Search

Tuesday, November 13, 2012

বাবা কেন চোর?

'বাবা কেন চাকর' নামে বাংলা একটা চলচিত্র আছে। কেউ পোস্টের শিরোনাম দেখে ওখান থেকে ধার করেছি এটা বললে আমি কারো সঙ্গে কাজিয়া করতে যাব না।

রাষ্ট্র নিয়ে বলতে যাওয়া মুশকিল। কারণ উঁচুমার্গের পন্ডিতদের একগাদা বাতচিত নিয়ে লোকজনেরা ঝাপিয়ে পড়বেন। অধ্যাপক গেটেল বলেছেন..., তো, প্রফেসর বার্কার বলেন..., John h. Hallowell-এর ভাষায়...ইত্যাদি। এই সব আমার নাগালের বাইরে বিধায় সযতনে এড়িয়ে গেলুম। আমি আমার অল্প জ্ঞানে বুঝি, দেশ হচ্ছে মা, রাষ্ট্র হচ্ছে পিতা। এখন রাষ্ট্র এবং দেশের মধ্যে পার্থক্য কি এই নিয়ে আমাকে যুযুৎসুর প্যাচে ফেলে দেবেন না আবার।

আমরা, সন্তানেরা, জেনে, না-জেনে চুরি করি, চোর হই। কেউ কেউ হাজার কোটি টাকা চুরি করে লকলকে জিহ্বার, চোখের ক্ষিধার কারণে। কেউ-কেউ চুরি করে বাচ্চার দুধের জন্য, প্রাণ রক্ষাকারী ওষুধের জন্য। শেষ কথা, চুরি তো চুরিই। যে কারণেই চুরি করুক, একজন চোর তার সন্তানের কাছে চোরবাবা হয়েই থাকে। বাবাটা না জানলেও সন্তান ঠিকই জানে তার বাবার একটা চোরগাছের [১] প্রয়োজন হবে।
এও সত্য সন্তানেরা, বখা সন্তানেরা যখন চুরি করে তখন 'রাস্ট্রবাবা' বেদনাহত হন, শাসন করেন। শাস্তি দেন। 'দেশমা'কে খুব বকাবকি করেন। দুখী দেশমাটা সন্তানের কারণে আরও দুখী হন, বেদনায় নীল হয়ে যান।

এমনিতে এখন বিদ্যুত নিয়ে দেশে কোনো সমস্যা নাই। দেশ বিদ্যুতে ভাসছে! আমাদের 'পরধানমন্ত্রী' বলেছিলেন, সকালে-বিকালে দু-ঘন্টা লোডশেডিং দেয়া হয় কেবল আমাদেরকে এটা বোঝাবার জন্য লোডশেডিং কি, কাহাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি।
এটা বলাটা সমীচীন হলো না কারণ এভাবে আমাদেরকে না-বুঝিয়ে যদি এমনটা বলতেন, যে বাংলাদেশে লোডশেডিং জাদুঘর ব্যতীত আর কোথাও থাকবে না। তাহলে জাদুঘরের টিকেট বিক্রি করে বিস্তর টাকা আসত। সেই টাকায় জাদুঘরের বাইরে যে কামানগুলো এতোটা কাল গোলা শূণ্য ছিল সেগুলোর গোলা কেনার ব্যবস্থা হত।
সরকারের টাকার নাকি খুব টানাটানি। শুনতে পাই, ব্যবস্থাটা নাকি হচ্ছে। অচিরেই লোডশেডিং দেখার জন্য লোকজন দলে দলে জাদুঘরে যাবে। ওখানে রাজনীতিবিদরা জাদু দেখাবেন। তাঁরা ডান হাতে ধরবেন সেই তারটা, যেটায় বিদ্যুত প্রবাহিত হবে আর বাম হাতে ধরবেন যেটায় বিদ্যুত থাকবে না। আমাদের মত নির্বোধ-বুদ্ধু, আমজনতা-ম্যাংগোপাবলিকের না-বুঝে উপায়ই থাকবে না লোডশেডিং জিনিসটা কী। না-বোঝা পর্যন্ত ছাড়াছাড়ি নাই। ডান-বাম, বাম-ডান; বেছে নাও। তার ধরাধরি চলতেই থাকবে। ভেবেই রোমাঞ্চিত হই। হুডিনি, কপারফিল্ড কোন ছার!

এদিকে বিদ্যুত বিল নিয়ে আরেক জাদু চলছে। আমার বাসার বিদ্যুত বিল আসত ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। গত জুন মাসে বিল আসল ২২০০ টাকা! হাতে মাথা দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নাই বিধায় দায়ে পড়ে আমি মাথায় হাত দিলাম। এই বাড়তি বিলের বোঝা বইব কেমন করে-এই বাড়তি বিলের বোঝা সইব কেমন করে! আমার জানা মতে, বাসায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র টাইপের এমন নতুন কোনো জিনিস তো লাগানো হয়নি যে দুম করে প্রায় দ্বিগুণ বিল আসবে। বিষয় কী!

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিদ্যুত বিলের যে ধাপ ছিল তা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কেউ ৩০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহার করলে তাকে বাড়তি টাকা দিতে হবে। সহজ করে বললে, ধরা যাক, কেউ ৩৫০ ইউনিট ব্যবহার করল। আগে যেটা ছিল, ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত সহনীয় টাকা দিতে হতো এবং ৫০ ইউনিটের জন্য জরিমানা স্বরূপ অসহনীয় বাড়তি টাকা দেয়ার বিধান ছিল।
কিন্তু এখন যেটা দাঁড়াল, ৩০০ উপর কারো ইউনিট হলেই তাকে সমস্ত ইউনিটেরই (১ থেকে ৩৫০ ইউনিট) অসহনীয় বাড়তি টাকা দিতে হবে। এভাবে বিলগুলো দ্বিগুণ, আড়াই গুণ হয়ে গেল!

এর মধ্যে আবার চালাকিও আছে। আমি আমার মিটার দেখলাম। আমার ইউনিট আসলে ৩০০-এর নীচেই ছিল কিন্তু আমাকে ফাঁদে ফেলার জন্য মিটার রিডার সাহেব ইচ্ছা করে ৩০০-এর বেশি দেখিয়ে দিয়েছেন। চট করে এটা বোঝার যো কারও নাই কারণ এই যে বাড়তি ইউনিট তিনি দেখিয়ে দিলেন, আমি যখন বিল হাতে পাব তখন এই বাড়তি ইউনিট আর বাড়তি থাকবে না, ব্যবহার করা হয়ে যাবে। এ জটিল ফাঁদ।
যাই হোক, বিদ্যুত অফিসে আমি লিখিত অভিযোগ জানালাম। এরা হাসি গোপন করে বললেন, সমস্ত দেশেই এই ব্যবস্থা-অবস্থা। হুম, দেশের 'কুটি-কুটি' মানুষের সমস্যা হচ্ছে না, হচ্ছে কেবল আপনার।

তখন আমি বুঝিনি, কার মাথা থেকে এই জিনিস প্রসব হয়েছে! প্রসবের পথ-দিকও আজকাল ভ্রষ্ট হয়ে গেছে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য দায়ী কিনা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এই সব একপাশে সরিয়ে বলি, এ তো অন্যায়! এ তো স্রেফ মানুষের গলা কেটে ফেলা।
তখনও আমি জানতে পারিনি, সমস্ত দেশ থেকে অন্যায্য ভাবে কত টাকা নেয়া হচ্ছে? পরে জানা গেল, প্রায় ৪০০ কোটি টাকা!

তবে সুখের বিষয় হচ্ছে, বিআরসির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসূফ হোসেন এই সিদ্ধান্তটা ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন। হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। যাক বাবা, তবুও তো এটা জানা গেল, কেউ একজন তো স্বীকার করলেন।
বৈদেশ হলে বলা যেত দ্বিগুণ, আড়াই গুণ টাকা নিয়ে আমার যে আর্থিক, মানসিক ক্ষতি হয়েছে; দাও বাপু এইবার জরিমানা। কিন্তু এই দেশে তো আর সেটা চিন্তাও করা যায় না। গরীব দেশ, গরীব দেশের গরীব গণতন্ত্র! গণতন্ত্রের জন্য আমাদেরকে কত ত্যাগই না স্বীকার করতে হয়! এই আমরা হো মো এরশাদকে [২], [৩], [৪], [৫] বলি, বিশ্বচোর। এই আমরাই বলি, এরশাদের হাত কী নরোম গো। এই এরশাদই শহীদ নূর হোসেনকে বলেন, বাপ রে বাপ। এই এরশাদই শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে বলেন, "শহীদ দিবস পালন নয়, আগামীতে কলঙ্ক দিবস পালন করব আমরা"। (সূত্র: প্রথম আলো, ১১ নভেম্বর ২০১২)

যাই হোক, জরিমানার আর প্রয়োজন নাই, বাপ। আমাদের টাকা আমাদেরকে ফেরত দেয়া হবে এতেই আমি খুশি। এখানে কোনো সমস্যা থাকার কথা না। ওয়াল্লা, এরপরই ঘোষণা আসল, এই ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে 'এনার্জি সাপোর্ট ফান্ড' করা হবে। বিদ্যুৎ খাতে নানা প্রয়োজনে এটা ব্যবহার হবে। এখন শুনতে পাই, কোম্পানিগুলো এই টাকা তাদেরকে দেয়ার জন্য চাচ্ছে।

এ তো স্রেফ চুরি, অস্বাভাবিক এক চুরি! রাষ্ট্র নামের বাবা তার সন্তানদের টাকা চুরি করছে। রাষ্ট্র নিজেই যখন চোর হয়ে পড়ে তখন তার সন্তানেরা চোর হবে এ আর বিচিত্র কী...।

সহায়ক সূত্র:
১. চোরগাছ...: http://www.ali-mahmed.com/2009/01/blog-post_1821.html
২. অন্ধকার... : http://www.ali-mahmed.com/2011/07/blog-post_03.html
৩. উঠে আসে..: http://www.ali-mahmed.com/2011/06/blog-post_4419.html
৪. হো মো এরশাদ, প্রেস এডভাইস: http://www.ali-mahmed.com/2011/07/blog-post_17.html
৫. মুবারকবাদ-নিন্দাবাদ: http://www.ali-mahmed.com/2009/03/blog-post_09.html

4 comments:

Anonymous said...

মাত্র ১ হাজার টাকার জন্য,,???

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

অধিকার, মর্যাদার সঙ্গে টাকার অংক গুলিয়ে ফেলা অর্থহীন! লেখাটা আপনি বোঝেননি এটা বলে আপনাকে খাটো করি না তবে লেখাটা যে আপনি পুরোটা পড়েননি এতে অন্তত আমার কোনো সন্দেহ নেই... @Anonymous

sourav said...

meter tempering,readerke malpani etc podokkhep obilombe grohon korun

Shahadat Udraji said...

সব জায়গায় ধরা আমাদেরই।