করে তাদের দেহ থেকে তেল সংগ্রহ করা হতো, যা শিল্প বিপ্লবের যুগে লুব্রিকেশন, জ্বালানি ও প্রসাধনীতে ব্যবহৃত হতো।

🔬তিমিদের দৈনন্দিন স্ব-তৈলাক্তকরণের রহস্য!
১. ব্লবার: তিমিদের প্রাকৃতিক লুব্রিকেশন ও তাপ নিরোধক ব্যবস্থা। 
  • তিমির ব্লবার (চর্বির স্তর):  এটি কেবল অসহনীয় ঠান্ডা থেকেই তাদেরকে সুরক্ষা দেয় না, বরং এটি একটি প্রাকৃতিক লুব্রিকেন্ট হিসেবেও কাজ করে।
  • এই চর্বি তিমিদের তৈলাক্ত শরীরকে পানির প্রতিরোধ শক্তি কমিয়ে সহজে চলাচল করতে সহায়তা করে, যা তাদের শক্তি-সাশ্রয়ী দ্রুত সাঁতার নিশ্চিত করে।

২. ত্বকের স্ব-তৈলাক্তকরণ এবং ত্বকের প্রাকৃতিক পুনর্জন্ম প্রক্রিয়া:
  • প্রাকৃতিক নিয়মে তিমির ত্বক নির্বিচারে ঝরে পড়ে, ফলে নতুন ত্বক তৈরি হয় যা মসৃণ ও 'হাইড্রোডাইনামিক' থাকে।
   • শিল্পের ভাষায়, এটি কম ঘর্ষণযুক্ত লুব্রিকেশন প্রযুক্তির মতো, যেটা যন্ত্রপাতির ক্ষতি কমানোর জন্য বিশেষ লুব্রিকেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

৩. শ্লেষ্মা নিঃসরণ, তরল গতিশীলতার উন্নতি:
 • কিছু তিমি শ্লেষ্মার মতো এক ধরণের তরল নিঃসরণ করে, যা পানির প্রতিরোধ শক্তি কমিয়ে তাদের গতিশীলতা বৃদ্ধি করে।
 • বিজ্ঞানীরা এই ধারণা ব্যবহার করে জাহাজ ও সাবমেরিনের জন্য উন্নত জ্বালানি-সাশ্রয়ী লুব্রিকেশন ব্যবস্থা তৈরি করছেন।

তিমিদের পরিবেশগত অবদান:
🐳 'Whale Pump Effect', সমুদ্র উর্বরকরণ:
 • তিমিরা গভীর সমুদ্র থেকে খাবার গ্রহণ করে, এবং তীরে ফিরে এসে পুষ্টি সমৃদ্ধ বর্জ্য ত্যাগ করে, যা 'ফাইটোপ্লাংকটন'-এর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
 • ফাইটোপ্লাংকটন, CO₂ শোষণ করে অক্সিজেন তৈরি করে, যা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

🐋 কার্বন সংরক্ষণে তিমির ভূমিকা: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এ যেন এক প্রকৃতির যোদ্ধা!
 • একটি তিমি জীবনকালে ৩৩ টন পর্যন্ত CO₂ (অক্সিজেন) সংরক্ষণ করতে পারে, যা হাজার-হাজার গাছের সমান!
 • তিমির মৃত্যুর পর তাদের দেহ সমুদ্রের গভীরে ডুবে যায়। যার ফলে শতাব্দীর-পর-শতাব্দী ধরে কার্বন সংরক্ষিত হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে সহায়তা করে।

🌊 তিমি বনাম অক্সিজেন
আমরা যে নিঃশ্বাস নিই তার অর্ধেকই আসে সমুদ্র থেকে!
 • 'ফাইটোপ্লাংকটন', তিমিদের পুষ্টিতে বৃদ্ধি পায় যা পৃথিবীর ৫০% এর বেশি অক্সিজেন উৎপাদন করে!
অর্থাৎ, আমরা প্রতিবার নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় প্রতি দুইটি নিঃশ্বাসের একটি আসে সমুদ্র থেকে!

তিমি এই গ্রহকে, এই গ্রহের মানুষকে দুই হাত ভরে দিয়েছে কিন্তু প্রতিদানে মানুষ যা দিয়েছে!
⚠️ দক্ষিণ জর্জিয়ার তিমি তেল নিষ্কাশন কেন্দ্র: এক নির্মম অতীত!
🏭একসময়ের তিমি হত্যার কারখানা:
দক্ষিণ জর্জিয়া, যা আজ এক নির্জন দ্বীপ, একসময় বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ তিমি শিকার কেন্দ্র ছিল। এখানে ১৯০০ সালের শুরুর দিকে লক্ষ-লক্ষ তিমি হত্যা করা হয়েছিল শুধু তাদের চর্বি থেকে তেল সংগ্রহের জন্য!
 • তিমির দেহ কাটার বিশাল প্ল্যাটফর্ম ও কারখানা ছিল এখানে।
 • তিমির চর্বি গলিয়ে ল্যাম্পের তেল, প্রসাধনী ও শিল্পের জন্য ব্যবহার করা হতো।
 • মাত্র কয়েক দশকে তিমির সংখ্যা ভয়াবহভাবে কমে গিয়েছিল, এবং কিছু প্রজাতি বিলুপ্তির পথে চলে যায়।
📉 যা ছিল স্রেফ একটি ধ্বংসাত্মক শিকার। এতে করে অনেকটাই আমাদের প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে!
 • ১৯৬০-এর দশকে, অতিরিক্ত শিকারের ফলে তিমির সংখ্যা এতটাই কমে গিয়েছিল যে এই কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়।
  • বিশ্বব্যাপী বিধিনিষেধের পর, আজ তিমি শিকার নিষিদ্ধ, কিন্তু এর ভয়াবহতার ইতিহাস প্রকৃতির জন্য এক চরম শিক্ষা রেখে গেছে।


📸 অ্যান্টার্কটিকা তিমি অভিযানের অভিজ্ঞতা:
আমি যখন দক্ষিণ জর্জিয়ার পরিত্যক্ত তিমি তেল নিষ্কাশন কেন্দ্র পরিদর্শন করি, তখন বেদনার সংগে অনুভব করলাম, কীভাবে মানব সভ্যতা প্রকৃতির সংগে ভয়াবহ নিষ্ঠুর আচরণ করেছে। অথচ এই তিমিগুলোই আমাদের পরিবেশ রক্ষায় অনন্য অবদান রাখছে।

📸 আমার অ্যান্টার্কটিকা তিমি অভিযানের সেরা মুহূর্ত!
আমি যখন মহাসাগর প্রকৌশলীদের কাছ থেকে এই বিষয়ে শিখছিলাম, তখন উপলব্ধি করলাম, যে তাদের 'স্ব-তৈলাক্তকরণ প্রক্রিয়া' প্রকৃতির নিজস্ব ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময়!
তিমিদের জীবনযাত্রা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমরা উন্নত লুব্রিকেশন প্রযুক্তি তৈরি করতে পারি, যা পরিবেশবান্ধব এবং শক্তি সাশ্রয়ী হবে।
তিমিদের সংরক্ষণ মানে প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করা! 🌍💙"
#AntarcticaExpedition #WhaleLubrication
#MarineLife
#OceanEcosystem #SustainableNature #WhaleWatching #ClimateAction #OceanwideExpedition #CarbonSink
#SaveTheWhales 
#SouthGeorgia

-লেখক: Eng. Naim Uddin

No comments: