Search

Tuesday, September 30, 2014

১ লক্ষ ইরাকি, একজন মেথর এবং মিডিয়া!

অতি পুরনো একটা কৌতুক। তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী কলিন পাওয়েল জরুরি বৈঠকে বসেছেন। বসেছেন তো বসেছেনই আর দাঁড়াবার নাম নেই! বাইরে অপেক্ষায় থাকা ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি ভেতরে গিয়ে বুশকে তিতিবিরক্ত হয়ে অপ্রাকশ্যে বললেন, বা..., মিটিং না মেটিং করছে! প্রকাশ্যে যেটা বললেন সেটা হচ্ছে, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, ঘটনা কী, দয়া করে বলবেন কী নিয়ে আপনাদের এই ম্যারাথন মিটিং’?

বুশ আলাদা গাম্ভীর্য এনে বললেন, ‘বিষয়টা জরুরি। আমরা শলা করছি কেমন করে ১ লক্ষ ইরাকি এবং একজন আমেরিকান মেথরকে খুন করা যায়’।
চেনি অবাক হয়ে বললেন, ‘সে তো ভাল কথা কিন্তু মেথরকে খুন করতে হবে কেন’!
বুশ এবার হলুদ দাঁত বের করে পাউয়েলকে বললেন, ‘দেখলা পাওয়েল, তোমাকে বলেছিলাম না ১ লক্ষ ইরাকিকে খুন করলে এটা নিয়ে কেউ দ্বিতীয়বারও ভাববে না'।

এটা হচ্ছে কৌতুক- বাস্তবতাটা অনেকটা এমনই। আইএস নামের একদঙ্গল দানবকে রোখার নামে আমেরিকা অভিযান শুরু করেছে। এবার পূর্বের মত বোকামি করেনি। পারলে এই গ্রহের সমস্ত দেশকেই দাওয়াত দিয়ে বসে। যথারীতি এরমধ্যে বাংলাদেশ নামের দুবলা-পাতলা, লিকলিকে দেশটিও আছে।

যাই হোক, এই দমন করার খবরটা পশ্চিমা মিডিয়া যথারীতি তাদের মত করেই ছাপিয়েছে। এমনকী আমাদের মিডিয়াও! উদাহরণ দেই? 'বাংলাদেশ প্রতিদিন' নামের দৈনিক পত্রিকাটি (২৪. ০৯.১৪) লিখেছে, “...দুই মার্কিন এবং এক ব্রিটিশ নাগরিকের শিরচ্ছেদের ভিডিও প্রকাশ করে বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছে সংগঠনটি (আইএস)। এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি...।“

এই হচ্ছে আমাদের চুতিয়া মিডিয়া! আইএস নামের এই সংগঠনটি একদিনে ১৫০০ মানুষকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। শিরচ্ছেদের সহজ বাংলা গা কেটে অসংখ্য মানুষের মুন্ডু স্টেডিয়ামে ঝুলিয়ে দিয়েছে। এই সব ভিডিও কিন্তু বিশ্ববাসী দেখেছে। কিন্তু মানুষগুলো কেউই আমেরিকা, ব্রিটেনের নাগরিক না। অতএব পশ্চিমা মিডিয়ার কাছে এর কোনও গুরুত্বই নেই। নেই আমাদের মিডিয়ার কাছে। কারণ আমাদের এই সমস্ত মিডিয়াও পশ্চিমা মিডিয়ার অবৈধ সন্তান!

Sunday, September 28, 2014

হর্ষ-বিষাদ!

মাহবুবের সঙ্গে কয়েকটা কারণে দেখা করাটা জরুরি ছিল। একজন, মাহবুব-তানিয়ার জন্য কিছু কাপড়-চোপড় পাঠিয়েছেন। ওইসব দেওয়ার ছিল। অন্য একজন আবার ইনবক্সে জানিয়ে ছিলেন মাহবুব-তানিয়ার পড়াশোনার খরচের দায়িত্ব তিনি নিতে চান। এই সংবাদগুলো যে আমাকে কতটা অভিভূত করে এই সমস্ত মানুষদেরকে কেমন করে বোঝাই! কেমন করে লিখলে খানিকটা বোঝানো যায়- আহা,কেমন করে!

যাওয়াটা তারচেয়েও জরুরি ছিল যেজন্য সেটা হচ্ছে, মাহবুবকে হুইল-চেয়ারটা দেওয়ার সময়, খোলার পরই আমি লক্ষ করেছিলাম, পাদানি বা পা রাখার জায়গাটা বাইরের দিকে। কেমন একটা অস্বস্তি বোধ করছিলাম- পা রাখার জয়গাটা বাইরের দিকে থাকলে তো পা রাখতে সমস্যা হওয়ার কথা। মাহবুবকে নিয়ে লেখাটার সঙ্গে যুক্ত ছবিটা [১] ভাল করে লক্ষ করতে বিষয়টা পরিষ্কার বোঝা যায়। কিন্তু ক্যাটালগ দেখেও এর আগামাথা আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ওটায় সামান্য নাট কিভাবে খোলা হবে এর বিস্তারিত বর্ণনা আছে কিন্তু এই বিষয়ে বিন্দুবিগর্সও লেখা নাই! আজব!

ওখান থেকে ফিরে আসার পর থেকেই কেমন একটা খচখচ করছিল। আজ নাটক-সিনেমার মতই এর সমাধান খুঁজে পাওয়া গেল! পূর্বে যে ছেলেটাকে (হৃদয়) হুইল-চেয়ার দেওয়া হয়েছিল ও আজ সকালে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য চলে এসেছে। ছেলেটা খানিকটা পাগলা টাইপের। ওর বাড়ি থেকে দূরত্ব কম না তবুও হুইল-চেয়ার নিয়ে মাঝে-মাঝেই আমার সঙ্গে দেখা করতে চলে আসে। কিচ্ছু না, কোনও কাজ না, এমনি-এমনি। আজ আসার পর আমি লক্ষ করে দেখলাম ওর হুইল-চেয়ারের পাদানিটা কিন্তু ভেতরের দিকেই। জানতে চাইলেই ও সবগুলো দাঁত বের করে আমাকে শিখিয়ে দিল কেমন করে এটা বাইরের দিক থেকে ভেতরে আনতে হয়। ওরে, শেখার যে কোনও শেষ নেই!

যাই হোক, খুব সহজেই মাহবুবেরর সমস্যার সমাধান হলো। ওদিন ওর বাবা-মা ছিলেন না কিন্তু আজ দুজনকেই পেয়ে যাই। আমার ধারণা ছিল, অন্তত মাহবুরের স্কুলে পড়ার খরচ লাগে না। মাহবুরের মত এমন শারীরিক অসুবিধাসম্পন্ন ছাত্রের কাছ থেকে স্কুলের টাকা না-নেওয়ারই কথা। নেবে কেন? আহা, কার না ওকে দেখলে মায়া হবে! আর যে স্কুলের হাজারের উপর ছাত্র-ছাত্রী সেই স্কুলে একজন মাহবুরের জন্য এই সহায়তাটা দেওয়াটা তো বিশেষ কিছুই না।

কিন্তু মাহবুরের বাবা-মার কথা শুনে আমি হতভম্ব। বিষাদে মনটা ছেয়ে গেল। মাহবুরের মা অসম্ভব মন খারাপ করে বলছিলেন, ‘আমার মাইয়াডারে ভর্তি করার সময় সব টেকা দিছি। মাহবুরের বেলায় অনেক দিন লাগায়া ঘুরছি হেড মাস্টরের পিছনে কিন্তুক আমার কাছ থিক্যা এক টেকাও কম রাখে নাই’।  
মাহবুরের মার যে আরও ভয়ংকর অভিযোগ কেবল যে টাকা কম রাখেনি এমনই না হেড টিচার তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহারও নাকি করেছেন। মাহবুরের মার তীব্র কষ্ট এটাই, মাগনা না-পড়াতে পারলে না পড়াবে কিন্তু তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করা কেন?

আমি শুনতে শুনতে বাকহীন হয়ে ছিলাম। এমনিতে সরকার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়ার খরচের জন্য ‘উপবৃত্তি’ নামে বিস্তর টাকা খরচ করে। এই স্কুলেও উপবৃত্তি চালু আছে। কিন্তু মাহবুরের বোন তানিয়া বা শারীরিক অসুবিধাসম্পন্ন মাহবুব উপবৃত্তির এক টাকাও পেল না। তাহলে কারা পায় এই টাকা? মানুষ এমন হৃদয়হীন হয় কেমন করে, কতটা নষ্ট হলে...!

১. http://www.ali-mahmed.com/2014/09/blog-post_24.html

Thursday, September 25, 2014

ইতিহাস- ‘নেতাহাস’!

এ এক বিচিত্র দেশ তেতাধিক বিচিত্র এই দেশের নেতারা। তারচেয়েও বিচিত্র এই দেশের জনগণ! এই বিচিত্র নেতাদের নিয়ে এই দেশের জনগণ নাচেন, চিত্র-বিচিত্র ভঙ্গিতে। পূর্বে ইতিহাস লিখতেন ইতিহাসবিদ এখন ইতিহাস লেখেন নেতারা। কালে-কালে সেই ইতিহাস হয়ে উঠে ‘নেতাহাস’।

ক-দিন ধরেই বিরাটসব চোঙ্গা লাগিয়ে মাইকিং হচ্ছিল, খালেদা জিয়া ব্রাক্ষণবাড়িয়া আসবেন। দেশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দেবেন। এই নিয়ে দলীয় লোকজনের বিপুল উৎসাহ। খালেদা জিয়া ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় এসে বিস্তর কথা বলেছিলেন এর মধ্যে দুইটা প্রসঙ্গ নিয়েই আলোচনা।
খালেদা জিয়া বলেন, ...আমরা ইমানদার। সবসময় নামাজ পড়ি। আল্লাহকে ভয় করি...।” (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪, প্রথম পাতা)।

কে নামাজ পড়ে কে পড়ে না এই প্রসঙ্গ জনসমক্ষে নিয়ে আসার মরতবা আমি বুঝি না। যার যার ব্যক্তিগত বিষয় ঘটা করে বলার আদৌ প্রয়োজনটা কী! এমনিতে কারও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা আমার কাছে অরুচিকর মনে হয়। তবুও একটু বলি, খালেদা জিয়া ইমানদার-নামাজের কথা যে বলছেন এই আমরায় কিন্তু খালেদা জিয়াও আছেন। এতে কোনও সন্দেহ নেই এটা তার জীবন-যাপনের ভঙ্গি দেখলেই বোঝা যায়।

খালেদা জিয়া আরও বলেন, “...জামায়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে আছে তাই জামায়েত ইসলামীকে খারাপ বলছে। এখন তাদের নানাভাবে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। ...কখনও বলা হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী।...”

কখনও বলা হচ্ছে? খালেদা জিয়ার কঠিন অভিযোগ জামায়াতে ইসলামীকে স্বাধীনতাবিরাধী বলা হচ্ছে আসলে তারা স্বাধীনতাবিরোধী না। খালেদা জিয়া অর্ধেক ‘নেতাহাস’ লিখেছেন যে জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতাবিরোধী না। বাকী আছে এটা লেখা যে জামায়েতে ইসলামী ছিল স্বাধীনতাপক্ষের শক্তি কেবল এই নেতাহাসটা লিখে দিলেই আমাদের নেতাহাসের ষোলো কলা পূর্ণ হয়...।

Wednesday, September 24, 2014

আলোর পথে গুহামানব!

মাহবুবকে নিয়ে যখন লেখাটা দিয়েছিলাম [১] তখন বেশ খানিকটা ভয়ে ভয়ে ছিলাম! ওর হুইল-চেয়ারের ব্যবস্থা হবে তো? ভয়ের কারণটা বলি। ইতিপূর্বে অনেকবারই এই ধরনের সমস্যা নিয়ে লিখেছি- এ সত্য, অনেকেই মমতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু অনেকের কাছে এমনটাও মনে হতে পারে এই রে, ব্যাটা বুঝি আবারও ‘ট্যাকাটুকা’ চাইবে! এই যন্ত্রণায় লোকজনেরা বিরক্ত হয়ে আমার লেখা পড়া ছেড়ে দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। শেষে নিজের লেখা নিজেই পড়তে হবে। আমাদের দেশের দুঁদে সাহিত্যিকদের অনুকরণ করে মাথা দুলিয়ে বলতে হবে, আমি তো আমার নিজের জন্যই লিখি। শোনো কথা- ‘ট্যাটনামির’ কথা!

যাই হোক, লেখাটা দেওয়ার পর অজান্তই বিড়বিড় করতে হলো, ওরে, আপনারা এতো ভাল কেন। কেন-কেন? ইনবক্সে আলাদা ম্যাসেজ দিয়ে কয়েকজনই মাহবুবের প্রতি মমতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তো, স্বভাবতই প্রথম যিনি যোগাযোগ করেছিলেন, যিনি কোনও প্রকারেই নাম প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নন তাঁর ইচ্ছায় মাহবুবের জন্য হুইল-চেয়ার কেনা হলো। মানুষটার প্রতি কেবল পুরনো কথাটাই বলি, আপনারা এতো ভাল কেন!

আজ মাহবুবকে এই হুইল-চেয়ারটা দেওয়ার জন্য একটা অটো-রিক্সা ভাড়া করতে হয়েছিল। আমার সঙ্গে যিনি ছিলেন তাঁর সঙ্গে বিস্তর বাদানুবাদ করেও তিনি কোনও ক্রমেই আমাকে ভাড়া দিতে দিলেন না- কেবল বাকী ছিল মারামারিটা করা। অটো-রিক্সার চালক নায্য ভাড়া নিতে চাইলেন না।
লোকজনরা শুরু করল কী! এই সমস্ত কাজ (আমার ভাষায় অকাজ) করতে গিয়ে আমার কেবল এটাই মনে হয়, আসলে আমরা বেশিরভাগ মানুষই ভাল থাকতে চাই-হতে চাই কেবল খানিকটা সুযোগের অপেক্ষা।

এটা ঠিক, হুইল-চেয়ারের নিয়ে স্কুলে যাওয়াটা একটু দূর হয়ে যায়। কিন্তু মাহবুব এখন যখন চাইবে তখেই স্কুলে যেতে পারবে তারচেয়ে জরুরি হচ্ছে এখন সে ইচ্ছা করলেই, বিষণ্ন বোধ করলেই অন্তত বাড়ির আশেপাশে যেতে পারবে। খোলা আকাশের নীচে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়াতে পারবে। চুল এলোমেলো করা বাতাসে গা জুড়াতে পারবে।

প্রথম দিন যখন মাহবুবকে দেখেছিলাম তখন এটাও মনে হয়েছিল অন্ধকার যেন গুহায় এক গুহামানব। আজ মাহবুব এবং তানিয়ার ছবিগুলো যখন আমি দেখছিলাম আমার এমনটাও মনে হচ্ছিল গুহামানব আলোতে বেরিয়ে এসেছে।
হুইল-চেয়ার দিয়ে যে মানুষটা গুহামানবকে আলোতে টেনে নিয়ে আসলেন সেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানুষটার প্রতি আমি নতজানু হই...।

১. http://www.ali-mahmed.com/2014/09/blog-post_20.html 

Saturday, September 20, 2014

ডানা-ভাঙ্গা পাখি!

হৃদয়কে যখন হুইল-চেয়ার দেওয়া হয়েছিল [১] তখনই শুনেছিলাম এই স্কুলেই আরেকটি ছেলে নাকি পড়ে যার হাঁটাচলায় খুব সমস্যা। তখন এক শিক্ষককে বলে এসেছিলাম আমাকে এই ছেলেটির খোঁজ দেওয়ার জন্য। শিক্ষক মহাশয় আর খোঁজ দেননি! আজকালকার শিক্ষক মহাশয়ের প্রাইভেট পড়িয়ে হাতে সময় কোথায়?

যাই হোক, কেমন-কেমন করে আমার ফোন নাম্বার জোগাড় করে আশেপাশের কারও ফোন থেকে মাহবুব নামের এই ছেলেটি আমাকে ফোন দেয়। তার সঙ্গে কথাবার্তা নিম্নরূপ:
মাহবুব ক্ষীন গলায় বলে, ‘আমি ইসকুলে যাইতে চাই’।
আমি বললাম, ‘তো সমস্যা কোথায়। যাও না’।
মাহবুব এবার কুন্ঠিত হয়ে বলল, ‘আমি তো হাটতাম পারি না’।
আমার চট করে মনে পড়ে গেল আমি তো একেই খুঁজছিলাম। আমি জানি না কেমন করে একটা হুইল -চেয়ারের ব্যবস্থা হবে কিন্তু ঠিকই সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিন্তু তোমার বাড়ি থেকে তোমাকে সঙ্গে করে কে নিয়ে আসবে’?
মাহবুব হড়বড় করে বলে, ‘আমার বইন, তানিয়া। হে নিয়া যাইব। হে-ও আমার লগে ক্লাস সিক্সে পড়ে’।

অনেক যন্ত্রণা করে মাহবুবের বাড়ি খুঁজে বের করতে হলো। কেউ চেনে না কিন্তু যখন বললাম হাঁটতে যে একটু সমস্যা হয়। এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই চিনে ফেলল। কেউ-কেউ খানিকটা বিরক্তিও প্রকাশ করল: ধুর মিয়া, আগে কইবেন না, ‘ল্যাংড়া মাহবুব’। এই এক চুতিয়া পাবলিক! এরা, এরাই অপ্রকৃতস্থ লোকজনকে দেখলে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে। যেন এই গ্রহে এরচেয়ে মজার আর কিছু নেই!

মাহবুবের ঘরটায় ঢুকে বুকে একটা ধাক্কা খেলাম- প্রায় অন্ধকার একটা ঘর। দিনের বেলায়ও অপ্রতুল আলো! আমি যখন মাহবুবের ছবি উঠাচ্ছিলাম ফ্ল্যাশের আলোও কুলাতে পারছিল না। আমার সামনে মাহবুবকে দেখে, এর চোখের দৃষ্টি তীব্র, অতি তীব্র তাকিয়ে থাকা যায় না এমন। এই অবয়বটা দেখে কেবল মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল যেন খাঁচায় আটকানো ডানা-ভাঙ্গা এক পাখি। পার্থক্য কেবল একটাই এই খাঁচাটা আট ফুট বাই দশ ফুট। তার সঙ্গে কথা বলে আমার অনুমান যে যথার্থ তার প্রমাণ পেলাম। মাহবুবের এখন যে অবস্থা হাঁটা তো দূরের কথা সে ঠিকঠাক মতো দাঁড়াতেই পারে না। এটা বুঝতে বেগ পেতে হয় না যে ২৪টা ঘন্টাই সে এই ছোট্ট ঘরটায় আটকে থাকে। ঘুরে বেড়ানো নেই, মাঠ নেই, আকাশ নেই! কিচ্ছু নেই- এর ভুবনটা আট ফুট বাই দশ ফুট নামের এক খাঁচা!

কোত্থেকে দৌড়ে আসে মাহবুবের বোন তানিয়া। আমি একে দেখে বলি, ‘ওহ, তুমিই তাহলে তানিয়া। তুমিও তো ক্লাশ সিক্সেই পড়ো?
তানিয়া লাজুক হেসে বলে, ‘আমি এইবার সেভেনে উঠতাম হইলে। হের লিগ্যাই সিক্সে রয়া গেছি। হের পড়নের খুব শখ। আমি ক্লাশের পড়া বাড়িতে আইসা হেরে লেইখ্যা দেই’।

এইটুকুন ছোট্ট একটা মেয়ে, এতো মায়া-এতো মায়া! আমি এবার পূর্ণদৃষ্টিতে তানিয়াকে দেখার চেষ্টা করি। আধো অন্ধকারে ছোট্ট এই মেয়েটি প্রায় অস্পষ্ট হয়ে আসে। ঘটনাটা আমি বুঝতে পেরে চট করে চোখ সরিয়ে নেই। চশমা আমার চোখ আড়াল করে রেখেছে, তবুও। পানিতে ছাপাছাপি চোখ দেখতে পেলে সে-এক কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে। পাগল, তা যে হতে দেওয়া চলে না।

মাহবুব নামের এই ডানা-ভাঙ্গা পাখিটার জন্য দুইটা ডানা দরকার। আধুনিক মানুষেরা যেটার নাম দিয়েছে হুইল-চেয়ার। কেমন করে, কোথায় থেকে? অতসব কী আমি জানি ছাই, কেবল যেটা জানি যত দ্রুতসম্ভব একটা হুইল চেয়ার আমার প্রয়োজন...।

১. হৃদয় এক মুক্ত বিহঙ্গ: http://www.ali-mahmed.com/2013/12/blog-post_13.html

আপডেট: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহৃদয় মানুষ মাহবুবের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে কথা দিয়েছেন। তাঁকে কেবল ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করি না। কেবল বলি, আপনারা এতো ভাল কেন? কেন-কেন-কেন!

Thursday, September 18, 2014

বেচারা হারাধন এবং জিঘৃক্ষা।

গতকালই বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পেল সংসদ। ‘খুল্লামখুল্লা’ দলীয়করণের জন্য এই একটা প্রতিষ্ঠানই অবশিষ্ট ছিল, ঘটা করে এরও সমাপ্তি হলো। হারাধনের সবগুলো ছেলের অপঘাতে মৃত্যুর পর গভীর শ্বাস ছেড়ে বলি, বেচারা, বেচারা হারাধন!
কী কাকতালীয়! আবার ঠিক ওদিনই সাঈদীর রায়। সাঈদীর রায়ের নীচে চাপা পড়ে গেল এই সংবাদ।

স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া’ পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে। 
…প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ বুধবার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এই রায় ঘোষণা করে। এর মধ্যে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সব অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দেন। আর বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী আসামির মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে রায় দেন।“…(সূত্র: http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article853547.bdnews)

বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সমস্ত অভিযোগ থেকে সাঈদীকে যে পরিত্রাণ দিয়েছেন এর পেছনে নিশ্চয়ই তাঁর অকাট্য যুক্তি, আইনি বর্ণনা রয়েছে। এই বিচারকের এহেন রায়ও গ্রহণ করতে আমার কোনও আপত্তি নাই কারণ আমার জিঘৃক্ষা অতি উচ্চ স্তরের!
কেবল...সাঈদীর বিরুদ্ধে এতো সব প্রমাণ থাকার পরও কেন সাঈদী নিষ্পাপ-নিরপরাধ স্রেফ এই বিচারকের ব্যাখ্যাটাই জানতে তীব্র আগ্রহ বোধ করছি। না-জানা পর্যন্ত আরাম পাচ্ছি না!
ভবিষ্যতে আইন কলেজে যে তাঁর এই যুগান্তকারী রায় পড়ানো হবে, আইনজীবীরা অন্য মামলার যুক্তিতর্কে একে-অন্যকে এই রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে কুপোকাৎ করে ফেলবেন এতে কোনও সন্দেহ নেই।  

Saturday, September 13, 2014

অসভ্য-ইতর-পাপিষ্ঠ এবং কুত্তা...।


Danish zookeepers kill healthy baby giraffe with a bolt gun because he was 'surplus to requirements' - then feed him to the LIONS... 

...Marius’s plight had triggered worldwide outpourings of protest, including an offer to rehome him in Britain, with many saying they were sickened by a zoo killing a healthy animal.

...After announcing plans to have Marius put down, the zoo received offers of a new home – including one from Yorkshire Wildlife Park – as well as a private buyer who offered 500,000 euros (£410,000). 

... Mr Holst said the zoo didn’t give its eight giraffes contraceptives due to ‘unwanted side effects on the internal organs’ and in order to allow animals to display natural parenting behaviour ..." (www.dailymail.co.uk)

ঘটনাটা ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের। এই শিশু জিরাফটিকে যখন মেরে ফেলার শলা করা হচ্ছিল তখন অনেকেই চেয়েছিলেন এই জিরাফটিকে অন্যত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেবেন। এমনকি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে ৫ লক্ষ ইউরো প্রদানের বিনিময়েও! কিন্তু সমস্ত প্রম্তাব তুড়ি মেরে এরা ঠিকই প্রকাশ্যে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে শিশু জিরাফটির! পরে সিংহকে খেতে দিয়ে দেয়। এ এক অসভ্যতার চরম পরিকাষ্ঠা। কে বলে এরা সভ্য?
অথচ এই উন্নত দেশগুলোর লোকজনেরা সিরিয়াল-কিলার, শত, হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী সেই মানুষ নামের দানবকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলে চোখের জলে অন্তর্বাস ভিজিয়ে ফেলে।

ছবি ঋণ: www.independent.co.uk
‘গ্রহবাবা’ আমেরিকা। এরা এতোটাই ব্রেনওয়ালা যে আমাদের দেশের লেখক মহোদয়গণ আমেরিকা গিয়ে লেখালেখিও শিখে আসেন। সেই আমেরিকার মিনেসোটার মেয়র সাহেব মি. ডিউক। একটা কুত্তা। ডিউক নামের এই কুত্তা মহোদয় রীতিমতো নির্বাচনে পাশ-টাশ দিয়ে মেয়র হয়েছেন। ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক প্রায় সমস্ত মিডিয়ায় ছেয়ে গেল, “Duke the dog becomes elected mayor of Minnesota town.” 

ওই এলাকার লোকজনের কঠিন যুক্তি, “Voters said Duke guards the town and makes the community safer, even ensuring cars do not break the speed limit.” 

বটে রে, বটে- কতো বুদ্ধি ঘটে! আমি একবার তিনপেয়ে একটা কুকুরকে দেখে বড়ই কাতর হয়েছিলাম, আহারে-আহারে, কুত্তাটার একটা ঠ্যাং নাই! সম্ভবত একটা পা ট্রেনে কাটা পড়েছিল। এখন দুপেয়ে অসংখ্য কুত্তা দেখেও কেন কাতর হচ্ছি না এ এক বিস্ময়!

Monday, September 8, 2014

মুক্তিযুদ্ধে এক দুর্ধর্ষ কলম-যোদ্ধা এবং জেনোসাইড।

১৯৭১ সাল। পাকিস্তানি আর্মি যখন এই দেশের লোকজনকে মেরে সাফ করে দিচ্ছে তখন বহির্দেশে এই সম্বন্ধে তেমন-কেউ বিশেষ কিছুই জানে না। সামরিক জান্তা জানার কোনও উপায়ই রাখেনি! ঠিক তখনই একজন মানুষ এগিয়ে এলেন। অ্যান্টনি মানকারেনহাস। 

এই মানুষটা সম্বন্ধে আমরা প্রখ্যাত সাহিত্যিক শওকত ওসমানের কাছ থেকে শুনি। শওকত ওসমান তখন নিয়মিত দিনলিপি লিখতেন। তাঁর সঙ্গে মাসকারেনহাসের সশরীরে দেখা হওয়ার পর তিনি ২৪ জানুয়ারি ১৯৭২ সালের দিনলিপিতে লিখেছিলেন: “...বারো দিন ছিলেন টনি সাহেব একদা পূর্ব পাকিস্তানে। সামরিক কর্তৃপক্ষের অতিথি। ফলে ওদের কার্যকলাপ, মানসিক গতিবিধি অনেক কিছু নিরীক্ষণের সুযোগ পান তিনি। ...টনি মাসকারেনহাস করাচি ফিরে এলেন। সেদিন রাতে ডিনার খাওয়ার পর ছেলেমেয়ে, স্ত্রীদের নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে বসলেন। কখন ভোর হয়ে গেছে কারও খেয়াল নেই। সাংবাদিক নিজের চোখে অসহায় নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু দেখেছেন। বাইরের জগৎকে এ কথা জানাতে না পারলে তাঁর মনে আর শান্তি নেই। 

...কিন্তু সব সময় বিবেকের আদেশ পালন করা যায়? ...টনি মাসকারেহাসের সমস্যা কম নয়। প্রথমত বাইরের জগতে এই কাহিনি পাঠানোর উপায় তো নেই। দ্বিতীয়ত, তিনি বিদেশে গিয়ে এসব ফাঁস করতে পারেন। কিন্তু তা অত সহজ নয়। আরও সমস্যা স্ত্রী-পুত্র নিয়ে যদি একদম করাচি ছেড়ে চলে যেতে পারেন, তখন সব সহজ হয়ে আসে। কিন্তু আটচল্লিশ বছর বয়সে দুই লাখ টাকা দামের বাড়ি ফেলে একদম অন্ধকারে ঝাঁপ দেওয়া কি অত সহজ? 
...স্বাস্থ্যের অজুহাতে মাসকারেনহাসের পরিবার একদিন ইংল্যান্ড অভিমুখে রওয়ানা হয়ে গেল। পেছনে পড়ে রইলেন গৃহকর্তা। পাছে কেউ সন্দেহ করে, তাই ঘরের একটা জিনিসও গৃহিণী এদিক-ওদিক বেচাকেনার পাল্লায় ফেলেননি। (দুই লাখ টাকা দামের) গোটা বাড়ি তো পড়ে রইলই। 
 ...একদিন তিনিও ইংল্যান্ড পৌঁছালেন। পাকিস্তানের সীমান্ত পেরিয়ে তিনি বোমা ছুঁড়লেন...।” 

এর পর তো ইতিহাস। ১৩ জুন সানডে টাইমসে অসম্ভব গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হলো, ‘Genocide-জেনোসাইড’। যেন একটা আগ্নেয়গিরির মুখ খুলে গেল। সমস্ত বিশ্বকে ঝাঁকিয়ে দিল, কাঁপিয়ে দিল। এরপর একের-পর-এক অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবেদন ছাপা হতে লাগল টামস, নিউজউইক এবং বিশ্বের বিভিন্ন অতি প্রভাবশালী পত্রিকায়।

পরবর্তীতে এই অ্যান্টনি মাসকারেনহাস অসাধারণ এক বই লিখেছিলেন, ‘Bangladesh A Legacy of Blood. যে বইটির ভূমিকায় তিনি লিখেছিলেন, “This is a true story;
…It is based on my close personal knowledge of the main protagonists; on more than 120 separate interviews with the men and women involved in the dramatic events; and on official archives and documents which I had the privilege to inspect personally.
…I make no apology for it. The people must know the truth about their leaders; and may we all take lesson from their mistakes.

Sunday, September 7, 2014

একমেবাদ্বিতীয়ম!

আমাদের দেশে সাহিত্যের দন্ড এখন আনিসুল হক গংদের হাতে। এটা জানার জন্য আদৌ বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। ফি বছর বইমেলার সময় জোট ছাড়ে দুধের দুধ পানির পানি। গোটা দেশের খাল-বিল, নদী-নালা, সাগর সবই আনিসুল হক গংদের বইয়ের বিজ্ঞাপনে ভেসে যাবে। বানের জলে ভেসে যাবেন শওকত ওসমান, রশীদ করিম, সরদার ফজলুল করিম প্রমুখ।

আনিসুল হক যে কেবল বিখ্যাত লেখক এমনই না তিনি অসম্ভব নরোম মনের মানুষও একজন। পারতপক্ষে কাউকে ক্লেশ দিতে চান না, প্রকাশককেও। তাই তো তিনি নিজের ব্‌ইয়ের বিজ্ঞাপন নিজেই দেন [১]। তার মুদ্রিত বই প্রেস থেকে মেলায় যওয়ার যো নেই- রাজপথেই লোকজনেরা কিনে ফেলে! মুদ্রণের পর মুদ্রণ শ্যাষ এই জটিল আঁকটাও আনিসুল হক নিজেই কষে ফেলেন যেটা আমরা তার দেওয়া বিজ্ঞাপনেই দেখতে পাই। 

সম্প্রতি প্রথম আলোর ঈদসংখ্য্যায় আনিসুল হকের দুর্ধর্ষ প্রেমের উপন্যাস পড়ার বিরল সৌভাগ্য আমার হয়েছে। পত্রিকায় চাকরি করার সুবাদেিএখানে লেখা আপনাআপনি ছাপা হয়ে যায়। পাঠক বেচারার না-পড়ে উপায় আছে! আনিসুল হকের প্রেমের উপন্যাসটার নাম হচ্ছে, ‘বিক্ষোভের দিনগুলোতে প্রেম’।
সময়টা এরশাদের। ‘আবীর’ বুয়েটে পড়ে। ‘শানু’ নামের একটা মেয়ের সঙ্গে কঠিন পত্রমিতালি চালিয়ে যায়। এখনকার ছেলেপেলো অবশ্য পত্রমিতালি বিষয়টা খুব ভাল একটা বুঝবে না- এখন হচেছ এসএমএস-ফোন-ভিডিও কলের যুগ। এই শানু মেয়েটির সঙ্গে আবীরের অবশ্য হলের ল্যান্ডফোনে কথাও হয়।

শানু মেয়েটি একদিন দেখা করার জন্য আবীরের হলে চলে আসে। তাহাদের প্রথম সাক্ষাৎ। আমরা আনিসুল হকের মুখেই শুনি:
...ঈর্ষাম্বিত অনেকগুলো চোখের সামনে দিয়ে শানুকে নিয়ে আবীর অতিথিকক্ষে প্রবেশ করে। শহীদ স্মৃতি হলের অতিথিকক্ষটা ছোট।
... শানু বলে, ব্রেক ফাস্ট করেছ? 
(আবীর) না। ঘুম থেকে তো ডেকে তুলল। করিনি। 
...আবীর উঠে গেস্ট রুমের দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেয়। শানু উঠে দাঁড়িয়েছে। আবীর তাকে আলিঙ্গনে বাঁধে। 
শানু বলে, নাও, তোমার ব্রেক ফাস্ট। খাও। 
শানু তার ঠোঁট বাড়িয়ে দেয়।...” 

প্রথম সাক্ষাতেই শানুর এহেন আচরণে অনেকে বিভ্রান্ত হবেন। আমার মত সাধারণ পাঠক বিড়বিড় করবে, ‘নিমফোম্যানিয়াক’! কিন্তু যারা আনিসুল হকের অন্যান্য অতুলনীয় সাহিত্য পাঠ করেছেন তারা গা দুলিয়ে বলবেন, এমনটা হতেই পারে, আলবত। যেমন ‘আমারও একটি প্রেমকাহিনি আছে' পুস্তকে আনিসুল হকের গল্পের মেয়েটির একটি ছেলেকে দেখে প্রতিক্রিয়া এমন: "আমার বুক কাঁপছে। পেটের ভেতরে গুড়গুড় করছে...।"
কেন মেয়েটির পেটের ভেতরে গুড়গুড় করছে এটা আমাকে জিজ্ঞেস করা অবান্তর। এটা ডাক্তার ভাল বলতে পারবেন অথবা আনিসুল হক।

যাই হোক, আমরা ফিরে যাই ‘বিক্ষোভের দিনগুলোতে প্রেম’ নামের লেখাটায়। আবীরের সঙ্গে শানুর দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। আনিসুল হক লিখেছেন:
...শানুকে রুমে নিয়ে এল আবীর। পুরো হলে আর কেউ নেই। শুধু একটা বন্ধ কক্ষে শানু আর আবীর। 
 ...শানু তাকে (আবীর) জড়িয়ে ধরে বলল, আমাকে আদর করো, অ্যাবস। 
...আবীর বলল, জামাটা নষ্ট হচ্ছে। খুলে রাখো। 
শানু জামা খুলল। 
আবীর বলল, তোমার তলপেটে এটা কিসের দাগ? 
(শানু) সেলাইয়ের। সিজারিয়ান বেবি হয়েছে আমার। 
...আবীর কী করবে বুঝতে পারে না। 
শানু বলে, কাম অন ডারলিং...সে (শানু) নেতৃত্ব নিজের হাতে তুলে নেয়। "

এভাবেই শানু ‘ইয়ের’, নেতৃত্ব তুলে নেয় নিজের হাতে। যেমনটা এই দেশের সাহিত্যের নেতৃত্ব তুলে নেন আনিসুল হক নিজের হাতে।

১. আনিসুল হক: একজন আদর্শ সাহিত্যিক: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_07.html

Saturday, September 6, 2014

Homar sometimes nods

এ কে খন্দকারের ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ বইটি নিয়ে ধুন্ধুমার কান্ড চলছে। বইয়ের কিছু সংখ্যায় আগুন দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ বইটির লেখককে ডেকে কঠিন জিজ্ঞাসাবাদের কথাও বলছেন। বইটি নিষেধাজ্ঞার জোর বক্তব্যও কারও কারও। অনেকে আগ বাড়িয়ে এই জোরালো দাবীও তুলছেন এ কে খন্দকারকে রাষ্টদ্রোহিতার অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
ভাগ্যিস, এখন পর্যন্ত এ কে খন্দকারকে কেউ রাজাকার বলে বসেননি। তবে আইএসএসের চর বানিয়ে দিয়েছেন। এবং ওখান থেকে কত টাকা পেয়েছেন তা খতিয়ে দেখার জন্যও বলা হচ্ছে!
এতো দিন জানতাম আন্ডার কাভার এজেন্টরা সর্ব শক্তি ব্যয় করেন নিজেকে লুকিয়ে রাখতে এখন দেখছি এ কে খন্দকারের মত আন্ডার কাভার এজেন্ট বিস্তর হইচই করে বলছেন, ‘মুঝে পাকড়ো, মুঝে পাকড়ো...’!

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এ কে খন্দকার উপ -সেনাপ্রধান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের অনেক তথ্য-উপাত্ত তাঁর জানা, যুদ্ধটাকে তিনি দেখেছেন অনেক কাছ থেকে। তাই তিনি মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত কোনও বক্তব্য যখন দেবেন তখন সেটাকে খাটো করে দেখার কোনও অবকাশ নাই। এবং কোনও প্রকাশনী যখন এমন একজন মানুষের বই প্রকাশ করবে তখন অতি গুরুত্বের সঙ্গেই যে করবে এতেও সন্দেহের কোন অবকাশ নাই। ‘প্রথমা প্রকাশনী’ সেটা করেনি বলেই মনে হচ্ছে। বিশেষ করে ভাষণের শেষ অংশে ‘জয় পাকিস্তান’ যোগ থাকাটা। কারণ এর পক্ষে জোরালো কোনও তথ্য-উপাত্ত নেই বলেই অনুমিত হচ্ছে। এই প্রকাশনীর চেলা-চামুন্ডাদের এটা অজানা থাকাটা অবিশ্বাস্য যে অকাট্য তথ্য-উপাত্ত ব্যতীত এটা ছাপা হলে এই নিয়ে কেউ-ই রা কাড়বে না!
প্রথমা প্রকাশনী যে কারখানার সেই কর্পোরেট হাউজটি সম্ভবত এটাই চাচ্ছিল বইটি বিতর্কিত হোক। আমার ধারণা এই কর্পোরেট হাউজটি আলকাতরা বিক্রিতে নামলেও লোকজন সানন্দে সেই আলকাতরাও লাইন ধরে পয়সা দিয়ে ক্রয় করবে।

বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “...কিন্তু উনি (লেখক) একটা সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখেছেন এবং বলেছেন বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তব্য শেষ করেছেন জয় পাকিস্তান বলে। এটা তথ্যের প্রশ্ন। ১৯৯৮ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমান ...লিখেছিলেন, সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ যেভাবে উদ্ধৃত, সেখানে জয় বাংলা জয় পাকিস্তান আছে।...আমার মনে হয় এখানে এ কে খন্দকার জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান দুটো কথা রাখলেই ভাল হতো।“
এর অর্থ কী! আনিসুজ্জামান কী প্রকারান্তরে এটা মেনে নিচ্ছেন? তাঁর গাত্রদাহ কী এটাই তিনি জয় বাংলার সঙ্গে জয় পাকিস্তান রাখলেন না?

যাই হোক, এই প্রশ্নটা করা অবান্তর হবে না এ কে খন্দকার এতোটা বছর সবগুলো আঙ্গুল ঘিয়ে ডুবিয়ে রেখে এখন তালাশে বেরিয়েছেন ঘিয়ের উৎস গরুটার খোঁজে? আর এ কে খন্দকার তার লেখায় যে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন তা প্রমাণ করার দায়িত্ব তারই উপর বর্তায়।
হয় তিনি অকাট্য প্রমাণ দিয়ে আমাদেরকে, এই প্রজন্মকে ঋণী করবেন নইলে সোজা আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। এই প্রজন্ম আপন বাপকে ছাড়ে না তিনি কোন ছার? কেউ এটা বিস্মৃত না-হলেই ভাল করবেন যে সেই দিন আর নাই। তথাকথিত ঝুলেপড়া সাদা গোঁফ, ঝুলেপড়া ইয়ের বুদ্ধিজীবীরা ফরমায়েসী বুদ্ধি দেবেন আর এই প্রজন্ম হাঁ করে গিলবে! যেখানে যেখানে পথ রুদ্ধ হয় এই প্রজন্ম কলম তুলে নেয় অনায়াস ভঙ্গিতে।

এমনিতে আমরা এ প্রজন্ম বড়ো অভাগা। দলবাজ লোকজনেরা আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রকৃত ইতিহাস জানতে দেয়নি। যে যেভাবে পেরেছে এই প্রজন্মকে বোকা বানাবার চেষ্টা করেছে! কিন্তু এই প্রজন্মের উপর আমার নিজের আস্থা অগাধ। এরা ঠিকই তথ্যের মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে প্রকৃত ইতিহাস বের করে নিয়ে আসছে আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য। 

বিচিত্র এই দেশের প্রায় সবই বিচিত্র। এখানে আমরা কাউকে-কাউকে দেবতার পর্যায়ে নিয়ে যাই। শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করবার জন্য হাজার বছরের নীচে আমরা নামতেই পারি না! Homar sometimes nods- দেবতারাও ভুল করে কিন্তু এঁরা ভুল করেন না। এ বিচিত্র, বড়ো বিচিত্র...।

Thursday, September 4, 2014

পাপ!

আলতাফ মাহমুদ। অনেক পরিচয়ে সমৃদ্ধ। আলাদা করে যার পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এই ভাষা সৈনিক ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটির সুরকার হিসাবেই অমর হয়ে থাকবেন।
১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট এই মানুষটি হারিয়ে যান। পাকিস্তানি বাহিনী চোখ বেঁধে তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তাঁর উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয় কিন্তু সেই নির্যাতন কেমনতরো ছিল তা কী আমরা জানি? অন্যদের কথা জানি না কিন্তু আমার জানা ছিল না। নির্যাতনের একপর্যায়ে তাঁকে ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করা হয়েছিল। এরপরই তাঁর মৃত্যু হয়।

আহ, চোখ বন্ধ করে আমি কেবল খানিকটা আঁচ করার চেষ্টা করছি। আলতাফ মাহমুদের মস্তিষ্ক কতক্ষণ ধরে সচল ছিল? টগবগ করে ফুটতে থাকা পানিতে হাড়-মাংস সেদ্ধ হচ্ছে- এই অন্য ভুবনের সহ্যাতীত কষ্ট কতটা সময় ধরে এই মানুষটা সহ্য করেছেন। শারিরীক কষ্টের একপর্যায়ে নাকি মানুষ চেতনা হারিয়ে ফেলে- তখন কী কষ্টটা খানিকটা লাঘব হয়? জানি না, জানি না আমি। এই নিয়ে আমি আর ভাবতে চাই না। আমার মস্তিষ্ক নিরাপদ দূরত্বে থেকেও এই সহ্যাতীত বেদনার ভার নিতে চাচ্ছে না।

প্রখ্যাত সাহিত্যিক শওকত ওসমান নিয়ম করে দিনলিপি লিখতেন। ১৯ জানুয়ারি ১৯৭২ সালের তাঁর দিনলিপির পাতায় তিনি লিখেছেন: “...সুরকার আলতাফ মাহমুদের মৃত্যুর আরেকটা সুলুক পাওয়া গেল। ক্যান্টনমেন্টের ডাক্তার এই তথ্য যুগিয়েছেন। তাঁর উপর অকথ্য শারিরীক নির্যাতন চালায় জালেমেরা বেশ কয়েক দিন ধরে। পরে গরম পানিতে সিদ্ধ করে তাঁকে মারা হয়।...” 

আলতাফ মাহমুদ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। তাঁর বাসা মুক্তিযোদ্ধাদের আস্তানা ছিল। তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে উঠোনে চাপা দেওয়া বড়ো ট্যাংকে স্টেনগান, গুলি এবং অন্যান্য অস্ত্র পাওয়া গিয়েছিল। যা তাঁর জন্য কাল হয়েছিল। শওকত ওসমান খানিকটা অন্য মতও ব্যক্ত করেন যার সঙ্গে আমিও একমত। শওকত ওসমান দিনলিপিতে লিখেছিলেন: “...কিন্তু যারা অমন ঝুঁকির মুখে আলতাফ মাহমুদকে ঠেলে দিয়েছিল তারা ভাল কাজ করেনি। প্রতিভা তো বছর বছর জন্মায় না। ওরা এ কথা মনে রাখলে এই অপূরণীয় ক্ষতির হাত থেকে বাংলাদেশ মুক্ত থাকত।...” 

আমি অতীতে বারবার বলে এসেছি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আদৌ সেনাবাহিনী ছিল না, এরা ছিল সাইকোপ্যাথ। এদেরকে যোদ্ধা বলতে আমি নারাজ। যুদ্ধের প্রয়োজনে বা তর্কের খাতিরে ধরে নেই অপ্রয়োজনেও কাউকে মেরে ফেলা এক কথা কিন্তু এরা যে ভঙ্গিতে খুনগুলো করেছে তা কখনই মানুষের আচরণ হতে পারে না। হালে আমরা প্রযুত্তির কল্যাণে পৃথিবী জুড়ে নৃশংসতার যে সমস্ত নমুনা দেখে হতভম্ব হই, বাকরুদ্ধ হই, থরথর করে কাঁপি; ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকান্ড দেখার সুযোগ থাকলে অনায়াসে বুঝতে পারতাম এখনকার নৃশংসতাকেও তা অনায়াসে ছাড়িয়ে যেত। পাকিস্তানিরা যা করেছে এ স্রেফ পাপ। বলা হয়ে থাকে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। কে জানে হয়তো সেই পাপের মাসুলই দিচ্ছে এরা...।

পুনর্মূষিকো ভব!

অবশেষে এক বছরের জন্য তসলিমা নাসরিনের ভারতীয় ভিসার মেয়াদ বেড়েছে। তসলিমার স্বপ্নপূরণ হলো। বাংলাদেশ তাকে ফিরতে দিত কি দিত না সে ভিন্ন প্রসঙ্গ কিন্তু আদৌ তসলিমা ফিরতে চান কি না?

পুরনো এই লেখাটায় [১] একজন পাঠক, ‘সায়ন’ তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন:
...আমি নিশ্চিত ওকে এসেসেফ নিরাপত্তা দিলেও এখন সে বাংলাদেশে আসবে না।” আমার কাছে এই মন্তব্যটা অতিশয়োক্তি মনে হয়েছিল। আমি নিশ্চিত ছিলাম তিনি রাগের মাথায় এটা বলেছিলেন। তাই গুরুত্বের সঙ্গে দেখার কোনও কারণ নাই!

কিন্তু কখনও-কখনও বাস্তব ফিকশনকেও ছাড়িয়ে যায়- তসলিমা নাসরিন নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে যান! ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার পর তসলিমা সাফ-সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চান না। তার মুখেই শোনা যাক:
আমি ভারতেই থাকতে চাই। ...২০ বছরে বাংলাদেশ থেকে অনেক বন্ধু হয়েছে এই দেশে, যারা (আমার) ভাষাকে বুঝেছে। তাই এমন বন্ধু বা আত্মীয় আমি চাই না যারা আমার আবেগকে মুল্য দেয় না।

তসলিমা নাসরিন বিজেপির জন্য নিজের দেশকে বিকিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি। ‘লজ্জা’ নামের এক আবর্জনা প্রসব করেছিলেন। এর রেশ ধরে বিজেপি তসলিমাকে মাথায় তুলে রেখেছিল। দেবীর মর্যাদায়। বিজেপি তসলিমার ছবি দিয়ে শহর বিলবোর্ডে ছেয়ে ফেলেছিল। এই ব্যবস্থা অভূতপূর্ব!
পেছনের কথা ভিন্ন! বিজেপি বাবরি মসজিদ নিয়ে যে পুরীষ গায়ে মেখেছিল তা ধোয়ার জন্য তসলিমার 'লজ্জা' নামের সাবানটার খুব প্রয়োজন ছিল। সেই মহান সুযোগটা করে দিয়েছিলেন তসলিমা। তসলিমা নাসরিন দুনিয়ার খবর রাখেন কিন্তু এটা বিস্মৃত হয়েছিলেন বিজেপি কেবল বাপীই না পাপীও। বিজেপির হাতে লেগে আছে হাজার মানুষের রক্ত। সেই রক্তের স্রোত মাড়িয়ে তসলিমা বিজেপির সঙ্গে নেচেছেন। নাচ যখন শেষ হলা তখন বিজেপি কলার খোসার ন্যায় তসলিমাকে ছুড়ে ফেলল। ভিসার মেয়াদ বাড়াতে স্রেফ অস্বীকার করল।

তখন তসলিমা নাসরিন এক চোখে জল অন্য চোখে পানি নিয়ে টুইটারে টুইট করলেন, “আমার পায়র তলায় মাটি নেই।
পরে তসলিমা বিস্তর কান্নাকাটি একে-ওকে ধরাধরি করে অবশেষে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে সমর্থ হলেন। তসলিমাকে অভিনন্দন জানিয়ে এবং হালে তসলিমা যে ক্রমশ ‘শরম’ নামের জিনিসটা প্রসব করছেন তা ‘লজ্জা’-কেও ছাড়িয়ে যাক এই আশাবাদ ব্যক্ত করে লেখাটা এখানেই শেষ করছি।

এবার অন্য প্রসঙ্গ। প্রসঙ্গ আষাঢ় মাস। আষাঢ় মাস সবে শেষ হলো। আষাঢ় মাসে আষাঢ়ে গল্প হবে না তাই বুঝি হয়! এক অতি লাজুক মহিলা নাইন ওয়ান ওয়ান টাইপের জরুরি নাম্বারে ফোন করে কেবল ওই রাজ্যের পুলিশকেই ডাকলেন না বিশেষ ব্যবস্থায় পাশের রাজ্যের পুলিশকেও।
প্যাঁ-পোঁ সাইরেন বাজিয়ে দুই রাজ্যের পুলিশ হাজির। অভিযোগ কঠিন। পুরুষেরা বড়ো পাজি, বড়ো নচ্ছার! শহরের পুরুষেরা নগ্ন গাত্রে। কী সর্বনাশ-কী সর্বনাশ! কিন্তু শেরিফ এসেই বললেন, ‘হাউডি ম্যাম, আমি তো এমন কাউকে দেখলাম না’।
লাজুক মহিলা লজ্জার মাথা খেয়ে শেরিফকে বললেন, ‘বি...পুলিশ হয়েছেন। আসুন আমার সঙ্গে’। বলে উপরতলায় নিয়ে গিয়ে তর্জনি নাচিয়ে বললেন, ‘বা...পুলিশ আপনারা। এখন বলেন, এই সব কী’!
শেরিফ দেখলেন আশেপাশের দেওয়ালঘেরা বাড়িগুলোর সুইমিংপুলে কেউ-কেউ জলকেলি করছে এটা সত্য।
শেরিফ চিঁ চি করে বললেন, ‘কিন্তু এরা সবাই তো পানির নীচে। মগ্ন না নগ্ন তাও তো বুঝতে পারছি না’? আর হলোই বা’।
লাজুক মহিলা কথা কেড়ে নিয়ে ক্ষেপে গিয়ে বললেন, ‘আপনি ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করে দেখুন না ওরা পানি থেকে বের হলে তখন ঠিক দেখবেন...’।

অন্য রাজ্যের শেরিফের মেজাজ ভাল নেই কারণ তিনি ঝড়ের গতিতে চার ঘন্টার ড্রাইভ করে এসেছেন। তিনি মুখ লম্বা করে বললেন, ‘তো ম্যাম, সে যাই হোক। ইয়ে, এটা তো আর আমার এলাকা না। তা আমাকে ডেকেছেন কেন'!
লাজুক মহিলা এবার চিল চিৎকার করে বললেন, ‘আমি কি আপনার সঙ্গে ইয়ে...করতে ডেকেছি’!
বলেই তিনি অন্য রাজ্যের শেরিফের হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে ছাদে নিয়ে গেলেন। ছাদে ইয়া বড়ো এক টেলিস্কোপ। তিনি এদিক-ওদিক, ওপর-নীচ বিস্তর সময় ব্যয় করে টেলিস্কোপটা দূর-দূরান্তে স্থির করে বললেন, ‘দেখুন, এবার দেখে বলুন। আপনার রাজ্যের পুরুষেরা যে গোসল করছে এদের গায়ে কী একটা সুতোও আছে- হা, বলুন, আছে...’?

*১. একালের দেবী, তসলিমা নাসরিন: http://www.ali-mahmed.com/2012/08/blog-post.html

Tuesday, September 2, 2014

গুরু-শিষ্য!

গেছি এক উকিলের চেম্বারে। উকিল সাহেবের চেয়ার শূন্য! কারণ উকিল সাহেব আন্ডার গ্রাউন্ডে মানে অন্দরমহলে- সারাদিনের কোর্টকাচারির ধকলে বিছানায় চিত, কাত বা উপুড় হয়ে আছেন। বিভিন্ন কারণে এখানে আসা লোকজনেরা মশার কমড় খেতে খেতে ঝিমাচ্ছেন। ‘নেই কাজ তো খৈ ভাজ’- আমি অলস ভঙ্গিতে পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছি।

এরিমধ্যে একজন সেলফোনে উঁচু ভল্যুমে ওয়াজ চালু করে দিলেন। তিনি আবার ফাঁকে ফাঁকে এটাও জানাতে কার্পণ্য করছেন না যে অতীতে এই জিনিস তিনি অসংখ্যবার শুনেছেন। একদিন সারা রাত ধরে কেবল শুনেই গেছেন আর অঝোরে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন। তিনি এটাও এক ফাঁকে অন্যদের জানিয়ে দিলেন গভীর রাতে শুনলে বুঝবেন এটা কী জিনিস...।

আধুনিক প্রযুক্তির এও এক নিদর্শন। এখন কেবল আট-দশটা চোঙ্গা লাগিয়েই লোকজনকে কেবল শোনাবার ব্যবস্থা নেই এই কর্মকান্ডে সেলফোনও চলে এসেছে।
আমাদের গুণদাদা আবার আদর করে সেলফোনের নাম দিয়েছেন ‘মুঠোফোন’। হালের ৫-৬-৭ ইঞ্চি ডিসপ্লের যে ফোনগুলো এগুলো তো মুঠোয় আটকে রাখা অসম্ভব। এগুলোর নাম কী হবে ‘থাবাফোন’? আফসোস, গুণদাদাকে জিজ্ঞেস করার সুযোগ হয়নি!

যাই হোক, সেলফোন বা চালু নাম মোবাইল ফোনে এক মৌলভি সাহেব বয়ান করছেন। তিনি শুরু করলেন এভাবে, ‘এখন রাত সাড়ে বারোটা। আপনেরা কি আমাকে দেড় ঘন্টা সময় দিবেন’। লোকজনেরা সমস্বরে বললেন, ‘জ্বী হুজুর’। এর মানে রাত দুইটা পর্যন্ত আট-দশটা মাইক লাগিয়ে তিনি ধর্মউদ্ধার করবেন। আশা করছি, এই পরিধির মধ্যে অসুস্থ কোনও মানুষ বা কাকডাকা ভোরে উদয়াস্ত পরিশ্রমে খেটে খাওয়া মানুষ অথবা অন্য ধর্মের কেউ থাকবেন না।
তো বয়ানে তিনি বলছেন, “এই নবীর রাগ আছিল মারাত্তক। চেতলে রক্ষা আছিল না। একবার একজনরে নাম জিগাইলে হেতে তার নাম, বাপের নাম, দাদার নাম, দাদার দাদার নাম, হেরো দাদার নাম চৌদ্দগুষ্ঠির নাম কওয়া শুরু করলে নবী চেইতা কইলেন, তুমি আমার লগে ফাইজলামি করো। তোমারে এতো কথা জিগাইছি আমি?
হেই লোক কইল, ক্যান! আপনেরে যখন জিগান হইছিল, তুমার হাতে এইডা কিতা, তখন আপনে কি কইছিলেন মনে আছে? কইছিলেন, এইডা লাডি। ঠ্যাকায় পড়লে এইডায় আমি ভর দেই, এইডা দিয়া আমি বকরি চড়াই, সাপ-টাপ আইলে খেদাই। কতলা কথাই না তহন আপনে কইছিলেন! এহন আমি কইলে দোষ হইব ক্যান?
নবী চেইতা কইলেন, শাট আপ!
হেই লোকও কইলেন, আপনে ডাবল শাট আপ!”

যে নবীর কথা এই মৌলভি সাহেব বলছেন যদিও তাঁর জন্ম ঠিক কখন হয়েছিল এটা নিয়ে মতভেদ আছে! তবে অনুমান করা হয় ৩৩০০ বছর পূর্বে। বলা হয়ে থাকে হযরত মুসা পয়দেশসহ কিতাবুল মোকাদ্দেসের পাঁচটি খন্ড লিখেছিলেন বা তাঁর উপর নাযিল হয়েছিল। পবিত্র তৌরাত, হিব্রু ভাষায় যেটাকে বলা হয়, ‘তোরাহ’। সবই জানা ছিল কিন্তু এই নবী যে দুর্ধর্ষ ইংরাজিও বললেন এটা জানা ছিল না! 'ডাবল শাট আপ'ও যে রাগ বহিঃপ্রকাশের এক মারাত্মক হাতিয়ার আমাদের মৌলভি সাহেবের কল্যাণে এটাও জানা হয়ে গেল।