একের পর এক সংখ্যা বাড়ছে। একেক করে লাশ জড়ো হচ্ছে। এই দেশের হাভাতে মানুষদের লাশ। এঁরা প্রবাসে গিয়েছিলেন ভাগ্য ফেরাতে।
দেশ থেকে যখন বের হয়েছিলেন তখন একটা নাম ছিল, ফেরার সময় নামটা পাল্টে যায়। নাম কেবল লাশ। কেউ আর তাঁর নাম ধরে ডাকবে না- সবাই বলবে, এই লাশ উঠাও, লাশ নামাও। এই লাশরে গোসল দাও।
এঁরাই দেশটার চাকা বনবন করে ঘোরান অথচ আমরা সবচেয়ে বেশি তাঁদেরকেই অবহেলা করি, অসম্মান করি, বিভিন্ন ভাবে। আজ পর্যন্ত এরা ভোটাধিকার পর্যন্ত পাননি! দেশে থেকে যাওয়ার পূর্বে, প্রবাসে গিয়ে দেশের দুতাবাসগুলো থেকে ন্যূনতম সহযোগিতাও এঁরা পান না। দেশে ফেরার পর এঁদের সঙ্গে আমাদের সবার আচরণ হয় স্রেফ লুটেরার।
প্রবাসে বিশেষ করে মধ্যপ্রচ্যের দেশগুলো এবং মালয়েশিয়ার মত বিচ্ছিন্ন কিছু দেশে তাঁদের উপর কী নির্যাতন হয় এর অল্প-স্বল্প জেনেই আমরা শিউরে উঠি। মানুষগুলো এমন একটা চক্রে আটকা পড়েন, তখন তাঁদের কিছুই করার থাকে না।
এই অভাগা মানুষগুলোর দেখার কেউ নেই। পাশে কেউ নেই। দারিদ্রতা মহান করে এটা যে লিখেছে তাঁকে আমি পেলে, বছরের পর বছর ধরে, জনমানবহীন তপ্ত মরুভূমিতে শুকনো কিছু খাবার দিয়ে ছেড়ে দিয়ে বলতাম, আপনি সুর করে কবিতাটা পড়েন, আমি শুনি।
মালয়েশিয়ায় এই দেশের লোকজনদের কী নির্যাতন করা হয় তা আমরা আঁচও করতে পারব না। পুলিশ হেফাজতে বিশেষ বেত দিয়ে পেটানো হয়, যা পরবর্তিকালে মৃত্যুর জন্য দায়ি। যে মালয়েশিয়া থেকে লাশ আসার হার উঁচু সেই দেশে আমাদের রাষ্ট্রদূত নাই, ১২টি দেশে কোন রাষ্ট্রদূত নাই। ভাবা যায়?
অবশ্য রাষ্ট্রদূত থাকলেই যে ঘোড়ার ডিম প্রসব করতেন এতে আমার ঘোর সন্দেহ আছে! যারা আছেন এদের কর্মকান্ড নিয়ে প্রবাসিদের কেমন ক্ষোভ তা জানার প্রয়োজনও আমাদের নাই।
আবার আমাদের দেশের কিছু 'কলচর'-ঐতিহ্য আছে। চোর-চোট্টা, খুনি, কাউকে দেশে রাখা বিপদজনক মনে হলে, দাও কোন একটা দেশের রাষ্ট্রদূত করে। ফল যা হওয়ার তাই হয়!
কোন বাংলাদেশির অন্য দেশের পাসপোর্ট থাকার সুবাদে ওই দেশের কর্মকর্তাদের ওই বাংলাদেশির প্রতি যে দায়িত্ব, উদ্বেগ, মমতা তার দশ ভাগের এক ভাগও আমাদের দেশের কর্মকর্তাদের আছে বলে আমার ঘোর সন্দেহ!
ব্রিটিশ পাসপোর্টধারি একজন বাংলাদেশির যৌথ বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগে হাইকোর্ট পর্যন্ত রুল জারি করেন। যৌথ বাহিনীর লোকদের বিভাগীয় শাস্তি দেয়া হয়েছে এটা সরকার নিশ্চিত করার পরও!
বছরে গড়ে প্রায় ২৫০০ লাশ আসে। আমরা কী প্রত্যেকটা লাশের মৃত্যুর কারণ জানি? আমরা কী জানি লাশ নামের মহিলাদের মৃত্যুর কারণ? মিডিয়ারও জানার খুব একটা আগ্রহ নাই কারণ এই লাশগুলো মহান রাজনীতিবিদ না, যে কে কোন শাড়ি পরে সংসদে এসেছেন, শাড়ির পাড়ের কাজ কী, রং কী তার বিস্তারিত বর্ণনা থাকবে এবং প্রথম আলো প্রথম পাতায় ঘটা করে আমাদের জানাবে! আল্লা মেহেরবান, প্রথম আলো শাড়ি পর্যন্তই থেকেছে সামনে আর এগোয় নি!
আমাদের জানার খুব একটা প্রয়োজন নাই কারণ এরা হতদরিদ্র। এরা কেবলই একেকটা সংখ্যা। পরিসংখ্যানের বিষয়, সংখ্যার সূচক নিয়ে গ্রাফ করার বিষয়!
একটি লাশকে ঘিরে আবর্তিত হয় অনেক গল্প।
কাস্টমস অফিসার: 'শালার আরেকটা আইলো'। তিনি ক্ষুব্ধ, কারণ লাশ না হয়ে, মানুষটা ফিরে আসলে কিছু টু-পাইস আমদানি হত। কী অনাচার, মরবিই যখন এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে মরলে কোন সমস্যা ছিল! নাকি কফিন ছাড়াবার জন্যও টাকা দিতে হয়? অসম্ভব কিছু না।
মাইক্রোবাস ড্রাইভার: 'আইজকা সকালে উইঠাই মনে হইছিল দিনডা ভালা যাইবো'। সে উৎফুল্ল। মানুষ টানার চেয়ে লাশ টানা লাভজনক।
মিডিয়া: একেজনের একেক ভাবনা। যোগ হয় খানিকটা দুর্ভাবনাও। নিউজটা প্রথম পাতায় বা প্রাইম টাইমে যাবে তো?
জানাযার ইমাম: মানুষটা বৈদেশে ঠিকমত নামায আদায় করছে কিনা, এইটা নিয়া একটা ফতোয়া না দিলে মুবাইল ফোনটা কিনা সমস্যা হয়া যাইব।
সুদখোর: লাশের জানায়ায় দাঁড়িয়ে, 'এতদিনে আল্লা মুখ তুইল্যা চাইছে'! লাশটা তার কাছ থেকে উঁচু সুদে (বাংলাদেশের বড় সুদখোর গ্রামীন ব্যাংকের প্রায় কাছাকাছি। আমাদের সৌভাগ্য পৃথিবীর বড় বড় সুদখোরদেরও নোবেল দেয়ার চল শুরু হয়েছে। আইসিসিডিআরবি কোটি শিশুর প্রাণ বাঁচালো এটা আহামরি কোন বিষয় না। বাংলাদেশে প্রাণের কেজি ক-টাকাই বা!) বিদেশ যাওয়ার র্পূর্বে যে টাকাটা নিয়েছিল ভিটে বন্ধক রেখে। সে মনে মনে আঁক কষে কেমন করে ভিটেটা হাতিয়ে নেয়া যাবে।
টাউট রাজনীতিবিদ: সুদখোরটা তার সাহায্য চেয়েছে। লাশের পরিবারকে ভিটে থেকে উচ্ছেদ করতে, বায়নাও দিয়ে গেছে পাঁচ হাজার টাকা। বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন।
থানার ওসি: বাড়ি দখলের, নেতার কাজটা যে করে দিব। শ্লা, টাকাটা ঠিক-ঠিক পাওয়া যাবে তো?
আমার মতো শস্তা কলমচী: আচ্ছা, কেমন করে এই পোস্টটা লেখলে বেশি পাঠক পাওয়া যাবে। কেউ কেউ মানবদরদি বলে শ্লোগানের মত কিছু মন্তব্য করবে?
এইসব গল্প অনুমান করে লেখা কঠিন কিছু না। কেবল আমরা জানি না ওই লাশের ছেলে-মেয়ে, এদের কী হবে? মেয়েটা কী গার্মেন্টস কর্মি হবে, না নিশিকন্যা, নাকি প্রধানমন্ত্রী? ছেলেটা কী নেশাখোর, না মাস্তান, নাকি প্রেসিডেন্ট?
এটা আমাদের পক্ষে অনুমান করা সম্ভব না। কেবল সময়ই তা বলে দেবে...।
ছবিঋণ: প্রথম আলো
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Sunday, May 17, 2009
একটি সংখ্যা-একটি লাশ-অনেক গল্প!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment