অন-লাইনে লেখালেখির সুবাদে আমার সঙ্গে অনেকেই কঠিন অমত পোষণ করতেন যে বিষয়টি নিয়ে, সেটা হচ্ছে গালাগালি। অল্প প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে গালির ফোয়ারা ছুটিয়ে দেয়া। এটা আমার কঠিন অপছন্দের। আমার স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, এটা লেখার-ভাবনার মান কমিয়ে দেয়।
কিন্তু উপন্যাসে গ্রামের অশিক্ষিত একটা চরিত্র, সে তো আর প্রতি শ্বাসে আসতে আজ্ঞা হোক, বসতে আজ্ঞা হোক বলবে না। নিম্নবিত্ত মহিলাদের দেখেছি অবলীলায় তার মেয়েকে 'হতিন' (সতীন) বলে অহরহ গাল দিতে। অর্থটা ভাবলেই গা গুলায়, রোম দাড়িয়েঁ যায়! মেয়েকে এই গাল দেয়ার অর্থ কী কুৎসিত-কী ভয়াবহ-কী জঘন্য এটা নিয়ে মাথা ঘামাবার আদৌ প্রয়োজন তাদের নেই।
খোদেজা নামের উপন্যাসের অংশবিশেষ একজনের অনুরোধে আমার নিজের সাইটে পোস্ট করেছিলাম। ওই উপন্যাসের চরিত্রের প্রয়োজনে, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু গালি এসেছে।
খোদেজা উপন্যাসটির অংশবিশেষ দাঁড়ি-কমাসহ একজন যৌবনযাত্রা নামের সাইটে কপি-পেস্ট করে দিয়েছিলেন যা আমাকে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ করেছিল। এই নিয়ে একটা লেখা দিলে যৌবনযাত্রার বাঘ মামা (অনুমান করি, তিনি ওই সাইটের একজন কর্তৃপক্ষ গোছের কেউ একজন) দু:খপ্রকাশ করেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি, আবারও করি।
যে-কোন প্রয়োজনে একটা লেখার লিংক দেয়া চলে কিন্তু বিনা অনুমতিতে, না জানিয়ে হুবহু কপি-পেস্ট করাটা অপরাধ। অবশ্য এদের আর দোষ দেই কেমন করে আমাদের দেশে এখনও প্রথম আলোর মত প্রথম শ্রেণীর পত্রিকা একটা লেখা ছেপে দিয়ে দয়া করে লিখে দেয় 'ওয়েব সাইট অবলম্বনে' বা 'ওয়েব সাইট থেকে'। যেন ওয়েবসাইটের তথ্যগুলো গণিমতের মাল-বহুভোগ্যা। পত্রিকা বা ছাপার অক্ষরে আমরা যা পড়ি তাই শিখি, শিখছিও তাই।
"শফিক নিমিষেই খোদেজাকে ছেড়ে নিরাপদ দূরুত্বে সরে এসে পশুর আক্রোশে ড্রাইভারকে গাল দিচ্ছে, ****নির পোলা, *** বেডির পোলা...।"
যৌবনযাত্রায় ওই লেখাটা পড়তে গিয়ে মজার এই বিষয়টা লক্ষ করলাম। আমার লেখাটার সবটুকুই হুবহু কপি-পেস্ট করা হয়েছে কিন্তু এই প্যারায় এসে গালিগুলো সেন্সর করা হয়েছে।
খোদেজা উপন্যাসের এখানে গালিগুলো না দেয়ার অর্থ হচ্ছে বিকলাঙ্গ একটা লেখা। শফিক নামের যে মানুষটা, এই গালি দিচ্ছে সে হচ্ছে গ্রামের বখা একটা ছেলে, ওসময় উদগ্র কামার্ত একজন মানুষ, পুরাপুরি বশে নিয়ে আসা শিকার (খোদেজা নামের শিশুটি) চোখের সামনে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তার আক্রোশ আমি মনশ্চক্ষুতে দেখতে পাই। এই মানুষটার পক্ষে ওই মুহূর্তে কাউকে মেরে ফেলা বিচিত্র কিছু না, যা সে পরবর্তি সময়ে করেছে। সে এবং তার সঙ্গিরা মেয়েটির চিৎকার থামাবার জন্য তার মুখে মুঠো মুঠো বালি গুঁজে দিয়েছে।
তো, এমন পরিস্থিতিতে শিকার যখন হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, এখানে আমি যেমন আশা করি না তেমনি পাঠকের আশা করাটাও সমীচীন হবে না যে, চরিত্রটি সুর করে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইবে, যেতে নাহি দেব তবুও যেতে দিতে হয় পে-এ-এ-এ। এটা দেখানো আমার মত অলেখক, ৩ টাকা দামের কলমবাজের পক্ষে সম্ভব না। আমাদের দেশের বড় মাপের লেখক স্যারদের জন্য না-হয় এটা তোলা থাকুক।
ওয়াল্লা, এঁরা কারণে-অকারণে যে কোন চরিত্রর মুখে রবিদাদার কোন গান-কবিতা বা উঁচুমার্গের কোন বাতচিত বসিয়ে দেন। এটা কেন করেন কে জানে- তিনি নিজে পছন্দ করেন বলে? একজন মাতালের ন্যায় যার রোদে মদ গিলতে হয়, বৃষ্টিতেও!
ওই সাইটে গালিগুলোকে সেন্সর করা দেখে আমি হাসব না কাঁদব বুঝে উঠতে পারছি না। পাশাপাশি এই বাসনাটাও তীব্র হয়, বড় সাধ জাগে, অপারেশন থিয়েটারে হাজাম-নাপিতের হাতে সার্জনের ছুরি তুলে দিলে কেমন হয়? বাস্তবে দেখলাম না তাতে কী অন্তত এটা দেখে দুধের সাধ ঘোলে তো মিটল!
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Sunday, September 27, 2009
হাজামের হাতে সার্জনের ছুরি!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment