Search

Monday, October 28, 2019

আমাদের নায়ক-আমাদের কষ্ট!


জেনারেল Alm Fazlur Rahman
এই মানুষটিকে নিয়ে যে লেখাটা, আমাদের নায়ক [১] সেটা এখন বড় ম্লান, বড় খেলো! আমাদের নায়ককে আমরা এই প্রজন্ম যখন উবু হয়ে পড়ে থাকতে দেখি তখন এই কষ্টের সঙ্গে তুলনা করা চলে কেবল মৃত্যুর! বড় অভাগা এই দেশ-দেশমা সে তার সেরা সন্তানদের ফেলে দেয়!

আহারে-আহারে, বড় অভিমান-বড় কষ্ট নিয়ে এই দেশেই ঠিক ১৬ ডিসেম্বরে অন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা রশিতে ঝুলে পড়েন! [২]। ভাবা যায়, একজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত দেহ ১২ ঘন্টা ধরে গাছে ঝুলছে- এই দেশে, যে দেশটাই হয়েছে তাঁর জন্য...[৩]


এই লেখাটা লিখেছেন: জেনারেল Alm Fazlur Rahman. তাঁর অনুমতিক্রমে এখানে হুবহু ছাপা হলো:
"এই মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে তোলপাড় চলছে। তিনি ছেলের চাকরি খোয়া যাওয়াতে অভিমান করে ইন্তেকাল করেছেন।
এই মুক্তিযোদ্ধার গ্ৰাম আমার গ্ৰাম পুর্ব মোহনপুর থেকে ১৭ কি:মি দুরে একই উপজেলায়।
আমি অধমও দিনাজপুরের সন্তান। মুক্তিযোদ্ধা। কাটলা মুক্তিফৌজ ক্যাম্পের প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ক্যাম্প ইনচার্জ ছিলাম। ১৯৭১ সালে রণাঙ্গনে সম্মুখ সমরে নিয়োজিত হয়েছিলাম। যুদ্ধের ময়দান থেকে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ২য় বাংলাদেশ ওয়ার কোর্সে সিলেক্ট হয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে ভারতস্থ মূর্তি সামরিক এ্যাকাডেমিতে গমন করেছিলাম।

গত ২০১১ সালের ১৩ জুন থেকে আমাকে বাংলাদেশের সকল সেনানিবাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে যা অদ্যাবধি চলমান আছে। অর্থাৎ আমি বাংলাদেশের কোনো সেনানিবাসে প্রবেশ করতে পারি না। কারণ আমি নাকি সরকারের এবং জাতীয় সঙ্গীতের সমালোচনা করেছিলাম।
কখন, কোথায়, কার সামনে, কোন ভাষায় এই সমালোচনা করেছিলাম তার কোনো উল্লেখ না-করেই আমাকে 'সেনাসদর কোরো' থেকে একটি চিঠি দিয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

ঠিক একই ভাবে ২০০২ সালের ১৭ মার্চ বিনা নোটিসে আমার চাকরির সাড়ে চার বছর বাকী থাকতে আমাকে সেনাবাহিনী থেকে অকালিন বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছিল কোনো কারণ না জানিয়ে। ওই সময় আমি ১১ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ছিলাম মেজর জেনারেল হিসাবে।
সেনানিবাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের ফ্রি চিকিৎসা পাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অবাঞ্ছিত ঘোষিত হবার কারণে আমাকে রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হয় না।

একটা অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করতে চাই। যেদিন আমি 'সেনাসদর কোরো' থেকে বাংলাদেশের সকল সেনানিবাসে অবাঞ্ছিত ঘোষিত হবার চিঠি পাই সেদিন আমার মনের অবস্থা কি হয়েছিল ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। শুধু মনে হচ্ছিল আমাকে বাংলাদেশে 'ওপেন জেল' দেওয়া হলো। মনে হচ্ছিল এদেশ আমার নয়। আমি এদেশের কেউ নই। আমার মাতৃভূমি যার মুক্তির জন্য ৭১ সালে আমি মরণপণ যুদ্ধ করেছিলাম সেই আমার মাতৃভূমি আজকে আমাকে তার সন্তান হিসাবে অস্বীকার করলো। খালি মনে হচ্ছিল আমি কোথায় যাবো? আমারতো যাবার কোনো স্থান রইলো না এই দেশে।

আমি আমার একমাত্র কন্যাকে বলেছি আমার মৃত্যুর পরে আমার মরদেহকে যেন কোনো প্রকার রাষ্ট্রীয় সম্মান না দেওয়া হয়। যেদেশে একজন জেনারেল হিসেবে আমাকে সেনানিবাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে, যে দেশের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না সেদেশের এমন শত্রুর মর দেহকে কেন রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হবে? আমিই বা তা গ্ৰহন করবো কেন?
একটা অনুরোধ অবাঞ্ছিত ঘোষিত অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয় তবে আমাকে যেন অভিমানি জেনারেল হিসাবে আখ্যায়িত না করেন। আরো একটি অনুরোধ আপনারা সবাই আমাকে ভুলে যাবেন। ভুলে যাবেন আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। বাংলাদেশে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাবতে এবং পরিচয় দিতে আমার খুব কষ্ট হয়।"

 
সহায়ক সূত্র:
১. আমাদের নায়ক: https://www.ali-mahmed.com/2018/04/blog-post_24.html
২. আপনি মরে গেলেন...: https://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_28.html
৩. লাশ ঝুলে ছিল ১২ ঘন্টা...: https://www.ali-mahmed.com/2009/08/blog-post_02.html

No comments: