Search

Saturday, August 27, 2011

হ্যালো, গু-ডাক্তার!

(সতর্কীকরণ: অতি সূক্ষ রুচি যাদের, তাদের প্রতি অনুরোধ, লেখাটা না-পড়লেই ভালো করবেন।)
লেখাটা না-লিখে আমার উপায় নেই! গু শব্দটায় যাদের গা গুলায় তাঁরা গুয়ের স্থলে 'সু' পড়ুন তাহলেই ঝামেলা মিটে যায়। :)

ঢাকা যাওয়ার কথা শুনলেই আমার ইয়ে বন্ধ হয়ে যায়! শেষ গিয়েছিলাম এবছর ফেব্রুয়ারিতে। বইমেলায় না, কারও আমন্ত্রণে। এখন আর বইমেলায় যাওয়ার কোন অর্থ নাই, বইমেলা এখন হয়ে গেছে এই দেশেরই এক বাস্তব নমুনা! বইমেলা না বলে বানিজ্যমেলা বললে ভাল হয়। শত-শত হলুদ কাপড়পরা
ছোকরা-ছুকরি বাদ্য বাজাতে বাজাতে হুক্কা হুআ- হুক্কা হুআ রবে মেলা মাঠে এমন চক্কর লাগায় যে ভ্রম হয় যে  হাজার-হাজার ব্ল্যাক স্ট্যালিয়নের খুরঘাতে মাঠে ধুলো উড়ছে। 'হুক্কা হুআ'। হুক্কা জিনিসটা সম্বন্ধে ভাল ধারণা নাই আমার কিন্তু 'হুআ'- হুমায়ূন আহমেদের সংক্ষেপিত রূপ হতে পারে।

কিন্তু এবার ঢাকা না-গেলে চলছিল না। যাওয়াটা অতি জরুরি। আমার মাতাজির 'কোলোনোস্কপি' করা প্রয়োজন। এও এক বিচিত্র- এই দেশের সব চাকা বনবন করে ঘুরছে ঢাকাকে কেন্দ্র করে। ঢাকা যে একটা বসবাস অযোগ্য নগরি [১] এটা কেন লোকজনরা বুঝতে চাইছেন না কে জানে!
আমাদের থাকার জন্য যে গেস্ট-হাউজ ঠিক করা হয়েছে ওটার দায়িত্বে থাকা একজন খুব হতাশ হন আমার সাথে কোন বিজনেস কার্ড টাইপের কিছু নাই বলে। দেশের বাইরেও এই নিয়ে কম হ্যাপা হয়নি [২]। আরে, আমার কার্ড থাকবে কেন, কার্ডে আমি কি লিখব, ছাতা...? আহা, এটা কি না জানা নেই- সবার আছে ক্যারিয়ার আর আমার হাতে টিফিন ক্যারিয়ার। তিনি নিজের একটা কার্ড দিয়ে আমাকে আলাদা খানিকটা 
খাতির দেখাবার চেষ্টা করেন। তার দেয়া কার্ড দেখে আমার কেবল মনে হচ্ছিল লোকজন এমন নির্বোধ হয় কেন! কার্ডে কেউ কী নিজের নামের আগে মিস্টার শব্দটা যোগ করে? মি. কামরুজ্জামান...। হা ঈশ্বর!    

তবে আমার দেখা সেরা বিজনেস বা ভিজিটিং কার্ড হচ্ছে এক আমলা সাহেবের। পিএইচডি লিখে লেখা ছিল, 'সেলফ উইথড্রল আফটার ওয়ান ইয়ার'। হা হা হা। এক বছর আ্লেইন পড়ার সুবাদে তাহলে আমিও লিখতে পারব, আলী মাহমেদ, এলএলবি (সেলফ উইথড্রল আফটার ওয়ান ইয়ার) 

 
আমি এখানকার সুউচ্চ ছাদ থেকে ঢাকা দেখি। ঢাকা দেখি এটা খানিক ভুল বললাম, কংক্রিটের বস্তি দেখি। পিপড়ের সারির মত লোকজন ছুটছে। একবার জ্যাম লাগলে তা পিপড়ের গতিকেও হার মানিয়ে দেয়।
কোথাও কোনও শৃঙ্খলা নেই। ওভারব্রীজ থাকার পরও লোকজন রাস্তার মাঝ দিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে। এই কর্মকান্ডের জন্য নাকি পাঁচ টাকা ফাইন [৩]!


কংক্রিটের বস্তির মধ্যেও খানিকটা সবুজ দেখে শহরটাকে প্রাণহীন মনে হয় না। ভাল লাগে। ঢাকায় এমন সবুজ দেখলেই কেমন খটকা লাগে, ঘটনা কী! এবং আমি নিশ্চিত, এই জায়গাটা কোনও-না-কোনও প্রকারে সরকারের এবং জায়গাটা এখনও কোন মানব-শকুনের চোখে পড়ার মত সুযোগ-সুবিধে হয়নি।


আমরা কেউ কি এটা লক্ষ করছি না! আমাদের অজান্তেই ভয়ংকর এক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রকারে ঢাকার লোকজনকে রোবট বানিয়ে ফেলার ফল আমরা সমস্ত দেশবাসী ভোগ করব। কারণ এই দেশ যারা চালাচ্ছেন তাদের অধিকাংশই বসবাস করেন ঢাকায়! ফল যা হওয়ার তাই হবে।

যাই হোক, আমার মার 'কলোনোস্কপি' করতে গিয়ে বেশ খানিকটা জটিলতা দেখা দিল। যেটা করতে গিয়ে অন্য লোকজন সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় হাসতে-হাসতে বাড়ি ফেরে সেটাই করতে গিয়ে আমার মার বেলায় গনেশ উল্টে গেল। এই পরীক্ষার প্রিপারেশনে সব রকম চেষ্টাই করা হচ্ছিল। নিয়ম হচ্ছে, খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে এবং স্টমাক পরিষ্কার রাখতে হবে। পেট ক্লিন রাখার জন্য যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় ওটা পানিতে মিশিয়ে গ্যালন-গ্যালন পানি খাওয়া এবং যথারীতি বাথরুমকে বাড়ি-ঘর বানিয়ে ফেলা। দুর্বল শরীর নিয়েও অনবরত হাঁটতে হয়। কী কষ্ট! এমন কষ্ট চোখে দেখা যায় না!

কলোনোস্কপি করার পূর্বে পেথিডিন দেয়া হয় তখন রোগি থাকে একটা ঘোরের মধ্যে। যে ডাক্তার এটা করবেন তিনি সিকি আধুলি না, ফুল প্রফেসর- প্রফেসর তৌহিদুল আলম। আমার পরিচিত ডাক্তার তাকে দিয়ে পরীক্ষাটা করাতে বলেছেন কারণ তিনি কেবল কলোনোস্কপিই করেন না, তিনি সার্জনও। সুবিধেটাও আছে। 'সিস্ট-টিস্ট' ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে কেটে ফেলতে পারবেন।
রোগিকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিছুক্ষণ পর প্রফেসর সাহেব আমাদেরকে ভেতরে ডাকলেন। ঢোকামাত্র তিনি গু-গু বলে চিৎকার করে উঠলেন। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম আমি পা দিয়ে গু মাড়িয়ে ফেলেছি। এমতাবস্থায় নিয়ম হচ্ছে লাফ দিয়ে সরে যাওয়া। সবাই এই নিয়ম পালন করে। অবশ্য এই নিয়মটা হচ্ছে যাদের ব্রেন আছে তাদের জন্য। ইতিমধ্যে অনেকেই জেনে গেছেন আমার ব্রেন নামের জিনিসটাই নাই, আফসোস। তাই আমি লাফ দিলাম না, স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রফেসর সাহেব মনিটরের মত একটা জিনিসের প্রতি আঙুল দেখিয়ে আবারও শুরু করলেন গু-গু-গু!

এবার আমি বুঝতে পারলাম। এই প্রফেসর সাহেবের কথার অর্থ হচ্ছে রোগির পেট পরিষ্কার হয়নি। আমি হতভম্ব হয়ে মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। এই শব্দটা তো আজকাল অশিক্ষিত মানুষও ব্যবহার করেন না। প্রফেসর নামের এই মানুষটা কী অবলীলায় না এই শব্দটা ব্যবহার করছেন। এই মানুষটার কী ধারণা ময়লা বললে আমরা বুঝতে পারব না? আমরা ভাই-বোন বিব্রত, ম্রিয়মান। ভাগ্যিস, রোগি পেথিডিনের ঘোরে আছে, শুনতে পাচ্ছে না। 

ডাক্তার নামের এই মানুষটা একটিবারও ভাবলেন না, সমস্তটা দিন রোগির সঙ্গে আমরাও কী অমানুষিক কষ্টই না করেছি। এটা বাদ দিলেও একজন রোগি নামের মানুষের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা বোধও কেন থাকবে না? এই ডাক্তারের কাছে যেটা সংখ্যা সেই সংখ্যাটা আমাদের মা!
পরীক্ষাটা এদিন আর করা সম্ভব হয়নি। করা হয়েছিল পরের দিন। আবার রোগির আপ্রাণ চেষ্টা, সঙ্গে আমাদেরও। আহারে, কী কষ্ট! এবারও প্রফেসর সাহেব এই শব্দটাই উচ্চারণ করছিলেন! এবার ভাগ্য সহায়তা করল না। সম্ভবত রোগির দুর্বলতার কারণে পেথিডিন অল্প দেয়া হয়েছিল। রোগি সচেতন। আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এই প্রফেসর সাহেবের প্রতিটা উচ্চারণের সঙ্গে রোগি লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলেন। আমার বুঝতে কষ্ট হয় না রোগি তাঁর এই অনিচ্ছাকৃত সমস্যার কারণে নিজেকে অপরাধি ভাবছেন। পারলে মাটিতে সেঁধিয়ে যান।
আবারও বলি, কিছু নির্বোধ ভুলে যায় এদের কাছে যেটা একটা সাবজেক্ট সে আমার মা। আমি আমার মার পুরনো হাড়ের জন্য হিংস্র কুকুরের মত লড়ব, আজও। এখানে কেবল জঙ্গলের আইন, নো মার্সি-নো জেনেভা কনভেনশন! কিন্তু মুমূর্ষু মাকে সামনে রেখে ডাক্তার নামের দ্বিতীয় ঈশ্বরের কাছে আমি অসহায়। অসম্ভব শক্তিশালী করপোরেট একটা মানুষকে জুতাপেটা করতে আমি দ্বিতীয়বার চিন্তা করিনি কিন্তু এখানে আমি বড় অসহায়। আমার মা, আমার কারণে আমার মার যদি কোনও ক্ষতি হয়ে যায়...।
আমি বারবার যেটা বলে আসছি, পাতার-পর-পাতা পড়ে ফেললেই একজন মানুষ শিক্ষিত হয় না! এই অধ্যাপকের এই জ্ঞানটুকুই নাই যে সব কথা সব জায়গায় বলা চলে না। যেমনটা চলে না, কোনও সভা-সমিতিতে টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে 'ধুম-মাচা-দে' গান গাওয়া। তাহলে বেচারা হুমায়ূন আহমেদের কী দোষ? 'মাতাল হাওয়া' বইয়ে তিনি দেখিয়েছিলেন, মোনায়েম খা এবং আপাততদৃষ্টিতে অপ্রকৃতস্থ একজন মহিলা ফার্ট নামের একই শব্দ ব্যবহার করছেন। [৪] 

তৌহিদুল আলম নামের এই সব অপদার্থ প্রফেসরদের স্কুল খুলে শেখানো প্রয়োজন। এই ছবিতে যে হাড়গোড় পরীক্ষা করা হচ্ছে এই সব কিন্তু পশুর হাড় না, চট্টগ্রামের সম্মানিত একজন মানুষের। কিন্তু এই বিশেষজ্ঞ নামের মানুষদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে এটা গরু-ছাগলের। সহজেই অনুমেয় কারণ এদের জুতো এবং হাড়ের মধ্যে খুব একটা দুরত্ব নাই। একটা মৃতদেহের প্রতি অসম্মান করা চলে না এটাও কি এদেরকে শিখিয়ে দিতে হবে! তাছাড়া এরা কেমন করে ভুলে গেলেন এই হাড়গুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে গোটা একটা পরিবার।
ওই যে বললাম, বিশেষ স্কুলে ভর্তি করে এদেরকে শেখাতে হবে। হাতে ধরে ধরে!

মি. 'পরফেসার' সাহেব, আপনার জন্য যেটা প্রয়োজন ছিল আপনার পেটটা কাঁচের হওয়া এবং কাপড়-টাপড় দিয়ে পেট ঢেকে রাখার তকলিফ বা চেষ্টা না-করা। আমি নিশ্চিত, তখন আপনি কোনও দাওয়াতে খেতে বসে কথায়-কথায় গা দুলিয়ে আমাদেরকে এটা বলতেন, বুঝলেন মশাই, এই যে আমার পেটে হলুদ রঙের ফুলগুলো যেটা চালু নাম গু, দেখতে পাচ্ছেন? কী, দেখছেন না? আরে শুনুন না মশাই আমার পেটের এই যে...।

'পরফেসার' তৌহিদুল আলম, ডিয়ার স্যার, গু শব্দটা দেখি আপনার বড়ো প্রিয়। আপনার চমৎকার একটা নাম দেয়া প্রয়োজন। ডিয়ার ডক, আজ থেকে আপনার নাম দিলাম গু-ডাক্তার। সকাল-সকাল অমায়িক ভঙ্গিতে আপনাকে সম্ভাষণ জানানো যেতে পারে: হ্যালো গু-ডাক্তার, মর্নিং...।

সহায়ক সূত্র:
১. ঢাকা...: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_06.html 
২. কার্ড...: http://www.ali-mahmed.com/2010/10/blog-post_20.html
৩. কেন এভাবে যেতে...: http://www.ali-mahmed.com/2011/08/blog-post_15.html
৪. হুমায়ূন আহমেদ: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_6179.html  

2 comments:

রাহী said...

এই শুয়োরের বাচ্চা আমার সামনে বললে খুন করে ফেলতাম

Kukku said...

কুত্তা একটা। এই ডাক্তারকে চামচ দিয়ে গু খাইয়ে দেয়া দরকার ছিল।