![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjE0bcQocyjSehXq0I0G-aQCiFHC-LcdDWHqeUQVffO81jfuXLW4qkFkvWeJPITluUEdge2tmupfc58ehEV67qpaWY8gzlroaqu_T1eMfpfQlIjIMt8mr_pnWm3-mjqYDEvJt9lkCMSj3U/s320/sofa-nasir.jpg)
ছফাই ব্যতিক্রম! তিনি কারও তদ্বিরের জোরে তাঁকে যেন বাংলা একাডেমির পুরস্কার দেয়া না হয় এ জন্য কম ধুন্ধুমার কান্ড করেননি।
তৎকালিন বাংলা একাডেমির মহা-পরিচালককে ফোন করে বলেছিলেন, "...আমাকে নির্বাচিত করার যোগ্যতা যেদিন হবে সেদিন আমি পুরস্কার এমনি পেয়ে যাব। কারও তদ্বিরে নয়। হুমায়ূন (হুমায়ূন আহমেদ) যদি তদ্বিরের মাধ্যমে (আমার জন্য) পুরস্কার আদায় করতে সক্ষম হয় তো, আমি বলছি, উক্ত পুরস্কার আপনার মাথায় ভাঙব।"
হুমায়ূন আহমেদকে এ জন্য হাতজোড় করে ক্ষমা পর্যন্ত চাইতে হয়েছিল।
ছফার মৃত্যুর পর হুমায়ূন আহমেদ ভোরের কাগজে লিখেছিলেন, "...ছফা ভাই আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং কঠিন গলায় বললেন, আপনার কি ধারণা, পুরস্কার (বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রসঙ্গে) প্রতি আমার কোন মোহ আছে?
আমি বললাম, না।
তাহলে কেন আমার জন্য নানান জনের কাছে সুপারিশ করে আমাকে ছোট করলেন। আমার কোনো ব্যাপারে আপনি কখনই কারও কাছে সুপারিশ করবেন না।
(আমি বললাম) জ্বি আচ্ছা, করব না।
আপনি হাত জোড় করে আমার কাছে ক্ষমা চান।
আমি হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলাম।"
আহমদ ছফা মোহাম্মদ আমীনকে কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, "একাডেমি জানে, পুরস্কার আমি কাউন্সিলরদের মাথায় এবং সভাপতির মুখে ছুঁড়ে দিয়ে বলব, তোমরা যা সম্মানের ভাবো, তা আমার কাছে আধুলি। ভিক্ষুকের কাছে আধুলির মূল্য অনেক বেশি, আমি আধুলি না, গোলাপ চাই...।"
বাংলা একাডেমি নিয়ে ছফার তীব্র ক্ষোভ ছিল। আমি তাঁর ক্ষোভকে যথার্থ মনে করি। বাংলা একাডেমির প্রতি তাঁর মন্তব্যে খানিকটা আঁচ করা যাবে। "বাংলা একাডেমিতে মযহারুল ইসলামের মত কুখ্যাত লোক পর্যন্ত ডাইরেক্টর জেনারেল হয়ে গেল। আমরা কলকাতায় থাকাকালে (মুক্তিযুদ্ধের সময়) একটি পত্রিকায় তার অপকর্মের প্রতিবাদ করেছিলাম। দেশে এসে দেখি তিনি বাংলা একাডেমির ডাইরেক্টর জেনারেল, ওয়াল্লা!"
আমি ছফার ক্ষোভকে যথার্থ মনে করি। বাংলা একাডেমি অভিধান এবং কিছু গ্রন্থ প্রকাশ করা ব্যতীত এই সুদীর্ঘ বছরে কাজের কাজ কিছুই করেননি এঁরা। অবশ্য ফি-বছর বইমেলার আয়োজন ব্যতীত।
একেকজন চলমান জ্ঞানের ভান্ড! কাত করলেই গড়িয়ে যাবে।
একবার 'উত্তারাধিকার' নামে বাংলা একাডেমির ত্রৈমাসিক পত্রিকাটি যোগাড় করার জন্য ঢাকা যেতে হল। এই নিয়ে একজন উপ-পরিচালককে বিনীত ভঙ্গিতে বলেছিলাম, 'আপনার দেশব্যাপি এটা বিক্রি করার ব্যবস্থা করলে আমরা যারা ঢাকায় থাকি না, তাদের সুবিধা হয়।'
তিনি বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, 'এটা তো সবার জন্য না। যার দরকার হবে সে এখানে এসে যোগাড় করবে।'
অথচ আমি দেখেছি, একাডেমির গুদামে হাজার হাজার কপি অবহেলায় পড়ে আছে, উলু খাচ্ছে। পাঠক হিসাবে উলু, মন্দ না!'
বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলার উদ্বোধন করেন সরকার প্রধান। কেন করেন? এটা আমার মোটা-মাথায় ঢোকে না। একজন প্রবীন বিশিষ্ট সাহিত্যিক করলে, কী হয়?
তো, এই বিষয়ে গত হাসিনার সরকার আমলে, বাংলা একাডেমির মহা-পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি পত্রিকাটিকে উত্তর দিয়েছিলেন, "তিনি একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক এই কারণে তিনি উদ্বোধন করছেন।"
এমন জ্ঞানের ভান্ড একাডেমির মহা-পরিচালক হলে, এই একাডেমির যোগ্যতা সহজেই অনুমেয়।
রাজনীতিবিদদের কথা নাহয় বাদ দিলাম। এবারের কেয়ার-টেকার সরকার বাহাদুর কী করেছেন? ফখরুদ্দিন সাহেব লম্বা একটা পাঞ্জাবি লাগিয়ে বইমেলা উদ্বোধন করেছেন। অথচ তাঁর একটা চমৎকার সুযোগ ছিল, একটা অসাধারণ উদাহরণ সৃষ্টি করা।
ছফা তার সমস্ত জীবনে নিজের জন্য কারও কাছে কিছু চাননি কিন্তু কারও উপকার হবে এমনটা মনে করলে কাতরতা দেখাতে, নিজেকে ছোট করতে কার্পণ্য করতেন না। কিন্তু তাকে দিয়ে কোন অনায্য কাজ করানো যেত না। যে মোহাম্মদ আমীন ১১ বছর ছফার সহচর্যে ছিলেন। একই সঙ্গে একই বাড়ি থেকেছেন, খেয়েছেন। সেই মোহাম্মদ আমীন বলেন, 'আমি জানতাম, হাসনাত আবদুল হাইয়ের সঙ্গে আহমদ ছফার ভাল জানা-শোনা আছে। হাসনাত সাহেব তখন ভূমি সচিব'।
"আহমদ ছফাকে বললাম, আমাকে ঢাকা জেলার কোন থানায় পোস্টিং দিতে আপনার বন্ধু হাসনাত স্যারকে একটু বলুন না।
আহমদ ছফা ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, নো, দিস উজ ব্যাড প্র্যাকটিস। তুমি আমলা হয়ে গেছ, আসল আমলা। বুঝতে পারছ কি, তুমি যে আমার কাছ থেকে দূরে সরে গেলে?
প্রচন্ড লজ্জা পেলেও আমি হাল ছেড়ে দিলাম না। ঢাকা কিংবা আশেপাশে আমার থাকা প্রয়োজন, নেসেসিটি নোজ নো ল।
আমি বললাম, আপনি তো অনেকের জন্য সুপারিশ করেন।
ছফা বললেন, যাদের জন্য সুপারিশ করি তাদের কষ্ট আমার লজ্জা পাওয়ার কষ্ট থেকে বেশি থাকে। তোমার জন্য সুপারিশ না করলে তোমার যে কষ্ট হবে, করলে আমার তার চেয়ে অধিক কষ্ট হবে। কারণ তোমার চাহিদাটা অত্যাবশ্যক না, জৌলুশ মাত্র। আর আমি যাদের জন্য করি তাদেরটা অত্যাবশ্যক।"
পশ্চিম বাংলার সাহিত্যর পাশে বাংলাদেশের সাহিত্যকে মাথা উঁচু করে দাড় করানোর প্রয়াসীদের মধ্যে আহমদ ছফা প্রথম! ১৯৯৪ সালে বুকে পোস্টার ঝুলিয়ে বাংলাদেশে আনন্দ বাজারের বই আমদানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন।
স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে আসা কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিলেন। যেখানে সবাই কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের পায়ে তাদের কলম সমর্পন করেছিলেন।
এই হচ্ছেন ছফা!
*বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বড় বাক্য ছফার। শিল্পী সুলতানকে বর্ণনা করতে গিয়ে প্রায় আধ-পৃষ্ঠা ব্যাপি দীর্ঘ বাক্যটি রচনা করেছিলেন। বাক্যটা খুঁজছি। কোথাও পাচ্ছি না।
**ছবিঋণ: নাসির আলী মামুন।
2 comments:
শেখ মুহাম্মদ (এস.এম.) সুলতানের আঁকা গুরুভার নিতম্ব বিশিষ্টা পীনস্তনী এসকল চমৎকার স্বাস্থ্যবতী কর্মিষ্ঠা লীলাচঞ্চলা নারী, স্পর্ধিত অথচ নমনীয় সর্বক্ষন সৃজনলীলায় মত্ত, অহল্যা পৃথিবীর প্রান জাগানিয়া এসকল সুঠামকান্তি কিষাণ, এসকল সুন্দর সূর্যোদয়, সুন্দর সূর্যাস্ত, রাজহাঁসের পাখনার মতো নরোম তুলতুলে এসকল শুভ্র শান্ত ভোর, হিঙুল বরণ মেঘ-মেঘালীর অজস্র সম্ভার, প্রসারিত উদার আকাশ, অবারিত মাঠ গগণ ললাট, তালতমাল বৃক্ষরাজির সারি, দীঘল বাঁকের নদীতীরের এসকল দৃষ্টিশোভন চর, মাঠের পরে মাঠে থরে থরে ঢেউ খেলানো সোনার ধান, কলা পাতার ফাঁকে ফাঁকে জোনাকজ্বলা এমন আটচালা, এসকল আহ্লাদী বাছুর এবং পরিণত বয়স্ক গবাদি পশু, সর্বোপরি গোটা জনপদের জনজীবনে প্রসারিত উৎপাদন শৃংখলে আবদ্ধ সভ্যতার অভিযাত্রী অজেয় মানুষ, তারা যেন দৈনন্দীন জীবন স্রোতে কেলিকলারসে যুগ থেকে যুগান্তর পেরিয়ে অনন্তের পথে ভেসে যাচ্ছে, ক্যানভাসে তাদের প্রত্যয়দীপ্ত বলিষ্ঠ উপস্থিতি, স্বচ্ছন্দ ঋজু গতিভঙ্গিমা এমনভাবে বাঁধা পড়েছে, মনে হবে সমস্ত নিসর্গ দৃশ্য ছাপিয়ে মেঘেতে ঠেকেছে তাদের মস্তক এবং পাতালে প্রবিষ্ঠ হয়েছে মূল, তাদের শ্রম-ঘামের ঝঙ্কার, চেষ্টার সঙ্গীত সমস্ত প্রাকৃতিক কোলাহোল ভেদ করে আকাশগঙ্গার কিনারে কিনারে ছলাৎ ছলাৎ ধ্বনিতে একসঙ্গে ফেটে পড়েছে।
(বাংলার চিত্র ঐতিহ্যঃ সুলতানের সাধনা)
এই বাক্যটির কথা বলেছেন কি?
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
"বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বড় বাক্য ছফার। শিল্পী সুলতানকে বর্ণনা করতে গিয়ে প্রায় আধ-পৃষ্ঠা ব্যাপি দীর্ঘ বাক্যটি রচনা করেছিলেন।"
এই বাক্যটাই কি না আমি ঠিক জানি না। সম্ভবত এটাই। এই প্রশ্নটা করেছিলেন মোহাম্মদ আমীন, ছফাকে নিয়ে তাঁর লেখা বইয়ে। কিন্তু তিনি আর বিস্তারিত লেখেননি।
আবারও ধন্যবাদ আপনাকে @তায়েফ
Post a Comment