Search

Wednesday, July 13, 2022

James Webb Space Telescope!

আমার মত এক-চামুচ (চা’র চামচ) ঘিলুর লোকজনেরা কোন-এক বিশালত্ব বোঝাতে গিয়ে দু-দিকে দু-হাত ছড়িয়ে দেই। অকল্পনীয় বিশালতা বোঝাতে গিয়ে সেই ছড়ানো হাত আরেকটু পেছনে নিয়ে যাই। এই আমাদের দৌড়!

হালে একটা অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেছে। এই যে ছবিটা দেখছেন এর ব্যপকতা বোঝানো দুঁদে লোকজনের জন্যই অসম্ভব আর আমি তো প্রায় ঘিলুহীন এক-লোক। তবুও খানিকটা চেষ্টা করতে দোষ কী!

তো, অসাধারণ এই ছবিটা এটা মহাকাশের খুব অল্প একটা জায়গার ছবি। কেবল একটা গ্যালাক্সি ক্লাস্টার জোন! যেখানে অনেকগুলো গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ গুচ্ছাকারে রয়েছে। অধিকাংশ ছায়াপথই এখানে অনুপস্থিত! আদতে একই ফ্রেমে থাকা সম্ভবও না।

আচ্ছা, এই মহাবিশ্বে ৭০০/৮০০ কোটি মানুষের (জাঁক করে আমরা বলি, সৃষ্টির সেরা জীব) পৃথিবী নামের যে গ্রহ, এই মহাবিশ্বে এর জায়গা কতটুকু? এ তো আমরা সবাই জানি পৃথিবীর চেয়ে সূর্য হচ্ছে ১৩ লক্ষ গুণ বড়! (About 1.3 million Earths could fit inside the sun, according to NASA's statistics.)

কী অতিকায়, কী দানবীয়। একবার ভাবুন তো ১৩ লক্ষ পৃথিবী সূর্য নামের দানবটার পেটে অনায়াসে এঁটে যাবে।

অবশ্য প্রথম আলো নামের দৈনিকটি বলছে, সূর্য পৃথিবীর চেয়ে ৩ লক্ষ গুণ বড়। খুব বেশি না মাত্র ১০ লাখের পার্থক্য। মতি ভাই এবং আনিসুল হক গংদের উপর কথা নাই তবুও আমি নাসার ১৩ লক্ষ গুণ ধরেই কথা বলতে চাই।

এদিকে দেখুন, কেবল একটা গ্যালাক্সিতেই থাকে প্রায় ১ লক্ষ মিলিয়ন নক্ষত্র! আবার অধিকাংশই সূর্যের চেয়ে বড়! বেচারা সূর্য! এখানে এসে সূর্যকে মারাত্মক রকম অসম্মান করা হয়। তার নাম হয় অতি সাধারণ একটি হলুদ নক্ষত্র! দু-পয়সার দাম নাই! অথচ এই অসম্মানিত জিনিসটিই ১৩ লক্ষ পৃথিবীকে গিলে ঢেকুর তুলতে পারে।

যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। যে ছবিটা দেখছেন এটা ৪.৬ বিলিয়ন বা ৪৬০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের। এর মানে আমরা যেটা দেখছি এটা ৪৬০ কোটি বছর আগের। গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়, না? ঘুরিয়ে বললে আমরা ৪৬০ কোটি বছর পেছনে চলে গেছি। ওখান থেকে আমাদের এখানে আলো পৌঁছতে এই সময়ই লাগবে, আলোর গতিতে (আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল)

এটা আপনারা সবাই জানেন তবুও লেখা বাড়াবার জন্য লিখছি। এক্ষণ আমার গায়ে সূর্যের যে আলোটা  ঝলসে দিচ্ছে সেটা ৮ মিনিট ১৮ সেকেন্ড আগের। সুর্যের আলো আলোর গতিতে আমাদের এই গ্রহে ছুটে এলে এই সময়ই লাগবে। ধরা যাক, সূর্য বাবাজি রাগ করে দুম করে আলো পাঠানো বন্ধ করে দিলেই সব অন্ধকার হয়ে যাবে না। আমরা ৮ মিনিটের উপর সময় পাব।

এই ছবিতে অতি ক্ষুদ্র বিন্দু যেগুলো, সেগুলো হচ্ছে ১৩.৫ বিলিয়ন মানে ১৩৫০ কোটি বছর দূরের। ঘুরিয়ে বললে ১৩৫০ কোটি বছর আগের এই দৃশ্য আমরা দেখছি! আরেকটু পেছনে গেলেই আদি রূপটা দেখা সম্ভব (বলা হচ্ছে, মহাবিশ্বের প্রথম অবস্থা ১৩.৮ মানে ১৩৮০ কোটি বছর পূর্বে)। ভয়ে-ভয়ে বলি, কফি খেতে-খেতে দেখা যাবে বিগ-ব্যাং...।

এই যে ছবিটা আমরা এক শ্বাসে দেখে ফেলছি আক্ষরিক অর্থেই নাসার এই ছবিটা উঠাতে লেগেছে প্রায় ১ দিন! কেউ যদি বলে উঠেন, বাহে, এ আর এমন কী। বারান্দার কাপড় সরিয়ে একটা ভাল টেলিস্কোপ বারান্দায় পেতে দিলেই তো হয়। আহা, আপনার বারান্দায় সেই পরিবেশ কোথায়! যেটা দিয়ে এই ছবি তোলা হয়েছে James Webb Space Telescope বা JWST, এই টেলিস্কোপ রাখা আছে মহাশূন্যে। খরচ একটু বেশি পড়েছে, ১০ বিলিয়ন ইউ, এস ডলার! আর ওখানকার তাপমাত্রা? উইকি মতে, "The telescope must be kept extremely cold, below 50 k (-223 °C)".

এই ১ মিনিটের ভিডিওটা দেখলে খানিকটা বুঝতে সুবিধে হবে:

তথ্য ঋণ:

1. https://webbtelescope.org
2. https://www.nasa.gov 

3. https://www.space.com

...

* সবিনয়ে বলি, সমস্ত জীবনে আমি যে বই পড়েছি তা অনেকের কাছে ঈর্ষনীয় কিন্তু চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিয়ে ভাবি, এই গ্রহের লক্ষ-কোটি বই এখনও পড়া হয়নি তখন বুকের ভেতর থেকে একটা হাহাকার পাক খেয়ে উঠে, আহা, কিছুই তো জানলাম না, কিচ্ছু না-কিচ্ছু না। আহারে জ্ঞান, কী স্বল্প 'ছাতার' এক জ্ঞান!

'জ্ঞান' নামের ম্যারাথন এই দৌড়ে কবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছি সেটা জানলামই না অথচ ক্রমশ সময় ফুরিয়ে আসছে। মেঘে-মেঘে বেলা বয়ে যায়, মাঠে-মাঠে খেলা শেষ হয়ে যায়...। 

সেই অতি স্বল্প জ্ঞানের দোহাই দিয়ে বলি, এই লেখায় কোথাও কোন-প্রকারের অসঙ্গতি চোখে পড়লে জানালে কৃতজ্ঞ হই। 

1 comment:

Kukku said...

আহা, মধু। এমন সহজ করে লিখেছেন যে আমার মত বেকুবও বুঝে বসে আছে। এর দায় কে নেবে হাহা হা