একজনের অনুরোধে 'মার কাছে ফেরা' লেখাটা দিয়ে বিপদে পড়ে গেছি। আমার লেখাটার মূল উপজীব্য ছিল মা-দেশমা। এটাও বলার চেষ্টা করেছিলাম, এ গ্রহের সব মা-ই এক (এই মাটাও)।
একজন কঠিন একটা মেইল করেছেন, তবে মেইলটা ভালোবাসা দিয়ে ভাজা:
"আমি জানতে চাই এর মানে কি? আপনি কেন এইসব হাবিজাবি লেখা দেন? আমরা যারা প্রবাসে থাকি এই সব লেখা পড়লে আমাদের যে ভাংচুর-সমস্যা হয় এটা বোঝার ক্ষমতা আপনার নাই।...দেশে গিয়ে করবটা কি, ঘন্টা বাজাব?...পারবেন আপনি রুটি-রুজির নিশ্চয়তা দিতে।" আরও কিছু বিষয় আছে এখানে শেয়ার করতে চাচ্ছি না।
লে বাবা, মানুষটার কি ধারণা আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী? আর মানুষটাকে কেমন করে বোঝাই, এই লেখাগুলো যখন লিখি তখন আমার মনিটরে সমস্যা হয়, অক্ষরগুলো সব কেমন লেপ্টে যায়!
আর আমি চাইলে কি হয়, এই সব লেখা ভুলেও গুরুত্ব দেয়ার কিছু নাই। ছাপার অক্ষরের সব লেখা বিশ্বাস করতে নাই।
বাদ দেন, আপনার ক্ষোভের ক্ষতে এক আঁজলা জল, পুরনো একটা লেখা এখানে খানিকটা তুলে দেই:
আমরা যারা দেশে থাকি, আমাদের অনেকের বদ্ধমূল ধারণা থাকে, যারা প্রবাসে থাকেন তাঁদের চেয়ে সুখী আর কেউ এ গ্রহে নাই! আমরা মুখ ফুটে বলি না কিন্তু মনে মনে গোপন ইচ্ছাটা লালন করি, এঁরা যেন আজীবন প্রবাসেই থাকেন। রিয়াল ডলার-পাউন্ড হালের ইউরো স্রোতের মত দেশে পাঠাতে থাকবেন। দেশে ফেরার আবশ্যকতা কী!
খোদা না খাস্তা, কেউ যদি বলে বসেন দেশে ফেরার কথা চিন্তা করছি, নিমিষেই আমাদের মুখ শুকিয়ে আসে। বুকটা ধক করে উঠে! ঝপ করে মাথাটা ভার হয়ে যায়। আমরা ইনিয়ে-বিনিয়ে বলা শুরু করি, 'মাথা খারাপ হইছে তোমার, হে। দেশে আইসা কী করবা? এইটা একটা থাকার জায়গা হইলো! তোমাগো দেশের কুত্তা-বিলাইও এই দেশে মুতব না'।
আহ, তোমাগো দেশ...। কেউ প্রবাসে থাকলেই সেটা তার দেশ হয়ে যায়! কী সুন্দর করে আমরা লিখে দেই, আ,আ,ম,স ছলিমুল্লা, জাপান।
অবলীলায় বিস্মৃত হই এটা। আমরা যারা দেশে থাকি, প্রিয় মানুষের মুখ দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। কখনও বা সাদা-সাদা গরম-গরম ভাত দেখে আমাদের গা গুলায়। প্রবাসি একজনের কেবল ধোঁয়াওঠা ভাতের কল্পনা করেই চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। পাগলামী আর কী!
আহা, পানি চলে আসলেই হলো বুঝি, পুরুষ মানুষদের কী কাঁদতে আছে! তাই বলে কি কান্না থামে শা...। ঠিক সময়ে মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারাটাই হলো আসল কথা, মরদের কাজ।
একবার এক ঈদে প্রবাসি এক বন্ধুর অর্থহীন মেইল পেলাম, "খাওয়াতে পারিস এক চামচ সেমাই? আল্লার কসম তোকে ১০০০ হাজার ইউরো দেব...।"
দেখো দিকি কান্ড, এ আবার আল্লার কসম খায়, কোন দিন বসে মুততে দেখলাম না! ওরে ব্যাটা শুয়োরখেকো, তুই যে হরদম পর্ক-চপ খাস, গলায় আস্ত শুয়োর আটকে গেলে গলা ভেজাবার ছলে ভদকা গিলিস এটা বুঝি জানতে বাকি আছে আমাদের? আর তোর বালিশে যে লম্বা সোনালী, কালো চুল পাওয়া যায়? চালবাজ কাঁহিকা! কসম খাস আবার...!
তবে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না, আমার চোখ কী খানিকটা চকচক করেনি? ইশরে, ১০০০ ইউরো! বদলে এক চামচ সেমাই-ই তো চেয়েছে...। ক্যালকুলেটরে ১০০০ ইউরোর আঁক কষতে বসে যাই।
শুনতে পাই আজকাল বাইরের শপিং-মলগুলোয় নাকি সবই পাওয়া যায়। এইসবও তাহলে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে? বর্ষায় কাগজের নৌকা ভাসানো? নিজের হাতে লাগানো সেই গাছটা? পুকুরপাড়ে বসার সেই নোংরা জায়গাটা? বাতিল হয়ে যাওয়া সেইসব মায়াভরা মুখগুলো? এক সাথে বসে বিড়ি টানার সুখ?
সব পাওয়া যায়, এক চামচ সেমাই না পাওয়ার তো কোন কারণ দেখি না? তাহলে এ ১০০০ ইউরো দিতে চাচ্ছে, এর মানে কী! এ উম্মাদ, বদ্ধ উম্মাদ!
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Monday, March 22, 2010
ছাপার অক্ষরের সব কথা বিশ্বাস করতে নাই
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment