Search

Thursday, January 14, 2010

মিটিং-মেটিং কমালেই সবার মঙ্গল

সকাল-সকাল মেজাজ তিরিক্ষি। কিছু লোকজন এসেছেন। এরা নাকি একটা কমিটি করবেন। জানলাম, এই কমিটির আবার পদের অভাব নাই, আহ্বায়ক নামের একটা জিনিসও নাকি আছে! আচ্ছা, আহ্বয়াকের কাজ কি আহ্বান করা? মোয়াজ্জিন টাইপের কিছু নাকি?
আমার কাছে এসেছেন এদের সঙ্গে থাকার জন্য। আমি মনে মনে অবাক, অরি আল্লা, আমি এতো কাজের লোক হলাম কবে থেকে, টেরটিও পেলুম না? আজকাল লোকজনের মিটিং নামের জিনিসে আমার প্রয়োজন অনুভব হচ্ছে? লজ্জা-লজ্জা!

ঘটনা কি জানার আগ্রহ
। ঘটনা গুরুতর। এঁরা দেশ উদ্ধার করতে চান- ইনারা শীতবস্ত্র বিতরণ করবেন। আহা, করেন না, আটকাচ্ছে কে (আমি নিষেধ করেছি নাকি)!
এত্তো সোজা না, এই নিয়ে একটা কমিটি করা হবে। বিভিন্ন পদে বিভিন্ন লোকজন থাকবেন। এদের ভাষায় রেজ্যুলেশন হাউজ থেকে পাশ হবে। আমি হিসাব করে দেখলাম এতে কয়েক দিন চলে যাবে। ওই মিটিং-এ পদের জটিলতা শেষ হলে আরেকটা মিটিং-এ সবাই একত্রিত হবেন। তারপর বাড়ি-বাড়ি গিয়ে শীতবস্ত্র যোগাড় করা হবে। সেগুলো বাছাই করার জন্য আবার কিছু লোকজন থাকবেন, তালিকা করা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আরও কি কি বলেছিলেন মনে নাই।
অতঃপর কোন একটা দিনক্ষণ দেখিয়া মাইকিং করা হইবে। তাহার পর এই সব শীতবস্ত্র বিতরণ করা হইবেক।

কী বিচিত্র, এটা শীতের শুরুতে কিন্তু তাদের মনে হবে না, হঠাৎ করেই মনে হবে। যেন শীত জীবনে একবারই আসে। আমাদের সরকার বাহাদুরের আমলারাদের এখন দেখছি জনে জনে ঢাকায় নোট পাঠাতে শুরু করেছেন শীতবস্ত্র চেয়ে। বেশ-বেশ, ইহাদের শীতবস্ত্র আসিতে আসিতে শীতবস্ত্র থাকিবে কিন্তু হাভাতে আর মানুষ থাকিবে না।

এদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিতে পারলে আরাম পেতাম। আফসোস, আমি কিছু নিয়ম মেনে চলি তার একটা হচ্ছে, বাসায় কেউ আসলে তার সঙ্গে অশোভন আচরণ না-করার চেষ্টা করা। কিন্তু তাই বলে মনে মনে চু...ভাই বলতে তো কোন সমস্যা নাই। এটা বলতেও তো সমস্যা নাই, তোমাদের মিটিং তোমাদের পশ্চাদদেশে নিয়ে বসে থাকো। গীনসবার্গের কথা খানিকটা ধার করে বলতে ইচ্ছা করছিল, গো ফাক ইয়োরসেলফ উইথ গরমকাপড়।
আসলে এইসব মিটিং নামের জিনিস আমাদের রক্তে ঢুকে গেছে- ঢোল না পিটিয়ে আমরা কোন কাজ করতে পারি না। ওই আসে মহাপুরুষ-এ-এ-এ...। বাদ্য বাজাও।

এই চু...ভাইদের কে বোঝাবে এতো যন্ত্রণার কোন প্রয়োজন নাই। পুরনো কাপড়ের গাঁইট কিনলে একটা কাপড়ের দাম পড়ে ৫ টাকা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। ১০০ টাকায় অন্তত ২০জনকে কাপড় দেয়া সম্ভব। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে জনে জনে বেরিয়ে পড়লেই হয়। এর জন্য মহাপুরুষ দূরের কথা পুরুষ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে মহিলার স্থলে পুরুষ হলে খানিকটা বাড়তি সুবিধা রাত-বিরাতে কাপড় বিলি করা সহজ।

এইসব চু...ভাইদের সমস্যা আছে। হর্স-মাউথের মত খালি কথা আর কথা। গুলি করার আগেও বকতে থাকবে ওয়ান, টু, থ্রি...টেন! আমি নিশ্চিত এই সব মানুষরাই বলে, 'আমার মারে আরেকটা খারাপ কথা কয়া দেখ, এক্কেরে শ্যাষ কইরা ফালামু'। আরেকটা খারাপ কথা! আরেকটা খারাপ কথা মানে কি রে চু...ভাই? মাকে আরেকটা খারাপ কথা বলতে হবে কেন? একবার বলার পরই তো ওই মানুষটার লাশ পড়ে যাওয়ার কথা।

আমাদের সমস্যা হচ্ছে, হঠাৎ হঠাৎ আমাদের মনে পড়ে যায়, ক্ষিধের মত জোশ চাগিয়ে উঠে। শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামানের হঠাৎ মনে পড়ে তিনি একজন শিক্ষক ছিলেন, তাঁর কাজের ছেলেকে শিক্ষিত করা প্রয়োজন। হঠাৎ করেই আমাদের মনে পড়ে, একদিন বাঙ্গালি ছিলাম রে। ব্যস, পহেলা বৈশাখে পান্তাভা খাওয়ার নাটক করতে হবে রে-এ-এ। এংরাজি পড়ুয়া সন্তান বলে
ফট করে বসবে, মম, এটা কি বোংলা।
এই দেশের সেরা সন্তান-মুক্তিযোদ্ধাদের কথাও আমাদের হঠাৎ করে মনে পড়ে, বিশেষ একটা মাসে। তখন কোনটা চোখের জল, কোনটা নাকের এটা আলাদা করার জন্য বৈদেশ থেকে যন্ত্র আমদানি করার আবশ্যকতা দেখা দেয়।
লেখক আল মাহমুদেরও হঠাৎ মনে পড়ে যায় তিনিও একদা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন! কত্তো কত্তো জিনিস যে আমাদের হঠাৎ মনে পড়ে তার ইয়াত্তা নাই। যেমন আমাদের সরকার বাহাদুরের ছানা-পোনাদের হঠাৎ মনে পড়েছে শীতবস্ত্র প্রয়োজন। জীবনে একবারই যে শীত আসিল রে!

আমি কোথাও বলেছিলাম, "একজন ভাল লেখক, একজন ভাল রাজনীতিবিদ, একজন ভাল শিক্ষাবিদ, একজন ভাল ম্যানেজার মানেই একজন ভাল মানুষ না"।

No comments: