Search

Wednesday, September 24, 2014

আলোর পথে গুহামানব!

মাহবুবকে নিয়ে যখন লেখাটা দিয়েছিলাম [১] তখন বেশ খানিকটা ভয়ে ভয়ে ছিলাম! ওর হুইল-চেয়ারের ব্যবস্থা হবে তো? ভয়ের কারণটা বলি। ইতিপূর্বে অনেকবারই এই ধরনের সমস্যা নিয়ে লিখেছি- এ সত্য, অনেকেই মমতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু অনেকের কাছে এমনটাও মনে হতে পারে এই রে, ব্যাটা বুঝি আবারও ‘ট্যাকাটুকা’ চাইবে! এই যন্ত্রণায় লোকজনেরা বিরক্ত হয়ে আমার লেখা পড়া ছেড়ে দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। শেষে নিজের লেখা নিজেই পড়তে হবে। আমাদের দেশের দুঁদে সাহিত্যিকদের অনুকরণ করে মাথা দুলিয়ে বলতে হবে, আমি তো আমার নিজের জন্যই লিখি। শোনো কথা- ‘ট্যাটনামির’ কথা!

যাই হোক, লেখাটা দেওয়ার পর অজান্তই বিড়বিড় করতে হলো, ওরে, আপনারা এতো ভাল কেন। কেন-কেন? ইনবক্সে আলাদা ম্যাসেজ দিয়ে কয়েকজনই মাহবুবের প্রতি মমতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তো, স্বভাবতই প্রথম যিনি যোগাযোগ করেছিলেন, যিনি কোনও প্রকারেই নাম প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নন তাঁর ইচ্ছায় মাহবুবের জন্য হুইল-চেয়ার কেনা হলো। মানুষটার প্রতি কেবল পুরনো কথাটাই বলি, আপনারা এতো ভাল কেন!

আজ মাহবুবকে এই হুইল-চেয়ারটা দেওয়ার জন্য একটা অটো-রিক্সা ভাড়া করতে হয়েছিল। আমার সঙ্গে যিনি ছিলেন তাঁর সঙ্গে বিস্তর বাদানুবাদ করেও তিনি কোনও ক্রমেই আমাকে ভাড়া দিতে দিলেন না- কেবল বাকী ছিল মারামারিটা করা। অটো-রিক্সার চালক নায্য ভাড়া নিতে চাইলেন না।
লোকজনরা শুরু করল কী! এই সমস্ত কাজ (আমার ভাষায় অকাজ) করতে গিয়ে আমার কেবল এটাই মনে হয়, আসলে আমরা বেশিরভাগ মানুষই ভাল থাকতে চাই-হতে চাই কেবল খানিকটা সুযোগের অপেক্ষা।

এটা ঠিক, হুইল-চেয়ারের নিয়ে স্কুলে যাওয়াটা একটু দূর হয়ে যায়। কিন্তু মাহবুব এখন যখন চাইবে তখেই স্কুলে যেতে পারবে তারচেয়ে জরুরি হচ্ছে এখন সে ইচ্ছা করলেই, বিষণ্ন বোধ করলেই অন্তত বাড়ির আশেপাশে যেতে পারবে। খোলা আকাশের নীচে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়াতে পারবে। চুল এলোমেলো করা বাতাসে গা জুড়াতে পারবে।

প্রথম দিন যখন মাহবুবকে দেখেছিলাম তখন এটাও মনে হয়েছিল অন্ধকার যেন গুহায় এক গুহামানব। আজ মাহবুব এবং তানিয়ার ছবিগুলো যখন আমি দেখছিলাম আমার এমনটাও মনে হচ্ছিল গুহামানব আলোতে বেরিয়ে এসেছে।
হুইল-চেয়ার দিয়ে যে মানুষটা গুহামানবকে আলোতে টেনে নিয়ে আসলেন সেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানুষটার প্রতি আমি নতজানু হই...।

১. http://www.ali-mahmed.com/2014/09/blog-post_20.html 

No comments: