এ সত্য, আমার সমস্ত জীবনে অন-লাইন মিডিয়ার মিলিয়ন-মিলিয়ন শব্দের মধ্যে প্রিন্ট মিডিয়ায় লক্ষ-লক্ষ শব্দ ছাপা হয়েছে কিন্তু এখনও আমি নিজেকে লেখক বলে দাবী করি না। কারণ যে জিনিস আমার না তা আমি দাবী করব কেমন করে! কে লেখক কে লেখক না এটা ঠিক করেন পাঠক। পাঠককে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নাই কারণ একজন পরিণত পাঠক তাঁর গ্রে-মেটার ফ্লাওয়ার ভাসে রেখে কোন লেখকের লেখা পাঠ করতে বসেন না। এরা একেকটা ক্ষুরধার ব্রেন...!
সবিনয়ে বলি, লেখক অন্য জিনিস! এরা নিজের আনন্দের জন্য লিখেন কিন্তু আমি কেবল নিজের আনন্দের জন্যই লিখি না। পাঠক না- ছুঁয়ে দিলে, না-পড়লে সে লেখা কোন কাজের!
আর এই একটা কাজ ব্যতীত অন্য কিছুই যে পারি না, গো! আফসোস, সেই লেখালেখিটাও আমার হল না কারণ জীবনে আমি কোন কাজই গুছিয়ে শেষ করতে পারিনি। আশেপাশের সবার যখন একটা করে ক্যারিয়ার তখন আমার হাতে টিফিন-ক্যারিয়ার! ভারী অকাজের, বাতিল খাপছাড়া একজন মানুষ! নিজেকে আমার জেমস জয়েসের সেই ডেডোলাস চরিত্রের মত মনে হয় [*]। না-ঘারকা, না ঘাটকা!
এমনকি ধারাবাহিক লেখাগুলোও আর শেষ করা হয়ে উঠেনি। 'বৈদেশপর্ব ' [১] অসমাপ্ত! তারচেয়েও বড় এক অন্যায়- 'হাসপাতালপর্ব ' [২] শেষ করা হয়ে উঠেনি! আমার মা মারা গেছেন যুগ পেরিয়ে গেল কিন্তু 'হাসপাতালপর্বে ' ভদ্রমহিলা এখনও বিছানায় শুয়ে আছেন, বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়। থাকুক অপেক্ষায়, অন্তত আমার অসমাপ্ত লেখায় তিনি বেঁচে থাকুন। আমি মারা যাব কিন্তু মা বেঁচে থাকবেন, এই-ই আনন্দ!
'ল্যাকক' ওরফে লেখক ('উঁচা পদের' লেখকদের আমি 'তমিজের' সঙ্গে ল্যাকক বলি) নিয়ে একটা ধারাবাহিক লেখা শুরু করেছিলাম [৩] কিন্তু যথারীতি ছন্দপতন। কিন্তু এইবার মনে হয় ইতিহাস হতে যাচ্ছে কারণ আমি এমন একজন 'ল্যাকক' ওরফে লেখকের খোঁজ পেয়েছি এরপর আমার জীবদ্দশায় আর কোন লেখককে নিয়ে লেখার প্রয়োজন হবে না! অন্তত এই ছাতার এক জীবনে!
লেখক হতে পারিনি কিন্তু পাঠক হতে পেরেছি- পাঠক হতে আসলে কোন যোগ্যতা লাগে না কেবল আকন্ঠ পড়ার পিপাসা! হাজার-হাজার বই পড়ে যার অপেক্ষায় ছিলুম অবশেষে তাকে পেলুম। বই পড়ার জন্য কচ্ছপের আয়ু পাওয়ার আমার যে হাহাকার ছিল [৪] তার অবসান হয়েছে কারণ এখন আর 'উড়াউড়ি-পড়াপড়ি'-এর অবকাশ নাই। আমার কাছে এখন কেবল এই মহান লেখকের ৩টা 'মহা-গ্রন্থ' থাকবে। এখান থেকে হররোজ দু-চারটে করে অক্ষর পড়ব- জীবনটা 'অক্ষরের কুতকুত' খেলে বেশ কেটে যাবে।
আমার জমানো সমস্ত বই ফেলে দেওয়ারও সময় চলে এসেছে। বই নামের এই সমস্ত আবর্জনা কে নেবে, হায়! যাই হোক, কাঁপাকাঁপি থামিয়ে মূল কথায় আসি:
* জেমস জয়েসের A portrait of the Artist as a Young man-এর নায়ক স্টিফের ডেডেলাসের জবানীতে,
"a medical student, a oarsman, a tenor, an amateur actor, a shouting politician, a small land lord, a small investor, a drinker, a good fellow, a storyteller, somebody's secretary, something in distillery, a tax gatherer, a bankrupt and at present a praiser of his own past."
নালিশ সে তো তোমার সত্তার অংশ
কিছুই তোমার চোখে ঠেকেনি সুন্দর?
মেফিস্ট: না-হে প্রভু, সত্য কহি
তোমার এ দুনিয়াটা অতিশয় খল
সেখানে মানুষ গেলে
এতো বেশি পাপে ডোবে
শয়তানও বিরক্ত হয় চাতুরি খেলাতে
পাপপুণ্য বোধহীন পামর মানুষ।"
১. বৈদেশ পর্ব: https://tinyurl.com/3dyh96xu
২. হাসপাতাল পর্ব: https://tinyurl.com/4r6k3yd4
৩. 'ল্যাকক' পর্ব: https://tinyurl.com/4p8av54j
৫. গোয়াল ঘরের পাঠক: https://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_02.html
৬: ছফা: https://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_15.html
৭. গাছটার কান্না পায়...: https://www.ali-mahmed.com/2009/06/blog-post_1608.html
No comments:
Post a Comment