'বাংলালিংক' সেল কোম্পানিটি অসাধারণ একটা কাজ করে ফেলেছে। 'বাংলালিংক এ্যাডভান্স' নামে দুর্দান্ত এক অফার চালু করেছে। কারও ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে সে ৫ টাকা আগাম ব্যালেন্সের সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
অতি সংকটময় মুহূর্তে কারও টাকা শেষ হয়ে গেলে অন্তত ফোন করে কাউকে বলতে পারবে, ভাইরে, আমি বড়ো বিপদে আছি। এটা ভুক্তভোগি ব্যতীত অন্য কেউ বুঝবেন না, যেমনটা বুঝবেন না পোস্ট-পেইড গ্রাহক।
বিজ্ঞাপনটা দেখে আমার মনটা ভারী বিষণ্ন হয়।
ক-মাস আগের কথা। মাহাবুব ভাই নামে আমার একজন সিনিয়র আছেন। মানুষটা বিচিত্র কারণে আমাকে পছন্দ করেন, আমার যাবতীয় প্রলাপ শোনেন, আমাকে আশার বাণী শোনান। আমার নিজেকে যখন পুরোপুরি বাতিল মানুষ মনে হতো, এই মানুষটার সঙ্গে কথা বলে ক্ষীণ আশা জন্মাত, হয়তো এখনও পুরোপুরি বাতিল হইনি। মানুষটার এই ঋণ আমি কখনও শোধ করতে পারব না।
তো, তাঁর সঙ্গে দুনিয়ার হাবিজাবি প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হতো, এখনও হয়- কতশত আইডিয়া আমার মাথায় ঘুরপাক খায়। কয়েক মাস পূর্বে কথা প্রসঙ্গে তাঁকে বলেছিলাম, এই আইডিয়াটার কথা। এটার সঙ্গে জুড়ে অসম্ভব মানবিক একটা বিজ্ঞাপনের প্লটও।
তিনি উল্লসিত হয়ে বলেছিলেন, বাহ, বেশ তো!
আমি যখন থেকে সেল ফোন ব্যবহার করি তখন থেকেই প্রি-পেইড গ্রাহক। বেকায়দা অবস্থায় যখন ব্যালেন্স শেষ হয়ে যায় তখন কতটা অসহায় বোধ হয় এটা আমার চেয়ে কে ভালো জানে।
বেশ ক-বছর আগের কথা। আমাদের ভালবাসা-বাসির প্রথম সন্তান আসি আসি করছে। আসি আসি বাবুর মার তখন উথাল-পাতাল জ্বর। গভীর রাতে আমি ডাক্তারের কাছে যখন ফোন করলাম, সমস্যা বলার আগেই আমার ব্যালেন্স শেষ। আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে, সেই রাতটা, কী দীর্ঘ একটা রাত!
পরবর্তীতে আমি আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করতাম, কোম্পানিগুলো কেন এমন কোন সুযোগ দেয় না যেন গ্রাহক চরম জরুরী সময়ে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলেও অন্তত দু-চার মিনিট ফোন করতে পারে। পরবর্তীতে রিচার্জ করার সঙ্গে সঙ্গে আগাম টাকাটা কেটে নিলেই হয়, সমস্যার তো কিছু নাই। সেই অপেক্ষা আর শেষ হয় না।
এইসব নিয়ে তখন মাহাবুব ভাইয়ের সঙ্গে আইডিয়া শেয়ার করছিলাম। এমন কোন সেল কোম্পানি পাওয়া গেলে এই আইডিয়া নিয়ে চমৎকার একটা ক্যাম্পেইন শুরু করা যায়।
তিনি কিছু সুবিধা-অসুবিধার কথা বললেন। অনেক হিসাব-কিতাবের বিষয় এখানে জড়িত। ইত্যাদি।
আমি বলেছিলাম, এমনিতে সেল কোম্পানিগুলো কত ছাতাফাতা অফার তো দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু লিজেন্ড হলে গেলে নতুন কোন আইডিয়ার বিকল্প নাই। এবং পাশাপাশি ধামাকা বিজ্ঞাপন অন্য কোম্পানিকে শুইয়ে ফেলার জন্য।
আমি চাচ্ছিলাম, গ্রামীন ব্যতীত অন্য কোন কোম্পানি। প্রয়োজনে অন্য সেল কোম্পানিকে বিনে পয়সায় আগ্রহের সঙ্গে আইডিয়া দেব কিন্তু গ্রামীন টাকা দিলেও না। আমি চোখ বুজে এখনই বলে দিতে পারি গ্রামীন নামের এই দানব কালে কালে এই দেশের প্রায় সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করবে, এমন কী আমরা বিছানায় কেমন কেমন করে সময় কাটাবো, এটাও! এদের সাথে থাকুক প্রথম আলোর মতি ভাইয়া, ওনারা দুনিয়া কাঁপালেন, নাকি বিছানা তাতে আমার কী!
এমন একটা দানবের সঙ্গে জড়াজড়ি থাকতে আগ্রহ বোধ করি না- কামসূত্র আছে কোন দিনের জন্য!
বিজ্ঞাপনটা দেখে কাল যখন মন খারাপ করে মাহাবুব ভাইকে ফোন দেই, তিনি কঠিন বকা দেন, লিখে রাখেন, আপনার কিসসু হবে না।
আমি মন খারাপ করা শ্বাস ফেলি, লিখে আর কি করব! আমাকে দিয়ে কিসসু হবে না এটা জানার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হতে হয় না, এ তো আমি বিলক্ষণ জানি।
তিনি আমাকে ছাড় দেন না, আপনি কি মনে করে বসে রইলেন!
এর কি উত্তর হয়, এই দেশে যারা আইডিয়া ভাজাভাজি করেন তাদের কাউকে তো আমি চিনি না।
এবার হয়তো তাঁরও মন খারাপ হয়, আপনি অন্তত ওয়েব সাইটে লিখতে পারতেন।
মানুষটাকে কেমন করে বোঝাই ওয়েব সাইট হচ্ছে গণিমতের মাল, নন-কমার্শিয়াল সেক্স ভলন্টিয়ারের সঙ্গে এর খুব একটা ফারাক নাই। অন্যদের দোষ দেই কোন মুখে! আমাদের দেশের প্রথম শ্রেণীর পত্রিকাগুলো ওয়েব সাইট থেকে হরদম চুরি-চামারি করেই যাচ্ছে। চোট্টামি সমাপ্ত করে, লিকারের প্রভাবে মনটা খানিকটা উৎফুল্ল থাকলে বদনা হাতে টাট্টিখানায় যাওয়ার পূর্বে লিখে দেয়, 'ওয়েব সাইট অবলম্বনে'।
এই দেশে চুরি-চামারিটা চলে গেছে শিল্পের পর্যায়ে। একজন ডলি সায়ন্তনি একবেলা ভাত খাইয়ে ১০০ টাকা ধরিয়ে কাঙালিনী সুফিয়ার গান হাপিস করে দেন, একজন মাহমুদুজ্জামান বাবু অতুল বাবুর গান অনায়াসে নিজের বলে চালিয়ে দেন। অতুল বাবু প্রতিবাদ করলে খোঁড়া যুক্তি দেখান, আমি তো ওঁকে গিয়ে পাইনি। বাহ, বেশ!
সেলিব্রেটিরা আমাদের শেখান কেমন করে অন্যের মাল নিজের বলে চালিয়ে দিতে হয়।
যাগ গে, এই আইডিয়া অন্য একজন বাস্তবায়িত করে দেখিয়ে দিয়েছেন, আমি বিমর্ষমুখে তাঁকে স্যালুট করি। অনেকের কাছে বিষয়টা অতি তুচ্ছ মনে হবে কিন্তু আমার বুকের গভীর থেকে হাহাকার বেরিয়ে আসে, এমন কেন হবে? আমার ভাবনা-আইডিয়া নামের সন্তানগুলো বিকলাঙ্গ হবে কেন? আমি হেরে যাই তাতে ক্ষতি নাই কিন্তু আমার আইডিয়াগুলোর ভ্রুণাবস্থায় মৃত্যু হবে কেন?
কোথাও শেয়ার করলে তা চুরি হয়ে যাবে, মাথায় লুকিয়ে রাখলে তাও কেউ-না-কেউ আগেভাগেই ভেবে বসে থাকবে। কতশত আইডিয়া মাথায় ঘুরপাক খায়। এইগুলো নিয়ে কী করব! আহারে, বাথরুমে ফ্ল্যাশ করার ব্যবস্থা নাই, থাকলে ভালো হতো।
একবার একজন আসলেন, রিয়েলিটি শো করবেন। তিনি আমাকে বাতলে দিচ্ছিলেন, আমি কেমন কেমন করে তার ভাবনাগুলো ভাবব- পেইড রাইটাররা যা করেন আর কী! ভালো পয়সা পেলে পেইড রাইটাররা তাঁদের যন্ত্র দিয়েও লিখে দেবেন, আই বেট!
আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম, কেন রে বাপু, আকাশ ছোঁয়া নারকেল গাছে একজন মানুষ তরতর করে উঠে যাচ্ছে এটা কী রিয়েলিটি শো না?
মানুষটা পশ্চাদদেশ দোলাতে দোলাতে চলে গিয়েছিলেন। তা যাক, পুরুষদের পশ্চাদদেশ দোলানো আমায় টানে না।
সফট-ড্রিংকস নিয়ে একটা চমৎকার আইডিয়া আছে, অপেক্ষায় আছি, কবে, কার মাথা থেকে এটা বের হয় তা দেখার জন্য। শ্লা, সব সময় দর্শক হতে ভালো লাগে আর। চুতিয়া আমি, আমার উপর নিজেই বিরক্ত! হুশ! দূর হ মরদুদ, না ফাতেহা, না দরুদ!
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Tuesday, March 2, 2010
বাংলালিংক, তবুও তোমায় ধন্যবাদ
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment