রাব্বি যখন ফিরল লোপা আড়চোখে লক্ষ করল রাব্বির হাত খালি। ক্ষীণ আশা ছিল, লোপার জন্য নিজ থেকে বই কিনে নিয়ে আসবে। পরক্ষণেই নিজের ভুল বুঝতে পারল। কী বোকা ও, রাব্বি যদি বই কেনার কথা ভাবত তাহলে অন্তত ফোন করে কি বই লাগবে জানার চেষ্টা করত। বই তো আর আলু-পটল না যে দুম করে একটা কিছু কিনে নিয়ে আসলাম। আসলে মানুষটার ন্যূনতম চেষ্টাও নেই, নেই খানিক অনুতাপও। মানুষটাকে প্রায়শ রোবট-রোবট মনে হয়!
জিজ্ঞেস করলে বলবে না তাই লোপা জিজ্ঞেস করল না। রাব্বির এটা বড়ো বিশ্রি অভ্যাস! ওর ইচ্ছা না-করলে কোন প্রশ্ন করলে উত্তর দেবে না। রাব্বির মতোই তার আচরণও দুর্বোধ্য কিন্তু কোন এক কারণে আজ রাব্বির মনটা ফুরফুরে।
লোপা বলল হতাশা লুকিয়ে, ভাত দেব, নাকি চা খাবে?
নাহ, একটু পর ভাত দিয়ে দাও। আজ প্রচুর চা খাওয়া হয়েছে।
তোমাদের মিটিং শেষ হলো ক-টায়?
আর বলো না, এই সৈয়দ মাদারচোদের যন্ত্রণায় আমি পাগল হয়ে যাব। একটা শেষ হলে আরেকটা মিটিং-এর এজেন্ডা ধরিয়ে দেয়।
প্লিজ রাব্বি, মুখ খারাপ করবে না।
কেন, এটা কী মসজিদ নাকি?
মসজিদ-মন্দিরের কথা আসছে কেন। প্লিজ, মুখ খারাপ করবে না। শুনতে বাল লাগে না!
লোপা বুঝতে পারছে রাব্বি খানিকটা ক্ষুব্ধ হয়েছে। এ সামান্য কথাও ধরে বসে থাকে। তখন লোপার হয় বিপদ, রাব্বি কথা বলা বন্ধ করে দেয়। কী কষ্ট, আগ বাড়িয়ে রাব্বির সঙ্গে সেধে সেধে কথা বলতে হয়। রাব্বি কখন ক্ষুব্ধ হলো এটা লোপাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ রাখতে হয়, কী অন্যায় আচরণ! কিন্তু আজকাল রাব্বির মুখ এমন খারাপ হয়েছে কেন? যখন-তখন মুখ খারাপ করে। ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার পরও একে লজ্জিত হতে দেখা যায় না।
লোপা কথা ঘুরাবার জন্য বলল, আচ্ছা রাব্বি, গরুর পছন্দের রঙ কী?
হুম।
আহা, বলো না।
হুম।
আহা, বলোই না ছাই। আসলে পারবে না তো ঘন্টা!
হুম।
বলো না, প্লিজ।
লোপা, এটা একটা ফালতু প্রশ্ন, এর কোন উত্তর নাই।
উহুঁ, ফালতু না। গরুর পছন্দের রঙ সবুজ।
ধুর, সবুজ কেন? বোগাস!
আরে, ঘাসের রঙ সবুজ না!
আচ্ছা, তাইলে হলুদ না কেন?
লোপা অবাক, হলুদ হবে কেন?
তুমি বল?
পারলাম না, রাব্বি।
হলুদ এই জন্য, গরু খড়ও তো খায়।
তাই তো, তোমার দেখি অনেক বুদ্ধি।
এটাকে কি কমপ্লিমেন্টস হিসাবে নেব?
অবশ্যই।
রাব্বি ঠোঁট উল্টে বলল, ছ্যাহ বুদ্ধি, বুদ্ধিওয়ালি। গরু কালার ব্লাইন্ড-রঙকানা।
যাহ।
সত্যি।
ঠিক বলছ?
অবশ্যই।
রাব্বি, আমার মনে হয় তোমার এই তথ্যটা ঠিক না।
কেন?
কেন কি আবার। মনে হলো তাই।
লোপা, তোমার মনে হলে তো হবে না।
উহুঁ, এভাবে বললে তো হবে না। লাগবা বাজি?
কি বাজি?
তুমি হারলে যমুনা রিসোর্টে নিয়া যাবা।
রাব্বি মনখারাপ করা শ্বাস ফেলে বলল, নাহ, অফিসের ঝামেলা বেরুনো যাবে না।
নিমিষেই লোপার চোখ জলে ভরে গেল। বিয়ের ৮ বছর হল, এখনও রাব্বির সঙ্গে তেমন কোথাও যাওয়া হয়নি। ওর একটা-না-একটা ঝামেলা লেগেই থাকে। আজ এটা তো কাল ওটা।
রাব্বি বলল, কি হল?
কিছু না।
এতক্ষণ তো বেশ কথা বলছিলে!
ভাল লাগছে না কথা বলতে।
আহা, কি হয়েছে বলবে তো!
কিছু না।
লোপার কথা বলার ইচ্ছেটাই উবে গেছে।
রাব্বি সম্ভবত বিষয়টা লক্ষ করেনি। ও কখনও লক্ষ করে না। আজকাল লোপা ওর এইসব আচরণ সহ্য করতে পারে না। কীসের একটা চাকরি! ছাতার মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানি, সেই সাত-সকালে বেরিয়ে ফিরতে ফিরতে রাত। পরদিন আবার একই। বেছে বেছে ছুটির দিনে মিটিং, এর কোন মানে হয়! ওর কাছে স্রেফ আধুনিক দাসবৃত্তি মনে হয়! আদিম দাসবৃত্তিটাকেই আধুনিক মানুষ ঘষেমেজে আজ এমনটা দাঁড় করিয়েছে। মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দেশে অজস্র রোবট নামের দাস তৈরি করছে। স্রেফ দাস- একেকটা চলমান রোবট। এর পরিণতি যে কী ভয়াবহ এটা কেউ লক্ষ করছে না কেন?
সহায়ক লিংক:
১. জীবনটাই যখন নিলামে: http://tinyurl.com/2522ss6
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Thursday, October 14, 2010
জীবনটাই যখন নিলামে: ৫
বিভাগ
জীবনটাই যখন নিলামে
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment