Search

Wednesday, December 22, 2010

ঘরের ছাওয়াল ঘরে ফিরে গেছে

নামহীন। অজ্ঞাত। হাত-পা ছড়িয়ে থাকা একে যখন আমি পাই [১], এই মানুষটাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল 'অজ্ঞাত' নামেই। হাসপাতালের মেমোতে নামের জায়গায় লেখা ছিল, অজ্ঞাত।
কী কান্ড! আজ যখন এ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছে অজ্ঞাতের জায়গায় লেখা আছে 'ফরিদ'। বাহ, কী অনায়াসেই না একজন অজ্ঞাত থেকে ফরিদ হয়ে যায়!
ফরিদ যখন হাসপাতালে ভর্তি ছিল একে যতবার দেখতে গেছি ততবারই হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে থাকা এই ভদ্রমহিলাকে আমি অনুরোধ করে এসেছিলাম, ফরিদের প্রতি খেয়াল রাখার জন্য। হাসপাতাল থেকে ফরিদকে যখন নিয়ে আসছিলাম তখন এই মানুষটা ফরিদের জন্য অহেতুক চোখের জল ফেলছিলেন। তাঁর নাকি মায়া পড়ে গেছে। হায় মায়া!
কালই হাসপাতালের লোকজন চাচ্ছিল ফরিদকে ছেড়ে দিতে কিন্তু আমি রাজি হইনি। আমার মনে হচ্ছিল এর অন্তত আরও একটা দিন পর্যবেক্ষণে থাকা প্রয়োজন। আপাতত ফরিদের চিকিৎসা করার কিছু নেই কিন্তু অনুমান করি, তার এই ঘোর কাটতে বেশ কিছু দিন সময় লাগবে। এখনও এর চোখের দৃষ্টি ভাবলেশহীন! বাসায় কারা কারা আছে জানতে চাইলে ফরিদের কাছ থেকে জানা যায়, বাবা নেই, মা আছেন, তিন ভাই চার বোন।
এর বাড়ি নেত্রকোনা এখন থাকে টঙ্গি, যাচ্ছিল সিলেট। রাস্তায় মুড়ি খাওয়ার পর থেকেই অজ্ঞান। সেই জ্ঞান ফিরেছে ঝাড়া ৪৮ ঘন্টা পর! এর যে শরীর সিলেটে পাঠানোর প্রশ্নই উঠে না, একে টঙ্গি ফিরে যেতে বলি। যে ট্রেনে একে তুলে দিচ্ছি সেই ট্রেনে পরিচিত একজন যাচ্ছেন বলে সাথে যাওয়ার হ্যাপা থাকছে না বলে আমার চেপে রাখা শ্বাসটা ফেলতে খানিকটা সুবিধা হয়।
ট্রেনে ফরিদকে তুলে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। যাক বাবা, বাঁচা গেল। অবশ্যই এটা মনে মনে বলি, লোকজন শুনে ফেললে সর্বনাশ! কে চায় তার মুখোশ আলগা করতে!
হাসপাতালের লোকজনরা পারলে কালই একে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। ফরিদের জন্য এদের সঙ্গে আমার দুবার কথা কাটাকাটি হয়েছে। বেচারা ফরিদ, নিজের পক্ষে লোকজন টানতে পারেনি, আসলে এই সব আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে! এর বাইরেও আমার নির্বুদ্ধিতা নিয়ে জনে জনে জবাবদিহি করতে হয়েছে। ভাল লাগছে না এই প্রসঙ্গ নিয়ে বিশদ কথা বলতে।

ফরিদকে আমার ফোন নাম্বার দিয়ে বলে দিয়েছিলাম, পৌঁছে আমাকে যেন একটা ফোন করে জানিয়ে দেয়। দুপুরে যখন ফোনটা এলো, 'আমি বাড়িত পৌছা গেছি'। নিমিষেই আমার চশমার কাঁচ ঝাপসা হয়ে যায়...

সহায়ক লিংক:
১. ফরিদ...: http://www.ali-mahmed.com/2010/12/blog-post_20.html 

4 comments:

সাধারণমানুষ said...

সবাই কেন আপনার মত হতে পারে না ভাই ?? কেন কেউ ফরিদের জায়গায় নিজেকে ভাবতে পারে নাহ ?


আপনাকে ধন্যবাদ দিবো নাহ ...... কারন আপনি নিয়ম ভেঙ্গেছেন, আপনার প্রাপ্য স্যালুট।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

এই প্রসঙ্গটা নিয়ে আলোচনা করতে বিব্রত বোধ করছি...
কিছু মনে করবেন না, এই কাজটাকে আমার কাছে বড়-ছোট দূরের কথা কোন কাজই মনে হয় না। একটা মানুষ ভাত খাবে, একটা মানুষ ঘুমাবে; এই সব করার জন্য তাকে যেমন আলাদা করে কোন ভাবনা ভাবতে হয় না তেমনি আমার মনে হয় এই কাজগুলো করার জন্যও কারও আলাদা কোন ভাবনা থাকাটা সমীচীন না।
ধন্যবাদ আপনার সহৃদয় মন্তব্যর জন্য। @সাধারণমানুষ

Mohsin Reza said...

পুরো ব্যাপারটাই আমি খুব আগ্রহ নিয়ে লক্ষ্য করছিলাম, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। একটা কৌতুহল ছিল...বাঙালির যে অপবাদ " আমরা আরম্ভ করি, শেষ করিনে" এটা এখানেও লেগে যায় কিনা। স্বস্তি এবং সুখ দুটোই পেয়েছি। আপনাকে Standing ovation.Hats off!

মহসীন রেজা

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

:-) @Mohsin Reza