Search

Tuesday, June 16, 2020

আমাদের বাংলার রুশো: মহামতি আব্দুন নূর তুষার

মহামতি আব্দুন নুর তুষার কেমন করে বাংলার রুশো হয়ে উঠলেন সেটা আপনাদেরকে পরে বলছি। আগের কাজ আগে। আমার মত সাধারণ মানুষদের মহামতি তুষারের ন্যায় আগের কাজ পরে, পরের কাজ আগে করলে তো চলবে না!‍
তো, 'কেমন করিয়া আমি ইহাকে (মহামতি তুষারকে) পাইলাম' -আমার ভাঙ্গা মনিটরে থইথই জ্যোৎস্নার মেঘ সরিয়ে-সরিয়ে  সেই গল্পটা বরং বলা যাক।

আমার এই সাইটে 'অতিথিদের লেখা' [] নামে একটা বিষয় চালু আছে। এখানে আমি অন্যদের লেখা সযতনে রাখি। দু-একটা ব্যতীত অবশ্যই অনুমতি নিয়ে। আমার লেখালেখির শপথ, এর উদ্দেশ্য আমার সাইটের পাঠক বাড়াবার চেষ্টা না। যেমন ধরা যাক, একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন জেনারেলের বেদনার কথা []। যিনি তাঁর স্বজন-মেয়েকে বলে দিয়েছেন, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে যেন সরকারী সম্মান না-দেওয়া হয়।  এই লেখা কোনও প্রকারেই হারিয়ে যেতে দেওয়া চলে না। আমিও হয়তো এক সময়ে থাকব না। কিন্তু পরের প্রজন্ম এই সমস্ত মানুষদের কথা জানবে না তা কেমন করে হয়! আর আমি তো 'পাইপ-মানুষ' না []।
আবার কিছু লেখা পড়ে মুগ্ধ হই, কিছু লেখা পড়ে মনে হয়, আহা, বড় কাজের তো!  অনেকের লেখা পড়ে মনে হয় ইশ, হাতটা সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে দিতে পারতাম, যদি।
প্রফেসর ডা. এন আই খান বা প্রফেসর নজরুল ইসলাম তিরোধানের পর ওই মানুষটাকেই নিয়ে আব্দুন নূর তুষার একটা লেখা লিখলেন। ফেসবুকে লেখাটা পড়ে আমার মনে হল আহা, আমার না-বলা অনেক কথাই বলে ফেলেছেন। আমি কয়েক বছর ধরে এফবি-তে নাই তবে সময় পেলে অনেকের লেখা পড়ি। কেমন-কেমন করে এই লেখাটিও চলে এসেছিল।
বিখ্যাত মানুষদের সঙ্গে আমার মত অগাবগার তেমন যোগাযোগ, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নাই (বাই এনি চান্স, বিখ্যাত-কেউ থাকলে আগেভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি) বিধায় আব্দুন নূর তুষার মহোদয়ের সঙ্গেও নাই। কিন্তু তারপরও আমি ম্যাসেজে লিখলাম, 'আপনার এই লেখাটি আমার  এই সাইটে  পাবলিশ করার জন্য অনুমতি চাচ্ছি'
বন্ধু-তালিকায় না-থাকলে এই সমস্ত ম্যাসেজ সচরাচর চোখে পড়ে না। কিন্তু কেমন-কেমন করে যেন তুষার মহোদয় চোখে পড়ল এবং তিনি উত্তরও দিলেন। এই কারণে তাঁর প্রতি আমি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
'খুব বিক-খ্যাত' টাইপের মানুষদের কাছ থেকে উত্তর পেয়ে কাঁপাকাঁপি হওয়ার নিয়ম থাকলেও ওসময় আমি কাঁপাকাঁপি-ভাবাভাবি-হাঁকাহাঁকি কোনও লাইনেই গেলাম না। তবে অনেকক্ষণ ঝিম মেরে রইলাম। এই মানুষটার কী লেখা-বিভ্রম হলো? যেটার চালু নাম 'টাইপিং মিসটেক'। আরও কীসব গালভরা নাম আছে, 'স্লিপ অভ পেন'...। ব্লা-ব্লা-ব্লা!

উত্তরে তিনি আমাকে সম্বোধন করে লিখেছেন, 'ছাপো'। অথচ এই মানুষটার সঙ্গে পূর্বে আমার কোন প্রকার জানাশোনা নাই নিদেনপক্ষে এমনকি আমার বয়স সম্বন্ধেও তাঁর ধারণা নাই। আমি নিশ্চিত, টাইপ করতে গিয়ে ভুল করেছেন।


তবুও, ওসময় আমার মনে হল টাইপে-লিখতে গিয়ে তাঁর ভুল হয়েছে কী!  এটা জানা প্রয়োজন। আমি লিখলাম, 'আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করার কারণ কী!
      
এবার তুষার মহোদয় উত্তর দিতে দেরি করলেন না। একের-পর-এক 'শব্দ-গেনেড' ছুড়ে গেলেন। হ্যাঁ, একের-পর-এক...। এরপর আমাকে ব্লক। ফাঁসির আসামীকেও 'কিছুমিছু' বলার সুযোগ দেওয়া হয় কিন্তু এখানে তো ডাইরেক্ট ডাবল ব্যারেলের গুলি...। বুকে লাগলেও চোখ বাঁচার উপায় নাই! আহারে, বুকও গেল, চোখও গেল! এ জীবন আর ক্যানে!
পাল্টা বাক্য বলার কোনও সুযোগই ছিল না বিধায় এখানে স্বল্প পরিসরে তুষার স্যারের বক্তব্য নিয়ে খানিকটা আলো ফেরা যাক। ও স্যার গো, 'এট-টু' শোনেন:
শব্দ-গ্রেনেড ১ (তিনি লিখেছেন): আমার লেখা ছাপতে চাওয়ার কারণ কি?
অধমের উত্তর: আগেকার আমলের জমিদার-টমিদারদের মত 'নাচো' হালের 'ছাপো' বলার পর এ কেমন অনাচার, মহোদয়! আগে-পরের তারতম্য বোঝাটা যে জরুরি। গ্রে ম্যাটার এবং 'ইয়েলো ম্যাটার' আগে-পিছে হয়ে গেলে তো সমস্যা! এটা তো ছাপো-নাচো বলার আগে বললেই সমীচীন ছিল।
শব্দ-গ্রেনেড ২ (স্যার লিখেছেন): আরিফ শর্মি পল্লব সবাইকে আমি তুমি বলি তাই...
নরাধমের সবিনয় উত্তর: ওহে, অনেক বড় স্যার, এই যে আরিফ, শর্মি, পল্লব এরা কারা? এটা আমার জন্য ভারী বেদনার- এঁদেরকে আমি চিনি না। ধরে নিলাম, 'আরিফ' নামের মানুষটা কোন-একটা দেশের প্রেসিডেন্ট। এ-ও ধরে নিলাম 'শর্মি' আবার অন্য-একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী। আর-আর, পল্লব- ধরা যাক (ধরাধরির পর্বটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে, কী আর করা, কপালের ফের!) একটা দেশের সেনাপ্রধান।
তো? রিপিট, তো? তাতে আমার কী আসে যায়! তাই বলে আপনি কী আমাকে 'তুমি' সম্বোধন করতে পারেন! ডিয়ার মহোদয়?
শব্দ গ্রেনেড ৩ (স্যারের অমীয় বাণী): আর আমি আমার অনুমতিটা প্রত্যাহার করে নিলাম।
এখন গিয়ে এখানে এই বাক্যটা সেরা কৌতুকে পরিণত হল। এটা বালকবেলার নাঙ্গাপাঙ্গা পোলাপানদের মত হয়ে গেল অনেকটা। একজনের ইয়ে ধরে অন্য একজন টেনে দিল তো অন্যজনের সাফ উত্তর, ভ্যা, তুই খেলা থেকে বাদ।
শব্দ-গ্রেনেড ৪ (বড় স্যারের বড় বাণী): আপনার প্রোফাইল লক্ড। সাধারণত প্রোফাইল লকড লোকজনের সাথে আমি কথাই বলি না।
জ্বী, মহোদয়, আপনি যে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন এটা আমার পরম সৌভাগ্য। আপনার মত শত বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির দেখা পেলুম। যেন এমন একটা সুযোগ যা করোনাকালের [] মত শত বছরে একবারই আসে!
কিন্তু স্যার গো, দয়া করে শুনুন, আপনার মত অতি-অতি 'ম-হাতি' বুদ্ধিমান মানুষ কোনটা 'প্রোফাইল লক্ড' আর কোনটা 'জিপার-লকড' এটার তারতম্য করতে না-পারাটা তো অসমীচীন হয়ে গেল। আপনি ডাক্তার মানুষ তবুও মনে করিয়ে দেই জিপার খোলা থাকাটা যাও চলে কিন্তু জিপারে ইয়ে আটকে যাওয়াটা কোন কাজের কাজ না। আর ফ' য়্যুর কাইন্ড ইনফরমেশন, মোটেও আমার প্রোফাইল লকড না।
আপনি যদি বলতেন, হুৎ, এখানে আমার তো কোন লেখাই নাই বা হাৎ, একটা অক্ষর লেখার যোগ্যতাও নাই আমার সেটাও নাহয় ঠিক ছিল কারণ এটা সত্য ফেসবুকে আমি আমার সমস্ত লেখা 'হাইড' করে রেখেছি। যেটা আমি পূর্বের এক লেখায় উল্লেখ করেছি যে ফেসবুক আমার পোষায় না। জুম্মা-জুম্মা সাত দিন হয় নাই এমন অনেকে এখানে একেকজন স্টার হয়ে বসে থাকে। ওরা আপনার মতই হাঁটে থপথপ করে, পা ফাঁক করে। হাঁটাটাও একেবারে নাক বরাবর যেন ইয়ে দিয়ে (আমি আর ইয়ের ব্যাখ্যায় গেলাম না) ঝাঁকি খেয়ে-খেয়ে মগজটা না-গড়িয়ে পড়ে।
আর নিরেট সত্যটা হচ্ছে এই সব লাইক-লুইকের কুতকুত খেলা থেকে আমার মত বেকুবরা আগে থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নেয়। কারণ? 'কব্জির জোড়ে আমি পারব না, দাদা'।

মাফ করবেন, মহোদয়, আপনাকে কিন্তু দাদা বলিনি। আপনি তো জনাবেআলা, এবার আমার একটু গান গাওয়ার পালা। আপনার ফেসবুক প্রোফাইলে 'গেলুম-দেখলুম-হালুম'। না-না, টাইপিং মিসটেক- হালুম না হাঁ হলুম। মানে একেবারে হাঁ হয়ে গেলুম আর কী...!
'উরি বাবা-আরি বাপস-মার ডালা'! এ আমি কী দেখলুম- এ আমি কী দেখলুম! এ আমি কী করলুম-এ আমি কী করলুম! আমার অজান্তেই বাংলার রুশোর সঙ্গে 'ঘুশো' করেছি!
রুশো- জ্যাঁ জ্যাক রুশো তার এক লেখায় বলেছিলেন, "আমাকে বোঝা অত সহজ নয়"।
'দ্য কনফেশানস'-এর অনুবাদ করতে গিয়ে আমাদের সরদারজী- সরদার ফজলুর করিম বোঝাবুঝির ঝামেলায় গিয়ে কুঁকড়ে ফুটখানেক কমে গিয়েছিলেন কীনা কে জানে!  

তাই তো আপনি রুশোর কথাটার মতই এককিন্নি বিশদে 'লিকেচেন' (কমা-দাড়ির একসঙ্গে যুগল), "আমি শুধু আমারই মতো,। আমার কোন কাজ কথা যদি না বোঝেন তবে ধৈর্য ধরেন যেদিন বোঝার ক্ষমতা হবে, বুঝবেন"। (বাণীতে তুষারমানব)

আহারে-আহারে! নিজের বোকামীর কারণে এখন আমার একচোখে জল একচোখে পানি চলে এলো। আপনি যে আমাদের বাংলার রুশো এটা কী আর আমি জানতাম ছাই! দেকো দিকি কান্ড, কেউ একটু বললও না! জানলে কী আর আপনার সঙ্গে বেয়াদবি করি। স্যার গো, আপনি যে আমার অধম-নরাধমকে 'তুমি' করে বলেছেন এ তো মহা-মহা সৌভাগ্য আমার।
কোন মুখে বলি, তবুও বলি, ক্ষমা করুন, বাংলার রুশো, আমাগো রুশো!

সহায়ক সূত্র: 
...
আপডেট: ২৯.০৬.২০২০

উরি বাবা, এ তো দেখি আরেক কাহিনী!
...
০৯.০৯.২০২২
একজন ডাক্তার মস্তিষ্ক প্রদাহ রোগে ভুগবে না এমন মস্তিষ্কের দিব্যি তো আর কেউ দেয়নি!


4 comments:

নাহিদ said...

তুষার একটা চুতিয়া আপনি ত আবার চুতিয়া বললে মাইন্ড কিন্তু ভুইলা গেসেন অভ্র নিয়া কি করছিল?

আলী মাহমেদ said...

মুখ খারাপ করেন কেন! না, অভ্রর বিষয়টা আমরা মনে আছে। সম্ভবত এই নিয়ে একটা লেখাও আছে আমার। এখন পাচ্ছি না :(

আর আমার এখানে দয়া করে একটু...@নাহিদ

Symon said...

দুঃখজনক ঘটনা। আমার ধারনা ছিল মানুষ যত ওপরে ওঠে, ততই বোধয় বিনয়ী হয়।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

এরাই এখন দেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে! এই প্রজন্মকে এটা-সেটা শেখাচ্ছে।

আমাদের খুব সংকটের জায়গা কোথায় জানেন? এই দেশে আলোকিত মানুষের বড় অভাব! যাদের দেখিয়ে আমরা আমাদের সন্তানদের বলতে পারি, ওই দেখ ব্যাটা ওই মানুষটাকে, পারলে এঁর মত হওয়ার চেষ্টা করিস। @জনাব, Symon