Search

Wednesday, August 3, 2011

একজন মুক্তিযোদ্ধা (!)

­তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধটা হয়েছিল ১৯৭১ সালে কিন্তু এটা জানা গেল ২০১১ সালে এসে! বছরের-পর-বছর চলে গেছে অথচ এটা কেউ জানত না? আহা, কেউ জানুক, না-জানুক ওই মানুষটার তো জানার কথা? তাহলে তিনি কেন জানতেন না যে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা! আসলে বেচারাকে দোষ দিয়ে লাভ নাই। ঘটনাটা এমন:
আপনারা হিন্দি ছবিতে দেখে থাকবেন মাথায় আঘাতের বা রোড অ্যাকসিডেন্টের কারণে একজন স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে।
আফসোস, দিন-মাস-বছর গড়ায় কিন্তু ওই মানুষটার ভ্রষ্ট স্মৃতি আর ফিরে আসে না। এই নিয়ে কাহিনি এগুতে থাকে। রহস্য-রোমান্স-সানপেন্স-থ্রিল যখন ফিকে হয়ে আসে তখন আবারও ওই মানুষটার মাথায় আরেকটা চোট লাগে। এরপর ক্রমশ ফিরে আসে স্মৃতি। আহা, তারপর আর কী! বাদ্য বাজিল। তাহারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল।

আমাদের এই মুক্তিযোদ্ধা সাহেব হয়তো ১৯৭১ সালে মাথায় পাকবাহিনীর রাইফেলের বাটের বাড়ি খেয়ে স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি যে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন মস্তিষ্ক থেকে এই অংশটুকু উধাও। উধাও তো উধাও! ৭১ গেল, ৮১ গেল, গেল ৯১ তারপর চলে গেল ২০০১ থেকে ২০১০। সেই স্মৃতি কিনা ফিরে এলো ২০১১ সালে।
স্মৃতি ফিরে আসার পেছনে কি কারণ এটা ভাল জানা যায়নি তবে ড্রেন কেন রাস্তার মাঝখানে চলে আসে এই নিয়ে তুমুল ঝগড়ায় পরেরবার মাথায় চোট লাগার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া চলে না।

যাগ গে, স্মৃতি ফিরে এলো এই ঢের! এরপর তিনি জনে জনে জানালেন কেমন করে তিনি তুমুল যুদ্ধ করেছেছিলেন। ওয়াল্লা, কী সাহস-কী সাহস! তার কর্মকান্ড ডন কুইক্সোটকে  [১] [২] ছাড়িয়ে যায়! জানা গেল, ঘরে বানানো বর্শা দিয়ে যুদ্ধে কেমন করে কলাগাছ এফোঁড়-ওফোঁড় করতে সমর্থ হয়েছিলেন। মার্বেল ছুড়ে কেমন করে পাকবাহিনীর জেনারেলের কপালে আলু বের করে দিয়েছিলেন...।

তোতাপাখির মতো আমি বারবার বলি, এই দেশ বড়ো বিচিত্র, ততোধিক বিচিত্র এই দেশের মানুষ। আমরা হঠাৎ মুখেউঠা ব্রণের মত আবিষ্কার করি একজন দিব্যি মুক্তিযোদ্ধা হয়ে বসে আছেন। অথচ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কোণঠাসা হয়ে আছেন। জীবনযুদ্ধে দুর্ধর্ষ নৌকমান্ডোকে [৩] ঠেলা চালাতে হয়। আজই এই মানুষটাকে মাদকব্যবসায়ীরা আহত করেছে [৪]। অভিযোগ জানাতে তিনি থানায় গেলে পুলিশ তাঁকে ধমকা-ধমকি করেছে। অথচ এই মানুষটাকেই সম্মান জানাতে বড়-বড় আমলা-গামলার চেয়ার ছেড়ে দেয়ার কথা।
অসমসাহসী মুক্তিযোদ্ধা একজন দুলা মিয়ার [৫] কবরটা পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়নি (কিছু তরুণের উদ্যোগে পরে চিহ্নিত হয়)। একজন এম এ জব্বার আস্ত একটা ট্যাংক পাকিস্তান থেকে নিয়ে এসেও একটা খেতাবও জোটে না [৬] অথচ এখন আমরা জানতে পারি ২০১১ সালের নতুন নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বকথা!
কাল শুনব মুক্তিযুদ্ধের সময় ৫-৭ বছরের একজন নাকি বীরত্বের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। পরশু শুনব কেউ মায়ের পেটে থেকেই যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন।
দেশটা বড়ো উর্বর! নব্য মুক্তিযোদ্ধারা [৭] দেশের নাব্যতা বাড়িয়ে চলেছেন...।

*নৌ-কমান্ডের প্রতি পুলিশের উপদেশ: http://www.samakal.com.bd/details.php?news=16&action=main&menu_type=&option=single&news_id=181717&pub_no=780&type=     

সহায়ক সূত্র:
১. ডন কুইক্সোট, একালের নাইট: http://www.ali-mahmed.com/2008/08/blog-post.html
২. ডন কুইক্সোট, অন দ্য ওয়ে: http://www.ali-mahmed.com/2009/11/blog-post_13.html
৩. নৌ-কমান্ডো: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_18.html 
৪. banglatimes: http://www.banglatimes24.com/?p=17706 
৪ক. সকালের খবর: http://www.eshokalerkhabor.com/2011/08/04/index.php 
৫. মুক্তিযোদ্ধা দুলা মিয়া: http://www.ali-mahmed.com/2009/08/blog-post_05.html
৬. ট্যাংক-মানব: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_03.html
৭. নব্য মুক্তিযোদ্ধা: http://www.ali-mahmed.com/2008/12/blog-post_8439.html   

3 comments:

nuhan said...

avabe-e cholche desh

Anonymous said...

আরেক জন বীর মুক্তি যোদ্ধা এর বীরত্ব পড়ুন আমাদের কুমিল্লায়, http://www.dailyamadercomilla.com/content/2011/07/30/news0310.htm

nuhan said...

apnar deya link amadercomilla'r font kaj korche na, Anonymous