আমার লেখালেখি বন্ধ ছিল লম্বা একটা সময়। অনেকদিন হলো সব ছেড়েছুড়ে চলে এসেছিলাম। কারণ তুচ্ছসব, প্রদীপের চকচকে আলোয় বনিবনা হচ্ছিল না, আমি ঠিক ওই জগতটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। এটা লেখা যাবে না, ওটা লেখা যাবে না- ফরমায়েশী লেখা লেখো। ফরমায়েশী লেখা হয়তো বিখ্যাত মানুষরা লিখতে পারেন- আমার দ্বারা ও কম্ম হয় না।
এখনই যদি আমাকে বলা হয়, নির্দিষ্ট একটা বিষয়ে লিখতে- এক লাইনও লিখতে পারব না। তাছাড়া আমার এক সময় মনে হলো, ধুর, লেখালেখি করে কী হবে- শুধু শুধু আবর্জনা বাড়িয়ে লাভ কী!
আজ আর ওই সোনালী, ধুসর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবি না, অবলীলায় সব ছেড়ে আসতে পেরেছিলাম। কারণ, আমার বড় মানুষ হওয়ার তেমন কোন উচ্চাশা ছিল না- ইস রে, এখন পর্যন্ত মানুষই হতে পারলাম না! আমার স্বপ্ন, চাওয়া খুব অল্প- সিম্পল খাবার, সিম্পল পোশাক- চলে যায়, সমস্যা হয় না।
এমনিতে গড়িয়ে যাওয়া পানিকে কে আটকাতে পেরেছে? পাখি ওড়ে যায় রেখে যায় পালক, মানুষ চলে যায় থেকে যায় স্মৃতি!
অনেকের কাছে বড্ড বাড়াবাড়ি হবে এটা শুনে, আমাকে যদি কেউ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশের নাগরিত্ব দেয়া হয়, নিশ্চিন্ত জীবন দেয়া হয় তবুও আমি দেশ ছেড়ে যাব না, কচ্ছপের মতো শেষ সময় পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থাকব! দেশের প্রতি ভালোবাসা-টাসা এসব জটিল কথা বুঝি না; আমি কুয়ার ব্যাঙ, কুয়াটাই আমার বড়ো প্রিয়। কে জানে, হয়তো আমার জেনেটিক কোডে কিছু সমস্যা আছে, সৃষ্টিকর্তা যখন বানাচ্ছিলেন তখন কোন বিচিত্র কারণে তাঁর তাড়া ছিল, নইলে তিনি ভেকেশনে ছিলেন ! জইতুনের তেল নাকে দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন না এই দিব্যিই বা কে দিয়েছে!
আরেকটা মজার কথা শেয়ার করি। আমি একটা ওয়েবসাইটে শুভ নামে দীর্ঘ ১ বছর লিখেছিলাম। ওখানে আমার প্রোফাইলে বয়স দেই নাই কিন্ত কিভাবে কিভাবে জানি ওই সাইটের অনেকের ধারণা হয়ে গিয়েছিল- শুভ নামের যে ব্লগার, এর বয়স খুব অল্প, পুতুপুত-আলাভোলা টাইপের একটা বালক। কী জানি, হয়তো আমার আচরণে বালকসুলভ কিছু ঝামেলা ছিল! এঁরা বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন, আমি খুব এনজয় করতাম। কারণ এর সঙ্গে মিশে ছিল নিখাদ ভালোবাসা। ভালবাসা তো পাগলও বোঝে! আমি হাসতাম। ভাগ্যিস, এরা আমার হাসিটা দেখতে পেতেন না।
আমি যখন ছাপার অক্ষরে লেখালেখি করতাম, অন্য জায়গায়, তখন পাঠকদের প্রতিক্রিয়া জানতে পারতাম না। কেউ হয়তো দয়া করে বলতেন, আরে তোমার তো একটা চিঠি আসছিল। দাঁড়াও খুঁজে দেখি; বলে তিনি ট্রাশ ক্যান হাতানো শুরু করতেন। আবধারিতভাবে, ওই চিঠি আর খুঁজে পাওয়া যেত না। একটা চিঠি, একটা মন্তব্য যে কী অমূল্য এইসব ছাগলমানবরা কি করে বুঝবে। কিন্ত ওই ওয়েবসাইটে; ওখানে যেটা হত, লেখা পোস্ট করলেই একজন সঙ্গে সঙ্গে তার ভালোলাগা মন্দলাগা জানাতে পারতেন- অনেকটা টিভি নাটক আর মঞ্চ নাটকের মধ্যে পার্থক্যর মতো!
ওই সময় আমার বাংলা টাইপ খুব স্লো ছিল, এক আঙ্গুলে টাইপ করতাম! কিন্ত অনেকদিন এমন গেছে টাইপ করতে করতে ভোর হয়ে গেছে। ক্লান্তি আমায় ছুঁতে পারেনি, অনাবিল ভালোলাগা নিয়ে শুতে গেছি। ওখানে কেটেছে আমার সোনালী সময়- একেকটা মন্তব্য আমার কাছে মনে হতো একটা স্পর্শ !
আমার চেষ্টা থাকত, লেখার সূত্রগুলো নির্ভূল দেয়ার জন্যে। তারপরও একবার ভয়াবহ একটা ভুল হয়ে গেল- মুক্তিযুদ্ধের একটা ছবির জায়গায় অন্য একটা ছবি চলে গেল। আমি ভুল স্বীকার করে পোস্ট লিখেছিলাম। কিন্ত আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম, বুড়া শিয়াল যখন ফাঁদে পড়ে তখন মৃত্যু ভয়ের থেকে বেশী থাকে ফাঁদে পড়ার লজ্জা!
লিখতাম হাবিজাবি অনেক কিছু- লেখার কোন আগামাথা ছিল না! আমার পড়ার যেমন কোন ঠিক-ঠিকানা নাই, তেমনি নাই লেখারও। নাই গান শোনারও- রকওয়েলের নাইফ যেমন আলোড়িত করে, তেমনি মনটা অন্য রকম হয়ে যায় মমতাজের বুকটা ফাইটা যায় শুনে। যার কাছেই এটা বলেছি, তিনি ছি-ছি ছাড়া আর কোন শব্দ উচ্চারন করেননি। কী করব? ভালোলাগা, এটা তো আর আমার হাতে নাই! আগেও এবং ওই ব্লগেও কিছু লেখা যখন টাইপ করেছি, আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। হয়তো আমার মধ্যে আবেগ বেশী, যেটা থাকে কেবল কুকুরমানবের মধ্যে! হোক, কুকুরমানবই সই! আমি কুকুরমানব, কোন অসুবিধা?
ওই সাইটে আমি আরেকটা জিনিস লক্ষ করেছিলাম, অধিকাংশদের মধ্যেই সহিষ্ণুতা বড়ো অভাব- অন্যকে সহ্য করার প্রবণতা অল্প। কেউ ধর্ম নিয়ে লিখলেন তো সঙ্গে সঙ্গে কেউ ঝাপিয়ে পড়লেন। কেউ ধর্মের বিরুদ্ধে লিখলেন, ব্যস, ফালাফালা করে ফেলা হলো! যেন ধর্ম একটা কাঁচের বাসন- হাত থেকে পড়ল আর খানখান হয়ে গেল!
ওই সাইটে এসে আমি অনেক কিছুই শিখেছিলাম। অনেকের মনন-প্রতিভা দেখে আমি বিস্মিত হতাম। অনেকের লেখার হাত আমি ঈর্ষা করতাম! কিন্তু অনেকেই তাঁদের মনন অনায়াসে অপচয় করতেন। তখন মনে হয়, তিনি আমাদের প্রতি কী অবিচারই না করছেন- কেউ আত্মহত্যা করলে কার কি বলার আছে! এদের হাতে আছে লেজার গান অথচ গুলতি দিয়ে মারামারি করছেন।! আফসোস, বড়ই আফসোস!
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Friday, June 29, 2007
এলোমেলো কথা: ১
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
2 comments:
খুঁজে খুঁজে কেনো যে আপনার এই এলোমেলো কথা পড়তে গেলাম। মনটাই এলোমেলো লাগছে এই লেখা পড়ে...
আপনার কল্যাণে আমার নিজেরও অনেক কাল পরে লেখাটা পড়া হলো। দুম করে ফিরে গেলাম সোনালি অতীতে...@যাযাবর
Post a Comment