Search

Friday, July 23, 2010

হক-কথা এবং ভাসানী: ১

মওলানা ভাসানী [১] নামের মানুষটা যে কী সহজ-সরল জীবন-যাপন করতেন তা এই ছবিটা দেখে সহজেই অনুমান করা যায়। তৈজসপত্র, রান্নার আয়োজনের নমুনা...।

অনেকে এই মানুষটাকে গুরুত্ব দিতে চান না কারণ মানুষটার মধ্যে নাকি তথাকথিত নেতাসুলভ ক্যারিশমা নাই, ছিল না নাকি (এটা আমাদের বিশেষ একটা দলের পান্ডাদের কথা, না-হক কথা)! আরে, থাকবে কেমন করে রে ব্যাটা? যে মানুষটা স্ত্রী অসুস্থ বলে চোঙ্গা ফুঁকে ফুঁকে রান্না করেন তার মধ্যে সেই জৌলুশ, দবদবা কই!
তাই মিডিয়ায়ও তাঁকে নিয়ে মাতামাতি নাই [২]। ফাঁকতালে হুমায়ূন আহমেদের মতো মানুষ 'মাতাল হাওয়া' লিখে মাতলামি করেন [৩] মওলানা ভাসানীকে নিয়ে যা খুশী তাই লেখেন!

কিন্তু ব্রিটিশদের (১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের আগে বাংলা এবং আসামের ব্রিটিশ বিরোধী গণজাগরণ) যেমন নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন তেমনি পাক-জান্তাদের। তিনি বাংলাদেশ হওয়ার পরও কাউকে ছাড় দেননি। 'হক-কথা' নামে একটা সাপ্তাহিত প্রকাশ হতো যেটা ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ হয়। হক-কথার প্রকাশক ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। 'সংবিধানের ভারত সফর'' ৩০ জুন, ১৯৭২ সালের 'হক-কথা' থেকে হুবহু তুলে দেয়া হলো: 

"সংবিধানের ভারত সফর
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দলিল আওয়ামী সরকার প্রণীত খসড়া সংবিধান বা শাসনতন্ত্র সম্প্রতি দিল্লী সফরে গেছে। 'শুভেচ্ছা' সফরে নয়- সংবিধানের এ সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুরব্বীদের কাছে আত্মপ্রকাশের অনুমতি প্রার্থনা।
আইন ও পার্লামেন্টারী দফতরের মন্ত্রী ডঃ কামাল হোসেন খসড়া শাসনতন্ত্র বহন করে নিয়ে গেছেন। দিল্লীতে ইন্দিরা কংগ্রেসের বিশেষজ্ঞরা এখন এটি পরীক্ষা করে দেখছেন। ইতিপূর্বে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনাও 'ভারত সফর' করে স্বদেশে ফিরে এসেছে।

সংবিধান বা শাসনতন্ত্র একটি দেশের জনগণের, সেই দেশের সরকারের অধিকার ও ক্ষমতার একটি পবিত্র দলিল। রাষ্ট্রের জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকে এ দলিলে। সুতরাং শাসনতন্ত্রে কি হচ্ছে জনগণেরই তা জানার হক সর্বাগ্রে এবং ষোল আনা। কিন্তু স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে জনগণ এ হক থেকে যেন বঞ্চিত হচ্ছে।
সরকার খসড়া সংবিধান জনগণের নিকট প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কয়েকদিন আগেই। কিন্তু দিল্লীর মুরব্বীরা যদি রুষ্ঠ হন, তাই জনগণের নিকট প্রকাশ করার আগেই তা দিল্লীতে নিয়ে গেছেন আইনমন্ত্রী স্বয়ং। সেখানে তিনি সংবিধানের বিভিন্ন ধারা নিয়ে কংগ্রেসী নেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনাও করেছেন বলে খবর বেরিয়েছে।

সংবিধান প্রণীত হচ্ছে জনগণের জন্য, বাংলাদেশের জনগণের জন্য। দিল্লীতে আলোচনার আগে বাংলাদেশের ক'জন রাজনৈতিক নেতার সাথে বা সংবিধান বিশেষজ্ঞের সাথে সরকার আলাপ করেছেন? বর্তমান প্রেক্ষিতে জনগণের এ একটি অতি সঙ্গত জিজ্ঞাসা।
...
স্মরণ করা যেতে পারে বাংলাদেশের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনাও ইতিপূর্বে দিল্লীতেই আলোচিত এবং মূলতঃ বিবেচিত হয়েছে। ৫৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহনের খবর বাংলাদেশের রাজধানী থেকে প্রচার করা হয়নি- হয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লী থেকে। বলাবাহুল্য সে ক্ষেত্রেও একই বিব্রত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। 
আর তাই অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ঐ খবরের প্রতিবাদ করে বলেছিলেন যে, বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাংলাদেশেই প্রণীত হবে।। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু জনগণের প্রশ্ন তা দিল্লী গিয়েছিল কেমন করে এবং কেন? ইন্দিরা কংগ্রেসের অনুমতি প্রার্থনার মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিহিত নেই তো?"

ছবি-স্বত্ব: রশীদ তালুকদার

সহায়ক লিংক:
১. মওলানা ভাসানীর স্বাধীনতা ঘোষণা: http://www.ali-mahmed.com/2009/08/blog-post_372.html 
২. মিডিয়া: http://www.ali-mahmed.com/2009/11/blog-post_17.html 
৩. হুমায়ূন আহমেদের মাতলামি: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_6179.html

No comments: