এই মানুষটার নাম আমি জানি না, জানার আগ্রহও বোধ করি না। সবাই বলে 'জসীমের মা', আমিও বলি, 'জসীমের মা'। জসীমের মার খোঁজ পাওয়ার ইতিহাস খানিকটা বিচিত্র!
লোকজনকে একটা খাওয়াবার আয়োজন করা হয়েছিল। একটা হোটেল থেকে ভাত-মাংস প্যাকেট করে কয়েকজন কাঁধে করে বেরিয়ে পড়েছেন। বুদ্ধিটা হলো এই, একসঙ্গে অতি দ্রুত, ক্ষুধার্ত যাকে পাওয়া যাবে তাকেই দেয়া হবে।
কেমন কেমন করে যেন স্টেশনের বিচ্ছু বাহিনী টের পেয়ে গেল। এরা সবাই দল বেঁধে পিছু পিছু ঘুরতে লাগল। এদের ধমক-টমক দিয়েও লাভ হচ্ছে না, কঠিন চিজ! এরা এদের সমস্ত বুদ্ধির প্রয়োগ করা শুরু করল। প্রথমে বলল, 'ভাত খাওয়ান, আপনাদের লাইগ্যা মিছিল করুম'।
এরা এতে অভ্যস্ত কারণ এরা দেখেছে কেউ খাওয়ালে-টাওয়ালে তার পক্ষে 'অমুক ভাই জিন্দাবাদ' এই টাইপের মিছিল করতে হয়। এদের একের পর এক বুদ্ধি ফ্লপ করছে আর প্যাকেটের সংখ্যা কমে আসছে, শুকিয়ে আসছে এদের মুখ। যখন প্যাকেট মাত্র আর একটা তখন এদের আর বুদ্ধি চলে না। এবার সুর অনেকখানি নরোম, 'একটা প্যাকেটই দ্যান, আমরা সবাই ভাগ কইরা খামু'।
একজন চাচ্ছিলেন, প্যাকেটটা এদের হাতে ধরিয়ে দিতে।
এতক্ষণ আমি দূর থেকে এদের কান্ড-কারখানা দেখছিলাম। আমি নিষেধ করলাম কারণ একটা প্যাকেট বনাম পঁচিশ-ত্রিশজন বিচ্ছু বাহিনী! একটা রক্তারক্তি কান্ড হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। আমি এদের বললাম, 'না, এটা তোমাদের দেয়া যাবে না। তোমরা একজন অন্যজনের মাথা ফাটিয়ে ফেলবে'।
বিচ্ছু বাহিনীর নেতাগোছের একজন চটজলদি বলল, 'তাহলে দশ টাকা কইরা দেন, ভাত খামু'।
আমি অবাক, দশ টাকায় ভাত পাওয়া যায়! মুখে বললাম, 'কোথায় দশ টাকায় ভাত খাওয়ায়'?
এরা যে জায়গায় নিয়ে গেল সেখানে কেবল ভাত এবং ডাল দেয় তাও বেঁচে যাওয়া। এটা আমার পছন্দ হলো না। এরপরই এরা খোঁজ দেয় পনেরো টাকায় ভাত-মাছ পাওয়া যায়। মাছ, বাহ বেশ তো! যেখানে পাওয়া যায় সেটাই জসীমের মার দোকান। এরা এখানে কনুই ডুবিয়ে যে আরাম করে খেয়েছে এই স্মৃতি আমি ভুলব না! এই বিচ্ছু বাহিনীই পরবর্তীতে এই স্কুলের [১] ছাত্র। এদের দেখে এদের জন্য স্কুল করার ভাবনাটা আমার মাথায় আসে।
আজকাল অভ্যেস খারাপ হয়ে গেছে। এক ঢিলে কয়েকটা পাখি না-মারলে শান্তি লাগে না। ভালই তো, একেক দিন পঁচিশ-ত্রিশ-পয়ত্রিশজন করে খাচ্ছে। জসীমের মার মত যারা এখানে দোকান চালান তাঁদের ব্যবসা চাঙ্গা।
এখানেই আমি খোঁজ পাই বৃষ্টির মার [২]। জসীমের মার কাছে জানতে চাই ব্যবসার পুঁজির উৎস কি? সেই একই কাহিনী! কোন এক ডিমওয়ালার কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়েছেন। জসীমের মাকে অনেক বলে-কয়েও ৩০০ টাকার বেশি নিতে রাজি করানো গেল না। তাঁর চাহিদাই এই-ই! এটাই স্থির হয়, মাস শেষ হলে তিনি তাঁর সুবিধামতো টাকা স্কুলের শিক্ষকের কাছে জমা করবেন।
জসীমের মা মানুষটা বড়ো আলাভোলা টাইপের। আমি লক্ষ করেছি, পাঁচ-সাতজন একসঙ্গে বসলেই জসীমের মার সব এলোমেলো হয়ে যায়। হিসাব-টিসাব গুলিয়ে ফেলেন। অনেকে ফাঁকি দেয়, মানুষটার এই নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য নাই। কত বিচিত্র মানুষই না আছে এই গ্রহে!
সহায়ক লিংক:
১. বিচ্ছুদের স্কুল: http://tinyurl.com/327aky3
২. বৃষ্টির মা: http://www.ali-mahmed.com/2010/08/blog-post_31.html
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Tuesday, September 7, 2010
ন্যানো ক্রেডিট: ৮
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment