Search

Sunday, April 14, 2013

খবরের পেছনের খবর।

পূর্বেও আমি লিখেছিলাম, মিডিয়া আমাদেরকে যা খাওয়াবে আমরা তাই খাব, সানন্দেই খাব। আমাদের দেশের ১০টা প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া মিলে যদি ঠিক করে আজ আমরা দেশবাসীকে ইয়ে খাওয়াব, আমরা অজান্তে তাই খাব।
ছবি ঋণ: যায়যায়দিন
আগুন ধরাবার ভাল একটা ছবি কতটা আবেদন রাখে মিডিয়ার কাছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এবং আমি নিশ্চিত, কিছু ক্ষেত্রে তা ঘটে ফটোসাংবাদিকের ইন্ধনে। অন্তত এমন কিছু  ঘটনার কথা আমাদের জানা আছে। কিন্তু সেইসব খবরের পেছনের গল্পগুলো সামনে আসে না। আসে না সাজানো ফটোসেশনের গল্প!

যেমন আমরা সাংসদ ফারুকের উপর পুলিশের চড়াও হওয়াটা তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলাম, আমি নিজেও এ নিয়ে কঠিন এক লেখা লিখেছিলাম। কাজটা অতি কুৎসিত এতে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু আজ একটা ভিডিও দেখলাম, যেখানে সাংসদ ফারুক, তিনি যে কী উগ্র একজন মানুষ এবং তাঁর আচরণ কোনো প্রকারেই একজন সাংসদ দূরের কথা, বাজারের নেতারও শোভা পায় না! অন্তত একজন সভ্য মানুষের...।

এই সাংসদ ফারুকের মত প্রথম সারির নেতারা যখন হরতালে নিজ হাতে চলন্ত বাসে ঢিল ছোঁড়েন তখন তা আমরা খুব সমীহের দৃষ্টিতে দেখি। মিডিয়ায় ফটাফট ছবি ছাপা হয়, হরতাল সফল বলে দাবীও করা হয়। আমরা ...রা আবার এর নাম দিয়েছি পিকেটিং। এতে কার চোখ গেল, কোন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে পড়ল এটা জানার আগ্রহ আমাদের নাই। একজন গর্ভবতীর মার গর্ভ নষ্ট হলো এতেও আমাদের খুব-একটা কিছু যায় আসে না। আল্লার মাল আল্লা নিয়ে গেছে। কেবল মার সেই অদেখা শিশুটি নিভে যাওয়া চোখে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয়, এই-ই তাহলে গণতন্ত্র!


পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে চলন্ত গাড়িতে ঢিল ছোঁড়াটা গণতান্ত্রিক অধিকারে পড়ে বলে এমনটা অন্তত আমার জানা নাই। হয়ে থাকলেও সেই দেশটাকে আমি সভ্য বলতে নারাজ- সেটা সুইটজারল্যান্ড হোক বা কঙ্গো!
এটা মিডিয়ার কাছেও বছরের-পর-বছর ধরে খুবই প্রিয় একটা বিষয় ছিল, পিকেটিং। কিন্তু পিকেটিং-এ যখন মিডিয়ারই গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেয়া হয় তখন আর ভাল লাগে না। তখন মিডিয়াকর্মীর হাহাকারভরা ফেসবুক স্ট্যাটাসও প্রসব হয়, 'উহারা কী মানুষ'!

গতকাল স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি একজনের অপক্ষোয়। ওমা, ট্রেন ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়াকর্মীদের ছুটাছুটি শুরু হয়ে গেল। ঘটনা কী! ঘটনা অসামান্য। আজ থেকে রেল ট্রেনে নিরাপত্তা দেবে। ভাল তো, সমস্যা তো নেই।

ছবি ঋণ: প্রথম আলো, ১১ এপ্রিল ২০১৩
তো, এই নিরাপত্তা দেয়া নিয়ে এরা ফটোসেশন করবেন, অধিকাংশ মিডিয়াকর্মীকে খবর দিয়ে এনে জড়ো করা হয়েছে। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে ট্রেনের সামনে বুক চিতিয়ে পোজও দেয়া হলো। আমি হতভম্ব। পুরো বিষয়টার মধ্যেই এক ধরনের চালবাজি কাজ করছে এবং মিডিয়া জেনেশুনে এতে কেবল সায়ই দিচ্ছে না, অন্যায়টা উসকেও দিচ্ছে।

আমি অপেক্ষায় ছিলাম, হয়তো পত্রিকায় এই খবরটা ছাপা হবে না বা দায়সারা গোছের একটা খবর হবে। ওয়াল্লা, আজকের প্রথম আলোর প্রথম পাতায় দেখছি (অন্য এক স্টেশনের, চট্টগ্রাম) রেলে পুলিশ ভাইয়াদের নিয়ে বিশাল এক ছবি ছাপা হয়েছে। কালের কন্ঠও ছাপিয়েছে তবে পেছনের পাতায়। কিন্তু ছবির ভঙ্গি একই!


চট্টগ্রামে তোলা ওই ছবিটার ভঙ্গিটাই এমন, এই ছবিটা যে আয়োজন করে তোলা এটা অন্তত একটা বাচ্চারও বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা না। এটা দেখে আমার মনে পড়ে যাচ্ছে আগেকার দিনে মৃত বাঘের উপর পা রেখে ছবি উঠাবার একটা চল ছিল। পরে এলো, স্টুডিওতে টেলিফোন উঠিয়ে টেলিফোন করার পোজ, বা খানিক আধুনিক হলে গিটার নিয়ে। অন্য পত্রিকায়গুলো দেখার সুযোগ হয়নি, ওগুলোতেও এমন ছবি ছাপা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এটা যে আয়োজন করে উঠানো একটা ছবি এটা বোঝার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নাই। অতি হাস্যকর একটা ছবি! আর এই সমস্ত আবর্জনা-মার্কা ছবি রেলপুলিশের নিজেদের বের করা সাময়িকীতে থাকলেই খানিক মানানসই হত। যেগুলো মানুষ বিনে পয়সায়ও নিতে চায় না। চালু দৈনিকগুলোতে কেন!

ছবিটা দেখে আমাদের কী এমনটা মনে হচ্ছে না, ওটা একটা লোকোমোটিভ (প্রথম আলোর ভাষ্য মতে, ট্রেনের ইঞ্জিন) না, আস্ত একটা ট্যাংক। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে অস্ত্র হাতে যে দু-জন যে ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন, মনে হচ্ছে যুদ্ধের ময়দানে আছেন। ঘোর যুদ্ধ চলছে। চারদিকে কেবল গুলির শব্দ, ঠা-ঠা-ঠা।

এই দুই বাহাদুর দুম-দুম করে গুলি ছুঁড়ছেন। কাকে? ফটোসাংবাদিককে কি না, কে জানে! ভাগ্যিস, ছবিটা প্রথম আলোর কোনো ফটো সাংবাদিককে তোলেননি, নইলে তিনি মরলে আর বাঁচতেন না (কারণ ফটোসাংবাদিকের জায়গায় লেখা আছে, ছবি: প্রথম আলো)। প্রবল আশা, প্রথম আলো আসলে কোনো ফটোসাংবাদিকের নাম না। তাহলে? তাহলে আমরা যে এটাও বুঝে উঠতে পারি না ছবিটা কী এই অফিসের চাপরাসি উঠিয়েছেন নাকি সম্পাদক বাচ্চু ভাই নিজে?

ভাল কথা, আমার জানার খুব আগ্রহ, যেভাবে রেল-পুলিশ দাঁড়িয়ে আছেন, এরা কি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা বা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এভাবেই দাঁড়িয়ে  থাকবেন? আহা, ভাইজানেরা কী একবারও বসবেন না...

*প্রথম ছবিটা হচ্ছে এমন (যায়যায়দিন ২১.০৬.০৬): ধানমন্ডিতে কয়েকজন পিকেটাররা ঢিল ছোঁড়াছুঁড়ির পর্ব শেষ করে ফটোসেশন হচ্ছে।  

No comments: