Search

Saturday, October 3, 2009

ক্রসফায়ার

ক্রসফায়ার নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম বটে কিন্তু তখনও এটা আমার কাছে রহস্য ছিল, আজও! এ এক অবোধ্য, এটা যাদের বোধিতব্য হয়েছে তারা বলার জন্য আর বেঁচে নেই! মরে আর বাঁচেনি!

কিছু প্রশ্ন জাগে:
১. সন্ত্রাসীদের (স্যারদের দাবীমতে) নিয়ে যখন অস্ত্র উদ্ধারে যাওয়া হয় তখন তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। তার সহযোগিরা ওঁত পাতিয়া থাকে এবং ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। দু-পক্ষের গোলাগুলিতে সন্ত্রাসীর মৃত্যু হলো। যার চালু নাম ক্রসফায়ার। বেশ।
কিন্তু তার সহযোগিরা খবরটা পায় কেমন করে? এটা তো তাদের জানার কথা কথা না। তাকে, তাদের বসকে কখন, কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে! এটা তো গোপন খবর, যারা খবরটা ফাঁস করে দিচ্ছে তাদেরকে ধরা হচ্ছে না কেন? অন্তত এদের দু-একজনকে ক্রসফায়ার না হোক অন্তত এঙ্গেলফায়ারে দেয়া হোক।


২. সন্ত্রাসীদের (স্যারদের দাবীমতে) সহযোগিরা সর্বদা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। এক বেটারও গোপন কেশ দূরের কথা টিকিটিও স্পর্শ করা সম্ভব হয় না। এ কী কথা‍!

৩. এটা কি নিশ্চিত করা হয়? অন্তত আলাদা প্রেসনোট দিয়ে জানানো উচিত, ক্রসফায়ারে গুলিগুলো ক্রস করে সন্ত্রাসীর (স্যারদের দাবীমতে) সামনে কারটা লাগল, পেছনে কারটা?

৪. সন্ত্রাসী (স্যারদের দাবীমতে) ছিনিয়ে নেয়ার সময় 'বসাবসি' করছিল, না হাঁটাহাঁটি, নাকি দৌড়াদৌড়ি। এটা জানাও আবশ্যক বটে।
কেন? 


(টুন্ডা ইসমাইল, এই উপাত্তটার মূল তথ্যটা নেয়া হয়েছে, ২৪ মে, ২০০৬-এর দৈনিক ’জনকন্ঠ’ থেকে।)
ধরা যাক, লালবাগের সন্ত্রাসী (দাবীমতে) টুন্ডার কথা। টুন্ডা ইসমাইলের মৃত্যু হয় ক্রসফায়ারে। জানি-জানি, অনেকে ঠোঁট উল্টে বলছেন, এ আর নতুন কী! এ তো আকসার হচ্ছে। না, খানিকটা নতুনত্ব আছে বৈকি! টুন্ডার মৃত্যু হয় ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায়।
আচ্ছা, আপনারা ডান্ডাবেড়ি পরা
অবস্থায় কাউকে হাঁটতে দেখেছেন কি? একজন মানুষ যত বলশালিই হোক ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় তার হাঁটার গতি থাকবে অতি ধীর, আড়ষ্ট; অনেকটা রোবটের মত। হাঁটাই অতি কষ্ট আবার দৌড়- মুর্দাও হাসবে।

২১ মে, ২০০৬। অসুস্থ টুন্ডাকে সুস্থ দাবী করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রিমান্ডে আনা হয় ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায়। গভীর রাতে ক্রসফায়ারে তাঁর মৃত্যু হয়। ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থাতেই তার মরদেহ পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে। ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থাতেই তার ময়নাতদন্ত করা হয়।
আমার জানার খুব ইচ্ছা, তাকে কী ডান্ডাবেড়ি পরা
অবস্থাতেই কবর দেয়া হয়েছিল? না-দিয়ে থাকলে অন্যায় হয়েছে, ঘোর অন্যায়। মানুষ হিসাবে আমি পুরোপুরি নগ্ন হতে পারিনি, একচিলতে কাপড় এখনও গায়ে...। কী লজ্জা-কী লজ্জা! একটা সভ্য দেশে কী এটা সম্ভব!

আচ্ছা, এই যে কথায় কথায় ক্রসফায়ার হচ্ছে এদের মধ্যে কি একজনও কুত্তা জহির নাই? একজন কুত্তা জহিরের মৃত্যুতে কেবল কুত্তারাই কাঁদে না, গোটা আকাশ কাঁদে গড়াগড়ি দিয়ে। ।
.......
বিবিসির বাংলা সংলাপে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, "ক্রসফায়ারের মাধ্যমেই একদিন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ হবে।"
এই রে, সর্বনাশ হলো, মন্ত্রী তাহলে জানেন ক্রসফায়ার জিনিসটা কী! এবার আমাদের কী হবে গো!
ক্রসফায়ারের রহস্য নিয়ে আমরা যারা থিসিস করব ভাবছিলুম তাদের আর কোন গতি রইল না। মন্ত্রী মহোদয় এক শ্বাসে সব রহস্য ফাঁস করে দিলেন। বড় অভাগা আমরা!

No comments: